Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
যিহিষ্কেল 1-4

ভূমিকা

1-3 আমি যাজক বুষির পুত্র যিহিষ্কেল। আমি কবার নদী তীরে বাবিলে নির্বাসনে ছিলাম। সে সময় আকাশ খুলে গিয়েছিল এবং আমি ঈশ্বরীয় দর্শন পেয়েছিলাম। এটা ছিল ত্রিশতম বছরের চতুর্থ মাসের পঞ্চম দিন। যিহোয়াখীন রাজার রাজত্বের সময় নির্বাসনের পঞ্চম বছরের ঐ মাসের পঞ্চম দিনে প্রভুর এই কথাগুলি যিহিষ্কেলের কাছে এসেছিল। প্রভুর ক্ষমতাও ঐ জায়গায় তার ওপর এল।

প্রভুর রথ—ঈশ্বরের সিংহাসন

আমি (যিহিষ্কেল) দেখলাম উত্তর দিক থেকে একটা বড় ঝড় আসছে। জোরালো বাতাসের সঙ্গে এক বড় মেঘ, মেঘের মধ্যে থেকে আগুন ঝলসে উঠছিল। তার চারদিকে আলো চমকাচ্ছিল; মনে হচ্ছিল যেন উত্তপ্ত ধাতু আগুনে জ্বলছে। মেঘের মধ্যে ছিল চারটি পশু যাদের মানুষের মত রূপ। প্রত্যেক পশুর চারটি করে মুখ ও চারটি করে ডানা ছিল। তাদের পাগুলো সোজা, দেখতে যেন গরুর পায়ের মত। আর তা পালিশ করা পিতলের মত চক্চক্ করছিল। তাদের পাখার তলায় মানুষের হাত ছিল। চারটি পশুর প্রত্যেকের চারটি করে মুখ ও চারটি করে ডানা ছিল। ডানাগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। যাবার সময় সেই পশুরা পিছন ফেরেনি। তারা সোজা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।

10 প্রত্যেক পশুর চারটি করে মুখ ছিল। প্রত্যেকের সামনের মুখটা ছিল মানুষের মুখের মত, ডানদিকের মুখটা ছিল সিংহের মত, বাম দিকের মুখটা ছিল গরুর মত, আর পিছনের মুখটা ঈগলের মত। 11 পশুগুলির ডানা তাদের উপর ছড়িয়ে ছিল। প্রত্যেক পশু অপর পশুকে স্পর্শ করার জন্য দুটি করে ডানা বাড়িয়ে রেখেছিল। আর অন্য দুটি ডানা দিয়ে নিজের দেহ ঢেকে রেখেছিল। 12 প্রত্যেক পশু যে দিকে দেখছে সেই দিকেই যাচ্ছিল। আর বাতাস যে দিকে তাদের উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল শুধু সেই দিকেই যাচ্ছিল। কিন্তু চলার সময় তারা যে দিকে যেত সেই দিকে তাকাচ্ছিল না। 13 পশুগুলো দেখতে একই রকম ছিল।

পশুদের মধ্যবর্তী স্থানটি দেখতে আগুনে জ্বলা কয়লার আভার মত লাগছিল। এই ছোট ছোট মশালের মত আগুনগুলো পশুদের মধ্য দিয়ে তাদের চারি দিকে ঘুরছিল। আগুন উজ্জ্বল ভাবে জ্বলছিল আর তার থেকে বিদ্যুত চমকাচ্ছিল! 14 সেই সব পশুরা সামনে পেছনে বিদ্যুতের মত দৌড়চ্ছিল!

15-16 আমি পশুদের দিকে তাকালাম এবং সেই সময় আমি দেখলাম চারটি চাকা মাটি স্পর্শ করে রয়েছে। প্রত্যেক পশুর একটি করে চাকা ছিল। প্রত্যেকটা চাকা দেখতে একই রকম, দেখে মনে হচ্ছিল যেন স্বচ্ছ হলুদ রঙের কোন অলঙ্কার থেকে তৈরী। দেখে মনে হচ্ছিল যেন চাকার ভেতরে চাকা রয়েছে। 17 চাকাগুলি যে কোনো দিকে যাবার জন্য ঘুরতে পারত, কিন্তু চলবার সময় চাকাগুলো তাদের দিক্ পরিবর্ত্তন করেনি।

