Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
যিরমিয় 35-37

রেখবীয় পরিবারের ভাল উদাহরণ

35 যিহূদার রাজা যখন যিহোয়াকীম তখন যিরমিয়র কাছে প্রভুর বার্তা এলো। যিহোয়াকীম ছিলেন যোসিয়ের পুত্র। এই হল প্রভুর বার্তা: “যিরমিয়, যাও রেখবীয় পরিবারকে মন্দিরের পাশের ঘরগুলির কোন একটি ঘরে আসবার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে এসো। তাদের দ্রাক্ষারস পানের প্রস্তাব দাও।”

সুতরাং আমি (যিরমিয়) যাসিনিয়ের কাছে গিয়েছিলাম। যাসিনিয় ছিল যিরমিয়[a] নামক এক ব্যক্তির পুত্র এবং হবৎসিনিয়ের পৌত্র। আমি যাসিনিয়র অন্য ভাইদের এবং তার সব ছেলেদের রেখবীয় পরিবারের সকল সদস্যদের পেয়েছিলাম। তারপর আমি রেখবীয় পরিবারকে প্রভুর মন্দিরে নিয়ে এলাম। আমরা হাননের পুত্রের ঘরে গেলাম। হানন ছিল ঈশ্বরের প্রিয় মানুষ। তার পিতার নাম ছিল যিগ্দলিয়। পাশের ঘরে থাকতেন যিহূদার যুবরাজগণ। নীচের ঘরে থাকতো শল্লুমের পুত্র মাসেয়। মাসেয় ছিল মন্দিরের প্রহরী। তখন আমি (যিরমিয়) রেখবীয় পরিবারের আমন্ত্রিত সদস্যদের সামনে দ্রাক্ষারসের পাত্র রেখে বললাম, “সামান্য দ্রাক্ষারস পান করুন।”

কিন্তু তারা উত্তর দিল, “আমরা কখনও দ্রাক্ষারস পান করি না, কারণ আমাদের পূর্বপুরুষ রেখবীয় পুত্র যিহোনাদব আমাদের এই নির্দেশ দিয়েছিলেন: ‘তোমরা এবং তোমাদের উত্তরপুরুষ কেউ কখনো দ্রাক্ষারস পান করবে না। তোমরা ঘরবাড়ি তৈরী করবে না, ফসল বুনবে না, দ্রাক্ষার চাষ করবে না। তোমরা কেবল তাঁবুতে থাকবে। তোমরা যদি এগুলি মেনে চলো তাহলে তোমরা যাযাবরের মতো স্থান পরিবর্তন করে দীর্ঘদিন জীবিত থাকবে।’ তাই আমরা রেখবীয় পরিবারের সদস্যরা আমাদের পূর্বপুরুষ যিহোনাদবের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলি। আমরা কেউ দ্রাক্ষারস পান করি না। আমাদের স্ত্রী, ছেলেমেয়ে কেউ দ্রাক্ষারস পান করে না। আমরা কখনও বাস করার জন্য বাড়ি তৈরী করি না। দ্রাক্ষার চাষ করি না, ফসল ফলানোর জন্য বীজ বুনি না। 10 আমরা আমাদের পূর্বপুরুষ যিহোনাদবের নির্দেশ পালন করেছি এবং আমরা তাঁবুতেই বসবাস করেছি। 11 কিন্তু যখন নবূখদ্‌রিৎসর, বাবিলের রাজা যিহূদা আক্রমণ করেছিল, আমরা বলেছিলাম, ‘বাবিলীয় এবং আর্মেনীয় সৈন্যদের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য আমাদের জেরুশালেম শহরে যাওয়া যাক।’ তাই আমরা জেরুশালেমে পালিয়ে গিয়েছিলাম এবং তারপর থেকে ওখানেই থেকেছি।”

