Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Old/New Testament

Each day includes a passage from both the Old Testament and New Testament.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
1 শমূয়েল 25-26

দায়ূদ ও নিষ্ঠুর নাবল

25 শমূয়েল মারা গেল। সমস্ত ইস্রায়েলবাসীরা একত্রিত হল এবং শমূয়েলের মৃত্যুর জন্য শোক প্রকাশ করল। তারা শমূয়েলকে রামায় তার বাড়িতে কবর দিল।

তারপর দায়ূদ পারণ মরুভূমির দিকে চলে গেলেন। মায়োন শহরে এক মস্ত বড় ধনী বাস করত। তার 3000 মেষ আর 1000 ছাগল ছিল। সে তার মেষদের থেকে পশম ছাঁটবার জন্য কর্ম্মিলে গিয়েছিল। সেই ব্যক্তির নাম নাবল, সে কালেব পরিবারের লোক। নাবলের স্ত্রীর নাম অবীগল। সে যেমন জ্ঞানী তেমনি সুন্দরী। কিন্তু নাবল ছিল অত্যন্ত নীচ প্রকৃতির আর নিষ্ঠুর ধরণের ব্যক্তি।

দায়ূদ মরুভূমিতে থাকতে থাকতেই শুনেছিলেন নাবল মেষের গা থেকে পশম ছাঁটছে। দায়ূদ দশজন যুবককে নাবলের সঙ্গে আলোচনার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তিনি বললেন, “কর্ম্মিলে গিয়ে নাবলকে খুঁজে বার করো। তারপর তাকে আমার হয়ে অভিবাদন জানিও।” দায়ূদ নাবলের জন্য এই বার্তা দিলেন, “আশা করছি তুমি ও তোমার পরিবারের সকলে ভাল আছো। তোমাদের যা যা আছে সবই ভাল আছে। শুনলাম, তুমি নাকি মেষের গা থেকে পশম ছেঁটে নিচ্ছ। তোমার মেষপালকরা আমাদের কাছে কিছুদিন ছিল। আমরা তাদের কোন ক্ষতি করি নি। তারা যখন কর্ম্মিলে ছিল তখন তাদের কাছ থেকে আমরা কিছুই নিইনি। তোমার ভৃত্যদের জিজ্ঞেস করে দেখবে কথাটা কতখানি সত্য। অনুগ্রহ করে আমার পাঠানো যুবকদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে। এই শুভ দিনে আমরা তোমার কাছে এসেছি। এদের যথাসাধ্য দান করো। আশা করি আমার জন্য এটুকু করবে। ইতি তোমার বন্ধু[a] দায়ূদ।”

দায়ূদের লোকরা নাবলের কাছে গিয়ে বার্তাটা দিল। 10 কিন্তু নাবল তাদের সঙ্গে জঘন্য ব্যবহার করল। সে বলল, “কে দায়ূদ? যিশয়ের পুত্র কে? কত ক্রীতদাস যে মনিবের কাছ থেকে আজকাল পালিয়ে যাচ্ছে। 11 আমার কাছে রুটি আছে, জল আছে, মাংসও আছে। আমার ভৃত্যদের জন্য পশু বলি দিয়ে সেই মাংসের ব্যবস্থা করেছি। তারা আমার মেষগুলোর গা থেকে পশম কেটে নেয়। কিন্তু যাদের আমি চিনি না, তাদের কিছুতেই তা দেব না।”

12 দায়ূদের লোকরা ফিরে এলো। যা যা হয়েছে সব তারা দায়ূদকে বলল। 13 সব শুনে দায়ূদ বললেন, “এবার তরবারি নাও।” দায়ূদ ও তাঁর লোকরা কোমরে তরবারি এঁটে নিল। প্রায় 400 জন দায়ূদের সঙ্গে গেল। দ্রব্যসামগ্রী রক্ষার জন্যে 200 জন রইল।

