Old/New Testament
শৌলের প্রথম ভুল
13 সেই সময় শৌল সবে এক বছর রাজা হয়েছেন। ইস্রায়েলের ওপর দু-বছর রাজত্ব করবার পর,[a] 2 তিনি ইস্রায়েল থেকে 3000 পুরুষকে মনোনীত করলেন। বৈথেলের পাহাড়ে মিক্মস দেশে শৌলের সঙ্গে রইল 2000 জন। 1000 জন রইল যোনাথনের কাছে। তারা ছিল বিন্যামীনের গিবিয়া শহরে। সৈন্যদলের বাকি লোকদের তিনি বাড়ী পাঠিয়ে দিলেন।
3 যোনাথন গেবা শিবিরে পলেষ্টীয়দের প্রধান সেনাপতিকে হত্যা করল। এখবর শুনে পলেষ্টীয়রা বলল, “ইব্রীয়রা বিদ্রোহ করেছে।”
শৌল বলল, “কি হয়েছে ইব্রীয়রা শুনুক।” শৌল তার লোকদের বলল সমস্ত ইস্রায়েলে তারা শিঙা বাজিয়ে দিক। 4 ইস্রায়েলীয়রা খবরটা শুনল। তারা বলল, “শৌল পলেষ্টীয় নেতাকে হত্যা করেছে। এবার পলেষ্টীয়রা সত্যিই ইস্রায়েলীয়দের ঘৃণা করবে!”
ইস্রায়েলীয়দের বলা হল, তারা যেন গিল্গলে শৌলের সঙ্গে যোগ দেয়। 5 পলেষ্টীয়রা জড়ো হয়ে ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেল। পলেষ্টীয়দের ছিল 3000 রথ আর 6000 অশ্বারোহী সৈন্য। সমুদ্রের বালির মত পলেষ্টীয়দের অসংখ্য সৈন্য ছিল। এদের শিবির পড়ল মিক্মসে। মিক্মস হচ্ছে বৈৎ-আবনের পূর্ব দিকে।
6 ইস্রায়েলীয়রা দেখল তারা বিপদের মুখে। ফাঁদে পড়েছে বলে মনে হল তাদের। তারা পালিয়ে গিয়ে গুহায়, পাহাড়ের ফাঁকে ফোকরে লুকিয়ে রইল। লুকিয়ে রইল কুয়োয়, মাটির ভেতরে যে কোন গর্তের মধ্যে। 7 কিছু ইব্রীয় যর্দন নদী পেরিয়ে গাদ আর গিলিয়দের দিকেও চলে গেল। শৌল তখনও গিল্গলে। তার সৈন্যরা সবাই ভয়ে কাঁপছে।
8 শমূয়েল বলল যে সে গিল্গলে শৌলের সঙ্গে দেখা করবে। শৌল তার জন্যে সাতদিন অপেক্ষা করে রইলেন। কিন্তু শমূয়েল তবুও গিল্গলে এল না। সৈন্যরা শৌলকে ছেড়ে চলে যেতে লাগল। 9 তখন শৌল বললেন, “আমার কাছে হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্যগুলি এনে দাও।” তারপর শৌল সেই হোমবলি উৎসর্গ করলেন। 10 শৌলের হোমবলি উৎসর্গ করা শেষ করতেই শমূয়েল এল। শৌল তার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন।
11 শমূয়েল বলল, “এ কি করেছ?”
