Old/New Testament
লোকদের স্মরণের জন্য শিলাখণ্ডসমূহ
4 সকলে যর্দন নদী পেরিয়ে এলে প্রভু যিহোশূয়কে বললেন, 2 “বারো জনকে এবার বেছে নাও। প্রত্যেক পরিবারগোষ্ঠী থেকে একজন করে নেবে। 3 নদীর যেখানে যাজকরা দাঁড়িয়ে আছেন সেদিকে তাদের তাকাতে বলো। সেখানে বারোটি শিলা তাদের খুঁজে নিতে নির্দেশ দাও। ঐ বারোটি শিলা বহন করো। আজ রাত্রে যেখানে থাকবে সেখানে ঐগুলো রেখে দেবে।”
4 সেই মত যিহোশূয় প্রতি পরিবারগোষ্ঠী থেকে একজন করে লোক বেছে নিলেন। তিনি সেই বারো জনকে এক সঙ্গে ডাকলেন। 5 যিহোশূয় তাদের বললেন, “নদীর যেখানে তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের পবিত্র সিন্দুক রয়েছে সেখানে যাও। তোমরা প্রত্যেকে একটি করে পাথর খুঁজে নেবে। ইস্রায়েলের বারোটি পরিবারগোষ্ঠীর প্রত্যেক জনের জন্য একটি করে পাথর। ঐ পাথর কাঁধে তুলে নাও। 6 এইসব পাথর তোমাদের কাছে এক একটা প্রতীকের মতো। ভবিষ্যতে তোমাদের সন্তান-সন্ততিরা জিজ্ঞাসা করবে, ‘এইসব পাথরের অর্থ কি?’ 7 তোমরা তাদের বলবে যে প্রভু যর্দন নদীর স্রোত বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যখন সাক্ষ্যসিন্দুকটিকে যর্দন নদী পার করানো হচ্ছিল তখন জল তার প্রবাহ বন্ধ রেখেছিল। পাথরগুলো ইস্রায়েলের লোকদের কাছে এইসব ঘটনার চিরকালের স্মারক হয়ে থাকবে।”
8 ইস্রায়েলবাসীরা সেই মত যিহোশূয়র আদেশ পালন করল। তারা যর্দন নদীর মাঝখান থেকে বারো খানা পাথর তুলে নিল। বারোটি পরিবারবর্গের প্রত্যেকের জন্য একটি করে পাথর ছিল। যেমন ভাবে প্রভু যিহোশূয়কে বলেছিলেন ঠিক তেমনি ভাবেই লোকরা পাথর বয়ে নিয়ে চলল। তারপর যেখানে তারা তাঁবু গেড়েছিল সেখানে ঐগুলো রাখল। 9 (যিহোশূয় যর্দন নদীর মাঝখানেও বারোটি পাথর রেখেছিলেন, ঠিক সেই জায়গাতেই যেখানে যাজকরা পবিত্র সিন্দুক কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। আজও ঐ জায়গায় পাথরগুলো দেখা যায়।)
10 প্রভু যিহোশূয়কে লোকদের কি করতে হবে তা জানাতে আদেশ দিলেন। সেগুলো মোশি যিহোশূয়কে পালন করার জন্য বলেছিলেন। তাই পবিত্র সিন্দুক বহনকারী যাজকরা মাঝনদীতে দাঁড়িয়ে রইলেন যতক্ষণ না যিহোশূয় লোকদের নির্দেশ দেওয়া শেষ করলেন। লোকরা দ্রুত নদী পেরোতে লাগল। 11 তারা নদী পেরোনোর পালা শেষ করল। তারপর যাজকরা তাদের সামনে দিয়ে প্রভুর সিন্দুক বহন করে চললেন।
12 রূবেণের লোকরা, গাদ পরিবারগোষ্ঠী এবং মনঃশির পরিবারগোষ্ঠীর অর্ধেক লোকরা মোশির নির্দেশ পালন করল। এরা অন্যান্য লোকদের চোখের সামনে নদী পেরোল। এরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল। ইস্রায়েলের বাকী লোকদের তারা সাহায্য করতে যাচ্ছিল যাতে তারা ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত ভূখণ্ডের দখল নিতে পারে। 13 প্রায় 40,000 সৈন্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে প্রভুর সামনে দিয়ে চলে গেল। যিরীহোর সমতলভূমির দিকে তারা অভিযান করেছিল।