12 তখন প্রভুর বার্তা এলো যিরমিয়র কাছে। 13 প্রভু সর্বশক্তিমান ইস্রায়েলের ঈশ্বর বললেন: “যিরমিয় যাও। যিহূদা ও জেরুশালেমের লোকদের গিয়ে বলো: তোমাদের শিক্ষা হওয়া উচিৎ‌ এবং তোমরা আমার বার্তা পালন করবে।” 14 “রেখব তার উত্তরপুরুষদের নির্দেশ দিয়েছিল দ্রাক্ষারস পান না করতে। এবং সেই নির্দেশ আজও রেখবীয় পরিবারের সদস্যরা পালন করে আসছে। কিন্তু আমি প্রভু এবং আমি যিহূদার লোকরা, তোমাদের বারবার বার্তা পাঠানো সত্ত্বেও তোমরা আমাকে অগ্রাহ্য করেছ এবং অমান্য করেছ। 15 যিহূদা ও ইস্রায়েলের লোকদের কাছে বারবার আমার অনুচর এবং ভাববাদীদের পাঠিয়েছি। তারা তোমাদের বলেছে: ‘অসৎ‌ হওয়া বন্ধ করো। ভালো কাজ কর। অন্য দেবতাদের অনুসরণ করো না ও তাদের সেবা করো না। তোমরা যদি আমাকে মেনে চলতে তাহলে তোমরা এই দেশে বসবাস করতে পারতে, যে দেশ তোমাদের পূর্বপুরুষকে আমি দিয়েছিলাম।’ কিন্তু তোমরা আমার বার্তাকে পাত্তাই দিলে না। 16 যিহোনাদবের নির্দেশ তার উত্তরপুরুষরা মেনে চলেছিল কিন্তু যিহূদার লোকরা আমাকে মান্য করেনি।”

17 “তাই প্রভু সর্বশক্তিমান, ইস্রায়েলের ঈশ্বর বললেন: ‘আমি বলেছিলাম যিহূদা ও জেরুশালেমে লোকেদের ওপর বহু মারাত্মক ঘটনা ঘটবে। শীঘ্রই আমি সেগুলি ঘটাবো কারণ আমি ওই লোকদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম কিন্তু তারা আমার কথা শুনতে অস্বীকার করেছিল। আমি তাদের চিৎকার করে ডেকেছিলাম কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি।’”

18 যিরমিয়, রেখবীয় পরিবারকে বলেছিল, “সর্বশক্তিমান প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন: ‘তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষ যিহোনাদবের সব নির্দেশ মেনে চলেছো। তোমরা যিহোনাদবের শিক্ষাকেই অনুসরণ করে গিয়েছো।’ 19 তাই সর্বশক্তিমান প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন সেখানে সর্বদাই রেখবের পুত্র যিহোনাদবের উত্তরপুরুষদের কোন একজন আমাকে সেবা করবার জন্য আমার সামনে থাকবে।”

রাজা যিহোয়াকীম যিরমিয়র পাকানো পুঁথি পুড়িয়ে ছিল

36 যিহূদার রাজা যোশিয়ের পুত্র যিহোয়াকীম যখন তার রাজত্বকালের চতুর্থ বছরে পা দিয়েছে তখন প্রভুর এই বার্তা যিরমিয়র কাছে এসেছিল। এই হল প্রভুর বার্তা: “যিরমিয়, আমি তোমাকে যে সমস্ত বাণী শুনিয়েছি তা সব একটি পাকানো পুঁথিতে লিখে রাখো। যিহূদা, ইস্রায়েল এবং অন্যান্য দেশগুলি সম্বন্ধে যা যা বলেছি তাও লিখে রাখো। যোশিয়ের রাজত্বকাল থেকে আজ পর্যন্ত যে কথা বলেছি তার সব অক্ষরে অক্ষরে লিখে রাখো তোমার খাতায়। যিহূদার পরিবারের জন্য আমি যে সমস্ত বাজে জিনিষের পরিকল্পনা করেছি তা হয়তো তারা জানতে পারবে এবং হয়তো তারা খারাপ কাজ করা বন্ধ করবে। যদি তারা তাই করে তাহলে আমি তাদের ক্ষমা করব। ক্ষমা করে দেব তাদের সমস্ত পাপ।”

