Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Old/New Testament

Each day includes a passage from both the Old Testament and New Testament.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
দ্বি. বি. 1-3

মোশি ইস্রায়েলের লোকদের সঙ্গে কথা বললেন

মোশি ইস্রায়েলের লোকদের এই বার্তা দিয়েছিলেন। এই সময় তারা যর্দন নদীর পূর্বদিকের মরুভূমিতে যর্দন উপত্যকায় ছিল। এটি ছিল সূফের অপর পারে, যার একদিকে পারণ মরুভূমি আর অন্যদিকে তোফল, লাবন, হৎ‌‌সেরোৎ‌‌ এবং দীষাহর শহরগুলো।

সেয়ীর পর্বতমালার মধ্য দিয়ে হোরেব (সীনয়) পর্বত থেকে কাদেশ বর্ণেয় পর্যন্ত যেতে মাত্র এগারো দিন লাগে। কিন্তু ইস্রায়েলের লোকদের মিশর ত্যাগ করার পর থেকে তাদের এই স্থানে আসা পর্যন্ত 40 বৎসর অতিক্রান্ত হয়েছে। 40তম বৎসরের একাদশ মাসের প্রথম দিনে মোশি লোকদের সঙ্গে কথা বললেন। প্রভু যা আজ্ঞা করেছিলেন, মোশি তার সমস্তটাই তাদের বললেন। এ হল প্রভুর সীহোন এবং ওগকে পরাজিত করার পরের ঘটনা। (সীহোন ছিলেন ইমোরীয়দের রাজা, তিনি হিষ্বোনে বাস করতেন। ওগ ছিলেন বাশনের রাজা, তিনি অষ্টারোৎ‌‌ এবং ইদ্রিয়ীতে বাস করতেন।) ইস্রায়েলের লোকরা যর্দন নদীর পূর্বদিকে মোয়াবে থাকাকালীন মোশি ঈশ্বরের আদেশগুলির বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে শুরু করলেন। তিনি বললেন:

“হোরেব পর্বতে প্রভু, আমাদের ঈশ্বর আদেশ করে বলেছিলেন, ‘তোমরা যথেষ্ট সময় এই পর্বতে বাস করেছো। ইমোরীয় লোকরা যেখানে বাস করে সেই পাহাড়ী দেশে যাও। সেখানে আশেপাশের সমস্ত জায়গাতেই যাও। যর্দন উপত্যকা, পাহাড়ী দেশ, পশ্চিমের ঢালু অঞ্চল, নেগেভ এবং সমুদ্রতীরে যাও। কনান এবং লিবানোনের মধ্য দিয়ে বৃহৎ‌‌ নদী ফরাৎ পর্যন্ত যাও। দেখো, আমি তোমাদের সেই দেশ দিচ্ছি। যাও এবং সেই দেশটি অধিকার কর। আমি শপথ করেছিলাম যে সেই জমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের অব্রাহাম, ইস‌্হাক এবং যাকোবকে দেব। আমি শপথ করেছিলাম যে সেই জমি তাঁদের এবং তাঁদের উত্তরপুরুষদের দেবো।’”

মোশি নেতাদের বেছে নিলেন

মোশি বললেন, “সেই সময় আমি বলেছিলাম যে আমার একার পক্ষে তোমাদের ভার নেওয়া সম্ভব নয়। 10 প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর, লোকসংখ্যা আরও বৃদ্ধি করেছেন, আর তাই আজ তোমাদের সংখ্যা আকাশের অগণিত তারার মতো। 11 প্রভু, তোমাদের পূর্বপূরুষদের ঈশ্বর, তোমাদের সংখ্যা এখন যা রয়েছে তার থেকে 1000 গুণ বৃদ্ধি করুন। তিনি ঠিক যেমন শপথ করেছিলেন, সেভাবেই তোমাদের আশীর্বাদ করুন। 12 কিন্তু আমি একা তোমাদের দায়িত্ব নিতে পারবো না এবং তোমাদের সকল সমস্যার সমাধান করতে পারবো না। 13 সেই কারণে তোমরা প্রত্যেক পরিবারগোষ্ঠী থেকে কয়েকজন লোককে বেছে নাও, আমি তাদের তোমাদের নেতা হিসাবে মনোনীত করব। বিজ্ঞ লোকদের বেছে নাও যাদের বোধশক্তি এবং অভিজ্ঞতা আছে।”

14 “তোমরা বলেছিলে, ‘আপনি যা বলেছেন সেটা করাই ভালো হবে।’

15 “সুতরাং তোমাদের পরিবারগোষ্ঠী থেকে তোমাদের নির্বাচিত জ্ঞানী এবং সম্মানিত লোকদের নিয়ে আমি তাঁদের তোমাদের নেতা হবার জন্য নিযুক্ত করেছিলাম। এই প্রকারে, আমি তোমাদের 1000 জন লোকের জন্যে নেতা, 100 জন লোকের জন্য নেতা, 50 জন লোকের জন্য নেতা, 10 জন লোকের জন্য নেতার ব্যবস্থা করেছিলাম। এছাড়াও আমি তোমাদের প্রত্যেক পরিবারগোষ্ঠীর জন্য উচ্চপদাধিকারী ব্যক্তি নিয়োগ করেছিলাম।

