Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Beginning

Read the Bible from start to finish, from Genesis to Revelation.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
ইষ্টের 1-5

বাণী বষ্টী রাজাকে অমান্য করলেন

মহারাজ অহশ্বেরশের রাজত্বকালে এই ঘটনা ঘটেছিল। অহশ্বেরশ ভারতবর্ষ থেকে কূশ দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত 127 টি প্রদেশের শাসনকর্তা ছিলেন। তাঁর রাজধানী শূশনের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি সাম্রাজ্য শাসন করতেন।

রাজা অহশ্বেরশের রাজত্বের তৃতীয় বছরে তিনি তাঁর আধিকারিক ও নেতাদের জন্য একটি ভোজসভার আয়োজন করেছিলেন। পারস্য ও মাদিয়ার সেনাবাহিনীর প্রধান সহ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও প্রশাসকরা সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন। এই ভোজসভা একটানা 180 দিন ধরে চলেছিল। সেই সময়, রাজা অহশ্বেরশ সবাইকে তাঁর সাম্রাজ্যের বিপুল সম্পদ, তাঁর রাজপ্রাসাদের রাজকীয় সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্য প্রদর্শন করেছিলেন। এই 180 দিন শেষ হবার পর তিনি তাঁর প্রাসাদের ভেতরের বাগানে সাতদিন ব্যাপী আরো একটি ভোজসভার আয়োজন করেছিলেন। রাজধানী শূশনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে সাধারণ লোক সকলকেই সেই ভোজসভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রাসাদের ভেতরের বাগানে সাদা ও নীল রঙের দামী লিনেন কাপড়ের চাঁদোয়া টাঙ্গানো ছিল। শ্বেতপাথরের স্তম্ভে রূপোর আংটায় লিনেনের সাদা ও বেগুনী কাপড়ের দড়ি দিয়ে সেগুলি ঝোলানো হয়। বহুমূল্য পাথর, যেমন মুক্তো, শ্বেতপাথর এবং অন্যান্য পাথর খচিত মেঝেতে বসানো ছিল সোনা ও রূপোর তৈরী কেদারা। সোনার পানপাত্রে দ্রাক্ষারস পরিবেশন করা হত। এই পানপাত্রগুলি ছিল বিভিন্ন আকারের। রাজা অহশ্বেরশ খুবই বদান্য ছিলেন বলে সেখানে সুরার প্রাচুর্য ছিল। অহশ্বেরশ খুবই উদার প্রকৃতির ছিলেন। তিনি দ্রাক্ষারসবাহক ভৃত্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, অতিথিদের যেন তাদের পছন্দ মতো দ্রাক্ষারস পরিবেশন করা হয়। আর তাঁর পরিবেশকরাও রাজাজ্ঞা অনুযায়ী অঢেল পরিমাণ দ্রাক্ষারস পরিবেশন করেছিল।

একই সময়, রাণী বষ্টীও রাজপ্রাসাদে মহিলাদের জন্য একটি আলাদা ভোজসভার ব্যবস্থা করেছিলেন।

10-11 ভোজসভার সপ্তম দিনে দ্রাক্ষারস পান করবার পর প্রফুল্ল মনে রাজা অহশ্বেরশ, মহূমন, বিস্থা, হর্বোণা, বিগ‌্থা, অবগথ, সেথর, কর্ক্কস প্রমুখ সাত জন পরিবেশনকারী নপুংসককে আদেশ করলেন রাণী বষ্টীকে সম্রাজ্ঞীর মুকুট পরিয়ে সেখানে নিয়ে আসতে। তিনি চাইছিলেন সভায় উপস্থিত গণ্যমান্য অতিথিদের রাণী বষ্টী তাঁর সৌন্দর্য প্রদর্শন করুন। কারণ রানী বষ্টী ছিলেন খুবই সুন্দরী।