14 সেদিন থেকে প্রভু সমস্ত ইস্রায়েলবাসীদের জন্য যিহোশূয়কে একজন মহাপুরুষে পরিণত করলেন। সেদিন থেকে লোকরা তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করতে শুরু করল। যেমন ভাবে তারা মোশিকে শ্রদ্ধা করত, সে ভাবেই তারা যিহোশূয়কে শ্রদ্ধা করতে লাগল।
15 সিন্দুকবাহী যাজকরা নদীতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। প্রভু যিহোশূয়কে বললেন, 16 “যাজকদের নদী থেকে চলে আসতে বলো।”
17 যিহোশূয় সেই মতো যাজকদের আদেশ দিলেন। তিনি বললেন, “যর্দন নদী থেকে আপনারা বেরিয়ে আসুন।”
18 যাজকরা যিহোশূয়র আদেশ পালন করলেন। সিন্দুক বহন করে তাঁরা নদী থেকে উঠে এলেন। নদীর এপারে যখন তাঁরা পা রাখলেন তখন আবার নদী বইতে শুরু করল। আবার নদী আগের মতোই কুলপ্লাবী হয়ে উঠল।
19 প্রথম মাসের দশম দিনে তাঁরা যর্দন নদী অতিক্রম করলেন। তাঁরা যিরীহোর পূর্ব দিকে গিল্গল নামক একটি জায়গায় তাঁবু খাটালেন। 20 তাঁরা যর্দন নদী থেকে পাওয়া বারোটি পাথর বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। গিল্গলে যিহোশূয় সেইসব পাথর স্থাপন করলেন। 21 যিহোশূয় তাঁদের বললেন, “ভবিষ্যতে তোমাদের সন্তানরা তাদের মাতা-পিতার কাছে জিজ্ঞাসা করবে, ‘এসব পাথরের অর্থ কি?’ 22 তোমরা তাদের বলবে, ‘এসব পাথর আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কিভাবে শুকনো জমির ওপর দিয়ে ইস্রায়েলের লোকরা যর্দন নদী পেরিয়ে গিয়েছিল। 23 প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর, যর্দন নদীর প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছিলেন যাতে তোমরা ঐ শুকনো জমির ওপর দিয়ে পেরিয়ে যেতে পারো; ঠিক যেমনটি হয়েছিল, যখন প্রভু লোহিত সাগরের জলপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছিলেন যাতে আমরা ঐ অংশটি শুকনো জমির ওপর দিয়ে পেরিয়ে যেতে পারি।’ 24 প্রভু এই কাজ করেছিলেন যাতে এই দেশের সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ জানতে পারে তিনি কতটা শক্তিমান। তাহলে এই দেশের সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের মহাশক্তিকে চিরকাল ভয় করে চলবে।”
5 তাই প্রভু যর্দন নদী শুকিয়ে দিলেন যতক্ষণ না সমস্ত লোক তা পেরিয়ে যায়। যর্দ্দনের পশ্চিমে বসবাসকারী ইমোরীয় এবং ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী কনানীয়দের রাজারা এসব শুনে বেশ ভয় পেয়ে গেল। ইস্রায়েলের লোকদের সঙ্গে লড়াই করার মতো সাহস তাদের রইল না।
ইস্রায়েলীয়দের সুন্নৎকরণ