অবীগল বিপদ আটকাল

14 নাবলের একজন ভৃত্য নাবলের স্ত্রী অবীগলকে বলল, “দায়ূদ মরুভূমি থেকে দূত পাঠিয়েছিলেন আমাদের মনিবের (নাবলের) কাছে। কিন্তু নাবল তাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেনি। 15 অথচ তারা আমাদের সঙ্গে যথেষ্ট ভাল ব্যবহার করেছিল। আমরা যখন মাঠে মেষ চরাতে যেতাম তখন দায়ূদের লোকরা সবসময় আমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকত। ওরা কখনও কোন অন্যায় করে নি। আমাদের কিছু চুরিও যায় নি। 16 দায়ূদের লোকরা আমাদের দিন রাত পাহারা দিত। আমাদের চারপাশে ওরা ছিল প্রাচীরের মতো। আমরা যখন মেষদের দেখাশুনা করতাম তখন ওরা আমাদের রক্ষা করত। 17 এখন ভেবে দেখুন, আপনি কি করতে পারেন। নাবল এতো পাষণ্ড যে তার সঙ্গে কথা বলে তার মন পরিবর্তন করানো অসম্ভব। আমাদের মনিব আর তার সংসারে ঘোর দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে।”

18 অবীগল এই শুনে আর বিন্দুমাত্র দেরী না করে 200 রুটি, দুটো থলে ভর্ত্তি দ্রাক্ষারস, পাঁচটা মেষের রান্নাকরা মাংস, প্রায় এক বুশেল রান্না ডাল, 2 কোয়ার্ট কিস্মিস, 200 টি ডুমুরের পিঠে এইসব জোগাড় করে গাধার পিঠে চাপিয়ে দিল। 19 তারপর অবীগল ভৃত্যদের বলল, “তোমরা এগিয়ে যাও। আমি তোমাদের পেছন পেছন আসছি।” এ কথা সে তার স্বামীকে বলল না।

20 অবীগল তার গাধার পিঠে চড়ল এবং পর্বতের অন্য দিকে নেমে চলে গেল। অন্যদিক থেকে দায়ূদ তাঁর লোকদের সঙ্গে নিয়ে আসছিলেন।

21 অবীগলের সঙ্গে দেখা হবার আগে দায়ূদ বললেন, “মরুভূমিতে আমি নাবলের সম্পত্তি রক্ষা করেছিলাম। তার একটাও মেষ যাতে হারিয়ে না যায় সেই দিকে কড়া নজর রেখেছিলাম। কিন্তু এত উপকার কোন কাজেই লাগল না। আমি তার ভাল করলেও সে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করল। 22 এবার নাবলের বাড়ির একজনকেও যদি কাল সকাল পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখি তাহলে ঈশ্বর যেন আমাকে শাস্তি দেন।”

23 ঠিক তখনই অবীগল তার কাছে এসে গেল। দায়ূদকে দেখে মাথা নীচু করে দায়ূদের পায়ে পড়ল। 24 দায়ূদের পায়ে পড়ে অবীগল বলল, “মহাশয়, দয়া করে আমাকে কিছু বলতে অনুমতি দিন। আমার কথা শুনুন। যা হয়েছে তার জন্য আপনি আমাকে দোষী করুন। 25 আমি আপনার দূতদের দেখি নি। এ অপদার্থ লোকটাকে আপনি মোটেই গ্রাহ্য করবেন না। তার যেমন নাম, সে তেমনি লোক। তার নামের অর্থ ‘দুষ্ট’ আর সে সত্যিই মন্দ কাজ করে। 26 প্রভু আপনাকে নিরীহ লোকদের হত্যা করতে দেন নি। জীবন্ত প্রভুর দিব্য এবং আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, যারা আপনার শত্রু, যারা আপনার ক্ষতি করতে চায় তারা সকলেই নাবলের মতো হোক্। 27 এখন আমি আপনার জন্য এই উপহার এনেছি। আপনি আপনার যুবকদের এসব দান করুন। 28 আমি যে অন্যায় করেছি তার জন্য আপনি অনুগ্রহ করে আমাকে ক্ষমা করুন। প্রভু আপনার পরিবারের সকলকে শক্তিশালী করবেন। আপনার পরিবার থেকেই আবির্ভাব হবে অনেক রাজার। প্রভু এটাই করবেন, কারণ আপনি তাঁর হয়ে যুদ্ধ করেন। যতদিন আপনি বেঁচে আছেন লোকে আপনার কোন দোষ খুঁজে পাবে না। 29 যদি কেউ আপনাকে হত্যা করতে আসে, প্রভু আপনার ঈশ্বরই, আপনাকে রক্ষা করবেন। আপনার শত্রুদের তিনি গুলতির ঢিলের মতো ছুঁড়ে ফেলে দেবেন। 30 প্রভু আপনার জন্য অনেক ভাল কিছু করবার প্রতিশ্রুতি করেছেন এবং তিনি অবশ্যই তাঁর সকল প্রতিশ্রুতি রাখবেন। তিনি আপনাকে ইস্রায়েলের নেতা করবেন। 31 নিরীহ মানুষকে হত্যা করে পাপের ভাগী আপনি হবেন না। সেই ফাঁদে আপনি পা দেবেন না। প্রভু আপনাকে যখন জয়যুক্ত করবেন তখন আপনি দয়া করে আমায় স্মরণ করবেন।”

