Chronological
1 এগুলি হল, উপদেশকের কথা যিনি ছিলেন দায়ূদের পুত্র এবং জেরুশালেমের রাজা।
2 সবই এত অর্থহীন! তাই উপদেশকের মতে সবই অসার, সবই সময়ের অপচয়! 3 মানুষ সূর্যের নীচে যে কঠিন পরিশ্রম করে সে কি তার কোন ফল পায়? না!
কোন কিছুই বদলায় না
4 বংশপরম্পরা পর্যায়ক্রমে আসে এবং যায়। কিন্তু পৃথিবী চিরন্তণ। 5 সূর্য ওঠে আবার অস্ত যায়। তারপর দ্রুত ফিরে যায় সেই একই জায়গায় যেখান থেকে আবার সূর্য ওঠে।
6 বাতাস দক্ষিণে বয় এবং উত্তরেও বয়। বাতাস চারিদিক ঘুরে ঘুরে আবার তার নিজের জায়গায় ফিরে যায়।
7 সব নদী বার বার একই দিকে বয়ে চলে। সমস্ত নদীই সমুদ্রে গিয়ে মেশে কিন্তু সমুদ্র কখনও পূর্ণ হয় না।
8 সব কথাই ক্লান্তিকর। কিন্তু তবুও লোকে কথা বলে। আমরা সব সময়ই কথা শুনি কিন্তু তাতে আমরা সন্তুষ্ট হই না। আবার সব সময় আমরা যে সব জিনিস দেখি তাতেও আমাদের মন ভরে না।
কোন কিছুই নতুন নয়
9 সব জিনিসই সৃষ্টির সময় যেমন ছিল সে রকমই থেকে যায়। যা আগে করা হয়েছে তাই আবার পরেও করা হবে। সূর্যের নীচে কোন কিছুই নতুন নয়।
10 এমন কোন কিছু নেই যাকে কোন ব্যক্তি নতুন বলতে পারে! যে জিনিসকে মানুষ নতুন বলবে তা আমাদের জন্মের আগে থেকেই বর্তমান।
11 যা অনেক আগে ঘটে গেছে সে ঘটনা লোকে মনে রাখে না। এখন যা ঘটছে ভবিষ্যতে তা লোকে ভুলে যাবে। পরবর্তী প্রজন্ম মনেও রাখবে না আগেকার লোক তাদের জন্য কি করে গেছে।
প্রজ্ঞা কি সুখের উৎস?
12 আমি উপদেশক, আমি ছিলাম জেরুশালেমের অন্তর্গত ইস্রায়েলের রাজা। 13 সূর্যের নীচে যা কিছু ঘটে তাকে আমি প্রজ্ঞা দ্বারা জানতে চেয়েছিলাম। আমি জানতে পেরেছিলাম যে ঈশ্বর লোকদের যা করতে দেন তা খুবই কঠিন ও কষ্টকর। 14 আমি দেখেছিলাম সূর্যের নীচে যা কিছু করা হয় তা সবই অসার, সময়ের অপচয় মাত্র। এ যেন অনেকটা হাওয়ার পেছনে ছোটা। 15 যা কিছু বাঁকা তাকে পাল্টে সোজা করা সম্ভব নয়। যা নেই তাকে সরবরাহ করা যায় না।
16 আমি নিজেকে বলেছিলাম, “জেরুশালেমে আমার পূর্বে যেসব ব্যক্তি ছিলেন, তাঁদের সকলের চেয়েও আমি বেশী প্রজ্ঞাবিশিষ্ট হয়েছি। আমি সত্যিই জানি প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের অর্থ কি!”
17 আমি জানতে চেয়েছিলাম জ্ঞান ও বিদ্যা কিভাবে অজ্ঞানতার চেয়ে ভালো। কিন্তু আমি জেনেছিলাম যে জ্ঞানলাভের চেষ্টা করা মানে শুধুই হাওয়ার পিছনে ছোটা। 18 জ্ঞানের সঙ্গে আসে হতাশা। যে মানুষ যত বেশী জ্ঞান লাভ করে সে তত বেশী দুঃখ পায়।
“লঘু আনন্দে” কি সুখ পাওয়া যায়?
