Old/New Testament
শলোমন মন্দির নির্মাণ করলেন
6 ইস্রায়েলের লোকরা মিশর থেকে চলে আসার 480 বছর[a] পরে এবং তাঁর রাজত্বের চার বছরের মাথায়, রাজা শলোমন ঈশ্বরের মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এটি ছিল ঐ বছরের দ্বিতীয় মাস বা সিব মাস। 2 মন্দিরটি দৈর্ঘ্যে ছিল 60 হাত, প্রস্থে 20 হাত এবং উচ্চতায় 30 হাত। 3 মন্দিরের সামনেই 20 হাত দীর্ঘ ও 10 হাত চওড়া একটি বারান্দা ছিল। 4 মন্দিরের গায়ে কয়েকটা জানালা ছিল, যেগুলোর ভেতরের অংশ বাইরের তুলনায় চওড়া। 5 অতঃপর শলোমন মূল মন্দিরের চারপাশ ঘিরে একটার ওপর আর একটা একসারি ঘর তৈরী করলেন। এগুলো প্রায় তিনতলা পর্যন্ত উঁচু ছিল। 6 ঘরগুলো মন্দিরের দেওয়াল সংলগ্ন হলেও ঘরের কড়ি-বরগাগুলো মন্দিরের দেওয়ালের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। মন্দিরের দেওয়ালটি ওপরের দিকে ক্রমশঃ সরু হয়ে উঠেছিল, অতএব এই ঘরগুলোর এক দিকের দেওয়াল ঠিক নীচের ঘরের দেওয়ালের থেকে সরু হয়ে গিয়েছিল। একদম নীচের তলার ঘরের প্রস্থ ছিল 5 হাত, মাঝের ঘরের প্রস্থ ছিল প্রায় 6 হাত এবং একেবারে ওপরের ঘরের প্রস্থ ছিল প্রায় 7 হাত। 7 দেওয়ালগুলো বানানোর জন্য মিস্ত্রিরা বড় পাথর ব্যবহার করেছিল। এইসব পাথর যেখান থেকে আনা সেখানেই কেটে আনা হয়েছিল বলে মন্দির প্রাঙ্গণে হাতুড়ি, কুড়ুল বা কোন রকমের আওয়াজ পাওয়া যেত না।
8 নীচের ঘরগুলোয়় প্রবেশদ্বার ছিল মন্দিরের দক্ষিণ দিক থেকে। তারপর ভেতরে ঢোকার পর সিঁড়ি ওপরদিকে উঠে গিয়েছিল একতলা ও দোতলা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে তিনতলা পর্যন্ত।
9 শলোমনের মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ হল। মন্দিরের প্রতিটি অংশ এরস গাছের তক্তা দিয়ে ঢাকা ছিল। 10 মন্দিরের চার পাশের ঘর বানানোর কাজও শেষ হল। এই ঘরগুলো প্রায় 5 হাত উঁচু ছিল। এইসব ঘরের এরস কাঠের কড়ি মন্দিরকে ছুঁয়ে থাকত।
11 প্রভু শলোমনকে বলেছিলেন, 12 “যদি তুমি আমার বিধি এবং নির্দেশগুলি মেনে চলো তাহলে আমি যা যা করব বলে তোমার পিতা দায়ূদকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা পালন করব। 13 এছাড়াও তুমি যে মন্দির তৈরী করছ সেখানে ইস্রায়েলের সন্তান সন্ততিদের মধ্যে বাস করব। ইস্রায়েলের বাসিন্দাদের কখনও ছেড়ে যাব না।”
14 শলোমন মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ করলেন। 15 মন্দিরের ভেতরের পাথরের দেওয়াল ও ছাদ এরস কাঠে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। মন্দিরের মেঝে ঢাকা হয়েছিল দেবদারু গাছের তক্তা দিয়ে। 16 মন্দিরের পেছন দিকে 20 হাত দীর্ঘ একটি ঘর বানানো হয়েছিল। এই ঘরটি ছিল মন্দিরের পবিত্রতম স্থান। এই ঘরের দেওয়াল মেঝের থেকে ছাদ পর্যন্ত এরস কাঠে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল। 17 পবিত্রতম স্থানের সামনে ছিল মন্দিরের মূল অংশ বা ঘরটি, যার দৈর্ঘ্য প্রায় পৌনে 40 হাত। 18 এখানকার দেওয়াল এবং ছাদও একই ভাবে এরসকাঠে ঢাকা ছিল। দেওয়ালের কোন পাথরই দেখা যেত না। দেওয়ালে এরস কাঠের নানা ধরণের ফুল ও লতাপাতার ছবি খোদাই করা ছিল।
