Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
1 রাজাবলি 5-6

শলোমনের মন্দির নির্মাণ

সোরের রাজা হীরম ছিলেন রাজা শলোমনের পিতা দায়ূদের বন্ধু। হীরম যখন খবর পেলেন দায়ূদের পরে শলোমন নতুন রাজা হয়েছেন, তিনি তাঁর দাসদের শলোমনের কাছে পাঠালেন। শলোমন রাজা হীরমকে জানালেন:

“আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, আমার পিতা রাজা দায়ূদকে তাঁর চারপাশে অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছিল যত দিন পর্যন্ত না প্রভু তাঁকে তাদের উপর বিজয়ী হতে দেন, যে কারণে প্রভু, তাঁর ঈশ্বরের সম্মানে কোনো মন্দির বানানোর সময় পাননি। কিন্তু এখন প্রভু, আমার ঈশ্বরের ইচ্ছায় আমার রাজ্যের সর্বত্র শান্তি বিরাজ করছে। আমার কোন শত্রু নেই। আমার প্রজাদেরও কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই।

“প্রভু আমার পিতাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ‘তোমার পরে আমি তোমার পুত্রকেই রাজা করবো, আর সে আমার জন্য একটা মন্দির বানাবে।’ তাই আমার আন্তরিক ইচ্ছা প্রভুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমি এবার সেই মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করব। আর একাজে আমি আপনার সাহায্য চাই। এর জন্য আপনি দয়া করে লিবানোনে আপনার লোকজন পাঠান। তারা সেখানে এসে আমার এই কাজের জন্য এরস গাছ কাটবে। আমার নিজের ভৃত্যরাও আপনার লোকদের সঙ্গে হাত লাগাবে। একাজের জন্য আপনার ভৃত্যদের যে পারিশ্রমিক দেওয়া উচিৎ‌ বলে আপনি মনে করবেন আমি তাই দেব, কিন্তু আপনার সাহায্য অবশ্যই চাই। আমাদের এখানকার ছুতোররা সীদোনের ছুতোরদের মতো দক্ষ নয়।”

হীরম শলোমনের এই অনুরোধ শুনে খুবই খুশি হলেন। তিনি আনন্দিত হয়ে বললেন, “প্রভুকে আমি আমার অশেষ ধন্যবাদ জানাই, কারণ এই মহান সাম্রাজ্য শাসনের জন্য তিনি রাজা দায়ূদকে একজন বুদ্ধিমান পুত্র উপহার দিয়েছেন।” এরপর হীরম শলোমনকে খবর পাঠালেন,

“তোমার অনুরোধের কথা জানলাম। তোমার যতগুলি এরস গাছ ও দেবদারু গাছের প্রয়োজন আমি তোমায় দেব। আমার ভৃত্যরা সেগুলো লিবানোন থেকে সমুদ্রের ধার পর্যন্ত আনার পর একসঙ্গে বেঁধে তুমি যেখানে চাও সেখানেই ভেলা করে সমুদ্রের কিনারা বেয়ে ভাসিয়ে দেব। তারপর আমি ভেলাগুলো সরিয়ে নেবার পর তুমি গাছগুলো নিয়ে নিতে পার। এবং আমার পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করাই হবে আমার প্রতি তোমার অনুগ্রহ।”

10-11 একাজের জন্য শলোমন প্রতি বছর হীরম ও তাঁর পরিবারবর্গের জন্য প্রায় 120,000 বুশেল গম, 120,000 গ্যালন খাঁটি তেল পাঠাতেন।

12 প্রতিশ্রুতি মতো প্রভু শলোমনকে অন্তর্দৃষ্টি ও জ্ঞান দিয়েছিলেন এবং রাজা হীরম ও শলোমনের মধ্যে শান্তি বজায় ছিল। তাঁরা দুজনে নিজেদের মধ্যে একটি চুক্তি করেন।