16 “সেই সময়, আমি ঐ সকল বিচারকদের বলেছিলাম, ‘নিজের লোকদের মধ্যে যে সব যুক্তিতর্কের আদান প্রদান হবে সেগুলো ভালো করে শুনো। প্রত্যেকটি ঘটনা বিচার করার সময় নিরপেক্ষ হবে। সমস্যাটি দুজন ইস্রায়েলীয় লোকের মধ্যেই হোক্ অথবা একজন ইস্রায়েলীয় এবং একজন বিদেশীর মধ্যেই হোক্, তাতে অবস্থার কোনো প্রভেদ হবে না। তোমরা অবশ্যই প্রত্যেকটি ঘটনা নিরপেক্ষভাবে বিচার করবে। 17 বিচার করার সময় কখনই একজন ব্যক্তিকে অন্যের থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে না। প্রত্যেক ব্যক্তির সমান বিচার করবে। কোনো ব্যক্তির সম্পর্কেই ভীত হবে না, কারণ তোমাদের সিদ্ধান্ত ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা সিদ্ধান্ত। কিন্তু যদি কোনো ঘটনা বিচার করা তোমাদের পক্ষে খুবই কঠিন হয়, তাহলে সেটি আমার কাছে নিয়ে এসো; এবং আমি সেটির বিচার করবো।’ 18 সেই একই সময়, আমি তোমাদের অবশ্য করণীয় অন্যান্য কর্তব্য সম্পর্কেও বলেছিলাম।

চররা কনানে গেল

19 “তখন আমরা আমাদের প্রভু ঈশ্বরকে মান্য করেছিলাম। আমরা হোরেব পর্বত ত্যাগ করেছিলাম এবং ইমোরীয় লোকদের পার্বত্যদেশ অভিমুখে যাত্রা করেছিলাম। তোমরা যে বড় এবং সাংঘাতিক একটি মরুভূমি দেখেছিলে, তার মধ্য দিয়েই আমরা কাদেশ-বর্ণেয়ে এসেছিলাম। 20 তখন আমি তোমাদের বলেছিলাম, ‘তোমরা এখন ইমোরীয়দের পার্বত্য দেশে এসেছো। প্রভু, আমাদের ঈশ্বর, আমাদের এই দেশ প্রদান করবেন। 21 দেখো, ওটি ওখানেই আছে। ওপরে যাও এবং নিজেদের জন্য তোমরা ঐ দেশটিকে অধিকার করো! প্রভু তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর, তোমাদের এটি করতে বলেছিলেন; সুতরাং ভয় পেও না, কোনো কিছুর সম্পর্কেই উদ্বিগ্ন হয়ো না!’

22 “কিন্তু তোমরা সকলে আমার কাছে এসে বলেছিলে, ‘প্রথমে দেশটিকে অনুসন্ধান করে দেখার জন্য কিছু লোককে আমরা পাঠাই। এরপর তারা ফিরে এসে আমাদের কোন্ পথে রওনা দিতে হবে এবং কোন্ কোন্ শহরে যেতে হবে তার সন্ধান দেবে।’

23 “আমার এই প্রস্তাব ভাল লেগেছিল। সেই কারণে আমি তোমাদের প্রত্যেক পরিবারগোষ্ঠী থেকে একজন করে মোট বারোজন লোককে বেছে নিয়েছিলাম। 24 এরপর তারা সেই জায়গা ত্যাগ করে পার্বত্য দেশের ওপরে উঠেছিল এবং তাঁরা ইষ্কোল উপত্যকায় এসে এটির অনুসন্ধান করেছিল। 25 তারা সেই দেশ থেকে কিছু ফল সংগ্রহ করে সেগুলো নিয়ে আমাদের কাছে ফিরে এসে এই সংবাদ দিয়ে বলল, ‘প্রভু, আমাদের ঈশ্বর, যে দেশ দিচ্ছেন, সে উত্তম দেশ!’

26 “কিন্তু তোমরা সেই দেশের অভ্যন্তরে যেতে অস্বীকার করেছিলে। তোমরা তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের আজ্ঞার বিরুদ্ধাচরণ করেছিলে। 27 তোমরা তোমাদের তাঁবুতে অভিযোগ করে বলেছিলে, ‘প্রভু আমাদের ঘৃণা করেন! তিনি আমাদের মিশর থেকে বার করে নিয়ে এসেছিলেন যাতে ইমোরীয়রা আমাদের ধ্বংস করতে পারে! 28 আমরা এখন কোথায় যেতে পারি? আমাদের ভাইরা (বারোজন চর) তাদের তথ্যের দ্বারা আমাদের ভীত করেছে। তারা বলেছিল: সেখানকার অধিবাসীরা আমাদের তুলনায় অনেক বড় এবং লম্বা। শহরগুলো বড় এবং তাদের প্রাচীরগুলো আকাশের সমান উঁচু এবং আমরা সেখানে দৈত্যাকার লোকও দেখেছিলাম!’”