2 তখন যিহোশূয়কে প্রভু বললেন, “চক্মকি পাথর থেকে ক্ষুর বানিয়ে নাও, আর সেই ক্ষুর দিয়ে ইস্রায়েলের পুরুষদের সুন্নৎ করো।”
3 সেই মতো যিহোশূয় চকমকি পাথর থেকে ক্ষুর বানিয়ে নিয়ে জিবিথ হারালোথে ইস্রায়েলীয়দের সুন্নৎ করলেন।
4-7 ইস্রায়েলীয়দের সুন্নৎ করার পেছনে যিহোশূয়র একটা কারণ ছিল। ইস্রায়েলের লোকরা মিশর ছেড়ে চলে গেলে যারা সৈন্যবাহিনীতে ছিল তাদের সবাইকে সুন্নৎ করা হয়েছিল। মরুভূমিতে থাকার সময় অনেক যোদ্ধাই প্রভুর কথা শোনেনি। তখন প্রভু তাদের প্রতিশ্রুতি দিলেন যে তারা ঐ দেশটি সুজলা-সুফলা রূপে দেখতে পাবে না। তিনি তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে সেই দেশই দিয়ে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি করেছিলেন, কিন্তু যারা তাঁর বাণী অগ্রাহ্য করেছিল তাদের ঈশ্বর 40 বছর মরুভূমিতে ঘুরিয়েছিলেন যে পর্যন্ত না ঐ সমস্ত যোদ্ধারা শেষ হয়। তারা মারা গেলে তাদের সন্তানরা তাদের স্থান নিল। মিশর থেকে চলে আসার পর তাদের সন্তানদের মরুভূমিতে জন্ম হয়েছিল। এদের কাউকে সুন্নৎ করা হয় নি। তাই যিহোশূয় তাদের সুন্নৎ করেছিলেন।
8 যিহোশূয় সকলের সুন্নৎকরণ শেষ করলেন। তারা সেখানেই তাঁবু খাটিয়ে থেকে গেল। যতদিন পর্যন্ত সবাই সেরে না উঠল ততদিন তারা তাঁবুতে বিশ্রাম নিল।
কনানে প্রথম নিস্তারপর্ব উৎসব
9 সেই সময় প্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “মিশরে তোমরা সবাই ছিলে ক্রীতদাস। এই দাসত্ব তোমাদের লজ্জিত করে রেখেছিল। আজ তোমাদের সব লজ্জা সংকোচ আমি হরণ করলাম।” যিহোশূয় সেই জায়গাটির নাম দিলেন গিল্গল। আজও সে জায়গার নাম গিল্গল থেকে গেছে।
10 ইস্রায়েলের লোকরা নিস্তারপর্ব উৎসব পালন করল। যিরীহোর সমতলভূমিতে গিল্গলে যেখানে তাঁবু খাটিয়েছিল সেখানেই তারা উৎসব করল। সেই মাসের 14তম দিনে সন্ধ্যাবেলা সেই উৎসব হল। 11 নিস্তারপর্ব উৎসবের পরের দিন তারা সে দেশের উৎপন্ন খাদ্য দ্রব্যই খেয়েছিল। তারা খেয়েছিল খামিরবিহীন রুটি আর ভাজা দানাশস্য। 12 পরদিন সকালে আকাশ থেকে আর বিশেষ ধরণের খাদ্য বর্ষণ হল না। যেদিন থেকে ইস্রায়েলের লোকরা কনানে উৎপন্ন খাদ্য খেতে শুরু করল, সেদিন থেকে স্বর্গ থেকে খাদ্য আসা বন্ধ হল।
প্রভুর সৈন্যবাহিনীর সেনাধ্যক্ষ
13 যখন যিহোশূয় যিরীহোর কাছাকাছি গেলেন, তিনি তাকিয়ে দেখলেন একজন মানুষ তরবারি হাতে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। যিহোশূয় তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, “কে আপনি? আমাদের শত্রু না মিত্র?”
14 মানুষটি বললেন, “না, আমি শত্রু নই। আমি প্রভুর সৈন্যবাহিনীর সেনাধ্যক্ষ। আমি এইমাত্র তোমার কাছে এসেছি।”
তখন যিহোশূয় তাঁকে সম্মান জানাতে মাথা নীচু করে বললেন, “আমি আপনার ভৃত্য। প্রভু কি আমার জন্য কোন আদেশ দিয়েছেন?”