18 চাকার ধারগুলো ছিল লম্বা এবং ভয়ঙ্কর! চার চাকার ধার ছিল চোখে পূর্ণ।

19 চাকাগুলি সব সময় পশুদের সঙ্গেই যাচ্ছিল। পশুরা আকাশে গেলে চাকাগুলিও তাদের সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল। 20 বাতাস যেখানে তাদের নিয়ে যেতে চাইছিল তারা সেখানেই যাচ্ছিল, আর চাকাগুলোও তাদের সঙ্গে যাচ্ছিল। কারণ চাকার মধ্যে পশুগুলোর আত্মা ছিল। 21 তাই পশুরা চললে চাকাগুলোও চলছিল, থামলে চাকাগুলোও থামছিল। চাকাগুলো শূন্যে গেলে পশুরাও তাদের সঙ্গে যাচ্ছিল। কারণ চাকাগুলির মধ্যেই বাতাস ছিল।

22 পশুগুলির মাথার ওপর খুব আশ্চর্য কোন একটা জিনিস ছিল। সেটা ছিল ওলটানো এক পাত্রের মত কোন একটা জিনিষ আর সেই ওলটানো পাত্র ছিল স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ। 23 এই পাত্রের ঠিক নীচেই একটি পশুর ডানাসমূহ পরবর্তী পশুকে স্পর্শ করার চেষ্টা করছিল। দুটি ডানা এক দিকে ছড়িয়ে থাকছিল আর অন্য দুটি অন্যদিকে ছড়িয়ে দেহকে ঢেকে রেখেছিল।

24 তারপর আমি ঐ ডানাগুলোর শব্দ শুনলাম। প্রত্যেকবার ভ্রমণের সময় পশুদের ঐ ডানাগুলো খুব জোরে শব্দ করত, যেন একটি বিশাল জলপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের শব্দের মতোই উচ্চ ছিল। সেটা সৈন্যদলের আওয়াজের মত জোর ছিল। আর চলা শেষ হলে পশুগুলো তাদের ডানাগুলো নামিয়ে দিচ্ছিল।

25 পশুরা চলা বন্ধ করে তাদের ডানাগুলো নামাল। তারপর আরেকটি শব্দটি শোনা গেল; ঐ শব্দ তাদের মাথার ওপরের পাত্র থেকে এসেছিল। 26 সেই পাত্রের ওপরে সিংহাসনের মত একটা কিছু যেন দেখা গেল। আর তা ছিল নীলকান্ত মণির মত নীল। সেই সিংহাসনে মানুষের মত একজনকে বসে থাকতে দেখা গেল! 27 আমি তার কোমরের ওপরটা দেখতে পেলাম। তাকে দেখতে যেন গরম ধাতুর মত, যেন তার চারিদিকে আগুন! আর আমি তার কোমরের নীচেও তাকালাম, দেখলাম তার চারিদিকে তাপযুক্ত আগুন। 28 তার চারি দিকের জাজ্বল্যমান আলো ছিল মেঘের মধ্যে একটি ধনুর মত। যেটা প্রভুর মাহাত্ব্যের চিত্র। আমি তা দেখামাত্র মাটিতে পড়ে প্রণাম করলাম। তারপর শুনলাম একটি শব্দ আমায় কিছু বলছে।

সেই শব্দটি আমায় বলল, “মনুষ্যসন্তান,[a] উঠে দাঁড়াও, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলব।”

