Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Old/New Testament

Each day includes a passage from both the Old Testament and New Testament.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
1 রাজাবলি 3-5

প্রজ্ঞার জন্য শলোমনের প্রার্থনা

শলোমন মিশরের ফরৌণের কন্যাকে বিয়ে করলেন এবং তাঁর কন্যাকে দায়ূদ শহরে নিয়ে এসে, মিশরের রাজা ফরৌণের সঙ্গে একটি চুক্তি স্থাপন করলেন। তখনও পর্যন্ত শলোমনের নিজের রাজপ্রাসাদ ও প্রভুর মন্দির বানানোর কাজ শেষ হয় নি। শলোমন সে সময়ে জেরুশালেমের চার পাশে একটি দেওয়াল নির্মাণ করাচ্ছিলেন। যেহেতু মন্দিরের কাজ তখনও শেষ হয়নি, লোকরা উচ্চস্থানের বেদীতে পশু বলি দিত। শলোমন তাঁর পিতা দায়ূদের সমস্ত বিধি-নির্দেশ পালন করে প্রমাণ করেছিলেন যে সত্যি সত্যিই প্রভুর প্রতি তাঁর অটুট ভক্তি ও ভালোবাসা আছে। কিন্তু এছাড়া শলোমন একটি কাজ করতেন যা তাঁকে তাঁর পিতা রাজা দায়ূদ করতে বলেন নি। সেটি হল উচ্চস্থানে বলিদান ও ধূপধূনো দেওয়া।

রাজা শলোমন গিবিয়োনে বলি দিতে চাইছিলেন। সে সময় গিবিয়োন ছিল বলিদানের উচ্চস্থানগুলির মধ্যে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শলোমন গিবিয়োনের বেদীতে 1000 হোমবলি উৎসর্গ করলেন। যখন শলোমন গিবিয়োনে ছিলেন তখন রাতের বেলা প্রভু তাঁকে স্বপ্নে দর্শন দিলেন এবং তাকে একটি বর চাইতে বললেন।

তখন শলোমন তাঁকে বললেন, “হে প্রভু আমি আপনার সেবক, আমার পিতা দায়ূদের প্রতি আপনি অসীম করুণা প্রদর্শন করেছেন। তিনি সৎ‌ ও সত্য পথে আপনার নির্দেশ মেনে চলেছিলেন, তাই আপনি তাঁর নিজের পুত্রকে তাঁরই সিংহাসনে বসে রাজ্য শাসন করতে দিয়ে, তাঁর প্রতি আপনার করুণা ও দয়া প্রদর্শন করেছেন। হে প্রভু, আমার পিতার জায়গায় আপনি আমাকে রাজা করেছেন, কিন্তু আমি এখনও প্রায় শিশুর মতোই অজ্ঞ। এ ব্যাপারে আমার মধ্যে প্রয়োজনীয় অন্তর্দৃষ্টি ও বুদ্ধিমত্তার অভার রয়েছে। আমি আপনার দাস, আপনার নির্বাচিত লোকের অন্যতম সেবক। আর এই অসংখ্য ভক্ত ও সেবকের শাসনভার আজ আমারই ওপর ন্যস্ত। তাই আপনার কাছে আমার অনুনয় ও প্রার্থনা আমাকে আপনি প্রজ্ঞা দিন যাতে আমি রাজার কর্তব্য পালন করতে পারি ও লোকদের বিচার করতে পারি। যদি আমার এই মহৎ‌‌ জ্ঞান থাকে তাহলে আমি ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে পারব। এই প্রজ্ঞা ব্যতীত আপনার এই অগণিত লোকদের শাসন করা আমার পক্ষে অসম্ভব।”