12 কিন্তু রাজার ভৃত্যরা গিয়ে যখন রাণীকে তাঁর আদেশের কথা জানালো, তিনি রাজার সভায় আসতে রাজী হলেন না। এর ফলে রাজা খুবই ক্রুদ্ধ হলেন। 13-14 প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী, রাজা বিধি ও শাস্তি সম্পর্কে বিচক্ষণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করলেন। কর্শনা, শেথর, অদ্মাখা, তর্শীশ, মেরস, মর্সনা, মমূখন প্রমুখ এই সাত জন পরামর্শদাতা ছিলেন রাজার খুবই ঘনিষ্ঠ এবং পারস্য ও মাদিয়ার সর্বাপেক্ষা উচ্চপদস্থ আধিকারিকবর্গ। 15 রাজা তাঁদের জিজ্ঞেস করলেন, “বিধি অনুযায়ী রাণী বষ্টীকে কি শাস্তি দেওয়া যেতে পারে? কারণ রাজা অহশ্বেরশের যে আদেশ নপুংসক ভৃত্যরা তাঁর কাছে নিয়ে গিয়েছিল তা তিনি পালন করেন নি।”

16 তখন আধিকারিক মমূখন অন্যান্য আধিকারিকদের উপস্থিতিতে রাজাকে বললেন: “রাণী বষ্টী রাজার প্রতি অন্যায় করেছেন এবং রাজা অহশ্বেরশের সাম্রাজ্যের সমস্ত রাজ্যের সকল নেতা ও লোকদের প্রতি অন্যায় করেছেন। 17 কারণ সাম্রাজ্যের অন্যান্য নারীরা এই ঘটনার কথা জানার পর, তারাও তাদের স্বামীদের নির্দেশ অমান্য করবে। আর তখন প্রশ্ন করলে তারা সকলেই রাণী বষ্টীর দৃষ্টান্ত দিয়ে বলবে, ‘রাজা অহশ্বেরশের রানী বষ্টীকে তাঁর সামনে আসতে আদেশ করেছিলেন কিন্তু তিনি তা করতে অস্বীকার করেছিলেন।’

18 “পারস্য ও মাদিয়ার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের স্ত্রীরা রাণীর এই ব্যবহার স্বচক্ষে দেখলেন। এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাঁরাও এবার রাজার আধিকারিকদের সঙ্গে এই একই ব্যবহার করবেন এবং ফলতঃ গৃহবিবাদ ও অশান্তির সূচনা হবে।

19 “সুতরাং মহারাজ যদি ইচ্ছা করেন তবে আমার পরামর্শ: রাজার নামে এবং পারস্য ও মাদিয়ার রাজার শাসনমতে একথা লেখা হোক্, ‘বষ্টী যেন আর কখনও রাজাকে নিজের মুখ না দেখান।’ বষ্টী যেন আর কখনও এই প্রাসাদে পা না রাখেন এবং রাজা তাঁর রাণীর পদ কোন যোগ্যতর নারীকে দেন। 20 রাজার এই আদেশ যখন তাঁর সুবিস্তৃত সাম্রাজ্যে ঘোষণা করা হবে একমাত্র তখনই সবচেয়ে গণ্যমান্য থেকে একেবারে তুচ্ছ সমস্ত মহিলারা তাদের স্বামীকে শ্রদ্ধা করবে।”

21 রাজা অহশ্বেরশ এবং তাঁর আধিকারিকদের এই উপদেশ পছন্দ হল। তাই রাজা মমূখনের উপদেশ অনুযায়ীই কাজ করলেন। 22 অহশ্বেরশ তাঁর রাজ্যের প্রতিটি অঞ্চলে প্রতিটি ভাষায় চিঠি পাঠালেন যে প্রত্যেকটি পুরুষ তার পরিবারের শাসক হবে।

