Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
2 রাজাবলি 22-23

যিহূদায় যোশিয়র শাসনকাল শুরু

22 যোশিয় যখন যিহূদার সিংহাসনে বসেন তাঁর বয়স ছিল মাত্র আট বছর! তিনি মোট 31 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মা ছিলেন বস্কতীর আদায়ার কন্যা যিদীদা। যোশিয় প্রভুর অভিপ্রায় অনুযায়ী, তিনি যে ভাবে বলেছিলেন ঠিক সে ভাবেই রাজ্য শাসন করেছিলেন। তিনি তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের মতোই ঈশ্বরকে অনুসরণ করেছিলেন।

যোশিয় মন্দির সংস্কারের নির্দেশ দিলেন

তাঁর রাজত্বের 18তম বছরে, যোশিয় মশুল্লমের পৌত্র ও অৎসলিয়ের পুত্র সচিব শাফনকে প্রভুর মন্দিরে পাঠিয়ে ছিলেন। প্রধান যাজক হিল্কিয়কে লোকরা প্রভুর মন্দিরে যা প্রণামী দেয় তা সংগ্রহ করতে বলেন। তিনি বলেন, “দারোয়ানরা দর্শনার্থীদের কাছ থেকে এই প্রণামী নিয়ে থাকে। যাজকদের এই টাকা দিয়ে মিস্ত্রি ডেকে প্রভুর মন্দির সারানো উচিৎ‌। যাজক যেন অবশ্যই যে সমস্ত লোক প্রভুর মন্দির সারানোর কাজের তদারকি করবে, তাদের হাতে এইসব টাকাপয়সা তুলে দেন। এই টাকা দিয়ে ছুতোর মিস্ত্রি, পাথর খোদাইকার, পাথর কাটিয়েদের মাইনে দেওয়া ছাড়াও যেন প্রয়োজন মতো মন্দির সারানোর কাঠ, পাথর ও অন্যান্য জিনিসপত্র কেনা হয়। মিস্ত্রিদের গুণে টাকা পয়সা দেবার কোন দরকার নেই, কারণ ওরা সকলেই খুব বিশ্বাসী।”

মন্দিরে বিধিপুস্তক পাওয়া গেল

প্রধান যাজক হিল্কিয়, সচিব শাফনকে বললেন, “দেখো, আমি প্রভুর মন্দিরের ভেতরে বিধিপুস্তক খুঁজে পেয়েছি!” তিনি শাফনকে পুস্তকটি দিলে শাফন তা পড়ে দেখলেন।

অতঃপর সচিব শাফন গিয়ে রাজা যোশিয়কে মন্দির সম্পর্কিত সব কথাবার্তা বললেন। তিনি বললেন, “আপনার কর্মচারীরা মন্দিরের সমস্ত প্রণামী সংগ্রহ করে, প্রভুর মন্দির সংস্কারের জন্য তা যারা তদারকি করবে তাদের হাতে তুলে দিয়েছে।” 10 তখন সচিব শাফন রাজাকে বলল, “যাজক হিল্কিয়, আমাকে এই পুস্তকটি দিয়েছেন।” একথা বলে শাফন রাজাকে পুস্তকটি পড়ে শোনালেন।

11 বিধিপুস্তকে বর্ণিত কথা শুনে মহারাজ দুঃখ ও শোক প্রকাশের জন্য নিজের পরিধেয় পোশাক ছিঁড়ে ফেললেন। 12 তারপর তিনি যাজক হিল্কিয়, শাফনের পুত্র অহীকাম, মীখায়ের পুত্র অক্‌বোর, সচিব শাফন ও তাঁর নিজস্ব ভৃত্য অসায়কে ডেকে নির্দেশ দিলেন, 13 “আমার হয়ে, আমার প্রজাদের হয়ে, সমগ্র যিহূদার হয়ে প্রভুকে জিজ্ঞেস কর আমরা কি করব? খুঁজে পাওয়া এই বিধিপুস্তকের বাণী সম্পর্কেও তাঁকে প্রশ্ন করো। প্রভু আমাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন কারণ আমাদের পূর্বপুরুষরা এই বিধিপুস্তকের কথা আমাদের যা নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তা মেনে চলেন নি।”

যোশিয় এবং ভাববাদিনী হুল্দা

14 যাজক হিল্কিয়, অহীকাম, অক্‌বোর, শাফন আর অসায় তখন মহিলা ভাববাদিনী হুল্দার কাছে গেলেন। হুল্দা ছিলেন বস্ত্রাগারের তত্ত্বাবধায়ক হর্হসের পৌত্র, তিক্বেরের পুত্র ও শল্লুমের স্ত্রী, দ্বিতীয় বিভাগে থাকতেন। তাঁরা সকলে জেরুশালেমের কাছেই হুল্দার কাছে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে কথাবার্তা বললেন।

15 হুল্দা তাঁদের জানালেন, “প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলছেন: ‘তোমাকে আমার কাছে যে পাঠিয়েছে তাকে বল: 16 প্রভু বলছেন: আমি এই স্থান এবং এখানকার বাসিন্দাদের জীবনে দুর্যোগ ঘনিয়ে তুলছি। এই দুর্যোগের কথা, যিহূদার রাজা ইতিমধ্যেই যে বই পড়েছেন তাতে বর্ণিত আছে। 17 যিহূদার লোকরা আমায় ত্যাগ করে অন্য মূর্ত্তির সামনে ধুপধূনো দিয়েছে। তারা মূর্ত্তি পূজা করেছে। এসব করে আমায় ক্রুদ্ধ করে তুলেছে। আমি তাই এই জায়গার ওপর আমার ক্রোধ প্রকাশ করব। আগুনের শিখার মতো আমার ক্রোধাগ্নি কেউ নির্বাপিত করতে পারবে না!’

