Old/New Testament
বিধি পালনের আশীর্বাদ
28 “আমি আজ তোমাদের যে সকল আদেশ করছি, তোমরা যদি প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের, সেই সব আজ্ঞা যত্নের সাথে পালন কর তবে প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর পৃথিবীর সমস্ত জাতির উপরে তোমাদের উন্নত করবেন। 2 যদি তোমরা প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের, বাধ্য হও তবে এইসব আশীর্বাদ তোমরা পাবে:
3 “প্রভু তোমাদের নগরে
এবং তোমাদের ক্ষেতে আশীর্বাদ করবেন।
4 প্রভু তোমাদের গর্ভের ফল
আশীর্বাদযুক্ত করবেন।
তিনি তোমাদের জমিকে আশীর্বাদ করবেন
যাতে ভালো ফসল হয়।
তিনি তোমাদের পশুদের আশীর্বাদ করবেন
যাতে তাদের বহু শাবক জন্মায়।
তিনি তোমাদের গরু ও মেষদের আশীর্বাদ করবেন।
5 প্রভু তোমাদের ঝুড়িগুলি ও পাত্রগুলিকে আশীর্বাদ করবেন
এবং সেগুলো খাদ্য দ্রব্যে ভরে দেবেন।
6 তোমরা যা কিছু কর তাতেই সর্বসময়ে
প্রভু তোমাদের আশীর্বাদ করবেন।
7 “তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছে এমন শত্রুকে পরাস্ত করতে প্রভু তোমাদের সাহায্য করবেন। তোমাদের শত্রুরা তোমাদের বিরুদ্ধে এক পথ দিয়ে আসবে কিন্তু পালাবার সময় সাত পথ দিয়ে পালাবে!
8 “প্রভু তোমাদের আশীর্বাদ করবেন ও তোমাদের গোলাঘর পূর্ণ করবেন। তোমরা যা কিছু কর তাতে তিনি আশীর্বাদ করবেন। প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর, তোমাদের যে দেশ দিচ্ছেন, সেখানে তোমাদের আশীর্বাদ করবেন। 9 তিনি যেমন প্রতিজ্ঞা করেছেন সেই অনুসারেই তিনি তোমাদের তাঁর নিজের বিশিষ্ট ব্যক্তি করে তুলবেন। তোমরা যদি প্রভু তোমাদের ঈশ্বরের সমস্ত আজ্ঞা পালন কর তাহলেই তিনি তা করবেন। 10 তাহলে পৃথিবীর সমস্ত জাতি জানবে যে তোমরা প্রভুর নামে অভিহিত এবং তারা তোমাদের ভয় করবে।
11 “আর প্রভু তোমাদের অনেক উত্তম বিষয় দেবেন। তিনি তোমাদের বহু সন্তানের পিতা করবেন এবং তোমাদের পশুর সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়ে অনেক হবে। যে দেশ তোমাদের দেবেন বলে তোমাদের পূর্বপুরুষের কাছে প্রভু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেই দেশে তোমাদের ভাল ফসল দেবেন। 12 প্রভু তাঁর মহান আশীর্বাদের ভাণ্ডার খুলে দেবেন। তিনি তোমাদের জমির জন্য উপযুক্ত সময়ে বৃষ্টি দেবেন। প্রভু তোমাদের সমস্ত কাজে আশীর্বাদ করবেন। অনেক জাতিকে তোমরা ধার দেবে কিন্তু তাদের কাছ থেকে তোমাদের ধার করার প্রয়োজন হবে না। 13 প্রভু তোমাদের মস্তক স্বরূপ করবেন, পুচ্ছ স্বরূপ করবেন না। তোমরা অবনত না হয়ে উন্নত হবে। এই সমস্তই ঘটবে যদি প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের যে সব আদেশ আমি আজ বলছি তা তোমরা শোন এবং যত্ন সহকারে এইসব আদেশ পালন করো। 14 আজ আমি তোমাদের যে সব আজ্ঞা দিচ্ছি তার থেকে দূরে সরে যেও না। তোমরা তার ডান দিকে বা বাম দিকে ফিরে যেও না। সেবা করার জন্য অন্য দেবতার অনুগামী হয়ো না।