2 আমি নিজেকে বলেছিলাম, “আমি যতটা সম্ভব সব কিছুকে উপভোগ করব।” কিন্তু আমি জানতে পেরেছিলাম যে এসবই অসার। 2 হাসি জিনিষটা বোকামি; আনন্দ কোন উদ্দেশ্য সিদ্ধ করে না।
3 তাই আমি ঠিক করেছিলাম দ্রাক্ষারস পান করে শরীরকে ও জ্ঞানলাভ করে মনকে ভাল রাখব। আমি এরকম বোকামি করেছিলাম কারণ আমি সুখের সন্ধান পেতে চেয়েছিলাম। আমি বুঝতে চেয়েছিলাম এই অল্প দিনের জীবনে মানুষের কি করা উচিৎ।
কঠিন পরিশ্রম কি সুখের উৎস?
4 তারপর আমি নানা মহৎ কাজ করতে শুরু করেছিলাম। আমি নিজের জন্য নানা জায়গায় বাড়ি তৈরী করেছিলাম। দ্রাক্ষার ক্ষেত তৈরী করেছিলাম। 5 আমি বাগান করেছিলাম। উপবন করেছিলাম, আমি সব রকম ফলের গাছ লাগিয়েছিলাম। 6 আমি নিজের জন্য পুকুর কাটিয়ে ছিলাম। আমি সেই পুকুরের জল আমার বাগানের গাছে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতাম। 7 আমি পুরুষ ও স্ত্রী ক্রীতদাস কিনেছিলাম এবং আমি যখন তাদের মালিকানা পেলাম তখন তাদের ছেলেমেয়ে ছিল। আমার অনেক ঐশ্বর্য ছিল। আমার অনেক গরু ও মেষের পাল ছিল। আমি এত ধনী ছিলাম যে সে রকম ধনী জেরুশালেমে কেউ ইতিপূর্বে ছিল না।
8 আমি আমার নিজের জন্য সোনা ও রূপা সংগ্রহ করেছিলাম। আমি বিভিন্ন দেশের রাজাদের কাছ থেকে ধন সংগ্রহ করেছিলাম। আমাকে খুশী করার জন্য অনেক গায়ক ও গায়িকা ছিল। আমার কাছে সবই ছিল যা সকলের কাছে প্রয়োজনীয়। আমার কাছে সমস্ত রকমের বাদ্যযন্ত্র ছিল।
9 আমি বিরাট ঐশ্বর্য ও খ্যাতি লাভ করেছিলাম। জেরুশালেমে আমার আগে যে সমস্ত লোক ছিল আমি ছিলাম তাদের সবার চেয়ে মহৎ। আমার জ্ঞান ছিল সব সময় আমার সহায়। 10 আমার চোখে যা ভাল লাগত এবং আমাকে যা খুশী করত, আমি তা সবই পেতাম। আমি কঠিন পরিশ্রম করে যা কিছু করেছিলাম তা নিয়ে আনন্দিত ছিলাম এবং আমার এইসব জিনিস প্রাপ্য ছিল, কারণ আমি এর জন্য কাজ করেছিলাম।
11 কিন্তু আমি যখন আমার সমস্ত কাজের কথা, পরিশ্রমের কথা চিন্তা করলাম তখন দেখলাম সবই সময়ের অপচয়! এসবই ছিল হাওয়ার পিছনে ছোটা। সূর্যের নীচে আমরা যা করি তাতে কোন লাভ নেই।
হতে পারে জ্ঞানই এর একমাত্র উত্তর
12 একজন পুরাতন রাজা ইতিমধ্যেই যা করেছে, একজন নতুন রাজা তার চেয়ে বেশী কিছু করতে পারে না। তাই আমি আমার বিজ্ঞতার, ভুলভ্রান্তির ও পাগলামির কথা আবার ভাবতে শুরু করলাম। 13 অন্ধকারের থেকে আলো যেমন ভালো জ্ঞানও ঠিক তেমনি অজ্ঞানতার চেয়ে ভালো। 14 একজন জ্ঞানী মানুষ তার পথ দেখবার জন্য তার চোখ ব্যবহার করে। কিন্তু যে মূর্খ সে শুধুই অন্ধকারে ঘুরে বেড়ায়।