তাই যিরমিয় বারূককে ডাকল। বারূক ছিল নেরিয়ের পুত্র। যিরমিয় প্রভুর বার্তা বলছিল। যিরমিয় যখন সেই বার্তাগুলি বলছিল তখন বারূক তা খাতায় লিখে নিচ্ছিল। তখন যিরমিয় বারূককে বলেছিল, “আমি প্রভুর উপাসনা গৃহে যেতে পারব না। আমার সেখানে যাওয়া নিষেধ। তাই আমি চাই তুমি প্রভুর উপাসনা গৃহে যাও। সেখানে একটি উপবাসের দিন যাও এবং এই পুঁথি থেকে প্রভুর কথাগুলি লোকেদের পড়ে শোনাও। আমি যা বলেছি তুমি তা লিখেছো। এগুলো সবই প্রভুর বার্তা। যাও গিয়ে যিহূদার বিভিন্ন শহর থেকে জেরুশালেমে আসা সমস্ত লোককে এই বার্তা খাতা থেকে পাঠ করে শোনাও। হয়তো লোকরা প্রভুর কাছে এসে সাহায্য চাইবে। হয়তো তারা তাদের অসৎ‌ কাজগুলি করা বন্ধ করবে। প্রভু আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি তাদের ওপর প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে আছেন।” সুতরাং বারূক তাই করল যা তাকে ভাববাদী যিরমিয় করতে বলেছিল। সুরূক প্রভুর উপাসনাগৃহে খাতায় লিপিবদ্ধ করা প্রভুর বার্তা উচ্চস্বরে পাঠ করতে লাগল।

যিহোয়াকীমের রাজত্বকালের পঞ্চম বছরের নবম মাসে উপবাসের একটি দিন ঘোষিত হয়েছিল। জেরুশালেমের নাগরিক এবং যিহূদার সমস্ত শহর থেকে জেরুশালেম শহরে আসা প্রত্যেক লোককে প্রভুর সামনে উপবাস করতে হবে। 10 সে সময় বারূক খাতায় লেখা যিরমিয়র মুখ থেকে উচ্চারিত প্রভুর বার্তা পড়ে শোনাচ্ছিল উপাসনা গৃহে উপস্থিত লোকেদের। বারূক তখন থাকতো গমরিয়ের ঘরে। ঘরটি ছিল উপাসনাগৃহের নতুন ফটকের কাছে। গমরিয়ের পিতা ছিল শাফন। গমরিয় উপাসনাগৃহের লিপিকার ছিল।

11 বারূক যখন পড়ছিল তখন গমরিয়ের পুত্র মীখায় শুনছিল। গমরিয় ছিল শাফনের পুত্র। 12 মীখায় যখন পুঁথির সব বার্তা শুনল, তখন সে রাজপ্রাসাদের সচিবের ঘরে গেল। সেই ঘরে তখন রাজপরিবারের সমস্ত সভাসদরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সভাসদদের নামগুলি হল: রাজার আপ্ত সহায়ক ইলীশামা, শময়িয়ের পুত্র দলায়, অক্‌বোরের পুত্র ইল‌্নাথন, শাফনের পুত্র গমরিয়, হনানিয়ের পুত্র সিদিকিয় এবং অন্যান্য রাজসভার সভাসদরাও সেই ঘরে উপস্থিত ছিলেন। 13 পুঁথি থেকে বারূক যা কিছু পড়ে শুনিয়েছিল তা সব মীখায় গিয়ে সভাপারিষদদের বলেছিল।

