Chronological
1 এইগুলি হল যিরমিয়র বার্তাসমূহ। যিরমিয় ছিলেন হিল্কিয়ের পুত্র। যাজক পরিবারের সন্তান যিরমিয় বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর অঞ্চল অনাথোৎ শহরে বাস করতেন। 2 যিহূদার রাজা আমোনের পুত্র যোশিয়র ত্রয়োদশ বছরের রাজত্বকালে[a] প্রভু প্রথম যিরমিয়র সঙ্গে কথা বলেছিলেন। 3 যোশিয়র পুত্র সিদিকিয়র একাদশ বছরের রাজত্বকাল পর্যন্ত অর্থাৎ ঐ বছরের পঞ্চম মাসে বন্দীদের জেরুশালেম থেকে নিয়ে আসার সময় পর্যন্ত যিরমিয় ঈশ্বরের কাছ থেকে বার্তা পেয়েছিলেন।
ঈশ্বর যিরমিয়কে ডাকলেন
4 যিরমিয়ের কাছে প্রভুর বার্তা পৌঁছালো।
5 প্রভুর বার্তা ছিল এই রূপ:
“তোমাকে আমি তোমার মাতৃগর্ভে রূপ দেবার আগেই জানতাম।
তোমার জন্মের আগে থেকেই
আমি তোমাকে একটি বিশেষ কাজের জন্য নির্বাচন করে রেখেছিলাম।
আমি তোমাকে জাতিসমূহের ভাববাদী হিসেবে মনোনীত করেছিলাম।”
6 যিরমিয় তখন বললেন, “কিন্তু প্রভু সর্বশক্তিমান, আমি তো কথাই বলতে জানি না। আমি একজন বালক মাত্র।”
7 কিন্তু প্রভু আমাকে বললেন,
“নিজেকে বালক বলো না,
যেখানে আমি তোমাকে পাঠাবো সেখানেই তোমাকে যেতে হবে।
আমি তোমাকে যা যা বলতে বলব তুমি কেবল তাই-ই বলবে।
8 কাউকে কখনও ভয় পাবে না।
আমি সব সময় তোমার সঙ্গেই আছি এবং আমিই তোমাকে রক্ষা করবো।”
এই হল প্রভুর বার্তা।
9 তারপর প্রভু তাঁর বাহু প্রসারিত করে আমার ঠোঁট স্পর্শ করে বললেন,
“যিরমিয়, আমি আমার শব্দ তোমার ঠোঁটে স্থাপন করলাম।
10 আজ থেকে আমি তোমাকে এই জাতিগুলির এবং রাজ্যগুলির ভার দিলাম।
তুমি তাদের উৎপাটন করবে এবং তাদের ছিঁড়ে ফেলে দেবে।
তুমি তাদের ধ্বংস করবে এবং ক্ষমতাচ্যুত করবে।
তুমিই সৃষ্টি করবে এবং বপণ করবে।”
দুটি দর্শন
11 প্রভুর এই বার্তা আমার কাছে এল: “যিরমিয়, কি দেখতে পাচ্ছো তুমি?”
আমি প্রভুকে বললাম, “বাদাম কাঠের তৈরী একটি লাঠি দেখতে পাচ্ছি।”
12 প্রভু আমাকে বললেন, “তুমি ঠিকই দেখেছ এবং তোমার প্রতি আমার কথাগুলো যাতে সত্য হয় তার সম্বন্ধে নিশ্চিত হবার জন্য আমি লক্ষ্য রাখছি।”
13 আবার প্রভুর বার্তা আমার কাছে এসে পৌঁছালো: “যিরমিয়, এবার তুমি কি দেখতে পাচ্ছো?”