শৌল বললেন, “দেখলাম সৈন্যরা আমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তুমিও সময় মতো আসো নি। ওদিকে পলেষ্টীয়রা মিক্মসে জড়ো হয়েছে। 12 তখন আমি মনে মনে বললাম, ‘পলেষ্টীয়রা এখানে আসবে। ওরা গিল্গলে আমাকে আক্রমণ করবে। এখনও আমি প্রভুর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি নি। তাই অবশেষে আমি নিজেই জোর করে হোমবলি উৎসর্গ করেছি।’”[b]
13 শমূয়েল বলল, “খুব বোকামি করেছ! তুমি তোমার প্রভু ঈশ্বরের কথা শোন নি। তাঁর আদেশ শুনলে তিনি তোমাদের পরিবারকে চিরকাল ইস্রায়েলকে শাসন করতে দিতেন। 14 কিন্তু এখন আর তোমার রাজত্ব স্থির থাকবে না। প্রভু এমনই একজনকে খুঁজছিলেন যে তাঁর কথা শুনবে। তিনি সেই লোক পেয়ে গেছেন। তিনি তাঁর প্রজাদের জন্য নতুন নেতা হিসেবে তাকেই মনোনীত করেছেন। তুমি প্রভুর কথার বাধ্য হও নি বলেই তিনি নতুন নেতা নির্বাচন করেছেন।” 15 এই বলে শমূয়েল উঠে দাঁড়াল এবং গিল্গল থেকে চলে গেল।
মিকমশে যুদ্ধ
বাকি সৈন্যদের নিয়ে শৌল গিল্গল ছেড়ে বিন্যামীনের গিবিয়ায় চলে গেলেন। শৌল মাথা গুনে দেখলেন তাঁর সঙ্গে রয়েছে প্রায় 600 জন। 16 শৌল, তাঁর পুত্র যোনাথন এবং সৈন্যরা বিন্যামীনের গিবিয়াতে গেল।
পলেষ্টীয়রা মিকমশে তাঁবু গেড়েছিল। 17 সেখানে যত ইস্রায়েলীয় ছিল তাদের পলেষ্টীয়রা শায়েস্তা করতে চাইল। তাদের সেরা সৈন্যরা আক্রমণের জন্য তৈরী হল। তারা তিনটি দলে ভাগ হয়ে গেল। একটা দল গেল উত্তরে, শূয়ালের কাছে অফ্রার রাস্তায়। 18 দ্বিতীয় দল গেল দক্ষিণ পূর্ব দিকে, বৈৎ-হোরোণের রাস্তায়। তৃতীয় দল পূর্বদিকে, সীমান্তের পথে। সেই পথে মরুভূমির দিকে সিবোয়িম উপত্যকা চোখে পড়ে।
19 ইস্রায়েলের কেউই লোহার জিনিসপত্র তৈরী করতে পারত না। ইস্রায়েলে কোন কামার ছিল না। পলেষ্টীয়রা ওদের এসব বানাতে শেখায়নি। কারণ তাদের ভয় ছিল, ইস্রায়েলীয়রা তাহলে লোহার তরবারি আর বর্শা তৈরী করে ফেলবে। 20 পলেষ্টীয়রাই শুধু লোহার জিনিসপত্র ধার দিতে পারত। সেই জন্য যদি ইস্রায়েলীয়দের লাঙল, নিড়ানি, কুড়ুল, কাস্তে শান দিতে হত, তাহলে তাদের পলেষ্টীয়দের কাছেই যেতে হত। 21 একটা লাঙল আর নিড়ানির জন্যে পলেষ্টীয়রা মজুরি নিত 1/3 আউন্স রূপো। গাঁইতি, কুড়ুল, আর ষাঁড় খোঁচানো শাবল ধার করার জন্য নিত 1/6 আউন্স রূপো। 22 তাই যুদ্ধের দিন শৌলের কোন ইস্রায়েলীয় সৈন্যই লোহার তরবারি বা বর্শা নিয়ে যায় নি। শুধুমাত্র শৌল ও তাঁর পুত্র যোনাথনের কাছেই লোহার অস্ত্র ছিল।
23 একদল পলেষ্টীয় সৈন্য মিক্মসের গিরিপথ পাহারা দিচ্ছিল।