যে সময় তিনি আমার সঙ্গে কথা বললেন, তখন আত্মা আমাতে প্রবেশ করে আমাকে আমার পায়ে ভর দিয়ে দাঁড় করালো, তখন আমি তাঁকে আমার সঙ্গে কথা বলতে শুনতে পেলাম। তিনি আমায় বললেন, “মনুষ্যসন্তান, আমি তোমাকে ইস্রায়েল পরিবারের কাছে কথা বলতে পাঠাচ্ছি। ঐ লোকেরা বহুবার আমার বিরুদ্ধাচরণ করেছে। তাদের পূর্বপুরুষরাও আমার বিরুদ্ধাচরণ করেছে। তারা আমার বিরুদ্ধে বহুবার পাপ করেছে। আর আজও আমার বিরুদ্ধে পাপ করে চলেছে। আমি তোমাকে ঐ লোকদের কাছে কথা বলতে পাঠাচ্ছি। ওরা খুব একগুঁয়ে কঠিন মনা। কিন্তু তুমি অবশ্যই তাদের সঙ্গে কথা বল। বলবে, ‘প্রভু, আমাদের সদাপ্রভু এই কথা বলেছেন।’ তারা বিদ্রোহী, কিন্তু তারা তোমার কথা শুনুক বা না শুনুক, তোমাকে অবশ্যই ওদের কাছে ওগুলো বলতে হবে যাতে তারা জানতে পারে যে তাদের মধ্যে একজন ভাববাদী বাস করছে।

“মনুষ্যসন্তান, ঐসব লোকদের ভয় পেও না। যদি মনে হয় তুমি কাঁটাঝোপ, কাঁটা এবং কাঁকড়া বিছের দ্বারা ঘিরে রয়েছ তাও তারা যা বলে তাতে ভয় পেও না। এটা সত্যি যে তারা তোমার বিরুদ্ধে যাবে এবং তোমায় আঘাত করতে চেষ্টা করবে। তারা তোমার কাছে কাঁটার মতো মনে হবে। তোমার মনে হবে যেন তুমি কাঁকড়া বিছের মধ্যে বাস করছ। কিন্তু তাদের কথায় ভয় পেও না। তারা বিদ্রোহী। তাদের মুখ দেখে ভয় পেও না। আমি যা বলি তা তুমি অবশ্যই তাদের বলবে। আমি জানি তারা তোমার কথা শুনবে না। তারা তোমার বিরুদ্ধে পাপ করাও ছাড়বে না! কারণ তারা বিদ্রোহী বংশ।

“মনুষ্যসন্তান, আমি যা বলি তা অবশ্যই শোন। ঐ বিদ্রোহীদের মত আমার বিরুদ্ধে উঠো না। তোমার মুখ খোল এবং আমি যে বাক্য দিচ্ছি তা গ্রহণ কর, তারপর তা লোকদের বল। এই বাক্যগুলি ভোজন কর।”

এখন আমি (যিহিষ্কেল) দেখলাম একটা হাত আমার দিকে এগিয়ে আসছে। সেই হাতে একটা বাক্য লেখা গোটানো পুঁথি ছিল। 10 আমি যাতে পড়তে পারি তার জন্য ঐ হাতটি গোটানো পুঁথিটি খুলে ধরল। আমি সামনে এবং পেছনের লেখা দেখলাম। তাতে ছিল বিভিন্ন ধরণের দুঃখের গান, দুঃখের গল্প ও সাবধান বাণীসমূহ।

ঈশ্বর আমায় বললেন, “মনুষ্যসন্তান, যা দেখছ খাও। এই গোটানো পুঁথি ভোজন কর, এবং এই সমস্ত কথা ইস্রায়েল পরিবারকে গিয়ে বল।”

তাই আমি আমার মুখ খুললাম এবং তিনি সেই গোটানো পুঁথিটি আমার মুখে দিলেন। তখন ঈশ্বর বললেন, “মনুষ্যসন্তান, আমি তোমায় এই গোটানো পুঁথি দিচ্ছি। এটা গিলে ফেল! এই গোটানো পুঁথি তোমার উদর পূর্ণ করুক।”

তাই আমি সেই গোটানো পুঁথি খেয়ে ফেললাম আর তার স্বাদ আমার মুখে মধুর মত মিষ্টি লাগল।