আমি উত্তর দিলাম, “একটি ফুটন্ত গরম জলভর্ত্তি পাত্র দেখতে পাচ্ছি। পাত্রটির উত্তর দিকের অগ্রভাগ উথলে পড়ছে।”
14 প্রভু আমাকে বললেন, “উত্তর দিক থেকে ভয়ানক কিছু ঘটতে চলেছে।
এটি এই দেশের সমস্ত লোকের ওপর ঘটবে।
15 খুব অল্প কালের মধ্যে, আমি উত্তর দিকের দেশগুলির সমস্ত লোকদের ডাকব।”
প্রভু এই কথাগুলি বললেন।
“ওই দেশগুলির রাজারা এসে
জেরুশালেমের ফটকের কাছে সিংহাসন প্রতিষ্ঠা করবে।
তারা জেরুশালেমের প্রাচীর আক্রমণ করবে।
তারা পাশাপাশি যিহূদার প্রতিটি শহর আক্রমণ করবে।
16 এবং আমি আমার লোকদের বিরুদ্ধেই রায় ঘোষণা করব।
আমি এরকম করব কারণ ওরা খারাপ মানুষ এবং ওরা আমার বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে।
ওরা অন্য দেবতাদের প্রতি উৎসর্গ নিবেদন করেছে।
নিজেদের হাতে গড়া মূর্ত্তিকে পূজা করেছে।
17 “সুতরাং যিরমিয় তৈরী হও।
উঠে দাঁড়াও এবং লোকদের সঙ্গে কথা বলো।
আমি তোমাকে যা যা বলতে বলেছি তাদের তুমি তাই বলবে।
তাদের সামনে ভয় পেয়ো না।
এই লোকদের সম্বন্ধে ভয় পেয়ো না,
নাহলে আমি কিন্তু ওদের ভয় পাওয়ার জন্য তোমাকে একটি ভাল কারণ দেব।
18 আর আমি আজ থেকে তোমাকে
দুর্ভেদ্য এক নগরীর মতো তৈরী করব।
তুমি লৌহ-স্তম্ভের মতো কঠিন,
পিতলের দেওয়ালের মতো নিরেট।
এই যিহূদা দেশের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে
দাঁড়াতে তুমি সক্ষম হবে।
সে যেই হোক্, রাজা অথবা নেতা,
যাজক অথবা সাধারণ মানুষ,
সবার চাইতে তুমিই হবে সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিধর।
19 সারা দেশের মানুষ তোমার সঙ্গে লড়াই করলেও,
তোমাকে কেউ হারাতে পারবে না।
কারণ আমি সব সময় তোমার সঙ্গে আছি।
আমিই তোমাকে রক্ষা করব।”
এই হল প্রভুর বার্তা।
যিহূদা বিশ্বস্ত ছিল না
2 প্রভুর বার্তা পৌঁছেছিল যিরমিয়র কাছে। প্রভুর বার্তা ছিল: 2 “যিরমিয় যাও এবং জেরুশালেমের লোকদের সঙ্গে কথা বল। তাদের বলো:
“‘যখন তোমরা একটি নবীন জাতি ছিলে, তখন তোমরা আমার প্রতি খুব বিশ্বস্ত ছিলে।
আমাকে অনুসরণ করতে নতুন কনের (প্রেমের) মতো।
মরুভূমির মাঝেও তোমরা আমাকে অনুসরণ করেছ।
অনুসরণ করে গিয়েছো মৃত্তিকার মধ্যে দিয়ে—অথচ যে মৃত্তিকায় কখনও চাষ করা হয়নি।
3 ইস্রায়েলের লোকরা ছিল প্রভুর পবিত্র উপহার।
তারা ছিল প্রথম ফল যেগুলি ঈশ্বরের দ্বারা ফলাবার কথা ছিল।
যারা তাদের ক্ষতি করতে চাইত, তারা দোষী সাব্যস্ত হত।
এইসব দুষ্ট লোকদের জীবনে খারাপ ঘটনাসমূহ ঘটেছিল।’”
এই ছিল প্রভুর বার্তা।
4 হে যাকোবের পরিবার, ইস্রায়েল পরিবারের সকল গোষ্ঠী
প্রভুর বার্তা শোন।
5 প্রভু যা বললেন তা হল,
“তোমরা কি মনে করো যে আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি সুবিচার করি নি?