যোনাথন পলেষ্টীয়দের আক্রমণ করল
14 সেদিন শৌলের পুত্র যোনাথন তার অস্ত্রবাহকের সঙ্গে কথা বলছিল। যোনাথন বলল, “উপত্যকার অন্যদিকে পলেষ্টীয়রা তাঁবু গেড়েছে। চলো সেদিকে যাওয়া যাক।” পিতাকে সে এ বিষয়ে কোন কথা বলল না।
2 শৌল তখন পাহাড়ের ধারে মিগ্রোন নামে একটা জায়গায় একটা ডালিম গাছের নীচে বসেছিলেন। এটা ছিল যেখানে ফসল ঝাড়াই হয় তারই কাছে। শৌলের সঙ্গে ছিল প্রায় 600 জন লোক। 3 একজনের নাম ছিল অহিয়। এলি শীলোয় প্রভুর যাজক ছিল। তার জায়গায় এখন অহিয় নামে এক ব্যক্তি যাজক হল। সে পরল যাজকের এফোদ নামক বিশেষ পোশাক। অহিয় ছিল ঈখাবোদের ভাই অহীটুবের পুত্র। ঈখাবোদের পিতার নাম পীনহস। পীনহসের পিতা ছিল এলি।
লোকরা জানত না যে যোনাথন চলে গিয়েছিল। 4 গিরিপথের উভয় পাশে একটা বড় শিলা ছিল। যোনাথন ঠিক করল ঐ গিরিপথ দিয়ে সে পলেষ্টীয় শিবিরে পৌঁছবে, একটা শিলার নাম ছিল বোৎসেস; অন্য শিলাটির নাম ছিল সেনি। 5 একটি শিলা উত্তরে মিক্মস অভিমুখে ছিল এবং অন্যটি ছিল দক্ষিণে গেবার দিকে মুখ করা।
6 যোনাথন তার অস্ত্রবাহক যুবক সহকারীকে বলল, “চলো আমরা ঐ বিদেশীদের তাঁবুর দিকে যাই। হয়তো ওদের হারিয়ে দিতে প্রভু আমাদের সাহায্য করতে পারেন। প্রভুকে কেউই থামাতে পারে না। আমাদের সৈন্য কম হোক্ বা বেশী এতে কিছু যায় আসে না।”
7 অস্ত্রবাহক যুবকটি তাকে বলল, “যা ভাল বোঝ, করো। আমি তোমার সঙ্গে সমস্ত ব্যাপারে থাকব।”
8 যোনাথন বলল, “চলো এগোনো যাক! আমরা উপত্যকা পেরিয়ে পলেষ্টীয় প্রহরীদের দিকে যাব। এমন করব যেন তারা আমাদের দেখতে পায়। 9 যদি তারা বলে, ‘আমরা না আসা পর্যন্ত ওখানে দাঁড়াও,’ তাহলে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকব। আমরা ওদের দিকে এগোব না। 10 কিন্তু যদি পলেষ্টীয় লোকরা বলে, ‘এদিকে চলে এসো,’ তাহলে আমরা পাহাড় ডিঙিয়ে তাদের দিকে চলে যাব। কেন? কারণ সেটাই হবে ঈশ্বরের দেওয়া চিহ্ন বিশেষ। এর অর্থ হচ্ছে, প্রভু আমাদের সহায় হলেন যাতে ওদের হারিয়ে দিতে পারি।”
11 সেই মতো যোনাথন ও তার অস্ত্রবহনকারী পলেষ্টীয়দের একটা সুযোগ করে দিল ওরা যাতে তাদের দেখতে পায়। পলেষ্টীয় প্রহরীরা বলল, “দেখ, গর্ত থেকে ইব্রীয়রা বেরিয়ে আসছে যেখানে তারা লুকিয়ে ছিল!” 12 দুর্গের ভেতর থেকে পলেষ্টীয়রা যোনাথন ও তার অস্ত্রবহনকারীকে চিৎকার করে বলল, “এগিয়ে এসো। আমরা তোমাদের উচিৎ শিক্ষা দেব!”
যোনাথন তার অস্ত্রবহনকারীকে বলল, “আমি পাহাড়ে উঠছি। আমার পিছন পিছন এসো। প্রভু ইস্রায়েলীয়দের দিয়ে পলেষ্টীয়দের পরাজিত করতে দিচ্ছেন!”