কিন্তু আমি লক্ষ্য করলাম যে একজন জ্ঞানী ও মূর্খ উভয়ের পরিসমাপ্তি একই। অবশেষে তারা উভয়েই মারা যায়। 15 আমি নিজে ভেবেছিলাম, “একজন মূর্খের যে পরিণতি হয় আমারও তাই হবে। তবে আমি কেন জ্ঞান লাভের জন্য এত কঠিন পরিশ্রম করব?” আমি নিজেকে বললাম, “জ্ঞানী হওয়াও অর্থহীন।” 16 জ্ঞানী ও মূর্খ উভয়েরই পরিণতি মৃত্যু এবং মানুষ জ্ঞানী বা মূর্খ কাউকেই চিরকাল মনে রাখবে না। তারা যা কিছু করেছিল ভবিষ্যতে তা মানুষ ভুলে যাবে। তাই জ্ঞানী ও মূর্খ প্রকৃত অর্থে একই।
জীবনে কি প্রকৃত সুখ বলে কিছু আছে?
17 এতে আমার জীবনের প্রতি ঘৃণা এসে গেল। আমার মনে হল যে পৃথিবীতে আমার কাছে যা কিছু আছে তা সবই অর্থহীন। সবই হাওয়াকে ধরবার চেষ্টা করবার মত।
18 সূর্যের নীচে আমার সমস্ত কঠিন পরিশ্রমের কাজে আমার ঘৃণা জন্মেছিল। যার জন্য আমি কঠিন পরিশ্রম করে গিয়েছি তা আমার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যাব। আমার কঠিন পরিশ্রমের ফল আমি আমার সঙ্গে রাখতে পারব না। 19 আমি যা কিছু শিখেছি এবং যা কিছু কাজ করেছি তা অন্য কোন লোক নিয়ন্ত্রণ করবে। এমনকি আমি এটাও জানতে পারব না যে সে জ্ঞানী হবে কি মূর্খ। এটাও অসার।
20 আমি সূর্যের নীচে যা কিছু কাজ করেছি তার জন্য আমি দুঃখিত। 21 একজন ব্যক্তি তার সমস্ত প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও পারদর্শীতা দিয়ে কঠিন পরিশ্রম করতে পারে। কিন্তু তার পরিশ্রমের ফল তার মৃত্যুর পর অন্য লোক ভোগ করবে। সেই লোকরা বিনা আয়াসে সব কিছু পেয়ে যাবে। এটাও অসার এবং এ একটা ভীষণ পাপ।
22 একজন ব্যক্তি সূর্যের নীচে তার জীবনভর সংগ্রামের পর কতটুকু পায়? 23 সে সারা জীবন পায় শুধু যন্ত্রণা, হতাশা আর কঠিন পরিশ্রম। এমনকি রাতেও সে বিশ্রাম পায় না। এটাও অসার।
24-25 আমার থেকে বেশী আর কে জীবনকে উপভোগ করার চেষ্টা করেছে? এবং সব শেষে আমি এই শিক্ষাই পেয়েছিলাম। মানুষের পক্ষে সব চেয়ে ভালো কাজ হল খাওয়া-দাওয়া করা ও তার কাজকে উপভোগ করা। আমি দেখেছিলাম ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে জীবন উপভোগ করা সম্ভব নয়। 26 একজন মানুষ যদি ভাল কাজ করে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে পারে, তাহলে ঈশ্বর তাকে জ্ঞান, বিদ্যা ও আনন্দ দেন। কিন্তু যে পাপী সে শুধুই সংগ্রহ আর বহনের কাজ পাবে। মন্দ লোকের কাছ থেকে নিয়ে ঈশ্বর ভালো লোককে পুরস্কার দেন। কিন্তু সমস্ত কাজই অর্থহীন। সবই হাওয়ার পিছনে ছোটা।
একটি সময় আছে
3 সব কিছুরই একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। এবং সূর্যের নীচে একটা নির্দিষ্ট সময় সব কিছুই ঘটবে।
2 জন্মেরও যেমন একটি সময় আছে,
মৃত্যুরও তেমনি সময় আছে।