10 শলোমনের এই প্রার্থনা শুনে প্রভু তাঁর প্রতি খুবই সন্তুষ্ট হলেন। 11 তাই তিনি শলোমনকে বললেন, “তুমি নিজের জন্য দীর্ঘ জীবন বা ধনসম্পদ চাও নি। এমনকি তোমার শত্রুদের মৃত্যু কামনাও করো নি। তুমি শুধু সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার জন্য অন্তর্দৃষ্টি প্রার্থনা করেছ। 12 তাই আমি অতি অবশ্যই তুমি যা প্রার্থনা করেছ তা তোমায় দেব। আমি তোমাকে বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান করে তুলব। আমি তোমাকে এত বিচক্ষণতা দেব যা আজ পর্যন্ত কেউ কখনও পায় নি এবং ভবিষ্যতেও পাবে না। 13 এছাড়াও তোমাকে পুরস্কৃত করার জন্য আমি তোমাকে সেসব জিনিসও দেব যা তুমি প্রার্থনা করো নি। সারা জীবন তুমি অসীম সম্পদ ও সম্মানের ভাগীদার হবে। তোমার মতো বড় রাজা পৃথিবীতে আর কেউ হবে না। 14 শুধু তুমি আমার প্রতি আস্থা রেখো আর তোমার পিতা দায়ূদের মতো আমার আদেশ ও বিধিগুলি মেনে চলো। আর তা যদি করো আমি তোমাকে দীর্ঘ জীবনও দেব।”

15 শলোমনের ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি বুঝতে পারলেন, স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বর স্বয়ং তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। তখন শলোমন জেরুশালেমে ফিরে গেলেন, ঈশ্বরের আদেশ সম্বলিত পবিত্র সিন্দুকটির সামনে দাঁড়ালেন এবং হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য নিবেদন করলেন। এরপর যে সমস্ত নেতা ও রাজকর্মচারীরা রাজ্য শাসনের কাজে তাঁকে সহায়তা করেছিলেন তাঁদের সবাইকে নিয়ে একটি ভোজসভার আয়োজন করলেন।

শলোমনের বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ

16 একদিন দুটি গণিকা শলোমনের কাছে এসে উপস্থিত হল। 17 তাদের মধ্যে একজন শলোমনকে বলল, “মহারাজ আমরা দুজনে একই ঘরে বাস করি। আমরা দুজনেই সন্তানসম্ভবা ছিলাম এবং সন্তান এর জন্ম দেওয়ার সময় উপস্থিত হয়। ঐ মেয়েটির উপস্থিতিতেই আমি আমার সন্তানের জন্ম দিই। 18 এর ঠিক তিনদিন পরে এই মেয়েটি তার শিশুর জন্ম দেয়। কিন্তু আমরা দুজন ছাড়া আমাদের বাড়ীতে অন্য কোনো তৃতীয় ব্যক্তি ছিল না। 19 এক দিন রাতে ওর শিশুটি মারা যায় কারণ ও শিশুর ওপর শুয়েছিল। সে সময় ওর শিশুটি মারা যায়। 20 রাতের অন্ধকারে তখন ও আমার ঘুমন্ত অবস্থার সুযোগ নিয়ে আমার শিশুটিকে ওর খাটে নিয়ে যায়। আর তারপর মৃত শিশুটিকে আমার পাশে শুইয়ে দেয়। 21 পরদিন সকালে আমি শিশুকে খাওয়াতে উঠে দেখি আমার পাশে একটি মৃত শিশু শোয়ানো আছে। তখন আমি খুঁটিয়ে লক্ষ্য করে দেখি যে সেটি মোটেই আমার শিশু নয়।”

22 অন্য মেয়েটি তৎ‌ক্ষনাৎ‌ এর প্রতিবাদ করে বলে, “মোটেই না! জীবন্ত শিশুটিই আমার। মৃতটা তোর!”

প্রথম মেয়েটি এর উত্তরে বলল, “মিথ্যে কথা। মৃত শিশুটি তোর, এটা আমার!” এইভাবে দুজনে রাজার সামনে ঝগড়া করতে থাকে।

23 তখন রাজা শলোমন বলল, “তোমরা দুজনেই বলছো জীবিত শিশুটি তোমার আর মৃত শিশুটি অন্য জনের।” 24 তখন রাজা শলোমান প্রহরীকে একটা তরবারি নিয়ে আসতে আদেশ দিলেন। 25 রাজা শলোমন বললেন, “এবার ঐ শিশুটিকে কেটে দু-আধখানা করো এবং ওদের দুজনকে একটা করে আধখানা টুকরো দিয়ে দাও।”

26 একথা শুনে যে মহিলাটির শিশু মারা গিয়েছিল সে বলল, “ঠিক আছে তাই হোক্, তাহলে আমরা কেউই আর ওকে পাব না।” কিন্তু অন্য মহিলাটি, যে শিশুটির আসল মা, যার শিশুটির প্রতি পূর্ণ ভালবাসা ও সহানুভূতি ছিল, সে রাজাকে বলল, “মহারাজ দয়া করে শিশুটিকে মারবেন না। ওকেই শিশুটি দিয়ে দিন।”

