Chronological
শলোমনের কাছে ঈশ্বরের পুনরাগমন
9 শলোমন প্রভুর মন্দির ও তাঁর রাজপ্রাসাদ বানানোর কাজ শেষ করলেন। তিনি যা যা বানাতে চেয়েছিলেন সবই বানিয়েছিলেন। 2 এরপর প্রভু আবার শলোমনকে দেখা দিলেন, যে ভাবে তিনি গিবিয়োনে তাঁকে স্বপ্নদর্শন দিয়েছিলেন সে ভাবে। 3 প্রভু তাঁকে বললেন,
“তোমার প্রার্থনা এবং তুমি যা যা আমার কাছে চেয়েছ সে সবই আমি শুনেছি। তুমি এই মন্দির বানিয়েছ এবং আমি এটিকে একটা পবিত্র স্থানে পরিণত করেছি যাতে আমি এখানে সর্বদাই পূজিত হই। আমি সব সময়ই এখানে দৃষ্টি রাখব এবং এখানকার কথা মনে রাখবো। 4 তোমার পিতা দায়ূদ যে ভাবে আমার সেবা করেছিলেন, তোমাকেও সে ভাবেই আমার সেবা করতে হবে। দায়ূদ ছিলেন সৎ ও পরিশ্রমী। তুমি অবশ্যই আমার বিধিগুলি এবং আর যা যা আমি তোমায় আদেশ দেব মেনে চলবে। 5 আর তা যদি তুমি করো আমি অবশ্যই খেয়াল রাখবো যাতে ইস্রায়েলের রাজ সিংহাসনে সদাসর্বদা তোমারই পরিবারের কেউ আসীন হয়। তোমার পিতা রাজা দায়ূদকেও আমি এই একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম ইস্রায়েল সর্বদা তারই কোনো না কোনো উত্তরপুরুষ দ্বারা শাসিত হবে।
6-7 “কিন্তু যদি কখনও তুমি ও তোমার সন্তান-সন্ততিরা আমাকে অনুসরণ করা বন্ধ করে দাও, আমার দেওয়া বিধি আদেশগুলি পালন না করো এবং অন্য কোনো মূর্ত্তির পূজা করো, তাহলে আমি আমার দেওয়া এই ভূমি ত্যাগ করতে তাদের বাধ্য করব এবং আমি এই পবিত্র মন্দির যেখানে আমার উপাসনা হয়, তা ধ্বংস করব। তখন ইস্রায়েলের ঘটনা সবার কাছে খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, সকলে ইস্রায়েলকে নিয়ে পরিহাস করবে। 8 এই মন্দির ধ্বংস হবে। যে দেখবে সেই অত্যাশ্চর্য্য হবে এবং শিস্ দিয়ে হৈচৈ করবে। তখন যে এই মন্দির দেখবে প্রশ্ন করবে, ‘প্রভু কেন এই মন্দির ও এই ভূখণ্ডের লোকদের প্রতি এমন সাংঘাতিক কাণ্ড করলেন?’ 9 অন্যরা তাদের উত্তর দিয়ে বলবে, ‘এরা তাদের প্রভুকে ত্যাগ করেছিল বলেই এই ঘটনা ঘটেছে। প্রভু তাদের পূর্বপুরুষদের মিশর থেকে বার করে নিয়ে আসা সত্ত্বেও তারা তাঁকে উপাসনা করেনি এবং অন্য মূর্ত্তির সেবা করেছিল, তাই প্রভু ক্রুদ্ধ হয়ে তাদের জীবনে দুর্যোগ ঘনিয়ে তুলেছেন।’”
10 প্রভুর মন্দির ও নিজের রাজপ্রাসাদ নির্মাণের কাজ শেষ করতে রাজা শলোমনের 20 বছর লেগেছিল। 11 তারপর তিনি সোরের রাজা হীরমকে গালীল প্রদেশের 20টি শহর উপহার দিয়েছিলেন। কারণ রাজা হীরম, শলোমনকে এরস গাছ ও দেবদারু গাছের কাঠ প্রয়োজন মতো সোনা দিয়ে প্রভুর মন্দির বানানোর কাজে সাহায্য করেছিলেন। 12 হীরম তখন সোর থেকে শলোমনের দেওয়া শহরগুলো দেখতে এলেন। কিন্তু এই শহরগুলো দেখে তিনি মোটেই খুশী হলেন না। 13 তিনি শলোমনকে বললেন, “ভাই আমার, এ শহরসমূহ কি এমন যে তুমি আমাকে উপহার দিলে?” হীরম এইসব ভূখণ্ডের নাম কাবুল দিয়েছিলেন এবং আজ পর্যন্ত ঐ অঞ্চল কাবুল নামেই পরিচিত। 14 হীরম রাজা শলোমনকে মন্দির তৈরীর কাজে ব্যবহারের জন্য প্রায় 9000 পাউণ্ড সোনা পাঠিয়েছিলেন।