রোপণের সময় আছে
এবং তুলে ফেলারও সময় আছে।
3 হত্যার এবং সারিয়ে তোলার
একটা নির্দিষ্ট সময় আছে।
ধ্বংসেরও যেমন নির্দিষ্ট সময় আছে
তেমনি তৈরী করারও নির্দিষ্ট সময় আছে।
4 কান্নারও সময় আছে,
হাসারও সময় আছে।
দুঃখ পাবার যেমন সময় আছে,
তেমনি আনন্দে নাচ করারও সময় আছে।
5 অস্ত্র নামিয়ে রাখার,
আবার তা তুলে নেবারও নির্দিষ্ট সময় আছে।[a]
কাউকে আলিঙ্গন করার যেমন সময় আছে
আবার আলিঙ্গন না করে তাকে এড়িয়ে যাবারও সময় আছে।
6 কাউকে খোঁজার যেমন সময় আছে
আবার তা ফেলে দেবারও সময় আছে।
কাউকে রেখে দেওয়া
বা কাউকে ছুঁড়ে দেওয়ারও নির্দিষ্ট সময় আছে।
7 জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলার যেমন সময় আছে
তেমনি তা সেলাই করারও সময় আছে।
নীরব থাকারও যেমন সময় আছে
তেমনি সরব হওয়ারও সময় আছে।
8 ভালোবাসা
এবং ঘৃণা করারও সময় আছে।
যুদ্ধেরও একটি নির্দিষ্ট সময় আছে
আবার শান্তি রক্ষা করারও সঠিক সময় আছে।
ঈশ্বর তাঁর পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করেন
9 একজন মানুষ কি তার কঠোর পরিশ্রমের কোন মূল্য পায় না? না! 10 আমি দেখেছি ঈশ্বর আমাদের সমস্ত কঠিন পরিশ্রমের কাজ করতে দেন। 11 ঈশ্বর আমাদের তাঁর পৃথিবী নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার ক্ষমতা দিয়েছেন। কিন্তু আমরা ঈশ্বরের কাজের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত হতে পারি না এবং এখন ঈশ্বর সব কিছু সঠিক সময়ই করেন।
12 আমি জানি যে মানুষ সারা জীবন সুখে ও আনন্দে বেঁচে থাকতে পারবে—এটাই সবচেয়ে মহৎ কাজ। 13 ঈশ্বর চান প্রত্যেকে পানীয়, খাদ্য এবং তাদের কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাক। এই হল ঈশ্বরের উপহার।
14 আমি জানি ঈশ্বর যা করেন তা চিরস্থায়ী হয়। মানুষ ঈশ্বরের কর্মকাণ্ডকে বাড়াতেও পারে না এবং কমাতেও পারে না। আর ঈশ্বর তা করেছেন কারণ যাতে মানুষ তাঁকে সম্মান জানায়। 15 অতীতে যে ঘটনাগুলি ঘটেছিল সেগুলিকে আমরা বদলাতে পারব না। ভবিষ্যতে যা ঘটার তা ঘটবে এবং আমরা তাকেও বদলাতে পারব না। কিন্তু ঈশ্বর দেখেন কি সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে।[b]
16 আমি সূর্যের নীচে এই ঘটনাগুলির সাক্ষী। আদালতে সাধুতা ও নিষ্কলঙ্ক থাকা উচিৎ। কিন্তু আমি সেখানেও দুষ্টতা দেখেছি। 17 তাই আমি নিজেকে বলেছিলাম, “সব কিছুর পেছনেই ঈশ্বরের একটি সময়ানুযায়ী পরিকল্পনা আছে এবং ঈশ্বর নির্দিষ্ট সময়েই মানুষের কাজের বিচার করবেন। ঈশ্বর ভাল এবং খারাপ মানুষদের বিচার করবেন।”
মানুষ কি ঠিক পশুদেরই মতো?
