Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Beginning

Read the Bible from start to finish, from Genesis to Revelation.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
1 বংশাবলি 18-21

দায়ূদের বিভিন্ন দেশ জয়

18 দায়ূদ পলেষ্টীয়দের আক্রমণ করে তাদের যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং পলেষ্টীয়দের কাছ থেকে গাৎ‌ ও তার পার্শ্ববর্তী ছোটখাটো শহরগুলি দখল করে নিয়ে নেন।

এরপর তিনি মোয়াবীয়দের হারিয়ে তাদের নিজের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করান। মোয়াবীয়রা দায়ূদের জন্য নিয়মিত উপঢৌকন পাঠাতো।

সোবার রাজা হদরেষরের সেনাবাহিনীর সঙ্গেও দায়ূদ যুদ্ধ করেন। হদরেষর ফরাৎ নদী পর্যন্ত তাঁর রাজত্ব বিস্তারের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু দায়ূদ তাঁর সেনাবাহিনীকে হমাত পর্যন্ত পিছু হঠতে বাধ্য করেছিলেন। তিনি হদরেষরের কাছ থেকে 7000 রথের সারথী সহ 1000 রথ, 20,000 সৈনিক আদায় করা ছাড়াও হদরেষরের অধিকাংশ রথ নষ্ট করে দিয়েছিলেন। শুধুমাত্র 100 রথ তিনি অবশিষ্ট রেখেছিলেন।

অরামীয়রা দম্মেশক থেকে সোবার রাজা হদরেষরকে সাহায্য করতে এলে দায়ূদ তাদেরও পরাজিত করেন এবং 22,000 অরামীয় সেনাকে হত্যা করেন। এরপর দায়ূদ অরামের দম্মেশকে দুর্গ বানান। অরামীয়রা তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে তাঁর জন্য উপঢৌকন আনতে শুরু করে। প্রভু দায়ূদকে সর্বত্র বিজয়ী করেছিলেন।

হদরেষরের সেনাবাহিনীর থেকে সোনার ঢালগুলি দায়ূদ জেরুশালেমে এনেছিলেন। টিভৎ ও কূন শহর থেকে তিনি প্রচুর পরিমাণে পিতলও এনেছিলেন। এই শহরগুলি ছিল হদরেষরের অধিকারে। পরবর্তীকালে, শলোমন এই সমস্ত পিতল মন্দিরের জন্য পিতলের জলাধার, পিতলের থামসমূহ এবং পিতলের অন্যান্য জিনিষ বানাবার কাজে ব্যবহার করেছিলেন।

হমাতের রাজা তয়ূ যখন খবর পেলেন, দায়ূদ সোবার রাজা হদরেষরের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছেন, 10 তখন তিনি তাঁর পুত্র হদোরামকে দিয়ে সন্ধিপ্রস্তাব করে দায়ূদের কাছে আশীর্বাদ নিতে পাঠালেন যেহেতু দায়ূদ হদরেষরকে পরাজিত করেছিলেন। হদরেষর তয়ূর সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। দায়ূদ, হদরেষরকে পরাজিত করায় তয়ূ হদোরামের হাত দিয়ে সোনা, রূপো ও পিতলের বহু মূল্যবান সামগ্রী পাঠিয়েছিলেন। 11 ইদোম, মোয়াব, অম্মোন, অমালেক এবং পলেষ্টীয় থেকে দায়ূদ যে সোনা, রূপো এবং পিতলের জিনিষপত্র পেয়েছিলেন তা দিয়ে তিনিও একই কাজ করলেন। তিনি এগুলি প্রভুর উদ্দেশ্যে নিবেদন করলেন।

12 লবণ উপত্যকায় সরূয়ার পুত্র অবীশয় 18,000 ইদোমীয়কে হত্যা করে। 13 অবীশয় ইদোমে এক সৈন্যবাহিনীর দলও বসাল এবং ইদোমীয়রা দায়ূদের বশ্যতা স্বীকার করে। প্রভু দায়ূদকে সর্বত্রই বিজয়ী করেছিলেন।

