Beginning
মর্দখয়ের সম্মান প্রাপ্তি
6 সেদিন রাতে রাজার চোখে কিছুতেই ঘুম আসছিল না। রাজা তখন তাঁর এক ভৃত্যকে ডেকে (রাজাদের ইতিহাস বই) থেকে যেখানে রাজাদের রাজত্ব কালের সব ঘটনা নথিভুক্ত করা আছে তা পড়ে শোনাতে বললেন। 2 ভৃত্যটি তখন রাজাকে, রাজার আধিকারিক বিগ্থন ও তেরশ যারা প্রবেশপথ পাহারা দিত, তাদের দুষ্ট চক্রান্তের কথা এবং মর্দখয়ের কথা, যে চক্রান্তের কথা শুনতে পেয়েছিল এবং প্রাসাদে জানিয়ে দিয়েছিল তা পড়ে শোনালো।
3 রাজা জিজ্ঞেস করলেন, “মর্দখয়কে এর জন্য কি সম্মান এবং পুরস্কার দেওয়া হয়েছে?”
ভৃত্যরা রাজাকে জানালো, “মর্দখয়ের জন্য কিছুই করা হয়নি।”
4 ঠিক সে সময় হামন রাজপ্রাসাদের বহির্দ্বারে প্রবেশ করলেন। হামন, তখন মর্দখয়কে ফাঁসি দেবার জন্য রাজার অনুমোদন নিতে এসেছিলেন। রাজা বাইরে পায়ের আওয়াজ পেয়ে জানতে চাইলেন, “এইমাত্র প্রাঙ্গণের ভেতরে কে এলো?” 5 ভৃত্যরা উত্তর দিল, “হামন চাতালে দাঁড়িয়ে আছেন।”
রাজা বললেন, “তাকে ভেতরে নিয়ে এসো।”
6 হামন ভেতরে আসার পর রাজা তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, “হামন, রাজা কাউকে সম্মান দিতে চাইলে তা কিভাবে দেওয়া উচিৎ?”
হামন মনে মনে ভাবলো, “আমি ছাড়া সম্মান পাওয়ার আর কে আছে? আমি নিশ্চিত, রাজা নিশ্চয়ই আমাকে সম্মান জানানোর কথা ভাবছেন।”
7 হামন তখন রাজাকে বললেন, “মহারাজ আপনি যদি কাউকে সম্মান দেখাতে চান তাহলে, 8 আপনার ভৃত্যদের আপনার নিজের পরা একটি পোশাক ও আপনার নিজের চড়া একটি ঘোড়া আনতে বলুন। ঘোড়াটির মাথায় ভৃত্যরা একটি রাজমুকুট পরিয়ে দিক। 9 এরপর আপনার কোন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে এই রাজপোশাকটি, মহারাজ যে ব্যক্তিকে সম্মান জানাতে চান তাকে পরতে সাহায্য করতে বলুন এবং সেই নেতাকে বলুন ঐ ব্যক্তিকে সেই ঘোড়ার ওপর বসিয়ে সারা শহরের রাস্তায় এই বলে ঘুরে বেড়াতে, ‘রাজা যাঁকে সম্মান দেখাতে চান তাঁর জন্য এটা করা হল।’”
10 রাজা তখন হামনকে আদেশ দিলেন, “তাড়াতাড়ি গিয়ে ঐ ইহুদী মর্দখয়ের জন্য একটি ঘোড়া ও পোশাকের ব্যবস্থা কর। যাও, মর্দখয় প্রাসাদের প্রবেশ পথের কাছে অপেক্ষা করে আছে। তুমি যেভাবে বলেছো, সেভাবে তাঁকে সম্মান দেখাও।”
11 হামন গিয়ে রাজার পোশাক ও ঘোড়া নিয়ে এলেন। তারপর মর্দখয়কে নিজে সেই পোশাক পরিয়ে, ঘোড়ায় চড়িয়ে, শহরের প্রতিটি রাস্তায় যেতে যেতে বলতে লাগলেন, “রাজা যাঁকে সম্মান দেখাতে চান এভাবেই দেখান!”
