Chronological
যোয়াব দায়ূদকে ভর্ত্সনা করল
19 লোকরা যোয়াবকে এসে সংবাদ দিয়ে বলল, “রাজা দায়ূদ অবশালোমের জন্য দুঃখে ভেঙ্গে পড়েছেন এবং কাঁদছেন।” 2 সেদিন দায়ূদের সৈন্যরা যুদ্ধে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু সেই জয় তাদের সকলের কাছে একটা বিষাদের দিন হয়ে উঠেছিল। তা বিষন্নতার দিন ছিল কারণ লোকরা জানতে পারল, “রাজা তাঁর পুত্রের জন্য শোকমগ্ন।”
3 লোকরা বিমর্ষ হয়ে সেই শহরে এল। তারা যুদ্ধে যারা পরাজিত হয়েছে এবং লজ্জায় যারা ছুটে পালিয়ে গেছে সেই লোকদের মত ব্যবহার করল। 4 রাজা তাঁর মুখ ঢেকে রেখেছিলেন। তিনি উচ্চস্বরে কাঁদছিলেন, “অবশালোম, অবশালোম, হায় পুত্র, পুত্র আমার!”
5 যোয়াব রাজার প্রাসাদে গেল। সে রাজাকে বলল, “আপনি আপনার প্রত্যেকটি আধিকারিকদের অবমাননা করছেন। দেখুন ঐ আধিকারিকরা আজ আপনার প্রাণ বাঁচিয়েছে। তারা আপনার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী এবং দাসীদেরও প্রাণ বাঁচিয়েছে। 6 যারা আপনাকে ঘৃণা করে তাদের আপনি ভালোবাসেন এবং যারা আপনাকে ভালোবাসে তাদের আপনি ঘৃণা করেন। আপনি আজ পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিলেন যে আপনার আধিকারিক এবং অন্যান্য লোকরা আপনার কাছে একান্তই অর্থহীন। আমি বুঝতে পারছি আমরা সকলে মারা গিয়ে অবশালোম বেঁচে থাকলে আপনি প্রকৃতই সুখী হতেন। 7 এখন উঠুন, আপনার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলুন। ওদের উৎসাহিত করুন। আমি প্রভুর নামে শপথ করে বলছি, যদি আপনি এখনই বাইরে গিয়ে এই কাজ না করেন, আজ রাতে আপনার সঙ্গে একজন লোককেও পাবেন না। এবং তা যদি হয় তাহলে শৈশবকাল থেকে আপনি যে সব সমস্যায় পড়েছেন, এটা হবে তাদের তুলনায় কঠিনতম সমস্যা।”
8 তখন রাজা গিয়ে নগরীর প্রবেশ পথে বসলেন। রাজা যে নগরদ্বারের বাইরে এসেছেন এই খবর ছড়িয়ে পড়ল। তাই লোকরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এল। ইস্রায়েলীয়রা যারা অবশালোমকে অনুসরণ করছিল তারা সকলে দৌড়ে পালিয়ে যে যার বাড়ী চলে গেল।
দায়ূদ পুনরায় রাজা হলেন
9 প্রত্যেক পরিবারগোষ্ঠীর প্রত্যেকটি লোক নিজেদের মধ্যে কলহ শুরু করে দিল। তারা বলল, “রাজা দায়ূদ আমাদের পলেষ্টীয় এবং অন্যান্য শত্রুদের থেকে বাঁচিয়েছেন। দায়ূদ অবশালোমের হাত থেকে পালিয়ে গেছেন। 10 তাই আমরা অবশালোমকে আমাদের শাসকরূপে বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন অবশালোম মারা গেছে। সে যুদ্ধে হত হয়েছে। তাই দায়ূদকে আমরা আবার রাজা হিসেবে গ্রহণ করব।”
11 রাজা দায়ূদ সাদোক এবং অবিয়াথর এই দুই যাজককে বার্তা পাঠালেন। দায়ূদ বললেন, “যিহূদার নেতাদের সঙ্গে কথা বল। তাদের বল, ‘রাজা দায়ূদকে তাঁর প্রাসাদে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তোমরা সব চেয়ে শেষ পরিবারগোষ্ঠী কেন? দেখ, সারা ইস্রায়েলের লোক রাজা দায়ূদকে তাঁর স্বস্থানে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বলাবলি করছে। 12 তোমরা আমার ভাই, তোমরাই আমার পরিবার। তবে রাজাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কেন তোমরা পিছিয়ে থাকা পরিবার হবে?’ 13 অমাসাকে গিয়ে বল, ‘তুমি আমার পরিবারের একজন। যদি আমি তোমাকে যোয়াবের জায়গায় আমার সৈনিকদের সেনাপতি না করি, তবে ঈশ্বর যেন আমায় শাস্তি দেন।’”