ইষ্টের রাণী হলেন

পরে রাজা অহশ্বেরশের রাগ কমলে বষ্টী কি কি করেছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে তিনি কি নির্দেশ দিয়েছেন, সে কথা তাঁর মনে পড়লো। রাজার ব্যক্তিগত ভৃত্যরা তখন তাঁর জন্য সুন্দরী কুমারী কন্যা অনুসন্ধানের প্রস্তাব করলো। তারা বলল, “প্রথমে মহারাজ স্বয়ং তাঁর শাসনাধীন প্রত্যেকটি প্রদেশে একজন নেতা বেছে নেবেন। এরপর সেই নেতারা তাদের অঞ্চলের সুন্দরী কুমারীদের রাজধানী শূশনে নিয়ে আসবে। তারপর এদের সকলকে রাখা হোক্ রাজঅন্তঃপুরচারিণীদের সঙ্গে মহিলাদের দায়িত্বে যে আছে সেই রাজার নপুংসক হেগয়ের তত্ত্বাবধানে। তারপর তাদের রূপ পরিচর্যা করা হবে। তারপর রাজা তাদের মধ্যে একজনকে রাণী বষ্টীর (শূন্য) পদে অভিষিক্ত করবেন।” রাজার এই প্রস্তাব মনে ধরায় তিনি এতে সম্মত হলেন।

এসময়ে রাজধানী শূশনে মর্দখয় নামে বিন্যামীনের পরিবারের এক ইহুদী ব্যক্তি বাস করতেন। মর্দখয় ছিলেন যায়ীরের পুত্র ও কীশের পৌত্র। বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎ‌সর যিহূদা-রাজ যিহোয়াকিনকে অন্যান্য ইহুদীদের সঙ্গে এবং মর্দখয়ের সঙ্গে জেরুশালেম থেকে বন্দী করে নিয়ে যান। মর্দখয়ের হদসা নামে একটি সম্পর্কিত বোন ছিল। পিতা-মাতা না থাকায় মর্দখয় তাকে নিজের কন্যা স্নেহে প্রতিপালন করেন। এই মিষ্টি, রূপসী, স্বাস্থ্যবতী রমণীর আরেকটি নাম ছিল ইষ্টের।

রাজ্যে রাজার আদেশ জারি হবার পর রাজধানী শূশনে হেগযের তত্ত্বাবধানে যেসব যুবতীদের আনা হয়েছিল তাদের মধ্যে ইষ্টেরও ছিলেন। হেগয় ইষ্টেরকে পছন্দ করতো। ক্রমে সে হেগয়ের বেশ প্রিয়পাত্রী হয়ে ওঠে এবং হেগয় যত্নসহকারে ইষ্টেরের খাবারদাবার ও রূপ পরিচর্যার ব্যবস্থা করে। রাজপ্রাসাদ থেকে সাত জন পরিচারিকাকে বেছে নিয়ে হেগয় তাদের ইষ্টেরের পরিচর্যায় নিয়োগ করে। তারপর হেগয়, ইষ্টের ও তার সাত পরিচারিকাকে সেখানে স্থানান্তরিত করে যেখানে রাজার মহিলারা বাস করত। 10 ইষ্টের যে ইহুদী সেকথা ও কাউকে বলেনি। মর্দখয় তাকে তার পারিবারিক বৃত্তান্ত প্রকাশ করতে বারণ করেছিল, সুতরাং সে কারো কাছে কিছু খুলে বলে নি। 11 প্রত্যেক দিন মর্দখয় এসে রাজঅন্তঃপুরচারিণীদের বাসস্থানের আশেপাশে ঘোরাফেরা করতেন। ইষ্টের কেমন আছে আর তার জীবণে কী ঘটছে জানার জন্যই মর্দখয় রোজ আসতেন।

12 রাজা অহশ্বেরশের সামনে উপস্থিত হবার আগে প্রতিটি মেয়েকে এক বছর ধরে রূপচর্চা করতে হোত। রূপচর্চার জন্য তাদের ছ’মাস সুগন্ধী তেল মাখতে হত এবং তারপর আরো ছ’মাস অন্য উৎকৃষ্টতম সুগন্ধি মাখতে হত। 13 শুধু মাত্র এভাবেই প্রতিটি যুবতী রাজার সামনে যেতে পারতো! এসময়ে একটি মেয়ের যা কিছু প্রয়োজন রাজঅন্তঃপুর থেকে তা দেওয়া হতো। 14 সন্ধ্যায় রাজপ্রাসাদে ঢোকার পর, মেয়েটিকে পর দিন ভোরে প্রাসাদের আরেকটি অংশে, যেখানে অন্য মহিলারা থাকত সেখানে ফিরে আসতে হতো। এরপর তাকে শাশ্গস নামে আরেকজন নপুংসকের তত্ত্বাবধানে রাখা হতো। শাশ্গস ছিল রাজার উপপত্নীদের তত্ত্বাবধায়ক। যতক্ষণ পর্যন্ত না রাজা সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং ঐ মেয়েদের ডেকে পাঠাতেন ততক্ষণ তারা কখনও রাজার কাছে ফিরে যেতে পারতো না।