18-19 “যিহূদার রাজা যোশিয় তোমাদের প্রভুর কাছে পরামর্শ নিতে পাঠিয়েছেন, তাঁকে গিয়ে তোমরা প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলা যে সব কথা শুনলে তা জানাও। তোমরা সকলেই এখানে আর এখানকার লোকদের জীবনে কি ঘটতে চলেছে শুনলে। তোমাদের হৃদয় কোমল, আমি জানি এসব ভয়ঙ্কর কথা শুনে তোমাদের খুব খারাপ লেগেছে। তোমরা তোমাদের পোশাক ছিঁড়ে, কাঁদতে কাঁদতে শোকপ্রকাশ করেছ বলেই আমি তোমাদের কথা শুনেছি, প্রভু একথা বলেন। 20 ‘যাও, তোমরা সকলেই অন্তত শান্তিতে মরতে পারবে। প্রভু বলেছেন, তিনি জেরুশালেমে যে দুর্যোগ ঘনিয়ে তুলবেন তা তোমাদের দেখে যেতে হবে না।’”

তখন যাজক হিল্কিয়, অহীকাম, অক্‌বোর, শাফন আর অসায় রাজাকে গিয়ে এসব কথা জানালেন।

লোকে বিধির কথা শুনল

23 রাজা যোশিয় যিহূদা ও জেরুশালেমের সমস্ত নেতাদের এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে নির্দেশ দিলেন। তারপর তিনি প্রভুর মন্দিরে গেলেন। যিহূদা ও জেরুশালেমের সমস্ত লোক ও যাজকগণ, ভাববাদীগণ, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মহান ব্যক্তিও তাঁর সঙ্গে মন্দিরে গেল। তারপর তিনি প্রভুর মন্দিরে খুঁজে পাওয়া বিধিপুস্তকটি সবাইকে উচ্চস্বরে পড়ে শোনালেন।

স্তম্ভের পাশে দাঁড়িয়ে রাজা যোশিয় প্রভুর কাছে তাঁর সমস্ত বিধি ও নীতিগুলি মেনে চলবেন বলে প্রতিজ্ঞা করলেন। তিনি কায়মনোবাক্যে এই সমস্ত ও বিধিপুস্তকে যা কিছু বর্ণিত আছে তা পালনে প্রতিশ্রুত হলেন। সমস্ত লোক, রাজার প্রার্থনায় যে তাদেরও মত আছে তা দেখাতে উঠে দাঁড়ালো।

তারপর রাজা যোশিয়, প্রধান যাজক হিল্কিয়, অন্যান্য যাজকদের, মন্দিরের দাররক্ষী প্রভুর মন্দির থেকে বাল মূর্ত্তি, আশেরা ও নক্ষত্রদের পূজা ও আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত সমস্ত থালা ও অন্যান্য জিনিসপত্র বার করে আনতে নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি এইসব কিছু জেরুশালেমের বাইরে কিদ্রোণের উপত্যকায় নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে সেই ছাই বৈথেলে নিয়ে এলেন।

যিহূদার রাজারা হারোণের পরিবারের বাইরের কিছু কিছু সাধারণ লোককে যাজক হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। এইসব ভ্রান্ত যাজকরা জেরুশালেম ও যিহূদার সর্বত্র মূর্ত্তিদের জন্য বানানো উচ্চস্থানে বাল মূর্ত্তিকে, সূর্যকে, চাঁদকে, এবং নক্ষত্ররাজির উদ্দেশ্যে ধুপধূনো দিতো। যোশিয় এইসব আচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

তারপর প্রভুর মন্দির চত্বর থেকে আশেরার মূর্ত্তির জন্য পোঁতা সমস্ত খুঁটি উপড়ে তুলে শহরের বাইরে কিদ্রোণ উপত্যকায় নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে, সেই ছাই সাধারণ মানুষদের কবরে ছড়িয়ে দিলেন।

এরপর যোশিয় প্রভুর মন্দির চত্বরের ভেতরে বসবাসকারী পুরুষদেহ ব্যবসায়ীদের ঘরগুলো ভেঙে ফেললেন। গণিকারাও এইসব ঘরগুলো ব্যবহার করত এবং আশেরার মূর্ত্তির প্রতি তাদের আনুগত্য জানাতে ছোট ছোট ছাউনি টাঙাতো।

