Chronological
অম্নোন এবং তামর
13 অবশালোম নামে দায়ূদের এক পুত্র ছিল। অবশালোমের বোন ছিল তামর। তামর ছিল অত্যন্ত সুন্দরী। দায়ূদের আর এক পুত্র অম্নোন 2 তামরকে ভালোবেসেছিল। তামর ছিল কুমারী। অম্নোন কখনও ভাবে নি যে সে তামরের প্রতি কোন খারাপ ব্যবহার করবে। কিন্তু অম্নোন তাকে প্রচণ্ডভাবে চাইত। অম্নোন তামর সম্পর্কে খুব চিন্তা করত এবং একসময় সে ভান করে নিজেকে অসুস্থ করে তুলল।
3 শিমিয়ের পুত্র যোনাদব অম্নোনের বন্ধু ছিল। (শিমিয় ছিল দায়ূদের ভাই।) যোনাদব প্রচণ্ড চালাক ছিল। 4 যোনাদব তাকে বলল, “প্রতিদিনই তুমি রোগা হয়ে যাচ্ছ! তুমি তো রাজার পুত্র। তোমার তো খাওয়ার অভাব নেই, তাহলে কেন তোমার স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে? আমাকে বল!”
অম্নোন যোনাদবকে বলল, “আমি তামরকে ভালোবাসি। কিন্তু সে আমার ভাই অবশালোমের বোন।”
5 যোনাদব অম্নোনকে বলল, “যাও, বিছানায় শুয়ে অসুস্থতার ভান কর। যখন তোমার পিতা তোমাকে দেখতে আসবেন তখন তাকে বলবে, ‘তামরকে আমার কাছে আসতে দিন। সে আমার জন্য খাবার আনুক। সে আমার সামনে আহার প্রস্তুত করুক। আমি তার রান্না করা দেখব এবং তার হাতে খাব।’”
6 এরপর অম্নোন বিছানায় শুয়ে পড়ে অসুস্থতার ভান করল। রাজা দায়ূদ তাকে দেখতে এলেন। অম্নোন রাজা দায়ূদকে বলল, “আমার বোন তামরকে আমার কাছে আসতে দিন। আমার সামনে তাকে দুটো পিঠে বানাতে দিন। তারপর আমি ওর হাতেই পিঠে খাব।”
7 দায়ূদ তামরের বাড়ীতে বার্তাবাহক পাঠালেন। বার্তাবাহক গিয়ে তামরকে বলল, “তোমার ভাই অম্নোনের বাড়ী যাও এবং তার জন্য খাবার তৈরী কর।”
8 তখন তামর তার ভাই অম্নোনের বাড়ী গেল। অম্নোন বিছানায় শুয়ে ছিল। তামর এক তাল ময়দা নিয়ে দু হাতে মেখে পিঠে তৈরী করল। সে যখন এইসব করছিল তখন অম্নোন দেখছিল। 9 তারপর তামর চাটু থেকে পিঠেগুলিকে অম্নোনের জন্য উঠিয়ে আনলো। কিন্তু অম্নোন তা খেল না। অম্নোন তার ভৃত্যদের বলল, “এখান থেকে বেরিয়ে যাও। আমাকে একা থাকতে দাও।” তখন তার সব ভৃত্য ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
অম্নোন তামরকে ধর্ষণ করল
10 তখন অম্নোন তামরকে বলল, “খাবারগুলি আমার শোবার ঘরে নিয়ে এসো এবং আমাকে নিজে হাতে খাইয়ে দাও।”
তখন তামর তার তৈরী করা পিঠেগুলি নিয়ে তার ভাইয়ের শোবার ঘরে গেল। 11 সে যখন অম্নোনকে খাওয়াতে শুরু করেছে তখন অম্নোন তার হাত চেপে ধরল। সে তাকে বলল, “বোন, এসো আমার সঙ্গে শোও।”
12 তামর অম্নোনকে বলল, “না ভাই! আমাকে এইসব করতে বাধ্য করো না। এই ধরণের লজ্জাজনক কাজ করো না। এই ধরণের ভয়াবহ কাজ ইস্রায়েলে হওয়া উচিৎ নয়। 13 আমি আমার লজ্জা থেকে কোনদিন মুক্তি পাব না। লোকরা ভাববে যে তুমি অপরাধীদের একজন। রাজার সঙ্গে কথা বল, তিনি তোমাকে আমায় বিয়ে করতে অনুমতি দেবেন।”