15 প্রভুর সেনাধ্যক্ষ বললেন, “জুতো খোলো। যেখানে তুমি দাঁড়িয়ে তা এখন পবিত্র স্থান।” তাই যিহোশূয় তাঁর আদেশ পালন করলেন।
6 যিরীহো শহরের সমস্ত প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। শহরের লোকেরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল কারণ ইস্রায়েলের লোকেরা কাছেই ছিল। শহর থেকে কেউ বেরোত না, শহরে কেউ আসতও না।
2 তখন প্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “শোনো, আমি তোমাদের যিরীহো দখল করতে দিচ্ছি। তোমরা রাজা আর শহরের সমস্ত যোদ্ধাকে পরাজিত করবে। 3 দিনে একবার করে সমস্ত শহরের চারিদিকে সৈন্যদের টহল দেওয়াবে। এরকম ছয় দিন করবে। 4 পবিত্র সিন্দুকটি যাজকদের বহন করতে বলবে। সাতজন যাজককে মেষের তৈরী শিঙা নিতে বলবে। সেই সিন্দুকটির সামনে দিয়ে যাজকদের যেতে বলবে। সপ্তম দিনে শহরটিকে সাতবার প্রদক্ষিণ করবে। ঐ দিন যাজকদের যাবার সময় শিঙা বাজাতে বলবে। 5 তারা একবার খুব জোরে শিঙা বাজাবে। সেই শিঙার শব্দ শুনতে পেলেই লোকদের চিৎকার করতে বলবে। তোমরা এই কাজ করলে শহরের প্রাচীরগুলো ভেঙ্গে পড়বে, আর তোমার লোকরাও সোজা শহরে ঢুকে পড়তে পারবে।”
যিরীহো অধিকৃত
6 নূনের পুত্র যিহোশূয় সেই মত যাজকদের সকলকে একত্র ডেকে বললেন, “প্রভুর পবিত্র সিন্দুক আপনারা বহন করুন। আপনাদের মধ্যে সাত জনকে শিঙা নিয়ে সিন্দুকের সামনে দিয়ে এগিয়ে যেতে বলুন।”
7 তারপর যিহোশূয় লোকদের আদেশ দিলেন, “এবার যাও। শহরকে প্রদক্ষিণ করো। সশস্ত্র সৈন্যরা প্রভুর পবিত্র সিন্দুকের সামনে থেকে অভিযান করবে।”
8 যিহোশূয়র কথা শেষ হলে সাত জন যাজক প্রভুর সমক্ষে যাত্রা শুরু করলেন। তাঁরা সাতটি শিঙা বহন করলেন এবং চলতে চলতে বাজাতে লাগলেন। যাজকরা তাঁদের পিছনে পিছনে প্রভুর পবিত্র সিন্দুক বয়ে নিয়ে চললেন। 9 যে সমস্ত যাজকরা শিঙা বাজাচ্ছিলেন সশস্ত্র সৈন্যরা তাঁদের সামনে চলে গেল। বাকী লোকরা পবিত্র সিন্দুকের পিছনে হাঁটছিল। তারা শিঙা বাজাতে বাজাতে শহর পরিক্রমা করল। 10 যিহোশূয় তাদের যুদ্ধধ্বনি দিতে বারণ করলেন। তিনি বললেন, “এখন চিৎকার কোরো না। আমি তোমাদের না বলা পর্যন্ত একটা কথাও বলবে না। যেদিন বলব সেদিন চেঁচিয়ো।”
11 যিহোশূয়র কথা মত যাজকরা প্রভুর পবিত্র সিন্দুক নিয়ে একবার শহর প্রদক্ষিণ করলেন। তারপর তাঁরা তাঁবুতে ফিরে গিয়ে রাত্রি কাটালেন।
12 পরদিন খুব ভোরে যিহোশূয় ঘুম থেকে উঠলেন। যাজকরা আবার প্রভুর সিন্দুক কাঁধে তুলে নিলেন। 13 সাত জন যাজক সাতটি শিঙা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। তাঁরা প্রভুর পবিত্র সিন্দুকের সামনে শিঙা বাজাতে বাজাতে এগিয়ে চললেন। তাঁদের আগে আগে চলেছে সশস্ত্র সৈন্যরা। বাকী লোকরা প্রভুর পবিত্র সিন্দুকের পেছনে পেছনে চলছিল এবং প্রতিবার প্রদক্ষিণের পর তাদের শিঙা বাজাচ্ছিল। 14 দ্বিতীয় দিন তারা সকলে একবার শহর পরিক্রমা করল। তারপর শিবিরে ফিরে এলো। দুদিন ধরে তারা প্রতিদিন এইভাবেই কাটাল।