14 দায়ূদ যিহূদার সব লোকের হৃদয় স্পর্শ করলেন এবং তারা সকলে একাত্ম হয়ে সম্মতি জানাল। যিহূদার লোকরা রাজার কাছে বার্তা পাঠাল। তারা বলল, “আপনি এবং আপনার সব আধিকারিকরা ফিরে আসুন।”
15 রাজা দায়ূদ যর্দন নদীর কাছে এলেন। যিহূদার লোকরা রাজার সঙ্গে দেখা করার জন্য এবং তাঁকে যর্দন নদী পার করে নিয়ে যাবার জন্য গিল্গলে এসে উপস্থিত হল।
শিমিয়ি দায়ূদের কাছে ক্ষমা চাইল
16 গেরার পুত্র শিমিয়ি বিন্যামীনের পরিবারের একজন। সে বহুরীমে বাস করত। দায়ূদের সঙ্গে দেখা করার জন্য সে তাড়াতাড়ি এল। সে যিহূদার লোকদের সঙ্গে এল। 17 শিমিয়ির সঙ্গে বিন্যামীনের পরিবারগোষ্ঠী থেকে আরও 1000 জন লোক এসেছিল, শৌলের পরিবারের দাস সীবঃও এসেছিলো। সীবঃ তার 15 জন পুত্র এবং 20 জন ভৃত্যকে সঙ্গে এনেছিল। এইসব লোক রাজা দায়ূদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাড়াতাড়ি যর্দন নদীর তীরে এসে উপস্থিত হল।
18 রাজার পরিবারকে যিহূদায় ফিরিয়ে আনার জন্য লোকরা সাহায্য করতে নদীর ওপারে চলে গেল। রাজা যা যা বললেন লোকরা তাই করল। যখন রাজা নদী পার হচ্ছেন তখন গেরার পুত্র শিমিয়ি তার সঙ্গে দেখা করতে এল। শিমিয়ি এসে রাজাকে প্রণাম করল। 19 শিমিয়ি রাজাকে বলল, “হে আমার প্রভু, আমি যা ভুল করেছি তা নিয়ে ভাববেন না। হে রাজা, যখন আপনি জেরুশালেম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তখন আপনার সঙ্গে যে যে খারাপ আচরণ করেছি তা আর মনে রাখবেন না। 20 আপনি জানেন আমি পাপ করেছি। সেই জন্যই যোষেফের পরিবার থেকে আমিই প্রথম আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।”
21 কিন্তু সরূয়ার পুত্র অবীশয় বলল, “আমরা শিমিয়িকে অবশ্যই হত্যা করব কারণ প্রভুর দ্বারা অভিষিক্ত রাজাকে সে অভিশাপ দিয়েছিল।”
22 দায়ূদ বললেন, “সরূয়ার পুত্র, তোমার কি ব্যাপার বল তো, যে তুমি আমার বিরুদ্ধাচরণ করছ? ইস্রায়েলে কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না। আজ আমি জানি যে আমি সমগ্র ইস্রায়েলের রাজা।”
23 তখন রাজা শিমিয়িকে বললেন, “তোমাকে হত্যা করা হবে না।” রাজা শিমিয়ির কাছে প্রতিজ্ঞা করলেন যে তিনি নিজে শিমিয়িকে হত্যা করবেন না।[a]
মফীবোশৎ দায়ূদের সঙ্গে দেখা করতে গেল
24 শৌলের বড় নাতি মফীবোশৎ রাজা দায়ূদের সঙ্গে দেখা করতে এল। রাজা জেরুশালেম ত্যাগ করা থেকে নিশ্চিন্তে ফিরে আসা পর্যন্ত মফীবোশৎ তার পায়ের যত্ন নেয় নি, দাড়ি কামায নি, এমনকি কাপড়ও ধোয নি। 25 মফীবোশৎ যখন জেরুশালেমে রাজার সঙ্গে দেখা করল তখন রাজা বললেন, “যখন আমি জেরুশালেম থেকে চলে গেলাম তখন তুমি আমার সঙ্গে গেলে না কেন?”