13-14 তাই যোনাথন হামাগুড়ি দিয়ে পাহাড়ে উঠল। তার অস্ত্রবহনকারী ঠিক তার পিছনে। যোনাথন ও তার অস্ত্রবহনকারী সেখানে ছিল না। ওরা দুজনে পলেষ্টীয়দের আক্রমণ করল। প্রথম চোটেই তারা আধ একর জমি জুড়ে 20 জন পলেষ্টীয়কে হত্যা করল। সামনে থেকে যারা আক্রমণ করতে আসছিল যোনাথন তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করল। আর তার অস্ত্রবহনকারী পিছন পিছন এসে যারা শুধু আহত হয়েছিল তাদের মেরে ফেলল।
15 পলেষ্টীয় সৈন্যরা সকলেই বেশ ভয় পেয়ে গেল। মাঠে, শিবিরে, দুর্গে যে সব সৈন্য ছিল সকলেই ভয় পেয়ে গেল, এমনকি সবচেয়ে সাহসী যারা তারাও। মাটি কাঁপতে লাগল এবং তাতে পলেষ্টীয় বাহিনী সত্যিই বেশ ভয় পেয়ে গেল।
16 শৌলের প্রহরীরা ছিল বিন্যামীনের গিবিয়ায়। তারা দেখল পলেষ্টীয়রা যেদিকে পারছে পালাচ্ছে। 17 শৌল সৈন্যদের বললেন, “লোকগুলোকে গোন। ক’জন শিবির ছেড়ে গেছে দেখতে চাই।”
ওরা লোক গুনতে শুরু করল। যোনাথন ও তার অস্ত্রবহনকারী সেখানে ছিল না।
18 শৌল অহিয়কে বললেন, “এবার ঈশ্বরের পবিত্র সিন্দুক আনো।” (সেই সময় ঈশ্বরের পবিত্র সিন্দুক ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে ছিল।) 19 শৌল যাজক অহিয়র সঙ্গে কথা বলছিলেন। ঈশ্বরের উপদেশের জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু পলেষ্টীয়দের শিবিরে গোলমাল আর চেঁচামেচি ক্রমশঃ বেড়েই চলেছিল। শৌল অধৈর্য্য হয়ে পড়লেন। অবশেষে তিনি যাজক অহিয়কে বললেন, “আর নয়, এবার হাত নামাও। প্রার্থনা শেষ করো।”
20 সৈন্যসামন্ত জড়ো করে নিয়ে শৌল যুদ্ধ করতে গেলেন। পলেষ্টীয় সৈন্যরা বিভ্রান্ত হয়ে গেল। এমনকি তারা তাদের তরবারি ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে লড়াই করছিল। 21 কিছু ইব্রীয় আগে পলেষ্টীয়দের সেবা করত এবং তাদের শিবিরেই থাকত। কিন্তু এখন তারা শৌল আর যোনাথনের সঙ্গে মিশে গেল। তারা এখন ইস্রায়েলীয়দের দলে ভিড়ে গেল। 22 ইফ্রয়িমের পার্বত্য দেশে যেসব ইস্রায়েলীয় লুকিয়েছিল তারা পলেষ্টীয়দের পালিয়ে যাবার খবর শুনল। এখন এই ইস্রায়েলীয়রাও যুদ্ধে নেমে পলেষ্টীয়দের তাড়িয়ে দিতে শুরু করল।
23 এইভাবে প্রভু সেদিন ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করলেন। যুদ্ধ চললো বৈৎ-আবন ছাড়িয়ে। সমস্ত সৈন্য এখন শৌলের সঙ্গে। তারা সংখ্যায় প্রায় 10,000 জন পুরুষ। পাহাড়ী অঞ্চলে ইফ্রয়িমের সমস্ত শহরগুলিতে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ল।