দায়ূদের গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকবর্গ

14 সমস্ত ইস্রায়েলের শাসক দায়ূদ তাঁর সমস্ত প্রজাদের প্রতি ন্যায় ও সমবিচার নিয়ে ইস্রায়েল শাসন করেন। 15 তাঁর সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন সরূয়ার পুত্র যোয়াব। অহীলূদের পুত্র যিহোশাফট দায়ূদের সমস্ত কার্যকলাপ লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন। 16 অহীটূবের পুত্র সাদোক আর অবিয়াথরের পুত্র অবীমেলক যাজক ছিলেন। শব্শ ছিলেন লেখক। 17 যিহোয়াদার পুত্র বনায়ের দায়িত্ব ছিল করেথীয় ও পলেথীয়দের পরিচালনা করা। দায়ূদের পুত্ররাও গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং পিতার পাশে থেকে রাজকার্যে সহায়তা করতেন।

অম্মোনীয়দের হাতে দায়ূদের লোকদের লাঞ্ছনা

19 অম্মোনীয়দের রাজা নাহশের মৃত্যু হলে তাঁর জায়গায় তাঁর পুত্র হানূন রাজা হলেন। দায়ূদ তখন বললেন, “নাহশের সঙ্গে আমার বন্ধুর সম্পর্ক ছিল, এই শোকের সময় তাঁর পুত্র হানূনকে আমার সহানুভূতি দেখানো কর্তব্য।” এই বলে তিনি অম্মোনে হানূনকে সমবেদনা জানাতে বার্তাবাহক পাঠালেন।

কিন্তু অম্মোনীয় নেতারা নতুন রাজাকে কুমন্ত্রণা দিয়ে বললেন, “মোটেই ভাববেন না যে দায়ূদ সহানুভূতি জানানোর জন্য এইসব লোকদের পাঠিয়েছে। এরা আসলে দায়ূদের গুপ্তচর। দায়ূদ আপনার রাজ্য ধ্বংস করতে চায়। তাই আপনার ও আপনার রাজত্বের গোপন খবর সংগ্রহ করতে এদের পাঠিয়েছে।” হানূন তখন দায়ূদের কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করে তাদের দাড়ি কেটে পরণের পোশাক ছিঁড়ে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দিলেন।

দায়ূদের কর্মচারীরা এভাবে ঘরে ফিরতে খুবই লজ্জা পাচ্ছিলেন। কয়েকজন গিয়ে দায়ূদকে তাঁর কর্মচারীদের দুর্গতির কথা জানালে তিনি খবর পাঠালেন, “দাড়ি আবার বড় না হওয়া পর্যন্ত তোমরা যিরীহোতে থাকো। দাড়ি বড় হবার পর ঘরে ফিরে এসো।”

অম্মোনীয়রা বুঝলেন যে তাঁরা নিজ দোষে নিজেদের দায়ূদের ঘৃণিত শত্রুতে পরিণত করেছেন। হানূন ও অম্মোনীয়রা তখন 75,000 পাউণ্ড রূপো মূল্যস্বরূপ দিলেন এবং মেসোপটেমিয়া, মাখার শহরগুলি ও অরামের সোবা থেকে রথ আর তার জন্য সারথী ভাড়া করে আনলেন। অম্মোনীয়রা 32,000 রথ আনলেন, এছাড়াও তাঁরা অর্থের বিনিময়ে মাখার রাজার সেনাবাহিনীর সাহায্য চাইলেন। মাখার রাজা আর তাঁর সৈন্যসামন্ত এসে মেদবা শহরের কাছে শিবির গেড়ে বসল। আম্মোনীয়রাও শহর থেকে বেরিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে লাগল।