15 ইষ্টেরের যখন রাজার কাছে যাবার পালা এলো, ইষ্টের কোন কিছু চাইলেন না। শুধু তিনি নপুংসক হেগয়ের পরামর্শ চাইলেন যে, তাঁর সঙ্গে করে কি নিয়ে যাওয়া উচিৎ‌। (ইষ্টের ছিলেন মর্দখয়ের পোষ্যপুত্রী, তিনি ছিলেন তার মামা অবীহয়িলের কন্য।) ইষ্টেরকে যেই দেখতো সেই পছন্দ করতো। 16 অতঃপর রাজা অহশ্বেরশের রাজত্বের সপ্তম বছরের দশম মাসে অর্থাৎ‌ টেবেৎ‌ মাসে ইষ্টেরকে রাজার সামনে নিয়ে আসা হল।

17 রাজা অন্যান্য মেয়েদের চেয়ে সব চেয়ে বেশি ইষ্টেরকেই ভালবাসলেন এবং তিনি দ্রুত তাঁর প্রিয়তমা হয়ে উঠলেন। এরপর রাজা অহশ্বেরশ ইষ্টেরের মাথায় মুকুট পরিয়ে তাঁকে রাণী বষ্টীর আসনে রাণী হিসেবে অভিষিক্ত করলেন। 18 ইষ্টেরের সম্মানে রাজা তাঁর রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ গণ্যমান্য ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি বড় ভোজসভার আয়োজন করলেন। এছাড়াও প্রত্যেকটি প্রদেশে ছুটি ঘোষণা করা হল ও দাতা রাজা অহশ্বেরশ তাঁর লোকদের অনেক উপহার পাঠালেন।

চক্রান্তের কথা জানতে পারলেন মর্দখয়

19 সমস্ত মেয়েরা যখন দ্বিতীয় বারের জন্য এক সঙ্গে জড়ো হল, মর্দখয় তখন রাজদ্বারের কাছেই বসেছিলেন। 20 ইষ্টের যে ইহুদী তা ইষ্টের তখনও গোপন রেখেছিলেন। নিজের পরিবারের ইতিহাসও তিনি কাউকে জানান নি, কারণ মর্দখয় তাঁকে সত্য প্রকাশ করতে বারণ করেছিলেন। বরাবরের মতো ইষ্টের মর্দখয়কে মান্য করা অব্যাহত রাখল যেমনটি সে করত যখন মর্দখয় তার যত্ন নিত।

21 মর্দখয় যখন রাজপ্রাসাদের দ্বারের কাছে বসেছিলেন তিনি শুনতে পেলেন বিগ্থন ও তেরশ নামে রাজার দুই আধিকারিক যারা দরজায় পাহারায় ছিল, রাজার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে হত্যা করার চক্রান্ত করছে। 22 মর্দখয় এই চক্রান্তের কথা শুনতে পেয়ে তা ইষ্টেরকে জানালেন এবং রাণী ইষ্টের একথা জানালেন স্বয়ং রাজাকে। রাণী ইষ্টের রাজাকে একথাও বললেন যে মর্দখয় এই চক্রান্তের কথা জানতে পেরেছে। 23 অনুসন্ধান করে দেখা গেল, মর্দখয় যে খবর জানিয়েছেন তা সঠিক। তখন ঐ দুই দ্বাররক্ষীকে একটি স্তম্ভে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেওয়া হল। এই সমস্ত ঘটনা রাজার সামনে রচিত রাজাগনের ইতিহাস গ্রন্থে নথিবদ্ধ করা আছে।