29 “তখন আমি তোমাদের বলেছিলাম, ‘তোমরা মনঃক্ষুন্ন হয়ো না! ঐ সকল লোকদের সম্পর্কে ভীত হয়ো না! 30 প্রভু তোমাদের ঈশ্বর, তোমাদের আগে আগে যাবেন এবং তোমাদের হয়ে যুদ্ধ করবেন। মিশরে তোমাদের চোখের সামনে তিনি যা করেছিলেন, এখানেও তিনি সেই একই কাজ করবেন। 31 তোমরা সেখানে এবং মরুভূমিতে তাঁকে তোমাদের সম্মুখে যেতে দেখেছিলে। তোমরা দেখেছিলে যেভাবে একজন পিতা তার পুত্রকে বহন করে নিয়ে যায়, ঠিক সেভাবে প্রভু তোমাদের ঈশ্বর, তোমাদের বহন করেছিলেন। এই স্থানে পৌঁছানো পর্যন্ত সমস্ত রাস্তাই প্রভু তোমাদের নিরাপদে নিয়ে এসেছিলেন।’

32 “কিন্তু তা সত্ত্বেও তোমরা তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের ওপরে আস্থা রাখতে পারো নি! 33 অথচ তোমাদের ভ্রমণের সময় তোমাদের শিবির স্থাপনের উপযুক্ত জায়গা খুঁজে বার করার জন্য তিনিই তোমাদের আগে গিয়েছিলেন। যে রাস্তা দিয়ে তোমাদের যাওয়া উচিৎ‌ সেটি প্রদর্শনের জন্য তিনিই রাত্রে আগুনের মধ্য দিয়ে এবং দিনের বেলায় মেঘের মধ্য দিয়ে তোমাদের সামনে গিয়েছিলেন।

লোকরা কনানে প্রবেশের অনুমতি পেল না

34 “তোমাদের অভিযোগ প্রভু শুনেছিলেন এবং তিনি এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তিনি এক কঠিন প্রতিজ্ঞা করে বলেছিলেন, 35 ‘তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে আমি যে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, সেই উত্তম দেশে তোমরা মন্দ লোকরা যারা এখন বেঁচে আছো, তারা কেউই প্রবেশ করবে না। 36 কেবলমাত্র যিফন্নির পুত্র কালেব সেই দেশ দেখতে পাবে। কালেব যে জায়গা দিয়ে হেঁটে গিয়েছিল সেই জায়গা আমি তাকে এবং তার উত্তরপুরুষদের দেবো। কারণ, আমার নির্দেশমতো কালেব সব কাজ করেছিলো।’

37 “তোমাদের জন্য প্রভু আমার ওপরও ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘মোশি তুমিও এই দেশে প্রবেশ করতে পারবে না। 38 কিন্তু তোমার সহায়ক, নূনের পুত্র যিহোশূয় ঐ দেশে প্রবেশ করতে পারবে। যিহোশূয়কে উৎসাহিত করো, কারণ দেশটিকে অধিকার করার জন্য সে ইস্রায়েলের লোকদের নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ 39 এবং প্রভু আমাদের বলেছিলেন, ‘তোমরা বলেছিলে, তোমাদের সন্তানরা তোমাদের শত্রুদের দ্বারা অপহৃত হবে; কিন্তু ঐ সন্তানরা ঐ দেশে প্রবেশ করবে। তোমাদের ভুলের জন্য আমি তোমাদের সন্তানদের দোষারোপ করি না, কারণ কোনটা ঠিক এবং কোনটা ভুল সেটা বোঝার পক্ষে তারা এখনও অনেক শিশু। সেই কারণে আমি তাদের ঐ দেশ দেব এবং তারা তা অধিকার করবে। 40 কিন্তু তোমরা সূফ সাগরে যাওয়ার রাস্তা ধরে মরুভূমিতে ফিরে যাও।’

41 “তখন তোমরা বলেছিলে, ‘মোশি, আমরা প্রভুর বিরুদ্ধাচরণ করে পাপ করেছি; কিন্তু এখন আমরা যাব এবং যুদ্ধ করবো, ঠিক যেমনটি আমাদের প্রভু ঈশ্বর, আমাদের আগে আজ্ঞা করেছিলেন।’

“তখন তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের অস্ত্র তুলে নিয়েছিলে। ভেবেছিলে যে সেই পার্বত্য দেশে গিয়ে সেটিকে অধিগ্রহণ করা খুবই সহজ কাজ হবে। 42 কিন্তু প্রভু আমাকে বলেছিলেন, ‘লোকদের ওপরে যেতে এবং সেখানে গিয়ে যুদ্ধ করতে বারণ করো, কারণ আমি তাদের সঙ্গে থাকবো না এবং তারা তাদের শত্রুদের কাছে পরাজিত হবে!’

43 “আমি তোমাদের সেই কথা বললাম, কিন্তু তোমরা শোন নি। তোমরা প্রভুর আজ্ঞা পালন করতে অস্বীকার করেছিলে। তোমরা যোগ্য না হয়ে সেই কাজে হাত দিয়েছিলে এবং ওপরের পার্বত্য দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিলে। 44 কিন্তু সেখানে বসবাসকারী ইমোরীয় লোকরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বেরিয়ে এসেছিল। তারা তোমাদের পেছনে তাড়া করা এক ঝাঁক মৌমাছির মতো ছিল। সেয়ীর থেকে হর্মা পর্যন্ত সমস্ত রাস্তা তোমাদের তাড়া করেছিল। 45 তখন তোমরা ফিরে এসেছিলে এবং প্রভুর কাছে সাহায্যের জন্য কেঁদেছিলে। কিন্তু প্রভু তোমাদের কান্নায় মন দিলেন না, তোমাদের কোনো কথা শুনলেন না। 46 আর তোমরা কাদেশে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছিলে।