14 কিন্তু অম্নোন তামরের কথা শুনল না। সে তামরের থেকে শক্তিশালী ছিল। সে তাকে নিজের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করল। 15 তারপর অম্নোন তামরকে ঘৃণা করতে শুরু করল। অম্নোন আগে তামরকে যতখানি ভালোবেসেছিল এখন তার থেকে বেশী ঘৃণা করতে লাগল। অম্নোন তামরকে বলল, “ওঠো এবং এখান থেকে বেরিয়ে যাও।”
16 তামর অম্নোনকে বলল, “না! আমাকে এইভাবে তাড়িয়ে দিও না। এমনকি আমার সঙ্গে একটু আগে যা করলে তার থেকেও সেটা খারাপ কাজ হবে।”
অম্নোন তার কথা শুনল না। 17 অম্নোন তার ভৃত্যদের ডেকে বলল, “এই মেয়েটাকে এখুনি আমার ঘর থেকে দূর করে দাও এবং দরজা বন্ধ করে দাও।”
18 তখন অম্মোনের ভৃত্যরা তামরকে ঘর থেকে দূর করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
তামর বহু রঙে রঙিন একটা বড় কাপড় পরেছিল। রাজার কুমারী মেয়েরা এই ধরণের কাপড় পরতো। 19 তামর সেই কাপড় ছিঁড়ে ফেলল এবং মাথায় কিছুটা ছাই দিল। তারপর সে নিজের মাথায় হাত দিয়ে কাঁদতে লাগল।
20 তখন তামরের ভাই অবশালোম তাকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কি তোমার ভাই অম্নোনের কাছে ছিলে? সে কি তোমায় আঘাত দিয়েছে? বোন আমার, এখন শান্ত হও।[a] অম্নোন তোমার ভাই, তাই এই ব্যাপারটা আমরা ভেবে দেখব। তুমি কিছু চিন্তা করো না।” তাই তামর কিছু না বলে চুপচাপ তার ভাই অবশালোমের বাড়ী গেল এবং সেই খানেই থাকল।
21 এই সংবাদ শুনে রাজা দায়ূদ প্রচণ্ড রেগে গেলেন। 22 অবশালোম অম্নোনকে ঘৃণা করতে শুরু করল। অবশালোম অম্নোনকে ভালো বা মন্দ কোন কথাই বলল না। অবশালোম অম্নোনকে ঘৃণা করতে লাগল কারণ অম্নোন তার বোন তামরকে ধর্ষণ করেছিল।
অবশালোমের প্রতিশোধ
23 দু বছর পরে, অবশালোমের লোকরা তাদের মেষের গা থেকে পশম কাটতে বাল্-হাৎসোরে এলো। অবশালোম তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য রাজার সব সন্তানদের ডাকল। 24 অবশালোম রাজার কাছে গিয়ে বলল, “আমার কিছু লোকরা আমার মেষগুলির গা থেকে লোম কাটতে আসছে। দয়া করে আপনার ভৃত্যদের সঙ্গে নিয়ে এসে দেখুন।”
25 রাজা দায়ূদ অবশালোমকে বলল, “না, পুত্র। আমরা যাব না। তাতে তোমার সমস্যাই বাড়বে।”
অবশালোম, দায়ূদকে যাওয়ার জন্য অনেক অনুনয় বিনয় করলো। কিন্তু দায়ূদ গেলেন না, তিনি তাকে তাঁর আশীর্বাদ দিলেন।
26 অবশালোম বলল, “যদি আপনি যেতে না চান তাহলে আমার ভাই অম্নোনকে আমার সঙ্গে যেতে দিন।”
রাজা দায়ূদ অবশালোমকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন সে তোমার সঙ্গে যাবে?”