26 মফীবোশৎ উত্তর দিল, “হে আমার মনিব, আমার দাস আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমি পঙ্গু তাই আমি আমার দাস সীবঃকে বলেছিলাম, ‘আমার গাধার পিঠে একটা জিন পরিয়ে দাও। আমি তাতে চড়ে রাজার সঙ্গে যাব।’ 27 কিন্তু আমার দাস আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সে একাই আপনার কাছে এসেছে এবং আমার সম্পর্কে আপনার কাছে নিন্দাবাদ করেছে। হে আমার প্রভু, আপনি ঈশ্বরের দূতের মত। যা ভালো মনে হয় আপনি তাই করুন। 28 আপনি আমার দাদুর পরিবারের সব লোককেই মেরে ফেলতে পারতেন। কিন্তু আপনি তা করেন নি। বরং আপনি আমাকে তাদের সঙ্গে স্থান দিয়েছেন যারা আপনার সঙ্গে একাসনে বসে আহার করে। অতএব কোন বিষয়েই রাজার কাছে কোন অভিযোগ করার অধিকার আমার নেই।”
29 রাজা মফীবোশতকে বললেন, “তোমার সমস্যা সম্পর্কে আর বেশী কিছু বলো না। আমি স্থির করেছি; তুমি এবং সীবঃ জমি ভাগ করে নেবে।”
30 মফীবোশৎ রাজাকে বললেন, “হে আমার রাজা, হে প্রভু, আপনি যে নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরে এসেছেন এই আমার কাছে যথেষ্ট। জমি সীবঃকেই নিতে দিন।”
দায়ূদ বর্সিল্লয়কে তাঁর সঙ্গে যেতে বললেন
31 বর্সিল্লয় গিলিয়দীয় রোগলীম থেকে ফিরে এল। সে দায়ূদের সঙ্গে যর্দন নদীর ধার পর্যন্ত এল। সে নদীর অপর পার পর্যন্ত রাজাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাবে। 32 বর্সিল্লয় অত্যন্ত বৃদ্ধ ছিল। তার বয়স 80 বছর। দায়ূদ যখন মহনয়িমে ছিলেন তখন সে তাকে খাবার এবং অন্যান্য দ্রব্যাদি দিয়েছিল। বর্সিল্লয় এইসব করতে পেরেছিল কারণ সে বেশ ধনী ব্যক্তি ছিল। 33 দায়ূদ বর্সিল্লয়কে বললেন, “আমার সঙ্গে নদীর অন্য পাড়ে এস। যদি তুমি আমার সঙ্গে জেরুশালেমে থাক আমি তোমার বিষয়ে যত্ন নেব।”
34 কিন্তু বর্সিল্লয় রাজাকে বলল, “আপনি কি জানেন আমার বয়স কত? 35 আমার বয়স 80 বছর। আমি যথেষ্ট বৃদ্ধ, তাই ভাল মন্দ কোনটাই বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এমনকি আমার পান-আহারের স্বাদ কি তা বলাও আমার পক্ষে অসম্ভব। নারী বা পুরুষের গানের সুরও আমি আর শুনতে পাই না। কেন আপনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে সমস্যায় পড়তে চাইছেন? 36 আপনি আমাকে যা যা দিতে চান তার কিছুরই আমার প্রয়োজন নেই। আমি আপনার সঙ্গে যর্দন নদী পার হয়ে যাব। 37 দয়া করে আমাকে বাড়ী ফিরে যেতে দিন। তাহলে আমি আমার নিজের শহরে মরতে পারব এবং আমার মাতা-পিতার কবরেই সমাধিপ্রাপ্ত হতে পারব। হে আমার মনিব এবং রাজা, কিম্হম আপনার ভৃত্য হতে পারে। তাকে আপনার সঙ্গে যেতে দিন। তার সঙ্গে আপনি যেমন খুশি ব্যবহার করবেন।”