15 মন্দির এবং প্রাসাদ নির্মাণের সময় রাজা শলোমন ক্রীতদাসদের কাজ করতে বাধ্য করেছিলেন। রাজা শলোমন মিল্লো, জেরুশালেম শহরের দেওয়াল নির্মাণ করেছিলেন এবং তারপর হাৎসোর, মগিদ্দো ও গেষর নামে শহরগুলি বানিয়ে ছিলেন।
16 অতীতে মিশরের রাজা গেষরে কনানীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদের হত্যা করে শহরটি জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। মিশরের ফরৌণের মেয়েকে বিয়ে করার সময়, ফরৌণ শলোমনকে গেষর শহরটি যৌতুক দেন। 17 শলোমন সেই শহরটাকে আবার নতুন করে গড়ে তুললেন। এছাড়াও শলোমন নিম্ন বৈৎ-হোরোণ, 18 বালত্ ও তামর মরু শহর দুটি বানিয়ে ছিলেন। 19 শস্য ও অন্যান্য সামগ্রী সুরক্ষিত রাখার জন্যও শলোমন কয়েকটি নগ়র নির্মাণ করেন। নিজের রথ ও ঘোড়া রাখার জায়গাও তিনি বানিয়েছিলেন। জেরুশালেম, লিবানোন ও অন্যান্য যে সব জায়গা শলোমন শাসন করেছিলেন সেই সব জায়গায় তিনি যা যা বানাতে চেয়েছিলেন তা বানিয়ে ছিলেন।
20 দেশে ইস্রায়েলীয় ছাড়াও ইমোরীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয় প্রভৃতি অনেক বাসিন্দা বাস করত। 21 ইস্রায়েলীয়রা তাদের বিনষ্ট করতে পারে নি। কিন্তু শলোমন তাদের ক্রীতদাস হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করান। তারা এখনও ক্রীতদাস হিসেবেই আছে। 22 তবে রাজা শলোমন কখনও কোন ইস্রায়েলীয়কে তাঁর দাসত্ব করতে দেন নি। ইস্রায়েলীয়রা সৈনিক, সেনাপতি, সেনাধিনায়ক, আধিকারিক, সারথী বা রথ পরিচালক হিসেবে কাজ করতো। 23 শলোমনের বিভিন্ন কাজকর্মের জন্য সব মিলিয়ে 550 পরিদর্শক ছিল, তারা অন্যান্য যারা কাজ করত তাদের তত্ত্বাবধান করত।
24 ফরৌণের কন্যা দায়ূদ শহর থেকে শলোমন তাঁর জন্য যে বড় বাড়িটি বানিয়ে ছিলেন সেখানে চলে আসার পর শলোমন মিল্লো বানান।
25 প্রতি বছর তিন বার করে শলোমন তাঁর বানানো প্রভুর মন্দিরের বেদীতে হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য উৎসর্গ করতেন। এছাড়াও তিনি মন্দিরে ধূপধূনো দেবার ব্যবস্থা করেন ও মন্দিরের যা কিছু নিয়মিত প্রয়োজন তা যোগাতেন।
26 রাজা শলোমন ইদোম দেশে সূফ সাগরের তীরে এলাতের কাছে ইৎসিয়োন গেবরে কিছু জাহাজ বানিয়েছিলেন। 27 রাজা হীরমের রাজ্যে কিছু নাবিক ছিলেন, যারা সমুদ্রের সব খবরাখবর রাখত। তিনি এইসব নাবিকদের শলোমনের নৌবাহিনীতে যোগ দিয়ে, তাঁর লোকদের সঙ্গে কাজ করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। 28 শলোমন তাঁর জাহাজ ওফীরে পাঠানোর পর তারা সেখান থেকে শলোমনের জন্য 31,500 পাউণ্ড সোনা এনেছিল।
শলোমনের তৈরী করা শহর
8 প্রভুর মন্দির ও নিজের রাজপ্রাসাদ বানাতে শলোমনের 20 বছর সময় লেগেছিল। 2 এরপর হূরম তাঁকে যে শহরগুলো দিয়েছিলেন শলোমন সেগুলির সংস্কার করেন। ইস্রায়েলের বেশ কিছু লোককে তিনি ঐ সমস্ত শহরে বসবাসের অনুমতি দিয়েছিলেন। 3 অতঃপর তিনি সোবাতের হমাৎ দখল করেন। 4 তিনি মরু অঞ্চলে তদ্মোর শহরটি এবং হমাতে গুদাম শহরগুলিও বানিয়েছিলেন। 5 এছাড়াও তিনি শক্তিশালী দূর্গ হিসেবে ঊর্দ্ধ বৈৎ-হোরোণ ও নিথ বৈৎ-হোরোণের শহরগুলো দেওয়াল ও ফটক সহ হুড়কো লাগিয়ে তৈরী করেছিলেন। 6 জিনিসপত্র মজুত রাখার জন্য বালৎ সহ আরো কয়েকটি শহর পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। রথ রাখার জন্য ও অশ্বারোহী সারথীদের বসবাসের জন্যও তাঁকে বেশ কিছু শহর বানাতে হয়েছিল। জেরুশালেমে লিবানোন সহ তাঁর সমগ্র রাজ্যে শলোমন যা কিছু বানাতে চেয়েছিলেন সবই বানিয়েছিলেন।