সেই জন্যই কি তারা আমার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে?
তোমাদের পূর্বপুরুষরা মূল্যহীন মূর্ত্তিসমূহের পূজা করেছিল
এবং নিজেরাই মূল্যহীন হয়ে পড়েছিল।
6 তোমাদের পূর্বপুরুষরা বলেনি যে,
‘তিনি কোথায় যিনি আমাদের
শুষ্ক পাথুরে জমির মধ্য দিয়ে, অন্ধকার বন্ধ্যা জমির মধ্য দিয়ে
এবং বিপজ্জনক রাস্তার মধ্য দিয়ে
মরুভূমি পার করে এনেছিলেন?’”
7 প্রভু বললেন, “আমিই সেই
যে তোমাদের এই ভালো উর্বর দেশে নিয়ে এসেছিলাম
যাতে তোমরা এর ফল ও শস্যসমূহ খেতে পাও এবং খাদ্য জোগাতে পারো।
তোমরা আমার মাটিকে ‘নোংরা’ করে দিলে।
আমি তোমাদের একটি ভালো জমি দিয়েছিলাম,
কিন্তু তোমরা তাকে একটি খারাপ জায়গায় পরিণত করে দিলে।
8 “যাজকরা প্রশ্ন করেনি,
‘কোথায় সেই প্রভু?’
যারা বিধিটি জানত তারা আমাকে জানতে চায়নি।
ইস্রায়েলের নেতারা আমার বিরুদ্ধাচরণ করেছিল।
ভাববাদীগণ বাল মূর্ত্তির নাম নিয়ে ভাববাণী করেছিল।
তারা মূল্যহীন মূর্ত্তিগুলোর পূজা করেছিল।
তারা মূর্ত্তির অজুহাত দেখিয়ে ইস্রায়েলের লোকদের পূজায় বসিয়েছে।
ইস্রায়েলবাসী ভেবেছিল এই মূর্ত্তিই তাদের জন্য ফলনশীল জমি তৈরী করেছে।
তারা বিশ্বাস করেছিল,
মূর্ত্তিই বুঝি ঝড়, বৃষ্টি এনে দিয়েছে।”
9 প্রভু বললেন, “তাই আমি তোমাদের আবার অভিযুক্ত করছি।
অভিযুক্ত করব তোমাদের পুত্র পৌত্রগণদেরও।
10 যাও, সমুদ্রের ওপারে কিত্তীয়দের দ্বীপে।
কোন একজনকে কেদরের দেশে পাঠাও।
দেখ আর কেউ কখনও এরকম করেছে কিনা।
সেখানে দেখো কেউ তোমাদের মতো এই কাজ করছে কিনা।
11 কোনও দেশ কি তাদের পুরানো দেবতাকে ছুঁড়ে ফেলে
নতুন দেবতার উপাসনা করেছে?
কিন্তু তাদের সেই দেবতারা সত্যিকারের দেবতা নয়।
কিন্তু আমার লোকরা তাদের মহিমাময় ঈশ্বরের পরিবর্তে
মূল্যহীন মূর্ত্তিগুলোর পূজা শুরু করেছিল।
12 “হে আকাশমণ্ডল, যা সব ঘটেছিল তাতে আশ্চর্য হও!
প্রচণ্ড ভয়ে কাঁপতে থাকো!”
এই ছিল প্রভুর বার্তা।
13 “আমার দেশের লোকরা দুটি ভুল কাজ করেছে।
প্রথমতঃ যদিও আমি একটি জীবন্ত জলের ঝর্ণা
তবু তারা আমার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে।
আমিই জলের অস্তিত্ব।
দ্বিতীয়তঃ তারা নিজেদের জন্য কূপ খনন করেছে।
তারা ভিন্ন দেবতার উপর আস্থা রেখেছে।
কিন্তু সেগুলি ভাঙা কূপ।
জলাধার হতে পারে না।
14 “ইস্রায়েলবাসীরা কি দাস হয়ে গিয়েছে?
