Chronological
প্রজ্ঞার জন্য শলোমনের প্রার্থনা
3 শলোমন মিশরের ফরৌণের কন্যাকে বিয়ে করলেন এবং তাঁর কন্যাকে দায়ূদ শহরে নিয়ে এসে, মিশরের রাজা ফরৌণের সঙ্গে একটি চুক্তি স্থাপন করলেন। তখনও পর্যন্ত শলোমনের নিজের রাজপ্রাসাদ ও প্রভুর মন্দির বানানোর কাজ শেষ হয় নি। শলোমন সে সময়ে জেরুশালেমের চার পাশে একটি দেওয়াল নির্মাণ করাচ্ছিলেন। 2 যেহেতু মন্দিরের কাজ তখনও শেষ হয়নি, লোকরা উচ্চস্থানের বেদীতে পশু বলি দিত। 3 শলোমন তাঁর পিতা দায়ূদের সমস্ত বিধি-নির্দেশ পালন করে প্রমাণ করেছিলেন যে সত্যি সত্যিই প্রভুর প্রতি তাঁর অটুট ভক্তি ও ভালোবাসা আছে। কিন্তু এছাড়া শলোমন একটি কাজ করতেন যা তাঁকে তাঁর পিতা রাজা দায়ূদ করতে বলেন নি। সেটি হল উচ্চস্থানে বলিদান ও ধূপধূনো দেওয়া।
4 রাজা শলোমন গিবিয়োনে বলি দিতে চাইছিলেন। সে সময় গিবিয়োন ছিল বলিদানের উচ্চস্থানগুলির মধ্যে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শলোমন গিবিয়োনের বেদীতে 1000 হোমবলি উৎসর্গ করলেন। 5 যখন শলোমন গিবিয়োনে ছিলেন তখন রাতের বেলা প্রভু তাঁকে স্বপ্নে দর্শন দিলেন এবং তাকে একটি বর চাইতে বললেন।
6 তখন শলোমন তাঁকে বললেন, “হে প্রভু আমি আপনার সেবক, আমার পিতা দায়ূদের প্রতি আপনি অসীম করুণা প্রদর্শন করেছেন। তিনি সৎ ও সত্য পথে আপনার নির্দেশ মেনে চলেছিলেন, তাই আপনি তাঁর নিজের পুত্রকে তাঁরই সিংহাসনে বসে রাজ্য শাসন করতে দিয়ে, তাঁর প্রতি আপনার করুণা ও দয়া প্রদর্শন করেছেন। 7 হে প্রভু, আমার পিতার জায়গায় আপনি আমাকে রাজা করেছেন, কিন্তু আমি এখনও প্রায় শিশুর মতোই অজ্ঞ। এ ব্যাপারে আমার মধ্যে প্রয়োজনীয় অন্তর্দৃষ্টি ও বুদ্ধিমত্তার অভার রয়েছে। 8 আমি আপনার দাস, আপনার নির্বাচিত লোকের অন্যতম সেবক। আর এই অসংখ্য ভক্ত ও সেবকের শাসনভার আজ আমারই ওপর ন্যস্ত। 9 তাই আপনার কাছে আমার অনুনয় ও প্রার্থনা আমাকে আপনি প্রজ্ঞা দিন যাতে আমি রাজার কর্তব্য পালন করতে পারি ও লোকদের বিচার করতে পারি। যদি আমার এই মহৎ জ্ঞান থাকে তাহলে আমি ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে পারব। এই প্রজ্ঞা ব্যতীত আপনার এই অগণিত লোকদের শাসন করা আমার পক্ষে অসম্ভব।”