27 অবশালোম দায়ূদের কাছে অনুনয় করেই চলল। সব শেষে দায়ূদ, অম্নোন এবং রাজার অন্যান্য সন্তানদের অবশালোমের সঙ্গে যেতে দিতে রাজী হলেন।
অম্নোন নিহত হল
28 তারপর অবশালোম তার ভৃত্যদের এই নির্দেশ দিল, “অম্নোনকে নজরে রাখ। যখন দেখবে সে দ্রাক্ষারস পান করে মেজাজে আছে তখন আমি তোমাদের নির্দেশ দেব। তোমরা অবশ্যই অম্নোনকে আক্রমণ করবে এবং হত্যা করবে। তোমরা কেউ শাস্তি পাবার ভয় করো না। সর্বোপরি তোমরা তো কেবল আমার আদেশ পালন করবে। বীরের মত সাহসী হও।”
29 অতএব অবশালোমের সৈন্যরা তাই করল যা সে তাদের করতে বলেছিল। তারা অম্নোনকে হত্যা করল। কিন্তু দায়ূদের অন্যান্য পুত্ররা পালিয়ে গেল। প্রতিটি পুত্র তাদের খচ্চরে চড়ে পালাল।
দায়ূদ অম্নোনের মৃত্যুর খবর শুনলেন
30 রাজার ছেলেরা তখনও নগরীর পথেই রয়েছে। কিন্তু কি ঘটেছে তা রাজা দায়ূদ সংবাদ পেয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি এ রকম ভুল সংবাদ পেয়েছিলেন: “অবশালোম রাজার সব ছেলেদেরই হত্যা করেছে এবং একটা ছেলেও বেঁচে নেই।”
31 রাজা দায়ূদ শোকে দুঃখে নিজের জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেললেন এবং মাটিতে শুয়ে পড়লেন। দায়ূদের যে সব আধিকারিক তাঁর কাছে দাঁড়িয়েছিল তারাও নিজেদের জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলল।
32 কিন্তু, তখন যোনাদব, শিমিয়র পুত্র যে দায়ূদের একজন ভাই ছিল, সে বলল, “একথা ভাববেন না যে রাজার সব ছেলেই মারা গেছে। একমাত্র অম্নোনই মারা গেছে। যে দিন অম্নোন তামরকে ধর্ষণ করে সেদিন থেকেই অবশালোম এই ঘটনা ঘটানোর জন্য ফন্দি আঁটছিলো। 33 হে আমার মনিব এবং রাজা, আপনি ভাববেন না যে আপনার সব ছেলে মারা গেছে, শুধুমাত্র অম্নোনই মারা গেছে।”
34 অবশালোম দৌড়ে পালিয়ে গেল।
নগরীর প্রাচীরে একজন প্রহরী দাঁড়িয়েছিল। সে দেখল পাহাড়ের ওদিক থেকে বহু লোকজন আসছে। 35 তখন যোনাদব রাজা দায়ূদকে বলল, “দেখুন, আমি কি বলেছি! রাজার পুত্ররা আসছে।”
36 যোনাদব এই কথা বলার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রাজার পুত্ররা এসে পড়ল। তারা উচ্চস্বরে কাঁদছিল। দায়ূদ এবং তাঁর সব আধিকারিকরাও কাঁদতে শুরু করে দিল। তারা সকলে উথালি পাথালি হয়ে কাঁদল। 37 দায়ূদ প্রতিদিনই তাঁর পুত্র অম্নোনের জন্য কাঁদতেন।
অবশালোম গশূরে পালালেন
অবশালোম গশূরের রাজা, অম্মীহূরের পুত্র তল্ময়ের কাছে পালিয়ে গেল। 38 গশূরে পালিয়ে যাবার পর অবশালোম সেখানে তিন বছর ছিল। 39 অম্মোনের মৃত্যুতে রাজা দায়ূদকে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি অবশালোমের অভাব প্রচণ্ডভাবে অনুভব করেছিলেন।
যোয়াব দায়ূদের কাছে একজন জ্ঞানী মহিলাকে পাঠালেন
14 সরূয়ার পুত্র যোয়াব জানতেন যে রাজা দায়ূদ প্রচণ্ডভাবে অবশালোমের অভাব বোধ করছেন। 2 যোয়াব তকোয়েতে সেখান থেকে একজন জ্ঞানী মহিলাকে আনতে আদেশ দিয়ে বার্তাবাহকদের পাঠালেন। যোয়াব সেই জ্ঞানী মহিলাকে বললেন, “প্রচণ্ড দুঃখের ভান কর এবং বিমর্ষ লাগে এমন জামাকাপড় পর। একদম সাজ-গোজ করো না। এমন নিপুণ অভিনয় করবে যেন দেখে মনে হয়, তুমি দীর্ঘদিন ধরে কাঁদছ। 3 রাজার কাছে যাও এবং তাকে ঠিক এ কথাগুলোই বলবে যা আমি তোমায় শিখিয়ে দিচ্ছি।” তারপর যোয়াব, সেই জ্ঞানী মহিলাটিকে কি কি বলতে হবে তা বলে দিলেন।
4 তখন তকোয়ের সেই মহিলা রাজার সঙ্গে কথা বলল। মাটির দিকে মাথা নত করে সে বলল, “রাজা, দয়া করে আমায় বাঁচান।”
5 রাজা দায়ূদ তাকে বললেন, “তোমার সমস্যা কি?”