32 দায়ূদ অবীগলকে বললেন, “প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বরের প্রশংসা কর। তিনি তোমাকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন বলে তাঁর প্রশংসা কর। 33 তোমার সুবিচারের জন্য ঈশ্বর তোমায় আশীর্বাদ করুন। আজ তুমি নিরীহ মানুষদের হত্যা করার পাপ থেকে আমাকে বাঁচালে। 34 প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের নামে আমি শপথ করছি, তুমি যদি আমার সঙ্গে তাড়াতাড়ি দেখা করতে না আসতে তাহলে নাবলের বাড়ির লোকরা কেউ কাল সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকত না।”

35 দায়ূদ অবীগলের উপহার গ্রহণ করলেন। তিনি তাকে বললেন, “তুমি শান্তিতে বাড়ী যাও। আমি তোমার অনুরোধ শুনেছি। তুমি যা কিছু চেয়েছ আমি তা করব।”

নাবলের মৃত্যু

36 অবীগল নাবলের কাছে ফিরে এলো। নাবল তখন বাড়িতে রাজার মতো তার খাবার খাচ্ছিল। সে মাতাল ছিল এবং খুশী ছিল। তাই সকাল না হওয়া পর্যন্ত অবীগল তাকে কিছু বলল না। 37 পরদিন সকালে নাবলের হুঁশ ফিরে এল। তখন অবীগল তাকে সব কথা খুলে বলল। তখন নাবল হৃদরোগে আক্রান্ত হল। দশ দিন ধরে সে পাথরের মতো অনড় হয়ে রইল। 38 প্রায় দশ দিন পর প্রভু নাবলের মৃত্যু ঘটালেন।

39 নাবলের মৃত্যু সংবাদ শুনে দায়ূদ বললেন, “প্রভুর প্রশংসা করো। নাবল আমার সম্পর্কে খারাপ কথা বলেছিল, কিন্তু প্রভু আমাকে সমর্থন করলেন। তিনি আমায় কোন অন্যায় করতে দেন নি। নাবল অন্যায় করেছিল বলেই তিনি তার মৃত্যু ঘটালেন।”

তারপর দায়ূদ অবীগলকে একটা চিঠি পাঠালেন। তাকে তাঁর স্ত্রী হিসাবে পাবার জন্য প্রস্তাব করলেন। 40 দায়ূদের অনুচররা কর্ম্মিলে গিয়ে অবীগলকে বলল, “আপনাকে নিয়ে যাবার জন্য দায়ূদ আমাদের পাঠিয়েছেন। তিনি আপনাকে বিবাহ করতে চান।”

41 অবীগল মাটিতে উপুড় হয়ে প্রণাম করে বলল, “আমি তোমাদের দাসী। তোমাদের সেবা করতে আমি প্রস্তুত। আমার মনিবের (দায়ূদের) সেবকদের পা ধুয়ে দিতে আমি প্রস্তুত।”