ইস্রায়েলের লোকরা মরুভূমিতে দীর্ঘদিন ধরে ঘুরেছিল

“তারপর প্রভু আমাকে যা করতে বলেছিলেন, সেই অনুসারে আমরা সূফ সাগরে যাওয়ার রাস্তা দিয়ে মরুভূমিতে ফিরে গিয়েছিলাম। সেয়ীর পর্বতমালাকে চক্রাকারে বেষ্টন করে আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমণ করেছিলাম। তখন প্রভু আমাকে বলেছিলেন, ‘এই পর্বতমালাকে ঘিরে তোমরা বহুদিন ধরে ভ্রমণ করেছ। উত্তর দিকে ঘুরে যাও। লোকদের এই কথাগুলো বল: তোমরা সেয়ীর দেশের মধ্য দিয়ে যাবে। এই দেশটি তোমাদের আত্মীয় এষৌ এর উত্তরপুরুষের। তারা তোমাদের ভয় পাবে। তাই তোমরা সাবধান হবে। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করো না। তাদের দেশের কোনো অংশই আমি তোমাদের দেবো না—এমন কি এর এক ফুট পরিমাণও নয়। কারণ আমি এষৌকে সেয়ীরের পার্বত্য প্রদেশটি তার নিজের দেশ হিসাবে দিয়েছি। তোমরা তাদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে খাবার কিনে খাবে এবং জল কিনে পান করবে। মনে রাখবে যে তোমরা যা করেছো তার প্রত্যেকটি কাজে প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর, তোমাদের আশীর্বাদ করেছেন। এই বৃহৎ‌‌ মরুভূমির মধ্য দিয়ে তোমাদের হাঁটার খবর তিনি জানেন। এই 40 বছর ধরে প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর তোমাদের সঙ্গে আছেন। তাই তোমাদের কোন কিছুরই অভাব হয় নি।’

“সেই কারণে আমরা সেয়ীরে বসবাসকারী এষৌ এর লোকদের অর্থাৎ‌ আমাদের আত্মীয়দের সামনে দিয়ে চলে গেলাম। যর্দন উপত্যকা থেকে এলৎ‌‌ এবং ইৎ‌‌সিয়োন গেবরের শহরে যাওয়ার রাস্তা ত্যাগ করে আমরা মোয়াবের মরুভূমিতে যাওয়ার রাস্তার দিকে ঘুরেছিলাম।

আর-এ ইস্রায়েল

“প্রভু আমাকে বলেছিলেন, ‘মোয়াবে লোকদের কষ্ট দিও না, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করো না, তাদের দেশের কোনো অংশই আমি তোমাদের দেবো না। তারা লোটের উত্তরপুরুষ এবং আমিই তাদের আর্ শহর দান করেছিলাম।’”

10 (অতীতে, আর্-এ এমীয় লোকরা বাস করতো। তারা খুব শক্তিশালী ছিল এবং সেখানে তাদের সংখ্যাও ছিল প্রচুর। অনাকীয় লোকদের মতো তারা উচ্চতায় ছিল বেশ লম্বা। 11 অনাকীয় ছিল রফায়ীয় লোকদেরই অংশ বিশেষ। লোকরা ভেবেছিল যে এমীয়রাও রফায়ীয়; কিন্তু মোয়াবে লোকরা তাদের এমীয় বলত। 12 আগে সেয়ীরে হোরীয় লোকরাও থাকত, কিন্তু এষৌ এর লোকরা হোরীয়দের তাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তাদের ধ্বংস করে দেশেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিল। ইস্রায়েলের লোকরাও ঠিক এই রকমটাই করেছিল। প্রভু তাদের যে দেশ দিয়েছিলেন সেই দেশের লোকদের প্রতি এই একই কাজ করেছিল।)

13 “প্রভু আমাকে বলেছিলেন, ‘এখন তোমরা সেরদ উপত্যকার অপর দিকে যাও।’ সেই কারণে আমরা সেরদ উপত্যকা পার করেছিলাম। 14 কাদেশ বর্ণেয় ত্যাগের পর থেকে সেরদ উপত্যকা অতিক্রম করা পর্যন্ত মাঝখানে 38 বছরের ব্যবধান ছিল। এই সময়ের মধ্যে আমাদের শিবিরের সব পুরুষ যোদ্ধারাই মারা গিয়েছিল। প্রভু তেমনই শপথ করেছিলেন। 15 শিবিরের মধ্যে তাদের সকলের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত প্রভু তাদের বিরুদ্ধে ছিলেন।

16 “আমাদের সমস্ত যোদ্ধারা মারা যাওয়ার পর, 17 প্রভু আমাকে এই কথা বলেছিলেন, 18 আজ তোমরা অবশ্যই আর্-এ সীমান্ত পার করবে এবং মোয়াবে প্রবেশ করবে। 19 তোমরা অম্মোনীয়দের কাছে উপস্থিত হয়ে তাদের বিরক্ত করবে না। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করো না, কারণ আমি তাদের দেশ তোমাদের দান করবো না। কারণ তারা লোটের উত্তরপুরুষ এবং আমিই তাদের ঐ দেশ দিয়েছি।”