27 তখন রাজা শলোমন বললেন, “থামো, শিশুটিকে কেটো না। প্রথম জনের হাতেই শিশুটিকে তুলে দাও, কারণ, ঐ হচ্ছে ওর আসল মা।”

28 ইস্রায়েলের সকলে শলোমনের এই বিচারের কথা শুনলো। তারা সকলেই শলোমনের অন্তর্দৃষ্টি ও বুদ্ধিমত্তার জন্য তাঁকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করত। তারা বুঝতে পেরেছিল সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপারে রাজা শলোমনের অন্তর্দৃষ্টি প্রায় ঈশ্বরের মতোই কাজ করে।

শলোমনের রাজত্ব

সমগ্র ইস্রায়েলের লোকের শাসনকর্তা ছিলেন রাজা শলোমন। শাসনকার্য পরিচালনা করতে যে সমস্ত রাজকর্মচারী তাঁকে সাহায্য করতেন তারা হল:

সাদোকের পুত্র যাজক অসরিয়।

শীশার দুই পুত্র ইলীহোরফ ও অহিয়। এঁরা দুজনে রাজদরবারে সমস্ত ঘটনার বিবরণ নথিভুক্ত করতেন।

অহীলূদের পুত্র যিহোশাফট লোকদের ইতিহাস বিষয়ক টীকা রচনা করতেন।

যিহোয়াদার পুত্র বনায় ছিল সেনাবাহিনীর প্রধান।

সাদোক ও অবিয়াথর যাজকের কাজ করতেন।

নাথনের পুত্র অসরিয় জেলা শাসকদের তত্ত্বাবধান করতেন।

নাথনের আরেক পুত্র যাজক সাবুদ রাজা শলোমনের পরামর্শদাতা ছিলেন।

অহীশারের ওপর রাজপ্রাসাদের সব কিছুর তত্ত্বাবধান করবার দায়িত্ব ছিল।

অব্দের পুত্র অদোনীরামের কাজ ছিল শ্রমিকদের খবরদারি করা।

সমগ্র ইস্রায়েলকে 12টি জেলায় ভাগ করা হয়েছিল। এই জেলাগুলির প্রত্যেকটির শাসন কাজ পরিচালনার জন্য শলোমন নিজে প্রাদেশিক শাসনকর্তা বা জেলা শাসকদের বেছে নিয়েছিলেন। এই সমস্ত প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের ওপর তাদের নিজেদের প্রদেশ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে রাজা ও তাঁর পরিবারকে সেই খাদ্য সরবরাহ করার নির্দেশ ছিল। বছরের 12 মাসের এক একটিতে এই 12 জন প্রদেশকর্তার এক একজনের দায়িত্ব ছিল রাজাকে খাবার পাঠানো। এই 12 জন প্রাদেশিক শাসনকর্তার নাম নীচে দেওয়া হল:

ইফ্রয়িমের পার্বত্য প্রদেশের শাসক ছিলেন বিন্-হূর।

মাকস, শালবীম, বৈৎ‌-শেমশ ও এলোন বৈৎ‌-হাননের শাসক ছিলেন বিন্-দেকর।

10 বিন্-হেষদ ছিলেন অরুব্বোত, সোখো ও হেফর প্রদেশের শাসনকর্তা।

11 দোর উপগিরি অঞ্চলের শাসনভার ছিল বিন্-অবীনাদবের ওপর। তিনি রাজা শলোমনের কন্যা টাফত্‌কে বিয়ে করেছিলেন।

12 যিষ্রিয়েলের নিম্নবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত অঞ্চল অর্থাৎ‌ বৈৎ‌-শান থেকে আবেল-মহোলা হয়ে যক্মিয়াম পর্যন্ত বিস্তৃত তানক, মগিদ্দোর শাসক ছিলেন অহীলূদের পুত্র বানা।

13 বিন্-গেবর ছিলেন রামোৎ-গিলিয়দের শাসক। গিলিয়দের মনঃশির পুত্র যায়ীর সমস্ত শহর ও গ্রামগুলির শাসন কার্য পরিচালনা করতেন। তিনি অর্গোব জেলার বাশন অঞ্চলেরও শাসনকর্তা ছিলেন। এই অঞ্চলে বড় দেওয়ালে ঘেরা 60টি শহর ছিল। শহরের দরজা বড় করার জন্য পিতলের কব্জা ব্যবহার হতো।