42 অবীগল আর দেরী না করে দায়ূদের অনুচরদের সঙ্গে একটা গাধার পিঠে চড়ে রওনা হল। তার সঙ্গে ছিল পাঁচ দাসী। অবীগল দায়ূদের স্ত্রী হলেন। 43 দায়ূদ যিষ্রিয়েলীয় অহীনোয়মকেও বিবাহ করেছিলেন। অবীগল আর অহীনোয়ম দুজনেই দায়ূদের স্ত্রী হল। 44 দায়ূদ শৌলের কন্যা মীখলকেও বিবাহ করেছিলেন। কিন্তু শৌল দায়ূদের কাছে থেকে তার কন্যাকে সরিয়ে এনে তার সঙ্গে পল্টির বিয়ে দিলেন। পল্টির পিতার নাম লায়িশ। পল্টির বাড়ি ছিল গল্লীম শহরে।

শৌলের শিবিরে দায়ূদ ও অবীশয়ের প্রবেশ

26 সীফের লোকরা শৌলের সঙ্গে দেখা করতে গিবিয়ায় গেল। তারা শৌলকে বলল, “দায়ূদ হখীলার পাহাড়ে লুকিয়ে রয়েছে। যেশিমোনের ঠিক অপর দিকেই সেই পাহাড়।”

সীফের মরুভূমিতে শৌল নেমে এলেন। সমস্ত ইস্রায়েল থেকে শৌল 3000 সৈন্য বেছে নিয়েছিলেন। এদের নিয়ে শৌল সীফের মরু অঞ্চলে দায়ূদকে খুঁজতে লাগলেন। হখীলা পাহাড়ে শৌল তাঁবু বসালেন। যেশিমোনের রাস্তার ধারেই ছিল সেই তাঁবু।

দায়ূদ মরুভূমির মধ্যে বাস করতেন। তিনি জানতে পারলেন যে শৌল সেখানেও তাঁর পিছু নিয়েছেন। তখন তিনি গুপ্তচর পাঠালেন। শৌল যে হখীলায় এসেছেন সে খবর তিনি জানতেন। দায়ূদ শৌলের শিবিরে উপস্থিত হলেন। তিনি দেখলেন কোথায় শৌল আর অব্নের ঘুমাচ্ছিলেন। (অব্নের, শৌলের সেনাপতি, নেরের পুত্র।) শৌল শিবিরের মাঝখানে ঘুমোচ্ছিলেন। সৈন্যরা তাঁর চারপাশে ছিল।

দায়ূদ হিত্তীয় অহীমেলক আর সরূয়ার পুত্র অবীশয়ের সঙ্গে কথা বললেন। (অবীশয় যোয়াবের ভাই।) তিনি তাদের বললেন, “কে আমার সঙ্গে শৌলের শিবিরে যাবে?”

অবীশয় উত্তরে বলল, “আমি তোমার সঙ্গে যাব।”

রাত হলে দায়ূদ ও অবীশয় শৌলের শিবিরে গেলেন। শৌল শিবিরের মাঝখানে ঘুমোচ্ছিলেন। তাঁর মাথার কাছে মাটিতে তাঁর বর্শা গাঁথা ছিল। অব্নের ও অন্যান্য সৈন্যরা শৌলের চারপাশে ঘুমাচ্ছিল। অবীশয় দায়ূদকে বলল, “আজ ঈশ্বরের দয়ায় আপনি শত্রু জয় করবেন। শৌলের বর্শা দিয়ে শৌলকে মাটিতে গেঁথে দিতে চাই। শুধু একবার আপনি এই কাজটা আমায় করতে দিন।”

দায়ূদ অবীশয়কে বললেন, “শৌলকে হত্যা কোরো না। প্রভু যাকে রাজা বলে মনোনীত করেছেন তাকে কেউ যেন আঘাত না করে। আঘাত করলে সে অবশ্যই শাস্তি পাবে। 10 প্রভু যখন আছেন তখন তিনি নিশ্চয়ই নিজেই শৌলকে শাস্তি দেবেন। তাছাড়া শৌলের স্বাভাবিক মৃত্যুও হতে পারে। কিংবা এও হতে পারে যুদ্ধেই শৌল মারা যাবেন। 11 সে যাই হোক্ আমি চাই না যে প্রভু তাঁর নির্বাচিত রাজাকে আমার হাত দিয়ে হত হতে দেন। এখন শৌলের মাথার কাছে বর্শা আর জলের জায়গাটা তুলে নাও। তারপর আমরা চলে যাব।”