তারা কি সেই লোকের মত হয়ে গেছে যে দাস হয়েই জন্মেছিল?
লোকরা কেন ইস্রায়েলীয়দের ধনসম্পদ নিয়ে নিয়েছিল?
15 সিংহ শাবকরা (শত্রুরা) ইস্রায়েলের প্রতি গর্জন করে উঠেছিল।
তারা তার প্রতি হুংকার করেছে।
তারা ইস্রায়েল দেশটিকে ধ্বংস করেছে।
এমনকি শহরগুলিকে পোড়ানো হয়েছিল এবং সেখানে কোন মানুষ পড়ে ছিল না।
16 মিশরের দুটি শহর নোফের এবং তফনহেষের লোকরাও
তোমাদের মাথাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
17 এই ক্ষতির কারণ তোমরা নিজেরাই।
কেননা প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর যখন তোমাদের সঠিক পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন
তখন তোমরা নিজেরাই তাঁকে ত্যাগ করে দূরে সরে গিয়েছ।
18 যিহূদার লোকরা, এবার ভাবো:
ওটি কি তোমাদের মিশরে যেতে সাহায্য করেছিল?
ওটি কি তোমাদের সাহায্য করেছিল নীল নদের জল পান করতে?
না! সেটি কি তোমাদের অশূরে যেতে সাহায্য করেছিল?
ওটি কি তোমাদের সাহায্য করেছিল ফরাৎ নদীর জল পান করতে? না!
19 না! তোমরা খারাপ কাজ করেছিলে
এবং সেই জন্য তোমাদের শাস্তি পেতে হবে।
তোমাদের বিঘ্নসমূহ আসবে
এবং সেই সংকট তোমাদের উচিৎ শিক্ষা দেবে।
তোমরা একবার ভেবে দেখো, তাহলেই বুঝতে পারবে ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার পরিণাম কি মারাত্মক।
আমাকে ভয় না পাওয়া এবং সম্মান না করা নিতান্তই মুর্খামি।”
এই ছিল প্রভু সর্বশক্তিমানের বার্তা।
20 “যিহূদা, অনেককাল আগে তুমি তোমার জোয়াল ভেঙেছিলে।
তুমি আমাকে তোমায় নিয়ন্ত্রণ করতে অস্বীকার করেছিলে।
তুমি আমাকে বলেছিলে, ‘আমি তোমার অনুগামী নই।’
সেই সময় থেকে, প্রতিটি পর্বতের চূড়ায়
এবং প্রতিটি গাছের নীচে তুমি বেশ্যা বৃত্তিতে লিপ্ত ছিলে।
21 যিহূদা, আমি তোমাকে বিশেষ দ্রাক্ষা গাছ হিসেবে বপন করেছিলাম।
তোমার বীজে তো কোন দোষ ছিল না।
তাহলে কি করে তুমি একটি ভিন্ন জাতের দ্রাক্ষা কুঞ্জে পরিণত হলে, যেটি শুধুই বাজে দ্রাক্ষা ধারণ করে?
22 তুমি যদি বার বার সাবান দিয়ে নিজেকে ধুয়ে ফেল,
তবুও আমি তোমার দোষ দেখতে সক্ষম হবো।”
এই ছিল প্রভু ঈশ্বরের বার্তা।
23 “যিহূদা, কি করে তুমি বলতে পারলে,
‘আমি অশুচি নই, কারণ আমি বাল মূর্ত্তির পেছনে ছুটে বেড়াই নি?’
একবার ভাবো এই উপত্যকায়
তুমি আর কি কি করেছিলে।
তুমি এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায়
দৌড়ে বেড়ানো একটি স্ত্রী-উটের মত।
24 তুমি একটি বন্য গর্দ্দভীর মতো যে মরুভূমিতে বাস করে।
কামাবেশে সে যখন বাতাসের গন্ধ শোঁকে
তখন কে তাকে থামাতে পারে?
