Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
2 শমূয়েল 16-18

সীবঃ দায়ূদের সঙ্গে দেখা করল

16 দায়ূদ জৈতুন পর্বতের চূড়ার দিকে যখন কিছুটা উঠেছেন, তখন মফীবোশতের ভৃত্য সীবঃর সঙ্গে দায়ূদের দেখা হল। সীবঃর গাধা দুটি তাদের পিঠে বস্তাভরা জিনিস বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তাতে 200টা রুটি, 100 থোকা কিস্মিস্, 100টা গ্রীষ্মের মরশুমী ফলসহ এক কূপা দ্রাক্ষারস ছিল। রাজা দায়ূদ সীবঃকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই জিনিসগুলো কি কাজে লাগবে?”

সীবঃ উত্তর দিল, “গাধাগুলি রাজপরিবারের লোকদের চড়ার জন্য। রুটি এবং গ্রীষ্মের ফলগুলো রাজার আধিকারিকদের খাওয়ার জন্য। মরুভূমির পথে কেউ যদি দুর্বল হয়ে পড়ে সে এই দ্রাক্ষারস পান করতে পারে।”

তখন রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “মফীবোশৎ‌ কোথায়?”

সীবঃ উত্তর দিল, “মফীবোশৎ‌ এখন জেরুশালেমে রয়েছে। সে ভাবছে, ‘ইস্রায়েলীয়রা আজ আমার দাদুর রাজত্ব আমায় ফিরিয়ে দেবে।’”

তখন রাজা সীবঃকে বললেন, “সেই কারণে মফীবোশতের যা কিছু আছে তা আমি তোমাকে দিলাম।”

সীবঃ বলল, “আমি আপনাকে প্রণাম করি। আমার বিশ্বাস, আমি সর্বদাই আপনাকে সন্তুষ্ট রাখতে পারব।”

শিমিয়ি দায়ূদকে অভিশাপ দিল

দায়ূদ বহুরীমে এলেন। শৌলের পরিবারের একজন লোক বহুরীম থেকে এল। লোকটার নাম শিমিয়ি—সে গেরার পুত্র। শিমিয়ি দায়ূদের উদ্দেশ্যে অহিতকর কথা বলতে বলতে বেরিয়ে এল। এবং বার বার সে খারাপ কথাই বলতে থাকল।

শিমিয়ি দায়ূদ এবং তাঁর আধিকারিকদের দিকে পাথর ছুঁড়ছিল। কিন্তু সব লোক এবং সৈন্যরা দায়ূদকে ঘিরে দাঁড়াল এবং তাঁর চারদিকে জড়ো হল। শিমিয়ি দায়ূদকে এই বলে অভিশাপ দিল: “বেরিয়ে যাও, বেরিয়ে যাও, তুমি একজন জঘন্য খুনী! প্রভু তোমায় শাস্তি দিচ্ছেন। কেন? কারণ তুমি শৌলের পরিবারের লোকদের মেরে ফেলেছ। তুমি চুরি করে শৌলের জায়গায় রাজা হয়ে বসেছ। এখন সেরকমই খারাপ কিছু তোমার নিজের ক্ষেত্রে ঘটছে। প্রভু তোমার রাজত্ব তোমার পুত্র অবশালোমকে দিয়েছেন। কেন? কারণ তুমি একজন খুনী।”

সরূয়ার পুত্র অবীশয় রাজাকে বলল, “এই মরা কুকুরটা কেন আপনাকে অভিশাপ করবে? হে রাজা, প্রভু আমার, আমাকে যেতে দিন, আমি গিয়ে শিমিয়ির মুণ্ডু কেটে উড়িয়ে দিই।”

10 কিন্তু রাজা উত্তর দিলেন, “ওহে সরূয়ার পুত্র, এটা তোমার কোন ব্যাপার নয়। সে তো আমাকে অভিশাপ দিচ্ছে। প্রভু তাকে বলেছেন আমাকে অভিশাপ দিতে। প্রভু যা করেন সে বিষয়ে কে তাঁকে প্রশ্ন করতে পারে?”