12 এরপর মর্দখয় আবার রাজদ্বারেই ফিরে গেলেন কিন্তু অপমানিত হামন লজ্জায় বাড়ি ফিরে এলেন। বাড়ি ফিরে এসে লজ্জায় ও অপমানে মুখ ঢাকলেন। 13 তিনি তাঁর স্ত্রী ও বন্ধুদের সব কথা খুলে বললেন। হামনের স্ত্রী ও বন্ধুরা হামনকে বললো, “মর্দখয় যদি ইহুদী হয় তাহলে তোমার পক্ষে জয়লাভ করা অসম্ভব। তোমার পতন শুরু হয়েছে এবং এভাবে তুমি নিশ্চিত শেষ হয়ে যাবে।”
14 সকলে মিলে যখন হামনকে এসব কথা বলছে তখন রাজার নপুংসক পরিচারকরা এসে ইষ্টেরের ভোজসভার জন্য হামনকে তাড়াতাড়ি আসতে বললেন।
হামনের ফাঁসি
7 অতঃপর রাজা ও হামন রাণী ইষ্টেরের ভোজসভায় এলেন। 2 ভোজসভার দ্বিতীয় দিনে দ্রাক্ষারস পান করতে করতে রাজা আবার ইষ্টেরকে রশ্ন করলেন, “রাণী তুমি আমার কাছে কি যেন চাইবে বলেছিলে? তুমি বলো তোমার কি প্রয়োজন, অবশ্যই তা তোমায় দেওয়া হবে। আমি তোমায় সব কিছু, এমনকি রাজ্যের অর্ধেকও দিতে রাজি!”
3 তখন রাণী ইষ্টের উত্তর দিলেন, “হে রাজন, যদি সত্যিই আপনি আমাকে ভালবেসে থাকেন এবং আমি যা চাই তা দিয়ে সন্তুষ্ট হতে চান, তবে আমার বিনীত প্রার্থনা আপনি অনুগ্রহ করে আমায় জীবন ভিক্ষা দিন। আমায় বাঁচতে দিন আর আমার স্বজাতিদেরও বাঁচতে দিন। এটুকুই শুধু আমি চাই। 4 একথা বলছি কারণ আমাকে ও আমার স্বজাতিদের বিনাশ, হত্যা ও পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করবার জন্য বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। যদি আমাদের নিছক ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করা হতো তাহলে আমি চুপ করেই থাকতাম কারণ আমি জানি যে তা রাজা মহারাজাদের উত্যক্ত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কোন ঘটনা নয়।”
5 রাজা অহশ্বেরশ তখন রাণীকে জিজ্ঞেস করলেন, “এ কাজ তোমার সঙ্গে কে করেছে? কে সেই ব্যক্তি যার এতো বড়ো স্পর্ধা যে তোমার লোকদের সঙ্গে এমন করে?”
6 ইষ্টের বললেন, “আমাদের সেই শত্রু হল এই পাপাত্মা হামন।”
একথা শুনে রাজা ও রাণীর সামনে তখন হামন ভয়ে কেঁপে উঠলো। 7 রাজা ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে পানপাত্র পরিত্যাগ করে বাগানে চলে গেলেন। কিন্তু হামন রাণী ইষ্টেরের কাছে প্রাণ ভিক্ষা করার জন্য থেকে গেলেন। হামন প্রাণ ভিক্ষা করছিলেন কারণ তিনি জানতেন, রাজা নিশ্চয়ই ইতিমধ্যেই তাঁকে হত্যা করার কথা ঠিক করে ফেলেছেন। 8 রাজা যখন বাগান থেকে আবার সভাগৃহে ঢুকছেন, ঠিক তখনই তিনি দেখতে পেলেন, রাণী ইষ্টের কেদারায় বিশ্রাম নিচ্ছেন এবং হামন রাণীর সামনে আছড়ে পড়লেন। রাজা তখন চিৎকার করে তাকে বললেন, “আমি এখনো রাণীর বাড়িতে আছি, আর আমার উপস্থিতিতেই তুমি রাণীকে আক্রমণ করছো?”