20 (সেই দেশ রফায়ীয়র দেশ বলেও পরিচিত। অতীতে রফায়ীয় লোকরা সেখানে বাস করতো। অম্মোনের লোকরা তাদের সম্সুম্মীয় বলে ডাকত। 21 সেখানে বহু সম্সুম্মীয় ছিল এবং তারা ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী। অনাকীয় লোকদের মতো তারা উচ্চতায় লম্বা ছিল। কিন্তু সম্সুম্মীয়দের ধ্বংস করতে প্রভু অম্মোন লোকদের সাহায্য করেছিলেন। অম্মোন লোকরা সেই দেশ অধিগ্রহণ করে সেখানেই বাস করছে। 22 এষৌ এর লোকদের জন্য ঈশ্বর এই একই কাজ করেছিলেন। অতীতে হোরীয় লোকরা সেয়ীরে (ইদোম) বাস করত; কিন্তু এষৌ এর লোকরা হোরীয়দের ধ্বংস করে আজ পর্যন্ত এষৌর উত্তরপুরুষ সেখানেই বাস করছে। 23 কপ্তোরীয়ের কিছু সংখ্যক লোকের জন্যও ঈশ্বর এই একই কাজ করেছিলেন। ঘসার চতুর্দিকের শহরে অব্বীয় লোকরা বাস করত। কিন্তু কিছু সংখ্যক লোক কপ্তোরীয় থেকে এসে অব্বীয়দের ধ্বংস করেছিল। ক্রিট্ থেক আগত ঐ সকল লোকরা সেই দেশ অধিগ্রহণ করে সেখানেই বাস করল।)

ইমোরীয় লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ

24 “প্রভু আমাকে বলেছিলেন, ‘অর্ণোন উপত্যকা অতিক্রম করে যাওয়ার জন্য তৈরী হও। হিষ্বোনে ইমোরীয়দের রাজা সীহোনকে পরাজিত করতে আমি তোমাদের সাহায্য করবো। তার দেশ অধিগ্রহণ করতে আমি তোমাদের সাহায্য করবো। সুতরাং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হও এবং তার দেশ অধিগ্রহণ করো। 25 আজ আমি সমস্ত জায়গার সকল লোকের মধ্যে তোমাদের সম্পর্কে ভীতির সঞ্চার করবো। তারা তোমাদের খবর জেনে ভয়ে আতঙ্কিত এবং কম্পিত হবে।’

26 “কদেমোৎ-এর মরুভূমিতে থাকাকালীন আমি হিষ্বোনের রাজা সীহোনের কাছে কয়েকজন দূত পাঠিয়েছিলাম। দূতেরা সীহোনকে শান্তির প্রস্তাব দিয়ে বলেছিল, 27 ‘আপনার দেশের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে দিন। আমরা রাস্তাতেই থাকবো। আমরা রাস্তার ডানদিক অথবা বামদিক কোনো দিকেই ঘুরব না। 28 আমরা আপনাদের কাছ থেকে খাবার ও জল রূপো দিয়ে কিনে খাব। আমরা শুধুমাত্র আপনার দেশের মধ্য দিয়ে পদব্রজে ভ্রমণ করতে চাই। 29 প্রভু, আমাদের ঈশ্বর যে দেশ দিচ্ছেন, যর্দন নদী অতিক্রম করে সেই দেশে পৌঁছানো পর্যন্ত আমাদের আপনার দেশের মধ্য দিয়ে যেতে দিন। সেয়ীরে বসবাসকারী এষৌয় লোকরা এবং আর্-এ বসবাসকারী মোয়াবীয় লোকরা তাদের দেশের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে দিয়েছেন।’

30 “কিন্তু সীহোন, হিষ্বোনের রাজা, আমাদের তাঁর দেশের মধ্য দিয়ে যেতে দেননি। কারণ প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর তাঁর মন কঠিন ও একগুঁয়ে করলেন যেন তিনি তাঁকে তোমাদের হাতে সমর্পণ করেন, যেমন তিনি আজ পর্যন্ত রয়েছেন!

31 “প্রভু আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি রাজা সীহোন এবং তার দেশ তোমাদের দিচ্ছি। এখন যাও তার দেশ অধিগ্রহণ করো!’

32 “এরপর যহস নামক স্থানে রাজা সীহোন এবং তার সমস্ত লোকরা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে এসেছিল। 33 কিন্তু প্রভু, আমাদের ঈশ্বর সীহোনকে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। আমরা রাজা সীহোন, তার পুত্রদের এবং তার সমস্ত লোকদের পরাজিত করেছিলাম। 34 সেই সময় রাজা সীহোনের সব শহরগুলোই আমরা অধিকার করেছিলাম। প্রত্যেক শহরের সমস্ত লোকদের, সকল পুরুষদের, স্ত্রীলোকদের এবং ছোট ছোট শিশুদের আমরা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছিলাম। আমরা কাউকেই জীবিত ছেড়ে দিই নি! 35 ঐ সমস্ত শহরগুলো থেকে আমরা কেবলমাত্র গবাদিপশু এবং মুল্যবান দ্রব্যসামগ্রী নিয়েছিলাম। 36 অর্ণোন উপত্যকার ধারের অরোয়ের নামে একটি শহরকে এবং ঐ উপত্যকার মাঝখানের আরেকটি শহরকে আমরা পরাজিত করেছিলাম। অর্ণোন উপত্যকা এবং গিলিয়দের মাঝখানের সমস্ত শহরগুলোকে পরাজিত করতে প্রভু আমাদের সাহায্য করেছিলেন। আমাদের কাছে কোনো শহরই খুব শক্তিশালী ছিল না। 37 কিন্তু অম্মোনের লোকদের অধিকারভুক্ত দেশের কাছে তোমরা যাও নি। যব্বোক নদীর উপকূলে অথবা পার্বত্য অঞ্চলের শহরগুলোর কাছেও তোমরা যাও নি। তোমরা সেই সমস্ত স্থানে যাও নি যেখানে যেতে প্রভু আমাদের নিষেধ করেছিলেন।