11 দায়ূদ অবীশয় এবং তাঁর ভৃত্যদের আরও বললেন, “দেখ, আমার নিজের পুত্র অবশালোম আমাকে হত্যা করতে চাইছে। বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর এই ব্যক্তির (শিমিয়ি) আমাকে হত্যা করার অনেক বেশী অধিকার আছে। ওকে একা ছেড়ে দাও। ওকে আমায় অভিশাপ দিয়ে যেতে দাও। প্রভু ওকে এই কাজ করতে বলেছেন। 12 হয়তো আমার প্রতি যা কিছু ভুল করা হয়েছে প্রভু তা দেখবেন। তাহলে শিমিয়ি আজ আমার বিরুদ্ধে যা যা খারাপ কথা বলেছে, প্রভু হয়তো তার জন্য আমাকে ভাল কিছু দেবেন।”

13 অতএব দায়ূদ এবং তাঁর লোকরা রাস্তা দিয়ে পুনরায় চলতে লাগল। কিন্তু শিমিয়ি দায়ূদকে অনুসরণ করতে থাকলো। রাস্তার অন্যদিক দিয়ে সে পাহাড়ের ধারে ধারে চলতে থাকলো। পথে যেতে যেতে শিমিয়ি দায়ূদের উদ্দেশ্যে খারাপ খারাপ কথা বলতে থাকলো। শিমিয়ি দায়ূদের উদ্দেশ্যে পাথর এবং কাদা ছুঁড়তে লাগল।

14 রাজা দায়ূদ এবং তাঁর সব লোকরা যর্দন নদীর কাছে এসে পৌঁছলেন। রাজা এবং তাঁর লোকরা খুব ক্লান্ত ছিলেন। তাঁরা সেখানে বিশ্রাম নিয়ে নিজেদের খানিকটা চাঙ্গা করে নিলেন।

15 অবশালোম, অহীথোফল এবং ইস্রায়েলের সব লোক জেরুশালেমে এল। 16 দায়ূদের বন্ধু অর্কীয় হূশয় অবশালোমের কাছে এল। হূশয় অবশালোমকে বলল, “রাজা দীর্ঘজীবী হোক্! রাজা দীর্ঘজীবী হোক্!”

17 অবশালোম উত্তর দিল, “তুমি তোমার বন্ধু দায়ূদের প্রতি একনিষ্ঠ নও কেন? তুমি তোমার বন্ধুর সঙ্গে জেরুশালেম থেকে চলে গেলে না কেন?”

18 হূশয় বলল, “প্রভু যাকে বেছে নেন আমি তো তারই। লোকরা এবং ইস্রায়েলের সব লোকরা আপনাকে বেছে নিয়েছে। আমি আপনার সঙ্গে অবশ্যই থাকব। 19 অতীতে আমি আপনার পিতার সেবা করেছি। অতএব এখন আমি দায়ূদের পুত্রের সেবা করব। আমি আপনারই সেবা করব।”

অবশালোম অহীথোফলের কাছ থেকে উপদেশ চাইল

20 অবশালোম অহীথোফলকে জিজ্ঞাসা করল, “বল, এখন কি করা উচিৎ‌।”

21 অহীথোফল অবশালোমকে বলল, “তোমার পিতা এখানে ঘর-বাড়ী দেখাশোনা করার জন্য তাঁর কয়েকজন উপপত্নীদের রেখে গেছেন। যাও এবং তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন কর। তখন সব ইস্রায়েলীয় জানবে তোমার পিতা তোমাকে ঘৃণা করে। তোমার সব লোকরা তোমাকে সমর্থন করতে উৎসাহিত হবে এবং তোমাকে তাদের পূর্ণ সমর্থন দেবে।”

22 তখন তারা বাড়ীর ছাদে অবশালোমের জন্য একটা তাঁবু ফেলল। অবশালোম তার পিতার উপপত্নীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করল। সব ইস্রায়েলীয়ই তা দেখল। 23 সেই সময় থেকে অহীথোফলের উপদেশ অবশালোম এবং দায়ূদ উভয়ের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তা ছিল মানুষের কাছে ঈশ্বরের বাক্যের মতই গুরুত্বপূর্ণ।

দায়ূদ সম্পর্কে অহীথোফলের উপদেশ

17 অহীথোফল অবশালোমকে বলল, “আমাকে 12,000 লোক বেছে নিতে দাও। আজ রাতেই আমি দায়ূদকে তাড়া করব। যখন সে ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে যাবে তখন আমি তাকে ধরব। আমি তাকে ভীত ও আতঙ্কিত করে তুলব। তার সব লোকরা দৌড়ে পালিয়ে যাবে। কিন্তু আমি শুধু রাজা দায়ূদকেই হত্যা করব। তারপর আমি সব লোককে তোমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। যদি দায়ূদ মারা যায়, তাহলে সব লোকরা শান্তিতে ফিরে আসবে।”