হামনের ইহুদীদের বিনাশ করার পরিকল্পনা

এসব ঘটনা ঘটার পরে রাজা অগাগীয় হম্মদাথার পুত্র হামন নামে এক ব্যক্তিকে সম্মান জানান। রাজা হামনকে উচ্চপদে উন্নীত করেন এবং তাঁর অন্য সমস্ত আধিকারিকদের থেকে উচ্চতর পদে তাকে নিযুক্ত করেন। রাজা নির্দেশ দিয়েছিলেন যে মুখ্যদ্বার দিয়ে ঢোকবার সময় প্রত্যেক ব্যক্তিকে মাথা ঝুঁকিয়ে হামনকে সম্মান জানাতে হবে। তাই রাজার সব নেতারা রাজদ্বারে হামনের কাছে প্রণত হয়ে তাঁকে সম্মান জানাতেন, কিন্তু শুধুমাত্র মর্দখয় তা করতে রাজী হলেন না। তখন অন্যান্য প্রধানরা তাঁকে প্রশ্ন করলেন, “আপনি কেন রাজার নির্দেশ মেনে হামনকে সম্মান দেখান না?”

সমস্ত প্রধানরা এবিষয়ে দিনের পর দিন মর্দখয়কে বলা সত্ত্বেও মর্দখয় হামনের সামনে কোন মতেই মাথা নীচু করতে রাজী হলেন না। তখন হামন কি করে তা দেখার জন্য এই সমস্ত নেতারা হামনকে একথা জানালেন। মর্দখয় এই আধিকারিকদের বলেছিলেন যে তিনি ইহুদী। হামন যখন দেখলেন সত্যি সত্যিই মর্দখয় তাকে সম্মান দেখাতে অনিচ্ছুক তখন তিনি খুবই ক্রুদ্ধ হলেন। মর্দখয় যে ইহুদী হামন সে কথাও জেনেছিলেন। হামনের ইচ্ছা ছিল শুধু মর্দখয় নয়, রাজা অহশ্বেরশের রাজ্যে বসবাসকারী মর্দখয়ের জাতির সবাইকে হত্যা করা হোক্।

অহশ্বেরশের রাজত্বের দ্বাদশ বছরের প্রথম মাসে, নীষণ মাসে হামন অক্ষ নিক্ষেপ করে একটি মাসের একটি বিশেষ দিন বেছে নিলেন। সেই দিনটি ছিল দ্বাদশতম মাস, অদর মাস। (সে সময় অক্ষকে “পূরও” বলা হোত।) তারপর রাজা অহশ্বেরশের কাছে এসে হামন বললেন, “হে রাজন, আপনার রাজ্যের সর্বত্র এক বিশেষ জাতির মানুষরা বাস করছে, যাদের সংস্কৃতি অন্যদের থেকে আলাদা। তারা অন্য কোন জাতির লোকদের সঙ্গে মেলামেশা করে না, এমন কি আপনার বিধিও মেনে চলে না। এই সমস্ত লোকদের আপনার রাজ্যে বসবাস করতে দেওয়া উচিৎ‌ বলে আমি মনে করি না।

“রাজার প্রতি আমার বিনীত নিবেদেন: আমার পরামর্শ হল, এইসব লোকদের শেষ করে দেওয়ার জন্য আপনি নির্দেশ দিন। আর আমি রাজ কোষাগারে 10,000 রৌপ্যমুদ্রা জমা দেবো।”[a]

10-11 রাজা তখন তাঁর আঙুল থেকে একটি আংটি খুলে হামনকে দিলেন। হামন ছিলেন ইহুদীদের শত্রু। তিনি ছিলেন অগাগিয় হম্মদাথার পুত্র। রাজা তাঁকে বললেন, “রৌপ্য মুদ্রাগুলি তুমি তোমার জন্য রাখ এবং ইহুদীদের তুমি যা খুশি করতে পারো।”