সমস্ত পুরুষ যারা তাকে চায়, তাদের নিজেদের ক্লান্ত করবার দরকার নেই
কারণ কামক্রিয়ার সময় তারা তাকে সহজেই খুঁজে পাবে।
25 যিহূদা মূর্ত্তির পিছনে ছোটা বন্ধ করো।
ঐ দেবতাদের জন্য পিপাসিত হওয়া বন্ধ করো।
কিন্তু তুমি বললে, ‘আমি ফিরতে পারব না।
আমি ঐ দেবতাদের ভালোবাসি।
আমি ওদেরই পূজা করতে চাই।’
26 “একজন চোর চুরি করবার সময়
মানুষের হাতে ধরা পড়লে যেমন লজ্জা পায়,
তেমনি ইস্রায়েলীয়রা লজ্জিত,
ইস্রায়েলের রাজারা, যাজকরা এবং ভাববাদীরাও লজ্জিত।
27 বস্তুত, তারা একটি কাঠের টুকরোকে বলে,
‘তুমি আমার পিতা!’
তারা একটি পাথরকে বলে,
‘তুমি আমাকে জন্ম দিয়েছ।’
তারা আমার দিকে তাকায় না।
তারা আমার দিকে তাদের পেছন ফিরিয়েছে।
কিন্তু বিপদে পড়লে
এই যিহূদার লোকরাই লজ্জিত হয়ে আমাকে বলবে,
‘এসো, আমাদের উদ্ধার করো।’
28 দেখা যাক, তোমাদের তৈরী করা মূর্ত্তিরা এসে বিপদ থেকে তোমাদের উদ্ধার করতে পারে কি না?
যিহূদা তোমাদের যত শহর, তত দেবতা।
দেখি তারা কিভাবে তোমাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করে।
29 “কেন আমার সঙ্গে তর্ক করছো?
তোমরা সবাই আমার বিরুদ্ধে চলে গিয়েছো।”
এই ছিল প্রভুর বার্তা।
30 “আমি তোমাদের, যিহূদার লোকদের শাস্তি দিয়েছিলাম,
কিন্তু সেটা সাহায্য করেনি।
তোমরা কোন শিক্ষা পাও নি।
যে সব ভাববাদীরা তোমাদের কাছে এসেছিল তাদেরও তরবারি দিয়ে হত্যা করেছো।
তোমরা হিংস্র সিংহের মতো ভাববাদীদের হত্যা করেছো।”
31 ওহে, এই প্রজন্মের লোকরা, প্রভুর বার্তা মন দিয়ে শোন!
“আমি কি ইস্রায়েলীয়দের কাছে মরুভূমির মতো শুষ্ক ছিলাম?
আমি কি তাদের কাছে শুধুই অন্ধকার এবং বিপদের পূর্বাভাস ছিলাম?
আমার লোকরা বলেছে, ‘আমরা স্বাধীনভাবে নিজেদের মতো চলতে পারি।
আমরা আর তোমার কাছে ফিরে আসব না প্রভু!’
তারা একথাগুলো কি করে বলতে পারল?