দায়ূদ খবর পেলেন অম্মোনীয়রা যুদ্ধের তোড়জোড় করছে। তিনি তখন অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সেনাপতি যোয়াবের নেতৃত্বে ইস্রায়েলের সমগ্র সেনাবাহিনী পাঠালেন। তখন অম্মোনীয়রা যুদ্ধের জন্য তৈরী হয়ে শহরের সিংহ দরজা পর্যন্ত এলেন। কিন্তু রাজারা যুদ্ধক্ষেত্রে যাননি এবং নিজেরা মাঠে রয়ে গিয়েছিলেন।

10 যোয়াব দেখলেন তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সামনে ও পেছনে সশস্ত্র দুদল সেনাবাহিনী প্রস্তুত হয়ে আছে। যোয়াব তখন ইস্রায়েলের কিছু সেরা সৈনিককে বেছে নিয়ে তাদের অরামের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাঠালেন। 11 আর বাদবাকি সৈনিকদের তাঁর ভাই অবীশযের নেতৃত্বে অম্মোনীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাঠালেন। 12 যোয়াব অবীশয়কে বললেন, “অরামের সেনারা যদি আমার পক্ষে বেশি শক্তিশালী হয় তো তুমি আমায় সাহায্য করতে এসো। আর যদি ওরা তোমার চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয় তো আমি তোমায় সাহায্য করব! 13 চলো এবার বীরত্ব ও সাহসের সঙ্গে আমাদের ঈশ্বরের শহরগুলোর জন্য ও আমাদের দেশের লোকদের জন্য ওদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ি। তারপর তো সবই প্রভুর ইচ্ছে!”

14 এই না বলে, যোয়াব অরামীয় সেনাবাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। অরামীয় সেনারা তখন পালাতে শুরু করল। 15 আর অম্মোনীয় সেনারা যখন তাদের পালাতে দেখল, তখন তারা নিজেরাও অবীশয় আর তাঁর সেনাবাহিনীর হাত থেকে প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালাতে শুরু করল। অম্মোনীয়রা নিজেদের শহরে আর যোয়াব জেরুশালেমে ফিরে গেলেন।

16 অরামীয় নেতারা, তাঁরা ইস্রায়েলীয়দের কাছে হেরে গিয়েছেন দেখে ফরাৎ নদীর পূর্বদিকের অরামীয়দের কাছে সাহায্য চেয়ে দূত পাঠালেন। শোফক ছিলেন অরামের রাজা হদরেষরের সেনাবাহিনীর সেনাপতি। শোফক অন্য অরামীয় বাহিনীরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

17 দায়ূদ যখন অরামের সেনাবাহিনীদের যুদ্ধের জন্য একত্র হবার খবর পেলেন, তিনিও ইস্রায়েলের লোকদের একত্র করে তাদের যর্দন নদীর ওপারে পাঠিয়ে দিলেন এবং অরামীয় সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়ে তাদের আক্রমণ করলেন। 18 তারা প্রাণ বাঁচাবার জন্য পালাতে শুরু করল। দায়ূদ ও তাঁর সেনাবাহিনী 7000 অরামীয় সারথী, 40,000 অরামীয় সেনা ও অরামীয়দের সেনাপতি শোফককে হত্যা করলেন।

19 হদরেষরের পদস্থ রাজকর্মচারীরা যখন দেখলেন তাঁরা ইস্রায়েলের হাতে পরাজিত হয়েছেন তাঁরা তখন দায়ূদের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করে তাঁর বশ্যতা স্বীকার করলেন এবং অম্মোনীয়দের আর কখনও সাহায্য না করতে স্বীকৃত হলেন।