7-8 হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় এবং যিবূষীয়দের সমস্ত উত্তরপুরুষরা এরা ইস্রায়েলীয় ছিল না। যাদের ইস্রায়েলীয়রা যিহোশূযার জয়যাত্রার সময় ধ্বংস করেনি তারা শলোমন দ্বারা ক্রীতদাস হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হয়েছিল। তারা আজও তাই করে। এরা সকলেই ছিল ইস্রায়েলীয়দের ধ্বংস করা অন্যান্য শত্রু রাজ্যের বাসিন্দাদের উত্তরপুরুষ। 9 কিন্তু শলোমন কোন ইস্রায়েলীয়কে ক্রীতদাস হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করেননি। ইস্রায়েলীয়রা সকলেই ছিল তাঁর যোদ্ধা এবং তাঁর আধিকারিক যারা তাঁর রথবাহিনী ও অশ্বারোহী সৈনিকদের চালনা করতেন। 10 কেউ কেউ ছিলেন শলোমনের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের আধিকারিক অথবা নেতা। 250 জন নেতা এই সমস্ত লোকদের তত্ত্বাবধান করতেন।
11 শলোমন দায়ূদ নগর থেকে ফরৌণের কন্যাকে নিয়ে এসেছিলেন এবং তাকে তার জন্য বানানো এক সুন্দর বাড়িতে রেখেছিলেন এবং বলেছিলেন, “আমার স্ত্রী, ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের প্রাসাদে থাকবে না কারণ, সমস্ত জায়গাগুলো যেখানে যেখানে সাক্ষ্যসিন্দুকটি রাখা ছিল সেগুলো অতি পবিত্র জায়গা।”
12 এরপর শলোমন মন্দিরের সামনের দালানে প্রভুর জন্য তাঁর বানানো বেদীতে প্রভুকে হোমবলি নিবেদন করলেন। 13 মোশির আদেশ মতোই শলোমন প্রত্যেক দিন বলিদান করা ছাড়াও বিশ্রামের দিন, অমাবস্যায় ও তিনটে বাৎসরিক ছুটির দিনে নিয়মিত বলি উৎসর্গ করতেন। এই তিনটে বাত্সরিক ছুটির দিন হল খামিরবিহীন রুটির উৎসবের দিন, সাত সপ্তাহের উৎসবের দিন ও কুটিরবাস পর্বের দিন। 14 তাঁর পিতা রাজা দায়ূদের নির্দেশ মতোই তিনি মন্দিরের কাজকর্মের জন্য যাজক ও লেবীয়দের দলভাগ করে দিয়েছিলেন। লেবীয়রা মন্দিরের নিত্য নৈমিত্তিক কাজকর্মে যাজকদের সহায়তা করতেন। এছাড়াও মন্দিরের প্রত্যেকটি ফটকের জন্য শলোমন দ্বাররক্ষীদের দলও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। 15 ইস্রায়েলীয়রা কখনও যাজক ও লেবীয় সংক্রান্ত শলোমনের দেওয়া কোনো নির্দেশ অমান্য বা তার কোনো পরিবর্তন করেননি। এমনকি দুর্মূল্য জিনিসপত্র রাখার ব্যাপারেও তাঁরা শলোমনের বিধান মেনে নিয়েছিলেন।
16 প্রভুর মন্দিরের ভিত্তিস্থাপনের দিন থেকে সেটি শেষ হওয়া পর্যন্ত, শলোমনের সব কাজ তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী করা হয়।
17 এরপর শলোমন লোহিত সাগরের তীরস্থ ইদোমের ইৎসিয়োন গেবরে ও এলতে যান। 18 হূরম সেখানে তাঁর নিজস্ব দক্ষ নাবিকদের দ্বারা পরিচালিত জাহাজ পাঠান। শলোমনের দাসরা এদের সঙ্গে ওফীরে গিয়ে তাঁর জন্য 17 টন সোনা নিয়ে এসেছিল।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International