শৌলের আরেকটি ভুল
24 কিন্তু সেদিন শৌল একটা মস্ত ভুল করেছিলেন। ইস্রায়েলীয়রা ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছিল। এর কারণ শৌল। তিনি তাদের দিয়ে এই প্রতিশ্রুতি করিয়েছিলেন, “সন্ধ্যার আগে এবং আমি শত্রুদের হারিয়ে দেবার আগে যদি কেউ খায় তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে।” তাই কোন ইস্রায়েলীয় সৈন্য কিছু খায় নি।
25-26 যুদ্ধ করতে গিয়ে তারা বেশ কিছু জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। তারপর তারা এক জায়গায় মাটির ওপরে একটি মৌচাক দেখল, কিন্তু মৌচাকের কাছে গিয়েও খেল না। প্রতিশ্রুতি ভাঙ্গতে তাদের ভয় করছিল। 27 কিন্তু যোনাথন এই প্রতিশ্রুতির কথা জানত না। সে জানত না যে তার পিতা সৈন্যদের জোর করে এই প্রতিশ্রুতি করিয়েছেন। যোনাথনের হাতে ছিল একটি লাঠি। সে লাঠিটার একটা দিক মৌচাকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে কিছু মধু বার করে আনলো। মধু খেয়ে সে কিছুটা ভাল বোধ করল।
28 সৈন্যদের একজন যোনাথনকে বলল, “তোমার পিতা সৈন্যদের এই বিশেষ প্রতিশ্রুতি করতে বাধ্য করেছিলেন। তোমার পিতা বলেছিলেন কেউ আজ খেলে শাস্তি পাবে। তাই কেউ কিছু খায় নি। সেই জন্য সকলে দুর্বল হয়ে পড়েছে।”
29 যোনাথন বলল, “আমার পিতা এই দেশে অনেক অশান্তি নিয়ে এসেছে। এই দেখ সামান্য একটু মধু খেয়েই আমি কেমন সুস্থ বোধ করছি। 30 শত্রুদের কাছ থেকে খাবার আদায় করে যদি লোকরা খেয়ে নিত তাহলে অনেক ভাল হতো। তাহলে আমরা আরো অনেক পলেষ্টীয়দের হত্যা কতে পারতাম!”
31 সেদিন ইস্রায়েলীয়রা পলেষ্টীয়দের হারিয়ে দিল। মিক্মস থেকে অয়ালোন পর্যন্ত সমস্ত জায়গায় ওরা পলেষ্টীয়দের সঙ্গে লড়াই চালিয়েছিল। ফলে তারা ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছিল। 32 পলেষ্টীয়দের মেষ, গরু, বাছুর সব তারা নিয়ে নিয়েছিল। এখন ইস্রায়েলের লোকরা প্রবল ক্ষুধায় সেগুলো মাটিতে ফেলে হত্যা করে রক্তশুদ্ধ খেতে লাগল।
33 শৌলকে একজন বলল, “এই দেখ। লোকগুলো আবার প্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করছে। রক্ত লেগে থাকা মাংস ওরা খাচ্ছে!”