10 শলোমনের এই প্রার্থনা শুনে প্রভু তাঁর প্রতি খুবই সন্তুষ্ট হলেন। 11 তাই তিনি শলোমনকে বললেন, “তুমি নিজের জন্য দীর্ঘ জীবন বা ধনসম্পদ চাও নি। এমনকি তোমার শত্রুদের মৃত্যু কামনাও করো নি। তুমি শুধু সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার জন্য অন্তর্দৃষ্টি প্রার্থনা করেছ। 12 তাই আমি অতি অবশ্যই তুমি যা প্রার্থনা করেছ তা তোমায় দেব। আমি তোমাকে বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান করে তুলব। আমি তোমাকে এত বিচক্ষণতা দেব যা আজ পর্যন্ত কেউ কখনও পায় নি এবং ভবিষ্যতেও পাবে না। 13 এছাড়াও তোমাকে পুরস্কৃত করার জন্য আমি তোমাকে সেসব জিনিসও দেব যা তুমি প্রার্থনা করো নি। সারা জীবন তুমি অসীম সম্পদ ও সম্মানের ভাগীদার হবে। তোমার মতো বড় রাজা পৃথিবীতে আর কেউ হবে না। 14 শুধু তুমি আমার প্রতি আস্থা রেখো আর তোমার পিতা দায়ূদের মতো আমার আদেশ ও বিধিগুলি মেনে চলো। আর তা যদি করো আমি তোমাকে দীর্ঘ জীবনও দেব।”
15 শলোমনের ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি বুঝতে পারলেন, স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বর স্বয়ং তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। তখন শলোমন জেরুশালেমে ফিরে গেলেন, ঈশ্বরের আদেশ সম্বলিত পবিত্র সিন্দুকটির সামনে দাঁড়ালেন এবং হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য নিবেদন করলেন। এরপর যে সমস্ত নেতা ও রাজকর্মচারীরা রাজ্য শাসনের কাজে তাঁকে সহায়তা করেছিলেন তাঁদের সবাইকে নিয়ে একটি ভোজসভার আয়োজন করলেন।
শলোমনের বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ
16 একদিন দুটি গণিকা শলোমনের কাছে এসে উপস্থিত হল। 17 তাদের মধ্যে একজন শলোমনকে বলল, “মহারাজ আমরা দুজনে একই ঘরে বাস করি। আমরা দুজনেই সন্তানসম্ভবা ছিলাম এবং সন্তান এর জন্ম দেওয়ার সময় উপস্থিত হয়। ঐ মেয়েটির উপস্থিতিতেই আমি আমার সন্তানের জন্ম দিই। 18 এর ঠিক তিনদিন পরে এই মেয়েটি তার শিশুর জন্ম দেয়। কিন্তু আমরা দুজন ছাড়া আমাদের বাড়ীতে অন্য কোনো তৃতীয় ব্যক্তি ছিল না। 19 এক দিন রাতে ওর শিশুটি মারা যায় কারণ ও শিশুর ওপর শুয়েছিল। সে সময় ওর শিশুটি মারা যায়। 20 রাতের অন্ধকারে তখন ও আমার ঘুমন্ত অবস্থার সুযোগ নিয়ে আমার শিশুটিকে ওর খাটে নিয়ে যায়। আর তারপর মৃত শিশুটিকে আমার পাশে শুইয়ে দেয়। 21 পরদিন সকালে আমি শিশুকে খাওয়াতে উঠে দেখি আমার পাশে একটি মৃত শিশু শোয়ানো আছে। তখন আমি খুঁটিয়ে লক্ষ্য করে দেখি যে সেটি মোটেই আমার শিশু নয়।”
22 অন্য মেয়েটি তৎক্ষনাৎ এর প্রতিবাদ করে বলে, “মোটেই না! জীবন্ত শিশুটিই আমার। মৃতটা তোর!”