15 সপ্তম দিনে উষাকালে তারা উঠে পড়ল। তারা সাতবার শহর প্রদক্ষিণ করল। এর আগে এভাবেই তারা শহর প্রদক্ষিণ করেছিল, কিন্তু সেদিন তারা সাতবার শহর প্রদক্ষিণ করল। 16 সপ্তম বার তারা শহর পরিক্রমা করলে যাজক শিঙা বাজালেন। তখন যিহোশূয় আদেশ দিলেন, “এবার চিৎকার করো। প্রভু তোমাদের এই শহর দান করেছেন। 17 এই শহর এবং শহরের সবকিছু প্রভুর। শুধু গণিকা রাহব এবং তার বাড়ীর লোকরা বেঁচে থাকবে। এদের তোমরা হত্যা কোরো না, কারণ সে আমাদের দুজন গুপ্তচরকে সাহায্য করেছিল। 18 আর একথাও মনে রেখো, আর যা সব আছে আমরা ধ্বংস তো করবই, কিন্তু তোমরা কোন কিছুই নিয়ে যেতে পারবে না। যদি তোমরা ঐসব জিনিস সঙ্গে নিয়ে আমাদের শিবিরে আসো, তবে তোমরাও ধ্বংস হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে তোমরা ইস্রায়েলের লোকদেরও বিপদ ডেকে আনবে। 19 যত সোনা, রূপা, আর পিতল ও লোহার তৈরী জিনিসপত্র আছে সবই প্রভুর সম্পদ। সেই সব সম্পদ প্রভুর কোষাগারেই থাকবে।”
20 যাজকরা শিঙা বাজালেন। লোকরা শিঙার শব্দ শুনে চিৎকার করে উঠল। প্রাচীরগুলো ভেঙ্গে পড়ল। তারা সকলে দৌড়ে শহরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। এইভাবে ইস্রায়েলের লোকরা শহর দখল করে নিল। 21 শহরে যা কিছু ছিল সব তারা ধ্বংস করে ফেলল। জীবিত সব কিছুকেই তারা মেরে ফেলল। যুবক যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কাউকেই বাদ দিল না। গরু, মেষ, গাধা সকলকে তারা মেরে ফেলল।
22 যিহোশূয় গুপ্তচর দুজনের সঙ্গে কথা বললেন। তিনি বললেন, “সেই গণিকার গৃহে তোমরা যাও। তাকে এবং তার সঙ্গে যারা আছে তাদের বার করে নিয়ে এসো। তোমরা তাকে যেমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে, সেই প্রতিশ্রুত কথা অনুসারে কাজ করো।”
23 সেই মত দুজন বাড়ীতে ঢুকে রাহবকে বার করে আনল। তারা তার মাতা, পিতা, ভাই পরিবারের সকলকেই বার করে আনল। তাছাড়া আর যারা রাহবের সঙ্গে ছিল তাদেরও উদ্ধার করল। এদের সবাইকে তারা ইস্রায়েলের শিবিরের বাইরে একটা নিরাপদ জায়গায় রেখে দিল।
24 তারপর ইস্রায়েলবাসীরা সমস্ত শহর জ্বালিয়ে দিল। সোনা, রূপো, পিতল আর লোহার তৈরী জিনিস ছাড়া আর সব কিছুই তারা জ্বালিয়ে দিল। তারা ঐ জিনিসগুলি প্রভুর কোষাগারে রাখল। 25 গণিকা রাহব, তার পরিবারের সকলকে এবং তার সঙ্গে আর যারা ছিল যিহোশূয় তাদের সবাইকে রক্ষা করেছিলেন। তিনি তাদের বাঁচিয়েছিলেন, কারণ রাহব যিহোশূয়র পাঠানো গুপ্তচরদের, যারা যিরীহোতে এসেছিল তাদের সাহায্য করেছিল। আজও ইস্রায়েলবাসীদের মধ্যে রাহব বাস করছে।
26 সেই সময় যিহোশূয় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন:
“যে গড়িবে পুনরায় যিরীহো নগর,
প্রভুর রোষানল পড়িবে তাহার উপর।
নগরের ভিত্তি যে করিবে স্থাপন,
জ্যেষ্ঠতম সন্তান সে খোয়াবে আপন;
যে জন নির্মাণ করে নগরের দ্বার,
কনিষ্ঠ সন্তান তার হইবে সংহার।”[a]
27 প্রভু যিহোশূয়র সঙ্গে রইলেন। আর যিহোশূয় সারা দেশে বিখ্যাত হয়ে গেলেন।
যীশুর জীবন সম্পর্কে লূকের লেখা
1 মাননীয় থিয়ফিল,