তখন শৌল বললেন, “তোমরা পাপ করেছ। এখানে একটা বড় পাথর গড়িয়ে দাও।” 34 তারপর শৌল বললেন, “যাও ওদের কাছে গিয়ে বলো, প্রত্যেকেই তার ষাঁড় আর মেষ যেন আমার কাছে নিয়ে আসে। তারপর ওরা এখানে এসে সে সব জন্তুকে যেন মারে। তোমরা প্রভুর বিরুদ্ধে পাপ কোরো না। কখনও রক্ত মাখানো মাংস খেও না।”
সেই রাত্রে প্রত্যেকেই নিজেদের পশু সেখানে নিয়ে এসে বলি দিল। 35 তারপর শৌল প্রভুর জন্য একটা বেদী তৈরী করলেন। শৌল নিজেই এই কাজটা করতে লাগলেন।
36 শৌল বললেন, “আজ রাত্রে চলো আমরা পলেষ্টীয়দের আক্রমণ করি। তাদের সবকিছু আমরা কেড়ে নিয়ে একেবারে শেষ করে দিই।”
সৈন্যরা বলল, “যা ভাল বোঝ করো।”
কিন্তু যাজক বলল, “ঈশ্বরকে জিজ্ঞেস করে দেখা যাক।”
37 তখন শৌল ঈশ্বরকে জিজ্ঞাসা করল, “আমি কি পলেষ্টীয়দের পিছু নিয়ে ওদের হটিয়ে দেব? আপনি কি ওদের পরাজয়ে আমাদের সাহায্য করবেন?” কিন্তু ঈশ্বর সেদিন কোন উত্তর দিলেন না।
38 তখন শৌল বললেন, “সমস্ত নেতাকে আমার কাছে ডেকে আনো। খুঁজে দেখা যাক আজ কে পাপ করেছে। 39 ইস্রায়েলকে যিনি রক্ষা করেন, সেই প্রভুর নামে আমি শপথ করে বলছি, পাপ যদি আমার পুত্র যোনাথনও করে থাকে তবে তাকেও মরতে হবে।” কেউ কোন কথা বলল না।
40 শৌল সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “তোমরা এদিকটায় দাঁড়াও, আমি আর যোনাথন ওদিকে দাঁড়াচ্ছি।”
সৈন্যরা বলল, “যা বলবেন তাই হবে।”
41 তারপর শৌল প্রার্থনা শুরু করলেন। তিনি বললেন, “হে প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, কেন আজ তোমার ভৃত্যকে কোনো উত্তর দিলে না? যদি আমি বা আমার পুত্র কোন দোষ করে থাকি, তবে প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর আমাদের উরীম দাও। যদি তোমার ইস্রায়েলীয়রা কোন পাপ করে থাকে, তুমি তবে তুম্মীম দাও। উরীম আর তুম্মীম ছুঁড়ে দেওয়া হল।”
শৌল ও যোনাথন ধরা পড়ল এবং লোকরা বাদ পড়ল। 42 শৌল বললেন, “আবার ওগুলো ছুঁড়ে দেখো কে দোষী, আমি না আমার পুত্র যোনাথন?” এবার যোনাথন ধরা পড়ল।
43 শৌল যোনাথনকে বললেন, “কি করেছ বলো?”
যোনাথন বলল, “লাঠির মাথায় শুধু একটু মধু নিয়ে খেয়েছি। এর জন্য কি আমাকে মরতে হবে?”
44 শৌল বললেন, “আমি যে প্রতিশ্রুতি করেছি। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে ঈশ্বর আমাকে শাস্তি দেবেন। সুতরাং যোনাথন মরবেই।”
45 তখন সৈন্যরা শৌলকে বলল, “যোনাথন আজ ইস্রায়েলের জয়ের নায়ক। তাকে কি মরতেই হবে? কখনোই না। আমরা জীবন্ত ঈশ্বরের নামে দিব্যি করে বলছি, কেউ যোনাথনের গায়ে হাত দেব না। তার একটি চুলও মাটিতে পড়বে না। স্বয়ং ঈশ্বর যোনাথনকে পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করেছেন।” এইভাবে তারা যোনাথনকে বাঁচাল। তাকে আর মরতে হল না।
46 শৌল পলেষ্টীয়দের পিছু নিলেন না। পলেষ্টীয়রা নিজেদের জায়গায় ফিরে এলো।
ইস্রায়েলের শত্রুদের সঙ্গে শৌলের যুদ্ধ
47 ইস্রায়েলের সম্পূর্ণ কর্ত্তৃত্ব শৌল নিজের হাতে নিলেন। ইস্রায়েলের চারিদিকে যত শত্রু ছিল, তাদের সঙ্গে তিনি যুদ্ধ চালালেন। তিনি মোয়াব, অম্মোনীয়, সোবার রাজা ইদোম এবং পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করলেন। শৌল যেখানে গেলেন সেখানেই ইস্রায়েলের শত্রুদের হারিয়ে দিলেন। 48 শৌল খুব সাহসী ছিলেন। সমস্ত শত্রু, যারা ইস্রায়েলীয়দের লুঠ করতে চাইছিল, তাদের হাত থেকে শৌল ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করেছিলেন। এমনকি অমালেক গোষ্ঠীকেও তিনি হারিয়ে দিয়েছিলেন।