প্রথম মেয়েটি এর উত্তরে বলল, “মিথ্যে কথা। মৃত শিশুটি তোর, এটা আমার!” এইভাবে দুজনে রাজার সামনে ঝগড়া করতে থাকে।
23 তখন রাজা শলোমন বলল, “তোমরা দুজনেই বলছো জীবিত শিশুটি তোমার আর মৃত শিশুটি অন্য জনের।” 24 তখন রাজা শলোমান প্রহরীকে একটা তরবারি নিয়ে আসতে আদেশ দিলেন। 25 রাজা শলোমন বললেন, “এবার ঐ শিশুটিকে কেটে দু-আধখানা করো এবং ওদের দুজনকে একটা করে আধখানা টুকরো দিয়ে দাও।”
26 একথা শুনে যে মহিলাটির শিশু মারা গিয়েছিল সে বলল, “ঠিক আছে তাই হোক্, তাহলে আমরা কেউই আর ওকে পাব না।” কিন্তু অন্য মহিলাটি, যে শিশুটির আসল মা, যার শিশুটির প্রতি পূর্ণ ভালবাসা ও সহানুভূতি ছিল, সে রাজাকে বলল, “মহারাজ দয়া করে শিশুটিকে মারবেন না। ওকেই শিশুটি দিয়ে দিন।”
27 তখন রাজা শলোমন বললেন, “থামো, শিশুটিকে কেটো না। প্রথম জনের হাতেই শিশুটিকে তুলে দাও, কারণ, ঐ হচ্ছে ওর আসল মা।”
28 ইস্রায়েলের সকলে শলোমনের এই বিচারের কথা শুনলো। তারা সকলেই শলোমনের অন্তর্দৃষ্টি ও বুদ্ধিমত্তার জন্য তাঁকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করত। তারা বুঝতে পেরেছিল সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপারে রাজা শলোমনের অন্তর্দৃষ্টি প্রায় ঈশ্বরের মতোই কাজ করে।
শলোমনের রাজত্ব
4 সমগ্র ইস্রায়েলের লোকের শাসনকর্তা ছিলেন রাজা শলোমন। 2 শাসনকার্য পরিচালনা করতে যে সমস্ত রাজকর্মচারী তাঁকে সাহায্য করতেন তারা হল:
সাদোকের পুত্র যাজক অসরিয়।
3 শীশার দুই পুত্র ইলীহোরফ ও অহিয়। এঁরা দুজনে রাজদরবারে সমস্ত ঘটনার বিবরণ নথিভুক্ত করতেন।
অহীলূদের পুত্র যিহোশাফট লোকদের ইতিহাস বিষয়ক টীকা রচনা করতেন।
4 যিহোয়াদার পুত্র বনায় ছিল সেনাবাহিনীর প্রধান।
সাদোক ও অবিয়াথর যাজকের কাজ করতেন।
5 নাথনের পুত্র অসরিয় জেলা শাসকদের তত্ত্বাবধান করতেন।
নাথনের আরেক পুত্র যাজক সাবুদ রাজা শলোমনের পরামর্শদাতা ছিলেন।
6 অহীশারের ওপর রাজপ্রাসাদের সব কিছুর তত্ত্বাবধান করবার দায়িত্ব ছিল।
অব্দের পুত্র অদোনীরামের কাজ ছিল শ্রমিকদের খবরদারি করা।
7 সমগ্র ইস্রায়েলকে 12টি জেলায় ভাগ করা হয়েছিল। এই জেলাগুলির প্রত্যেকটির শাসন কাজ পরিচালনার জন্য শলোমন নিজে প্রাদেশিক শাসনকর্তা বা জেলা শাসকদের বেছে নিয়েছিলেন। এই সমস্ত প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের ওপর তাদের নিজেদের প্রদেশ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে রাজা ও তাঁর পরিবারকে সেই খাদ্য সরবরাহ করার নির্দেশ ছিল। বছরের 12 মাসের এক একটিতে এই 12 জন প্রদেশকর্তার এক একজনের দায়িত্ব ছিল রাজাকে খাবার পাঠানো। 8 এই 12 জন প্রাদেশিক শাসনকর্তার নাম নীচে দেওয়া হল:
ইফ্রয়িমের পার্বত্য প্রদেশের শাসক ছিলেন বিন্-হূর।
9 মাকস, শালবীম, বৈৎ-শেমশ ও এলোন বৈৎ-হাননের শাসক ছিলেন বিন্-দেকর।