12 তখন প্রথম মাসের 13 দিনে রাজার সমস্ত সচিবদের ডেকে পাঠানো হল এবং তারা প্রত্যেক আঞ্চলিক ভাষায় হামনের নির্দেশ লিখে নিলো। তারা সেই নির্দেশ লিখে নিয়ে সমস্ত অঞ্চলের প্রাদেশিক কর্তাকে পাঠিয়ে দিল। এই নির্দেশ স্বয়ং রাজা অহশ্বেরশের হুকুমে লেখা হল এবং জারি করা হল এবং তাঁর অঙ্গুরীয দিয়ে শীলমোহর করা হল।

13 এই সমস্ত চিঠি নিয়ে বার্তাবাহকরা রাজ্যের সমস্ত অঞ্চলে গেলেন। চিঠিটি একটি নির্দিষ্ট দিনে বয়স নির্বিশেষে সমস্ত ইহুদীকে শেষ করবার আদেশ বহন করছিল। দ্বাদশতম মাস, অদর মাসের ত্রয়োদশতম দিনকে এই হত্যালীলার জন্য বাছা হয়েছিল। এছাড়াও, ইহুদীদের সমস্ত বিষয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করবার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল।

14 এই নির্দেশ সম্বলিত চিঠির প্রতিলিপি সমস্ত প্রদেশগুলিতে এবং সব লোকদের কাছে পাঠানো হল। বলা হল এই আদেশকে বিধি হিসেবে মানতে হবে এবং প্রকাশ্য স্থানে রাখতে হবে যাতে ওই সমস্ত লোকরা সেই দিনের জন্য প্রস্তত হতে পারে। 15 রাজার নির্দেশে বার্তাবাহকরা যেখানে এই আদেশ জারি হয়েছিল, সেই রাজধানী শূশন থেকে তৎ‌ক্ষণাৎ‌‌ রওনা হল। তারপর রাজা ও হামন একসঙ্গে দ্রাক্ষারস পান করতে বসলেন। শূশনের সকলে এ নির্দেশে বিচলিত হল। ভুল বোঝাবুঝি হল। লোকে উদ্বিগ্ন হল।

ইষ্টেরের সাহায্য চেয়ে অনুনয় করলেন মর্দখয়

মর্দখয় এসব কথা জানতে পারলেন। তিনি ইহুদীদের বিরুদ্ধে রাজার দেওয়া নির্দেশের কথা জানতে পেরে, নিজের প্রকৃত পোশাক ছিঁড়ে ফেলে শোকের পোশাক পরলেন। তারপর সারা মাথায় ভস্ম মেখে উচ্চস্বরে কাঁদতে কাঁদতে শহরে বেড়ালেন। তিনি এভাবে রাজদ্বার পর্যন্ত গেলেন কারণ শোকের পোশাক পরে কাউকে এভাবে দরজার ভেতরে যেতে দেওয়া হতো না। প্রত্যেকটি প্রদেশে যেখানে যেখানে রাজার নির্দেশ জারি করা হয়েছিল সেখানে ইহুদী সম্প্রদায়ের মধ্যে শোকের ছায়া পড়ে গিয়েছিল। তারা সকলে অভুক্ত থেকে উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করছিল। অনেক ইহুদী মাথায় ভস্ম মেখে মাটিতে গড়াগড়ি দিচ্ছিল।

ইষ্টেরের পরিচারিকা ও নপুংসক পরিচারকরা এসে তাঁকে মর্দখয়ের কথা জানালো। সেকথা শুনে ইষ্টের মর্মাহত ও বিষণ্ন হলেন। তিনি শোকের পোশাক ছেড়ে ফেলতে অনুরোধ জানিয়ে মর্দখয়ের জন্য জামাকাপড় পাঠালেন। কিন্তু মর্দখয় তা পরতে রাজী হলেন না। তখন ইষ্টের হথক নামে রাজার এক নপুংসক পরিচারককে ডেকে পাঠালেন। হথককে রাজা ইষ্টেরের পরিচর্যার কাজে নিয়োগ করেছিলেন। তাকে ইষ্টের মর্দখয়ের দুঃখের কারণ অনুসন্ধান করতে বললেন। তখন হথক রাজপ্রাসাদের ফটকের সামনে শহরের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে যেখানে মর্দখয় অপেক্ষা করছিল সেখানে গেল। মর্দখয় হথককে যা যা ঘটেছে সে সব কথাই বললেন। এমনকি ইহুদীদের নিধনের জন্য হামন রাজকোষাগারে যে অর্থ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার সঠিক পরিমাণও মর্দখয় তাকে জানালেন। মর্দখয় তাকে ইহুদী হত্যার জন্য রাজার দেওয়া নির্দেশ-নামার একটি প্রতিলিপিও দিলেন। এই নির্দেশ-নামাটি শূশনের সর্বত্র পাঠানো হয়েছিল। তিনি হথককে নির্দেশ-নামাটি ইষ্টেরকে দেখিয়ে যা ঘটেছিল তা ব্যাখ্যা করতে বললেন। উপরন্তু তিনি তাকে ইষ্টেরকে রাজার কাছে গিয়ে তাঁর স্বজাতীয়দের জন্য ও মর্দখয়ের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা করার জন্য বলতে বললেন।