বিধির অবাধ্যতা ও অভিশাপ
15 “কিন্তু প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের, কথা যদি না শোন, তিনি যা আদেশ করছেন, আমার আজকের বলা সেইসব আদেশ যত্ন সহকারে পালন না কর তবে এই সমস্ত অভিশাপ তোমার প্রতি বর্তাবে:
16 “প্রভু তোমাদের নগরে
এবং ক্ষেতে শাপ দেবেন।
17 প্রভু তোমাদের ঝুড়ি ও পাত্র শাপগ্রস্ত করবেন
এবং সেগুলোর মধ্যে কোন খাদ্য থাকবে না।
18 প্রভু তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের,
তোমাদের জমিকে,
তোমাদের পশুদের
এবং তোমাদের গাভীন গাই ও মেষদের শাপ দেবেন।
19 তোমরা যা কিছু কর না কেন সব সময় প্রভু তাতে শাপ দেবেন।
20 “তোমরা যা কিছু করবে তাতেই অভিশাপ, হতাশা এবং কষ্ট আসবে। তোমরা দ্রুত সম্পূর্ণরূপে বিনাশ না হওয়া পর্যন্ত তিনি এসব করেই চলবেন। তিনি এসব করবেন কারণ তোমরা যা মন্দ তাই কর এবং তাঁকে পরিত্যাগ করেছ। 21 যে দেশ অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছ সেখানে ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত প্রভু তোমাদের ভয়ানক সব রোগে রোগগ্রস্ত করবেন। 22 প্রভু রোগ, জ্বর এবং ফোলা দ্বারা তোমাদের শাস্তি দেবেন। প্রভু প্রচণ্ড উত্তাপ পাঠাবেন এবং কোন বৃষ্টি পড়বে না। উত্তাপে এবং রোগে তোমাদের ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। তোমরা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত এই খারাপ ঘটনাগুলি ঘটতেই থাকবে! 23 আকাশে কোন মেঘ দেখা যাবে না—আকাশ ঘসা পিতলের মতো এবং পায়ের নীচের জমি লোহার মত শক্ত হবে। 24 প্রভু বৃষ্টির পরিবর্তে আকাশ থেকে কেবল ধূলো-বালি বর্ষণ করবেন। যে পর্যন্ত তোমাদের বিনাশ না হয় তিনি তা বর্ষণ করবেন।
25 “প্রভু তোমাদের শত্রুদের দিয়ে তোমাদের হারাবেন। তোমরা এক পথ দিয়ে তোমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাবে কিন্তু সাত পথ দিয়ে তাদের সামনে থেকে পালাবে। তোমাদের প্রতি যে সব খারাপ বিষয় ঘটবে তা দেখে পৃথিবীর লোক ভয় পাবে। 26 তোমাদের মৃতদেহ বন্য পশুপাখীর খাদ্য হবে। মৃত দেহের উপর থেকে তাদের তাড়িয়ে দেবারও কেউ থাকবে না।
27 “প্রভু মিশরীয়দের কাছে যেমন ফোঁড়া পাঠিয়েছিলেন সেই রকমটি দিয়েই তোমাদের শাস্তি দেবেন। তিনি আব, গলিত ঘা এবং সারে না এমন চুলকানি দিয়ে তোমাদের শাস্তি দেবেন। 28 প্রভু উন্মাদনা দ্বারা তোমাদের শাস্তি দেবেন। তিনি তোমাদের অন্ধ এবং হতবুদ্ধি করবেন। 29 দিনের আলোয় হাতড়ে হাতড়ে অন্ধ লোকের মত তোমাদের পথ চলতে হবে। তোমরা যা কিছু কর তাতে অসফল হবে। বার বার লোক তোমাদের আঘাত করবে এবং তোমাদের জিনিস চুরি করে নেবে। আর তোমাদের রক্ষা করার কেউ থাকবে না।