মহিলা বলল, “আমি একজন বিধবা। আমার স্বামী মারা গেছে। 6 আমার দুটি পুত্র ছিল। তারা মাঠে লড়াই করছিল। তাদের বাধা দেবার মত কেউ ছিল না। আমার এক পুত্র আর এক পুত্রকে হত্যা করেছে। 7 এখন গোটা পরিবার আমার বিরুদ্ধে। তারা আমাকে বলল, ‘সেই পুত্রকে নিয়ে এসো যে তার ভাইকে মেরেছে—আমরাও তাকে মেরে ফেলবো। কেন? কারণ সে তার ভাইকে হত্যা করেছে।’ আমার আগুনের শেষ স্ফুলিঙ্গের মত যদি ওরা আমার পুত্রকে মেরে ফেলে তাহলে সেই আগুন জ্বলে শেষ হয়ে যাবে। সেই একমাত্র জীবিত সন্তান যে তার পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে। অন্যাথায়, আমার স্বামীর সম্পত্তি ভুল হাতে পড়বে এবং তার নাম সেই জমি থেকে মুছে যাবে।”
8 তখন রাজা সেই মহিলাকে বললেন, “বাড়ী চলে যাও, আমি তোমার বিষয়গুলি দেখব।”
9 তকোয়ের মহিলা রাজাকে বলল, “আমার মনিব এবং রাজা, সব দোষ আমার ওপর এবং আমার পরিবারের ওপর আসুক। আপনি এবং আপনার রাজত্ব নির্দোষ হোক্।”
10 রাজা দায়ূদ বললেন, “কেউ যদি তোমাকে খারাপ কিছু বলে, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। সে দ্বিতীয়বার তোমাকে জ্বালাতন করবে না।”
11 মহিলা বলল, “আপনার প্রভু ঈশ্বরের নামে শপথ করে বলুন যে আপনি সেই সব লোকদের বাধা দেবেন। তারা আমার পুত্রকে তার ভাইকে হত্যা করার জন্য শাস্তি দিতে চাইছে। আপনি শপথ করুন যে ঐ লোকদের আপনি আমার পুত্রকে হত্যা করতে দেবেন না।”
দায়ূদ বললেন, “অস্তিত্বময় প্রভুর নামে শপথ নিয়ে বলছি, কেউ তোমার পুত্রের ক্ষতি করতে পারবে না। এমনকি তার মাথার একটা চুলও মাটিতে পড়বে না।”
12 মহিলা বলল, “হে আমার মনিব এবং রাজা, আপনাকে আর কয়েকটা কথা বলতে দিন।”
রাজা বললেন, “বল।”
13 তারপর সেই মহিলা বলল, “কেন আপনি ঈশ্বরের লোকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন? হ্যাঁ, যখন আপনি এই ধরণের কথাবার্তা বলেন তখন আপনি বুঝিয়ে দেন যে আপনি অপরাধী। কেন? কারণ যে সন্তানকে আপনি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করেছেন, তাকে আপনি ঘরে ফিরিয়ে আনেন নি। 14 আমরা প্রত্যেকেই একদিন না একদিন মরব। আমরা প্রত্যেকেই মাটিতে ফেলে দেওয়া জলের মত হব। সেই জলকে কেউই পুনরায় মাটি থেকে তুলে আনতে পারে না। আপনি জানেন ঈশ্বর মানুষকে ক্ষমা করেন। যারা নিরাপত্তার জন্য পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়, ঈশ্বর তাদের জন্য পরিকল্পনা করেছিলেন। ঈশ্বর তাঁর কাছ থেকে পালিয়ে যাবার জন্য কাউকে বাধ্য করেন না। 15 হে আমার মনিব এবং রাজা এই কথাই আমি আপনাকে বলতে এসেছি। কেন? কারণ লোকরা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে। আমি নিজেকেই বললাম, ‘আমি রাজার সঙ্গে কথা বলব। হয়তো রাজা আমাকে সাহায্য করতে পারবেন। 16 রাজা আমার কথা শুনবেন এবং যারা আমাকে ও আমার পুত্রকে মেরে ফেলতে চাইছে তাদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করবেন। ঈশ্বর আমাদের যা দিয়েছিলেন, সেই লোকটি তা পাওয়া থেকে আমাদের বঞ্চিত করতে চায়।’ 17 আমি জানি আমার মনিব রাজার কথা আমাকে স্বস্তি দেবে, কারণ আপনি ঈশ্বরের দূতের মত। আপনি ভাল এবং মন্দ দুটো বিষয়েই অবগত আছেন এবং প্রভু, আপনার ঈশ্বর আপনার সঙ্গেই উপস্থিত আছেন।”