32 কোন যুবতী তার গহনাকে ভুলতে পারে না।
কোন কনে তার বিয়ের পোশাকের কথা ভুলে যায় না।
কিন্তু আমার লোকরা আমাকে বহুবার ভুলে গিয়েছে।
33 “যিহূদা, তুমি খুব ভালো করেই জানো কিভাবে প্রেমিকদের (মূর্ত্তির) পেছনে দৌড়তে হয়।
তুমি কুকর্ম করতে শিখে গিয়েছিলে।
34 তাই তোমার হাতে নিরীহ গরীব মানুষের রক্তের দাগ।
সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করেও তোমার শান্তি হয় নি।
তুমি তাদের তোমার বাড়ীতে চুরি করতে দেখনি।
তুমি তাদের বিনা কারণে মেরে ফেলেছিলে।
35 (এত কিছুর পরও) তুমি কিন্তু বলছো, ‘আমি নির্দোষ।
ঈশ্বর আমার প্রতি ক্রুদ্ধ নন।’
তাই আমিও তোমাকে মিথ্যে বলার জন্য দোষী সাব্যস্ত করলাম।
কেননা তুমি বলছো, ‘আমি কোন অন্যায় করি নি।’
36 তুমি সহজেই নিজের মন বদলাও।
অশূর তোমায় হতাশ করেছিল বলে তুমি অশূরকে ত্যাগ করেছিলে।
এবং তুমি সাহায্যের জন্য মিশরের দিকে ঘুরেছিলে।
মিশরও তোমাকে নিরাশ করবে।
37 তাই তুমি মিশরও ত্যাগ করবে।
এবার তুমি লজ্জায় মুখ লুকোলে।
তুমি যে সমস্ত দেশগুলিকে বিশ্বাস করেছিলে তারা কেউই তোমাকে জেতার জন্য সাহায্য করতে পারেনি।
কারণ প্রভু সেই দেশগুলিকে বাতিল করেছিলেন।
3 “একজন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে যাওয়ার পর, সেই স্ত্রী যদি অন্য এক পুরুষের সঙ্গে পুনরায় ঘর বাঁধে,
তাহলে কি সেই স্বামী আবার তার প্রাক্তন স্ত্রীর কাছে ফিরে যায়?
না। কিন্তু সে যদি ঐ মহিলাটির কাছে আবার ফিরে যায় তাহলে সেই দেশ অপবিত্র হয়ে যাবে।
যিহূদা তুমিও পতিতার মতো, তুমি এত জন প্রেমিকদের (মূর্ত্তির) সঙ্গে ছিলে,
তুমি কি এখন আমার কাছে ফিরে আসবে?”
এই ছিল প্রভুর বার্তা।
2 “যিহূদা বৃক্ষ শূন্য পর্বতশৃঙ্গগুলোর দিকে তাকাও।
সেখানে এমন কোন শৃঙ্গ আছে কি যেখানে তুমি তোমার
প্রেমিকদের (মূর্ত্তির) সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হও নি?
তোমার সতীত্ব লঙ্ঘিত হয়নি?
আরববাসী যেমন মরুভূমিতে অপেক্ষায় বসে থাকে
তেমন তুমিও প্রত্যেকটি রাস্তায় অপেক্ষা করেছো।
তোমার এইসব প্রিয় প্রেমিকদের জন্য।
তুমিই অসংখ্য খারাপ কাজ আর ব্যভিচারের মাধ্যমে দেশের মাটিকে ‘অপবিত্র’ করেছ।
তুমি আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছো।
3 তোমার পাপের কারণে দেশ জুড়ে খরা দেখা দিয়েছে
এবং বসন্তকালীন বৃষ্টি আসেনি।
তবুও তোমার লজ্জাহীন মুখে পতিতার কামুক দৃষ্টি।
কৃতকার্যের জন্য তোমার কোনও লজ্জা নেই, অনুশোচনা নেই।
4 কিন্তু তুমি আমাকে ‘পিতা’ বলে ডাকছো।
তুমি বলছ, ‘ছোটবেলা থেকেই তুমি আমার বন্ধু।’
5 তুমি এও বলেছিলে যে,
‘ঈশ্বর আমার প্রতি সব সময় ক্রুদ্ধ হয়ে থাকবেন না।
ঈশ্বরের ক্রোধ চিরকাল থাকে না।’
“যিহূদা, তুমি একথা বললেও
