Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
যিহিষ্কেল 9-12

তখন আমি শুনতে পেলাম যে, যে নেতারা শহরকে শাস্তি দেবার দায়িত্বে ছিল, ঈশ্বর তাদের ডাকছেন। প্রত্যেক নেতার হাতে ছিল তার নিজস্ব মারণাস্ত্র। তারপর আমি উচ্চতর ফটক থেকে ছয়জনকে হাঁটতে দেখলাম। এই ফটকটি ছিল উত্তরমুখী। প্রত্যেকের হাতে ছিল তার নিজস্ব মারাত্মক অস্ত্র। একজন মানুষের পরনে ছিল মসিনার কাপড়। তার কোমরে গোঁজা ছিল একটি লেখনী ও কালির একটি দোয়াত। ঐ লোকরা মন্দিরের পিতলের বেদীর কাছে গিয়ে সেখানে দাঁড়াল। তারপর ইস্রায়েলের ঈশ্বরের মহিমা করূব দূতগণের মধ্য থেকে উঠে এল। সেখানেই তিনি ছিলেন। তারপর সেই গৌরব পরাক্রম মন্দিরের দরজা পর্যন্ত গেল। চৌকাঠের কাছে গিয়েই তিনি থামলেন। তারপর প্রভুর মহিমা মসিনা কাপড় পরা এবং লেখনী ও দোয়াত কোমরে বাঁধা লোকটিকে ডাকলেন।

তখন প্রভু (মহিমা) তাকে বললেন, “জেরুশালেম শহরের মধ্য দিয়ে যাও। সেই সব লোক যারা শহরের লোকদের ভয়ঙ্কর কাজকর্মের জন্য দুঃখ করে এবং মনমরা তাদের প্রত্যেকের কপালে দাগ দাও।”

5-6 তারপর আমি শুনলাম ঈশ্বর অন্য বাকী লোকেদের বলছেন, “আমি চাই তোমরা প্রথম মানুষটিকে অনুসরণ কর। যে সব ব্যক্তির কপালে চিহ্ন নেই তাদের তোমরা অবশ্যই হত্যা করো। তারা প্রবীণ হোক্, যুবক বা যুবতী, শিশু বা মায়েরা হোক্ তাতে কিছু আসে যায় না। কোন রকম দয়া দেখিও না। কোন ব্যক্তির জন্য দুঃখ বোধ করো না। এখানে আমার মন্দির থেকেই শুরু কর।” তাই তারা মন্দিরের সামনে যে প্রবীণরা ছিল তাদের দিয়েই শুরু করল।

ঈশ্বর তাদের বললেন, “এই মন্দির অশুচি কর। এর প্রাঙ্গন মৃতদেহ দিয়ে পূর্ণ কর! এখনই যাও!” তাই তারা গিয়ে শহরের লোকদের হত্যা করল।

এই লোকরা যখন শহরে গিয়ে লোক হত্যা করছিল সে সময় আমি সেখানেই ছিলাম। আমি মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে কেঁদে বললাম, “হে প্রভু, আমার সদাপ্রভু, জেরুশালেমের প্রতি তোমার ক্রোধ প্রকাশ করতে কি তুমি ইস্রায়েলের অবশিষ্ট সবাইকেই হত্যা করবে?”

ঈশ্বর আমাকে বললেন, “ইস্রায়েল ও যিহূদা পরিবার বহু জঘন্য পাপ কাজ করেছে। দেশের সর্বত্র, লোকদের হত্যা করা হয়েছে। আর শহর অপরাধে পূর্ণ হয়ে গেছে! কেন? কারণ লোকরা নিজেদের মধ্যেই বলাবলি করে, ‘প্রভু এই শহর ত্যাগ করেছেন এবং চলে গেছেন। তাই আমরা কি করছি তা তিনি দেখতে পাবেন না।’ 10 আর আমিও কোন দয়া দেখাব না। এই লোকদের জন্য আমি অনুশোচনাও করব না। তারা নিজেরাই নিজেদের কষ্ট ডেকে এনেছে। আমি কেবল ঐ লোকদের তাদের পাওনা শাস্তি দিচ্ছি।”

11 তারপর সেই মসিনা কাপড় পরা আর লেখনী ও কালির দোয়াত কোমরে বাঁধা লোকটা বললেন, “আপনি যা আজ্ঞা করেছেন তা আমি করেছি।”