তখন ঈশ্বর আমায় বললেন, “মনুষ্যসন্তান, ইস্রায়েল পরিবারের কাছে যাও। তাদের কাছে আমার বাক্য বল। আমি তোমাকে এমন বিদেশীদের কাছে পাঠাচ্ছি না যাদের তুমি বুঝবে না। তোমাকে আর একটা ভাষা শিখতে হবে না। আমি তোমাকে ইস্রায়েল পরিবারের কাছে পাঠাচ্ছি! আমি তোমাকে বিভিন্ন দেশ বিদেশে পাঠাচ্ছি না যাদের ভাষা তুমি বুঝবে না। তুমি ঐসব লোকের কাছে গিয়ে কথা বললে তারা তোমার কথা শুনত। কিন্তু তোমায় ঐসব কঠিন ভাষা শিখতে হবে না। না! আমি তোমায় ইস্রায়েল পরিবারের কাছে পাঠাচ্ছি। কেবল এইসব লোকের মন কঠিন, তারা বড় একগুঁয়ে। আর ইস্রায়েলের লোকরা তোমার কথা শুনতে অস্বীকার করবে। তারা আমার কথাও শুনতে চায় না। কিন্তু আমি তোমাকে তাদের মতোই একগুঁয়ে করব। তোমার কপাল তাদের কপালের চেয়েও দৃঢ় করব! হীরক চক্মকি পাথরের চেয়েও দৃঢ়। সেই ভাবেই তাদের চেয়ে তোমার কপাল দৃঢ় হবে। তুমি আরো একগুঁয়ে হবে আর তাই ঐ লোকদের ভয় করবে না। সব সময় আমার বিরুদ্ধাচরণকারী ঐ লোকদের তুমি ভয় করবে না।”

10 তখন ঈশ্বর আমায় বললেন, “মনুষ্যসন্তান, আমার প্রতিটি কথা তোমার শোনা উচিত, আর সেগুলো মনে রাখা উচিত। 11 নির্বাসনে রয়েছে এমন লোকদের কাছে যাও। তাদের কাছে গিয়ে বল, ‘আমাদের প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলেন।’ তারা শুনুক বা না শুনুক, তুমি তাদের এই কথাগুলো বলবে।”

12 তারপর বাতাস আমায় ওপরে উঠিয়ে দিল আর আমি আমার পেছনে একটা স্বর শুনতে পেলাম। সেটা ছিল বজ্রের মত জোরালো। শব্দটি বলল, “যেখানে ওটি ছিল সেই জায়গা থেকে উঠে আসা প্রভুর মহিমা।”[b] 13 তারপর পশুরা সেই ডানা ঝাপটাতে লাগল আর তারা পরস্পরের গায়ে লাগলে ভীষণ শব্দ হল। আর তাদের সামনের চাকাগুলোও জোরে শব্দ করতে শুরু করল—তা বজ্রের মত জোরালো। 14 আত্মা আমায় তুলে নিয়ে গেল। আমি সেই স্থান পরিত্যাগ করলে খুব দুঃখিত ও আত্মায় উদ্বিগ্ন হলাম। কিন্তু আমি আমার মধ্যে প্রভুর শক্তি অনুভব করলাম। 15 আমি ইস্রায়েলের সেই লোকদের কাছে গেলাম যাদের কবার নদীর ধারে তেল আবিবে বাস করতে বাধ্য করা হয়েছিল। আমি গিয়ে তাদের মাঝে সাত দিন ধরে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম।

16 সাত দিন পর প্রভু আমায় বললেন, 17 “মনুষ্যসন্তান, আমি তোমাকে ইস্রায়েলের প্রহরী নিযুক্ত করছি। আমি তোমাকে যা কিছু বলব, তুমি সেই সম্বন্ধে ইস্রায়েলীয়দের সাবধান করে দেবে। 18 যদি আমি বলি, ‘এই মন্দ লোকটি মারা যাবে!’ তখন তুমি অবশ্যই তাকে সাবধান কোরো! তুমি তাকে অবশ্যই বলবে তার জীবনধারা পরিবর্ত্তন করতে ও মন্দ কাজ আর না করতে। সেই ব্যক্তিকে সাবধান না করলে সে মারা যাবে বটে কিন্তু তার মৃত্যুর জন্য আমি তোমাকে দায়ী করব! কারণ তুমি তার প্রাণ বাঁচাতে তার কাছে যাওনি।

19 “হতে পারে তুমি কোন ব্যক্তিকে তার জীবন পরিবর্ত্তন ও পাপ হতে বিরত হবার কথা বললেও সে সেই সাবধান বাণী শুনতে অস্বীকার করল; সে ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি মারা যাবে। সে পাপ করেছে বলেই মারা যাবে কিন্তু তুমি তাকে সাবধান করেছিলে বলে নিজের প্রাণ বাঁচাবে।