19 প্রভুর সাক্ষ্যসিন্দুকটি রাখার জন্য শলোমন মন্দিরের একেবারে পেছনদিকে বিশেষ ভাবে ঘরটি নির্মাণ করেছিলেন। 20 এই ঘরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা ছিল 20 হাত। 21 শলোমন ঘরটি আগাগোড়া বিশুদ্ধ সোনার পাত দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন। তিনি ঘরের সামনে ধূপধূনো দেবার জন্য একটি বেদী তৈরী করেছিলেন। তিনি বেদীটি সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন এবং তার চারপাশে সোনার হার জড়িয়ে দিয়েছিলেন। এছাড়াও ঘরটিতে সোনায় মোড়া দুই করূব দূতের মূর্ত্তি ছিল। 22 বস্তুত গোটা মন্দিরটাই সোনায় মোড়া ছিল। পবিত্রতম স্থানের সামনের বেদীটিও ছিল সোনায় ঢাকা।
23 মন্দির নির্মাতারা 10 হাত দীর্ঘ করূব দূতের ডানাওয়ালা মূর্ত্তি দুটো প্রথমে বিশেষ এক ধরণের গাছের কাঠে বানিয়ে তারপর সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিল। 24-27 মূর্ত্তি দুটোর প্রত্যেকটি ডানার দৈর্ঘ্য প্রায় 5 হাত করে অর্থাৎ ডানার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত মূর্ত্তিদুটো ছিল প্রায় 10 হাত চওড়া। গর্ভগৃহের পাশাপাশি, সম দৈর্ঘ্যের এই মূর্ত্তি দুটো দাঁড় করানো থাকত। 28 দুটো করূব দূত সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিল।
29 মন্দিরের মূল ঘরটির দেওয়ালের ওপর এবং মন্দিরের অন্তবর্ত্তী ঘরটির দেওয়ালের ওপর তালগাছ, বিভিন্ন ফুল, লতাপাতা ও করূব দূতের ছবি খোদাই করা ছিল। 30 দুটো ঘরের মেঝেই সোনায় ঢাকা ছিল।
31 কর্মীরা জিতগাছের কাঠ দিয়ে দুটো দরজা বানিয়েছিল এবং সে দুটি পবিত্রতম স্থানের প্রবেশ পথে বসিয়ে দিয়েছিল। দরজার পথে চারপাশের কাঠামো 1/5 হাত চওড়া ছিল। 32 তারা জৈতুন গাছের কাঠ থেকে দুটো দরজা তৈরী করল। মিস্ত্রিদের তৈরী সোনার পাতে মোড়া দরজা দুটোয় খোদাই করা ছিল তালগাছ, বিভিন্ন লতাপাতা ও করূব দূতের ছবি।
33 মূল ঘরটিতে প্রবেশ করবার জন্যও তারা দরজা বানিয়েছিল। একটি চার কোণা দরজার কাঠামো বানানোর জন্য তারা জিতগাছের কাঠ ব্যবহার করেছিল, যা চওড়ায় ছিল চার ভাগের এক ভাগ। 34-35 সেই কাঠামোয় দেবদারু কাঠের দুটি দরজা বসানো হয়। এই প্রত্যেকটি দরজা আবার দুভাগে মুড়ে ভাঁজ হতো। এগুলোর ওপরেও একই রকম করূব দূতের ছবি খোদাই করে সোনায় মোড়া ছিল।
36 এরপর তিনসারি কাটা পাথরের দেওয়াল ও একসারি এরস কাঠের দেওয়াল দিয়ে ঘিরে মন্দিরের ভেতরের অংশ তৈরী করা হল।
37 সিব মাসে শলোমনের চতুর্থ বছরের রাজত্বের দ্বিতীয় মাসে শুরু করে বুল মাসে, 38 অর্থাৎ তাঁর একাদশ বছরের অষ্টম মাসের রাজত্বের সময় মন্দিরটির নির্মাণ কার্য শেষ হয়। যে ভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল সাত বছর সময় নিয়ে ঠিক সে ভাবে মন্দিরটি বানানো হয়েছিল।