18 মানুষ একে অন্যের সঙ্গে যা যা করে সেই বিষয়ে আমি ভেবেছিলাম এবং আমি নিজেকে বলেছিলাম, “ঈশ্বর মানুষকে পশুর মতোই দেখতে চান।” 19 মানুষ কি পশুদের চেয়ে শ্রেয়? না! কেন? কারণ সব কিছুই অর্থহীন। পশু এবং মানুষদের ক্ষেত্রে একই ব্যাপার ঘটে—উভয়েরই মৃত্যু আসে। মানুষ এবং পশুরা একই “নিঃশ্বাস” নেয়। একটি মৃত মানুষ ও মৃত পশুর মধ্যে কি কোনও পার্থক্য আছে? 20 মানুষ এবং পশুদের দেহ একই ভাবে বিলীন হয়। তারা মাটি থেকেই আসে এবং মাটিতেই ফিরে যায়। 21 কে জানে মানুষের আত্মার কি হয়? কে বলতে পারে পশুর কোন আত্মা যখন মাটির নীচে প্রবেশ করছে তখন হয়তো কোন মানুষের আত্মা ঈশ্বরের কাছে যাচ্ছে?
22 তাই আমি দেখে ছিলাম সব থেকে ভাল উপায় হল একজন মানুষ তার যা আছে এবং সে যা করেছে তাই নিয়ে আনন্দে মেতে থাকা। এবং একজন মানুষের তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হওয়া উচিৎ নয়। কেন? কারণ কেউ সেই ব্যক্তিকে তার ভবিষ্যতে কি ঘটবে তা দর্শন করাতে পারবে না।
তবে কি মৃত্যুই শ্রেয়?
4 আমি দেখেছিলাম সূর্যের নীচে কিভাবে লোকের ওপর উৎপীড়ন করা হয়ে থাকে। আমি তাদের কান্না শুনেছিলাম। আমি এও দেখেছিলাম যে তাদের এই দুর্দশায় সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কেউই নেই। আমি দেখে ছিলাম কিভাবে নিষ্ঠুর লোকরা সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী হয়ে বসে আছে। তারা যাদের আঘাত করছে তাদের সাহায্যের জন্য কেউ পাশে নেই। 2 আমি ভেবে দেখলাম যে যারা বেঁচে আছে তাদের চেয়ে মৃত মানুষদের অবস্থা অনেক ভাল। 3 যে সমস্ত লোকরা জন্মের অব্যবহিত পরে মারা গেছে অথবা যারা এখনও জন্মায় নি, তাদের মধ্যে কোন একদল ভালো অবস্থায় আছে! কেন? কেননা এই সূর্যের নীচে যে সমস্ত মন্দ কাজ হয়ে থাকে তারা তা কখনই দেখেনি।
কঠিন শ্রম কেন করবে?