20 “একজন ভালো লোক যদি আর ভালো হতে না চায়, আর আমি যদি তার সামনে এমন একটি বিঘ্ন রাখি যে সে মারা যাবে তাহলে সে মারা যাবে কারণ সে পাপ কাজ করেছিল এবং তুমি তার মৃত্যুর জন্য দায়ী হবে কারণ তুমি তাকে সাবধান করোনি এবং সে যে সকল ভাল কাজ করেছিল তা আর স্মরণ করা হবে না।

21 “কিন্তু তুমি যদি সেই ভালো লোকটিকে পাপ কাজ থেকে বিরত হতে বল এবং সে যদি আর পাপ না করে তবে সে মরবে না। কারণ তুমি তাকে সাবধান করলে সে তোমার কথায় কান দিয়েছিল। এইভাবে তুমি তোমার প্রাণ বাঁচালে।”

22 প্রভুর পরাক্রম আমার কাছে এলে তিনি আমায় বললেন, “ওঠো, সেই উপত্যকায় যাও। আমি সেই জায়গায় তোমার সঙ্গে কথা বলব।”

23 তাই আমি উঠে সেই উপত্যকায় গেলাম। প্রভুর মহিমা সেখানে ছিল—যেমনটি আমি কবার নদীর ধারে দেখেছিলাম। তাই আমি মাটিতে উপুড় হয়ে প্রণাম করলাম। 24 কিন্তু একটি বাতাস এসে আমার পায়ে ভর দিয়ে দাঁড় করালেন। তিনি আমায় বললেন, “যাও বাড়ি গিয়ে নিজেকে ঘরে তালাবন্ধ কর। 25 মনুষ্যসন্তান, লোকে দড়ি নিয়ে এসে তোমাকে বাঁধবে। তারা তোমাকে লোকদের মধ্যে যেতে দেবে না। 26 আমি তোমার জিভ তোমার তালুতে আটকে দেব, তুমি কথা বলতে পারবে না। তাই, এই লোকরা যে ভুল করছে সে সম্বন্ধে তাদের শিক্ষা দেবার জন্য কেউ থাকবে না। কারণ ঐ লোকরা সর্বদাই আমার বিরুদ্ধাচরণ করে। 27 কিন্তু আমি তোমার সঙ্গে কথা বলব আর তোমাকে কথা বলতে দেব। কিন্তু তুমি অবশ্যই তাদের বলবে, ‘প্রভু আমাদের সদাপ্রভু এইসব কথা বলেন,’ যদি কেউ শুনতে চায় ভালো; যদি কেউ না শুনতে চায় তাও ভালো। কারণ ঐ লোকরা সবসময় আমার বিরুদ্ধে যায়।

“মনুষ্যসন্তান, একটি ইঁট নাও আর তার ওপর আঁচড় কেটে জেরুশালেম শহরের একটা ছবি আঁকো। তারপর এমন অভিনয় কর যেন তুমি একটি শহর দখলকারী সৈন্যদল। শহরের প্রাচীরগুলোর ওপর উঠে যাতে শত্রু সৈন্যরা শহরে প্রবেশ করতে পারে তার জন্য স্তম্ভসমূহ এবং একটি জাঙ্গাল তৈরী কর। প্রাচীর ভেদক যন্ত্র নিয়ে এস এবং শহরের চারিধারে সৈন্য শিবির বসাও। তারপর একটা চ্যাপ্টা লোহার চাটু নিয়ে এস এবং সেটাকে তোমার এবং শহরের মাঝখানে রাখো। সেটা তোমার ও শহরের মধ্যে একটা লোহার প্রাচীরের মত হোক্। এইভাবে তুমি দেখাবে যে তুমি ঐ শহরের বিরুদ্ধে। তুমি সেই শহর ঘিরে তা আক্রমণ করবে। কারণ তা হবে ইস্রায়েল পরিবারের সামনে দৃষ্টান্তস্বরূপ।