38 রাজা উত্তর দিলেন, “কিম্হম আমার সঙ্গে ফিরে যাবে। তোমার জন্য আমি ওর প্রতি সদয় হব। তুমি যা বলবে তোমার জন্য আমি তাই করব।”
দায়ূদ ঘরে ফিরে গেলেন
39 রাজা বর্সিল্লয়কে চুমু খেলেন এবং আশীর্বাদ করলেন। বর্সিল্লয় ঘরে ফিরে গেল। রাজা এবং তাঁর সব লোক নদী পার হয়ে গেল।
40 রাজা নদী পার হয়ে গিল্গলে গেলেন। কিম্হম তাঁর সঙ্গে গেল। যিহূদার সব লোক এবং ইস্রায়েলের অর্ধেক লোক দায়ূদকে নদী পার করে নিয়ে গেল।
ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে যিহূদার লোকরা তর্ক করল
41 সব ইস্রায়েলীয় রাজার কাছে এল। তারা রাজাকে বলল, “আমাদের যিহূদাবাসী ভাইরা কেন আপনাকে চুরি করে আনল এবং আপনার লোকজন সহ আপনার পরিবারের সকলকে যর্দন নদী পার করিয়ে নিয়ে এল?”
42 যিহূদার সব লোক ইস্রায়েলীয়দের উত্তর দিল, “কারণ রাজা আমাদের নিকট আত্মীয়। রাজার ব্যাপারে কেন তোমরা আমাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হচ্ছ? আমরা রাজার পয়সায় কিছু খাই নি। রাজা আমাদের কোন উপহারও দেন নি।”
43 ইস্রায়েলীয়রা উত্তর দিলো, “রাজার ওপর আমাদের এক দশমাংশের অধিকার আছে। তাই রাজার প্রতি তোমাদের থেকে আমাদের দাবী বেশী। কিন্তু তোমরা আমাদের দাবী উপেক্ষা করছ। কেন? আমরাই তারা যারা প্রথম আমাদের রাজাকে ফিরিয়ে আনবার কথা জিজ্ঞাসা করেছিলাম।”
কিন্তু যিহূদার লোকরা ইস্রায়েলীয়দের খুব কর্কশভাবে উত্তর দিল। তারা, ইস্রায়েলীয়রা যা বলেছিল তার চেয়েও বেশী কর্কশ ছিল।
শেবঃ ইস্রায়েলকে দায়ূদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করল
20 সেই খানে বিখ্রিয়ের পুত্র শেবঃ নামে একটি লোক ছিল। শেবঃ বিন্যামীনের পরিবারগোষ্ঠীর এক অকাল কুষ্মাণ্ড। শুধু অন্যদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করত। শেবঃ সকলকে একসঙ্গে জড়ো করার জন্য শিঙা বাজাল এবং বলল,
“দায়ূদের ওপর আমাদের কোন অধিকার নেই।
যিশয়ের পুত্রের ওপরেও আমাদের কোন অধিকার নেই।
হে ইস্রায়েলবাসী, চল আমরা নিজেদের তাঁবুতে ফিরে যাই।”
2-3 তখন ইস্রায়েলীয়রা[b] দায়ূদকে ছেড়ে শেবঃকে অনুসরণ করল। কিন্তু যিহূদার লোকরা সকলেই যর্দন নদী থেকে জেরুশালেমের সারা পথ দায়ূদের সঙ্গে ছিল। দায়ূদ তাঁর জেরুশালেমের বাড়ীতে ফিরে গেলেন। দায়ূদ তাঁর বাড়ী দেখাশোনা করার জন্য দশজন উপপত্নী রেখেছিলেন। দায়ূদ সেই মহিলাদের এক বিশেষ বাড়ীতে রেখে এসেছিলেন। সেই বাড়ীর চারদিকে তিনি প্রহরী মোতায়েন করেছিলেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সেই মহিলারা সেই বাড়ীতেই ছিল। দায়ূদ সেই মহিলাদের প্রতি খেয়াল রাখতেন। তিনি তাদের খাবার পাঠাতেন, কিন্তু তাদের সঙ্গে কোন যৌন সম্পর্ক করেন নি। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তারা সেখানে বিধবার মতই থাকত।