4 তারপর আমি ভেবেছিলাম, “লোকে কেন এত কঠিন পরিশ্রম করে?” আমি লক্ষ্য করেছিলাম যে লোকে সব সময় সফল হতে ও অন্য লোকদের থেকে ভালো হতে চেষ্টা করে। কেন? কারণ তারা ঈর্ষাপরায়ণ। তারা চায় না তার চেয়ে বেশী অন্য লোকে কিছু ভোগ করুক। এসবই অসার, হাওয়ার পেছনে ছোটা মাত্র।
5 কিছু লোক বলে, “হাত গুটিয়ে কিছু না করে বসে থাকাটা বোকামো। কাজ না করলে না খেতে পেয়ে মরতে হবে।” 6 এটা হয়তো সত্যি। কিন্তু সব সময় বেশী জিনিস পাওয়ার জন্য হাওয়ার পেছনে ছোটার থেকে অল্পে সন্তুষ্ট থাকা ভাল।
7 আমি সূর্যের নীচে আরো কিছু অর্থহীন জিনিস দেখলাম। 8 একজন ব্যক্তির পরিবার না থাকতে পারে। তার ভাই বা সন্তান না থাকতে পারে। কিন্তু তবুও সে কঠিন পরিশ্রম করে যাবে। তার যা আছে তা নিয়ে সে কখনও সন্তুষ্ট থাকবে না। সে ভাবতে পারে, “তবে কেন আমি আমার জীবন উপভোগ না করে কঠিন পরিশ্রম করব?” এটাও খুব খারাপ ও অর্থহীন।
বন্ধু ও পরিবার শক্তি জোগায়
9 একজনের চেয়ে দুজন লোক ভাল। দুজন লোক এক সঙ্গে কাজ করলে তার ফল ভাল হয়।
10 যদি কোন ব্যক্তি পড়ে যায়, অপর ব্যক্তি তাকে উঠতে সাহায্য করে। কিন্তু যে একা কাজ করে, সে যদি পড়ে তবে তাকে উঠতে সাহায্য করার মতো কেউই থাকে না।
11 যদি দুজন লোক এক সঙ্গে ঘুমোয় তারা উত্তাপ পাবে। কিন্তু যে একা শোয় সে উত্তাপ থেকে বঞ্চিত হবে।
12 যে একা তাকে সহজেই শত্রুরা হারিয়ে দেবে কিন্তু দুজন লোক এক সঙ্গে থাকলে তাদের হারানো সম্ভব নয়। তিন জন মানুষ একত্র হলে তাদের শক্তি আরো বেশী হবে। তারা হল এক সঙ্গে জড়ানো দড়ির তিনটি অংশের মতো। তাদের শক্তিকে ভাঙ্গা খুবই কঠিন।
মানুষ, রাজনীতি ও জনপ্রিয়তা
13 একজন দরিদ্র তরুণ নেতা যদি জ্ঞানী হয় তবে সে একজন বৃদ্ধ বোকা রাজা অপেক্ষা শ্রেয়। সেই বৃদ্ধ রাজা সতর্কবাণীতে কান দেন না। 14 সেই তরুণ শাসক রাজ্যের একজন গরীব নাগরিক হয়ে জন্মাতে পারেন। তিনি দেশের শাসন ভার নিতে কারাগার থেকে উঠে আসতে পারেন। 15 কিন্তু এ জীবনে আমি মানুষকে দেখে জেনেছি যে মানুষ সেই তরুণ নেতাকে অনুসরণ করবে। সেই হবে নতুন রাজা। 16 অনেক মানুষ এই তরুণকে অনুসরণ করবে। কিন্তু পরে এরাই আবার তাঁকে সহ্য করতে পারবে না। এটাও অর্থহীন, হাওয়ার পিছনে ছোটা।
প্রতিশ্রুতি সম্বন্ধে সাবধান থেকো
5 যখন ঈশ্বরের উপাসনা করবে তখন সতর্ক থাকবে। ঈশ্বরকে বোকার মত নৈবেদ্য দেওয়ার থেকে তার কথা শোনা অনেক ভালো। যে মূর্খ সে নিজের অজ্ঞাতেই অন্যায় কাজ করে ফেলে। 2 ঈশ্বরকে প্রতিশ্রুতি দিলে সে সম্বন্ধে সতর্ক থেকো। ঈশ্বরকে কিছু বললে সাবধানে বলো। আবেগ চালিত হয়ে হঠাৎ কোন কথা দিয়ে ফেলো না। ঈশ্বর বাস করেন স্বর্গে আর তুমি পৃথিবীতে। তাই ঈশ্বরকে তোমার সামান্য কিছু কথাই বলা উচিৎ। এই প্রবাদটি সত্য যে:
3 দুঃস্বপ্ন যেমন অনেক দুঃশ্চিন্তা সঙ্গে নিয়ে আসে,
মূর্খ তেমনই একরাশ শব্দ নিয়ে আসে।