একথা বলার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রাজভৃত্যরা এসে হামনকে হত্যা করল।[a] 9 হর্বোণা নামে রাজার এক নপুংসক ভৃত্য বলল, “হামনের বাড়ির কাছে প্রায় 75 ফুট দীর্ঘ একটি ফাঁসিকাঠ বানানো হয়েছে। মর্দখয়কে এর ওপরে ফাঁসি দেবার জন্য হামন এটা বানিয়েছে। মর্দখয় হল সেই ব্যক্তি যে রাজাকে হত্যা করার কুচক্রান্ত ফাঁস করে দিয়ে রাজাকে বাঁচিয়েছিল।”
রাজা বললেন, “ওই কাঠে হামনকেই ফাঁসি দেওয়া হোক্।”
10 তখন মর্দখয়ের জন্য হামনের নিজের হাতে বানানো ফাঁসিকাঠে (ভৃত্যরা) সকলে মিলে হামনকে ঝুলিয়ে দিল এবং এইভাবে রাজার রাগ পড়লো।
ইহুদীদের সাহায্য করার জন্য রাজার আদেশ
8 সেদিনই রাজা অহশ্বেরশ রাণী ইষ্টেরকে হামনের যাবতীয় সম্পত্তি দিয়ে দিলেন। ইষ্টের রাজাকে জানালেন যে মর্দখয় সম্পর্কে তাঁর ভাই হয়। তারপর মর্দখয় রাজার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। 2 রাজা হামনের কাছ থেকে যে আংটিটা ইতিমধ্যে ফেরত নিয়ে নিয়েছিলেন সেটি নিজের আঙুল থেকে খুলে এবার মর্দখয়কে দিলেন। এরপর ইষ্টের মর্দখয়কে হামনের যাবতীয় সম্পত্তির দায়িত্ব অর্পণ করলেন।
3 ইষ্টের এবার রাজার সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁর পদতলে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে হামনের ইহুদীদের হত্যা করার নিষ্ঠুর পরিকল্পনা তাঁকে পরিত্যাগ করতে বললেন। ইহুদীদের ক্ষতি সাধনের জন্যই হামন এই পরিকল্পনা করেছিলেন।
4 রাজা তখন তাঁর সামনে সোনার রাজদণ্ডটি বাড়িয়ে দিলে, ইষ্টের উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, 5 “হে রাজন, যদি আপনি আমায় পছন্দ করে থাকেন এবং যদি খুশী হন, তাহলে দয়া করে আমার জন্য এইটুকু করুন। আপনার যদি মনে হয়, আমি যা বলছি তা সঠিক এবং আপনি যদি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন তাহলে আগের নির্দেশটি খণ্ডন করার জন্য একটি নতুন নির্দেশ লিখে দিন। হামন, ইহুদীদের হত্যার নির্দেশ দিয়ে এর আগে প্রতিটি প্রদেশে খবর পাঠিয়েছে। 6 কিন্তু আমার পক্ষে আমার স্বজাতিদের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেখা সম্ভব নয় বলেই আমি মহারাজের কাছে এই একান্ত মিনতি করছি।”
7 রাজা অহশ্বেরশ তখন রাণী ইষ্টের ও মর্দখয়কে উত্তর দিলেন, “যেহেতু হামন ইহুদী বিদ্বেষী ছিল সেহেতু আমি ওর সমস্ত সম্পত্তি ইষ্টেরকে দিয়েছি। আমার সেনারা হামনকে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে দিয়েছে। 8 এখন রাজার বকলমে, তোমাদের মতে ইহুদীদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য হবে এমন ভাবে একটি নির্দেশ (তোমরা) লেখো। তারপর রাজার আংটিটি দিয়ে সেটাতে শীলমোহর দাও। রাজার বকলমে লেখা এবং রাজার আংটিটি দিয়ে সীলমোহর করা আদেশ কখনো বাতিল করা যায় না।”