4 রাজা অমাসাকে বললেন, “যিহূদার লোকদের বল তারা যেন তিন দিনের মধ্যে আমার সঙ্গে দেখা করে এবং তুমিও তাদের সঙ্গে থাকবে।”
5 তখন অমাসা যিহূদার লোকদের একসঙ্গে জমায়েত করতে চলে গেল। কিন্তু রাজা যে সময় তাকে দিয়েছিলেন সে তার থেকেও বেশী সময় নিল।
দায়ূদ অবীশয়কে বললেন শেবঃকে হত্যা করতে
6 দায়ূদ অবীশয়কে বললেন, “বিখ্রিয়ের পুত্র শেবঃ আমাদের পক্ষে অবশালোমের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তাই আমার আধিকারিকদের সঙ্গে নাও এবং শেবঃকে তাড়া কর। কোন প্রাচীর ঘেরা শহরে সে প্রবেশ করার আগেই এই কাজ কর। যদি সে কোন সুরক্ষিত শহরে ঢুকে পড়ে আমরা তাকে আর ধরতে পারব না।”
7 সুতরাং বিখ্রিয়ের পুত্র শেবঃকে তাড়া করার জন্য যোয়াব জেরুশালেম ত্যাগ করল। যোয়াব তার নিজের লোক ছাড়াও করেথীয়, পলেথীয় ও অন্যান্য সৈন্যদের তার সঙ্গে নিল।
যোয়াব অমাসাকে হত্যা করল
8 যোয়াব এবং তার সৈন্যরা যখন গিবিয়োন প্রান্তরের কাছে পৌঁছল, অমাসা তাদের সঙ্গে দেখা করতে এল। যোয়াব তখন সৈনিকের পোশাক পরেছিল। যোয়াব একটা কটিবন্ধ পরল এবং একটা খাপে তার তরবারি কটিবন্ধে আটকানো ছিলো। যোয়াব যখন অমাসার সঙ্গে দেখা করার জন্য যাচ্ছিল, তখন যোয়াবের তরবারি খাপ থেকে পড়ে গেল। যোয়াব তরবারিটি তুলে নিয়ে তার হাতে ধরে রইলো। 9 যোয়াব অমাসাকে জিজ্ঞাসা করল, “কেমন আছো ভাই?” তারপর যোয়াব ডান হাত দিয়ে চুম্বন করার ভঙ্গীতে অমাসার গলা জড়িয়ে ধরল। 10 যোয়াবের বাঁ হাতে যে তরবারি রয়েছে সে দিকে অমাসা কোন নজরই দেয় নি। কিন্তু যোয়াব অমাসার পেটে তরবারি বসিয়ে দিল। অমাসার নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। যোয়াবকে দ্বিতীয়বার আর তরবারি চালাতে হল না—ইতিমধ্যেই সে মারা গেছে।
দায়ূদের লোকজন শেবঃকে খুঁজতে থাকল
তারপর যোয়াব এবং তার ভাই অবীশয় আবার বিখ্রিয়ের পুত্র শেবঃকে তাড়া করতে থাকল। 11 যোয়াবের এক তরুণ সৈন্য অমাসার দেহের পাশে দাঁড়িয়েছিল। সে বলল, “তোমরা সকলে যারা দায়ূদ এবং যোয়াবকে সমর্থন কর তারা সবাই এস, আমরা যোয়াবকে অনুসরণ করি।”
12 অমাসা রক্তাক্ত হয়ে রাস্তার মাঝখানে পড়েছিল। তরুণ সৈন্যটি লক্ষ্য করছিল যে সমস্ত লোকই দেখার জন্য থেমে যাচ্ছে। তখন সে দেহটিকে রাস্তার ধারে মাঠের দিকে গড়িয়ে দিল এবং একটা কাপড় দিয়ে দেহটি ঢেকে দিল। 13 অমাসার দেহ রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর, লোকরা যোয়াবকে অনুসরণ করে, বিখ্রিয়ের পুত্র শেবঃর পিছনে তাড়া করতে চলে গেল।
শেবঃ আবেল ও বৈৎমাখায় পালিয়ে গেল
14 বিখ্রিয়ের পুত্র শেবঃ আবেল ও বৈৎমাখায় যাবার সময় ইস্রায়েলের সব পরিবারগোষ্ঠীর মধ্যে দিয়েই গেল। সব বেরীয় এক সঙ্গে জড় হয়ে শেবঃকে অনুসরণ করল।