যোয়াব অম্মোনীয়দের ধ্বংস করলেন

20 বসন্তের সময় যোয়াবের নেতৃত্বে ইস্রায়েলের সেনাবাহিনী আবার যুদ্ধ করতে বেরোল। সচরাচর এসময়ই রাজা-মহারাজারা যুদ্ধযাত্রা করলেও দায়ূদ কিন্তু জেরুশালেমেই থাকলেন। ইস্রায়েলীয় সেনাবাহিনী অম্মোনে গিয়ে অম্মোন ধ্বংস করে রব্বা শহর চারপাশ থেকে অবরোধ করে সেখানে শিবির গাড়লো। এইভাবে রব্বা অবরোধ করে শেষ পর্যন্ত যোয়াবের নেতৃত্বে ইস্রায়েলীয় বাহিনী যুদ্ধ করে রব্বাও ধ্বংস করল।

দায়ূদ এসে তাদের রাজার মাথা থেকে মুকুট খুলে নিলেন। মুকুটের ওজন ছিল প্রায় 75 পাউণ্ড এবং এটি ছিল বহুমূল্য পাথর খচিত ও সোনার তৈরী। এবং সেই মুকুটটি দায়ূদের মাথায় পরানো হল, তবে তিনিও রব্বা থেকে আরো অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে এলেন। দায়ূদ রব্বার লোকদের ও অম্মোন শহরের বাসিন্দাদের নিয়ে এলেন এবং তাদের করাত, গাঁইতি আর কুঠার দিয়ে কাজ করতে বাধ্য করে, আবার জেরুশালেমে ফিরে গেলেন।

পলেষ্টীয় দানব সন্তান মারা গেল

পরবর্তী কালে, পলেষ্টীয়দের সঙ্গে গেষর শহরে ইস্রায়েলীয়দের যুদ্ধ হয়। সে সময়ে, হূশার সিব্বখয় সিপ্পয় নামে এক দানব সন্তানকে হত্যা করল। তাই পলেষ্টীয়রা ইস্রায়েলের কাছে নিজেদের সমর্পণ করল।

আর একবার পলেষ্টীয়দের সঙ্গে ইস্রায়েলীয়দের যখন যুদ্ধ হচ্ছিল, যায়ীরের পুত্র ইল্হানন লহমিকে হত্যা করেন, যদিও লহমির হাতে একটি বিশাল ও তীক্ষ্ণ বর্শা ছিল। লহমি ছিল গলিয়াতের ভাই। গলিয়াত ছিল গাতের লোক।

এরপর গাতে ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে পলেষ্টীয়দের আবার যুদ্ধ হয়। সে সময় গাতে এক ব্যক্তি বাস করত; তার প্রতি হাতে-পায়ে ছ’টি করে মোট 24টা আঙুল ছিল। দানবের পুত্র ছিল বলে সে এক বিশাল আকার পুরুষ ছিল। ইস্রায়েলকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করার অপরাধে দায়ূদের ভাই শিমিয়র পুত্র যোনাথন তাকে হত্যা করে।

এই পলেষ্টীয়রা ছিল গাতের দানবদের সন্তান। দায়ূদ ও তাঁর লোকরা এই সমস্ত দানবদের হত্যা করেছিলেন।

ইস্রায়েলকে গণনা করে দায়ূদের পাপ

21 শয়তান ইস্রায়েলের লোকদের বিপক্ষে ছিল। তার প্ররোচনায় পা দিয়ে দায়ূদ ইস্রায়েলে আদমশুমারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি যোয়াব ও ইস্রায়েলের নেতাদের ডেকে বললেন, “যাও বের্-শেবা থেকে দান পর্যন্ত সমগ্র ইস্রায়েলের জনসংখ্যা গণনা করে আমাকে জানাও। আমি যাতে বুঝতে পারি এদেশে মোট কত জন বাস করে।”

কিন্তু যোয়াব উত্তর দিলেন, “প্রভু তাঁর লোকদের শতগুণ বাড়িয়ে চলুন! মহারাজ, ইস্রায়েলের সমস্ত বাসিন্দাই তো আপনার অনুগত ভৃত্য। কেন আপনি এই কাজ করতে চাইছেন? আপনি সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের পাপের ভাগী করবেন।”