8-9 সে সময় যাজকরা যিহূদার বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে বসবাস করত এবং জেরুশালেমে প্রভুর মন্দিরের বেদীতে বলিদান না করে মূর্ত্তিসমূহের জন্য সর্বত্র বানানো উঁচু বেদীগুলোয় বলিদান করতো ও ধুপধূনো দিত। গেবা থেকে বের্শেবা পর্যন্ত সব জায়গাতেই এই বেদীগুলো ছিল। যাজকরা জেরুশালেমের মন্দিরে তাদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গার পরিবর্তে সাধারণ লোকদের সঙ্গে যেখানে খুশী বসে খামিরবিহীন রুটি খেত। যোশিয় সমস্ত যাজকদের জেরুশালেমে আসতে বাধ্য করে, সমস্ত উঁচু বেদী, নগরদ্বারের বাঁ পাশের যাবতীয় বেদী সবই ভেঙে দিয়েছিলেন।

10 হিন্নোম সোন উপত্যকার তোফতে মোলকের মূর্ত্তির উদ্দেশ্যে লোকরা বেদীতে নিজেদের ছেলেমেয়েকে আগুনে আহুতি দিত। যোশিয় এই পাপ আচরণ বন্ধ করার জন্য এই বেদী এমন ভাবে ভেঙে দিয়েছিলেন যাতে তা আর ব্যবহার করা না যায়। 11 যিহূদার আগের রাজারা প্রভুর মন্দিরের প্রবেশপথে নথন মোলক নামে এক গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীর ঘরের পাশে সূর্য দেবতাকে সম্মান জানানোর জন্য একটা ঘোড়ায় টানা রথ তৈরী করে দিয়েছিলেন। যোশিয় সেই রথের ঘোড়াগুলো সরিয়ে রথটাকে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন।

12 আগেকার রাজারা আহসের বাড়ির ছাদে এবং মনঃশি প্রভুর মন্দিরের দুটো উঠোনেই মূর্ত্তিসমূহের পূজোর জন্য যে বেদীগুলো বানিয়েছিলেন, যোশিয় সেই সব বেদী টুকরো টুকরো করে ভেঙে, ভাঙা টুকরোগুলো কিদ্রোণ উপত্যকায় ফেলে দেন।

13 রাজা শলোমনও অতীতে জেরুশালেমের কাছে বিনাশ পাহাড়ের দক্ষিণে এই ধরণের কিছু উঁচু বেদী বানিয়েছিলেন, যেখানে সীদোনীয়দের ঘৃণ্য মূর্ত্তি অষ্টোরতের পূজার জন্য এইসব বেদী ব্যবহার করা হত। এছাড়াও মহারাজ শলোমন মোয়াবীয়দের কমোশ ও আমোনীয়দের মিল্কম প্রমুখ ঘৃণ্য মূর্ত্তির জন্য যে সমস্ত উঁচু বেদী বানিয়েছিলেন, যোশিয় সে সমস্তই ভেঙে দিয়েছিলেন। 14 তিনি যাবতীয় স্মৃতিফলক, আশেরার খুঁটি ভেঙে দিয়ে সে সব জায়গায় নরকঙ্কাল ছড়িয়ে দেন।

15 নবাটের পুত্র যারবিয়াম ইস্রায়েলকে পাপ আচরণের পথে ঠেলে দিয়েছিলেন। তিনি বৈথেলে যে উচ্চস্থান বানান যোশিয় তা ভেঙে ধূলোয় মিশিয়ে, আশেরার খুঁটিতে আগুন ধরিয়ে দিলেন। 16 যোশিয় পর্বতের আশেপাশে তাকিয়ে অনেক কবরখানা দেখতে পেলেন। লোক পাঠিয়ে সেখান থেকে মৃত মানুষের হাড় তুলিযে এনে, যোশিয় সেই সমস্ত হাড় যজ্ঞবেদীতে পুড়িয়ে, যজ্ঞবেদী অশুচি করে দেন। ভাববাদীদের মুখ দিয়ে প্রভু, যারবিয়াম যখন সেই বেদীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, তখনই এইসব ভবিষ্যৎবাণী করিয়েছিলেন।

যোশিয় চারপাশে তাকিয়ে সেই ভাববাদীদের সমাধিস্থল দেখতে পেলেন।

17 যোশিয় প্রশ্ন করলেন, “ওটা কিসের ফলক?”

শহরের লোকরা তাঁকে উত্তর দিলো, “এটা সেই যিহূদা থেকে আসা ভাববাদীর কবর। আপনি বৈথেলের বেদীতে যা করলেন তা তিনি বহু দিন আগেই ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন।”

18 যোশিয় তখন বললেন, “দেখো ওঁর কবরে যেন কোন রকম হাত না পড়ে। ওঁকে শান্তিতে থাকতে দাও।” তখন লোকরা শমরিয়ার সেই ভাববাদীর সমাধিস্থল যে ভাবে ছিল, সে ভাবেই অবিকৃত অবস্থায় রেখে দিল।

19 শমরিয়ায় শহরগুলোয় মূর্ত্তিসমূহের বেদীর আশেপাশে যে সমস্ত মন্দির গড়ে উঠেছিল যোশিয় সেগুলোও ভেঙে দিয়েছিলেন। ইস্রায়েলের আগেকার রাজারা এই সমস্ত মন্দির বানিয়ে প্রভুকে খুবই অসন্তুষ্ট করে তুলেছিলেন। যোশিয় এইসব মন্দিরের দশা বৈথেলের বেদীর মতোই করেছিলেন।

