Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
উপদেশক 7-12

সুশিক্ষামালা সংকলন

ভাল সুগন্ধের চেয়ে সুনাম শ্রেয়।
    একজন মানুষের যে দিন জন্ম হয় সেই দিনের থেকে তার মৃত্যুদিন ভাল।
উৎসবের গৃহে যাওয়ার চেয়ে শোকের গৃহে যাওয়া ভাল। কেন?
কারণ শোকের গৃহে লোকরা সত্যিই জানবে যে
    সব মানুষই মরণশীল।

আনন্দের চেয়ে দুঃখ শ্রেয়।
    কারণ যখন আমরা দুঃখ পাই তখন আমাদের হৃদয় শুদ্ধ হয়।
যে জ্ঞানী সে মৃত্যুর কথাও ভাবে
    কিন্তু মূর্খ শুধুই আমোদ-প্রমোদের কথা চিন্তা করে।
একজন মূর্খের দ্বারা প্রশংসিত হওয়ার চেয়ে
    জ্ঞানী ব্যক্তির দ্বারা সমালোচিত হওয়াও শ্রেয়।
মূর্খের অট্টহাসি হল পাত্রের নীচে জ্বলন্ত কাঁটার মতো
    যা এতই তাড়াতাড়ি পুড়ে যায় যে পাত্রটি উত্তপ্ত পর্যন্ত হয় না। এটাও অসার।
একজন জ্ঞানী যদি কারো কাছ থেকে যথেষ্ট অর্থ পায়
    তবে সে তার জ্ঞানও ভুলে যায়।
অর্থ তার বোধশক্তি নষ্ট করে দেয়।
কোন কিছু নতুন করে আরম্ভ করবার চেয়ে
    তাকে শেষ করা ভাল।
অধৈর্য্য ও অহঙ্কারী হওয়ার চেয়ে
    শান্ত ও ধৈর্য্যশীল হওয়া ভাল।
হঠাৎ‌‌ রেগে ওঠা উচিৎ‌ নয়।
    কারণ রাগ করা মূর্খামি।
10 একথা বলা উচিৎ‌ নয়, “এখনকার থেকে আগের সময় কেন বেশী ভাল ছিল।”
    কারণ জ্ঞান আমাদের এই প্রশ্নের দিকে চালিত করে না।

11 সম্পত্তি থাকার চেয়ে জ্ঞান থাকা ভাল। যথেষ্ট সম্পদ ছাড়াও জ্ঞানী ব্যক্তিরা প্রকৃতপক্ষে বেশী লাভবান হন। 12 প্রজ্ঞা ও সম্পদ উভয়েই তোমাকে রক্ষা করতে পারে। কিন্তু যে জ্ঞান প্রজ্ঞার মাধ্যমে লাভ করা যায় তা তোমার জীবনকে দীর্ঘ করতে পারে!

13 ঈশ্বর যা করেছেন সে দিকে তাকিয়ে দেখ। যদি কোন কিছু তোমার ভুলও মনে হয় তবুও তুমি তা পাল্টাতে পারবে না! 14 জীবন সুন্দর, তাকে উপভোগ কর। কিন্তু জীবন যখন কষ্টকর হবে তখন মনে রেখো ঈশ্বর আমাদের সুসময় ও দুঃসময় দুইই দেন এবং কেউই জানে না ভবিষ্যতে কি হতে পারে।

মানুষ সত্যিকারের ভাল হতে পারে না

15 আমার এই অযোগ্য জীবনে আমি অনেক কিছু দেখেছি এবং আমি আরো দেখেছি কিভাবে দুষ্ট লোক দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে। অথচ ধার্মিক লোক অল্প বয়সে মারা যায়। 16-17 কেন আত্মহনন করবে? কখনও খুব ভালও হবে না বা খুব খারাপও হবে না। বেশী জ্ঞানী বা বেশী মূর্খ কোনটাই হবে না। কেন তুমি তোমার অন্তিম সময়ের আগে মারা যাবে?