অবশালোম এবং ইস্রায়েলের সব নেতার কাছেই এই প্রস্তাব ভাল বলে মনে হল। কিন্তু অবশালোম বলল, “এখন আমি অর্কীয় হূশয়কে ডাকি। সে কি বলে তাও আমি শুনতে চাই।”

হূশয় অহীথোফলের প্রস্তাব পণ্ড করে দিল

হূশয় অবশালোমের কাছে এল। অবশালোম হূশয়কে বলল, “অহীথোফল এই পরামর্শ দিয়েছে। আমরা কি এটাই অনুসরণ করব? তা যদি না হয় তাহলে বল কি করা উচিৎ‌?”

হূশয় অবশালোমকে বলল, “অহীথোফলের উপদেশ এই সময়ে উপযোগী নয়।” হূশয় আরও বলল, “তুমি জানো যে তোমার পিতা এবং তার লোকরা খুবই শক্তিশালী। বাচ্চা কেড়ে নিলে বুনো ভাল্লুক যেমন হিংস্র হয়ে ওঠে ওরাও তেমনিই ভয়ঙ্কর। তোমার পিতা একজন দক্ষ যোদ্ধা। তিনি কখনও সারারাত ওই লোকদের সঙ্গে থাকবেন না। সম্ভবতঃ তিনি কোন গুহা বা অন্য কোথাও ইতিমধ্যে লুকিয়ে পড়েছেন। যদি তোমার পিতা তোমার লোকদের আগে আক্রমণ করে, লোক এই সংবাদ জানতে পারবে। এবং তারা ভাববে, ‘অবশালোমের লোকরা হেরে যাচ্ছে!’ 10 তখন সিংহের মত সাহসী যোদ্ধারাও ভীত ও আতঙ্কিত হবে। কেন? কারণ গোটা ইস্রায়েল এই কথা জানে যে তোমার পিতা শক্তিশালী যোদ্ধা এবং তাঁর লোকরা অত্যন্ত সাহসী।

11 “আমার প্রস্তাব হল এই: তুমি অবশ্যই দান থেকে বের্-শেবা পর্যন্ত সব ইস্রায়েলীয়দের একসঙ্গে জড়ো করবে। সমুদ্রে যেমন অগুনতি বালি থাকে সেরকমই সেখানে অনেক লোক হবে। তারপর, তুমি নিজে অবশ্যই যুদ্ধে যাবে। 12 দায়ূদ যেখানে লুকিয়ে আছে সেখানেই আমরা তাকে ধরব। অগণিত সৈন্যসহ আমরা দায়ূদকে আক্রমণ করব। ভূমিকে ঢেকে দেওয়া অসংখ্য শিশির কণার মত আমরা ওদের ঢেকে দেব। আমরা দায়ূদ এবং তাঁর লোকদের হত্যা করব। কাউকে জীবিত ছাড়া হবে না। 13 যদি দায়ূদ নগরের ভিতরে পালিয়ে যান সকল ইস্রায়েলীয় মিলে দড়ি দিয়ে আমরা নগরের প্রাচীর ভেঙ্গে দেব। তাদের সবাইকে আমরা উপত্যকায় টেনে নামাব। নগরের একটা ছোট্ট পাথর পর্যন্ত আমরা রাখতে দেব না।”

14 অবশালোম এবং সকল ইস্রায়েলীয় বলল, “অর্কীয় হূশয়ের উপদেশ অহীথোফলের উপদেশের চেয়ে ভাল।” তারা একথা বলল কারণ তা ছিল প্রভুর পরিকল্পনা। অবশালোমকে শাস্তি দেবার জন্য প্রভু অহীথোফলের সৎ‌ উপদেশকে বিফল করার ফন্দি এঁটেছিলেন।