যত রকম শয়তানি কাজ করা সম্ভব তুমি করেছ।”
দুই কুটিল বোন: ইস্রায়েল এবং যিহূদা
6 যিহূদার রাজা যোশিয়ের সময়ে প্রভু আমার সঙ্গে কথা বললেন। প্রভু বললেন, “যিরমিয়, ইস্রায়েল যে সব খারাপ কাজ করেছে তা কি তুমি দেখেছ? তুমি কি দেখেছ সে আমার প্রতি কতটা অবিশ্বাসী ছিল? প্রত্যেকটি মূর্ত্তির সঙ্গে সে ব্যভিচারে মেতে উঠেছিল। ব্যভিচারের সাক্ষী রয়েছে প্রতিটি পর্বতশৃঙ্গ, প্রতিটি গাছের ছায়া। 7 আমি নিজের মনে ভেবেছিলাম, ‘এইবারে নিশ্চয়ই ইস্রায়েল তার সমস্ত খারাপ কাজ করে আমার কাছে ফিরে আসবে।’ কিন্তু সে ফিরে আসেনি। 8 ইস্রায়েলের মতোই বিশ্বাসঘাতক তার বোন যিহূদাও স্বচক্ষে দেখেছিল তার দিদির ব্যভিচার। ইস্রায়েলের এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্য আমি তাকে ত্যাগ করেছিলাম। ইস্রায়েলের এই দশা দেখে তার বিশ্বাসঘাতক বোন যিহূদা কিন্তু এতটুকু শঙ্কিত হয়নি। আমার বিধানে যিহূদা ভীত হবার পরিবর্তে সে দিদির প্রদর্শিত পথেই চলতে শুরু করেছিল। সেও অবশেষে পতিতার মতো আচরণ শুরু করল। 9 ব্যভিচারিতায় লিপ্ত হয়ে যিহূদাও তার দেশকে কলঙ্কিত করল। সে কাঠের এবং পাথরের মূর্ত্তিসমূহ পূজো করে ব্যভিচার করেছিল। 10 যিহূদা, ইস্রায়েলের বিশ্বাসঘাতক বোন আমার কাছে কখনোই সর্বান্তঃকরণে ফিরে আসেনি। শুধু বারবার ফিরে আসার ছল করেছিল।” এই ছিল প্রভুর বার্তা।
11 প্রভু আমাকে বললেন, “ইস্রায়েল আমার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল না। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতার প্রশ্নে যিহূদার চেয়ে তার অজুহাত অপেক্ষাকৃত উৎকৃষ্ট ছিল। 12 যিরমিয় উত্তর দিকে তাকিয়ে দেখ এবং এই বার্তা বল:
“‘ওহে বিশ্বাসহীন ইস্রায়েলবাসী, তোমরা ফিরে এসো।’
এই ছিল প্রভুর বার্তা।
‘আমি তোমাদের প্রতি আর কঠোর হবো না।
আমি দয়ার সাগর।’
‘আমি চিরকাল তোমাদের প্রতি ক্রুদ্ধ থাকব না।
এই ছিল প্রভুর বার্তা।’
13 তোমাদের পাপকে তোমাদের উপলব্ধি করা এবং স্বীকার করা উচিৎ।
তোমরা প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের বিরুদ্ধে গিয়েছিলে—
সেটাই হল তোমাদের পাপ।
তোমরা প্রতিটি গাছের নীচে অন্য জাতিসমূহের মূর্ত্তিদের পূজো করেছিলে।
তোমরা আমাকে মান্য করোনি।
তাদের প্রতিষ্ঠা করেছিলে প্রতিটি গাছের তলায়।”
এই ছিল প্রভুর বার্তা।
14 “হে লোকরা, তোমরা বিশ্বস্ত নও। কিন্তু ফিরে এসো আমার কাছে!” এই ছিল প্রভুর বার্তা। “আমি হলাম তোমাদের প্রভু। এদেশের প্রত্যেকটি শহর থেকে একজন এবং প্রত্যেকটি পরিবার থেকে দুজনকে আমি সিয়োনে নিয়ে আসব। 15 তারপর আমি তোমাদের নতুন শাসকগোষ্ঠী নির্বাচন করে দেব। সেই শাসকবৃন্দ আমার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে। তারা জ্ঞান এবং বিবেচনার সঙ্গে তোমাদের নেতৃত্ব দেবে। 16 সে সময় তোমরা সংখ্যায় বাড়বে। অনেকেই তখন সে দেশে বাস করবে।” এই ছিল প্রভুর বার্তা।