30 “তোমাদের সাথে কোন স্ত্রীলোক বাগ্দত্তা হবে কিন্তু অপর কেউ তার সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হবে। তোমরা বাড়ী বানাবে কিন্তু তাতে বাস করতে পারবে না। তোমরা ক্ষেতে দ্রাক্ষা লাগাবে কিন্তু তার থেকে কোন কিছুই সংগ্রহ করতে পারবে না। 31 লোক তোমাদের সামনেই তোমাদের গরুগুলো মেরে ফেলবে কিন্তু সেই মাংসের কোন অংশই তুমি খেতে পাবে না। লোক তোমাদের গাধাদের নিয়ে যাবে কিন্তু ফেরত দেবে না। তোমাদের মেষ তোমাদের শত্রুদের দেওয়া হবে। তোমাদের রক্ষা করার জন্য কেউ থাকবে না।
32 “অন্য জাতির লোকরা তোমাদের ছেলে মেয়েদের তুলে নিয়ে যাবে। দিনের পর দিন তাদের অপেক্ষায় চেয়ে চেয়ে তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়বে কিন্তু কিছুই করতে পারবে না এবং ঈশ্বর তোমাদের সাহায্য করবেন না।
33 “যে জাতিকে তোমরা চেনো না তারা তোমাদের সব শস্য এবং তোমাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল খেয়ে ফেলবে। তোমরা কেবল সমস্ত জীবন ধরে পীড়ন ও লাঞ্ছনা ভোগ করবে। 34 তোমাদের চোখ যা দেখবে তা তোমাদের উন্মত্ত করবে! 35 প্রভু তোমাদের এমন কষ্টকর ফোঁড়া দ্বারা শাস্তি দেবেন যা সারে না। তোমাদের হাঁটুতে এবং পায়ে এইসব ফোঁড়া হবে। পায়ের তলা থেকে মাথার তালু পর্যন্ত দেহের সব জায়গাতেই এই ফোঁড়া বেরোবে।
36 “প্রভু তোমাদের এবং তোমাদের রাজাকে এমন জাতির কাছে পাঠাবেন যাদের তোমরা জান না। তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরাও কখনও তাদের দেখে নি। সেখানে তোমরা কাঠ ও পাথরের তৈরী মূর্ত্তির সেবা করবে। 37 প্রভু তোমাদের যে দেশগুলিতে পাঠাবেন, সেখানকার লোক তোমাদের দুর্দশা দেখে অবাক হবে। তারা তোমাদের দেখে হাসবে এবং তোমাদের সম্বন্ধে মন্দ কথা বলবে।
ব্যর্থতার অভিশাপ
38 “তোমাদের ক্ষেতে তোমরা বহু বীজ বুনবে কিন্তু অল্পই ফসল সংগ্রহ করবে, কারণ পঙ্গপাল ফসল খেয়ে ফেলবে। 39 তোমরা দ্রাক্ষা ক্ষেতে কষ্ট করে দ্রাক্ষা চাষ করবে কিন্তু দ্রাক্ষা সংগ্রহ বা দ্রাক্ষারস পান করতে পাবে না, কারণ পোকায় তা খেয়ে ফেলবে। 40 তোমাদের দেশের সর্বত্র জলপাইয়ের গাছ থাকবে কিন্তু তার থেকে উৎপন্ন কোন তেল তুমি ব্যবহার করতে পারবে না। কারণ জলপাই ফল মাটিতে ঝরে পড়ে পচে যাবে। 41 তোমাদের ছেলেমেয়ে থাকলেও তাদের লালন পালন করতে পারবে না, কারণ তাদের বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হবে। 42 পঙ্গপাল তোমাদের সমস্ত গাছ ও ক্ষেতের শস্য ধ্বংস করে দেবে। 43 তোমাদের মধ্যে বসবাসকারী বিদেশীরা দিনে দিনে শক্তিশালী হয়ে উঠবে আর তোমাদের যা শক্তি ছিল তা তোমরা হারাবে। 44 বিদেশীরা তোমাদের ধার দেবে, কিন্তু তাদের ধার দেবার মত টাকা তোমাদের কাছে থাকবে না। মাথা যেমন দেহকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, সেই রকম ভাবেই তারা মাথা হয়ে তোমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে আর তুমি হবে লেজ বিশেষ।