14 ইদ্দোরের পুত্র অহীনাদব ছিলেন মহনয়িমের শাসক।

15 নপ্তালির প্রাদেশিক কর্তা অহীমাস বিয়ে করেছিলেন শলোমনের আরেক কন্যা বাসমৎ‌কে।

16 হূশয়ের পুত্র বানা ছিলেন আশের ও বালোতের শাসক।

17 ইষাখরের প্রদেশকর্তা ছিলেন পারূহের পুত্র যিহোশাফট।

18 এলার পুত্র শিমিয়ির ওপর বিন্যামীন প্রদেশের দায়িত্ব ছিল।

19 ঊরির পুত্র গেবর গিলিয়দের রাজ্যপাল ছিল। গিলিয়দ, যেখানে ইমোরীয়দের রাজা সীহোন ও বাশনের রাজা ওগ বাস করতেন। কিন্তু গেবর ছিল ঐ দেশের রাজ্যপাল।

20 সমুদ্রতীরে ছড়িয়ে থাকা রাশি রাশি বালির মতোই যিহূদা ও ইস্রায়েলে অসংখ্য মানুষ বাস করত। খেয়ে পরে, মহাফূর্তিতে ও আনন্দে তারা সকলে দিন কাটাতো।

21 রাজা শলোমন ফরাৎ নদী থেকে পলেষ্টীয়দের দেশ ও মিশরের সীমা পর্যন্ত সমস্ত অঞ্চলে তাঁর রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। শলোমন যতদিন বেঁচেছিলেন ততদিন এই অঞ্চলের সমস্ত রাজ্যগুলি বশ্যতা স্বীকার করেছিল এবং তারা শলোমনের জন্য উপহার পাঠাত।

22-23 প্রতিদিন শলোমনের নিজের জন্য ও তাঁর সঙ্গে যারা এক সঙ্গে বসে খাওয়া দাওয়া করতো তাদের সকলের জন্য সব মিলিয়ে প্রায় 150 কেজি ময়দা, 300 কেজি আটা, 10টি হৃষ্টপুষ্ট গরু, 20টি সাধারণ গরু, 100টি মেষ, হরিণ, খরগোশ, নানান পাখপাখালির মাংস প্রয়োজন হত।

24 ঘসা থেকে তিপ্সহ পর্যন্ত ফরাৎ নদীর পশ্চিমভাগের সমস্ত অঞ্চল শলোমনের অধীনস্থ ছিল। পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গেও রাজা শলোমনের মৈত্রী ও শান্তির সম্পর্ক বজায় ছিল। 25 শলোমনের রাজত্বকালে দান থেকে বের্-শেবা পর্যন্ত যিহূদা ও ইস্রায়েলের সমস্ত বাসিন্দা সুখে ও শান্তিতে জীবনযাপন করতো। তারা নিশ্চিন্ত মনে নিজেদের দ্রাক্ষাক্ষেত বা ডুমুর বাগানে বসে সময় কাটাতে পারত।

26 শলোমনের আস্তাবলে রথ টানার জন্য 4000 ঘোড়া রাখার ব্যবস্থা তো ছিলই, এছাড়াও তাঁর অধীনে ছিল 12,000 অশ্বারোহী সৈনিক। 27 বছরের প্রত্যেকটি মাসে 12জন প্রাদেশিক শাসনকর্তার একজন শলোমন এবং রাজার টেবিলে ভোজনকারী প্রত্যেকের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী পাঠাতেন। তাদের সকলের জন্য তা প্রচুর পরিমাণ হত। 28 এই সমস্ত প্রাদেশিক শাসনকর্তারা রাজা শলোমনের ঘোড়াগুলির জন্য প্রচুর পরিমাণে খড় ও বার্লি পাঠাতেন। লোকরা এই সমস্ত খড় ও বার্লি আনত।