20 যোশিয় শমরিয়ার উচ্চস্থানের সমস্ত যাজকদেরই হত্যা করলেন। তিনি বেদীর ওপরে মানুষের অস্থি পোড়ালেন। এইভাবে তিনি পূজার জায়গা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে জেরুশালেমে ফিরে গেলেন।

যিহূদার লোকদের নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন

21 এরপর যোশিয় সমস্ত লোকদের নির্দেশ দিলেন, “বিধিপুস্তকে যেভাবে লেখা আছে, সেভাবে তোমরা প্রভু তোমাদের ঈশ্বরের জন্য নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন কর।”

22 ইস্রায়েলে বিচারকদের শাসনকালের পর আর কেউ এভাবে নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন করেনি। ইস্রায়েল বা যিহূদার আর কোন রাজাই আগে কখনও এত সমারোহের সঙ্গে নিস্তারপর্ব পালন করেন নি। 23 যোশিয়র রাজত্বের 18তম বছরে লোকরা এই নিস্তারপর্ব পালন করেছিল।

24 যিহূদা ও জেরুশালেমে লোকরা প্রেতসাধনা, ডাকিনী-পিশাচ-তন্ত্রসাধনা, মূর্ত্তিপূজা প্রভৃতি যেসব ঘৃণ্য পাপ আচরণ করত, যাজক হিল্কিয়র খুঁজে পাওয়া বিধি অনুসারে যোশিয় এসবই সমূলে উৎপাটন করেন।

25 এর আগের আর কোন রাজাই যোশিয়র মত ছিলেন না। যোশিয় কায়মনোবাক্যে, সমস্ত হৃদয় ও শক্তি দিয়ে প্রভু ও মোশির বিধি অনুসরণ করে জীবনযাপন করেছিলেন। এখনো পর্যন্ত কোন রাজাই তাঁর মত শাসন করেন নি।

26 কিন্তু তবুও যিহূদার লোকদের ওপর থেকে প্রভুর রাগ পড়েনি। মনঃশির করা কার্যকলাপের জন্যই প্রভু তখনও তাদের ওপর রেগে ছিলেন। 27 প্রভু বলেছিলেন, “আমি ইস্রায়েলের লোকদের তাদের বাসভূমি ছাড়তে বাধ্য করেছিলাম। যিহূদার সঙ্গেও আমি তাই করব। যিহূদাকে আমার দুচোখের সামনে থেকে সরিয়ে দেব। এমনকি জেরুশালেমকেও আমি আর দেখতে চাই না। হ্যাঁ, যদিও আমি নিজেই ঐ শহর বেছে নিয়ে বলেছিলাম, ‘ওখানে আমার নাম থাকবে।’ কিন্তু আমি ঐ মন্দিরটিকেও ধ্বংস করে ফেলব।”

28 যোশিয় আর যা কিছু করেছিলেন, সে সবই যিহূদার রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে।

যোশিয়র মৃত্যু

29 যোশিয়র রাজত্বকালে মিশরের ফরৌণ-নখো ফরাৎ নদীর তীরে অশূর-রাজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যান। যোশিয় মগিদ্দোতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে, দেখা হওয়া মাত্র ফরৌণ-নখো তাঁকে হত্যা করেন। 30 যোশিয়র পদস্থ আধিকারিকরা রথে করে তাঁর মৃতদেহ মগিদ্দো থেকে জেরুশালেমে নিয়ে এসে তাঁকে তাঁর পরিবারের সমাধিস্থলে সমাধি দিলেন।

এরপর লোকরা যোশিয়র পুত্র যিহোয়াহসকে নতুন রাজা হিসেবে অভিষেক করলেন।

যিহোয়াহস যিহূদার রাজা হলেন

31 যিহোয়াহস 23 বছর বয়সে রাজা হয়ে মাত্র তিন মাসের জন্য জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মা ছিলেন লিব‌্নার যিরমিয়ের কন্যা হমূটল। 32 প্রভু যে সব কাজ করতে বারণ করেছিলেন, যিহোয়াহস সেই সমস্ত কাজ করেছিলেন। তিনি তাঁর অধিকাংশ পূর্বপুরুষদের মতই পাপের পথ অনুসরণ করেন।

33 ফরৌণ-নখো, যিহোয়াহসকে হমাৎ দেশের রিব‌্লাতে জেলে আটক করেন, ফলত যিহোয়াহসের পক্ষে আর জেরুশালেমে রাজত্ব করা সম্ভব হয় নি। তাঁকে, ফরৌণ-নখো 7500 পাউণ্ড রূপো এবং 75 পাউণ্ড সোনা দিতে বাধ্য করেছিলেন।

34 ফরৌণ, যোশিয়র আরে এক পুত্র। ইলিয়াকীমকে নতুন রাজা বানিয়ে তাঁর নাম পাল্টে যিহোয়াকীম রাখেন। আর যিহোয়াহসকে তিনি মিশরে নিয়ে যান। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। 35 যিহোয়াকীম ফরৌণকে সোনা ও রূপো দিলেন। কিন্তু তিনি সাধারণ লোককে ফরৌণ-নখোকে দেওয়ার জন্য দেশে কর ধার্য্য করলেন। তাই প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের সোনা ও রূপোর অংশ ফরৌণ-নখোকে দেওয়ার জন্য রাজা যিহোয়াকীমকে দিত।