“কেউ সেই সময় আর বলতে পারবে না যে আমার মনে পড়ে সেইসব দিনের কথা যখন আমাদের কাছে প্রভুর সাক্ষ্যসিন্দুক ছিল। এমন কি তারা আর সেই পবিত্র সিন্দুক নিয়ে ভাববেও না। তারা সেই সিন্দুককে মনেও রাখতে পারবে না। তারা সেটা হারিয়েও ফেলবে না। তারা আর কখনও অন্য একটি পবিত্র সিন্দুক তৈরী করবে না। 17 সেই সময় এই জেরুশালেম শহর ‘প্রভুর সিংহাসন’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠবে। এবং প্রভুর নামকে সম্মান জানাতে সমস্ত জাতি একত্রে জেরুশালেমে এগিয়ে আসবে। তারা আর তাদের উদ্ধত, জেদী এবং শয়তান হৃদয়কে অনুসরণ করবে না। 18 সেই দিনগুলিতে যিহূদা এবং ইস্রায়েলের পরিবারবর্গ একসঙ্গে মিলিত হবে। এবং তারা একসঙ্গে উত্তর দিকের দেশ থেকে, যে দেশ আমি অধিকারের জন্য তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলাম সে দেশে আসবে।”
19-20 আমি, প্রভু মনে মনে বললাম,
“আমি তোমাদের সঙ্গে নিজের সন্তানের মতো ব্যবহার করতে চাই।
আমি তোমাদের একটা মনোরম দেশ উপহার দিতে চাই,
যেটা অন্য সকল দেশের চেয়ে সেরা।
আমি ভেবেছিলাম তোমরা আমাকে ‘পিতা’ বলে ডাকবে।
আমাকেই অনুসরণ করবে।
কিন্তু তোমরা একটি নারীর মতো যে তার স্বামীর প্রতি অবিশ্বস্ত।
ইস্রায়েলের পরিবারবর্গ, তোমরা আমার প্রতি বিশ্বস্ত থাকলে না।”
এই ছিল প্রভুর বার্তা।
21 তোমরা বন্ধ্যা পাহাড়গুলি থেকে কান্না শুনতে পাবে।
ইস্রায়েলীয়রা কাঁদছে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করছে।
তারা শয়তান হয়ে উঠেছিল।
তারা ভুলে গিয়েছিল তাদের প্রভু ঈশ্বরকে।
22 প্রভু আরও বললেন, “হে ইস্রায়েলীয়রা, তোমরা আমার প্রতি বিশ্বস্ত নও।
তবু তোমরা আমার কাছে ফিরে এসো
আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব।”
ইস্রায়েলীয়দের বলা উচিৎ, “তুমিই প্রভু আমাদের ঈশ্বর।
আমাদের তোমার কাছেই ফিরে আসা উচিৎ।
23 পাহাড়ের উপর মূর্ত্তিপূজো
এবং উচ্ছৃঙ্খল অনুষ্ঠান করে আমরা ভুল করেছিলাম।
ইস্রায়েলের মুক্তি প্রভু,
আমাদের ঈশ্বরের কাছ থেকে অবশ্যই আসে।
24 ঐ বাল মূর্ত্তি আমাদের পূর্বপুরুষদের
সমস্ত ধনসম্পদ খেয়ে ফেলেছে।
সে তাঁদের মেষ, গবাদিপশু,
পুত্র ও কন্যাদের খেয়ে ফেলেছে।
25 লজ্জায় আমাদের মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
আমাদের লজ্জা আমাদের কম্বলের মত ঢেকে ফেলুক।
আমরা আমাদের সর্বশক্তিমান প্রভুর বিরুদ্ধাচরণ করেছি।
আমাদের পিতৃপুরুষদের মতো আমরাও পাপ করেছি।
ছোটবেলা থেকেই আমরা আমাদের
প্রভু ঈশ্বরকে অমান্য করে এসেছি।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International