শলোমনের প্রজ্ঞা

29 ঈশ্বর শলোমনকে প্রভূত জ্ঞানী করে তুলেছিলেন। শলোমনের বুদ্ধিমত্তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা প্রায় অসম্ভব ছিল। তিনি বহু বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন ও অনেক কিছু গভীর ভাবে বুঝতে পারতেন। 30 প্রাচ্যের সমস্ত মানুষদের জ্ঞানের চেয়েও শলোমনের জ্ঞান বেশী ছিল। এমনকি তা মিশরের সমস্ত বাসিন্দাদের চেয়েও বেশী ছিল। 31 পৃথিবীর যে কোন ব্যক্তির চেয়েও তিনি বেশী জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ছিলেন। ইষ্রাহীর এথন বা মাহোলের পুত্র হেমন, কল্কোল ও দর্দার চেয়েও তাঁর বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা বেশী ছিল। ইস্রায়েল ও যিহূদার চারি দিকের সমস্ত দেশগুলিতে রাজা শলোমনের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। 32 তাঁর জীবদ্দশায় তিনি 1005টি গান ও 3000 প্রবাদ বাক্য লিপিবদ্ধ করেছিলেন।

33 প্রকৃতি সম্পর্কেও মহারাজ শলোমনের গভীর জ্ঞান ছিল। শলোমন বিভিন্ন গাছপালা থেকে শুরু করে লিবানোনের সুবিশাল মহীরূহ, দ্রাক্ষাকুঞ্জ, পশু, পাখী, সাপখোপ, সব বিষয়েই শিক্ষাদান করেন। 34 সমস্ত দেশের লোকরা রাজা শলোমনের জ্ঞানের কথা শুনতে আসত। সমস্ত দেশের রাজারা তাঁদের রাজ্যের জ্ঞানী ব্যক্তিদের শলোমনের কাছে তাঁর জ্ঞানগর্ভ কথা শোনবার জন্য পাঠাতেন।

শলোমনের মন্দির নির্মাণ

সোরের রাজা হীরম ছিলেন রাজা শলোমনের পিতা দায়ূদের বন্ধু। হীরম যখন খবর পেলেন দায়ূদের পরে শলোমন নতুন রাজা হয়েছেন, তিনি তাঁর দাসদের শলোমনের কাছে পাঠালেন। শলোমন রাজা হীরমকে জানালেন:

“আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, আমার পিতা রাজা দায়ূদকে তাঁর চারপাশে অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছিল যত দিন পর্যন্ত না প্রভু তাঁকে তাদের উপর বিজয়ী হতে দেন, যে কারণে প্রভু, তাঁর ঈশ্বরের সম্মানে কোনো মন্দির বানানোর সময় পাননি। কিন্তু এখন প্রভু, আমার ঈশ্বরের ইচ্ছায় আমার রাজ্যের সর্বত্র শান্তি বিরাজ করছে। আমার কোন শত্রু নেই। আমার প্রজাদেরও কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই।

“প্রভু আমার পিতাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ‘তোমার পরে আমি তোমার পুত্রকেই রাজা করবো, আর সে আমার জন্য একটা মন্দির বানাবে।’ তাই আমার আন্তরিক ইচ্ছা প্রভুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমি এবার সেই মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করব। আর একাজে আমি আপনার সাহায্য চাই। এর জন্য আপনি দয়া করে লিবানোনে আপনার লোকজন পাঠান। তারা সেখানে এসে আমার এই কাজের জন্য এরস গাছ কাটবে। আমার নিজের ভৃত্যরাও আপনার লোকদের সঙ্গে হাত লাগাবে। একাজের জন্য আপনার ভৃত্যদের যে পারিশ্রমিক দেওয়া উচিৎ‌ বলে আপনি মনে করবেন আমি তাই দেব, কিন্তু আপনার সাহায্য অবশ্যই চাই। আমাদের এখানকার ছুতোররা সীদোনের ছুতোরদের মতো দক্ষ নয়।”

হীরম শলোমনের এই অনুরোধ শুনে খুবই খুশি হলেন। তিনি আনন্দিত হয়ে বললেন, “প্রভুকে আমি আমার অশেষ ধন্যবাদ জানাই, কারণ এই মহান সাম্রাজ্য শাসনের জন্য তিনি রাজা দায়ূদকে একজন বুদ্ধিমান পুত্র উপহার দিয়েছেন।” এরপর হীরম শলোমনকে খবর পাঠালেন,