শলোমনের রাজপ্রাসাদ
7 রাজা শলোমন তাঁর নিজের জন্য একটি রাজপ্রাসাদও বানিয়েছিলেন। প্রাসাদটি বানাতে 13 বছর সময় লেগেছিল। 2 এছাড়াও তিনি “লিবানোনের বাগান” নামে একটি বাড়ি বানিয়েছিলেন। এই বাড়ীটির দৈর্ঘ্য ছিল 100 হাত, প্রস্থ 50 হাত ও উচ্চতা 30 হাত। বাড়ীটায় এরস কাঠের চারসারি স্তম্ভ ছিল। স্তম্ভগুলির মাথায় কাঠের আচ্ছাদন ছিল। 3 স্তম্ভের শীর্ষভাগে ছিল সারি সারি কড়ি বর্গা। আর তার ওপর ছাদের জন্য এরস তক্তা বসানো হয়েছিল। একেকটি স্তম্ভের ওপর 15টি কড়ি মিলিয়ে মোট 45টি কড়ি বসানো ছিল। 4 প্রত্যেকটি ধারের দেওয়ালে তিন সারি করে মুখোমুখি জানালা বসানো ছিল। 5 প্রত্যেক সারির শেষে দরজা ছিল। দরজাগুলোর মুখ এবং কাঠামো ছিল চার কোণা।
6 এছাড়া শলোমন 50 হাত লম্বা ও 30 হাত চওড়া একটি “ঝুলন্ত বারান্দা” বানিয়েছিলেন। বারান্দার সামনে একটা ছাদ ছিল যেটা অনেক থাম বা খিলানকে অবলম্বন করেছিল।
7 লোকের বিচার করার জন্য শলোমন একটি “বিচার কক্ষও” বানিয়েছিলেন। এই ঘরের আগাগোড়া এরস কাঠে মোড়া ছিল।
8 শলোমনের নিজের বাসগৃহটি এই বিচারকক্ষের ভেতরে ছিল। এই গৃহটি বিচারকক্ষের মতোই ছিল। তিনি তাঁর স্ত্রী, মিশরের রাজার মেয়ের জন্যও একই রকম একটা গৃহ বানিয়ে দিয়েছিলেন।
9 প্রত্যেকটি বাড়ী মূল্যবান পাথরে তৈরী হয়েছিল। বিশেষ এক ধরণের করাতের সাহায্যে প্রথমে পাথরগুলোকে সঠিক মাপে সামনে ও পেছনে কেটে নেওয়া হত। একেবারে বাড়ির ভিত থেকে দেওয়ালের মাথা পর্যন্ত এইসব দামী পাথর বসানো হত। এমনকি উঠোনের চারপাশের দেওয়ালগুলোও এই সমস্ত দামী পাথরে বানানো হয়েছিল। 10 বাড়ির ভিতগুলো যে সমস্ত বড় বড় দামী পাথরে বানানো হত সেগুলোর দৈর্ঘ্য ছিল 10 হাত এবং কয়েকটি ছিল 8 হাত। 11 ঐসব পাথরের ওপর ছিল অন্যান্য মূল্যবান পাথর এবং এরস গাছের তৈরী থাম। 12 রাজপ্রাসাদের আঙ্গিনা থেকে শুরু করে মন্দির প্রাঙ্গণ, মন্দিরের বারান্দা, ঘরের চারপাশে তিন সারি পাথর ও এক সারি এরস কাঠের দেওয়াল ছিল।
13 রাজা শলোমন খবর পাঠিয়ে সোর থেকে হীরম নামে এক ব্যক্তিকে জেরুশালেমে নিয়ে আসেন। 14 হীরমের মা ছিলেন নপ্তালির এক ইস্রায়েলীয় পরিবারগোষ্ঠীর মহিলা। তাঁর মৃত পিতা ছিলেন সোরের বাসিন্দা। হীরম ছিল পিতলের জিনিসপত্রের দক্ষ কারিগর। এ কারণেই শলোমন হীরমকে ডেকে পাঠিয়ে পিতলের কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যা কিছু পিতলের কাজ সে সবই হীরম করেছিল।