49 শৌলের পুত্রদের নাম যোনাথন, যিশবি এবং মল্কীশূয়। তাঁর বড় মেয়ের নাম মেরব, ছোট মেয়ে মীখল। 50 শৌলের স্ত্রীর নাম অহীনোয়ম। অহীনোয়মের পিতা হচ্ছে অহীমাস।
শৌলের সেনাপতি অবনের, সে ছিল নেরের পুত্র। নের শৌলের কাকা। 51 শৌলের পিতা কীশ এবং অবনেরের পিতা নেব এঁরা দুজনে অবীয়েলের পুত্র।
52 শৌল আজীবন সাহসী ছিলেন। তিনি পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে প্রবলভাবে যুদ্ধ করেছিলেন। যখনই তিনি একটি শক্ত সমর্থ বা সাহসী লোক দেখতে পেতেন, তাকে তাঁর সৈন্যদলে যুক্ত করে নিতেন। এরা তাঁর দেহরক্ষী হিসেবে কাছাকাছি থাকত।
যীশু বাহাত্তর জন লোককে পাঠালেন
10 এরপর প্রভু আরও বাহাত্তর[a] জন লোককে মনোনীত করলেন। তিনি নিজে যে সমস্ত নগরে ও যে সমস্ত জায়গায় যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন, সেই সব জায়গায় তাঁদের দুজন দুজন করে পাঠিয়ে দিলেন। 2 তিনি তাঁদের বললেন, “শস্য প্রচুর হয়েছে, কিন্তু তা কাটার জন্য মজুরের সংখ্যা অল্প, তাই শস্যের যিনি মালিক তাঁর কাছে প্রার্থনা কর, যেন তিনি তাঁর ফসল কাটার জন্য মজুর পাঠান।
3 “যাও! আর মনে রেখো, নেকড়ে বাঘের মধ্যে ভেড়ার মতোই আমি তোমাদের পাঠাচ্ছি। 4 তোমরা টাকার বটুয়া, থলি বা জুতো সঙ্গে নিও না এবং পথের মধ্যে কাউকে শুভেচ্ছা জানিও না। 5 যে বাড়িতে তোমরা প্রবেশ করবে সেখানে প্রথমে বলবে, ‘এই গৃহে শান্তি হোক্!’ 6 সেখানে যদি শান্তির পাত্র কেউ থাকে, তবে তোমাদের শান্তি তার সহবর্তী হবে। কিন্তু যদি সেরকম কেউ না থাকে, তাহলে তোমাদের শান্তি তোমাদের কাছে ফিরে আসবে। 7 যে বাড়িতে যাবে সেখানেই থেকো, আর তারা যা খেতে দেয় তাই খেও, কারণ যে কাজ করে সে বেতন পাবার যোগ্য। এ বাড়ি সে বাড়ি করে ঘুরে বেড়িও না।
8 “তোমরা যখন কোন নগরে প্রবেশ করবে তখন সেই নগরের লোকেরা যদি তোমাদের স্বাগত জানায়, তবে সেখানকার লোকেরা তোমাদের সামনে যা কিছু ধরে, তা খেও। 9 সেই নগরের রোগীদের সুস্থ করো ও সেখানকার লোকদের বলো, ‘ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে এসে পড়েছে।’
10 “তোমরা কোন নগরে প্রবেশ করলে যদি সেই নগরের লোকেরা তোমাদের স্বাগত না জানায়, তবে সেখানকার রাস্তায় বেরিয়ে এসে তোমরা বলো, 11 ‘এমনকি তোমাদের নগরের যে ধূলো আমাদের পায়ে লেগেছে তা আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে ঝেড়ে ফেললাম; তবে একথা জেনে রেখো যে ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে এসে গেছে।’ 12 আমি তোমাদের বলছি, সেই দিন এই নগরের থেকে সদোমের লোকদের অবস্থা অনেক বেশী সহনীয় হবে।
অবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে যীশুর সতর্কবাণী
(মথি 11:20-24)
13 “কোরাসীন ধিক্ তোমাকে! বৈৎসৈদা ধিক্ তোমাকে! তোমাদের মধ্যে যে সব অলৌকিক কাজ করা হয়েছে তা যদি সোর ও সীদোনে করা হত, তবে সেখানকার লোকেরা অনেক আগেই চটের বস্ত্র পরে মাথায় ভস্ম ছিটিয়ে অনুতাপ করতে বসত। 14 যাইহোক্, বিচারের দিনে সোর সীদোনের অবস্থা বরং তোমাদের চেয়ে অনেক সহনীয় হবে। 15 তুমি কফরনাহূম! তুমি কি স্বর্গ পর্যন্ত উন্নীত হবে? না! তোমাকে নরক পর্যন্ত নামানো হবে!