বাশনের লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ

“আমরা ফিরেছিলাম এবং বাশনের রাস্তা ধরে গিয়েছিলাম। ইদ্রিয়ীতে বাশনের রাজা ওগ এবং তার সমস্ত লোকরা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বেরিয়ে এসেছিল। প্রভু আমাকে বলেছিলেন, ‘ওগ সম্পর্কে ভীত হয়ো না। আমি স্থির করেছি যে তাকে আমি তোমাদের কাছে সমর্পণ করব। তার সমস্ত লোকদের এবং তার দেশ আমি তোমাদের দেব। হিষ্বোনে যিনি শাসনকার্য চালাতেন সেই ইমোরীয় রাজা সীহোনকে তোমরা যেভাবে পরাজিত করেছিলে, ঠিক সেই ভাবেই তোমরা একেও পরাজিত করবে।’

“সেই কারণে প্রভু, আমাদের ঈশ্বর বাশনের রাজা ওগকে পরাজিত করতে সাহায্য করেছিলেন। আমরা তাকে এবং তার সমস্ত লোকদের পরাজিত করেছিলাম। তাদের আর কেউই বাকী ছিল না। সেই সময় ওগের অধিকারে যে সমস্ত শহর ছিল তার সবগুলোই আমরা অধিকার করেছিলাম। ওগের লোকদের কাছ থেকে আমরা সব শহরগুলোই অধিকার করেছিলাম। এর মধ্যে ছিল বাশনের রাজা ওগের রাজ্য, অর্গোব নামক অঞ্চলের 60 টি শহর। এই সমস্ত শহরগুলো খুবই শক্তিশালী ছিল। তাদের দেওয়ালগুলি উঁচু, দরজা এবং দরজার ওপরে খিল ছিল খুব শক্ত। সেখানে আরও বহু এমন শহর ছিল যেগুলোর কোনো প্রাচীর ছিল না। হিষ্বোনের রাজা সীহোনের শহরগুলিকে আমরা যেভাবে ধ্বংস করেছিলাম, সেভাবেই এদেরও ধ্বংস করেছিলাম। প্রত্যেকটি শহরকে এবং সেখানে বসবাসকারী সমস্ত লোকদের, এমনকি সমস্ত স্ত্রীলোকদের এবং শিশুদের আমরা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছিলাম। কিন্তু ঐ সমস্ত শহরের সমস্ত গোরু এবং সমস্ত মুল্যবান দ্রব্যসামগ্রী আমরা নিজেদের জন্য রেখে দিয়েছিলাম।

“সেই প্রকারে, আমরা দুজন ইমোরীয় রাজার কাছ থেকে তাদের দেশ অধিগ্রহণ করেছিলাম। যর্দন নদীর পূর্বদিকে অর্ণোন উপত্যকা থেকে মাউন্ট হর্মোণ পর্বত পর্যন্ত দেশ আমরা অধিগ্রহণ করেছিলাম। (সীদোনের লোকরা হর্মোণ পর্বতকে বলে সিরিয়োণ, কিন্তু ইমোরীয়রা এটিকে বলতো সনীর।) 10 উঁচু সমতলভূমির সমস্ত শহরগুলোকে এবং গিলিয়দ অধিগ্রহণ করেছিলাম। বাশনের সমস্ত অঞ্চল, সল্খা এবং ইদ্রিয়ী পর্যন্ত সমস্ত আমরা অধিকার করেছিলাম। সল্খা এবং ইদ্রিয়ী বাশনের রাজা ওগ-এর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।”

11 (অবশিষ্ট রফায়ীয়দের মধ্যে কেবলমাত্র বাশনের রাজা ওগ ছিলেন। ওগ-এর খাট ছিল লোহা দিয়ে তৈরী। এটি 13 ফুটেরও বেশী লম্বা এবং 6 ফুট চওড়া ছিল। খাটটি এখনও রব্বা শহরে আছে, যেখানে অম্মোন লোকরা বাস করে।)

যর্দন নদীর পূর্বদিকের দেশ

12 “সেই কারণে আমরা সেই দেশ আমাদের জন্য অধিকার করেছিলাম। রূবেণ এবং গাদের পরিবারগোষ্ঠীদের আমি এই দেশের অংশ বিশেষ দান করেছিলাম। অর্ণোন উপত্যকার আরোয়ার নামক জায়গা থেকে গিলিয়দের পার্বত্য দেশ পর্যন্ত সমস্ত দেশ এবং এর অন্তর্গত সমস্ত শহর আমি তাদের প্রদান করেছিলাম। গিলিয়দের পার্বত্য দেশের অর্ধেক তারা পেয়েছিল। 13 মনঃশির পরিবারগোষ্ঠীর অর্ধেকাংশকে আমি গিলিয়দের অপর অর্ধেক এবং বাশনের সম্পূর্ণ অঞ্চল প্রদান করেছিলাম।”

(বাশন ছিল ওগের রাজ্য। বাশনের কিছু অংশকে বলা হতো অর্গোব। এটিকে রফায়ীয় দেশও বলা হতো। 14 মনঃশির পরিবারগোষ্ঠীর যায়ীর, অর্গোবের সমস্ত অঞ্চল অধিগ্রহণ করেছিলেন। গশূরীয় লোকদের এবং মাখাথীয় লোকদের সীমানা পর্যন্ত সেই অঞ্চল বিস্তৃত ছিল। সেই অঞ্চলটি যায়ীর নামে অভিহিত হয়েছিল। সেই কারণে আজও লোকরা বাশনকে যায়ীরের শহর বলে।)