45 “এই সমস্ত শাপ তোমাদের উপর আসবে। তারা তোমাদের ধাওয়া করে ধরবে যে পর্যন্ত না তুমি ধ্বংস হও, কারণ তোমরা প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের, কথা শোন নি। তিনি তোমাদের যে সমস্ত আজ্ঞা ও বিধি দিয়েছিলেন তা পালন করো নি। 46 এই শাপগুলি হবে লোকদের কাছে একটি চিহ্ন এবং তারা বুঝবে যে ঈশ্বর তোমাদের এবং তোমাদের উত্তরপুরুষদের বিচার করেছেন। তোমাদের ওপর যে ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলি ঘটবে তা দেখে লোকে আশ্চর্য হয়ে যাবে।
47 “প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর, তোমাদের অনেক আশীর্বাদ করেছিলেন, কিন্তু তোমরা আনন্দের সাথে প্রফুল্ল মনে তাঁর সেবা করো নি। 48 তাই প্রভু তোমাদের বিরুদ্ধে যে শত্রুদের পাঠাবেন তোমরা তাদেরই সেবা করবে। তোমরা ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত, উলঙ্গ এবং দরিদ্র হবে। প্রভু তোমাদের উপর এমন বোঝা চাপাবেন যা সরিয়ে ফেলা যাবে না। তোমাদের ধ্বংস না করা পর্যন্ত তোমরা সেই বোঝা বইবে।
শত্রু জাতির অভিশাপ
49 “তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রভু বহু দূর থেকে এক জাতির আগমণ ঘটাবেন। তোমরা তাদের ভাষা বুঝবে না। ঈগল পাখী যেমন আকাশ থেকে নেমে আসে তেমনি দ্রুত তারা আসবে। 50 সেই সব লোক নিষ্ঠুর হবে। তারা বৃদ্ধদের বিষয়ে কোন চিন্তা করবে না এবং শিশুদের প্রতিও দয়া করবে না। 51 তারা তোমাদের পশু ও উৎপন্ন খাদ্য নিয়ে নেবে। তোমাদের ধ্বংস না করা পর্যন্ত তারা তোমাদের সর্বস্ব নিয়ে যাবে। তারা তোমাদের শস্য, দ্রাক্ষারস, তেল, গরু, মেষ ও ছাগলের কিছুই ছেড়ে যাবে না। তোমাদের ধ্বংস না করা পর্যন্ত তারা তোমাদের সর্বস্ব নিয়ে যাবে।
52 “সেই জাতি তোমাদের নগরের চারিদিক ঘিরে তোমাদের আক্রমণ করবে। তোমরা কি মনে করছ নগরের চারিধারের শক্ত উঁচু প্রাচীর তোমাদের রক্ষা করবে? কিন্তু তারা ভেঙে পড়বে। প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের দেওয়া সেই দেশের সর্বত্র সমস্ত নগরগুলি শত্রুরা আক্রমণ করবে। 53 শত্রুরা নগর অবরোধ করে তোমাদের কষ্ট দিলে তোমরা এতই ক্ষুধার্ত হবে যে নিজের ছেলে মেয়েদের খেতে শুরু করবে—প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর যে সন্তানদের দিয়েছিলেন তোমরা তাদের দেহ ভোজন করবে।
54 “এমনকি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে দয়ালু এবং শান্ত লোকটিও নিষ্ঠুর হয়ে উঠবে। সে অন্যের প্রতি নিষ্ঠুর হবে। এমনকি, যে স্ত্রীকে সে অত্যন্ত ভালবাসে তার প্রতিও নিষ্ঠুর হবে এবং জীবিত শিশুদের প্রতিও সে নিষ্ঠুর হবে। 55 খাবার কিছু পড়ে না থাকার দরুণ সে নিজের শিশুদের খাবে এবং সেই মাংস সে পরিবারের অন্য কারও সাথে ভাগ না করে নিজেই খাবে। তোমাদের শত্রু এসে তোমাদের নগর অবরোধ করলে এই সমস্ত মন্দ ঘটনাগুলি ঘটবে এবং তোমাদের কষ্ট দেবে।