15 হীরম প্রায় 18 হাত দীর্ঘ, 12 হাত পরিধিযুক্ত এবং 3 ইঞ্চি পুরু পিতলের দুটো ফাঁপা স্তম্ভ বানিয়েছিল। 16 এছাড়া হীরম মন্দিরের জন্য 5 হাত উচ্চ খাঁটি পিতলের দুটি রাজস্তম্ভ বানিয়েছিল এবং তাদের স্তম্ভগুলির মাথায় বসিয়েছিল। 17 এরপর হীরম এই স্তম্ভগুলি ঢাকার জন্য দুটো শিকলের জাল বানায়। 18 তারপর সে ডালিমের মত দেখতে পিতলের দুসারি ফুল বানায়। এগুলি প্রতিটি স্তম্ভের জালের ওপর এমন ভাবে রাখা হয় যে স্তম্ভগুলির চূড়া ঢাকা পড়ে যায়। 19 ফলতঃ স্তম্ভগুলির সওয়া হাত থেকে 5 হাত পর্যন্ত লম্বা শিখরগুলি ফুলের মত দেখতে লাগল। 20 স্তম্ভ চূড়াগুলো স্তম্ভের উপর বাটির মত দেখতে জালে বসানো হয়েছিল। ওখানে স্তম্ভ চূড়াগুলোর চার পাশে 200টা ডালিম সারিবদ্ধভাবে বসানো ছিল। 21 হীরম পিতল নির্মিত মন্দিরের বারান্দাতে দুটি স্তম্ভ স্থাপন করল। দক্ষিণ দিকের স্তম্ভটিকে বলা হত যাখীন। উত্তর দিকের স্তম্ভটিকে বলা হত বোয়স। 22 পুষ্পাকৃতি স্তম্ভ চূড়া দুটোকে স্তম্ভের মাথায় বসিয়ে স্তম্ভের কাজ শেষ করা হয়।
23 অতঃপর হীরম পিতল দিয়ে গোলাকার একটা জলাধার বানালো, যার নাম দেওয়া হল “সমুদ্র।” এটির পরিধি ছিল 30 হাত, ব্যাস ছিল 10 হাত ও গভীরতা ছিল 5 হাত।
24 জলাধারটি ঘিরে পিতলের একটি ফালি বসানো ছিল। এই ফালিটির তলায় জলাধারের গায়ে দুসারি পিতলের লতাপাতার নকশা কাটা ছিল। 25 আর গোটা জলাধারটি বসানো ছিল 12টি পিতলের তৈরী ষাঁড়ের পিঠে। 12টি ষাঁড়ের তিনটির মুখ ছিল উত্তরমুখী, তিনটির দক্ষিণমুখী, তিনটির পূর্বমুখী ও বাকী তিনটির পশ্চিমমুখী। 26 জলাধারটির চারিধার 3 ইঞ্চি পুরু। জলাধারের কাণা পানপাত্রের কাণার সদৃশ অথবা ফুলের পাপড়ির মতো ছিল। জলাধারটিতে প্রায় 11,000 গ্যালন জল ধরত।
27 এরপর হীরম 10টি পিতলের ঠেলা বানালো। প্রত্যেকটি ঠেলা ছিল 4 হাত লম্বা, 4 হাত চওড়া আর উচ্চতায় 3 হাত। 28 ঠেলাগুলি কাঠামোয় বসানো চৌকোণা তক্তা দিয়ে বানানো হয়েছিল, 29 যার ওপর পিতলের সিংহ, ষাঁড় ও করূব দূতের প্রতিকৃতি খোদাই করা ছিল। এইসব প্রতিকৃতির ওপরে ও নীচে নানান ফুলের নকশা কাটা হয়েছিল। 30 প্রতিটি ঠেলায় 4টি করে পিতলের চাকা ছিল। কোণায় ছিল একটি বড় পাত্র রাখার মতো পিতলের কয়েকটি পায়া, যেগুলোর গায়ে নানা ধরণের ফুল লাগানো হয়েছিল। 31 বাটিগুলির প্রায় 1 হাত ওপরে একটি নকশা খোদাই করা কাঠামো ছিল। বাটিগুলির মুখ ছিল গোল, ব্যাস 1.5 হাত। কাঠামোটি ছিল চৌকোণা, গোল নয়। 32 কাঠামোর নীচের দিকে চারটি চাকা ছিল। চাকাগুলির ব্যাস 1.5 হাত। চাকার মধ্যের দণ্ডগুলি ঠেলা গাড়ীর সঙ্গে একসঙ্গেই যুক্ত ছিল। 33 এই চাকাগুলো ছিল রথের চাকার মতো এবং চাকার সব কিছুই ছিল পিতলে বানানো।
34 পাত্র ধরে রাখার পায়া চারটি প্রত্যেকটা ঠেলার চারকোণায় বসানো ছিল। এগুলোও ঠেলার সঙ্গে একই ছাঁচে বসানো হয়। 35 প্রত্যেকটা ঠেলার ওপরের দিকে পিতলের একটা করে ফালি বসানো ছিল। এই ফালিটাও ছিল একই ছাঁচে বানানো। 36 ঠেলার চারপাশে এবং কাঠামোর গায়ে সিংহ, তালগাছ, করূব দূত ইত্যাদির ছবি খোদাই করা ছিল। গোটা ঠেলার যেখানেই জায়গা ছিল সেখানেই এইসব খোদাই করে দেওয়া হয়। আর ঠেলার চতুর্দিকে ফুলের নকশা খোদাই করে দেওয়া হয়েছিল। 37 হীরম একই রকম দেখতে মোট 10টি ঠেলা বানিয়েছিল। এর প্রত্যেকটা ঠেলাই পিতল দিয়ে তৈরী একই ছাঁচে ফেলে বানানো হয়েছিল, যে কারণে এইসব কটাই এক রকম দেখতে ছিল।