13 রাজা শলোমন ইস্রায়েলের 30,000 ব্যক্তিকে তাঁর কাজে সহায়তার জন্য নিয়োগ করলেন। 14 তিনি এই সমস্ত লোকদের খবরদারি করার জন্য অদোনীরাম নামে এক ব্যক্তিকে প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করেন। শলোমন এই 30,000 লোককে 10,000 লোকের তিনটি দলে ভাগ করে দিয়েছিলেন। লিবানোনে এক মাস কাজ করবার পর প্রত্যেকটি দলের লোকরা বাড়ী যেত এবং দু মাস বিশ্রাম নিত। 15 এছাড়াও শলোমন পার্বত্য অঞ্চলের 80,000 লোককে এই কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেন। এদের কাজ ছিল পাথর কাটা। আর আরো 70,000 লোক সেই পাথর বয়ে নিয়ে যেত। 16 এদের সকলের তদারকির জন্য নিযুক্ত হয়েছিল আরো 3300 জন। 17 রাজা শলোমন শ্রমিকদের মন্দিরের ভিত বানানোর জন্য বড় দামী পাথর কাটার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই সমস্ত পাথরগুলি খুব সাবধানে কাটা হত। 18 তারপর শলোমন ও হীরমের মিস্ত্রিরা আর বিব্লসের লোকরা এইসব পাথর খোদাই করত। তারা মন্দিরের জন্য প্রয়োজনীয় তক্তা ও পাথর বানাত।

শলোমন মন্দির নির্মাণ করলেন

ইস্রায়েলের লোকরা মিশর থেকে চলে আসার 480 বছর[a] পরে এবং তাঁর রাজত্বের চার বছরের মাথায়, রাজা শলোমন ঈশ্বরের মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এটি ছিল ঐ বছরের দ্বিতীয় মাস বা সিব মাস। মন্দিরটি দৈর্ঘ্যে ছিল 60 হাত, প্রস্থে 20 হাত এবং উচ্চতায় 30 হাত। মন্দিরের সামনেই 20 হাত দীর্ঘ ও 10 হাত চওড়া একটি বারান্দা ছিল। মন্দিরের গায়ে কয়েকটা জানালা ছিল, যেগুলোর ভেতরের অংশ বাইরের তুলনায় চওড়া। অতঃপর শলোমন মূল মন্দিরের চারপাশ ঘিরে একটার ওপর আর একটা একসারি ঘর তৈরী করলেন। এগুলো প্রায় তিনতলা পর্যন্ত উঁচু ছিল। ঘরগুলো মন্দিরের দেওয়াল সংলগ্ন হলেও ঘরের কড়ি-বরগাগুলো মন্দিরের দেওয়ালের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। মন্দিরের দেওয়ালটি ওপরের দিকে ক্রমশঃ সরু হয়ে উঠেছিল, অতএব এই ঘরগুলোর এক দিকের দেওয়াল ঠিক নীচের ঘরের দেওয়ালের থেকে সরু হয়ে গিয়েছিল। একদম নীচের তলার ঘরের প্রস্থ ছিল 5 হাত, মাঝের ঘরের প্রস্থ ছিল প্রায় 6 হাত এবং একেবারে ওপরের ঘরের প্রস্থ ছিল প্রায় 7 হাত। দেওয়ালগুলো বানানোর জন্য মিস্ত্রিরা বড় পাথর ব্যবহার করেছিল। এইসব পাথর যেখান থেকে আনা সেখানেই কেটে আনা হয়েছিল বলে মন্দির প্রাঙ্গণে হাতুড়ি, কুড়ুল বা কোন রকমের আওয়াজ পাওয়া যেত না।

নীচের ঘরগুলোয়় প্রবেশদ্বার ছিল মন্দিরের দক্ষিণ দিক থেকে। তারপর ভেতরে ঢোকার পর সিঁড়ি ওপরদিকে উঠে গিয়েছিল একতলা ও দোতলা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে তিনতলা পর্যন্ত।

শলোমনের মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ হল। মন্দিরের প্রতিটি অংশ এরস গাছের তক্তা দিয়ে ঢাকা ছিল। 10 মন্দিরের চার পাশের ঘর বানানোর কাজও শেষ হল। এই ঘরগুলো প্রায় 5 হাত উঁচু ছিল। এইসব ঘরের এরস কাঠের কড়ি মন্দিরকে ছুঁয়ে থাকত।