18 তুমি এদিক ওদিক দুদিকে থাকার চেষ্টা কর। এমনকি ঈশ্বরের অনুসরণকারীরাও কিছু ভাল ও কিছু মন্দ কাজ করে থাকে। 19 প্রজ্ঞা মানুষকে শক্তি জোগায়়। একজন জ্ঞানী ব্যক্তি শহরের দশ জন শাসকের চেয়ে বেশী শক্তিশালী। 20 নিশ্চিতভাবে, এই ভূমণ্ডলে এমন একজনও ধার্মিক ব্যক্তি নেই যে কোন অন্যায় করে নি।

21 মানুষের সব কথায় কান দিও না। তুমি হয়তো শুনবে তোমার ভৃত্য তোমার নিন্দা করছে। 22 এবং তুমি জান যে তুমি নিজেও অনেক সময় অন্যদের বদনাম করেছ।

23 আমি আমার জ্ঞান দিয়ে এই সমস্ত কিছু ভেবে দেখেছি। আমি সত্যিকারের জ্ঞানলাভ করতে চেয়েছি। কিন্তু তা অসম্ভব। 24 আমি সমস্ত জিনিসের অস্তিত্বের ধরণ বুঝতে পারি না। এটা কারো পক্ষে বুঝে ওঠা খুবই কঠিন। 25 আমি অধ্যয়ন করেছি ও অনেক চেষ্টা করেছি সত্যিকারের জ্ঞান খুঁজে পেতে। আমি সব কিছুর ভেতরকার ব্যাখ্যা খুঁজে পেতে চেয়েছি। আমি কি শিখলাম?

আমি জানলাম অসৎ‌ হওয়া বোকামো, মূর্খের মতো কাজ করা পাগলামো। 26 আমি আরো দেখেছিলাম যে কিছু নারী হল ভয়ঙ্কর এক ফাঁদের মতো, তাদের হৃদয় জালের মতো ও বাহু শিকলের মতো। এই রকম নারীর ফাঁদে পড়ার চেয়ে মৃত্যুও শ্রেয়। যে ঈশ্বরকে অনুসরণ করে সে এদের থেকে দূরে থাকবে। কিন্তু একজন পাপী এদের হাতে ধরা পড়বে।

27-28 উপদেশক বলল, “আমি এই সমস্ত কিছু যোগ করে দেখতে চেয়েছিলাম কোন উত্তর পাওয়া যায় কিনা। আমি এখনও উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছি। আমি কেবল মাত্র একটি জিনিষ খুঁজে পেলাম। হাজার জনের মধ্যে একজন ভাল মানুষ আছে। কিন্তু আমি একজনও ভাল মহিলাকে খুঁজে পাই নি।

29 “আমি আরো একটা জিনিস শিখেছিলাম: ঈশ্বরই সব ভালো মানুষ তৈরী করেন। কিন্তু মানুষ খারাপ পথে চালিত হয়।”

জ্ঞান ও শক্তি

কেউই একজন জ্ঞানী ব্যক্তির মতো করে কোন জিনিসকে বুঝতে বা ব্যাখ্যা করতে পারবে না। তার জ্ঞানই তাকে সুখী করবে। একমাত্র জ্ঞানই দুঃখকে সুখে পরিণত করতে পারে।

আমি সর্বদা রাজার আদেশ মান্য করি। আমি এটা করি কারণ আমি ঈশ্বরের কাছে একটি প্রতিশ্রুতি করেছি। রাজাকে তোমার পরামর্শ জানাতে ভয় পেয়ো না। এবং কখনও অন্যায়কে সমর্থন কোরো না। কিন্তু মনে রেখো যে রাজা তাঁর ইচ্ছানুযায়ী আদেশ দেন। রাজার আদেশ দেওয়ার অধিকার আছে এবং কেউই তাঁকে বলে দিতে পারে না তাঁর কি করা উচিৎ‌। যে ব্যক্তি রাজার আদেশ মেনে চলে সরকারের সঙ্গে তার কোন সমস্যা হবে না। এবং একজন জ্ঞানী লোক জানে ঠিক কোন সময় এবং কিভাবে রাজার কাছে যেতে হবে।

এমনকি লোকের বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্ত্বেও প্রত্যেকটি কাজের একটা সঠিক সময় ও সঠিক পদ্ধতি আছে। আর সে নিশ্চিত ভাবে জানে না কি হতে পারে। কেন? কারণ কেউই তাকে বলতে পারবে না ভবিষ্যতে কি হবে।

কোন মানুষেরই তার আত্মাকে ধরে রাখার ক্ষমতা নেই। কেউই মৃত্যুকে আটকাতে পারবে না। যুদ্ধের সময় কোন সৈন্যেরই যেখানে খুশী যাওয়ার স্বাধীনতা নেই। একই ভাবে যদি কোন ব্যক্তি অন্যায় করে তবে সেই অন্যায় তাকে মুক্তি দেয় না।