16 “যারা তোমাদের কথা শোনে, তারা আমারই কথা শোনে; আর যারা তোমাদের অগ্রাহ্য করে, তারা আমাকেই অগ্রাহ্য করে। যারা আমাকে অগ্রাহ্য করে, তারা যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁকেই অগ্রাহ্য করে।”
শয়তানের পতন
17 এরপর সেই বাহাত্তরজন আনন্দের সঙ্গে ফিরে এসে বললেন, “প্রভু, আপনার নামে এমন কি ভূতরাও আমাদের বশ্যতা স্বীকার করে!”
18 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “আমি শয়তানকে বিদ্যুৎ ঝলকের মতো আকাশ থেকে পড়তে দেখলাম। 19 শোন! সাপ ও বিছেকে পায়ে দলবার ক্ষমতা আমি তোমাদের দিয়েছি; আর তোমাদের শত্রুর সমস্ত শক্তির ওপরে ক্ষমতাও আমি তোমাদের দিয়েছি; কোন কিছুই তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। 20 তবু আত্মারা যে তোমাদের বশীভূত হয়, এ জেনে আনন্দ করো না; কিন্তু স্বর্গে তোমাদের নাম লেখা হয়েছে বলে আনন্দ কর।”
পিতার নিকট যীশুর প্রার্থনা
(মথি 11:25-27; 13:16-17)
21 ঠিক সেই মুহূর্তে পবিত্র আত্মার আনন্দে পূর্ণ হয়ে যীশু বললেন, “পিতা, আমি তোমার প্রশংসা করি, কারণ স্বর্গ ও পৃথিবীর প্রভু, তুমি এসব বিষয় জ্ঞানীগুণী ও বুদ্ধিমান লোকদের কাছে গোপন রেখে শিশুদের কাছে প্রকাশ করেছ। হ্যাঁ, পিতা, এতেই তোমার আনন্দ।
22 “আমার পিতা আমায় সবই দিয়েছেন। পিতা ছাড়া আর কেউ জানে না পুত্র কে, আমার পুত্র ছাড়া আর কেউ জানে না পিতা কে। এছাড়া পুত্র যার কাছে পিতাকে প্রকাশ করতে ইচ্ছা করেন, কেবল সে-ই জানে।”
23 এরপর শিষ্যদের দিকে ফিরে তিনি একান্তে তাঁদের বললেন, “তোমরা যা দেখছ, যে চোখ তা দেখতে পায় তা ধন্য! 24 কারণ আমি তোমাদের বলছি, তোমরা যা দেখছ, অনেক ভাববাদী ও রাজা তা দেখার ইচ্ছা করলেও তা দেখতে পান নি; তোমরা যা শুনছ, তা শোনার ইচ্ছা করলেও তাঁরা তা শুনতে পান নি।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International