হূশয় দায়ূদকে একটি সাবধানবাণী পাঠাল

15 ঐ সব কথা হূশয় সাদোক এবং অবীয়াথর এই দুই যাজকদের বলল। অহীথোফল অবশালোম এবং ইস্রায়েলের নেতাদের যে পরামর্শ দিয়েছে হূশয় তাও বলল। হূশয় নিজে যা যা পরামর্শ দিয়েছিল তাও তাদের বলল। হূশয় বলেছিল, 16 “খুব শীঘ্র দায়ূদকে এই খবর দাও। তাঁকে বল, যেখান দিয়ে নদী পার হয়ে লোকে মরুভূমিতে ঢোকে তিনি যেন সেখানে আজ রাতে না থাকেন। তাঁকে এখুনি যর্দন নদী পার হয়ে যেতে বল। যদি তিনি নদী পার হয়ে চলে যান তবে রাজা এবং তাঁর লোকরা ধরা পড়বে না।”

17 যাজকের দুই পুত্র যোনাথন এবং অহীমাস ঐন্-রোগেলে অপেক্ষা করছিল। তারা চাইত না কেউ তাদের শহরে প্রবেশ করতে দেখুক। শুধুমাত্র এক দাসী এসে তাদের সব খবরাখবর দিয়ে যেত। তারপর যোনাথন এবং অহীমাস রাজা দায়ূদের কাছে গিয়ে সব কথা বলত।

18 কিন্তু এক বালক যোনাথন এবং অহীমাসকে দেখে ফেলল। এই ঘটনা অবশালোমকে বলার জন্য বালকটি ছুটে চলে গেল। যোনাথন এবং অহীমাসও তাড়াতাড়ি দৌড়ে পালাল এবং বহুরীমে এক লোকের বাড়ীতে এসে উপস্থিত হল। লোকটার বাড়ীর বাইরের প্রাঙ্গণে একটা কুয়ো ছিল। যোনাথন এবং অহীমাস সেই কুয়োতে নেমে গেল। 19 সেই লোকটির স্ত্রী কুয়োর ওপর একটা আচ্ছাদন রেখে দিল। তারপর সে সেই কুয়োর ওপর গমের বীজ বিছিয়ে দিল, তাই সেটি শস্যের স্তুপের মতই দেখতে লাগছিল। তাই লোকরা জানতে পারল না যে যোনাথন এবং অহীমাস তার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে। 20 অবশালোমের ভৃত্যরা সেই বাড়ীতে এসে সেই মহিলাকে জিজ্ঞাসা করল, “অহীমাস এবং যোনাথন কোথায়?”

মহিলা অবশালোমের ভৃত্যদের বলল, “ইতিমধ্যেই তারা নদী পার হয়ে গেছে।”

তখন অবশালোমের ভৃত্যরা যোনাথন ও অহীমাসের সন্ধানে চলে গেল। কিন্তু তারা তাকে খুঁজে পেল না। অতঃপর অবশালোমের ভৃত্যরা জেরুশালেমে ফিরে এল।

21 অবশালোমের ভৃত্যরা চলে যাওয়ার পর, যোনাথন ও অহীমাস কুয়ো থেকে বাইরে বেরিয়ে এল। তারা রাজা দায়ূদের কাছে গেল এবং দায়ূদকে বলল, “খুব তাড়াতাড়ি নদী পার হয়ে চলে যান। অহীথোফল আপনার বিরুদ্ধে এইসব ষড়যন্ত্র করেছে।”

22 তখন দায়ূদ এবং তাঁর লোকরা যর্দন নদী পার হয়ে গেল। সূর্যোদয়ের আগেই দায়ূদের সব লোকরা যর্দন নদী পার হয়ে গেল।

অহীথোফল আত্মহত্যা করল

23 অহীথোফল দেখল যে তার উপদেশ ইস্রায়েলীয়রা গ্রহণ করে নি। সে তার গাধার পিঠে জিন চড়িয়ে তার নিজের নগরে ফিরে এল। তার পরিবারের যথাবিহিত ব্যবস্থা করে সে গলায় দড়ি দিল। অহীথোফল মারা গেলে লোকরা তাকে তার পিতার কবরেই কবর দিল।

অবশালোম যর্দন নদী পার হল

24 দায়ূদ মহনয়িমে এলেন।

অবশালোম এবং তার সঙ্গে যে সব ইস্রায়েলীয়রা ছিল তারা যর্দন নদী পার হয়ে গেল। 25 অবশালোম অমাসাকে তার সৈন্যদলের অধিনায়করূপে নিযুক্ত করল। অমাসা যোয়াবের জায়গা নিল। অমাসা ছিল যিথ্র, একজন ইশ্মায়েলীয়[a] ছেলে। অমাসার মায়ের নাম অবীগল। সে সরূয়ার বোন নাহশের মেয়ে। সরূয়া ছিল যোয়াবের মা।