11 প্রভু শলোমনকে বলেছিলেন, 12 “যদি তুমি আমার বিধি এবং নির্দেশগুলি মেনে চলো তাহলে আমি যা যা করব বলে তোমার পিতা দায়ূদকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা পালন করব। 13 এছাড়াও তুমি যে মন্দির তৈরী করছ সেখানে ইস্রায়েলের সন্তান সন্ততিদের মধ্যে বাস করব। ইস্রায়েলের বাসিন্দাদের কখনও ছেড়ে যাব না।”

14 শলোমন মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ করলেন। 15 মন্দিরের ভেতরের পাথরের দেওয়াল ও ছাদ এরস কাঠে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। মন্দিরের মেঝে ঢাকা হয়েছিল দেবদারু গাছের তক্তা দিয়ে। 16 মন্দিরের পেছন দিকে 20 হাত দীর্ঘ একটি ঘর বানানো হয়েছিল। এই ঘরটি ছিল মন্দিরের পবিত্রতম স্থান। এই ঘরের দেওয়াল মেঝের থেকে ছাদ পর্যন্ত এরস কাঠে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল। 17 পবিত্রতম স্থানের সামনে ছিল মন্দিরের মূল অংশ বা ঘরটি, যার দৈর্ঘ্য প্রায় পৌনে 40 হাত। 18 এখানকার দেওয়াল এবং ছাদও একই ভাবে এরসকাঠে ঢাকা ছিল। দেওয়ালের কোন পাথরই দেখা যেত না। দেওয়ালে এরস কাঠের নানা ধরণের ফুল ও লতাপাতার ছবি খোদাই করা ছিল।

19 প্রভুর সাক্ষ্যসিন্দুকটি রাখার জন্য শলোমন মন্দিরের একেবারে পেছনদিকে বিশেষ ভাবে ঘরটি নির্মাণ করেছিলেন। 20 এই ঘরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা ছিল 20 হাত। 21 শলোমন ঘরটি আগাগোড়া বিশুদ্ধ সোনার পাত দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন। তিনি ঘরের সামনে ধূপধূনো দেবার জন্য একটি বেদী তৈরী করেছিলেন। তিনি বেদীটি সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন এবং তার চারপাশে সোনার হার জড়িয়ে দিয়েছিলেন। এছাড়াও ঘরটিতে সোনায় মোড়া দুই করূব দূতের মূর্ত্তি ছিল। 22 বস্তুত গোটা মন্দিরটাই সোনায় মোড়া ছিল। পবিত্রতম স্থানের সামনের বেদীটিও ছিল সোনায় ঢাকা।

23 মন্দির নির্মাতারা 10 হাত দীর্ঘ করূব দূতের ডানাওয়ালা মূর্ত্তি দুটো প্রথমে বিশেষ এক ধরণের গাছের কাঠে বানিয়ে তারপর সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিল। 24-27 মূর্ত্তি দুটোর প্রত্যেকটি ডানার দৈর্ঘ্য প্রায় 5 হাত করে অর্থাৎ‌ ডানার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত মূর্ত্তিদুটো ছিল প্রায় 10 হাত চওড়া। গর্ভগৃহের পাশাপাশি, সম দৈর্ঘ্যের এই মূর্ত্তি দুটো দাঁড় করানো থাকত। 28 দুটো করূব দূত সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিল।

29 মন্দিরের মূল ঘরটির দেওয়ালের ওপর এবং মন্দিরের অন্তবর্ত্তী ঘরটির দেওয়ালের ওপর তালগাছ, বিভিন্ন ফুল, লতাপাতা ও করূব দূতের ছবি খোদাই করা ছিল। 30 দুটো ঘরের মেঝেই সোনায় ঢাকা ছিল।

31 কর্মীরা জিতগাছের কাঠ দিয়ে দুটো দরজা বানিয়েছিল এবং সে দুটি পবিত্রতম স্থানের প্রবেশ পথে বসিয়ে দিয়েছিল। দরজার পথে চারপাশের কাঠামো 1/5 হাত চওড়া ছিল। 32 তারা জৈতুন গাছের কাঠ থেকে দুটো দরজা তৈরী করল। মিস্ত্রিদের তৈরী সোনার পাতে মোড়া দরজা দুটোয় খোদাই করা ছিল তালগাছ, বিভিন্ন লতাপাতা ও করূব দূতের ছবি।