36 যিহোয়াকীম 25 বছর বয়সে রাজা হয়ে এগারো বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মা ছিলেন রূমার পদায়ের কন্যা সবীদা। 37 যিহোয়াকীমও প্রভু যে সমস্ত কাজ করতে বারণ করেন, তাঁর অধিকাংশ পূর্বপুরুষদের মত সেই সমস্ত কাজ করেছিলেন।

2 বংশাবলি 34-35

যিহূদার রাজা যোশিয়

34 যোশিয় মাত্র আট বছর বয়সে রাজা হয়ে 31 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। যোশিয় প্রভু বর্ণিত সৎ‌ পথে জীবনযাপন করেছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের মতোই তিনি বহু সৎ‌কাজ করেন এবং এই পথ থেকে কখনও বিচ্যুত হননি। তাঁর রাজত্বের আট বছরে, যোশিয়, যখন তিনি তখনও একজন বালক মাত্র ছিলেন, ঈশ্বরকে খুঁজতে শুরু করেন, যিনি তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদ দ্বারা পূজিত। বারো বছর রাজত্ব করার পর, তিনি যিহূদা ও জেরুশালেম থেকে উঁচু স্থানগুলির উৎ‌পাটন, আশেরার খুঁটিগুলি, মূর্ত্তিসমূহ ও প্রতিকৃতি নির্মূল করার অভিযান শুরু করেন। লোকরা তাঁর আদেশে বালদেবের বেদী ও ধুপধূনো দেবার উঁচু বেদীগুলি ভেঙে ফেলেন। মূর্ত্তি ও প্রতিকৃতিগুলো ভেঙে গুঁড়ো করার পর তিনি সেই ধূলো বালদেবের মৃত উপাসকদের কবরে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। এবং যোশিয় বালের সেই সব যাজকদের হাড়গুলি এবং তাদের বেদীগুলি পুড়িয়ে ছাই করেন। মনঃশি থেকে ইফ্রয়িম, শিমিয়োন থেকে নপ্তালি—সমগ্র যিহূদা ও জেরুশালেম থেকে যোশিয় এভাবে মূর্ত্তিপূজোর অবসান ঘটিয়েছিলেন। এই সবকটি শহরে ও শহরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইস্রায়েলের সর্বত্র তিনি উচ্চস্থান ও আশেরার খুঁটি, দেবতাদের মূর্ত্তিসমূহ ভেঙে ধূলায় মিশিয়ে দিয়ে জেরুশালেমে ফিরে গেলেন।

যিহূদায় 18 বছর রাজত্ব করার পর এবং সেই ভূখণ্ডকে এবং মন্দিরকে শুদ্ধ করবার পর, যোশিয় অৎসলিয়র পুত্র শাফন, নগরপাল মাসেয় ও সচিব যোয়াহষের পুত্র যোয়াহকে প্রভুর মন্দিরটি সারানোর আদেশ দিলেন।

আদেশ পালন করতে এরা সকলে প্রথমে মহাযাজক হিল্কিয়র সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে লোকরা ঈশ্বরের মন্দিরের জন্য যে অর্থ দিয়েছেন তা তুলে দিলেন। লেবীয় দ্বাররক্ষীগণ এই অর্থ মনঃশি, ইফ্রয়িম, যিহূদা, বিন্যামীন, জেরুশালেম ও ইস্রায়েলে যারা থেকে গিয়েছিল, তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। তারপর তাঁরা জেরুশালেমে ফিরে গেলেন। 10 এরপর লেবীয়রা সেই অর্থ প্রভুর মন্দিরের কাজের তত্ত্বাবধায়কদের দিলেন। ক্রমানুসারে তত্ত্বাবধায়করা সেই অর্থ প্রভুর মন্দিরে যেসব শ্রমিক কাজ করবে তাদের দিলেন। 11 ছুতোরকে কড়িবর্গার জন্য কাঠ কিনতে এবং পাথর কেনবার জন্য পাথর কাটুরেদের অর্থ দিলেন। তাঁরা এটা করলেন কারণ যিহূদার আগের রাজারা মন্দিরের ইমারতগুলিকে ধ্বংস হয়ে যেতে দিয়েছিলেন। 12-13 নিযুক্ত শ্রমিকরা লেবীয় মরারি পরিবারের লেবীয় যহৎ‌ ও ওবদিয়র তত্ত্বাবধানে এবং কহাৎ‌ পরিবারের সখরিয় ও মশুল্লমের অধীনে মন প্রাণ দিয়ে কাজ করলো। যে সমস্ত লেবীয়রা দক্ষ গাইয়ে, বাজিয়ে ছিলেন তাঁরা শ্রমিকদের এবং যারা বিভিন্ন রকমের কাজ করেছিলেন, তাদের তত্ত্বাবধান করলেন। কিছু লেবীয় করনিক, অধিকারিক ও রক্ষী হিসেবে কাজ করলেন।