18 রাজা দায়ূদ প্রত্যুত্তরে সেই মহিলাকে বললেন, “আমি যে প্রশ্ন করব তুমি অবশ্যই তার উত্তর দেবে।”
মহিলাটি বলল, “হে গুরু, আমার রাজা, আপনার প্রশ্ন করুন।”
19 রাজা দায়ূদ জিজ্ঞাসা করলেন, “যোয়াব কি তোমাকে এইসব কথা বলতে বলেছে?”
মহিলা উত্তর দিল, “আপনার দিব্যি, হে আমার মনিব রাজা, আপনি ঠিকই বলেছেন। আপনার আধিকারিক যোয়াবই আমাকে এইসব কথা আপনাকে বলতে বলেছে। 20 যোয়াব এই কাজগুলি করেছে যাতে আপনি এই ঘটনাগুলিকে অন্যভাবে দেখতে পান। হে আমার মনিব, আপনি ঈশ্বরের দূতের মতই জ্ঞানী। এই পৃথিবীতে যা যা ঘটে আপনি তার সবই জানেন।”
অবশালোম জেরুশালেমে ফিরে এল
21 রাজা যোয়াবকে বললেন, “দেখ, আমি যা প্রতিজ্ঞা করেছি, আমি তাই করব। তরুণ অবশালোমকে ফিরিয়ে নিয়ে এস।”
22 যোয়াব নত হলেন এবং রাজা দায়ূদকে আশীর্বাদ করলেন। তিনি রাজাকে বললেন, “আজ আমি জানতে পারলাম আপনি আমার প্রতি প্রসন্ন, কারণ আমি যা চেয়েছিলাম আপনি তাই করেছেন।”
23 তারপর যোয়াব উঠে পড়লেন এবং গশূরে গিয়ে অবশালোমকে জেরুশালেমে নিয়ে এলেন। 24 কিন্তু রাজা দায়ূদ বললেন, “অবশালোম তার নিজের বাড়ীতে ফিরে যেতে পারে। সে আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবে না।” তখন অবশালোম নিজের বাড়ীতে ফিরে গেল। অবশালোম রাজার কাছে দেখা করতে যেতে পারল না।
25 লোক অবশালোমের সৌন্দর্য্যের প্রশংসা করত। অবশালোমের মত সুদর্শন গোটা ইস্রায়েলে কেউ ছিল না। পা থেকে মাথা পর্যন্ত অবশালোমের কোথাও কোন খুঁত ছিল না। 26 বছরের শেষে অবশালোম তার মাথা থেকে চুল কেটে ফেলত এবং সেই চুল ওজন করত। সেই চুল ওজনে প্রায় আড়াই সেরের মত হত। 27 অবশালোমের তিনটি পুত্র এবং একটি কন্যা ছিল। তার কন্যার নাম ছিল তামর। তামর অতীব সুন্দরী ছিল।
অবশালোম যোয়াবকে তার সঙ্গে দেখা করতে বাধ্য করল
28 অবশালোম পুরো দু বছর জেরুশালেমে ছিল। এই সময়ে রাজা দায়ূদের সঙ্গে তার দেখা করার অনুমতি ছিল না। 29 অবশালোম যোয়াবের কাছে বার্তাবাহক পাঠালো। বার্তাবাহক যোয়াবকে বলল অবশালোমকে রাজার কাছে পাঠাতে। কিন্তু যোয়াব অবশালোমের কাছে এলেন না। দ্বিতীয়বার অবশালোম খবর পাঠাল। এবারও যোয়াব এলেন না।
30 তখন অবশালোম তার ভৃত্যদের বলল, “দেখ, আমার জমির পাশেই যোয়াবের জমি। সে তার ক্ষেতে যব ফলিয়েছে। তোমরা গিয়ে আগুন ধরিয়ে দাও।”
তখন অবশালোমের ভৃত্যরা গিয়ে যোয়াবের জমিতে আগুন ধরিয়ে দিল। 31 যোয়াব অবশালোমের বাড়ী এলেন। যোয়াব অবশালোমকে বললেন, “কেন তোমার ভৃত্যরা আমার জমিতে আগুন দিয়েছে?”