4 তুমি ঈশ্বরকে কোন প্রতিশ্রুতি দিলে তা অবশ্যই রক্ষা করবে। তোমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে দেরী কোরো না। ঈশ্বর মূর্খদের প্রতি প্রসন্ন নন। তুমি ঈশ্বরকে যা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছ তা দাও। 5 প্রতিশ্রুতি দিয়ে পালন না করতে পারার থেকে প্রতিশ্রুতি না দেওয়া ভাল। 6 তাই তোমার কথা যেন তোমার পাপের কারণ না হয়। যাজককে এটা বলো না, “আমি যা বলেছি তার অর্থ এই নয়!” তুমি যদি এরকম কর তাহলে ঈশ্বর ক্রুদ্ধ হয়ে তুমি যার জন্য কাজ করেছ তা ধ্বংস করে ফেলবেন। 7 তোমার অর্থহীন স্বপ্ন ও অহঙ্কার যেন তোমার বিপদ না ডেকে আনে। তুমি অবশ্যই ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা করবে।
প্রতিটি শাসকের ওপর একজন শাসক আছেন
8 কিছু দেশে দেখা যায় যে দরিদ্র মানুষ বাধ্য হয়ে কঠিন পরিশ্রম করছে। এটা দরিদ্র মানুষদের প্রতি সুবিচার নয়। এটা তাদের স্বার্থবিরোধী। কিন্তু বিস্মিত হয়ো না। যে শাসক এই মানুষদের ওপর জোর খাটাচ্ছে, তার ওপরে জোর খাটানোর জন্য রয়েছে আরো একজন শাসক। 9 রাজাও তার লাভের ভাগ পায়। দেশের ধনসম্পদ তাদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়।[c]
ঐশ্বর্য দিয়ে সুখ কেনা যায় না
10 যে ব্যক্তি টাকা ভালোবাসে সে কখনও তার কাছে যা টাকা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারবে না। যে ঐশ্বর্য ভালোবাসে সে যতই পাক না কেন সন্তুষ্ট হতে পারবে না। এসবই অর্থহীন।
11 যে ব্যক্তির যত সম্পদ আছে, সেই সম্পদ ব্যয়ের জন্য তত “বন্ধুও” আছে। তাই ধনী ব্যক্তির প্রকৃত অর্থে কোন লাভই হয় না। সে শুধুই তার সম্পদের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে।
12 যে ব্যক্তি সারাদিন কঠিন পরিশ্রম করে সে ঘরে ফিরে শান্তিতে ঘুমোয়। সে সামান্য কিছু খেলো বা না খেয়ে থাকল সেটা বিষয় নয়। কিন্তু যে ধনী ব্যক্তি সে সম্পদ রক্ষার দুশ্চিন্তায় রাতে ভাল করে ঘুমোতে পারে না।
13 আমি সূর্যের নীচে এক দুঃখজনক ঘটনা লক্ষ্য করেছি। একজন ব্যক্তি ভবিষ্যতের জন্য অর্থ সঞ্চয় করে। কিন্তু এর পরিণাম হয় সমস্যামূলক। 14 এরপর কোন এক অঘটনে সে সব কিছু হারায়, এর ফলে সন্তানকে দেওয়ার মতো তার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
15 একজন মানুষ খালি হাতে মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেয়। আর সে যখন মারা যায়, সে একই ভাবে রিক্ত অবস্থায় বিদায় নেয়। সে ফল লাভের জন্য কঠিন পরিশ্রম করে কিন্তু মারা গেলে কোন কিছুই সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে না। 16 এটা দুঃখজনক যে একজন মানুষ যে ভাবে পৃথিবীতে আসে সে ভাবেই সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। এভাবে “হাওয়ার পেছনে ছুটে” সে কি পায়? 17 সে কেবল মাত্র যন্ত্রণা এবং দুঃখ পায়। শেষ পর্যন্ত সে হয়ে পড়ে হতাশ, বিরক্ত ও ক্ষিপ্ত!