বিধিপুস্তক আবিষ্কার

14 সেই সময়, যখন লেবীয়রা প্রভুর মন্দির থেকে অর্থ বার করছিলেন, যাজক হিল্কিয়, মোশির মাধ্যমে প্রভু যে বিধিপুস্তকটি দিয়েছিলেন সেটিকে খুঁজে পেলেন। 15 উত্তেজিত হিল্কিয় তখন সচিব শাফনকে ডেকে বললেন, “আমি প্রভুর গৃহ থেকে বিধি পুস্তক খুঁজে পেয়েছি।” এবং তিনি শাফনকে সেটি দেখতে দিলেন। 16 শাফন তা রাজা যোশিয়র কাছে নিয়ে এসে বললেন, “আপনার কর্মচারীরা আপনার সমস্ত নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। 17 প্রভুর মন্দিরে যে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল তা দিয়ে ঠিকাদার আর মিস্ত্রিদের মজুরি দেওয়া হয়েছে।” 18 তারপর শাফন রাজা যোশিয়কে বললেন, “যাজক হিল্কিয় আমায় একটা বই দিয়েছিলেন।” একথা বলে রাজার সামনে বিধি পুস্তকটি পাঠ করতে শুরু করলেন। 19 বিধি পুস্তকের কথাগুলি শুনে রাজা যোশিয় মানসিকভাবে বিপর্য্যস্ত হলেন এবং তাঁর জামাকাপড় ছিঁড়তে শুরু করলেন। 20 এবং তখন যোশিয় হিল্কিয়কে, শাফনের পুত্র অহীকাম, মীখায়ের পুত্র অব্দোন, লেখক শাফন আর রাজার ভৃত্য অসায়কে নির্দেশ দিলেন, 21 “শিগ্গির গিয়ে প্রভুর কাছে খুঁজে পাওয়া বিধি পুস্তকে বর্ণিত বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করো। আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রভুর বিধি অনুসরণ করেন নি বলে প্রভু আমাদের ওপর খুবই ক্রুদ্ধ হয়েছেন। তাঁরা এই বইয়ে বর্ণিত সমস্ত বিধি ঠিকমতো পালন করেন নি।”

22 হিল্কিয় ও রাজার সমস্ত ভৃত্যরা সকলে তখন রাজার বস্ত্রাগারের তত্ত্বাবধায়ক হস্রহের পৌত্র, তোখতের পুত্র, শল্লুমের স্ত্রী ভাববাদিনী হুল্দার কাছে জেরুশালেমে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তখন হিল্কিয় আর রাজভৃত্যরা হুল্দাকে বইটি সম্পর্কে জানাল। 23 হুল্দা তাদের বললেন: “রাজা যোশিয়কে গিয়ে বলো: প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর জানিয়েছেন, 24 ‘আমি এই অঞ্চলে ও এখানে বসবাসকারী লোকদের জীবনে দুর্যোগ ঘনিয়ে তুলবো। যিহূদার রাজার সামনে যা পাঠ করা হয়েছে, বিধি পুস্তকে যেসব ভয়ানক ঘটনার কথা বর্ণিত হয়েছে আমি সেই সবই এখানে ঘটাবো। 25 কারণ লোকরা আমাকে পরিত্যাগ করেছে এবং অন্যান্য মূর্ত্তিসমূহের সামনে ধুপধূনো জ্বালিয়েছে; তাদের যাবতীয় কুকাজ আমায় ক্রুদ্ধ করে তুলেছে। তাই এই সমগ্র অঞ্চলের ওপর আমি আমার ক্রোধাগ্নি বর্ষণ করবো যা কিছুতে নির্বাপিত হবে না।’

26 “যাই হোক্, যিহূদার রাজা যোশিয়, যিনি তোমাদের প্রভুর কাছে খবর সংগ্রহের জন্য পাঠিয়েছেন, তাঁকে বলো যে প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর এ কথাও বলেন: 27 ‘যোশিয়, তুমি তোমার মন বদলেছ এবং আমার কাছে নিজেকে নম্র করেছ, তোমার পরনের পোশাক ছিঁড়েছ এবং আমার সামনে কেঁদেছ। তোমার হৃদয় কোমল, তাই আমি তোমার প্রার্থনা শুনেছি। 28 আমি তোমাকে তোমার পূর্বপুরুষদের মধ্যে নিয়ে যাবো। তুমি শান্তিতেই মরতে পারবে। এই ভূখণ্ডে ও এখানকার লোকদের জীবনে আমি যে দুর্যোগ ঘনিয়ে তুলবো তা তোমায় চোখে দেখে যেতে হবে না।’” হিল্কিয় ও রাজকর্মচারীরা এসে রাজাকে এই খবর জানালেন।