26 অবশালোম এবং ইস্রায়েলীয়রা গিলিয়দে তাঁবু ফেলে অবস্থান করল।

শোবি, মাখীর এবং বর্সিল্লয়

27 দায়ূদ মহনয়িমে এলেন। শোবি, মাখীর এবং বর্সিল্লয় সেইখানেই ছিল। শোবি অম্মোনদের রব্বা শহরের নাহশের পুত্র। মাখীর হল লোদবার নিবাসী অম্মীয়েলের পুত্র। আর বর্সিল্লয় গিলিয়দের, রোগলীমের থেকে এসেছিল। 28-29 সেই তিনজন লোক বলল, “মরুভূমিতে যে লোকরা রয়েছে তারা ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত এবং তৃষ্ণার্ত।” তাই তারা দায়ূদের জন্য এবং তাঁর সঙ্গে যে লোকরা ছিল তাদের জন্য অনেক কিছু জিনিস এনেছিল। তারা বিছানা এবং অন্যান্য পাত্রাদি এনেছিল। এছাড়াও তারা গম, যব, ময়দা, ভাজা শস্য, বীন, শাক, শুকনো বীজ, মধু, মাখন, মেষ এবং পনীর এনেছিল।

দায়ূদ যুদ্ধের প্রস্তুতি করলেন

18 দায়ূদ তাঁর লোকদের একবার গুনে নিলেন। তিনি 1000 জন এবং 100 জন করে লোক ভাগ করে প্রতিটি দলের জন্য একজন অধিনায়ক নিযুক্ত করলেন। দায়ূদ তাঁর লোকদের তিনটে দলে ভাগ করে দিলেন এবং তারপর তাদের পাঠিয়ে দিলেন। যোয়াব এক তৃতীয়াংশ লোকের নেতৃত্বে ছিল। যোয়াবের ভাই সরূয়ার পুত্র অবীশয় অপর একভাগ লোককে নেতৃত্ব দিয়েছিল। এবং গাতের ইত্তয় বাকী অংশের নেতৃত্বে ছিল।

রাজা দায়ূদ তাঁদের বললেন, “আমিও তোমাদের সঙ্গে যাব।”

কিন্তু লোকরা বলে উঠল, “না! আপনি আমাদের সঙ্গে একদম আসবেন না। কেন? কারণ আমরা যদি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাই, তাহলে অবশালোমের লোকরা ধর্তব্যের মধ্যেই আনবে না। এমনকি, আমাদের অর্ধেক লোক যদি মারাও যায় তাতেও অবশালোমের লোকদের কিছু এসে যাবে না, কিন্তু আপনি আমাদের 10,000 লোকর সমান। তাই আপনার পক্ষে শহরে থাকাই ভাল। তখন আমরা সাহায্য চাইলে আপনি আমাদের সাহায্য করতে পারবেন।”

রাজা তাদের বললেন, “তোমরা যা ভাল বোঝ আমি তাই করব।”

তখন রাজা ফটকের একদিকে দাঁড়ালেন। সৈন্যবাহিনী বেরিয়ে গেল। শ’য়ে শ’য়ে এবং হাজারে হাজারে সেনাবাহিনী বেরিয়ে এল।

যোয়াব, অবীশয় এবং ইত্তয়কে রাজা আদেশ দিলেন। তিনি বললেন, “আমার মুখ চেয়ে তোমরা এই কাজ কর। তরুণ অবশালোমের সঙ্গে সংযত ও ভাল আচরণ কর।” সব লোক দাঁড়িয়ে শুনল যে অধিনায়কের প্রতি অবশালোম সম্পর্কে রাজা আদেশ দিলেন।

দায়ূদের সৈন্য অবশালোমের সৈন্যদের হারিয়ে দিল

অবশালোমের পক্ষের ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দায়ূদের সৈন্যরা যুদ্ধক্ষেত্রে রওনা হল। তারা ইফ্রয়িমের অরণ্যে যুদ্ধ করল। দায়ূদের লোকরা ইস্রায়েলীয়দের পরাজিত করল। সেদিন 20,000 সৈন্যকে হত্যা করা হয়েছিল। সারা দেশে সেই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু সে দিন যুদ্ধক্ষেত্রের চেয়ে অরণ্যেই বেশী লোক মারা গিয়েছিল।