9 দ্রুত রাজার সমস্ত সচিবকে ডেকে পাঠানো হল। তৃতীয় মাসে অর্থাৎ সীবন মাসের 23 দিনে একাজ করা হল। এই সমস্ত সচিবরা তখন ইহুদীদের জন্য দেওয়া মর্দখয়ের নির্দেশগুলো লিখে নিল। সেই নির্দেশ ভারতবর্ষ থেকে কূশ দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত 127 টি প্রদেশের প্রশাসক ও নেতা সকলকে পাঠানো হল। প্রত্যেকটি প্রাদেশিক ভাষায় ও সর্বজনবোধ্য ভাষায় নির্দেশগুলি লেখা হয়েছিল যাতে সবাই সহজে বুঝতে পারে। ইহুদীদের জন্য এই নির্দেশ তাদের নিজেদের ভাষায়, নিজস্ব বর্ণমালায় লেখা হয়েছিল। 10 মর্দখয় স্বয়ং রাজা অহশ্বেরশের বকলমে এই নির্দেশগুলি লিখে, চিঠিগুলি রাজার আংটি দিয়ে সীলমোহর করে বন্ধ করলেন এবং দ্রুতগামী অশ্বারোহী বার্তাবাহকদের দিয়ে চিঠিগুলি পাঠিয়ে দেওয়া হল। এই সমস্ত ঘোড়াগুলোকে রাজার নিজের ব্যবহারের জন্যই বিশেষভাবে তৈরী করা হতো।
11 এই সমস্ত চিঠিতে, রাজা অহশ্বেরশের নির্দেশ বলা হল:
প্রতিটি শহরে ইহুদীদের সমবেত ভাবে তাদের নিজেদের রক্ষা করার অধিকার দেওয়া হল। তাদের বা তাদের নারী ও শিশুদের যদি কোন দল আক্রমণ করে তাহলে তারা সেই শত্রুদের দলকে হত্যা ও ধ্বংস করতে পারবে এবং ইহুদীদের তাদের শত্রুদের সম্পদ লুঠ করার অধিকারও দেওয়া হল।
12 ইহুদীদের এই অধিকার দেওয়া হল দ্বাদশ মাস অর্থাৎ অদর মাসের 13 দিনে। রাজা অহশ্বেরশের সাম্রাজ্যের সমস্ত প্রদেশেই ইহুদীদের এই অধিকার দেওয়া হল। 13 এই চিঠির একটি প্রতিলিপি পাঠিয়ে প্রত্যেকটি রাজ্যে প্রত্যেকটি প্রদেশে একটি বিধি জারি করা হল। রাজ্যের সর্বত্র সবাইকে এই বিধির কথা জানিয়ে দেওয়া হল। যাতে ইহুদীরা সকলে ওই বিশেষ দিনটিতে তাদের সমস্ত শত্রুদের মোকাবিলা করার জন্য এবং প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে। 14 বার্তাবাহকরা রাজার নির্দেশে রাজার ঘোড়ায় চড়ে দ্রুত যাত্রা করল কারণ রাজা তাদের তাড়াতাড়ি যাবার জন্য আদেশ দিলেন। নির্দেশটি রাজধানীতেও টাঙিয়ে দেওয়া হল।
15 মর্দখয় রাজার কাছ থেকে চলে গেলেন। তিনি রাজার উপহার দেওয়া নীল ও সাদা রঙের একটি বিশেষ পোশাক ও সোনার বড় একটি মুকুট এবং বেগুনী লিনেন কাপড়ের আলখাল্লাও পরেছিলেন। 16 ইহুদীদের জন্য এটি ছিল একটি বিশেষ উৎসবের দিন। সকলেই খুব খুশী ও আনন্দিত ছিল এবং শূশনে আনন্দ ও খুশীর মধ্যে দিয়ে দিনটি উদ্যাপন করা হল।