তোমার কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজে নাও
18 একজন ব্যক্তির পক্ষে সব চেয়ে ভাল সূর্যের নীচে খাদ্য, পানীয় ও তার কাজের মধ্যে আনন্দ পাওয়া। ঈশ্বর তাকে জীবন দিয়েছেন এবং এটাই তার সর্বস্ব।
19 যদি ঈশ্বর একজন ব্যক্তিকে ধনসম্পদ ও সেটা ভোগ করার ক্ষমতা দেন তবে তার তা অবশ্যই ভোগ করা উচিৎ, কারণ তা হল ঈশ্বরের উপহার। সেই ব্যক্তি অবশ্যই তার প্রাপ্ত জিনিসগুলি স্বীকার করবে এবং তার কাজ উপভোগ করবে, এ হল ঈশ্বরের উপহার। 20 একজন ব্যক্তি বেশী বছর বাঁচে না। তাই তাকে সারা জীবন এগুলি মনে রাখতে হবে। ঈশ্বর যা করতে চাইবেন তাই তিনি করবেন।
ঐশ্বর্য সুখ বয়ে আনে না
6 আমি সূর্যের নীচে আরো কিছু দেখেছি যা ন্যায্য নয়। এটা লোকদের পক্ষে খুবই খারাপ। 2 ঈশ্বর কাউকে প্রচুর ধনসম্পদ, মানসম্মান দেন। সেই ব্যক্তির যা প্রয়োজন বা চাহিদা হতে পারে সে সবই তার আছে। কিন্তু ঈশ্বর তাকে সে সব ভোগ করতে দেন না। কোন এক অপরিচিত এসে তার সমস্ত কিছু অধিকার করে নেয়। এটা খুবই খারাপ ও অর্থহীন।
3 একজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন বাঁচতে পারে। তার 100টি সন্তান থাকতে পারে। কিন্তু সে যদি এসব নিয়ে সন্তুষ্ট না থাকে ও তার মৃত্যুর পর যদি তাকে কেউ মনে না রাখে, তবে আমার মনে হয় যে শিশু জন্ম মাত্র মারা গিয়েছে সেও এই ব্যক্তির চেয়ে ভাল। 4 একটা মৃত শিশুর জন্ম প্রকৃতপক্ষে অর্থহীন। সেই শিশুটিকে কোন নাম দেওয়ার আগেই তাকে এক অন্ধকার কবরে সমাধিস্থ করা হয়। 5 সেই শিশুটি কখনও কিছুই জানতে পারে না। সে কখনও সূর্যেরও মুখ দেখে না। কিন্তু সেই শিশুটিও অনেক বেশী বিশ্রাম পায় সেই ব্যক্তির চেয়ে যে ঈশ্বরের দেওয়া উপহার ভোগ করতে পারে না। 6 সেই ব্যক্তি 2000 বছর বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু যদি সে জীবনকে উপভোগ করতে না পারে তবে যে শিশুটির জন্মমাত্র মৃত্যু হয়েছে সে আর এই ব্যক্তি কি একই স্থানে যাবে?
7 একজন লোক কাজ করে চলে। কেন? নিজের অন্ন সংস্থানের জন্য। কিন্তু সে কখনই সন্তুষ্ট থাকে না। 8 এই বিষয়ে একজন জ্ঞানী ও মূর্খের মধ্যে কোন তফাৎ নেই। এর চেয়ে একজন গরীব মানুষ হওয়াও ভাল যে জানে কিভাবে জীবনকে মেনে নিতে হয়। 9 লাভ করবার চেয়ে নিজের যা আছে তা নিয়ে খুশী থাকা ভাল। বেশী লাভের প্রত্যাশা করা হাওয়ার পিছনে ছোটার মতোই অর্থহীন।
10-11 যা ঘটেছে তা বহু পূর্বেই স্থির হয়ে ছিল। লোকরা কে বেশী শক্তিশালী এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিতর্কের কোন অর্থ হয় না। দীর্ঘ বিতর্ক কোন কাজে লাগে না এবং এটা কি ভালো কাজ করে?
12 একজন ব্যক্তির অযোগ্য জীবনের ব্যাপ্তিতে তার পক্ষে সবচেয়ে ভালো কি তা কে জানে? তার জীবন এক ছায়ার মতো অতিবাহিত হয়। কেউ বলতে পারে না এই পৃথিবীতে পর মূহুর্ত্তে কি হবে।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International