29 রাজা যোশিয় তখন যিহূদা ও জেরুশালেমের সমস্ত প্রবীণ ব্যক্তিদের তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বললেন। 30 রাজা নিজে প্রভুর মন্দিরে গেলেন। যখন যিহূদা ও জেরুশালেমের সমস্ত লোক, যাজক ও লেবীয়রা, ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ সবাই যোশিয়র কাছে এলো, তিনি তাদের প্রভুর মন্দিরে খুঁজে পাওয়া চুক্তি পুস্তকে লিখিত সবকিছু পাঠ করে শোনালেন। 31 এরপর রাজা তাঁর নিজের জায়গায় উঠে দাঁড়িয়ে প্রভুর সামনে তাঁর অনুগামী হবার এবং সমস্ত অন্তঃকরণ ও সমস্ত প্রাণ দিয়ে তাঁর আজ্ঞা বিধি এবং নিয়মসকল পালন করবেন বলে শপথ করলেন। 32 এরপর তিনি জেরুশালেম ও বিন্যামীনের সকলকে দিয়েও একই প্রতিশ্রুতি করালেন। জেরুশালেমের লোকরা তাদের পূর্বপুরুষের ঈশ্বরের সামনে করা শপথ রক্ষা করতে সম্মত হলেন। 33 ইস্রায়েলের লোকদের কাছে বিভিন্ন দেশের মূর্ত্তি ছিল। যোশিয় সেইসব ভয়ানক জঘন্য মূর্ত্তি ভেঙে ফেলে ইস্রায়েলের লোকদের প্রভুর সেবা করতে বাধ্য করলেন। যতদিন পর্যন্ত যোশিয় বেঁচে ছিলেন লোকরা তাদের পূর্বপুরুষের প্রভু ঈশ্বরের সেবা করে চলেছিলেন।

যোশিয়র নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন

35 রাজা যোশিয় জেরুশালেমে প্রভুর জন্য নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন করেছিলেন। প্রথম মাসের 14 দিনে তারা নিস্তারপর্বের মেষটি বলিদান করে। যোশিয় তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য যাজকদের বেছে নিয়েছিলেন এবং প্রভুর মন্দিরে কাজকর্ম করার সময় তিনি তাদের উৎসাহিত করেছিলেন। যে সমস্ত লেবীয়রা ইস্রায়েলের লোকদের শিক্ষাদান করতেন এবং প্রভুর সেবার জন্য যাঁরা পৃথকভাবে সমর্পিত ছিলেন, যোশিয় তাঁদের বলেছিলেন, “পবিত্র সিন্দুকটি রাজা দায়ূদের সন্তান শলোমনের বানানো মন্দিরে রেখে দাও। ওটা কাঁধে বয়ে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর তোমাদের আর কোনো প্রয়োজন নেই। এবার মন দিয়ে তোমাদের প্রভু ঈশ্বর, ইস্রায়েলের ঈশ্বর ও ইস্রায়েলের লোকদের সেবা করো। পরিবারগোষ্ঠী অনুযায়ী মন্দিরের সেবার জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখো। রাজা দায়ূদ ও তাঁর সন্তান তোমাদের জন্য যে কর্তব্য বিধান করেছেন মন প্রাণ দিয়ে তা পালন করো। যাও, লোকদের বিভিন্ন পরিবারের জন্য নির্দ্দিষ্ট মন্দিরের পবিত্র স্থানে লেবীয়গোষ্ঠীর সঙ্গে দাঁড়াও। নিস্তারপর্বের মেষগুলো বলি দাও, প্রভুর জন্য নিজেদের শুদ্ধ ও পবিত্র করে তোলো। তোমাদের ভাইদের জন্য মেষগুলো প্রস্তুত করে রাখো। এসো, প্রভু মোশির মাধ্যমে আমাদের যা যা করতে আদেশ দিয়েছেন আমরা সেই সব করি।”

নিস্তারপর্বে বলি দেবার জন্য যোশিয় ইস্রায়েলের লোকদের নিজের গবাদি পশু থেকে 30,000 ছাগল ও মেষ ছাড়াও আরো 3000 ষাঁড় দিয়েছিলেন। যোশিয়র অধীনস্থ উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও মুক্ত হস্তে নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপনের জন্য লেবীয় ও যাজকবর্গ লোকদের বিভিন্ন পশু ও জিনিসপত্র দান করেছিলেন। প্রভুর মন্দিরের প্রধান আধিকারিক হিল্কিয়, সখরিয় এবং যিহীয়েল যাজকদের কাছে 2600টি মেষ ও ছাগল এবং 300টি ষাঁড় দান করেছিলেন। কনানিয়, শময়িয়, নথনেল ও তাঁর ভাইরা, হশবিয়, যীয়ীয়েল, লেবীয় প্রধান, যোষাবদের মত লোকরা নিস্তারপর্বে বলিদানের জন্য লেবীয়দের 500টি মেষ ও ছাগল এবং 500 টি ষাঁড় দান করেছিলেন। এই লোকরা ছিল লেবীয়দের নেতৃবৃন্দ।