17 প্রত্যেকটি প্রদেশ, প্রতিটি নগরে রাজার নির্দেশ পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি ইহুদী পরিবার খুশী হয়ে উঠল। তারা উৎসব ও ভোজসভার তোড়জোড় শুরু করে দিল। ইহুদীদের ভয়ে অন্য অনেকে ইহুদী হয়ে গেল।
ইহুদীদের জয়
9 রাজার আগের দেওয়া আদেশ অনুযায়ী, দ্বাদশ মাসের অর্থাৎ অদর মাসের ত্রয়োদশ দিনে ইহুদীরা তাদের শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হবে বলে ঠিক হয়েছিল। ঐ দিনে ইহুদীদের শত্রুরা তাদের হারিয়ে দেবার আশা করেছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেল। যে সমস্ত শত্রু তাদের ঘৃণা করতো, ইহুদীরা তাদের চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী হয়ে উঠল। 2 রাজা অহশ্বেরশের রাজ্যের সমস্ত প্রদেশে সর্বত্র ইহুদীরা তাদের শত্রুদের আক্রমণ করার জন্য তাদের শহরে মিলিত হল। এই সম্মিলিত আক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আর কোন দলের না থাকায়, সকলে ইহুদীদের ভয় পেতে শুরু করলো। 3 প্রত্যেকটি প্রদেশের রাজকর্মচারী, প্রশাসক ও নেতারা ইহুদীদের সাহায্য করতে লাগলো। এইসব গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মর্দখয়ের ভয়ে ইহুদীদের সাহায্য করছিল, 4 কারণ মর্দখয় ইতিমধ্যে রাজপ্রাসাদের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। প্রত্যেকটি প্রদেশে সকলে মর্দখয়ের নাম ও তাঁর ক্ষমতার কথা জানতো। এবং মর্দখয়ের ক্ষমতা এমশঃ বেড়েই চলছিল।
5 ইহুদীরা তাদের সমস্ত শত্রুদের পরাজিত করলো। যেসব লোকেরা তাদের ঘৃণা করতো তারা তাদের সঙ্গে যা খুশি তাই করলো। অনেককে তলোয়ার দিয়ে হত্যাও করলো। 6 শুধু রাজধানী শূশনেই ইহুদীরা 500 ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। 7 ইহুদীরা হত্যা করেছিল পর্শন্দাথ, দল্ফোন, অস্পাথ, 8 পোরাথ, অদলিয়, অরীদাথ, পর্মস্ত, অরীষয়, অরীদয় এবং বয়িষাথকে। 9 এরা হল হামনের দশ পুত্র। 10 হামন ছিল হম্মদাথার পুত্র। সে ছিল ইহুদীদের শত্রু। ইহুদীরা তার ছেলেদের হত্যা করেছিল কিন্তু তাদের সম্পত্তিতে হাত দেয়নি।
11 রাজা যখন সেদিন রাজধানী শূশনে কত জনকে হত্যা করা হয়েছে জানতে পারলেন 12 তখন তিনি রাণী ইষ্টেরকে বললেন, “হামনের 10 পুত্র সহ 500 জনকে ইহুদীরা শূশনে হত্যা করেছে। এবার বলো রাজ্যের অন্যান্য প্রদেশে তুমি কি চাও? তুমি আমাকে যা বলবে আমি তাই করবো।”
13 ইষ্টের তখন রাজাকে বললেন, “যদি রাজা চান, তাহলে শূশনে ইহুদীরা আজ যা করেছে, আগামীকালও আবার তা করবার অনুমতি দিন। প্রতিশোধ নেবার জন্য ইহুদীদের আরও একদিন অনুমতি দিন। হামনের 10 জন পুত্রের দেহ ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে দেওয়া হোক্।”