32 অবশালোম যোয়াবকে বলল, “আমি তোমাকে একটা খবর পাঠিয়েছিলাম, এখানে আসতে বলেছিলাম। আমি তোমাকে রাজার কাছে পাঠাতে চেয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম তুমি তাঁকে জিজ্ঞাসা কর কেন তিনি আমাকে গশূর থেকে ঘরে ফিরে আসতে বলেছিলেন। যেহেতু আমার তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি নেই, কাজেই আমার পক্ষে সেখানে থেকে যাওয়াই ভাল হত। এখন আমাকে রাজার সঙ্গে দেখা করতে দাও। যদি আমি কোন অন্যায় করে থাকি, তবে তিনি আমায় হত্যা করতে পারেন।”
রাজা দায়ূদের সঙ্গে অবশালোম দেখা করলেন
33 যোয়াব রাজার কাছে এসে অবশালোমের সব কথা বললেন। রাজা অবশালোমকে ডেকে পাঠালেন। অবশালোম রাজার কাছে এলো। রাজার সামনে এসে অবশালোম মাটিতে নত হয়ে রাজাকে প্রণাম করল এবং রাজা অবশালোমকে চুম্বন করলেন।
অবশালোম অনেককে বন্ধু করে নিল
15 এরপর অবশালোম নিজের জন্য একটা রথ এবং অনেকগুলো ঘোড়া নিল। যখন সে রথ চালিয়ে যেত তখন তার রথের সামনে দৌড়াবার জন্য 50 জন লোকও থাকত। 2 অবশালোম প্রতিদিন সকালে খুব ভোরে উঠে ফটকের কাছে[b] এসে দাঁড়াত। অবশালোম এমন একজনকে খুঁজত যে তার সমস্যা নিয়ে বিচারের জন্য রাজা দায়ূদের কাছে যাচ্ছে। অবশালোম তার সঙ্গে কথা বলত। অবশালোম বলত, “কোন শহর থেকে তুমি আসছ?” লোকটা হয়তো বলত, “আমি ইস্রায়েলের অমূক পরিবারগোষ্ঠীর অমূক পরিবারের লোক।” 3 তখন অবশালোম তাকে বলত, “দেখ, তুমি ঠিক বলেছ কিন্তু রাজা তো তোমার কথা শুনবেন না।”
4 অবশালোম বলত, “আহা, আমার ইচ্ছা হয় কেউ বেশ আমাকে এই দেশের বিচারক করে দিত। তাহলে যারা সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসত তাদের প্রত্যেককে আমি সাহায্য করতে পারতাম। তার সমস্যার সুষ্ঠ সমাধান পেতে আমি তাকে সাহায্য করতে পারতাম।”
5 যদি কোন ব্যক্তি অবশালোমের কাছে এসে মাথা নীচু করে, তাহলে সে তার সঙ্গে তার সবচেয়ে ভাল বন্ধুর মতই ব্যবহার করত। আবশালোম গিয়ে তাকে হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরত এবং চুম্বন করত। 6 সমস্ত ইস্রায়েলীয়রা, যারা রাজা দায়ূদের কাছে ন্যায়ের জন্য আসত তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই অবশালোম একই রকম আচরণ করত। এইভাবে অবশালোম ইস্রায়েলের লোকদের মন জয় করেছিল।
অবশালোম দায়ূদের রাজ্য অধিকার করার পরিকল্পনা করল