আমি প্রত্যেকটি জিনিষ পর্যবেক্ষণ করেছি আর ভেবেছি কেন সূর্যের নীচে এরকম হয়। আমি এও দেখেছি যে একজন ব্যক্তি কিভাবে আর একজন ব্যক্তির ওপর আধিপত্যের জন্য ক্ষমতার পেছনে ছোটে। এটা তার পক্ষে খারাপ।

10 আমি দেখেছি কিভাবে মন্দ লোকদের অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ঐসব মন্দ লোক যথেচ্ছভাবে পবিত্র স্থানে যেত এবং তারা শহরে প্রকৃতপক্ষে কি করেছিল তা লোকে ভুলে যায়।

বিচার, পুরস্কার ও শাস্তি

11 কখনও কখনও মন্দ লোকরা তাদের খারাপ কাজের জন্য সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি পায় না। এজন্য তারা আরো খারাপ কাজে নিজেদের লিপ্ত করে।

12 একজন পাপী একশোটি খারাপ কাজ করতে পারে। সে দীর্ঘদিন বেঁচেও থাকতে পারে। কিন্তু আমি এও জানি যে ঈশ্বরকে মান্য করা ও শ্রদ্ধা করা অনেক ভাল। 13 মন্দ লোকরা ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা করে না, তাই তারা কখনও ভাল কিছু পায় না। তারা দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে না। তাদের জীবন সেই ছায়ার মত হয় না যা সূর্যাস্তের পর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়।

14 আরো অনেক কিছু এই পৃথিবীতেই ঘটে থাকে যা অর্থহীন। কত সময়ে ভালো লোকের খারাপ হয় আবার খারাপ লোকের ভালো হয়। এর কোন মানে হয় না। 15 তাই আমি স্থির করেছিলাম যে জীবনকে উপভোগ করব। কেন? কারণ মানুষের পক্ষে সূর্যের নীচে প্রেয় হল খাদ্য, পানীয় ও আনন্দের মধ্যে জীবন উপভোগ করা। যাতে তারা প্রতিদিন কাজ করে জীবনকে উপভোগ করতে পারে, যা ঈশ্বর তাদের সূর্যের নীচে দিয়েছেন।

ঈশ্বর যা কিছু করেন তা আমরা বুঝতে পারি না

16 আমি নিজেকে প্রজ্ঞাপূর্ণ করার দায়িত্ব নিলাম। লোকরা এই জীবনে যা করে থাকে তা আমি ভাল করে লক্ষ্য করেছিলাম। আমি দেখেছিলাম অনেক লোক ব্যস্ত। তারা দিন রাত কাজ করে এবং প্রায় ঘুমোয় না বললেই চলে। 17 আমি আরো অনেক কিছু দেখে ছিলাম যা ঈশ্বর করেন। আমি এও দেখে ছিলাম সূর্যের নীচে ঈশ্বর যা করেন লোকরা তা অবশ্যই বোঝে। একজন ব্যক্তি চেষ্টা করতে পারে কিন্তু সে সফল হবে না। একজন জ্ঞানী ব্যক্তি বলতে পারেন যে তিনি ঈশ্বর যা করেন তা বোঝেন, কিন্তু আসলে তা সত্যি নয়।

মৃত্যু কি ন্যায্য?

আমি এ সব কিছু গভীর ভাবে চিন্তা করেছিলাম। আমি দেখে ছিলাম ধার্মিক ও জ্ঞানী লোকরা যা করেন বা তাদের যা হয় সে সবই ঈশ্বরই নিয়ন্ত্রণ করেন। লোকরা জানে না তাদের ঘৃণা করা হবে, না ভালোবাসা হবে। লোকরা এও জানে না ভবিষ্যতে কি হবে।

কিন্তু সবার ক্ষেত্রে একই জিনিস ঘটে। ভাল ও মন্দ উভয় ধরণের লোকরাই মারা যান। শুচি ও অশুচি দুধরণের লোকের কাছেই মৃত্যু আসে। যারা ঈশ্বরকে নৈবেদ্য দেয় না তাদের মতো যারা ঈশ্বরকে নৈবেদ্য দেয় তারাও মারা যায়। একজন ভাল লোকও একজন পাপীর মত মারা যায়। যে ব্যক্তি ঈশ্বরের কাছে বিশেষ প্রতিশ্রুতি দেয় সেও সেই ব্যক্তির মতো মারা যায়, যে ঈশ্বরের কাছে প্রতিশ্রুতি দিতে ভয় পায়।