14 তখন রাজা শূশনে এই নির্দেশের মেয়াদ একদিন বাড়িয়ে দিলেন এবং হামনের 10 পুত্রের মৃতদেহও কথা মতো ঝুলিয়ে দেওয়া হল। 15 পরের দিন অর্থাৎ অদর মাসের 14 দিনের দিন ইহুদীরা শূশনে আরো 300 জনকে হত্যা করলো, তবে তাদের সম্পত্তি লুঠ করেনি।
16 একই সময়ে, অন্যান্য প্রদেশের ইহুদীরা তাদের নিজেদের রক্ষার জন্য শক্তি সঞ্চয় করতে একজোট হল। আক্রমণের সময় ইহুদীরা তাদের 75,000 জন শত্রুকে হত্যা করল। কিন্তু তারা তাদের শত্রুদের কোন কিছু লুঠ করেনি। 17 অন্যান্য প্রদেশগুলিতে এ ঘটনা ঘটেছিল অদর মাসের ত্রয়োদশ দিনে। চতু্র্দশ দিনে ইহুদীরা সকলে খুশি মনে বিশ্রাম নিল এবং ঐ দিনটিকে একটি খুশির ছুটির দিন হিসেবে পালন করলো।
পূরীমের উৎসব
18 শূশনের ইহুদীরা অদর মাসের 13 ও 14 তারিখ একত্রিত হবার পর অদর মাসের 15 তারিখ দিনটিকে খুশির ছুটির দিন হিসেবে পালন করলো। 19 গ্রামেগঞ্জে ইহুদীরা অদর মাসের 14 তারিখে তারা পূরীম উৎসব উদ্যাপন করলো এবং দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবে পালন করলো। ওই দিন তারা একটি ভোজসভার আয়োজন করেছিল এবং একে অপরকে উপহার দিয়েছিল।
20 মর্দখয় এসব ঘটনা লিখে রাখলেন। তারপর রাজা অহশ্বেরশের রাজ্যের কাছে ও দূরের সবকটি রাজ্যের সমস্ত ইহুদীদের মর্দখয় একটি চিঠি লিখলেন। 21 প্রতি বছর অদর মাসের 14 ও 15 তারিখ পূরীম উৎসব উদ্যাপন করার অনুরোধ জানিয়ে মর্দখয় ইহুদীদের চিঠি লিখলেন। 22 ইহুদীদের ওই দিন দুটি পালন করতে বলা হল কারণ ওই দিনে ইহুদীরা তাদের শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। তাছাড়াও, ওই মাসটি ছিল উৎসব পালনের একটি বিশেষ মাস, যেহেতু তাদের দুঃখ ও বিষাদ, আনন্দ ও খুশির উৎসবে পরিণত হয়েছিল। মর্দখয় ওই দুটি দিনকে সর্বসাধারণ ছুটির দিন হিসেবে ভোজসভার মাধ্যমে পালন করতে এবং একে অপরকে ও দীন-দুঃখীকে উপহার দিয়ে পালন করতে লিখেছিলেন।
23 মর্দখয় যা লিখেছিলেন ইহুদীরা সকলেই তাতে সম্মত হল এবং যে আনন্দ উৎসব তারা শুরু করেছিল তা চালিয়ে যাবে বলে কথা দিল।
24 সমস্ত ইহুদীদের শত্রু অগাগীয় হম্মদাথার পাত্র হামন ইহুদীদের ধ্বংস করার জন্য একটি দিন বেছেছিলেন। তিনি ইহুদী নিধনের জন্য দিনটি বেছে ছিলেন ঘুঁটি চেলে। (সে সময়ে ঘুঁটি কে বলা হত “পূর” তাই ছুটির দিনটির নাম দেওয়া হয়েছিল “পূরীম।”) 25 হামন এসব চক্রান্ত করেছিলেন কিন্তু রাণী ইষ্টের গিয়ে রাজার সঙ্গে কথা বলার পর রাজা নতুন নির্দেশ দিলেন। যার ফলে শুধু যে হামনের পরিকল্পিত চক্রান্ত নষ্ট হল তাই নয়, তার পরিবারেও অমঙ্গলের ছায়া নেমে এলো। হামন ও তার সন্তানদের ফাঁসি হল।