10 তারপর আমি করূব দূতদের মাথার ওপরের পাত্রের দিকে তাকালাম। পাত্রটিকে নীলকান্ত মণির মত পরিষ্কার নীল দেখাচ্ছিল। আর সেই পাত্রের ওপরে সিংহাসনের মত কিছু একটা দেখতে পেলাম। তখন যে ব্যক্তিটি সিংহাসনে বসেছিলেন তিনি মসিনা কাপড় পরা মানুষটিকে বললেন, “করূব দূতের নীচে যে চাকাগুলি রয়েছে তার মধ্যে ঢুকে যাও। করূব দূতদের মাঝখান থেকে মুঠো করে জ্বলন্ত কয়লা তুলে নিয়ে তা জেরুশালেম শহরের উপর ছুঁড়ে দাও।”

মানুষটি আমায় অতিক্রম করে গেলেন। মানুষটি যখন তাদের দিকে হেঁটে গেলেন সে সময় করূবদূতগণ মন্দিরের দক্ষিণ দিকে দাঁড়িয়েছিলেন। মেঘে ভিতরের প্রাঙ্গণ পরিপূর্ণ করল। তারপর প্রভুর মহিমা মন্দিরের দরজার চৌকাঠের কাছে স্থিত করূব দূতেদের মধ্যে থেকে উঠে এল। আর ঐ মেঘ মন্দির পূর্ণ করল আর প্রভুর গৌরবের উজ্জ্ব্বল আলো সমস্ত প্রাঙ্গণ পূর্ণ করল। করূব দূতদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ এমনকি একেবারে বাইরের প্রাঙ্গনেও শোনা যেতে লাগল। সেই শব্দের প্রচণ্ড আওয়াজ—যেমন ঈশ্বর সর্বশক্তিমান বজ্রের রবের কথা বলেন।

ঈশ্বর সেই মসিনা কাপড় পরা লোকটিকে এক আজ্ঞা দিয়েছিলেন। ঈশ্বর বলেছিলেন চাকাগুলির মধ্যে করূব দূতদের মাঝখানে গিয়ে কিছু গরম কয়লা নিয়ে আসতে। তাই লোকটি সেখানে গিয়ে চাকার পাশে দাঁড়ালেন। করূব দূতদের একজন হাত বাড়িয়ে তাদের মধ্যের অঞ্চল থেকে উত্তপ্ত কয়লা তুলে নিলেন। তারপর তা সে মানুষটির হাতে ঢেলে দিলেন। আর মানুষটি স্থান ত্যাগ করলেন। (করূব দূতটির ডানার তলায় মানুষের হাতের মতোই দেখতে কিছু ছিল।)

তারপর আমি সেখানে চারটি চাকা দেখতে পেলাম। প্রতিটি করূব দূতের পাশে একটি করে চাকা। চাকাগুলিকে স্বচ্ছ হলুদ রঙের বৈদুর্য্যমণির মতো দেখাচ্ছিল। 10 চারটি চাকা ছিল এবং তাদের প্রত্যেকেরই এক রূপ। দেখে মনে হচ্ছিল যেন চাকার মধ্যে চাকা রয়েছে। 11 তারা গমন করার সময় যে কোন দিকে যেতে পারত। কিন্তু গমন করার সময় করূব দূতেরা মুখ ঘোরাত না। তাদের মাথা যে দিকে মুখ করে থাকত সেই দিকেই যেত। চলার সময় পাশে ফিরত না। 12 তাদের দেহের সর্বত্র চোখে পূর্ণ। তাদের পিঠে, হাতে, ডানায় ও চাকায় চোখে পূর্ণ। হ্যাঁ, চার চাকাও চোখে পূর্ণ ছিল! 13 আমি শুনলাম সেই চাকাগুলিকে কেউ চিৎকার করে বলল, “ঘূর্ণ্যমান চাকা।”

14-15 প্রত্যেক করূব দূতের চারটি করে মুখ ছিল। প্রথম মুখটি করূবের মুখ। দ্বিতীয়টি মানুষের মুখ। তৃতীয়টি সিংহের মুখ, আর চতুর্থটি ঈগলের মুখ। তখন আমি বুঝলাম দর্শনে যে পশুদের আমি কবার নদীর ধারে দেখেছিলাম তা করূব দূত ছিল!