56 “এমনকি তোমাদের মধ্যে বাসকারী কোমল ও ভদ্র মহিলা, মাটিতে যার পা পড়ে না, সেও নিষ্ঠুর হয়ে উঠবে। তার প্রাণের প্রিয় স্বামীর প্রতি এবং নিজের ছেলেমেয়ের প্রতিও সে নিষ্ঠুর হয়ে উঠবে। 57 সে লুকিয়ে শিশুর জন্ম দিয়ে সেই শিশুটিকে এবং তার সাথে জন্ম দেবার সময় তার দেহ থেকে যা কিছু বেরিয়ে আসে তাও খাবে। শত্রু এসে তোমাদের শহর অবরোধ করে তোমাদের সংকটে ফেললে এই সমস্ত মন্দ ঘটনা তোমাদের সঙ্গে ঘটবে।
58 “এই বইতে লেখা সমস্ত আজ্ঞা ও শিক্ষা তোমরা অবশ্যই পালন করো এবং তোমরা অবশ্যই প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের, গৌরবান্বিত এবং ভয়াবহ নামকে সম্মান করো। 59 যদি তোমরা তা পালন না কর তবে প্রভু তোমাদের এবং তোমাদের উত্তরপুরুষদের অনেক অসুবিধায় ফেলবেন। তোমাদের সংকট ও রোগগুলি হবে ভয়ানক! 60 মিশরে তোমরা অনেক বিপত্তি ও রোগ দেখে ভীত হয়েছিলে। প্রভু ঐ সব মন্দ ঘটনাগুলি তোমাদের বিরুদ্ধে ফিরিয়ে আনবেন। 61 ব্যবস্থার পুস্তকে লেখা নেই এমন সব সংকট ও রোগও তিনি আনবেন। তোমরা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত তিনি তা করেই চলবেন। 62 আকাশের তারার মত তোমাদের বংশধররা বহুসংখ্যক হতে পারে, কিন্তু কেবল অল্পসংখ্যকই অবশিষ্ট থাকবে, কারণ তোমরা প্রভু তোমাদের ঈশ্বরের কথা শোন নি।
63 “প্রভু তোমাদের মঙ্গল করে ও তোমাদের জাতির বৃদ্ধি সাধন করে যেমন আনন্দ পেতেন, সেই একই ভাবে তিনি তোমাদের সর্বনাশ ও ধ্বংস দেখে আনন্দ পাবেন। তোমরা যে দেশ অধিকার করতে যাচ্ছ, লোক তোমাদের সেই দেশ থেকে বার করে দেবে। 64 আর প্রভু পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সমস্ত জাতির মধ্যে তোমাদের ছড়িয়ে দেবেন। সেখানে তোমরা কাঠ, পাথরের তৈরী এমন মূর্ত্তির পূজা করবে, যাদের পূজা তোমাদের পূর্বপুরুষরা কখনও করে নি।
65 “এই সমস্ত জাতির মধ্যে তোমরা কোন শান্তি পাবে না এবং বিশ্রামের জায়গাও পাবে না। প্রভু তোমাদের মন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করবেন। তখন তোমাদের চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়বে এবং তোমরা বিচলিত হয়ে পড়বে। 66 তোমরা বিপদের মধ্যে বাস করবে এবং দিনে কি রাতে সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকবে। জীবন সম্বন্ধে তোমাদের কোন নিশ্চয়তা বোধ থাকবে না। 67 সকালে তুমি বলবে, ‘হায়! কখন সন্ধ্যা হবে!’ আর সন্ধ্যা হলে বলবে, ‘হায়! কখন সকাল হবে!’ হৃদয়ের শঙ্কা এবং ভয়ঙ্কর বিষয় যা তোমরা দেখবে, তার জন্যই এইরকম হবে। 68 প্রভু জাহাজে করে তোমাদের মিশরে ফেরত পাঠাবেন। আমি বলেছিলাম যে তোমাদের আর সেখানে ফিরে যেতে হবে না; কিন্তু প্রভু তোমাদের সেখানে ফেরত পাঠাবেন। মিশরে তোমরা তোমাদের শত্রুদের কাছে নিজেদের দাসরূপে বিক্রি করতে চাইবে কিন্তু কেউ তোমাদের কিনবে না।”
মোয়াবে চুক্তি
29 প্রভু হোরেব পর্বতে ইস্রায়েলের লোকদের সাথে চুক্তি করেছিলেন। সেই চুক্তি ছাড়াও প্রভু মোশিকে আরেকটি চুক্তি করার জন্য আজ্ঞা করলেন। এই চুক্তি মোয়াব পর্বতে করা হল:
2 মোশি সমস্ত ইস্রায়েলের লোকদের এক জায়গায় একত্র করে বললেন, “মিশর দেশে প্রভু যা করেছিলেন তার সবই তোমরা দেখেছিলে। ফরৌণের প্রতি তাঁর কর্মচারী ও তাঁর সমস্ত দেশের প্রতি প্রভু যা করেছিলেন, তা তোমরা দেখেছ। 3 তিনি তাদের যে মহাক্লেশ দিয়েছিলেন তা তোমরা দেখেছ। তোমরা সমস্ত অলৌকিক ও মহা আশ্চর্য কাজও দেখেছ যেগুলি তিনি করেছেন। 4 তোমরা যা শুনেছ বা দেখেছ তা দেখার চোখ ও প্রকৃতভাবে বুঝে ওঠার মন আজও প্রভু তোমাদের দেননি। 5 প্রভু এই 40 বছর তোমাদের মরুভূমির মধ্য দিয়ে নিয়ে গেছেন। এই সময়ের মধ্যে তোমাদের কাপড় জামা ও জুতো ছিঁড়ে যায় নি। 6 তোমাদের কোন খাবার ছিল না। সুরা বা অন্য কোন পানীয় ছিল না। কিন্তু প্রভু তোমাদের যত্ন নিলেন যাতে তোমরা বুঝতে পার যে প্রভুই তোমাদের ঈশ্বর।
7 “তোমরা এই স্থানে আসার পরে হিষ্বোনের রাজা সীহোন ও বাশনের রাজা ওগ আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য এলো। কিন্তু আমরা তাদের হারিয়ে দিলাম। 8 তারপর আমরা তাদের দেশ অধিকার করে তা রূবেণ, গাদ ও মনঃশির অর্ধেক পরিবারগোষ্ঠীর লোকদের দিয়ে দিয়েছিলাম। 9 এই চুক্তির সমস্ত আদেশগুলি যদি তোমরা পালন কর, তবে তোমরা যা কিছু কর, তাতেই কৃতকার্য হবে।
10 “আজ তোমরা সবাই প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের, সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছ। তোমাদের নেতারা, কর্মকর্তারা, প্রবীণরা এবং তোমাদের অন্যান্যরাও এখানেই রয়েছে। 11 তোমাদের স্ত্রী ও শিশুরা, তোমাদের মধ্যে বাসকারী বিদেশীরা যারা তোমাদের জন্য কাঠ কেটে দেয় ও জল তুলে দেয় তারাও এখানে রয়েছে। 12 তোমরা সকলে এখানে প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের সাথে চুক্তিবদ্ধ হবার জন্য রয়েছ। প্রভু আজ তোমাদের সাথে এই আশীর্বাদ ও অভিশাপের চুক্তি করেছেন। 13 এই চুক্তির সাথে সাথেই প্রভু তোমাদের তাঁর নিজস্ব বিশেষ লোক করবেন এবং তিনি তোমাদের ঈশ্বর হবেন। তিনি তোমাদের যা বললেন তার প্রতিজ্ঞা তিনি তোমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবের কাছে করেছিলেন। 14 প্রভু এই চুক্তি ও তাঁর প্রতিজ্ঞাসকল কেবল তোমাদের সাথেই করছেন না। 15 এই চুক্তি তিনি আমরা যারা সকলে তাঁর সামনে আজ দাঁড়িয়ে আছি তাদের সঙ্গে এবং আমাদের উত্তরপুরুষরা যারা আজ এখানে নেই তাঁদের সাথেও করছেন। 16 স্মরণ কর মিশর দেশে আমরা কেমন ভাবে বাস করেছি এবং পথে যে সব দেশ পড়েছে তার মধ্যে দিয়ে কিভাবে যাত্রা করেছি। 17 তোমরা ঘৃণিত মূর্ত্তিগুলি দেখেছ—যে মূর্ত্তিগুলি কাঠ, পাথর, সোনা ও রূপা দিয়ে তৈরী। 18 এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ো যে তোমাদের মধ্যে পুরুষ, নারী, পরিবার ও পরিবারগোষ্ঠী যারাই আজ এখানে রয়েছে, তাদের কেউ যেন প্রভু আমাদের ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে না যায়। কেউ যেন অন্য জাতির দেবতাদের পূজা না করে। যারা তা করে তারা সেই গাছের মত যা বিষাক্ত তেতো ফল উৎপন্ন করে।