সূর্যের নীচে যা কিছু খারাপ ঘটনা ঘটে প্রত্যেকের ক্ষেত্রে একই পরিণতি হয়। এটাও খুবই খারাপ যে লোকেরা সবসময় মন্দ ও মূর্খের মতো চিন্তা করবে এবং সেই চিন্তা তাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাবে। যে এখনও বেঁচে আছে সে যেই হোক্ না কেন তার জন্য আশা আছে। এই প্রবাদটি সত্যি যে:

জীবিত কুকুর মৃত সিংহের চেয়ে শ্রেয়।

জীবিত মানুষ জানে যে সে মারা যাবে। কিন্তু মৃত মানুষ কিছু জানে না। মৃত মানুষের আর কোন কিছু পাওয়ার নেই। মানুষ খুব তাড়াতাড়ি তাকে ভুলে যাবে। একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর ভালবাসা, ঘৃণা, ঈর্ষা কোন কিছু অবশিষ্ট থাকে না। একজন মৃত ব্যক্তি সূর্যের নীচে যা কিছু হবে তাতে আর ভাগ নেবে না।

যতক্ষণ পারো জীবনকে উপভোগ কর

তুমি তোমার খাদ্য ও পানীয়কে উপভোগ কর। যদি তুমি এসব করো ঈশ্বর আনন্দিত হবেন। তোমার পোশাক পরিচ্ছদ পরিষ্কার রাখো এবং মাথায় তেল ব্যবহার করো। সূর্যের নীচে তোমার অযোগ্য জীবন যতদিন থাকে ততদিন তোমার স্ত্রী, যাকে তুমি ভালবাস তার সঙ্গে তুমি জীবন উপভোগ কর এবং তোমার কাছে যা কিছু আছে তা হল এই। তোমার জীবনে যে সব কাজ তোমায় করতে হবে তা উপভোগ করো। 10 তোমাকে যে কাজই দেওয়া হোক্ না কেন সব সময় সেটা উদ্যমসহ সম্পন্ন করার চেষ্টা করবে। মৃত্যুর পর আমরা সবাই একই জায়গায় যাব। সেখানে কোন কাজ, কোন চিন্তা, কোন জ্ঞান বা কোন প্রজ্ঞা থাকে না।

সৌভাগ্য? দুর্ভাগ্য? আমরা কি করতে পারি?

11 আমি পৃথিবীতে আরো কিছু জিনিস লক্ষ্য করলাম। যে জোরে দৌড়ায় সে সবসময় প্রতিযোগীতায় জেতে না; একটি শক্তিশালী সৈন্যদল সব সময় যুদ্ধে জেতে না। জ্ঞানী ব্যক্তি সব সময় তার কষ্টোপার্জিত আহার পায় না, যে চালাক সে সব সময় সম্পদ পায় না। একজন বিদ্বান ব্যক্তি সব সময় তার প্রাপ্য যশ পায় না। এমন সময় আসে যখন প্রত্যেকের কাছে আশাতীত প্রতিকুলতা ঘটে।

12 একজন মানুষ হল সেই জালে পড়া মাছের মত যে জানে না তা পরবর্তীকালে কি হবে, সেই ফাঁদে পড়া পাখির মতো যে তার ভবিষ্যত জানে না। কিন্তু আমি জানি একজন মানুষ হঠাৎ‌‌ই দুর্ভাগ্যের ফাঁদে পড়ে যায়।

জ্ঞানের শক্তি

13 যখনই আমি কোন মানুষকে প্রজ্ঞার মতো কাজ করতে দেখেছি তা আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। 14 একটি ছোট শহরে খুব অল্প সংখ্যক লোক বাস করত। একজন রাজা শহরটি জয় করতে এলেন এবং তার সেনাবাহিনী দিয়ে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললেন এবং শহরের চারপাশে অবরোধ গঠন করলেন। 15 কিন্তু সেই শহরে একজন জ্ঞানী মানুষ বাস করতেন যিনি দরিদ্র ছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর জ্ঞান ব্যবহার করে সেই শহরকে রক্ষা করেন। সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার পর মানুষ সেই দরিদ্র লোকটির কথা ভুলে যায়। 16 কিন্তু আমি এখনও বলব যে দৈহিক শক্তির চেয়ে জ্ঞান শ্রেয়। সেই লোকরা দরিদ্র লোকটির জ্ঞানের কথা ভুলে যায়, তার কথা শুনতে ভুলে যায়। কিন্তু তবুও আমি জ্ঞানকে শ্রেয় বলে মনে করি।