তারপর সেই করূব দূতরা আকাশে উঠল। 16 আর চাকাগুলিও তাদের সঙ্গে উঠল। যখন সেই করূব দূতগুলি ডানা তুলে বাতাসে উড়ল তখন চাকাগুলি পাশেও ঘুরলো না। 17 করূব দূতরা আকাশে উড়লে চাকাগুলিও তার সঙ্গে যেত। করূব দূতেরা স্থির হয়ে দাঁড়ালে চাকাগুলিও স্থির হত। কারণ ঐ চাকাগুলিতে সেই প্রাণীদের আত্মা ছিল।

18 তারপর প্রভুর মহিমা মন্দিরের চৌকাঠ থেকে উঠে এসে করূব দূতদের উপরে অবস্থান করল। 19 করূব দূতরা ডানা তুলে আকাশে উড়ে গেল। আমি তাদের মন্দির ত্যাগ করে চলে যেতে দেখলাম। চাকাগুলিও তাদের সঙ্গে গেল। তারপর তারা প্রভুর মন্দিরের পূর্বদিকের দরজায় এসে থামল। ইস্রায়েলের ঈশ্বরের মহিমা শূন্যে তাদের উপরে ছিল।

20 তখন আমি কবার নদীর ধারে দেখা দর্শনের সেই পশুদের কথা স্মরণ করলাম; যারা ইস্রায়েলের ঈশ্বরের মহিমার নীচে ছিল। আর বুঝতে পারলাম যে তারা করূব দূত ছিল। 21 অর্থাৎ‌ প্রত্যেক পশুর চারটি করে মুখ, চারটি ডানা আর ডানার তলায় মানুষের হাতের মত দেখতে হাত ছিল। 22 করূব দূতগুলির মুখগুলি ছিল দর্শনে কবার নদীর ধারে দেখা চারটি পশুর মুখের মত। আর তারা যে দিকে যেত সোজা সেই দিকেই তাকাত।

11 তারপর আত্মা আমাকে প্রভুর মন্দিরের পূর্বদিকের দরজায় বয়ে নিয়ে গেল। এই দরজার মুখ পূর্বদিকে যেদিকে সূর্য ওঠে সেই দরজার মুখে আমি 25 জন পুরুষ দেখতে পেলাম। অসূরের পুত্র যাসনিয় এইসব লোকদের সঙ্গে ছিল। বনায়ের পুত্র প্লটিয় সেখানে ছিল। এই দুই জন ছিল লোকদের অধ্যক্ষ।

তখন ঈশ্বর আমায় বললেন, “মনুষ্যসন্তান, এরাই সেই লোক যারা এই শহরের মধ্যে মন্দ পরিকল্পনাগুলি করছে। তারা সব সময়েই লোকদের মন্দ কাজ করতে বলে। এই লোকরা বলে, ‘আমরা খুব শীঘ্রই আমাদের বাড়ীঘর বানাব। আমরা হলাম রান্নার হাঁড়ির ভেতর মাংসের মতন।’ তাই তুমি অবশ্যই আমার হয়ে লোকেদের কাছে বলবে। মনুষ্যসন্তান, যাও লোকেদের কাছে গিয়ে ভাববাণী কর।”

তখন প্রভুর আত্মা আমার কাছে এল। তিনি আমায় বললেন, “তাদের বল প্রভু এই কথাগুলি বলেছেন: ইস্রায়েলের গৃহ, তুমি বড় বড় পরিকল্পনা করছ। কিন্তু আমি জানি তুমি কি চিন্তা করছ। এই শহরে তুমি অনেক লোক হত্যা করেছ। শহরের রাস্তা মৃতদেহে ভরিয়ে দিয়েছ। এখন প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘ঐ মৃতদেহরা মাংস আর শহরটা পাত্র। কিন্তু নবূখদ্‌নিৎ‌সর তোমাদের এর মধ্যে থেকে বার করে আনা হবে! তোমরা তরবারির ভয়ে ভীত। কিন্তু আমি আর কারো নয়, শুধু তোমার বিরুদ্ধেই তরবারিটি আনছি।’” প্রভু, আমাদের সদাপ্রভু এই কথাগুলি বলেছেন।