33 মূল ঘরটিতে প্রবেশ করবার জন্যও তারা দরজা বানিয়েছিল। একটি চার কোণা দরজার কাঠামো বানানোর জন্য তারা জিতগাছের কাঠ ব্যবহার করেছিল, যা চওড়ায় ছিল চার ভাগের এক ভাগ। 34-35 সেই কাঠামোয় দেবদারু কাঠের দুটি দরজা বসানো হয়। এই প্রত্যেকটি দরজা আবার দুভাগে মুড়ে ভাঁজ হতো। এগুলোর ওপরেও একই রকম করূব দূতের ছবি খোদাই করে সোনায় মোড়া ছিল।

36 এরপর তিনসারি কাটা পাথরের দেওয়াল ও একসারি এরস কাঠের দেওয়াল দিয়ে ঘিরে মন্দিরের ভেতরের অংশ তৈরী করা হল।

37 সিব মাসে শলোমনের চতুর্থ বছরের রাজত্বের দ্বিতীয় মাসে শুরু করে বুল মাসে, 38 অর্থাৎ‌ তাঁর একাদশ বছরের অষ্টম মাসের রাজত্বের সময় মন্দিরটির নির্মাণ কার্য শেষ হয়। যে ভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল সাত বছর সময় নিয়ে ঠিক সে ভাবে মন্দিরটি বানানো হয়েছিল।

2 বংশাবলি 2-3

শলোমনের মন্দির ও রাজপ্রাসাদ নির্মাণের পরিকল্পনা

প্রভুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার জন্য শলোমন একটি মন্দির ও নিজের জন্য একটি রাজপ্রাসাদ বানানোর পরিকল্পনা করেন। এই কাজের জন্য তিনি 70,000 শ্রমিক, 80,000 পাথর কাটা মিস্ত্রী ও এদের কাজের তদারকির জন্য 3600 জন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করেছিলেন।

এরপর শলোমন সোরের রাজা হূরমের কাছে অনুরোধ করে পাঠালেন,

“আমার পিতা দায়ূদকে যেভাবে সাহায্য করেছিলেন, আপনাকে আমায় সেভাবেই সাহায্য করতে হবে। আপনি এরস কাঠ পাঠিয়েছিলেন, যাতে আমার পিতা তাঁর নিজের জন্য একটি বাসযোগ্য বাড়ী তৈরী করতে পারেন। এখন আমি আমার প্রভু, ঈশ্বরের নামে একটা মন্দির বানিয়ে তাঁকে উৎসর্গ করতে চলেছি যাতে সেই মন্দিরে প্রভুর সামনে আমরা সুমিষ্টগন্ধী ধুপধূনো জ্বালাতে পারি এবং নিয়মিতভাবে সেই বিশেষ টেবিলে পবিত্র রুটি[a] নৈবেদ্য দিতে পারি। প্রতি সকাল-সন্ধ্যা, বিশ্রামের দিন ও অমাবস্যায় এবং প্রভু আমাদের ঈশ্বরের নির্দেশিত উৎসবের দিন হোমবলি উৎসর্গ করা হবে। ঠিক হয়েছে, ইস্রায়েলের লোকরা চিরকাল এই ক্রিয়া-কর্ম চালিয়ে যাবে।

“যেহেতু আমাদের ঈশ্বর অন্যান্য দেবতা থেকে মহান তাই আমি তাঁর উদ্দেশ্যে একটা বিশাল মন্দির বানাতে চাই। কারো পক্ষেই কোনো ঘর বাড়ী বানিয়ে সেখানে আমাদের ঈশ্বরকে রাখা সম্ভব নয়। এমনকি স্বর্গ এবং স্বর্গের স্বর্গও ঈশ্বরকে ধরে রাখতে পারে না। সুতরাং, আমি ক্ষুদ্র মানুষ, ঈশ্বরের মন্দির আর কি করে বানাবো? আমি শুধুমাত্র তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ধুপধূনো দেবার মতো একটা জায়গা বানাতে পারি।