15 যোয়াব এবং তার লোকরা আবেল বৈৎমাখায় উপস্থিত হল। যোয়াবের সৈন্য শহরকে ঘিরে ফেলল। শহরের প্রাচীরের পাশে তারা উঁচু করে ময়লা জড়ো করল যাতে তারা শহরের প্রাচীরে উঠতে পারে। যোয়াবের লোকরা প্রাচীরটাকে ফেলে দেবার জন্য প্রাচীরের ইঁট পাথর ভাঙ্গা শুরু করল।
16 কিন্তু সেই শহরে একজন প্রচণ্ড বুদ্ধিমতী স্ত্রীলোক ছিল। সে শহর থেকে চিৎকার করে বলল, “আমার কথা শোন! যোয়াবকে এখানে আসতে বল। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই।”
17 যোয়াব সেই স্ত্রীলোকটির সঙ্গে কথা বলতে গেল। স্ত্রীলোকটি তাকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমিই কি যোয়াব?”
যোয়াব বলল, “হ্যাঁ, আমিই যোয়াব।”
স্ত্রীলোকটি বলল, “আমার কথা শোন।”
যোয়াব বলল, “আমি শুনছি।”
18 তখন সেই স্ত্রীলোকটি বলল, “অতীতে লোকরা বলত ‘সাহায্যের জন্য আবেল যাও, তোমার যা দরকার তা পাবে।’ 19 আমি এই শহরের বহু শান্তিপ্রিয় ও নিষ্ঠাবান লোকদের একজন। তুমি ইস্রায়েলের এক গুরুত্বপূর্ণ শহর ধ্বংস করতে চেষ্টা করছ। কেন তুমি প্রভুর সম্পত্তি নষ্ট করতে চাইছ?”
20 যোয়াব উত্তর দিল, “না, আমি কোন কিছু ধ্বংস করতে চাই নি। 21 কিন্তু ইফ্রয়িমের একজন লোক এই শহরে আছে, সে বিখ্রিয়ের পুত্র, নাম শেবঃ। সে রাজা দায়ূদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। তাকে আমার কাছে এনে দাও। আমি এই শহর ছেড়ে চলে যাব।”
সেই স্ত্রীলোকটি যোয়াবকে বলল, “ঠিক আছে। তার মাথা দেওয়ালের ওপারে তোমাদের ছুঁড়ে দেওয়া হবে।”
22 তখন সেই স্ত্রীলোকটি খুব বিচক্ষণতা সহকারে শহরের সব লোকের সঙ্গে কথা বলল। লোকরা বিখ্রিয়ের পুত্র শেবঃর মাথা কেটে ফেলল। তারপর লোকজন সেই কাটা মাথা শহরের দেওয়ালের ওপাশে যোয়াবের দিকে ছুঁড়ে দিল।
তখন যোয়াব শিঙা বাজালো এবং সৈন্যরা শহর ছেড়ে চলে গেল। সৈন্যরা বাড়ী ফিরে গেল এবং যোয়াব জেরুশালেমে রাজার কাছে ফিরে এল।
দায়ূদের সহকারীগণ
23 যোয়াব ইস্রায়েলের সৈন্যবাহিনীর প্রধান ছিল। যিহোয়াদার পুত্র বনায় করেথীয় ও পলেথীয়দের নেতৃত্ব দিয়েছিল। 24 যাদের কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হয়েছিল, অদোরাম তাদের নেতৃত্বে ছিল। অহীলূদের পুত্র যিহোশাফট ছিল ঐতিহাসিক। 25 শবা ছিল সচিব। সাদোক এবং অবিয়াথর ছিল যাজক। 26 যায়ীরীয় ঈরা দায়ূদের প্রধান ভৃত্য[c] ছিল।
শৌলের পরিবার শাস্তি পেল