ঈশ্বর আরও বললেন, “আমি তোমাদের শহরের বাইরে নিয়ে যাব। আর বিদেশীদের হাতে তুলে দেব। আমি তোমাদের শাস্তি দেব! 10 তোমরা তরবারির ঘায়ে মারা যাবে। আমি এই ইস্রায়েলের সীমাতে তোমাদের শাস্তি দেব, যেন তোমরা জান যে আমিই তোমাদের শাস্তি দিচ্ছি, আমিই প্রভু। 11 হ্যাঁ, এই জায়গা রান্নার পাত্র হয়ে উঠবে না। আর তোমরা তার মধ্যে পাক করা মাংস হবে না। আমি এই ইস্রায়েলের সীমাতেই তোমাদের শাস্তি দেব। 12 তখন তোমরা জানবে যে আমিই প্রভু। আমার আজ্ঞা তোমরা লঙ্ঘন করেছিলে। তোমরা আমার পথ অনুসরণ করনি। পরিবর্ত্তে, তোমরা তোমাদের চার দিকের জাতিদের পথই অনুসরণ করেছিলে!”

13 আমি যেই ঈশ্বরের কথা বলা শেষ করলাম, বনায়ের পুত্র প্লটিয় মারা গেল। আমি মাটিতে পড়ে গেলাম। উপুড় হয়ে মাটিতে মুখ ঠেকিয়ে জোরে কেঁদে উঠে আমি বললাম, “হে প্রভু, আমার সদাপ্রভু, আপনি কি অবশিষ্ট ইস্রায়েলীয়দের সবাইকেই সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করবেন?”

14 কিন্তু তখন প্রভুর বাক্য আমার কাছে এল। তিনি বললেন, 15 “মনুষ্যসন্তান, ইস্রায়েলের পরিবারগুলি অর্থাৎ‌ তোমার ভাইদের, যারা ইস্রায়েল দেশটি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল তাদের স্মরণ কর। কিন্তু এখন জেরুশালেমের অধিবাসীরা বলছে, ‘প্রভুর কাছ থেকে তারা বহু দূরে চলে গিয়েছিল। এই দেশ আমাদের দেওয়া হয়েছিল—এটা আমাদেরই!’

16 “তাই ঐ লোকদের এই বিষয়গুলি বল: প্রভু আমার সদাপ্রভু বলেন, ‘এটা সত্য যে আমি আমার প্রজাদের দূরের দেশে যেতে বাধ্য করেছিলাম। আমিই তাদের বহু দেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু অল্প সময়ের জন্য ঐসব দেশে আমিই তাদের মন্দির হব। 17 কিন্তু তুমি ঐসব লোকদের অবশ্যই বলবে যে প্রভু আমার সদাপ্রভু তাদের ফিরিয়ে আনবেন। আমি তোমাদের বহু জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমি তোমাদের আবার এক জায়গায় সংগ্রহ করব এবং ঐসব জাতির মধ্যে থেকে ফিরিয়ে আনব। ইস্রায়েলের ভূমি আবার তোমাদের কাছে ফিরিয়ে দেব! 18 আর আমার প্রজারা ফিরে এলে তারা এখানে এখন যে সব ভয়ঙ্কর নোংরা মূর্ত্তি রয়েছে সে সব ধ্বংস করবে। 19 আমি তাদের একত্র করব। আমি তাদের নতুন আত্মা দেব। আমি তাদের পাথরের হৃদয় সরিয়ে সেখানে প্রকৃত হৃদয় স্থাপন করব। 20 তখন তারা আমার বিধিগুলি পালন করবে। তারা আমার আজ্ঞাগুলি পালন করবে। আমি তাদের যা বলব তারা তাই করবে। তারা প্রকৃতই আমার লোক হবে, আর আমি তাদের ঈশ্বর হব।’”

21 তখন ঈশ্বর বললেন, “কিন্তু এখন তাদের মন অধিকার করে আছে ঐসব ভয়ঙ্কর নোংরা মূর্ত্তিরা। আর ঐ লোকরা যে মন্দ কাজ করেছে তার জন্য অবশ্যই আমি তাদের শাস্তি দেব।” প্রভু আমার সদাপ্রভুই ঐসব কথা বলেছেন। 22 তারপর করূব দূতরা তাদের ডানা ওঠাল আর আকাশে উড়ে গেল। চাকাগুলিও তাদের সঙ্গে গেল। আর ইস্রায়েলের ঈশ্বরের মহিমা তাদের ওপরে ছিল। 23 পরে প্রভুর মহিমা নগরের মাঝখান থেকে উঠে গিয়ে নগরের পূর্বদিকে পাহাড়ের ওপরে গিয়ে থেমে গেল। 24 তারপর আত্মাটি আমায় তুলে নিয়ে আবার বাবিলনে সেই সব লোকদের কাছে, যারা ইস্রায়েল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল, সেখানে ফিরিয়ে আনল। আমি ঐসব ঈশ্বরীয় দর্শনে দেখলাম। তারপর যাকে আমি আমার দর্শনে দেখেছিলাম তিনি শূন্যে উঠে চলে গেলেন। 25 তখন আমি নির্বাসনে যারা ছিলেন তাদের কাছে প্রভু আমায় যা যা দেখিয়েছিলেন তা বললাম।