19 “কোন ব্যক্তি এই সমস্ত শাপের কথা শুনেও নিজের মনকে সন্তুষ্ট করতে বলতে পারে, ‘আমি যা চাই তাই করব। খারাপ কিছুই আমার প্রতি ঘটবে না।’ এই ধরণের লোক যে কেবল তার নিজের প্রতি অমঙ্গল ডেকে আনবে তা নয়, এমনকি ভাল লোকদের প্রতিও তা ডেকে আনবে। 20-21 প্রভু সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন না। প্রভু সেই ব্যক্তির প্রতি ক্রুদ্ধ ও বিরক্ত হবেন এবং তাকে শাস্তি দেবেন। প্রভু সেই ব্যক্তিকে ইস্রায়েলের সমস্ত পরিবারগোষ্ঠী থেকে পৃথক করবেন। প্রভু তাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করবেন। এই পুস্তকে লেখা সমস্ত অমঙ্গল তার উপর আসবে। ব্যবস্থার পুস্তকে অভিশাপ সম্পর্কে লিখিত চুক্তি অনুসারেই আসবে।
22 “ভবিষ্যতে তোমাদের উত্তরপুরুষরা ও দূর দেশের বিদেশীরা দেখবে কিভাবে এই দেশ ধ্বংস হয়েছে। প্রভু কিভাবে বিভিন্ন রোগ এনেছেন তাও তারা দেখবে। 23 সমস্ত দেশ জ্বলন্ত গন্ধক ও লবনে ঢেকে যাওয়ায় আর ব্যবহারযোগ্য থাকবে না। দেশে কিছুই বোনা হবে না, কিছুই বেড়ে উঠবে না, এমন কি জংলী গাছও না। প্রভু ক্রুদ্ধ হয়ে যেভাবে সদোম, ঘমোরা, অদ্মা ও সবোয়িম শহরগুলি ধ্বংস করেছিলেন সেই ভাবেই এই দেশ ধ্বংস হবে।
24 “অন্যান্য সব জাতির লোকরা জিজ্ঞেস করবে, ‘প্রভু এই দেশের প্রতি কেন এমনটি করলেন? কেন তিনি এত ক্রুদ্ধ হলেন?’ 25 উত্তর এই হবে, ‘প্রভু ক্রুদ্ধ কারণ ইস্রায়েলের লোকরা তাদের প্রভুর অর্থাৎ পূর্বপুরুষের ঈশ্বরের নিয়ম ত্যাগ করেছে। প্রভু তাদের মিশর দেশ থেকে বার করে আনার সময় যে চুক্তি করেছিলেন তা তারা আর পালন করে না। 26 প্রভু যে সমস্ত দেবতার পূজা করতে নিষেধ করেছিলেন, যাদের পূজা তারা আগে কখনও করে নি, ইস্রায়েলের লোকরা সেই অন্যান্য দেবতার সেবা করেছে। 27 সেই কারণেই প্রভু এই দেশের লোকদের প্রতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন। আর তাই তিনি পুস্তকে লেখা সমস্ত অভিশাপ তাদের দিলেন। 28 প্রভু তাদের প্রতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ ও বিরক্ত হলেন, তাই তিনি তাদের দেশ থেকে বার করে দিয়ে অন্য এক দেশে রাখলেন, সেখানেই আজ তারা রয়েছে।’
29 “কিছু বিষয় রয়েছে যা প্রভু, আমাদের ঈশ্বর, গোপন রেখেছেন, কেবল তিনিই সে সব বিষয় জানেন। কিন্তু প্রভু কিছু বিষয় আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন এবং সেই শিক্ষাসকল আমাদের ও আমাদের উত্তরপুরুষদের জন্য চিরকাল থাকবে। সেই বিধির সব আজ্ঞাগুলির প্রতি আমরা অবশ্যই বাধ্য থাকব।
54 আর পিতর দূরে দূরে থেকে যীশুর পেছনে যেতে যেতে মহাযাজকের উঠোন পর্যন্ত গেলেন এবং রক্ষীদের সঙ্গে বসে আগুন পোহাতে লাগলেন।