17 একজন জ্ঞানী ব্যক্তির শান্ত, সৌম্য কথা বলা
    মূর্খদের মধ্যে একজন শাসকের গর্জনের চেয়ে ঢের ভাল।
18 যুদ্ধে ব্যবহৃত তরবারি ও তীরের চেয়ে জ্ঞান শ্রেয়।
    কিন্তু একজন পাপী ভাল জিনিসকে নষ্ট করে ফেলতে পারে।

10 দু-একটি মরা মাছিও সব থেকে ভাল সুগন্ধকে দুর্গন্ধে পরিণত করতে পারে। ঠিক একই ভাবে অনেক জ্ঞান ও সম্মান সামান্য বোকামিতে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

একজন জ্ঞানী মানুষের চিন্তা তাকে সঠিক পথ দেখায়, কিন্তু মূর্খের চিন্তা তাকে বিপথে নিয়ে যায়। একজন মূর্খ রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়ও তার বোকামি প্রদর্শন করে থাকে। তাই সবাই তাকে একজন মূর্খ হিসেবে জানতে পারে।

তোমার মনিব তোমার ওপর রাগ করলেই চাকরি ছেড়ে দিও না। তুমি শান্ত ভাবে সহায়তা করে অনেক বড় ভুল শুধরে নিতে পারবে।

আমি সূর্যের নীচে আরো কিছু খারাপ জিনিস লক্ষ্য করেছি। এগুলো সেই ধরণের ভুল যা শাসকরা সাধারণতঃ করে থাকে। মূর্খদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়। অন্য দিকে ধনী ব্যক্তিরা গুরুত্বহীন কাজ পায়। আমি দেখেছি যাদের ভৃত্য হওয়া উচিৎ‌ তারা ঘোড়ায় করে যাচ্ছে অথচ যাদের শাসক হওয়ার কথা তারা ভৃত্যের মত এদের পাশে হেঁটে যাচ্ছে।

প্রত্যেক কাজেই বিপদ আছে

যে ব্যক্তি গর্ত খোঁড়ে সে নিজেই গর্তে পড়ে যেতে পারে। যে ব্যক্তি তার শক্তি দিয়ে একটি দেওয়াল ভেঙে ফেলতে পারে সে দেওয়ালের অপর দিকে লুকিয়ে থাকা সাপের কামড়ে মারা যেতে পারে। যে ব্যক্তি বিশাল পাথর সরায় সে পাথরের আঘাতে আহত হতে পারে। যে ব্যক্তি গাছ কাটে সেই গাছগুলি তার ওপরেই পড়তে পারে।

10 জ্ঞান যে কোন কাজকে সহজ করে দেয়। ভোঁতা ছুরি দিয়ে কোন কিছু কাটা শক্ত কিন্তু সেই ছুরিটাতেই যদি শান দেওয়া যায় তবে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। জ্ঞানও সেই রকমই।

11 একজন মানুষ সাপকে বশ করতে জানতে পারে। কিন্তু সেই গুণ অর্থহীন হয়ে পড়ে যখন তার অনুপস্থিতিতে কাউকে সাপে কামড়ায়। জ্ঞানও সেই রকমই।

12 জ্ঞানী মানুষের কথায় খ্যাতি আসে।
    কিন্তু মূর্খের কথা ধ্বংস ডেকে আনে।

13 একজন মূর্খ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রলাপ বকে। 14 একজন মূর্খ, সে কি করবে সে ব্যাপারে বহু কথা বলে। কিন্তু ভবিষ্যতে কি হবে তা কেউই জানে না।

15 একজন মূর্খের ঘরে ফেরার পথ খুঁজে নেওয়ার মতো বুদ্ধি থাকে না।
    তাই সে সারা জীবন খেটে মরে।