কিন্তু রাজা দায়ূদ তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় যোয়াব তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য হলেন। তিনি সমগ্র ইস্রায়েলে ঘুরে ঘুরে জনসংখ্যা গুনে আবার জেরুশালেমে ফিরে খবর দিলেন যে ইস্রায়েলে মোট 1,100,000 লোক আছে যারা তরবারির ব্যবহার জানে। আর যিহূদায় এই ধরণের লোকের সংখ্যা 470,000। রাজা দায়ূদের নির্দেশ মনঃপুত না হওয়ায় যোয়াব লেবি ও বিন্যামীন পরিবারের বংশধরদের জনসংখ্যা গণনা করেন নি। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে দায়ূদ একটি খারাপ কাজ করেছিলেন। তাই প্রভু ইস্রায়েলকে শাস্তি দিলেন।

ঈশ্বরের ইস্রায়েলেকে শাস্তি

দায়ূদ তারপর ঈশ্বরকে বললেন, “আমি মূর্খের মতো জনসংখ্যা গণনা করে গুরুতর পাপ করেছি। এখন আমি তোমায় অনুনয় করছি, তুমি আমায়, তোমার দাসকে এই পাপ থেকে মুক্ত কর।”

9-10 প্রভু তখন দায়ূদের ভাববাদী গাদকে বললেন, “যাও দায়ূদকে গিয়ে বল: ‘প্রভু এই কথা বলেছেন: তোমাকে শাস্তি দেবার জন্য আমি তিনটে উপায়ের কথা ভেবেছি। তুমি যে ভাবে বলবে সে ভাবেই আমি তোমায় শাস্তি দেব।’”

11-12 তখন, গাদ নির্দেশ মত দায়ূদকে গিয়ে বললেন, “প্রভু বলেছেন, ‘তোমায় শাস্তি দেবার জন্য তিনটি পথের কথা আমি ভেবেছি। প্রথমটি হল—তিন বছর দেশে দুর্ভিক্ষ হবে। দ্বিতীয়টি হল—যারা তরবারি নিয়ে তাড়া করবে সেই সব শত্রুদের কাছ থেকে তোমায় তিনমাস ধরে পালিয়ে বেড়াতে হবে। আর তৃতীয়টি হল—তিন দিন তোমাকে প্রভুর হাতে শাস্তি ভোগ করতে হবে। মহামারীতে দেশ ছেয়ে যাবে। প্রভুর দূতরা ইস্রায়েলের ঘরে ঘরে লোকদের প্রাণ নেবে।’ এবার তুমি বল আমি প্রভুকে কি জানাব।”

13 দায়ূদ গাদকে বললেন, “হায়! কি বিপদে পড়েছি! আমি কিভাবে শাস্তি পাবো তা ঠিক করার ভার আমি অন্যদের হাতে দিতে চাই না। প্রভু করুণাময়, তিনিই আমায় যথাযোগ্য শাস্তি দেবেন।”

14 অতঃপর প্রভু ইস্রায়েলে মহামারী পাঠালেন, তাতে 70,000 লোকের মৃত্যু হল। 15 প্রভু জেরুশালেমকে ধ্বংস করতে একজন দেবদূতও পাঠালেন। কিন্তু সে যখন জেরুশালেম ধ্বংস করতে শুরু করল তখন প্রভুর করুণা হল। যিবূষীয় অর্ণানের শস্য মাড়াইয়ের উঠানের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা সেই দূতকে প্রভু বললেন, “আর নয়, থাক! যথেষ্ট হয়েছে।”