21 দায়ূদ যখন রাজা ছিলেন তখন একটা দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সেই দুর্ভিক্ষ কবলিত অনাহারের দিন টানা তিন বছর চলেছিল। দায়ূদ প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন এবং প্রভু তার উত্তর দিলেন। প্রভু বললেন, “শৌল এবং তার খুনী পরিবারই এই দুর্ভিক্ষের কারণ। শৌল গিবিয়োনীয়দের মেরে ফেলেছে বলে এই দুর্ভিক্ষ এসেছে।” 2 গিবিয়োনীয়রা ইস্রায়েলী ছিল না। তারা ইমোরীয়দের একটি গোষ্ঠী। ইস্রায়েলীয়রা শপথ করেছিল যে তারা গিবিয়োনীয়দের আঘাত করবে না। কিন্তু শৌল গিবিয়োনীয়দের হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। শৌল এ কাজ করেছিল কারণ ইস্রায়েল এবং যিহূদার লোকদের সম্পর্কে তার ভাবানুভূতি অত্যন্ত তীব্র ছিল।
রাজা দায়ূদ গিবিয়োনীয়দের একসঙ্গে ডেকে তাদের সঙ্গে কথা বললেন। 3 দায়ূদ গিবিয়োনীয়দের বললেন, “তোমাদের জন্য আমি কি করতে পারি? ইস্রায়েলের পাপ খণ্ডনের জন্য আমি কি করলে তোমরা প্রভুর সন্তানদের আশীর্বাদ করবে?”
4 গিবিয়োনীয়রা দায়ূদকে বলল, “শৌলের পরিবারের লোকরা যা করেছে তার মূল্য দেওয়ার জন্য তাদের পরিবারের যথেষ্ট সোনা ও রূপো নেই। কিন্তু আমাদের কোন অধিকার নেই যে ইস্রায়েলের কোন লোককে হত্যা করি।”
দায়ূদ বলল, “বেশ, তা হলে আমি তোমাদের জন্য কি করব?”
5 গিবিয়োনীয়রা উত্তর দিল, “শৌল আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। আমাদের যত লোক ইস্রায়েলে বাস করে তাদের সকলকে সে হত্যা করতে চেয়েছিল। 6 শৌলের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে থেকে সাতটি পুত্র আমাদের দাও। শৌল প্রভুর মনোনীত রাজা ছিল। তাই আমরা শৌলের গিবিয়া পর্বতে, প্রভুর সামনে তার ছেলেদের ফাঁসি দেব।”
রাজা দায়ূদ বললেন, “উত্তম, তাদের আমি তোমাদের হাতে সঁপে দেব।” 7 কিন্তু যোনাথনের পুত্র মফীবোশতকে রাজা নিরাপত্তা দিলেন। যোনাথনও শৌলের পুত্র, কিন্তু রাজা যোনাথনের কাছে প্রভুর নামে একটি শপথ গ্রহণ করেছিলেন।[d] 8 দায়ূদ অর্মোণি এবং মফীবোশতকে[e] তাদের হাতে তুলে দিলেন। এরা ছিল শৌল এবং তার স্ত্রী রিস্পার পুত্র। মেরাব নামে শৌলের এক কন্যাও ছিল। মহোলাতীয় বর্সিল্লয়ের পুত্র অদ্রীয়েলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। দায়ূদ মেরাব এবং অদ্রীয়েলের পাঁচ ছেলেকে নিলেন। 9 দায়ূদ এই সাতজন পুরুষকে গিবিয়োনীয়দের দিয়ে দিলেন যারা তাদের গিবিয়া পর্বতে নিয়ে গিয়েছিল এবং প্রভুর সামনে ফাঁসি দিয়েছিল। এই সাতজন পুরুষ একই সঙ্গে মারা গেল। ফসল তোলার প্রথম দিকেই তাদের হত্যা করা হল। সময়টা ছিল বসন্তকাল এবং এটা ছিল যবের ফসল তোলার গোড়ার দিকে।
দায়ূদ এবং রিস্পা
10 অয়ার কন্যা রিস্পা দুঃখের পোশাক গ্রহণ করল এবং শিলার উপরে তা রাখল। চাষবাসের শুরুর সময় থেকে বৃষ্টি আসা পর্যন্ত সেই দুঃখের পোশাক সেই পাথরেই পড়ে রইল। রিস্পা দিনরাত সেই দেহগুলি পাহারা দিত। দিনের বেলায় কোন হিংস্র পাখী বা রাতের বেলায় কোন হিংস্র প্রাণীকে সে দেহগুলির কাছে আসতে দিত না।