7 চার বছর[c] পর অবশালোম রাজা দায়ূদকে বলল, “হিব্রোণে থাকার সময় প্রভুর কাছে যে বিশেষ প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তা পূরণ করার জন্য আমাকে যেতে দিন। 8 অরামের গশূরে থাকার সময়েও আমি সেই একই প্রতিশ্রুতি করেছিলাম। আমি বলেছিলাম, ‘প্রভু যদি আমাকে জেরুশালেমে ফিরিয়ে আনেন, আমি প্রভুর সেবা করব।’”
9 রাজা দায়ূদ বলেন, “শান্তিতে যাও।”
অবশালোম হিব্রোণে চলে গেলেন। 10 কিন্তু অবশালোম ইস্রায়েলের প্রত্যেকটা পরিবারগোষ্ঠীর কাছে গুপ্তচর পাঠাল। চররা লোকদের বলতে লাগল, “যখন তোমরা শিঙার রব শুনবে তখন বলবে ‘অবশালোম হিব্রোণের রাজা হয়েছে।’”
11 অবশালোম তার সঙ্গে যাবার জন্য 200 জন লোককে ডাকল। তারা তার সঙ্গে জেরুশালেম থেকে চলে গেল কিন্তু তারা জানে না, সে কি পরিকল্পনা করেছে। 12 অহীথোফল দায়ূদের অন্যতম একজন পরামর্শদাতা ছিল। অহীথোফল ছিল গীলো শহরের লোক। অবশালোম যখন উৎসর্গ নিবেদন করেছিল তখন সে অহীথোফলকে তার শহর গীলো থেকে ডেকে পাঠাল। অবশালোমের ফন্দি খুব ভালভাবেই কার্যকরী হয়েছিল এবং বহু লোক তাকে সমর্থন করেছিল।
দায়ূদ অবশালোমের পরিকল্পনা জানতে পারলেন
13 দায়ূদকে সংবাদ দিতে একজন লোক এলো। সে বলল, “ইস্রায়েলের লোকরা অবশালোমকে অনুসরণ করতে শুরু করেছে।”
14 তারপর দায়ূদ জেরুশালেমে বসবাসকারী তাঁর সব আধিকারিকদের বললেন, “আমরা পালিয়ে যাব। আমরা যদি পালিয়ে না যাই, অবশালোম আমাদের যেতে দেবে না। তাড়াতাড়ি কর, যেন অবশালোম আমাদের ধরতে না পারে। সে আমাদের এবং জেরুশালেমের সব লোককে মেরে ফেলবে।”
15 রাজার আধিকারিকরা তাঁকে বলল, “আপনি আমাদের যা বলবেন, আমরা তাই করব।”
দায়ূদ এবং তাঁর লোকরা পালিয়ে গেল
16 রাজা দায়ূদ লোকজন সহ পালিয়ে গেলেন। রাজা তাঁর বাড়ী দেখাশোনা করার জন্য তাঁর দশজন উপপত্নীকে রেখে গেলেন। 17 রাজা চলে যেতে সব লোকরাও তাঁকে অনুসরণ করল। শেষ বাড়ীতে গিয়ে তারা থামল। 18 তাঁর সমস্ত আধিকারিক তাঁর সামনে দিয়ে হেঁটে সবলে গেল। করেথীয়, পলেথীয় এবং (গাতের 600 পুরুষ) রাজার সামনে দাঁড়াল।
19 রাজা গাতের ইত্তয়কে বললেন, “কেন তুমিও আমাদের সঙ্গে যাচ্ছ? ফিরে যাও। নতুন রাজা অবশালোমের সঙ্গে যোগ দাও। তুমি একজন ভিন দেশী। এটা তোমার দেশ নয়। 20 কেবলমাত্র গতকাল তুমি আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছ। তুমি নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় ঘুরে বেড়াবে না? তুমি তোমার ভাইদের নাও এবং যাও। তোমার প্রতি দয়া ও আনুগত্য প্রদর্শিত হোক্।”
21 কিন্তু ইত্তয় রাজাকে উত্তর দিল, “আমি প্রভুর নামে শপথ নিয়ে বলছি, আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন আমি আপনার সঙ্গেই থাকব!”