10 বিন্-হেষদ ছিলেন অরুব্বোত, সোখো ও হেফর প্রদেশের শাসনকর্তা।
11 দোর উপগিরি অঞ্চলের শাসনভার ছিল বিন্-অবীনাদবের ওপর। তিনি রাজা শলোমনের কন্যা টাফত্কে বিয়ে করেছিলেন।
12 যিষ্রিয়েলের নিম্নবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত অঞ্চল অর্থাৎ বৈৎ-শান থেকে আবেল-মহোলা হয়ে যক্মিয়াম পর্যন্ত বিস্তৃত তানক, মগিদ্দোর শাসক ছিলেন অহীলূদের পুত্র বানা।
13 বিন্-গেবর ছিলেন রামোৎ-গিলিয়দের শাসক। গিলিয়দের মনঃশির পুত্র যায়ীর সমস্ত শহর ও গ্রামগুলির শাসন কার্য পরিচালনা করতেন। তিনি অর্গোব জেলার বাশন অঞ্চলেরও শাসনকর্তা ছিলেন। এই অঞ্চলে বড় দেওয়ালে ঘেরা 60টি শহর ছিল। শহরের দরজা বড় করার জন্য পিতলের কব্জা ব্যবহার হতো।
14 ইদ্দোরের পুত্র অহীনাদব ছিলেন মহনয়িমের শাসক।
15 নপ্তালির প্রাদেশিক কর্তা অহীমাস বিয়ে করেছিলেন শলোমনের আরেক কন্যা বাসমৎকে।
16 হূশয়ের পুত্র বানা ছিলেন আশের ও বালোতের শাসক।
17 ইষাখরের প্রদেশকর্তা ছিলেন পারূহের পুত্র যিহোশাফট।
18 এলার পুত্র শিমিয়ির ওপর বিন্যামীন প্রদেশের দায়িত্ব ছিল।
19 ঊরির পুত্র গেবর গিলিয়দের রাজ্যপাল ছিল। গিলিয়দ, যেখানে ইমোরীয়দের রাজা সীহোন ও বাশনের রাজা ওগ বাস করতেন। কিন্তু গেবর ছিল ঐ দেশের রাজ্যপাল।
20 সমুদ্রতীরে ছড়িয়ে থাকা রাশি রাশি বালির মতোই যিহূদা ও ইস্রায়েলে অসংখ্য মানুষ বাস করত। খেয়ে পরে, মহাফূর্তিতে ও আনন্দে তারা সকলে দিন কাটাতো।
21 রাজা শলোমন ফরাৎ নদী থেকে পলেষ্টীয়দের দেশ ও মিশরের সীমা পর্যন্ত সমস্ত অঞ্চলে তাঁর রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। শলোমন যতদিন বেঁচেছিলেন ততদিন এই অঞ্চলের সমস্ত রাজ্যগুলি বশ্যতা স্বীকার করেছিল এবং তারা শলোমনের জন্য উপহার পাঠাত।
22-23 প্রতিদিন শলোমনের নিজের জন্য ও তাঁর সঙ্গে যারা এক সঙ্গে বসে খাওয়া দাওয়া করতো তাদের সকলের জন্য সব মিলিয়ে প্রায় 150 কেজি ময়দা, 300 কেজি আটা, 10টি হৃষ্টপুষ্ট গরু, 20টি সাধারণ গরু, 100টি মেষ, হরিণ, খরগোশ, নানান পাখপাখালির মাংস প্রয়োজন হত।
24 ঘসা থেকে তিপ্সহ পর্যন্ত ফরাৎ নদীর পশ্চিমভাগের সমস্ত অঞ্চল শলোমনের অধীনস্থ ছিল। পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গেও রাজা শলোমনের মৈত্রী ও শান্তির সম্পর্ক বজায় ছিল। 25 শলোমনের রাজত্বকালে দান থেকে বের্-শেবা পর্যন্ত যিহূদা ও ইস্রায়েলের সমস্ত বাসিন্দা সুখে ও শান্তিতে জীবনযাপন করতো। তারা নিশ্চিন্ত মনে নিজেদের দ্রাক্ষাক্ষেত বা ডুমুর বাগানে বসে সময় কাটাতে পারত।