11 শৌলের দাসী রিস্পা যা করছে, সে সম্পর্কে লোকরা রাজা দায়ূদকে বলল। 12 তখন রাজা দায়ূদ শৌল ও যোনাথনের হাড়গুলো যাবেশ গিলিয়দের কাছ থেকে নিয়ে নিলেন। (শৌল ও যোনাথনের গিল্বোয়াতে মৃত্যুর পর যাবেশ গিলিয়দরা সেই হাড়গুলি এনেছিল। পলেষ্টীয়রা শৌল ও যোনাথনের দেহ দুটি বৈৎশানের (নিকটস্থ) দেওয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছিল। কিন্তু বৈৎশানের লোকরা সেখানে গিয়ে দেহগুলি চুরি করে আনে।) 13 যাবেশ গিলিয়দের কাছ থেকে দায়ূদ শৌল এবং তার পুত্র যোনাথনের হাড়গুলি নিয়ে আসেন। সেই সাত জন যাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, তাদের দেহও তারা নিয়ে গিয়েছিল। 14 শৌল এবং যোনাথনের হাড় তারা বিন্যামীন দেশে কবরস্থ করল। শৌলের পিতা কীশের কবরের মধ্যে তারা তাদের কবর দিল। রাজা যা যা বলেছিলেন, লোকরা ঠিক তাই তাই করল। তাই ঈশ্বর সেই দেশের লোকের প্রার্থনা শুনলেন।
পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ
15 পলেষ্টীয়রা ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে আর একটি যুদ্ধে লিপ্ত হল। দায়ূদ এবং তার লোকরা পলেষ্টীয়দের সঙ্গে লড়াই করতে গেলেন। কিন্তু দায়ূদ প্রচণ্ড ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়লেন। 16 যিশ্বী-বনোব একজন দৈত্য ছিল। তার বর্শার ওজন ছিল প্রায় 7.5 পাউণ্ড পিতল। তার একটা নতুন তরবারি ছিল। সে দায়ূদকে হত্যা করার চেষ্টা করল। 17 কিন্তু সরূয়ার পুত্র অবীশয় সেই পলেষ্টীয়কে হত্যা করে দায়ূদকে বাঁচিয়ে দিল।
তখন দায়ূদের লোকরা দায়ূদের কাছে একটা শপথ করল। তারা তাঁকে বলল, “আপনি আর কোনভাবেই আমাদের সঙ্গে যুদ্ধে যেতে পারবেন না। যদি যান তাহলে ইস্রায়েল হয়তো তার মহান নেতাকে হারাবে।”
18 পরে গোব নামক স্থানে পলেষ্টীয়দের সঙ্গে আর একটি যুদ্ধ হল। হূশাতীয় সিব্বখয় দৈত্যদের মধ্যে সফ নামে আর একজনকে হত্যা করল।
19 পরে পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে গোব নামক স্থানে আর একটা যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধ বৈৎলেহমবাসী যারেওরগীমের পুত্র ইলহানন, গাতীয় গলিয়াতকে হত্যা করল। তার বর্শা তাঁতির তাঁতের দণ্ডের মতই বড় ছিল।
20 গাতে আরও একটা যুদ্ধ হয়। একজন খুব লম্বা চেহারার লোক ছিল যার প্রত্যেকটি হাতে এবং পায়ের পাতায় ছটা করে, মোট 24টা আঙ্গুল ছিল। এই লোকটাও একজন রাফার সন্তান। 21 ঐ লোকটা ইস্রায়েলকে বিদ্রূপ করল (কিন্তু যোনাথন, শিমিয়ির পুত্র যে ছিল দায়ূদের ভাই, তাকে হত্যা করল।)
22 এই চারজন প্রত্যেকেই দৈত্যদের সন্তান এবং এরা গাত থেকে এসেছিল। তারা দায়ূদ এবং তার লোকদের দ্বারা নিহত হয়েছিল।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International