22 দায়ূদ ইত্তয়কে বললেন, “এসো, আমরা কিদ্রোণ স্রোত পার হয়ে যাই।”
তখন গাতের ইত্তয় এবং তার সব লোক তাদের ছেলে-মেয়েসহ কিদ্রোণ স্রোত পার হয়ে গেল। 23 সব লোকরা উচ্চৈস্বরে কাঁদছিল। রাজা দায়ূদ কিদ্রোণ স্রোত পার হয়ে গেলেন। তারপর সব লোক মরুভূমির পথে পা বাড়াল। 24 সাদোক এবং তার সঙ্গে অন্যান্য লেবীয়রা ঈশ্বরের পবিত্র সিন্দুক বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা ঈশ্বরের পবিত্র সিন্দুক নামিয়ে রাখল। যতক্ষণ পর্যন্ত না সব লোক জেরুশালেম ত্যাগ করল, ততক্ষণ পর্যন্ত অবিয়াথর পবিত্র সিন্দুকের পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন এবং প্রার্থনা করলেন।
25 রাজা দায়ূদ সাদোককে বললেন, “ঈশ্বরের পবিত্র সিন্দুক জেরুশালেমে নিয়ে যাও। প্রভু যদি আমার প্রতি প্রসন্ন হন, তিনি আবার আমায় জেরুশালেমে ফিরিয়ে আনবেন এবং আমাকে জেরুশালেম ও তাঁর আবাস স্থান দেখতে দেবেন। 26 আর যদি প্রভু আমার প্রতি প্রসন্ন না হন, তিনি আমার প্রতি তাঁর যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন।”
27 রাজা যাজক সাদোককে বললেন, “তুমিও একজন ভাববাদী। তুমি শান্তিতে নগরীতে ফিরে যাও। তোমার পুত্র অহীমাস এবং অবীয়াথরের পুত্র যোনাথনকে সঙ্গে নিয়ে এস। 28 মরুভূমিতে যাবার জন্য যে জায়গায় সবাই নদী পার হয়, সেখানে আমি তোমার কাছ থেকে কোন খবর না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব।”
29 সেই মত, সাদোক এবং অবীয়াথর ঈশ্বরের পবিত্র সিন্দুক জেরুশালেমে নিয়ে গিয়ে রেখে দিল।
দায়ূদ অহীথোফলের বিরুদ্ধে প্রার্থনা করলেন
30 দায়ূদ জৈতুন পর্বতে উঠলেন। তিনি কাঁদছিলেন। তিনি মাথা ঢেকে খালি পায়ে গেলেন। অন্যান্য সকলে মাথা ঢেকে দায়ূদের সঙ্গে গেল। তারাও কাঁদতে কাঁদতে দায়ূদের সঙ্গে গেল।
31 একজন লোক দায়ূদকে বলল, “যারা অবশালোমের সঙ্গে ফন্দি আঁটছে অহীথোফল তাদের মধ্যে একজন।” তখন দায়ূদ প্রার্থনা করলেন, “প্রভু আমরা তোমার কাছে প্রার্থনা করি তুমি অহীথোফলের চক্রান্ত ব্যর্থ কর।” 32 দায়ূদ পর্বতের শিখরে এলেন। এখান থেকে তিনি মাঝে মাঝে ঈশ্বরের উপাসনা করতেন। সেই সময় অর্কীয় হূশয় তাঁর কাছে এল। তার মাথায় ধূলোবালি এবং পরণে ছিন্নবস্ত্র।
33 দায়ূদ হূশয়কে বললেন, “যদি তুমি আমার সঙ্গে যাও তাহলে আমাকে দেখাশোনা করবার জন্য তুমি হবে আর একজন ব্যক্তি। 34 কিন্তু যদি তুমি জেরুশালেমে ফিরে যাও তবে তুমি অহীথোফলের চক্রান্তকে ব্যর্থ করতে পারবে। অবশালোমকে গিয়ে বল, ‘হে রাজা আমি আপনার দাস। আমি আপনার পিতার সেবা করেছি। এখন আমি আপনার সেবা করব।’ 35 সাদোক এবং অবিয়াথর যাজকগণ তোমার সঙ্গে থাকবেন। রাজার বাড়ীতে তুমি যা যা শুনেছ, তুমি অবশ্যই তাদের সবই বলে দেবে। 36 সাদোকের পুত্র অহীমাস এবং অবিয়াথরের পুত্র যোনাথন তাদের সঙ্গে থাকবে। তুমি রাজার প্রাসাদে যা কিছু শুনবে, তা ওদের মাধ্যমে আমাকে জানাতে থাকবে।”
37 তারপর দায়ূদের বন্ধু হূশয় সেই শহরে চলে গেল। অবশালোমও জেরুশালেমে এল।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International