“তারপর বাম পাশ ফিরে শুয়ে পড়। তুমি এমন আচরণ করবে যাতে দেখাবে যে ইস্রায়েলের পাপ তোমার ঘাড়ে। সেই দোষ তুমি তত দিন ধরেই বইবে যত দিন বাম পাশ ফিরে শুয়ে থাকবে। তুমি অবশ্যই 390 দিন ধরে ইস্রায়েল জাতির দোষ বইবে। এইভাবে আমি তোমায় বলছি কত দিন ধরে যিহূদা শাস্তি পাবে; এক দিন এক বছরের সমান।

“সেই সময়ের পর তুমি 40 দিন ধরে ডানপাশ ফিরে শুয়ে থাকবে। এই সময় তুমি যিহূদার পাপ 40 দিন ধরে বইবে। এক দিন এক বছরের সমান। আমি বলছি যিহূদা কত কাল শাস্তি ভোগ করবে।

“এখন, তোমার হাতের আস্তিন গোটাও এবং ইটটার উপর তোমার হাত ওঠাও। অভিনয় কর যেন তুমি জেরুশালেম শহর আক্রমণ করছ। শহরটির বিরুদ্ধে ভাববানী কর। এখন দেখ আমি দড়ি দিয়ে তোমাকে বাঁধছি। তুমি এক দিক থেকে অন্য দিকে গড়িয়ে যেতে পারবে না, যে পর্যন্ত না শহরের বিরুদ্ধে তোমার আক্রমণ শেষ হয়।”

“তুমি অবশ্যই কিছু শস্য নিয়ে এসে রুটি তৈরী কর। গম, বার্লি, বীন, মসুর, ভুট্টা ও কাজু এইসব কিছু কিছু পরিমাণ নাও। এই সমস্ত একটি পাত্রে নিয়ে মেশাও, তারপর তা গুঁড়ো করে তা দিয়ে আটা তৈরী করে রুটি বানাও। তুমি 390 দিন ধরে কেবল সেই রুটি খাবে। 10 প্রতিদিন কেবল 1 পোয়া ময়দা নিয়ে রুটি বানাবে। সারা দিন ধরে মাঝে মাঝে সেই রুটি খেও। 11 আর প্রত্যেকদিন কেবল 3 পেয়ালা জল পান করো। সময় সময় সমস্ত দিন ধরেই তা খেতে পার। 12 প্রতিদিন, নিজের রুটি তৈরী করবে। কিছু মানুষের মল নিয়ে তা আগুনে পুড়িও। তারপর সেটা যখন পুড়ছে তখন রুটিটা সেঁকো। যেখানে লোকরা তোমাকে দেখতে পাবে সেখানে রুটিটা খাবে।” 13 তারপর প্রভু বললেন, “এটা বোঝাবে যে ইস্রায়েল পরিবার বিদেশে অশুচি রুটি খাবে। আমি তাদের ইস্রায়েল ত্যাগ করে সেইসব দেশে বাস করতে বাধ্য করেছি!”

14 তখন আমি বললাম, “হায়, প্রভু আমার সদাপ্রভু, আমি কখনও অশুচি খাবার খাইনি। রোগে মারা গেছে এমন কোন পশু বা বন্য পশুতে মেরে ফেলেছে এমন কোন পশুও আমি কখনও খাইনি। আমি শিশুকাল থেকে আজ পর্যন্ত কখনও অশুচি মাংস খাইনি। কখনই ঐসব মন্দ মাংস আমার মুখে প্রবেশ করেনি।”

15 তখন ঈশ্বর আমায় বললেন, “ঠিক আছে! রুটি পাক করার জন্য গোবরের ঘুঁটে ব্যবহার করো। মানুষের মল ব্যবহার করার দরকার নেই।”

16 তারপর ঈশ্বর আমায় বললেন, “মনুষ্যসন্তান, আমি জেরুশালেমের রুটির যোগান নষ্ট করছি। লোকে অল্প পরিমান রুটিই আহার করার জন্য পাবে। তারা তাদের খাদ্যের যোগান সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন হবে। আর পান করার জলও অল্প থাকবে। আর জল পান করার সময় তারা ভীষণ ভীত হবে। 17 কারণ লোকদের আহার ও পান করার জন্য যথেষ্ট খাবার ও জল থাকবে না। লোকরা একে অপরের দিকে শুধু তাকাবে কারণ তারা জানে না কি করতে হবে। তারা একে অপরকে তাদের পাপের জন্য ক্ষীণ হতে দেখবে।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International