15 “আমি মাখীরকে গিলিয়দ প্রদান করেছিলাম। 16 এবং রূবেণের পরিবারগোষ্ঠীকে এবং গাদ-এর পরিবারগোষ্ঠীকে আমি সেই দেশ প্রদান করেছিলাম, যেটি গিলিয়দে শুরু হয়েছে। এই দেশটি অর্ণোন উপত্যকা থেকে যব্বোক নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। উপত্যকাটির মধ্যাঞ্চল হল একটি সীমানা। যব্বোক নদীটি হল অম্মোনীয় লোকদের সীমানা। 17 মরুভূমির কাছের যর্দন নদী ছিল তাদের পশ্চিম সীমানা। এই অঞ্চলের উত্তরে গালিল হ্রদ এবং দক্ষিণে রয়েছে মৃতের সমুদ্র (লবণ সমুদ্র)। এটি পূর্বদিকের পিস্গার পাহাড়গুলির নীচে অবস্থিত।

18 “সেই সময়, আমি তোমাদের এই আদেশ দিয়েছিলাম; ‘প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর তোমাদের যর্দন নদীর পূর্বদিকের্ দেশ বাস করার জন্য দিয়েছেন। কিন্তু এখন তোমাদের যোদ্ধারা অবশ্যই তাদের অস্ত্র তুলে নেবে এবং অন্যান্য ইস্রায়েলীয় পরিবারগোষ্ঠীকে নদী অতিক্রম করার কাজে নেতৃত্ব দেবে। 19 তোমাদের স্ত্রীরা, তোমাদের সন্তানরা এবং তোমাদের সমস্ত গবাদি পশু (আমি জানি তোমাদের অনেক গবাদিপশু আছে) অবশ্যই এই শহরগুলিতে থাকবে, যেটা আমি তোমাদের দিয়েছি। 20 কিন্তু তোমরা অবশ্যই তোমাদের ইস্রায়েলীয় আত্মীয়বর্গকে সাহায্য করবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা যর্দন নদীর অপর পারে তাদের প্রভুর দেওয়া দেশ অধিগ্রহণ করে। প্রভু তাদের সেখানে শাস্তি দেওয়া পর্যন্ত তাদের সাহায্য করো, ঠিক যেমন তিনি এখানে তোমাদের জন্য করেছিলেন। এরপর আমি তোমাদের যে দেশ দিয়েছি সেখানে ফিরে আসতে পার।’

21 “তখন আমি যিহোশূয়কে বলেছিলাম, ‘প্রভু তোমাদের ঈশ্বর এই দুজন রাজার কি দশা করেছেন সেটা তুমি স্বচক্ষে দেখেছ। তুমি যে রাজ্যেই প্রবেশ করবে, সেখানেই ঈশ্বর এই একই কাজ করবেন। 22 এই সকল দেশের রাজাদের ভয় পেও না, কারণ প্রভু তোমাদের ঈশ্বর তোমাদের জন্য যুদ্ধ করবেন।’

মোশি কনানে প্রবেশের অনুমতি পেলেন না

23 “এরপর আমার বিশেষ কিছু করার জন্য আমি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম। আমি বলেছিলাম, 24 ‘প্রভু আমার মনিব, আমি তোমার সেবক। আমি জানি যে তুমি তোমার চমৎ‌‌কারিত্বের এবং শক্তির সামান্য অংশই আমাকে দেখিয়েছ। তুমি যে মহৎ‌‌ এবং শক্তি সম্পন্ন কাজ করেছ, তেমন কাজ করতে পারে এমন কোনো ঈশ্বর স্বর্গে অথবা পৃথিবীতে নেই। 25 কৃপা করে আমাকে যর্দন নদী পার হতে এবং সেই উত্তম দেশ প্রত্যক্ষ করতে দাও। আমাকে সুন্দর পার্বত্য দেশ এবং লিবানোন দর্শন করতে দাও।’

26 “কিন্তু তোমাদের জন্য প্রভু আমার ওপরে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তিনি আমার কথা শুনতে অস্বীকার করেছিলেন। প্রভু আমাকে বলেছিলেন, ‘এটাই যথেষ্ট! এই প্রসঙ্গে আর কোনো কথা বোলো না। 27 পিস্গা পর্বতের সর্বোচ্চ শিখরে যাও। এর পশ্চিম দিক, উত্তর দিক, দক্ষিণ দিক এবং পূর্ব দিক প্রত্যক্ষ কর। তুমি এইসব চোখে দেখতে পাবে, কিন্তু কখনই যর্দন নদী অতিক্রম করতে পারবে না। 28 তুমি অবশ্যই যিহোশূয়কে নির্দেশ দেবে। তুমি অবশ্যই তাকে উৎসাহিত করবে এবং তাকে সবল করবে। কারণ যর্দন নদী অতিক্রম করার কাজে যিহোশূয় লোকদের নেতৃত্ব দেবে। তুমি কেবল দেশটি দেখতে পাবে, কিন্তু যিহোশূয় তাদের ঐ দেশে নিয়ে যাবে। সে তাদের ঐ দেশটির অধিগ্রহণে এবং সেখানে বাস করতে সাহায্য করবে।’

29 “সেই কারণে, বৈৎ‌-পিয়োরের অপর দিকের উপত্যকাতেই আমরা থেকেছিলাম।

মার্ক 10:32-52

যীশু পুনরায় নিজের মৃত্যুর বিষয়ে বললেন

(মথি 20:17-19; লূক 18:31-34)