12 সেই মত দায়ূদ বর্শা আর কুঁজো নেবার পর অবীশয়কে সঙ্গে নিয়ে তাঁবু থেকে বাইরে এলেন। কেউ কিছু জানতে পারল না। কেউ ঘুম থেকে জেগেও উঠল না। শৌল আর সৈন্যরা সকলেই গাঢ় ঘুমে ঢলে পড়েছিল কারণ প্রভু তাদের গাঢ় ঘুমে আক্রান্ত করেছিলেন।

দায়ূদ আবার শৌলকে অপ্রস্তুতে ফেললেন

13 দায়ূদ উপত্যকা পেরিয়ে পাহাড়ের শিখরে গিয়ে দাঁড়ালেন। সেই জায়গা থেকে শৌলের শিবির অনেক দূরে ছিল। 14 দায়ূদ সৈন্যসামন্ত আর নেরের পুত্র অব্নেরের দিকে চিৎকার করে বললেন, “অব্নের জবাব দাও।”

অব্নের উত্তর দিলো, “কে তুমি? কেন তুমি রাজাকে ডাকছ?”

15 দায়ূদ বললেন, “তুমি তো একজন মানুষ, তাই না? ইস্রায়েলের আর পাঁচটা মানুষের চেয়ে তুমি সেরা, ঠিক কি না? তাহলে কেন তুমি তোমার মনিবকে পাহারা দিলে না? একজন সাধারণ মানুষ তাঁবুতে ঢুকে তোমাদের মনিবকে খুন করতে এসেছিল। 16 তুমি মস্ত বড় ভুল করেছ। আমি প্রভুর নামে শপথ করে বলছি, তোমাকে আর তোমার লোকদের অবশ্যই মরতে হবে। তুমি কি জানো কেন? কারণ তুমি প্রভুর নির্বাচিত রাজা অর্থাৎ‌ তোমার মনিবকে রক্ষা কর নি। শৌলের মাথার কাছে কোথায় রাজার বর্শা আর জলের কুঁজো আছে? খুঁজে দেখো, কোথায়?”

17 শৌল দায়ূদের স্বর চিনতেন। তিনি বললেন, “বৎস দায়ূদ, তুমিই কি কথা বলছ?”

দায়ূদ উত্তর দিলেন, “হে প্রভু, হে রাজন, আপনি আমারই কন্ঠস্বর শুনছেন।” 18 দায়ূদ আবার বললেন, “আপনি কেন আমার পিছু নিয়েছেন? আমি কি অন্যায় করেছি? কি আমার দোষ? 19 হে আমার মনিব, হে রাজা, আমার কথা শুনুন। আপনি যদি আমার ওপর রাগ করে থাকেন এবং প্রভু যদি এর কারণ হয়ে থাকেন তাহলে তাঁকে তাঁর নৈবেদ্য গ্রহণ করতে দিন। কিন্তু যদি লোকদের কারণে আপনি আমার ওপর রাগ করে থাকেন, তাহলে প্রভু যেন তাদের মন্দ করেন। প্রভু আমায় যে দেশ দান করেছেন সেই দেশ আমি লোকদেরই চাপে ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি। তারা আমায় বলেছে, যাও, ভিনদেশীদের সঙ্গে বাস করো। সেখানে গিয়ে অন্য মূর্ত্তির পূজা করো। 20 শুনুন, প্রভুর সান্নিধ্য থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে আমায় মরতে দেবেন না। ইস্রায়েলের রাজা একটা নীল মাছি খুঁজতে বেরিয়ে এসেছেন। যেমন কেউ পর্বতে উঠে সামান্য একটা তিতির পাখীকে তাড়া করে শিকার করে।”

21 তখন শৌল বললেন, “আমি পাপ করেছি। বৎস দায়ূদ, তুমি ফিরে এসো। আজ তুমি দেখালে, তোমার কাছে আমার জীবন কত প্রয়োজনীয়। আমি তোমাকে হত্যা করব না। আমি বোকার মত কাজ করেছি। কি ভুলই আমি করেছি!”