“তোমার অনুরোধের কথা জানলাম। তোমার যতগুলি এরস গাছ ও দেবদারু গাছের প্রয়োজন আমি তোমায় দেব। আমার ভৃত্যরা সেগুলো লিবানোন থেকে সমুদ্রের ধার পর্যন্ত আনার পর একসঙ্গে বেঁধে তুমি যেখানে চাও সেখানেই ভেলা করে সমুদ্রের কিনারা বেয়ে ভাসিয়ে দেব। তারপর আমি ভেলাগুলো সরিয়ে নেবার পর তুমি গাছগুলো নিয়ে নিতে পার। এবং আমার পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করাই হবে আমার প্রতি তোমার অনুগ্রহ।”

10-11 একাজের জন্য শলোমন প্রতি বছর হীরম ও তাঁর পরিবারবর্গের জন্য প্রায় 120,000 বুশেল গম, 120,000 গ্যালন খাঁটি তেল পাঠাতেন।

12 প্রতিশ্রুতি মতো প্রভু শলোমনকে অন্তর্দৃষ্টি ও জ্ঞান দিয়েছিলেন এবং রাজা হীরম ও শলোমনের মধ্যে শান্তি বজায় ছিল। তাঁরা দুজনে নিজেদের মধ্যে একটি চুক্তি করেন।

13 রাজা শলোমন ইস্রায়েলের 30,000 ব্যক্তিকে তাঁর কাজে সহায়তার জন্য নিয়োগ করলেন। 14 তিনি এই সমস্ত লোকদের খবরদারি করার জন্য অদোনীরাম নামে এক ব্যক্তিকে প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করেন। শলোমন এই 30,000 লোককে 10,000 লোকের তিনটি দলে ভাগ করে দিয়েছিলেন। লিবানোনে এক মাস কাজ করবার পর প্রত্যেকটি দলের লোকরা বাড়ী যেত এবং দু মাস বিশ্রাম নিত। 15 এছাড়াও শলোমন পার্বত্য অঞ্চলের 80,000 লোককে এই কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেন। এদের কাজ ছিল পাথর কাটা। আর আরো 70,000 লোক সেই পাথর বয়ে নিয়ে যেত। 16 এদের সকলের তদারকির জন্য নিযুক্ত হয়েছিল আরো 3300 জন। 17 রাজা শলোমন শ্রমিকদের মন্দিরের ভিত বানানোর জন্য বড় দামী পাথর কাটার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই সমস্ত পাথরগুলি খুব সাবধানে কাটা হত। 18 তারপর শলোমন ও হীরমের মিস্ত্রিরা আর বিব্লসের লোকরা এইসব পাথর খোদাই করত। তারা মন্দিরের জন্য প্রয়োজনীয় তক্তা ও পাথর বানাত।

লূক 20:1-26

ইহুদী নেতারা যীশুকে প্রশ্ন করলেন

(মথি 21:23-27; মার্ক 11:27-33)

20 একদিন যীশু যখন মন্দিরে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচার করছিলেন, সেই সময় প্রধান যাজকরা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ইহুদী নেতারা একজোট হয়ে তাঁর কাছে এল। তারা তাঁকে প্রশ্ন করল, “কোন ক্ষমতায় তুমি এসব করছ তা আমাদের বল। কে তোমাকে এই অধিকার দিয়েছে?”

যীশু তাদের বললেন, “আমিও তোমাদের একটা প্রশ্ন করব। বলো তো যোহন বাপ্তিস্ম দেবার অধিকার ঈশ্বরের কাছে থেকে পেয়েছিলেন না মানুষের কাছ থেকে?”

তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করল, “আমরা যদি বলি, ‘ঈশ্বরের কাছ থেকে,’ তাহলে ও বলবে ‘তাহলে তোমরা তাঁকে বিশ্বাস করো নি কেন?’ কিন্তু আমরা যদি বলি, ‘মানুষের কাছ থেকে,’ তাহলে লোকেরা আমাদের পাথর ছুঁড়ে মারবে, কারণ তারা যোহনকে একজন ভাববাদী বলেই বিশ্বাস করে।” তাই তারা বলল, “আমরা জানি না।”

তখন যীশু তাদের বললেন, “তাহলে আমিও তোমাদের বলব না, কোন্ অধিকারে আমি এসব করছি।”

ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে পাঠালেন

(মথি 21:33-46; মার্ক 12:1-12)