14 তখন সেই সভাসদরা বারূকের কাছে যিহূদীকে পাঠাল। যিহূদী ছিল নথনিয়ের পুত্র এবং শেলিমিয়ের পৌত্র। শেলিমিয়ের পিতার নাম ছিল কূশি। যিহূদী বারূককে বলেছিল: “তুমি যে খাতাটি পাঠ করেছিলে সেই খাতাটি নিয়ে আমার সঙ্গে চলো।”

বারূক সেই খাতা সঙ্গে নিয়ে যিহূদীর সঙ্গে সভাপরিষদদের কাছে গেল।

15 রাজার সেই সভাসদরা বারূককে বললেন, “এখানে বসো এবং পুঁথিতে লেখা বাণীগুলি পড়ে শোনাও।”

সুতরাং বারূক খাতায় লেখা বাণীগুলি পাঠ করতে শুরু করল।

16 রাজার সভাসদরা সমস্ত বাণীগুলি শুনলেন এবং তারপর তারা ভয়ে একে অন্যের দিকে তাকালেন। তাঁরা বারূককে বললেন, “রাজা যিহোয়াকীমকে আমাদের এই খাতার সম্বন্ধে জানানো উচিৎ‌।” 17 তখন তাঁরা বারূককে একটি প্রশ্ন করলেন, “আচ্ছা বারূক বলো তো এই খাতায় যে বাণী তুমি লিখেছো তা তুমি কোত্থেকে পেলে? যিরমিয় তোমাকে যে সব জিনিসের কথা বলেছিল সে সব কি তুমি লিখেছিলে?”

18 বারূক উত্তর দিল, “হ্যাঁ! যিরমিয় আমাকে বলে গিয়েছে আর কালি দিয়ে সেই বাণী খাতায় আমি লিখে নিয়েছি।”

19 তখন রাজার পারিষদরা বারূককে বললেন, “তুমি আর যিরমিয় গিয়ে আত্মগোপন করে থাকো কিন্তু কোথায় আত্মগোপন করবে তা কাউকে জানিও না।”

20 তখন পারিষদরা ইলীশামার ঘরে সেই খাতাটি তুলে রেখে রাজা যিহোয়াকীমের কাছে গিয়ে সব খুলে বললেন।

21 সব শুনে রাজা যিহোয়াকীম খাতাটি নিয়ে আসার জন্য যিহূদীকে পাঠালেন। যিহূদী ইলীশামার ঘর থেকে পুঁথিটি নিয়ে এলো। তারপর সে রাজাকে এবং তার চার পাশের দাঁড়িয়ে থাকা কর্মচারীদের পুঁথিতে লেখা বাণীগুলি পড়ে শোনাতে লাগল। 22 এটা ঘটেছিল নবম মাসে, সুতরাং রাজা যিহোয়াকীম তাঁর শীতকালীন আবাসে বসেছিলেন। ঘরকে উষ্ণ রাখার জন্য তার সামনে তখন আগুন জ্বলছে। 23 যিহূদী আস্তে আস্তে খাতা থেকে লিপিবদ্ধ করা বাণী পড়ে যেতে থাকল। কিন্তু সে দুই বা তিন অনুচ্ছেদ পড়ার পরই রাজা তার কাছ থেকে খাতা ছিনিয়ে নিয়ে ছুরি দিয়ে খাতা থেকে পাতাগুলি কেটে কেটে আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দিতে লাগলেন। এইভাবে পুরো খাতাটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেল। 24 এবং রাজা যিহোয়াকীম ও তাঁর অনুচররা এই বাণী শুনেও ভীত হল না। শোকের চিহ্ন হিসেবে তারা তাদের কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলল না।