22 দায়ূদ বললেন, “এই দেখুন রাজার বর্শা। আপনার একজন যুবককে এখানে পাঠিয়ে দিন। সে এটা নিয়ে যাক্। 23 প্রভু প্রতিটি মানুষকে তার কর্মের জন্য প্রতিদান দিয়ে থাকেন। যদি সে উচিৎ‌ কাজ করে তাহলে তিনি তাকে পুরস্কার দেন আর যদি সে অন্যায় করে তাহলে তিনি তাকে শাস্তি দেন। আজ তিনি আপনাকে হারানোর জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমি তাঁর মনোনীত রাজাকে কিছুতেই আঘাত করতে পারি না। 24 আজ আপনাকে আমি দেখালাম যে, আপনার জীবন আমার কাছে কত মূল্যবান। একইভাবে প্রভুও দেখাবেন, তাঁর কাছে আমার জীবনও কত মূল্যবান। প্রভু আমাকে সব রকম বিপদ থেকে রক্ষা করবেন।”

25 শৌল দায়ূদকে বললেন, “বৎস দায়ূদ, ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন। তুমি অনেক মহৎ‌‌ কর্ম করবে এবং তুমি সফল হবে।”

দায়ূদ নিজের পথে চলে গেলেন, আর শৌল তাঁর জায়গায় ফিরে গেলেন।

লূক 12:32-59

অর্থকে বিশ্বাস করো না

32 “ক্ষুদ্র মেষপাল! তোমরা ভয় পেও না, কারণ তোমাদের পিতা আনন্দের সাথেই সেই রাজ্য তোমাদের দেবেন, এটাই তাঁর ইচ্ছা। 33 তোমাদের সম্পদ বিক্রি করে অভাবীদের দাও। নিজেদের জন্য এমন টাকার থলি তৈরী কর যা পুরানো হয় না, স্বর্গে এমন ধনসঞ্চয় কর যা শেষ হয় না, সেখানে চোর ঢুকতে পারে না বা মথ কাটে না। 34 কারণ যেখানে তোমাদের সম্পদ সেখানেই তোমাদের মনও পড়ে থাকবে।

সর্বদাই প্রস্তত থাক

(মথি 24:42-44)

35 “তোমরা কোমর বেঁধে বাতি জ্জ্বালিয়ে নিয়ে প্রস্তুত থাক। 36 তোমরা এমন লোকদের মতো হও যারা তাদের মনিব বিয়ে বাড়ি থেকে কখন ফিরে আসবে তারই অপেক্ষায় থাকে; যেন তিনি ফিরে এসে দরজায় কড়া নাড়লেই তখনই তাঁর জন্য দরজা খুলে দিতে পারে। 37 ধন্য সেই সব দাস, মনিব এসে যাদের জেগে প্রস্তুত থাকতে দেখবেন। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তিনি নিজে পোশাক বদলে প্রস্তুত হয়ে তাদের খেতে বসাবেন, এবং নিজেই পরিবেশন করবেন। 38 তিনি রাতের দ্বিতীয় প্রহরে ও তৃতীয় প্রহরে এসে যদি তাদের প্রস্তুত থাকতে দেখেন তাহলে ধন্য তারা।

39 “কিন্তু একথা জেনে রেখো, চোর কোন সময় আসবে তা যদি বাড়ির কর্তা জানতে পারে তাহলে সে তার বাড়িতে সিঁদ কাটতে দেবে না। 40 তাই তোমরাও প্রস্তুত থেকো, কারণ তোমরা যে সময় আশা করবে না, মানবপুত্র সেই সময় আসবেন।”

বিশ্বস্ত দাস কে?

(মথি 24:45-51)

41 তখন পিতর বললেন, “প্রভু এই দৃষ্টান্তটি কি আপনি শুধু আমাদের জন্য বললেন, না এটা সকলের জন্য?”