26 শলোমনের আস্তাবলে রথ টানার জন্য 4000 ঘোড়া রাখার ব্যবস্থা তো ছিলই, এছাড়াও তাঁর অধীনে ছিল 12,000 অশ্বারোহী সৈনিক। 27 বছরের প্রত্যেকটি মাসে 12জন প্রাদেশিক শাসনকর্তার একজন শলোমন এবং রাজার টেবিলে ভোজনকারী প্রত্যেকের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী পাঠাতেন। তাদের সকলের জন্য তা প্রচুর পরিমাণ হত। 28 এই সমস্ত প্রাদেশিক শাসনকর্তারা রাজা শলোমনের ঘোড়াগুলির জন্য প্রচুর পরিমাণে খড় ও বার্লি পাঠাতেন। লোকরা এই সমস্ত খড় ও বার্লি আনত।
শলোমনের প্রজ্ঞা
29 ঈশ্বর শলোমনকে প্রভূত জ্ঞানী করে তুলেছিলেন। শলোমনের বুদ্ধিমত্তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা প্রায় অসম্ভব ছিল। তিনি বহু বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন ও অনেক কিছু গভীর ভাবে বুঝতে পারতেন। 30 প্রাচ্যের সমস্ত মানুষদের জ্ঞানের চেয়েও শলোমনের জ্ঞান বেশী ছিল। এমনকি তা মিশরের সমস্ত বাসিন্দাদের চেয়েও বেশী ছিল। 31 পৃথিবীর যে কোন ব্যক্তির চেয়েও তিনি বেশী জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ছিলেন। ইষ্রাহীর এথন বা মাহোলের পুত্র হেমন, কল্কোল ও দর্দার চেয়েও তাঁর বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা বেশী ছিল। ইস্রায়েল ও যিহূদার চারি দিকের সমস্ত দেশগুলিতে রাজা শলোমনের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। 32 তাঁর জীবদ্দশায় তিনি 1005টি গান ও 3000 প্রবাদ বাক্য লিপিবদ্ধ করেছিলেন।
33 প্রকৃতি সম্পর্কেও মহারাজ শলোমনের গভীর জ্ঞান ছিল। শলোমন বিভিন্ন গাছপালা থেকে শুরু করে লিবানোনের সুবিশাল মহীরূহ, দ্রাক্ষাকুঞ্জ, পশু, পাখী, সাপখোপ, সব বিষয়েই শিক্ষাদান করেন। 34 সমস্ত দেশের লোকরা রাজা শলোমনের জ্ঞানের কথা শুনতে আসত। সমস্ত দেশের রাজারা তাঁদের রাজ্যের জ্ঞানী ব্যক্তিদের শলোমনের কাছে তাঁর জ্ঞানগর্ভ কথা শোনবার জন্য পাঠাতেন।
জ্ঞানের জন্য শলোমনের প্রার্থনা
1 প্রভু তাঁর ঈশ্বর সহায় থাকায় শলোমন রাজা হিসেবে খুবই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন, প্রভু তাঁকে অতুল সম্পদ ও ক্ষমতার অধীশ্বর করেছিলেন।
2-3 শলোমন ইস্রায়েলের সেনাবাহিনীর সেনাপতি থেকে শুরু করে বিচারক এবং পরিবারসমূহের কর্ত্তাগণ, সকলের সঙ্গে কথা বললেন। শলোমন সহ তাঁরা সবাই গিবিয়োনের উচ্চস্থানে জড়ো হলেন যেখানে ঈশ্বরের সমাগম তাঁবু ছিল। প্রভুর অনুগত দাস মোশি ও ইস্রায়েলের লোকেরা যখন মরুভূমিতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, সে সময়ে তাঁরা এই তাঁবুর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 4 এখন দায়ূদ কিরিয়ৎ-যিয়ারীম থেকে ঈশ্বরের সাক্ষ্যসিন্দুকটি জেরুশালেমে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এটা রাখার জন্য সেখানে একটা বিশেষ তাঁবু বানিয়েছিলেন। 5 ঊরির পুত্র বৎসলেল একটি পিতলের বেদী বানিয়েছিলেন। সেটা গিবিয়োনের এই পবিত্র তাঁবুর সামনে রাখা হয়েছিল। এ কারণে শলোমন ও লোকরা সেখানে প্রভুর পরামর্শ ও উপদেশ নিতে গিয়েছিলেন। 6 শলোমন সমাগম তাঁবুর সামনে পিতলের বেদীর ওপর গেলেন, যেটি প্রভুর সামনে ছিল এবং সেই বেদীর ওপরে 1000 হোমবলি উৎসর্গ করলেন।