25 ইল‌্নাথন, দলায় এবং গমরিয় চেষ্টা করেছিল রাজার সঙ্গে কথা বলার যাতে তিনি খাতাটি না পোড়ান। কিন্তু রাজা তাদের কথা শোনেননি। 26 বরং উল্টে রাজা যিরহমেল, সরায় এবং শেলিমিয়কে আদেশ দিলেন ভাববাদী যিরমিয় এবং লিপিকার (লেখক) বারূককে গ্রেপ্তার করতে। যিরহমেল হল যুবরাজ ও সরায় হল অস্রীয়েলের পুত্র এবং শেলিমিয় হল অব্দিয়েলের পুত্র। কিন্তু তারা কেউই বারূক এবং যিরমিয়কে খুঁজে বার করতে পারল না। কারণ প্রভু তাদের লুকিয়ে রেখেছিলেন।

27 যিহোয়াকীম খাতাটি পুড়িয়ে ফেলার পর প্রভুর বার্তা এলো যিরমিয়র কাছে। ঐ খাতাতেই লিপিবদ্ধ ছিল প্রভুর সমস্ত বার্তা যা যিরমিয় বলে গিয়েছিল আর বারূক লিপিবদ্ধ করেছিল। ঐ খাতার প্রতিটি পাতায় এই ছিল সেই বার্তা যা পুনরায় প্রভু যিরমিয়কে বললেন:

28 “যিরমিয় আরেকটি খাতা নাও এবং সমস্ত বার্তাগুলি পুনরায় লিপিবদ্ধ করো। 29 যিরমিয়, আবার যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমকে একথাগুলি বলো। প্রভু যা বললেন: ‘যিহোয়াকীম তুমি খাতাটি পুড়িয়ে ফেলে বলেছিলে, “যিরমিয় কেন একথা লিখলো যে বাবিলের রাজা নিশ্চিতভাবেই এসে এই দেশ ধ্বংস করে দেবে? কেন সে লিখল যে বাবিলের রাজা এই দেশের মানুষ এবং পশু প্রাণী সবাইকে হত্যা করবে?” 30 তাই প্রভু যিহূদার রাজা যিহোয়াকীম সম্বন্ধে বললেন: যিহোয়াকীমের উত্তরপুরুষরা কেউ দায়ূদের সিংহাসনে বসতে পারবে না। এমনকি যিহোয়াকীম তার মৃত্যুর পরে সৎ‌কারের সময় রাজকীয় মর্যাদাও পাবে না। তার মৃতদেহ ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে মাঠের মধ্যে। দিনের প্রখর তাপ ও রাতের প্রবল ঠাণ্ডার মধ্যে খোলা মাঠে তার মৃতদেহ পড়ে থাকবে। 31 আমি প্রভু, যিহোয়াকীমকে তার সন্তানদের এবং তার পারিষদদেরও শাস্তি দেব। আমি তাদের প্রত্যেককে শাস্তি দেব কারণ তারা অসৎ‌ এবং মন্দ। আমি প্রতিশ্রুতি করেছি তাদের শাস্তি দেব। আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জেরুশালেম এবং যিহূদার লোকদের জীবনে ভয়ঙ্কর প্রলয় ঘটানোর জন্য। সমস্ত অমঙ্গল বয়ে আনব তাদের জীবনে। তারা আমার কথা শোনেনি।’”

32 তখন যিরমিয় অন্য একটি পুঁথি নিল এবং সেটি নেরিয়র পুত্র, লেখক বারূককে দিল লিপিবদ্ধ করার জন্য। যিরমিয় যা যা বলে যেতে থাকল বারূক তা লিপিবদ্ধ করতে থাকল। রাজা যিহোয়াকীম যে বার্তাগুলি পুড়িয়ে দিয়েছিল সেগুলি আবার নতুন খাতায় লিপিবদ্ধ করতে থাকল বারূক। এরই সঙ্গে যোগ হল আরো নতুন নতুন বার্তা।