38 এছাড়াও হীরম প্রত্যেকটা ঠেলার জন্য একটা করে মোট 10টি বড় বাটি বানিয়েছিল। যেগুলো প্রায় 4 হাত করে চওড়া ছিল এবং এই পাত্রগুলোয় 230 গ্যালন পর্যন্ত পানীয় ধরত। 39 হীরম ঠেলাগুলোর পাঁচটি রেখেছিল মন্দিরের উত্তর দিকে এবং পাঁচটি মন্দিরের দক্ষিণ দিকে। আর বড় পাত্রটিকে মন্দিরের দক্ষিণপূর্ব কোণায় বসিয়েছিল। 40-45 এছাড়াও শলোমনের নির্দেশ মতো অজস্র পাত্র, ছোট হাতা, ছোট বাটি যা কিছু তাকে বানাতে বলা হয়েছিল সে বানিয়েছিল। প্রভুর মন্দিরে হীরম যা কিছু বানিয়েছিল তার তালিকা দেওয়া হল:
2টি স্তম্ভ, স্তম্ভের ওপরে বসানোর জন্য বাটির মতো দেখতে
2টি স্তম্ভ চূড়া, গম্বুজগুলো ঘেরার জন্য
2টি জাল, জালে লাগানোর জন্য
400টি ডালিম। প্রতিটি জালের জন্য 2 সারি ডালিম ছিল যাতে স্তম্ভগুলির মাথার ওপরের গম্বুজ ঢাকা পড়ে,
একটা বাটি সহ 10টি ঠেলা,
একটি বড় চৌবাচ্চা যার নীচে ছিল 12টি ষাঁড়,
ছোট হাতা, ছোটখাটো পাত্র ও প্রভুর মন্দিরের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য বাসনকোসন।
শলোমন যা যা চেয়েছিলেন, হীরম তার সবই বানিয়ে দিয়েছিল চক্চকে পিতল দিয়ে। 46-47 পিতল দিয়ে এতো বেশী জিনিসপত্র বানানো হয়েছিল যে শলোমন কখনও এসব ওজন করার চেষ্টা করেন নি। শলোমন এসবই যর্দ্দন নদীর সুক্কোৎ ও সর্ত্তনের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এইসব জিনিসই পিতল গলিয়ে ছাঁচে ঢেলে বসানো হয়।
48-50 শলোমন তাঁর মন্দিরের জন্য অনেক জিনিসই সোনা দিয়ে বানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। মন্দিরের যেসব জিনিস শলোমন সোনা দিয়ে বানিয়েছিলেন সেগুলো হল:
সোনার বেদী,
একটি সোনার টেবিল (যার ওপরে সাজিয়ে ঈশ্বরকে রুটির নৈবেদ্য দেওয়া হত),
পবিত্রতম স্থানের উত্তর ও দক্ষিণে পাঁচটি পাঁচটি করে মোট 10টি বাতিদান,
পবিত্রতম স্থানের উত্তর ও দক্ষিণের জন্য 5টি করে চিমটে, সোনার বাটি,
কব্জাসমূহ, ছোট বাটি, পবিত্রতম স্থান ও মূল ঘরটির দরজার জন্য সোনার কপাট।
51 এমনি করে শেষ পর্যন্ত শলোমন প্রভুর মন্দিরের জন্য যা যা করতে চেয়েছিলেন সেই কাজ শেষ হল। এরপর তাঁর পিতা রাজা দায়ূদ মন্দিরের জন্য যে সব জিনিস তাঁর কোষাগারে রেখে দিয়েছিলেন, শলোমন সেই সমস্ত জিনিস মন্দিরে নিয়ে এলেন। সোনা ও রূপো তিনি প্রভুর মন্দিরের কোষাগারে তুলে রাখলেন।
কিছু সদ্দূকীর যীশুকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা
(মথি 22:23-33; মার্ক 12:18-27)