32 একদিন তাঁরা রাস্তা দিয়ে জেরুশালেমের দিকে যাচ্ছেন এবং যীশু তাঁদের আগে আগে চলেছেন। শিষ্যরা আশ্চর্য হচ্ছিলেন আর তাঁর সঙ্গে যারা চলছিল, সেই লোকেরা ভীত হল। তখন তিনি আবার সেই বারোজন প্রেরিতকে নিয়ে নিজের প্রতি যা যা ঘটবে তা তাদের বলতে লাগলেন। 33 শোন, “আমরা জেরুশালেমে যাচ্ছি আর প্রধান যাজক এবং ব্যবস্থার শিক্ষকের হাতে মানবপুত্রকে সঁপে দেওয়া হবে তারা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেবে এবং অইহুদীদের হাতে তুলে দেবে। 34 তারা বিদ্রূপ করবে, তাঁর মুখে থুথু দেবে, তাঁকে চাবুক মারবে এবং হত্যা করবে, আর তিন দিন পরে তিনি আবার বেঁচে উঠবেন।”

যাকোব এবং যোহনের অনুগ্রহ ভিক্ষা

(মথি 20:20-28)

35 পরে সিবদিয়ের ছেলে যাকোব এবং যোহন তাঁর কাছে এসে বললেন, “হে গুরু, আমাদের ইচ্ছা এই, আমরা আপনার কাছে যা চাইব, আপনি আমাদের জন্য তা করবেন।”

36 যীশু তখন তাঁদের বললেন, “তোমাদের ইচ্ছা কি, তোমাদের জন্য আমি কি করব?”

37 তাঁরা তাঁকে বললেন, “আমাদের এই বর দান করুন যাতে আপনি মহিমান্বিত হলে আমরা একজন আপনার ডানদিকে আর একজন বাঁ দিকে বসতে পাই।”

38 যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা জান না তোমরা কি চাইছ। আমি যে পেয়ালায় পান করি, তাতে তোমরা কি চুমুক দিতে পারবে বা আমি যে বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজ হই তাতে কি তোমরা বাপ্তাইজ হতে পারবে?”

39 তাঁরা তাঁকে বললেন, “আমরা পারব!”

তখন যীশু তাদের বললেন, “আমি যে পেয়ালায় পান করি তাতে তোমরা অবশ্যই চুমুক দেবে এবং আমি যে বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজ হই তাতে তোমরাও বাপ্তাইজ হবে। 40 কিন্তু আমার ডান দিকে বা বাঁদিকে বসতে দেবার অধিকার আমার নেই। কারা সেখানে বসবে তা আগেই স্থির হয়ে গেছে।”

41 এই কথা শুনে অন্য দশ জন যোহন ও যাকোবের প্রতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন। 42 কিন্তু যীশু তাঁদের ডেকে বললেন, “তোমরা জান জগতের মধ্যে যারা শাসনকর্তা বলে গন্য, তারা তাদের উপর প্রভুত্ব করে এবং তাদের মধ্যে যারা প্রধান, তারা তাদের উপর কর্ত্তৃত্ব করে। 43 তোমাদের ক্ষেত্রে সেই রকম হবে না। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি প্রধান হতে চায়, তবে সে তোমাদের ক্রীতদাস হবে, 44 এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যদি প্রধান হতে চায়, সে সকলের দাস হবে। 45 কারণ বাস্তবে মানবপুত্রও সেবা পেতে আসেন নি, তিনি অন্যের সেবা করতেই এসেছেন এবং অনেক মানুষের মুক্তিপণ হিসাবে নিজের জীবন দিতে এসেছেন।”

অন্ধের দৃষ্টিলাভ

(মথি 20:29-34; লূক 18:35-43)

46 তারপর তাঁরা যিরীহোতে এলেন। তিনি যখন নিজের শিষ্যদের এবং বহুলোকের সাথে যিরীহো ছেড়ে যাচ্ছিলেন, সেই সময় পথের ধারে বরতীময় (অর্থ “তীময়ের ছেলে”) নামে এক অন্ধ ভিখারী বসেছিল। 47 সে যখন শুনতে পেল যে উনি নাসরতীয় যীশু, তখন চেঁচিয়ে বলতে লাগল, “হে যীশু, দায়ূদের পুত্র, আমার প্রতি দয়া করুন।”

48 তখন বহুলোক চুপ-চুপ বলে তাকে ধমক দিল। কিন্তু সে আরও জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগল, “হে দায়ূদের পুত্র, আমার প্রতি দয়া করুন!”

49 তখন যীশু সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে বললেন, “তাকে ডাকো।”

তারা সেই অন্ধ লোকটিকে ডাকল এবং বলল, “ওহে সাহস কর, ওঠ, উনি তোমাকে ডাকছেন।” 50 তখন সে নিজের পায়ের চাদর ফেলে দিয়ে লাফ দিয়ে উঠে যীশুর কাছে এল।

51 যীশু তাকে বললেন, “তুমি কি চাও, আমি তোমার জন্য কি করব?”

অন্ধ লোকটি তাকে বলল, “হে গুরু, আমি যেন দেখতে পাই।”

52 তখন যীশু তাকে বললেন, “যাও, তোমার বিশ্বাসই তোমায় সুস্থ করল।” সঙ্গে সঙ্গে সে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল এবং রাস্তা দিয়ে যীশুর পেছন পেছন চলতে লাগল।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International