যিরমিয়কে কারাগারে বন্দী করা হল

37 নবূখদ্‌রিৎসর ছিল বাবিলের রাজা। যিহোয়াকীমের পুত্র যিকনিয়ের পরিবর্তে সিদিকিয়কে যিহূদার রাজা হিসেবে নিযুক্ত করেছিল নবূখদ্‌রিৎসর। সিদিকিয় ছিল রাজা যোশিয়ের পুত্র। কিন্তু সিদিকিয় ভাববাদী যিরমিয় মাধ্যমে প্রচারিত প্রভুর বার্তাকে গুরুত্ব দেয়নি। এবং সিদিকিয়ের ভৃত্যগণ ও যিহূদার লোকরাও প্রভুর বার্তাকে গুরুত্ব দেয়নি।

সিদিকিয় যিহূখল এবং যাজক সফনিয়কে যিরমিয়র কাছে পাঠিয়েছিল একটি বার্তা দিয়ে। যিহূখল ছিল শেলিমিয়ের পুত্র এবং সফনিয় ছিল মাসেয়ের পুত্র। বার্তাটি ছিল: “যিরমিয়, আমাদের জন্য প্রভু, আমাদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করো।”

সেই সময় যিরমিয়কে তখনও কারাগারে বন্দী করা হয়নি, তাই লোকদের মধ্যে যে কোন জায়গায় যেতে তার বাধা ছিল না। একই সময় ফরৌণের সৈন্যরা মিশর ছেড়ে যিহূদার দিকে রওনা দিয়েছিল। এবং বাবিলের সৈন্যদল জেরুশালেমকে অধিকার করবার জন্য তাকে ঘিরে ফেলেছিল। কিন্তু যখন তারা শুনল ফরৌণের সৈন্যরা মিশর ছেড়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে তখন তারা জেরুশালেম ত্যাগ করে মিশরের সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য আগুয়ান হয়েছিল।

ভাববাদী যিরমিয়র কাছে প্রভুর বার্তা এলো: “প্রভু ইস্রায়েলের লোকদের ঈশ্বর যা বলেছেন তা হল: ‘যিহূখল ও সফনিয়, তোমাদের যে রাজা সিদিকিয় আমার কাছে পাঠিয়েছে তা আমি জানি। যাও সিদিকিয়র কাছে ফিরে গিয়ে বলো: ফরৌণের সৈন্যরা মিশর ছেড়ে বাবিলের সৈন্যদের হাত থেকে তোমাদের বাঁচাতে এলেও তারা কিন্তু আবার মিশরেই ফিরে যাবে। তারপর বাবিলের সৈন্য আবার এখানে এসে জেরুশালেম আক্রমণ করবে। তখন বাবিলের সৈন্য জেরুশালেম দখল করে নেবে এবং তাতে আগুন লাগিয়ে দেবে।’ প্রভু এরপর যা বললেন: ‘জেরুশালেমের লোকরা, তোমরা নিজেরাই নিজেদের বোকা বানিও না। নিজেদের একথা বলো না, “বাবিলের সৈন্যরা নিশ্চিত ভাবে আমাদের একলা ছেড়ে চলে যাবে।” তারা তা করবে না। 10 ওহে জেরুশালেমবাসী, তোমরা যদি বাবিলের সৈন্যদের যুদ্ধে পরাজিতও করতে পারতে তাহলেও তাদের তাঁবুতে কিছু আহত সৈনিক পড়ে থাকতো। এমনকি সেই আহত সৈনিকরাই উঠে এসে এই জেরুশালেম শহর পুড়িয়ে দিতে সক্ষম হতো।’”

11 বাবিলের সৈন্যরা যখন জেরুশালেম ত্যাগ করে মিশরের ফরৌণের সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল তখন 12 বিন্যামীন দেশে[b] যাবার জন্য যিরমিয় জেরুশালেম ত্যাগ করল। সে এই শহরে ভ্রমণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। সে সেখানে যেতে চেয়েছিল পারিবারিক সম্পত্তি ভাগ বাটোযারার জন্য। 13 কিন্তু যিরমিয় যখন জেরুশালেমের বিন্যামীন ফটকে পৌঁছেছিল তখনই তাকে ঐ ফটকের দায়িত্বে থাকা প্রধান রক্ষী গ্রেপ্তার করেছিল। সেই প্রধান রক্ষীর নাম ছিল যিরিয়। যিরিয় ছিল শেলিমিয়ের পুত্র এবং হনানিয়ের পৌত্র। যিরিয় যিরমিয়কে গ্রেপ্তার করার পর বলেছিল, “যিরমিয় তুমি আমাদের ত্যাগ করে বাবিলের পক্ষে যোগ দিতে যাচ্ছিলে।”