এমন হল যে অবশালোম দায়ূদের আধিকারিকদের মুখোমুখি হল। অবশালোম তার খচ্চরের ওপর লাফিয়ে পড়ে পালাতে চেষ্টা করল। খচ্চরটা একটা বড় ওক গাছের ডালের তলা দিয়ে যেতে চেষ্টা করল। অবশালোমের মাথাটা গাছের ডালে আটকে গেল। খচ্চরটা তলা দিয়ে পালিয়ে গেল। আবশালোম গাছের ডালে ঝুলে রইল।[b]

10 একজন ব্যক্তি এই ঘটনা ঘটতে দেখল। সে যোয়াবকে বলল, “আমি অবশালোমকে একটা ওক গাছে ঝুলতে দেখেছি।”

11 যোয়াব তাকে জিজ্ঞাসা করল: “কেন তুমি তাকে হত্যা করলে না এবং তাকে মাটিতে ফেলে দিলে না? তাহলে আমি তোমাকে একটা কোমরবন্ধ ও দশটা রৌপ্য মুদ্রা দিতাম।”

12 ব্যক্তিটি যোয়াবকে বলল, “তুমি আমাকে 1000 রজত মুদ্রা দিলেও আমি রাজার পুত্রকে আঘাত করার চেষ্টা করতাম না। কেন? কারণ তোমার প্রতি অবীশয় এবং ইত্তয়ের প্রতি রাজার আদেশ শুনেছি। রাজা বলেছেন, ‘দেখো, তরুণ অবশালোমকে আঘাত করো না।’ 13 যদি আমি অবশালোমকে হত্যা করতাম রাজা নিজেই আমাকে খুঁজে বের করতেন এবং তুমি আমাকে শাস্তি দিতে।”

14 যোয়াব বলল, “তোমার সঙ্গে এখানে আমি সময় নষ্ট করব না।”

অবশালোম তখনও দেবদারু গাছে ঝুলে ছিল এবং তখনও বেঁচেছিল। যোয়াব তিনটে বর্শা নিয়ে অবশালোমের দিকে ছুঁড়ে দিল। বর্শাগুলি অবশালোমের বুক বিদীর্ণ করে দিল। 15 দশজন তরুণ সৈন্য যোয়াবকে যুদ্ধে সাহায্য করত। তারা দশজনে মিলে অবশালোমকে ঘিরে দাঁড়াল ও তাকে হত্যা করল।

16 যোয়াব তূর্য বাজাল এবং তার লোকদের ইস্রায়েলীয়দের তাড়া না করতে আদেশ দিল। 17 তারপর যোয়াবের লোকরা অবশালোমের দেহটি জঙ্গলের খাদে ফেলে দিল। সেই খাদটি তারা বড় বড় পাথর দিয়ে বুজিয়ে দিল।

সব ইস্রায়েলীয় যারা অবশালোমকে অনুসরণ করছিল তারা পালিয়ে গিয়ে যে যার বাড়ী চলে গেল।

18 অবশালোমের জীবনকালে রাজার উপত্যকায় সে একটা স্তম্ভ তৈরী করেছিল এবং সেটা নিজের নামে নাম দিয়েছিল কারণ সে ভেবেছিল: “আমার নাম রক্ষা করার জন্য আমার কোন সন্তানাদি নেই।” আজও স্তম্ভটিকে “অবশালোমের স্তম্ভ” বলা হয়।

যোয়াব দায়ূদকে এই সংবাদ পাঠিয়ে দিল

19 সাদোকের পুত্র অহীমাস যোয়াবকে বলল, “আমাকে দৌড়ে গিয়ে রাজা দায়ূদকে এই খবর জানাতে দাও। আমি তাঁকে বলব আপনার জন্য প্রভু আপনার শত্রুকে হত্যা করেছেন।”

20 যোয়াব অহীমাসকে উত্তর দিল, “না, আজ এই খবর তুমি রাজা দায়ূদকে দেবে না। অন্যদিনে তুমি এই খবর দিতে পার কিন্তু আজ নয়। কেন? কারণ রাজার ছেলে মারা গেছে।”

21 তখন যোয়াব কূশীয়কে বলল, “যাও এবং তুমি যা যা দেখেছ তা রাজাকে বল।”

তখন সেই কূশীয় যোয়াবকে প্রণাম করে রাজা দায়ূদের উদ্দেশ্যে রওনা হল।

22 কিন্তু সাদোকের পুত্র অহীমাস আবার যোয়াবের কাছে অনুরোধ করল, “যা ঘটে গেছে তা নিয়ে চিন্তিত হয়ো না, আমাকেও ঐ কূশীয়র পিছনে ছুটে যেতে দাও!”