26-27 এসময়ে অক্ষকে বলা হত “পূরীম।” তাই এই ছুটির দিনটিকে বলা হোত “পূরীম।” সে কারণেই মর্দখয়ের নির্দেশ মেনে সেই থেকে ইহুদীরা প্রতি বছর এই দুটি দিন উদ্যাপন করত। 28 তারা, তাদের প্রতি কি ঘটতে দেখেছিল তা মনে রাখার জন্যই এই উৎসব পালন করা শুরু করলো। ইহুদীরা এবং যে সমস্ত লোকরা তাদের দলে মিশে গিয়েছিল, তারা সবাই প্রতিবছর সঠিক সময়ে, সঠিক ভাবে এই ছুটির দিন পালন করত। প্রত্যেক প্রজন্মের, প্রতিটি পরিবারই এই দুটি দিনের কথা মনে রাখে। প্রত্যেকটি অঞ্চলে, প্রতিটি নগরে এই উৎসব পালিত হত। ইহুদীরা কখনোই পূরীমের উৎসব উদ্যাপন করা বন্ধ করবে না এবং তাদের উত্তরপুরুষরাও এই বিশেষ ছুটির দিনগুলিকে সব সময় মনে রাখবে।
29 অবীহয়িলের কন্যা রাণী ইষ্টের ও মর্দখয় দুজনে মিলে পূরীম সম্পর্কে একটি আনুষ্ঠানিক পত্র রচনা করেন। এই দ্বিতীয় চিঠির বৈধতা বোঝানোর জন্যই তাঁরা এই চিঠিতে রাজার সম্পূর্ণ অধিকার ব্যবহার করেন। 30 এরপর মর্দখয় চিঠিটি রাজা অহশ্বেরশের রাজত্বের 127 টি প্রদেশের সমস্ত ইহুদীদের পাঠিয়ে দেন। মর্দখয় লোকদের বলেন, ছুটির দিনটি শান্তি আনবে এবং লোকদের একে অপরকে বিশ্বাস করতে সাহায্য করবে। 31 মর্দখয় এই চিঠিগুলি লোকদের নির্দিষ্ট সময়ে পূরীম দিনগুলি চালু করতে বলার জন্য লিখেছিলেন। মর্দখয় ও রাণী ইষ্টের তাদের পরবর্তী উত্তরপুরুষদের এই পূরীম উৎসব উদ্যাপনের জন্যই নির্দেশটি দিয়েছিলেন। অভিপ্রায় ছিল, ইহুদীদের অন্যান্য উৎসবের ও ছুটির দিনের মতো এই দিন দুটিকেও লোকে মনে রাখুক এবং অন্যান্য ছুটির দিন তারা যেমন উপবাস করে, যা কিছু খারাপ ঘটনা ঘটেছে তার জন্যে চোখের জল ফেলে, এই দিন দুটিও ঠিক সে ভাবে পালন করুক। 32 ইষ্টেরের চিঠির মাধ্যমে পূরীম উৎসবের রীতি-নীতিগুলিকে সরকারী মর্যাদা দেওয়া হয় এবং এই ঘটনাগুলি বইতে নথিভুক্ত করা হয়।
মর্দখয় সম্মানিত হলেন
10 রাজা অহশ্বেরশের সময় রাজত্বের সবাইকে, এমন কি যারা দূরে বা সমুদ্রতীরে বসবাস করতো সবাইকেই কর দিতে হতো। 2 রাজা অহশ্বেরশের সমস্ত বিখ্যাত কীর্তিগুলি মাদিয়া ও পারস্যের রাজাদের ইতিহাস বইগুলিতে পাওয়া যায়। রাজা মর্দখয়ের জন্য যা যা করেছিলেন সে সমস্ত বিবরণও এইসব ইতিহাস বইতে লেখা আছে। রাজা মর্দখয়কে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত করেন। 3 মহারাজ অহশ্বেরশের পরেই গুরুত্বের দিক দিয়ে ছিল মর্দখয় এর স্থান। অন্যান্য ইহুদীরাও সকলে মর্দখয়কে খুবই সম্মান করতো। তারা মর্দখয়কে শ্রদ্ধা করতো কারণ মর্দখয় ইহুদীদের উন্নতির জন্য কঠিন পরিশ্রম করেছিলেন এবং সমস্ত ইহুদীদের জন্য শান্তি এনেছিলেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International