14 যিরমিয় যিরিয়কে বলেছিল, “তোমার অভিযোগ সত্যি নয়, আমি বাবিলের পক্ষে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম না।” কিন্তু যিরিয় যিরমিয়র সেই আপত্তি শুনতে অস্বীকার করেছিল এবং সে যিরমিয়কে গ্রেপ্তার করে রাজার সভাপরিষদদের সামনে এনে হাজির করেছিল। 15 ঐ সভাপরিষদরা যিরমিয়র প্রতি প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। সভাসদরা যিরমিয়কে প্রহার করে কারাগারে বন্দী করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যোনাথন নামক এক ব্যক্তির বাড়িটিকেই কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। যোনাথন ছিল যিহূদার রাজার আজ্ঞাবাহী লেখক 16 যিরমিয়কে তারা সেই বাড়ির ভূগর্ভস্থ একটি অন্ধকার কারা কক্ষে বন্দী করে রেখেছিল। কক্ষটি ছিল মাটির নীচে। যিরমিয়কে সেখানে দীর্ঘদিন রাখা হয়েছিল।

17 দীর্ঘদিন পর রাজা সিদিকিয় যিরমিয়কে তাঁর প্রাসাদে নিয়ে এসে একান্তে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। রাজা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “প্রভুর আর কোন বার্তা আছে?”

যিরমিয় উত্তর দিয়ে বলেছিল, “হ্যাঁ, প্রভুর বার্তা হল, সিদিকিয় তোমাকে বাবিলের রাজার হাতে তুলে দেওয়া হবে।” 18 যিরমিয় এরপর রাজা সিদিকিয়কে বলেছিল, “আমার অন্যায়টা কি? আমাকে কারাগারে নিক্ষেপ করবার মত কি এমন ভুল কাজ করেছি আপনার বিরুদ্ধে, আপনার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অথবা জেরুশালেমের লোকদের বিরুদ্ধে? 19 রাজা সিদিকিয় কোথায় এখন আপনার ভাববাদীরা? এই ভাববাদীরা আপনার কাছে ভুল বার্তা প্রচার করেছিল। তারা বলেছিল, ‘বাবিলের রাজা আপনাকে এবং ঐ দেশ যিহূদাকে আক্রমণ করবে না।’ 20 কিন্তু আমার প্রভু, যিহূদার রাজা এখন অনুগ্রহ করে আমার কথা শুনুন। আমাকে অনুগ্রহ করে অনুরোধ করতে দিন। এই হল আমার অনুরোধ: আমাকে আর এই লেখক যোনাথনের বাড়িতে কারাবন্দী করে রাখবেন না। যদি আপনি আবার আমাকে সেখানে পাঠান, আমি সেখানে মারা যাব।”

21 সুতরাং রাজা সিদিকিয় আদেশ দিয়েছিলেন যে, এবার থেকে যিরমিয়কে প্রহরীর পাহারায় মন্দির় চত্বরে বন্দী হয়ে থাকতে হবে এবং রাজার আদেশ ছিল যিরমিয়কে রুটি দেওয়া হবে রাস্তার হকারদের কাছ থেকে। শহরে যতদিন পর্যন্ত রুটি পাওয়া যাবে ততদিন পর্যন্ত যিরমিয়কে রুটি দেওয়া হবে। তাই যিরমিয়কে উঠোনে রক্ষীর অধীনে রাখা হয়েছিল।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International