শ্রমের মূল্য

16 একজন রাজা যদি শিশুসুলভ হয় তা যে কোন দেশের পক্ষেই খারাপ। আবার কোন দেশের শাসক যদি ভোজন বিলাসে মত্ত থাকে সব সময় সেটা দেশের পক্ষে ভালো নয়। 17 কিন্তু যদি কোন রাজা সদ্-বংশজাত হয় তা দেশের পক্ষে মঙ্গলকর। যদি কোন দেশের শাসকগণ, আনন্দের জন্য নয় কিন্তু শক্তির জন্য যথাসময়ে খায় তাহলে তা দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক কারণ তারা পরিমিত জীবনযাপন করেন।

18 যে মানুষ অলস হয়
    তার ছাদ ফুটো হয়ে ক্রমে বাড়ি ভেঙে পড়ে।

19 খাদ্য ও দ্রাক্ষারস মানুষের জীবনকে উপভোগ্য করে তোলে। অর্থ অনেক সমস্যার সমাধান করে দেয়।

পরনিন্দা

20 রাজার সম্বন্ধে খারাপ কথা বলো না। তার সম্বন্ধে খারাপ কিছু ভেবো না। তুমি যদি ঘরে একাও থাক তাহলেও কোন ধনী ব্যক্তির সম্পর্কে খারাপ কিছু বোলো না। কেন? কারণ একটা ছোট পাখিও উড়ে গিয়ে সবাইকে সে কথা বলে দিতে পারে।

সাহসের সঙ্গে ভবিষ্যতের মোকাবিলা কর

11 বিভিন্ন রকমের কাজ করার চেষ্টা করো। কিছু সময় পরে তোমার ভাল কাজের ফল তুমি পেয়ে যাবে।

তোমার যা আছে তা তুমি বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ কর। তুমি জান না পৃথিবীতে কত কিছু খারাপ ঘটতে পারে।

কিছু জিনিস আছে যার সম্বন্ধে তুমি নিশ্চিত হতে পারো। যদি মেঘ জলকণায় পূর্ণ থাকে তা থেকে বৃষ্টি হবেই। উত্তরে বা দক্ষিণে কোন দিকেই হোক্, কোন গাছ যদি পড়ে যায় তা সেখানেই থাকবে।

যদি কোন ব্যক্তি নিখুঁত আবহাওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকে তবে সে কোন দিনই বীজ বপন করতে পারবে না। যদি কোন ব্যক্তি বৃষ্টিকে ভয় পায় তবে সে কখনই ফসল কাটতে পারবে না।

তোমরা জানো না বাতাস কোথায় বয়। তোমরা জান না কিভাবে শিশুর মাতৃগর্ভে নিঃশ্বাস আসে। সেই রকমই ঈশ্বর কি করবেন আমাদের জানা নেই। তিনি সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন।

তাই, সকাল থেকেই রোপণ করতে শুরু কর ও সন্ধ্যের সময় অন্য কাজ করো। কেন? কারণ তুমি জান না কিসে তুমি ধনী হবে। অথবা উভয়ই সমান ভাবে ভালো।

আলো সুন্দর। সূর্যের আলো দেখাও ভাল। তোমার জীবনের প্রতিটি দিন উপভোগ করো। কিন্তু যখন কঠিন সময় আসবে তখন ভালো সময়ের কথা স্মরণে রেখো। কারণ নানা অনর্থক ব্যাপার ঘটবে।

যৌবনে ঈশ্বরের সেবা কর

যতক্ষণ তোমার যৌবন আছে ততক্ষণ তা উপভোগ কর। সুখে থাকো, তোমার প্রাণ যা চায় তাই কর। কিন্তু মনে রেখো ঈশ্বর তোমার সব কাজের বিচার করবেন। 10 ক্রোধ দ্বারা পরিচালিত হয়ো না। তোমার দেহকে কোন মন্দ কাজ করতে দিও না, কারণ যৌবন এবং ইচ্ছা কোন কাজে লাগে না।

বৃদ্ধ বয়সের সমস্যা

12 বৃদ্ধ বয়সে যে সময়ে তোমার জীবনকে ব্যর্থ মনে হবে সেই সময় আসার আগে তোমার যৌবনেই তুমি সৃষ্টিকর্তার কথা স্মরণ করো।

চন্দ্র, সূর্য এবং তারা তোমার কাছে অন্ধকার হয়ে আসার আগেই যৌবনকালে তুমি তোমার সৃষ্টিকর্তার কথা ভাবো। একটার পর একটা ঝড়ের মতোই সমস্যা আসে।