55 তখন প্রধান যাজকরা এবং মহাসভার সকলেই এমন একজন সাক্ষী খুঁজছিলেন যার কথার জোরে যীশুকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা যায়; কিন্তু তেমন সাক্ষ্য তাঁরা পেলেন না। 56 কারণ অনেকে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিল বটে কিন্তু তাদের সাক্ষ্য মিলল না।
57 তখন কিছু লোক তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে বলল, 58 “আমরা তাঁকে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের হাতে তৈরী এই মন্দিরটি ভেঙে ফেলব এবং তিন দিনের মধ্যে মানুষের হাত দিয়ে তৈরী নয় এমনই একটি মন্দির আমি গড়ে তুলব।’” 59 কিন্তু এতেও তাদের সাক্ষ্যের প্রমাণ মিলল না।
60 তখন মহাযাজক সকলের সামনে দাঁড়িয়ে যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি কিছুই উত্তর দেবে না? এই সমস্ত লোকরা তোমার বিরুদ্ধে কি সাক্ষ্য দিচ্ছে?” 61 কিন্তু তিনি চুপচাপ থাকলেন, কোন উত্তর দিলেন না।
আবার মহাযাজক তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি সেই পরম খ্রীষ্ট পরম ধন্য, ঈশ্বরের পুত্র?”
62 যীশু বললেন, “হ্যাঁ, আমিই ঈশ্বরের পুত্র। তোমরা একদিন মানবপুত্রকে ঈশ্বরের ডানপাশে বসে থাকতে আকাশের মেঘে আবৃত হয়ে আসতে দেখবে।”[a]
63 তখন মহাযাজক তাঁর পোশাক ছিঁড়ে বললেন, “আমাদের সাক্ষীর আর কি প্রয়োজন? 64 তোমরা তো ঈশ্বর নিন্দা শুনলে। তোমাদের কি মনে হয়?” তারা সকলে তাঁকে দোষী স্থির করে বলল, “এঁর মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।” 65 তখন কেউ কেউ তাঁর মুখে থুথু ছিটিয়ে দিল, তাঁর মুখ ঢেকে ঘুষি মারল এবং বলতে লাগল, “ভাববাণী করে বল তো, কে তোমাকে ঘুষি মারল?” পরে রক্ষীরা তাঁকে মারতে মারতে নিয়ে গেল।
যীশুকে স্বীকার করতে পিতর ভয় পেলেন
(মথি 26:69-75; লূক 22:56-62; যোহন 18:15-18, 25-27)
66 পিতর যখন নীচে উঠোনে ছিলেন, তখন মহাযাজকের একজন চাকরানী এল। 67 সে পিতরকে আগুন পোহাতে দেখে তাঁর দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমিও তো নাসরতীয় যীশুর সঙ্গে ছিলে?”
68 কিন্তু পিতর অস্বীকার করে বললেন, “আমি জানি না, আর বুঝতেও পারছি না তুমি কি বল।?” এই বলে তিনি বারান্দার দিকে যেতেই একটা মোরগ ডেকে উঠল।[b]
69 কিন্তু চাকরানীটা তাঁকে দেখে, যারা তার কাছে দাঁড়িয়েছিল তাদের বলতে লাগল, “এই লোকটি ওদেরই একজন!” 70 তিনি আবার অস্বীকার করলেন।
কিছুক্ষণ বাদে যারা সেখানে দাঁড়িয়েছিল তারা পিতরকে বলল, “সত্যি তুমি তাদের একজন, কারণ তুমি গালীলের লোক।”
71 তিনি অভিশাপ দিয়ে শপথ করে বলতে লাগলেন, “তোমরা যে লোকটির কথা বলছ, তাকে আমি চিনি না।”
72 আর সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় বার মোরগটি ডেকে উঠল, তাতে যীশু যে কথা বলেছিলেন, “মোরগটি দুবার ডাকার আগে তুমি তিনবার আমাকে অস্বীকার করবে” সে কথা পিতরের মনে পড়ল আর তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International