যোয়াব জিজ্ঞাসা করল, “পুত্র, কেন তুমি এই সংবাদ নিয়ে যেতে চাইছ? এই সংবাদের জন্য তুমি কোন পুরস্কার পাবে না।”

23 অহীমাস উত্তর দিল, “যাই ঘটুক না কেন তা নিয়ে চিন্তা করি না। আমি দায়ূদের কাছে দৌড়ে যাব।”

যোয়াব অহীমাসকে বলল, “ভাল, দায়ূদের কাছে দৌড়ে যাও।”

তখন অহীমাস যর্দন উপত্যকার মধ্যে দিয়ে দৌড়লো এবং কূশীয় বার্তাবাহককে অতিক্রম করে গেল।

দায়ূদ এই সংবাদ শুনলেন

24 শহরের দুই সিংহদ্বারের মাঝামাঝি দায়ূদ বসেছিলেন। একজন প্রহরী সিংহদ্বার সংলগ্ন প্রাচীরের ওপর উঠে দেখল একজন লোক একা দৌড়োচ্ছে। 25 প্রহরী চিৎকার করে দায়ূদকে সে কথা বলল।

রাজা দায়ূদ বললেন, “যদি লোকটা একা হয় তা হলে সে সংবাদ নিয়ে আসছে।”

লোকটা ক্রমে নগরের কাছে এসে গেল। 26 তখন প্রহরী দেখল আরও একজন দৌড়ে আসছে। প্রহরী দ্বাররক্ষীকে ডেকে বলল, “দেখ আরও একজন লোক একা ছুটে আসছে।”

রাজা বললেন, “ওই লোকটিও সংবাদ নিয়ে আসছে।”

27 প্রহরী বলল, “আমার মনে হয় প্রথম লোকটি সাদোকের পুত্র অহীমাসের মত দৌড়োয়।”

রাজা বলল, “সে একজন ভাল লোক। সে নিশ্চয়ই শুভ সংবাদ নিয়ে আসছে।”

28 অহীমাস রাজাকে বলল, “সবই কুশল!” অহীমাস রাজাকে প্রণাম করল এবং তাঁকে বলল, “আপনার প্রভু, ঈশ্বরের প্রশংসা করুন! হে আমার মনিব, যারা আপনার বিরোধী ছিল প্রভু তাদের পরাজিত করেছেন।”

29 রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “অবশালোম কেমন আছে?”

অহীমাস উত্তর দিল, “যোয়াব যখন আমাকে পাঠিয়েছিল, আমি একদল লোককে দেখেছিলাম এবং তারা বিভ্রান্ত ছিল। কিন্তু কি ব্যাপারে তারা উত্তেজিত তা আমি জানি না।”

30 তখন রাজা বললেন, “তুমি একটু সরে দাঁড়াও এবং অপেক্ষা কর।” অহীমাস সরে গেল এবং দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করল।

31 সেই কূশীয় এল। সে বলল, “হে আমার প্রভু এবং রাজা, আপনার জন্য সংবাদ আছে। যারা আপনার বিরুদ্ধে ছিল প্রভু তাদের আজ শাস্তি দিয়েছেন।”

32 রাজা সেই কূশীয়কে জিজ্ঞাসা করলেন, “অবশালোম ভালো আছে তো?”

কূশীয়টি উত্তর দিল, “আপনার শত্রুরা এবং সেইসব লোকরা যারা আপনাকে আঘাত করবার চেষ্টা করছে তাদের যেন শাস্তি হয় এবং তাদের ভাগ্য যেন অবশালোমের মত হয় আমি এই কামনা করি।”

33 তখন রাজা জানতে পারলেন অবশালোম মারা গেছে। রাজা ভীষণভাবে ভেঙ্গে পড়লেন। শহরে সিংহদ্বারের ওপর ঘরে গিয়ে কাঁদলেন। সেই সবচেয়ে ওপর তলায় যেতে যেতে তিনি বিলাপ করে কাঁদতে লাগলেন, “হায় অবশালোম! হায় আমার পুত্র অবশালোম! তোমার বদলে যদি আমি মরতাম! হায়রে অবশালোম! হায় আমার পুত্র!”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International