7 সেই রাতে ঈশ্বর শলোমনকে দর্শন দিয়ে বললেন, “শলোমন তুমি আমার কাছে যা চাও প্রার্থনা করো।”
8 শলোমন ঈশ্বরকে বললেন, “হে প্রভু, আমার পিতা দায়ূদের প্রতি আপনি আপনার অসীম করুণা বর্ষন করেছিলেন। তাঁর জায়গায় আপনি স্বয়ং আমাকে নতুন রাজা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। 9 প্রভু ঈশ্বর, আপনি তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমাকে সুবিশাল সাম্রাজ্যের রাজা করবেন। এখন আপনি সেই প্রতিশ্রুতি রাখুন! আকাশের সহস্র তারার মত পৃথিবীর অগনিত লোক এখন আমার আজ্ঞাধীন। 10 আপনি অনুগ্রহ করে আমাকে এই সমস্ত লোকদের সঠিক পথে পরিচালনা করবার মতো বুদ্ধি ও জ্ঞান দিন। আপনার কৃপা ছাড়া কারো পক্ষেই এই সমস্ত লোকদের শাসন করা সম্ভব নয়।”
11 ঈশ্বর শলোমনকে বললেন, “তুমি সঠিক উত্তরটি দিয়েছ; যাদের আমি মনোনীত করেছি, আমার সেই লোকদের নেতৃত্ব দেবার ও শাসন করবার জন্য তুমি জ্ঞান ও বুদ্ধি চেয়েছ, বিষয় সম্পত্তি, ধন ও সম্মান, তোমার শত্রুদের মৃত্যু এমনকি দীর্ঘ জীবনও চাওনি। 12 তাই আমি তোমাকে জ্ঞান ও বুদ্ধি তো দেবই উপরন্তু তোমায় ধনসম্পদ, খ্যাতি ও প্রতিপত্তি, নামযশ এসবও দেবো। তুমি যা পাবে এখনো পর্যন্ত কোনো রাজাই তা পায়নি এবং ভবিষ্যতেও পাবে না।”
13 শলোমন তারপর গিবিয়োনের উপাসনাস্থানে গেলেন এবং সমাগম তাঁবু থেকে আবার ইস্রায়েল শাসন করার জন্য জেরুশালেমে ফিরে গেলেন।
শলোমনের সম্পদ ও সৈন্য বৃদ্ধি
14 এরপর শলোমন তাঁর সেনাবাহিনীর জন্য ঘোড়া ও রথ সংগ্রহ করতে শুরু করলেন। শলোমন 1400 রথ এবং 12,000 অশ্বারোহী সারথী সংগ্রহের পর এইসব রথ রাখার জন্য যে বিশেষ শহরগুলি বানিয়েছিলেন সেখানে পাঠিয়ে দিলেন। কিছু রথ ও অশ্বারোহী সেনা জেরুশালেমে তাঁর প্রাসাদেও রেখে দিলেন। 15 শলোমন জেরুশালেমে সোনা এবং রূপাকে পাথরের মতো সাধারণ করে তুলেছিলেন। তিনি সাধারণ সুকমোর গাছপালার মতোই তাঁর রাজত্বের পশ্চিমের পাহাড়গুলিতে বিরল এরস গাছ লাগিয়েছিলেন। 16 শলোমনের ঘোড়াগুলি মিশর এবং কুয়ে থেকে আনা হয়েছিল। তাঁর বণিকরা সেগুলি কুয়ে থেকে কিনেছিল। 17 এই সমস্ত বণিকরা 600 শেকেল রূপোর বিনিময়ে একটি রথ ও 150 শেকেল রূপোর বিনিময়ে একটা ঘোড়া কিনত। সমস্ত হিত্তীয় ও অরামীয় রাজারা এইসব বণিকদের মারফত তাঁদের ঘোড়া ও রথগুলি কিনেছিলেন।
শলোমনের প্রতি।
72 ঈশ্বর রাজাকে আপনার মত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করুন।
রাজার পুত্রকে আপনার ধার্মিকতা সম্পর্কে শিক্ষালাভ করতে সাহায্য করুন।
2 রাজাকে আপনার লোকদের প্রতি ন্যায্য বিচার করতে সাহায্য করুন।
আপনার দীন লোকদের প্রতি বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিতে তাকে সাহায্য করুন।