“আমি চাই আপনি আমাকে সোনা, রূপো, পিতল ও লোহার কাজ জানা একজন দক্ষ কারিগর পাঠান যে বেগুনী, লাল এবং নীল রঙের সূক্ষ্ম কাপড় দিয়েও কাজ করতে জানে। সে এখানে যিহূদা এবং জেরুশালেমে আমার পিতার বেছে রাখা কারিগরদের সঙ্গে কাজ করবে। এছাড়াও, আপনাকে আমায় লিবানোন থেকে শক্ত ও দামী দামী কিছু গাছের গুঁড়ি পাঠাতে হবে। আমি জানি আপনার কর্মচারীরা লিবানোন থেকে গাছ কাটার ব্যাপারে অভিজ্ঞ। আমার কর্মচারীরাও তাদের সঙ্গে গিয়ে হাত লাগাবে। আমি মন্দিরটা খুব বড় আর সুন্দর করে বানাতে চাই এবং সে কারণে আমার বহু পরিমাণ কাঠ লাগবে। 10 তাদের কাজের মজুরি হিসেবে আমি আপনার কর্মচারীদের 125,000 বুশেল গমের আটা, 125,000 বুশেল যব, 115,000 গ্যালন দ্রাক্ষারস এবং 115,000 গ্যালন তেল দেবো।”

11 হূরম শলোমনকে বলে পাঠালেন,

“শলোমন, প্রভু তাঁর লোকদের ভালোবাসেন বলেই তিনি তোমাকে তাদের রাজা করেছেন। 12 প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের মহিমা কীর্ত্তিত হোক্ যিনি স্বর্গ ও পৃথিবী বানিয়েছেন এবং রাজা দায়ূদকে একটি সুসন্তান দিয়েছেন। শলোমন তোমার প্রজ্ঞা ও বোধ আছে এবং তুমি প্রভুর জন্য একটি মন্দির আর তোমার নিজের জন্য একটি প্রাসাদ তৈরী করছ। 13 আমি তোমার কাছে হূরম আবি নামে একজন দক্ষ কারিগর পাঠাবো। 14 হূরমের মাতা ছিলেন দান গোষ্ঠীর থেকে আর পিতা ছিলেন সোর থেকে। হূরম আবি সোনা, রূপো, পিতল, লোহা এবং কাঠের একজন দক্ষ কারিগর। এছাড়াও দামী বেগুনী, লাল ও নীল রঙের কাপড়েরও সে একজন দক্ষ কারিগর। তোমার নির্দেশ মতো সবকিছুই ও বানাতে পারবে। তোমার পিতা রাজা দায়ূদের বাছাই করা কারিগরদের সঙ্গে গিয়ে কাজ করবে।

15 “এখন, হে রাজন, তুমি তোমার প্রতিশ্রুতি মত আমার কর্মচারীদের গম, যব, তেল ও দ্রাক্ষারস দিও। 16 লিবানোন থেকে তোমার যতটা পরিমাণ কাঠ লাগবে সেগুলি আমরা কাটব এবং সেগুলি ভেলায় করে সমুদ্র পথে যাফোতে পাঠিয়ে দেবো। সেখান থেকেই তুমি সেগুলো জেরুশালেমে নিয়ে যেতে পারো।”

17 এরপর, শলোমন তাঁর পিতা (দায়ূদ যেভাবে লোক গণনা করেছিলেন) সেভাবে ইস্রায়েলে কতজন বিদেশী বাস করে তা জানবার জন্য গণনা করলেন। বিদেশী জনসংখ্যা ছিল 153,600 জন। 18 এর মধ্যে শলোমন ভার বইবার জন্য 70,000 লোক আর পর্বতের ওপর পাথর কাটার জন্য 80,000 লোককে বেছে নিয়েছিলেন। আর এইসব কাজকর্ম তদারকি করার জন্য 3600 জনকে বাছলেন।

শলোমনের মন্দির নির্মাণ

জেরুশালেমের মোরিয়া পর্বতের ওপর শলোমন প্রভুর মন্দির বানানোর কাজ শুরু করলেন। এইটি সেই জায়গা যেখানে প্রভু, শলোমনের পিতা, রাজা দায়ূদের সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং সেটি ছিল যিবূষীয় অর্ণানের শস্য মাড়াইয়ের খামার। শলোমন তাঁর রাজত্বের চতুর্থ বছরের দ্বিতীয় মাসে মন্দির বানানোর কাজ শুরু করেন।