যীশু এই দৃষ্টান্তটি লোকদের বললেন, “একজন লোক একটা দ্রাক্ষা ক্ষেত করে তা চাষীদের কাছে ইজারা দিয়ে বেশ কিছু দিনের জন্য বিদেশে গেল। 10 ফলের সময় হলে সে তার একজন কর্মচারীকে সেই চাষীদের কাছে পাঠাল, যেন তারা ক্ষেতের ফসলের কিছু ভাগ দেয়; কিন্তু চাষীরা সেই কর্মচারীকে মারধর করে খালি হাতে তাড়িয়ে দিল। 11 এরপর সে তার আর একজন কর্মচারীকে পাঠাল; কিন্তু তারা তাকেও মারধর করল। সেই কর্মচারীর প্রতি তারা জঘন্য ব্যবহার করে তাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিল। 12 পরে সে তার তৃতীয় কর্মচারীকে পাঠাল, চাষীরা তাকেও ক্ষতবিক্ষত করে বার করে দিল।

13 “তখন সেই দ্রাক্ষা ক্ষেতের মালিক বলল, ‘আমি এখন কি করব? আমি আমার প্রিয় পুত্রকে পাঠাব, হয়তো তারা তাকে মান্য করবে।’ 14 কিন্তু সেই চাষীরা সেই ছেলেকে দেখতে পেয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বলল, ‘এই হচ্ছে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী, এস একে আমরা খুন করি, তাহলে আমরাই হব এই সম্পত্তির মালিক।’ 15 এই বলে তারা তাকে দ্রাক্ষা ক্ষেতের বাইরে টেনে নিয়ে গিয়ে হত্যা করল।

“এখন সেই ক্ষেতের মালিক তাদের প্রতি কি করবে? 16 সে এসে ঐ চাষীদের মেরে ফেলবে ও ক্ষেত অন্য চাষীদের হাতে দেবে।”

এই কথা শুনে তারা সবাই বলল, “এরকম যেন না হয়!” 17 কিন্তু যীশু তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তাহলে এই যে কথা শাস্ত্রে লেখা আছে এর অর্থ কি,

‘রাজমিস্ত্রিরা যে পাথরটা বাতিল করে দিল,
    সেটাই হয়ে উঠল কোণের প্রধান পাথর?’[a]

18 যে কেউ সেই পাথরের ওপর পড়বে, সে ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে যাবে, আর যার ওপর সেই পাথর পড়বে সে ভেঙে গুঁড়ো হয়ে যাবে।”

19 প্রধান যাজকরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা সেই সময় থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য উপায় খুঁজতে লাগল; কিন্তু তারা জনসাধারণকে ভয় পাচ্ছিল। তারা যীশুকে গ্রেপ্তার করতে চাইছিল কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল যে যীশু তাদের বিরুদ্ধেই ঐ দৃষ্টান্তটি দিয়েছিলেন।

ইহুদী নেতারা যীশুকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করল

(মথি 22:15-22; মার্ক 12:13-17)

20 তাই তারা তাঁর ওপর নজর রাখতে কয়েকজন লোককে গুপ্তচররূপে তাঁর কাছে পাঠাল, যারা ভাল লোক সেজে তাঁর কাছে গেল যাতে করে যীশুর কথা ধরে তাঁকে রোমীয় রাজ্যপালের ক্ষমতা ও বিচারের অধীনে তুলে দিতে পারে। 21 তাই তারা তাঁকে একটি কথা জিজ্ঞেস করল, “গুরু, আমরা জানি যে, যা ন্যায় আপনি সেই কথাই বলেন ও সেই শিক্ষাই দেন; আর আমরা এও জানিযে আপনি কারোর প্রতি পক্ষপাত করেন না, কিন্তু ঈশ্বরের পথের বিষয়ে সত্য শিক্ষাই দেন। 22 আচ্ছা, কৈসরকে কর দেওয়া কি আমাদের উচিত?”

23 যীশু তাদের চালাকি ধরে ফেলেছিলেন, তাই বললেন, 24 “আমায় একটা রূপোর টাকা দেখাও। এতে কার মূর্ত্তি ও কার নাম আছে?”

তারা বলল, “কৈসরের!”

25 তখন তিনি তাদের বললেন, “তাহলে কৈসরের যা তা কৈসরকে দাও, আর ঈশ্বরের যা তা ঈশ্বরকে দাও।”

26 সমস্ত লোকের সামনে যীশু যা বললেন, তাতে তারা তাঁর কোন ভুল ধরতে পারল না। তাঁর দেওয়া উত্তরে তারা বিস্ময়ে হতবাক্ হয়ে গেল।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International