সেই সময় তোমার বাহুতে শক্তি থাকবে না। তোমার পা দুর্বল হয়ে বেঁকে যাবে। তোমার দাঁত পড়ে যাবে আর খাওয়ার বা চিবিয়ে খাওয়ার ক্ষমতা থাকবে না। তোমার দৃষ্টিশক্তি কমে যাবে। তোমার শ্রবণ ক্ষমতা কমে যাবে। তুমি রাস্তার শব্দ শুনতে পাবে না। এমনকি পাথর দিয়ে শস্যদানা ভাঙার শব্দও তুমি শুনতে পাবে না। তুমি কোন নারী কণ্ঠের গান শুনতে পাবে না। কিন্তু ভোর বেলায় কোন একটি পাখির গানও তোমাকে জাগিয়ে দেবে কারণ তুমি ঘুমোতে পারবে না।

তুমি উঁচু জায়গায় চড়তে ভয় পাবে, তুমি তোমার পথের ওপর পড়ে থাকা প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র জিনিসের ওপর পা দিতে ভয় পাবে। তোমার চুল বাদাম গাছের ফুলের মতো সাদা হয়ে যাবে। তুমি হাঁটার সময়ে ফড়িংএর মতো নিজেকে বয়ে বেড়াবে। তুমি বাঁচার শক্তি হারিয়ে ফেলবে। আর এরপর তুমি তোমার সমাধিতে স্থান পাবে। বিলাপকারীরা তোমার শোকযাত্রায় সমবেত হবে।

মৃত্যু

যৌবনে রূপোর তার ছিঁড়ে যাওয়ার আগে,
    সোনার পাত্র ভেঙে যাওয়ার আগে
    তুমি তোমার সৃষ্টিকর্তার কথা স্মরণ কর।
    ভাঙ্গা পাত্রের মতো তোমার জীবন অর্থহীন হওয়ার আগে,
    কুয়োতে ভেঙে পড়ে যাওয়া পাথরের চাকার মতো তোমার জীবন নষ্ট হওয়ার আগে
    তুমি সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ কর।
তোমার শরীর মাটি থেকে এসেছে
    এবং তোমার মৃত্যুর পর তোমার শরীর আবার মাটিতেই মিশে যাবে,
কিন্তু তোমার আত্মা এসেছে ঈশ্বরের কাছ থেকে,
    তোমার মৃত্যুর পর তা আবার ঈশ্বরের কাছেই ফিরে যাবে।

সব কিছুই অর্থহীন, উপদেশক বলেছেন সবই সময়ের অপচয়।

উপসংহার

উপদেশক তাঁর প্রজ্ঞা অন্য লোকদের শিক্ষার কাজে লাগাতেন। উপদেশক অত্যন্ত যত্নসহকারে অনেক জ্ঞানের বাণী অধ্যয়ন করেছিলেন ও সেগুলিকে একত্র করে সংগ্রহ করেছিলেন। 10 উপদেশক সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন এবং তিনি সত্য ও নির্ভরযোগ্য নীতিকথা লিখে গিয়েছিলেন।

11 জ্ঞানী ব্যক্তির কথা হল সেই তীক্ষ্ণ লাঠির মত যা মানুষ পশুদের সঠিক রাস্তায় নিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যবহার করে। সেই উপদেশ হল শক্ত পেয়ালার মতো যা ভাঙে না। সেই শিক্ষামালা তোমাকে সঠিক রাস্তা দেখাবে। ঐসব নীতির বাণীই এসেছিল একই মেষপালকের (ঈশ্বরের) কাছ থেকে। 12 তাই ঐ বাণীগুলি পড় কিন্তু পুত্র ও অন্য বই সম্বন্ধে সাবধান থেকো। মানুষ সর্বদাই বই লিখছে এবং অতিরিক্ত অধ্যয়ন তোমাকে ক্লান্ত করে দেবে।

13-14 এই বইতে যা লেখা তার থেকে কি শিক্ষা আমরা নেবো? মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা করা ও তার আদেশ মান্য করা। কেন? কারণ মানুষ যা কিছু করে ঈশ্বর তা জানেন, সেটা গুপ্ত কিছু হলেও ঈশ্বর তা জানেন। তিনি ভাল ও মন্দ সব বিষয়ই জানেন। মানুষ যা কিছু করবে ঈশ্বর তার বিচার করবেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International