ঈশ্বরের মন্দিরের ভিতের দৈর্ঘ্য ছিল 60 হাত আর প্রস্থ 20 হাত। মন্দিরের সামনের গাড়ি বারান্দাটি উচ্চতায় ও দৈর্ঘ্যে ছিল 20 হাত। ভেতরের দিকের চত্বরটি শলোমন আগাগোড়া সোনায় মুড়ে দিয়েছিলেন। তিনি মন্দিরের বড় ঘরের দেওয়ালে দেবদারু কাঠের আস্তরণ দিয়ে তার ওপরে সোনার আস্তরণ দিয়েছিলেন। সেই সব দেওয়ালে তালগাছ আর শিকলের ছবি খোদাই করা ছিল। মন্দিরটিকে আরো সুন্দর দেখাবার জন্য শলোমন বহু মূল্যবান পাথর দিয়ে সাজিয়েছিলেন এবং তিনি পর্বয়িমের সোনা ব্যবহার করেছিলেন। মন্দিরের কড়িকাঠগুলি, দরজার কাঠামোগুলি, দরজাগুলি এবং মন্দিরের দেওয়ালগুলি তিনি সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন এবং দেওয়ালের ওপর তিনি করূব দূতদের প্রতিকৃতি খোদাই করেছিলেন।

শলোমন মন্দিরের পবিত্রতম স্থানটিও নির্মাণ করেছিলেন। পবিত্রতম স্থানটি দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে ছিল 20 হাত। অর্থাৎ‌ পবিত্রতম স্থানের মাপ আর মন্দিরের প্রস্থের মাপ ছিল এক। পবিত্রতম স্থানের দেওয়ালও 23 টন সোনা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। এক একটা সোনার পেরেকের ওজন ছিল 1 1/4 পাউণ্ড। মন্দিরের ওপর ঘরগুলোও শলোমন সোনা দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলেন। 10 পবিত্রতম স্থানে রাখবার জন্য তিনি দুটি করূব দূতের মূর্ত্তি খোদাই করেছিলেন এবং সেগুলো সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন। 11 এই করূব দূতদের এক একটা ডানার দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় 5 হাত অর্থাৎ‌ ডানার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত মোট দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় 20 হাত। 12 করূব দূতের মূর্ত্তি দুটো এমনভাবে বসানো হয়েছিল যাতে মাঝামাঝি জায়গায় এদের একজনের ডানার সঙ্গে অন্যজনের ডানা ছুঁয়ে থাকে। 13 তাদের ডানাগুলি ছড়িয়ে দিয়ে তারা 20 হাত জায়গা ঢেকে দিয়েছিল এবং তাদের পায়ের ওপর এমনভাবে দাঁড়িয়েছিল যে মনে হচ্ছিল যেন তারা ঘরের ভেতরের দিকে চেয়ে আছে।

14 নীল, বেগুনী এবং লাল রঙের কাপড় দিয়ে শলোমন পর্দাসমূহ বানিয়েছিলেন এবং সেগুলোর ওপর সূচীশিল্প দিয়ে করূব দূতও বানিয়েছিলেন।

15 মন্দিরের সামনে প্রায় 35 হাত দীর্ঘ দুটি স্তম্ভ বানানো হয়েছিল। এই দুটি স্তম্ভের ওপরের অংশ দুটো ছিল 5 হাত দীর্ঘ। 16 তিনি শেকলের মত মালা তৈরী করেছিলেন এবং সেগুলো স্তম্ভ দুটির মাথায় রেখেছিলেন। এর পরে তিনি এক শত ডালিম তৈরী করেছিলেন এবং সেগুলো মালায় স্থাপন করেছিলেন। তারপর তিনি 100 টি ডালিম তৈরী করে সেই মালায় বসিয়ে দিয়েছিলেন। 17 মন্দিরের সামনে ডানদিকে যে স্তম্ভটা বসানো হয়েছিল শলোমন তার নাম দিয়েছিলেন “যাখীন” এবং বাঁদিকের স্তম্ভটার নাম দেওয়া হয় “বোয়স।”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International