3 সারা ভূখণ্ড জুড়ে শান্তি
ও ন্যায়বিচার থাকতে দিন।
4 রাজাকে দীন মানুষের প্রতি সুবিচার করতে দিন।
সহায় সম্বলহীনকে তিনি যেন সাহায্য করেন।
ওদের যারা আঘাত করে তাদের যেন উনি শাস্তি দেন।
5 যতদিন পর্যন্ত আকাশে চাঁদ থাকে এবং সূর্য প্রতিভাত হবে ততদিন যেন লোকেরা রাজাকে ভয় ও শ্রদ্ধা করে।
লোকরা যেন তাকে চিরদিন ভয় ও শ্রদ্ধা করে।
6 যে বৃষ্টি শস্যক্ষেতের ওপর ঝরে পড়ে, রাজাকে সেই বৃষ্টির মত হতে সাহায্য করুন।
যে জলধারা জমিতে পতিত হয়, তাকে সেই ধারার মত হতে সাহায্য করুন।
7 যতক্ষণ তিনি রাজা রয়েছেন ততদিন যেন সৎ লোকরা বিকশিত হয়।
যতদিন আকাশে চাঁদ রয়েছে ততদিন যেন শান্তি বজায় থাকে।
8 এক সমুদ্র থেকে আর এক সমুদ্র পর্যন্ত তার রাজত্বের বিস্তার হোক্।
ফরাৎ নদী থেকে পৃথিবীর দূর প্রান্ত পর্যন্ত যেন তাঁর রাজত্ব বজায় থাকে।
9 মরুভূমিতে যারা বাস করে তারা সবাই যেন তাঁর কাছে আনত হয়।
তাঁর সব শত্রুরা যেন মাটির ধূলোতে মুখ ঠেকিয়ে তাঁর কাছে অবনত হয়।
10 তর্শীশের রাজা এবং অন্যান্য দূরবর্তী রাজ্য যেন তাঁর জন্য উপহার বয়ে আনে।
শিবা ও সবার রাজারা যেন তার জন্য নৈবেদ্য বয়ে আনে।
11 সব রাজা যেন আমাদের রাজার কাছে নত হয়।
সব জাতি যেন তাঁর সেবা করেন।
12 আমাদের রাজা সহায় সম্বলহীনদের সাহায্য করেন।
আমাদের রাজা দরিদ্র অসহায় মানুষকে সাহায্য করেন।
13 দরিদ্র ও অসহায় মানুষ তাঁর ওপর নির্ভর করেন।
রাজা তাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করেন।
14 সেই সব নিষ্ঠুর লোকরা যারা ওদের ক্ষতি করতে চেষ্টা করে, তাদের হাত থেকে রাজা ওদের রক্ষা করেন।
ওই সব দীন-দরিদ্র মানুষের জীবন রাজার কাছে অত্যন্ত মূল্যবান।
15 রাজা দীর্ঘজীবী হোন!
তিনি যেন শিবার কাছ থেকে সোনা গ্রহণ করেন।
সর্বদা রাজার জন্য প্রার্থনা কর।
প্রতিদিন তাকে আশীর্বাদ কর।
16 জমিগুলিতে যেন প্রচুর পরিমানে ফসল হয়।
পাহাড়গুলো যেন শস্যে ভরে ওঠে।
জমিগুলো যেন লিবানোনের মত উর্বর হয়ে ওঠে।
যেমন করে মাঠগুলো ঘাসে ভরে যায় তেমন করে যেন শহরগুলো মানুষে ভরে ওঠে।
17 রাজা যেন চিরদিনের জন্য বিখ্যাত হয়ে যান।
যতদিন সূর্য প্রতিভাত হবে, ততদিন যেন লোকরা তাঁর নাম মনে রাখে।
লোকরা যেন তাঁর আশীর্বাদ পায়
এবং সকলে যেন তাঁকে আশীর্বাদ করে।
18 প্রভু ঈশ্বর, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের প্রশংসা কর!
একমাত্র ঈশ্বরই এমন আশ্চর্য কার্য করতে পারেন।
19 চিরদিন তাঁর মহিমাময় নামের প্রশংসা কর!
তাঁর মহিমা যেন সারা পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করে দেয়!
আমেন! আমেন!
20 (যিশয়ের পুত্র, দায়ূদের প্রার্থনাসমূহ এখানেই শেষ হলো।)
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International