27 তখন সদ্দূকী সম্প্রদায়ের কয়েকজন লোক যীশুর কাছে এল। এই সদ্দূকীরা বলত, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান বলে কিছু নেই। তারা এসে যীশুকে প্রশ্ন করল, 28 “গুরু, মোশি আমাদের জন্য লিখে রেখে গেছেন যে নিঃসন্তান অবস্থায় যদি কোন লোক তার স্ত্রীকে রেখে মারা যায়, তবে তার ভাই সেই স্ত্রীকে বিয়ে করে ভাইয়ের হয়ে তার বংশ রক্ষা করবে।[a] 29 এরকম একজন যারা সাত ভাই ছিল, তাদের প্রথম ভাই বিয়ে করার পর নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেল। 30 দ্বিতীয় ভাই তখন সেই বিধবাকে বিয়ে করল। 31 এরপর তৃতীয় ভাই, এইভাবে সাত ভাই-ই একজন স্ত্রীকে বিয়ে করল আর তারা সকলেই নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেল। 32 পরে সেই স্ত্রীও মারা গেল। 33 এখন পুনরুত্থানের সময়ে সে কার স্ত্রী হবে? কারণ সাত জনই তো তাকে বিয়ে করেছিল?”
34 তখন যীশু তাদের বললেন, “এই যুগের লোকরাই বিয়ে করে আর তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। 35 কিন্তু মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়ে আগামী যুগের যোগ্য বলে যাদের গন্য করা হবে, তারা বিয়ে করবে না বা তাদের বিয়ে দেওয়াও হবে না। 36 তারা আর মরতে পারে না, কারণ তারা স্বর্গদূতদের মতো, মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছে বলে তারা ঈশ্বরের সন্তান। 37 জ্বলন্ত ঝোপের[b] বিষয়ে যেখানে লেখা হয়েছে, সেখানে মোশিও দেখিয়েছেন যে মৃতেরা পুনরুত্থিত হয়। সেখানে মোশি প্রভু ঈশ্বরকে ‘অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর, ও যাকোবের ঈশ্বর(A) বলে উল্লেখ করেছেন।’ 38 ঈশ্বর মৃত লোকদের ঈশ্বর নন, তিনি জীবিত লোকদেরই ঈশ্বর। যারা আগামী যুগের যোগ্য লোক তারা সকলেই ঈশ্বরের চোখে জীবিত থাকে।”
39 ব্যবস্থার শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকজন বলল, “গুরু, আপনি ঠিকই বলেছেন!” 40 এরপর তাঁকে আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস কারো হল না।
খ্রীষ্ট কি দায়ূদের পুত্র?
(মথি 22:41-46; মার্ক 12:35-37)
41 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, “তারা কি করে বলে যে খ্রীষ্ট রাজা দায়ূদের পুত্র? 42 কারণ গীতসংহিতায় দায়ূদ নিজেই বলেছেন,
‘প্রভু পরমেশ্বর আমার প্রভুকে বললেন,
43 যতদিন না আমি তোমার শত্রুদের তোমার পাদপীঠে পরিণত করি,
তুমি আমার ডানদিকে বস।’(B)
44 দায়ূদ তো খ্রীষ্টকে এইভাবে ‘প্রভু’ বলে সম্বোধন করলেন, তাহলে খ্রীষ্ট কিভাবে তাঁর সন্তান হলেন?”
ব্যবস্থার শিক্ষকদের প্রতি সতর্কবাণী
(মথি 23:1-36; মার্ক 12:38-40; লূক 11:37-54)
45 সমস্ত লোক যখন এসব কথা শুনছিল, তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, 46 “ব্যবস্থার শিক্ষকদের থেকে সাবধান। তারা লম্বা লম্বা পোশাক পরে ঘুরে বেড়াতে ও হাটে বাজারে লোকদের কাছ থেকে সম্মান পেতে ভালবাসে; আর সমাজগৃহে বিশেষ সম্মানের স্থানে বসতে ও ভোজসভায় সম্মানের আসন দখল করতেও ভালবাসে। 47 তারা একদিকে লোক দেখানো লম্বা লম্বা প্রার্থনা করে, অপরদিকে বিধবাদের সর্বস্ব গ্রাস করে, এদের ভয়ঙ্কর শাস্তি হবে।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International