12 তখন প্রভুর বাক্য আমার কাছে এল। তিনি বললেন, “মনুষ্যসন্তান, তুমি বিদ্রোহীদের মধ্যে বাস করছ! তারা সব সময়ই আমার বিরুদ্ধাচরণ করে। আমি তাদের প্রতি যা করেছি তা দেখার চোখ তাদের রয়েছে, কিন্তু তারা সে সব দেখবে না। আমি তাদের যা বলেছি তা শোনবার কান তাদের রয়েছে কিন্তু তারা আমার আদেশ শুনবে না। কারণ তারা বিদ্রোহী। তাই, মনুষ্যসন্তান, তোমার জিনিসপত্র গোটাও। এমন অভিনয় কর যেন তুমি বহুদূর দেশে যাচ্ছ। দেখ, লোকে যেন তোমাকে তা করতে দেখে। হয়ত তারা তোমায় দেখবে কিন্তু তারা বিদ্রোহী।

“দিনের বেলায় তোমার জিনিসপত্র বাইরে বার করে এনো যাতে লোকে দেখতে পায়। তারপর বিকেলে এমন অভিনয় কর যেন নির্বাসিত হয়ে বহুদূর দেশে চলে যাচ্ছ। লোকরা যখন দেখছে সে সময় দেওয়ালে একটা গর্ত কর আর সেই গর্ত দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাও। রাতে সেই জিনিসপত্র কাঁধে করে চলে যাও। মুখ ঢেকে ফেলো যাতে দেশটি দেখতে না পাও। কারণ আমি তোমাকে ইস্রায়েল পরিবারের কাছে উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করছি।”

তাই আমাকে যেরকম আজ্ঞা করা হয়েছিল আমি সেই মত কাজ করলাম। দিনের সময় আমি আমার জিনিসপত্র তুলে নিয়ে এমন অভিনয় করলাম যেন বহু দূরের দেশে চলে যাচ্ছি। সেই সন্ধ্যায় আমি হাত দিয়ে দেওয়ালে একটা গর্ত করলাম। রাতের বেলায় আমি জিনিসপত্র ঘাড়ে করে স্থান ত্যাগ করলাম। আমি সব লোকের সামনেই তা করলাম।

পরের দিন সকালে প্রভুর বাক্য আমার কাছে এল। তিনি বললেন, “মনুষ্যসন্তান, তুমি কি করছ তা কি ঐ বিদ্রোহী ইস্রায়েল সন্তানরা জিজ্ঞাসা করেছে! 10 তাদের বল যে প্রভু, তাদের সদাপ্রভু এইসব কথা বলেছেন। এই বার্তাটি জেরুশালেমের নেতাদের জন্য এবং ইস্রায়েলে বাসকারী সমস্ত লোকদের জন্য। 11 তাদের বল, ‘আমি তোমাদের সকলের সামনে এক উদাহরণস্বরূপ। আমি যা করেছি তা সত্যিই তোমাদের প্রতি ঘটবে।’ বন্দী হিসাবে সত্যিই তোমাদের দূর দেশে যেতে বাধ্য করা হবে। 12 তোমাদের নেতা তার কাঁধে তার তল্পিগুলো রাখবে। সে রাতের বেলায় দেওয়ালে একটি গর্ত করে পালিয়ে যাবে। সে তার মুখ ঢাকবে যাতে লোকে তাকে চিনতে না পারে। সে চোখে দেখতে পাবে না সে কোথায় যাচ্ছে। 13 আমি তাকে ধরব। সে আমার ফাঁদে ধরা পড়বে। আর আমি তাকে বাবিলে কল‌্দীয়দের দেশে নিয়ে আসব। শত্রুরা তার চোখ দুটো উপড়ে নেবে। তাই সে দেখতে পাবে না কোথায় চলেছে। সে বাবিলে মারা যাবে। 14 আমি রাজার লোকদের ইস্রায়েলের চারধারের অন্যান্য দেশগুলিতে থাকতে বাধ্য করব। আমি তার সৈন্যদের বাতাসে ছড়িয়ে দেব আর শত্রু সেনারা তাদের পেছনে ধাওয়া করবে। 15 তখন লোকে জানবে যে আমিই প্রভু। তারা জানবে যে আমিই তাদের অন্য দেশে যেতে বাধ্য করেছিলাম।