10 রাজা যেমন আদেশ করেছিলেন সেই অনুযায়ী সমস্ত রকম প্রস্তুতি শেষ হলে যাজকরা তাদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়ালেন এবং লেবীয়রা তাঁদের নিজের নিজের দলগুলির সঙ্গে দাঁড়ালেন। 11 নিস্তারপর্বের মেষগুলো বলি দেওয়া হল। তারপর লেবীয়রা চামড়া ছাড়িয়ে যাজকদের হাতে বলি দেওয়া পশুর রক্ত তুলে দিলেন। যাজকরা সেই রক্ত বেদীর ওপর ছিটিয়ে দিলেন এবং 12 তারপর বিভিন্ন পরিবারগোষ্ঠীর হাতে, মোশির বিধি পুস্তক অনুযায়ী, প্রভুর প্রতি হোমবলির জন্য বলির মাংস তুলে দিলেন। 13 নির্দেশ অনুযায়ী, লেবীয়রা আগুনের আঁচে নিস্তারপর্বের মেষশাবকের মাংস ঝলসে নিলেন। তারপর দ্রুত লোকদের মধ্যে মাংস বিতরণ করা হল। 14 এসব কাজ শেষ হবার পর, লেবীয়রা তাদের নিজেদের ও হারোণের উত্তরপুরুষ যাজকদের জন্য বরাদ্দ মাংসের ভাগ পেলেন। যেহেতু রাত্রি পর্যন্ত এই সমস্ত যাজক সকলেই হোমবলি এবং চর্বি নিবেদনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন, লেবীয়রা তাঁদের এবং যাজকদের জন্য মাংস তৈরী করলেন। 15 আসফের বংশের লেবীয় গায়করা এরপর রাজা দায়ূদের নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন। এঁদের মধ্যে আসফ, হেমন রাজার ভাববাদী যিদূথূন প্রমুখরা ছিলেন। দ্বাররক্ষীদের কাউকেই নিজেদের জায়গা ছেড়ে নড়তে হয়নি কারণ তাদের অন্যান্য লেবীয় ভাইরা সকলেই নিস্তারপর্বের জন্য যা যা করা প্রয়োজন, সুষ্ঠভাবে করেছিলেন।

16 অর্থাৎ রাজা যোশিয় যেভাবে বলেছিলেন প্রভুর উপাসনার জন্য সব কিছু ঠিক সেইভাবে প্রস্তুত করা হল। এরপর নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন করা হল এবং বেদীতে হোমবলি নিবেদন করা হল। 17 ইস্রায়েলের যে সমস্ত লোকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন তারা সকলে সাতদিন ধরে নিস্তারপর্ব ও খামিরবিহীন রুটির উৎসব পালন করলো। 18 সেই ভাববাদী শমূয়েলের সময়ের পর থেকে আর এভাবে ইস্রায়েলে নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন করা হয়নি। যোশিয় যেভাবে যাজকদের সঙ্গে, লেবীয়দের সঙ্গে এবং সমগ্র যিহূদা ও ইস্রায়েলে জেরুশালেমের লোকেদের সঙ্গে এই নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন করলেন, ইস্রায়েলের কোনো রাজাই আগে তা পালন করেন নি। 19 রাজা যোশিয়র রাজত্বের 18 বছরের মাথায় এই নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন করেছিলেন।

যোশিয়র মৃত্যু

20 যোশিয় এই সবকিছু করার পরে মিশররাজ নখো ফরাৎ নদীর তীরবর্তী কর্কমীশ শহরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এলেন, এবং যোশিয় তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা করলেন। 21 নখো রাজা যোশিয়কে বার্তাবাহক মারফৎ জানালেন,

“মহারাজ, আমি আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসি নি। এটি আদৌ আপনার কোনো সমস্যা নয়। আমি আমার শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছি কারণ ঈশ্বর আমার পক্ষে এবং তিনি আমাকে দ্রুত কাজ শেষ করতে বলেছেন। তাই আমাকে থামাবেন না, তাহলে ঈশ্বর আপনাকে ধ্বংস করবেন।”

22 কিন্তু যোশিয় এই সতর্কবাণীতে কর্ণপাত করলেন না এবং ছদ্মবেশে মগিদ্দোতে নখোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন। 23 যখন তীরন্দাজরা রাজা যোশিয়কে বিদ্ধ করল, তিনি তাঁর ভৃত্যদের বললেন, “আমাকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে চলো, আমি গুরুতরভাবে জখম হয়েছি।”

24 ভৃত্যরা যোশিয়কে তাঁর রথ থেকে সরিয়ে তাঁরই আনা অন্য একটি রথে করে জেরুশালেমে নিয়ে এলো। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হল। যোশিয়কে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমাধিস্থ করা হল এবং তাঁর মৃত্যুতে যিহূদা ও জেরুশালেমের লোকরা গভীরভাবে শোকাচ্ছন্ন হলেন। 25 যিরমিয় যোশিয়র পারলৌকিক অনুষ্ঠানের জন্য কিছু গান লিখেছিলেন এবং গেয়েও ছিলেন, লোকরা এখনো সেই গান গেয়ে থাকে। রাজা যোশিয়র জন্য শোক প্রকাশ করে গান গাওয়া ইস্রায়েলীয় জনজীবনের একটি অঙ্গে পরিণত হল। এই গানগুলি পারলৌকিক অনুষ্ঠানের গান পুস্তকে লিপিবদ্ধ আছে।

26-27 রাজা যোশিয় তাঁর রাজত্বের প্রথম থেকে শেষাবধি আর যা কিছু করেছিলেন সে সবই ইস্রায়েল ও যিহূদার রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। এই গ্রন্থ থেকে প্রভুর প্রতি তাঁর ভক্তি ও নিষ্ঠা এবং তিনি কিভাবে প্রভুকে অনুসরণ করেছিলেন সে কথাও জানা যায়।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International