16 দায়ূদ ও নেতারা ওপরে তাকিয়ে, জেরুশালেমের ওপর প্রভুর তরবারি হাতে প্রভুর সেই দূতকে দেখতে পেলেন। তখন তারা শোকের পোশাক পরে আভূমি নত হলেন। 17 দায়ূদ ঈশ্বরকে বললেন, “আমি জনসংখ্যা গণনা করতে বলে পাপ করেছি। আমিই পাপাত্মা। ইস্রায়েলের লোকরা তো নিরপরাধ। প্রভু আমার ঈশ্বর, মহামারীতে ওদের প্রাণ না নিয়ে তুমি আমায় আর আমার পরিবারকে শাস্তি দাও।”

18 তখন প্রভুর দূত গাদকে বললেন, “দায়ূদকে যিবূষীয় অর্ণানের খামারের কাছে প্রভুর উপাসনার জন্য একটা বেদী নির্মাণ করতে বলো।” 19 গাদ দায়ূদকে একথা জানালে তিনি অর্ণানের খামারে গেলেন।

20 অর্ণান তখন গম ঝাড়াই করছিল। সে পেছন ফিরে দূতকে দেখতে পেল। অর্ণানের চার পুত্র ভয়ে লুকিয়ে পড়লো। 21 দায়ূদ স্বয়ং হেঁটে হেঁটে টিলার ওপরে অর্ণানের কাছে গেলেন। তাঁকে দেখতে পেয়ে খামার ছেড়ে এসে অর্ণান তাঁর সামনে আভূমি নত হলেন।

22 দায়ূদ বললেন, “তোমার খামার বাড়িটা আমায় বেচে দাও। যা দাম লাগে আমি দেব। তারপর আমি এখানে প্রভুর উপাসনার জন্য একটি বেদী বানাব। তাহলে এই মহামারী বন্ধ হবে।”

23 অর্ণান দায়ূদকে বলল, “আপনিই আমার রাজা ও প্রভু। আপনার যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আপনি অবশ্যই আমার শস্য মাড়াই এর ক্ষেত্রটা নিতে পারেন। এছাড়াও আমি হোমবলির জন্য আপনাকে ষাঁড় আর গম দিচ্ছি এবং ময়দা শস্য নৈবেদ্যর জন্য আপনার যা কিছু দরকার সবই আপনাকে দেব।”

24 কিন্তু রাজা দায়ূদ উত্তর দিলেন, “না, তা সম্ভব নয়। আমি তোমার থেকে বিনামূল্যে কিছু নিয়ে তা প্রভুকে দিতে পারব না। আমি ঈশ্বরকে এমন কিছুই দেব না যার জন্য আমায় দাম দিতে হবে না। তোমাকে আমি এ সব কিছুর পুরো দাম দেব।”

25 তখুনি তিনি অর্ণানকে জায়গাটির জন্য প্রায় 15 পাউণ্ড সোনা দিলেন। 26 তারপর দায়ূদ সেই শস্য মাড়াইয়ের জায়গায় প্রভুর উপাসনার জন্য বেদী বানালেন। সেই বেদীতে হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য দিয়ে দায়ূদ প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন। প্রভু আকাশ থেকে বেদীতে অগ্নিশিখা পাঠিয়ে সেই ডাকে সাড়া দিলেন। 27 তারপর প্রভু তাঁর দেবদূতকে উন্মুক্ত তরবারী কোষবদ্ধ করতে আদেশ দিলেন।

28 দায়ূদ দেখলেন, অর্ণানের খামার বাড়িতে প্রভু তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তিনি সেখানেই প্রভুর উদ্দেশ্যে বলিদান উৎসর্গ করলেন। 29 (পবিত্র তাঁবু এবং হোমবলি অর্পণের বেদীটি ছিল গিবিয়োন শহরে একটি উঁচু জায়গায়। ইস্রায়েলের বাসিন্দারা যখন মরুভূমিতে ঘুরছিলেন তখন মোশি এই পবিত্র তাঁবু বানিয়ে ছিলেন। 30 কিন্তু দায়ূদ ঈশ্বরের দূতের তরবারীর ভয়ে পবিত্র তাঁবুতে ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলতে যাননি।)

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International