16 “কিন্তু তবুও আমি তাদের মধ্যে কিছু লোককে জীবিত রাখব। কেউ কেউ প্লেগের হাত থেকে রক্ষা পাবে। কিছু লোক অনাহারে মারা যাবে না। কেউ বা আবার যুদ্ধে বেঁচে যাবে। আমি তাদের বাঁচাব যাতে তারা অন্যদের বলতে পারে তারা আমার বিরুদ্ধে কি ভয়ঙ্কর কাজ করেছিল। আর শুধুমাত্র তখনই তারা জানবে যে আমিই প্রভু।”

17 তখন প্রভুর বাক্য আমার কাছে এল। তিনি বললেন, 18 “মনুষ্যসন্তান, এমন অভিনয় কর যেন তুমি ভীষণ ভীত। তোমার খাদ্য আহার করার সময় ভয়ে কাঁপবে এবং উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত অবস্থায় জল পান করবে। 19 তুমি সাধারণ লোকদের এসব অবশ্যই বলবে। বলবে, ‘প্রভু আমাদের সদাপ্রভু জেরুশালেমে ও ইস্রায়েলের অন্যান্য অংশে বাসকারী লোকেদের বলেছেন। তোমরা তোমাদের খাদ্য ভোজন করার সময় খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকবে। জল পান করার সময় ভীত হবে। কারণ তোমার দেশের সব কিছুই ধ্বংস করা হবে। সেখানে বসবাসকারী সবার প্রতিই শত্রুরা অত্যন্ত নিষ্ঠুর হবে। 20 তোমাদের শহরে এখন অনেকেই বাস করে, কিন্তু ঐসব শহর ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। তোমাদের সমস্ত দেশকেই ধ্বংস করা হবে। তখন তোমরা জানবে যে আমিই প্রভু।’”

21 তখন প্রভুর বাক্য আমার কাছে এল। তিনি বললেন, 22 “মনুষ্যসন্তান, ইস্রায়েলে লোকে কেন এই ছড়াটি বলে:

‘দুর্দশা আসবে না চট করে,
    দর্শনগুলো ফলবে না রে।’

23 “ঐ লোকদের বলো যে প্রভু তাদের ঈশ্বর তাদের ছড়াটি থামিয়ে দেবেন। ইস্রায়েল সম্বন্ধে আর তারা ওসব বলবে না, কিন্তু এখন এই ছড়াটি আবৃত্তি করবে:

‘দুর্দশা আসবে শীঘ্রই।
    দর্শনগুলো সব ফলবে ওরে।’

24 “সত্যি সত্যিই ইস্রায়েলে আর কোন মিথ্যা দর্শন থাকবে না। আর কোন জাদুকর থাকবে না যারা মিথ্যা করে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বলে। 25 কারণ আমিই প্রভু আমি যা বলতে চাই তা বলব, আর তাই ঘটবে। আর আমি সময় দীর্ঘ হতে দেব না। ঐসব দুর্ভোগ খুব শীঘ্রই আসছে তোমাদের জীবন কালেই। ওহে বিদ্রোহী বংশ আমি যখন কিছু বলি, তা ঘটে।” প্রভু আমার সদাপ্রভু এইসব কথা বলেন।

26 তখন প্রভুর বাক্য আমার কাছে এল। তিনি বললেন: 27 “মনুষ্যসন্তান, ইস্রায়েলের লোকরা মনে করে যে সব দর্শন আমি তোমায় দিচ্ছি তা সুদূর ভবিষ্যতের। তারা মনে করে তুমি এমন বিষয়ে কথা বলছ যা এখন থেকে বহু বছর পরে ঘটবে। 28 তাই তুমি অবশ্যই তাদের এইসব কথা বলবে, ‘প্রভু আমার সদাপ্রভু বলেন: আমি আর দেরী করব না। যদি আমি কিছু ঘটবে বলে বলি তবে তা ঘটবেই!’” প্রভু আমার সদাপ্রভু ঐসব কথা বলেছেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International