আমাদের মধ্যে যে সব ঘটনা ঘটেছে সেগুলির বিবরণ লিপিবদ্ধ করার জন্য বহু ব্যক্তি চেষ্টা করেছেন। 2 তাঁরা সেই একই বিষয় লিখেছেন, যা আমরা জেনেছি তাঁদের কাছ থেকে, যাঁরা প্রথম থেকে নিজেদের চোখে দেখেছেন এবং এই বার্তা ঘোষণা করেছেন। 3 তাই আমার মনে হল যে যখন আমি সেই সব বিষয় প্রথম থেকে ভালভাবে খোঁজ খবর নিয়েছি তখন তা সুন্দরভাবে গুছিয়ে লিখি। 4 যার ফলে আপনি জানবেন, যে বিষয়গুলি আপনাকে জানানো হয়েছে সেগুলি সত্য।
সখরিয় ও ইলীশাবেৎ
5 যিহূদিয়ার রাজা হেরোদের সময়ে সখরিয় নামে একজন যাজক ছিলেন। ইনি ছিলেন অবিয়ের দলের[a] যাজকদের একজন। সখরিয়র স্ত্রী ইলীশাবেৎ ছিলেন হারোণের বংশধর। 6 তাঁরা উভয়েই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ধার্মিক ছিলেন। প্রভুর সমস্ত আদেশ ও বিধি-ব্যবস্থা তাঁরা নিখুঁতভাবে পালন করতেন। 7 ইলীশাবেৎ বন্ধ্যা হওয়ার দরুন তাঁদের কোন সন্তান হয় নি। তাঁদের উভয়েরই অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিল।
8 একবার তাঁর দলের যাজকদের ওপর দায়িত্বভার পড়েছিল, তখন সখরিয় যাজক হিসেবে মন্দিরে ঈশ্বরের সেবা করছিলেন। 9 যাজকদের কার্য প্রণালী অনুযায়ী তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছিল যেন তিনি মন্দিরের মধ্যে গিয়ে প্রভুর সামনে ধূপ জ্বালাতে পারেন। 10 ধূপ জ্বালাবার সময় বাইরে অনেক লোক জড় হয়ে প্রার্থনা করছিল।
11 এমন সময় প্রভুর এক স্বর্গদূত সখরিয়র সামনে উপস্থিত হয়ে ধূপবেদীর ডানদিকে দাঁড়ালেন। 12 সখরিয় সেই স্বর্গদূতকে দেখে চমকে উঠলেন এবং খুব ভয় পেলেন। 13 কিন্তু স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, “সখরিয় ভয় পেও না, কারণ তুমি যে প্রার্থনা করেছ, ঈশ্বর তা শুনেছেন। তোমার স্ত্রী ইলীশাবেতের একটি পুত্র সন্তান হবে, তুমি তার নাম রাখবে যোহন। 14 সে তোমার জীবনে আনন্দ ও সুখের কারণ হবে, তার জন্মের দরুণ আরো অনেকে আনন্দিত হবে। 15 কারণ প্রভুর দৃষ্টিতে যোহন হবে এক মহান ব্যক্তি। সে অবশ্যই দ্রাক্ষারস বা নেশার পানীয় গ্রহণ করবে না। জন্মের সময় থেকেই যোহন পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হবে।
16 “ইস্রায়েলীয়দের অনেক লোককেই সে তাদের প্রভু ঈশ্বরের পথে ফেরাবে। 17 যোহন এলিয়ের[b] আত্মায় ও শক্তিতে প্রভুর আগে চলবে। সে পিতাদের মন তাদের সন্তানদের দিকে ফেরাবে, আর অধার্মিকদের মনের ভাব বদলে ধার্মিক লোকদের মনের ভাবের মতো করবে। প্রভুর জন্য সে এইভাবে লোকদের প্রস্তুত করবে।”
18 তখন সখরিয় সেই স্বর্গদূতকে বললেন, “আমি কিভাবে জানব যে সত্যিই এসব হবে? কারণ আমি তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি, আর আমার স্ত্রীরও অনেক বয়স হয়ে গেছে।”
19 এর উত্তরে স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, “আমি গাব্রিয়েল, ঈশ্বরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি; আর তোমার সঙ্গে কথা বলার জন্য ও তোমাকে এই সুখবর দেবার জন্যই আমাকে পাঠানো হয়েছে। 20 কিন্তু জেনে রেখো! এইসব ঘটনা ঘটা পর্যন্ত তুমি বোবা হয়ে থাকবে, কথা বলতে পারবে না, কারণ তুমি আমার কথা বিশ্বাস করলে না, কিন্তু আমার এইসব কথা নিরুপিত সময়েই পূর্ণ হবে।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International