42 তখন প্রভু বললেন, “সেই বিশ্বস্ত ও বিচক্ষণ কর্মচারী কে, যাকে তার মনিব তাঁর অন্য কর্মচারীদের সময়মতো খাবার ভাগ করে দেবার ভার দেবেন? 43 ধন্য সেই দাস, যাকে তার মনিব এসে বিশ্বস্তভাবে কাজ করতে দেখবেন। 44 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, মনিব সেই কর্মচারীর ওপর তাঁর সমস্ত সম্পত্তি দেখাশোনার ভার দেবেন।

45 “কিন্তু সেই কর্মচারী যদি মনে মনে বলে, আমার মনিবের আসতে এখন অনেক দেরী আছে। এই মনে করে সে যদি তার অন্য দাস-দাসীদের মারধর করে আর পানাহারে মত্ত হয়, 46 তাহলে যে দিন ও যে সময়ের কথা সে একটুকু চিন্তাও করবে না, সেই দিন ও সেই সময়েই তার মনিব এসে হাজির হবেন। তার মনিব তাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবেন; আর অবিশ্বাসীদের জন্য যে জায়গা ঠিক করা হয়েছে, তার স্থান সেখানেই হবে।

47 “যে দাস তার মনিবের ইচ্ছা জেনেও প্রস্তুত থাকে নি, অথবা যে তার মনিবের ইচ্ছানুসারে কাজ করে নি, সেই দাস কঠোর শাস্তি পাবে। 48 কিন্তু যে তার মনিব কি চায় তা জানে না, এই না জানার দরুন এমন কাজ করে ফেলেছে যার জন্য তার শাস্তি হওয়া উচিৎ, সেই দাসের কম শাস্তি হবে। যাকে বেশী দেওয়া হয়েছে, তার কাছ থেকে বেশী পাবার আশা করা হবে। যার ওপর বেশী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, লোকেরা তার কাছ থেকে অধিক চাইবে।”

যীশুর বিষয়ে লোকেরা একমত হবে না

(মথি 10:34-36)

49 “আমি পৃথিবীতে আগুন নিক্ষেপ করতে এসেছি, আহা, যদি তা আগেই জ্বলে উঠত! 50 এক বাপ্তিস্মে আমায় বাপ্তাইজিত হতে হবে, আর যতক্ষণ না তা হচ্ছে, আমি ব্যাকুল হয়ে উঠেছি। 51 তোমরা কি মনে কর এই পৃথিবীতে আমি শান্তি স্থাপন করতে এসেছি? না, আমি তোমাদের বলছি, বরং বিভেদ ঘটাতে এসেছি। 52 কারণ এখন থেকে একই পরিবারে পাঁচজন থাকলে তারা পরস্পরের মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে। তিনজন দুজনের বিরুদ্ধে যাবে, আর দুজন তিনজনের বিরুদ্ধে যাবে।

53 বাবা ছেলের বিরুদ্ধে
    ও ছেলে বাবার বিরুদ্ধে যাবে।
মা মেয়ের বিরুদ্ধে
    ও মেয়ে মায়ের বিরুদ্ধে যাবে।
শাশুড়ী বৌমার বিরুদ্ধে
    ও বৌমা শাশুড়ীর বিরুদ্ধে যাবে।”[a]

সময়কে বুঝতে হবে

(মথি 16:2-3)

54 এরপর যীশু সমবেত জনতার দিকে ফিরে বললেন, “পশ্চিমদিকে মেঘ জমতে দেখে তোমরা বলে থাকো, ‘বৃষ্টি আসলো বলে, আর তা-ই হয়।’ 55 যখন দক্ষিণা বাতাস বয়, তোমরা বলে থাক, ‘গরম পড়বে,’ আর তা-ই হয়। 56 ভণ্ডের দল! তোমরা পৃথিবী ও আকাশের চেহারা দেখে তার অর্থ বুঝতে পার; কিন্তু এ কেমন যে তোমরা বর্তমান সময়ের অর্থ বুঝতে পার না?

সমস্যার সমাধান কর

(মথি 5:25-26)

57 “যা কিছু ন্যায্য, নিজেরাই কেন তার বিচার কর না? 58 তোমাদের প্রতিপক্ষের সঙ্গে তোমরা যখন বিচারকের কাছে যাও, তখন পথেই তা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা কর। নতুবা সে হয়তো তোমাকে বিচারকের কাছে টেনে নিয়ে যাবে, বিচারক তোমাকে সেপাইয়ের হাতে দেবে আর সেপাই তোমায় কারাগারে দেবে। 59 আমি তোমাকে বলছি, শেষ পয়সাটি না দেওয়া পর্যন্ত তুমি কোন মতেই কারাগার থেকে ছাড়া পাবে না।”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International