হথক ফিরে গিয়ে ইষ্টেরকে মর্দখয়ের সব কথাই জানাল।

10 ইষ্টের তখন হথককে বললেন, মর্দখয়কে জানাতে: 11 “রাজ্যের সমস্ত বাসিন্দা ও রাজার সমস্ত নেতারাই জানেন, যে ডাক না পড়লে পুরুষ বা নারী যেই হোক্ না কেন রাজার কাছে যেতে পারে না। যদি কেউ রাজার কাছে যায় তবে তার মৃত্যুদণ্ড হয়। এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিএম হল: রাজা যদি কারো হাতে তাঁর সোনার রাজদণ্ডটি দেন, তাহলে এক্ষেত্রে সে ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড থেকে নিষ্কৃতি পায়। কিন্তু আমাকে রাজা গত 30 দিনের মধ্যে একবারও ডেকে পাঠান নি।”

12-13 মর্দখয়কে ইষ্টেরের বার্তা জানানো হলে তিনি ইষ্টেরকে বলে পাঠালেন: “ইষ্টের, এমন ভেবো না যে যদিও তুমি রাজপ্রাসাদে বাস করছো, ইহুদী হয়েও নিজে বেঁচে যাবে। 14 তুমি যদি এখন চুপ করে থাকো, ইহুদীদের জন্য সাহায্য ও স্বাধীনতা কোথাও না কোথাও থেকে আসবে, কিন্তু তুমি ও তোমার পিতার পরিবারের সকলে মারা যাবে। কে জানে, হয়তো ঠিক এরকম কোন একটা সময়ের জন্যই তোমাকে রাণী করা হয়েছে!”

15-16 ইষ্টের এর উত্তরে মর্দখয়কে জানালেন: “শূশনের সমস্ত ইহুদীদের সঙ্গে আমার জন্য উপবাস করো। তিন দিন, তিন রাত্রি তোমরা কোন খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করো না। আমি ও আমার পরিচারিকারাও তোমাদের মতোই উপবাস করবো। তারপর আমি রাজার কাছে যাবো। আমি জানি, না ডাকতে রাজার কাছে যাওয়াটা নিয়ম বিরুদ্ধ। কিন্তু আমি তাও যাবো, তাতে যদি আমার মৃত্যুও হয়, তো হবে।”

17 মর্দখয় তখন গিয়ে ইষ্টের তাঁকে যা যা করতে বলেছিলেন সবই করলেন।

ইষ্টের রাজার সঙ্গে কথা বললেন

তৃতীয় দিন ইষ্টের তাঁর বিশেষ পোশাক পরিধান করে রাজার প্রাসাদের ভেতরে গিয়ে রাজ দরবারের সামনে, রাজা যেখানে দরবার কক্ষের প্রবেশ পথের দিকে মুখ করে তাঁর সিংহাসনে বসতেন, সেখানে গিয়ে দাঁড়ালেন। রাণীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাজা খুবই খুশী হলেন এবং তৎ‌ক্ষণাৎ‌ তাঁর দিকে নিজের সোনার রাজদণ্ডটি এগিয়ে দিলেন। ইষ্টের তখন সভার ভেতরে রাজার সান্নিধ্যে গিয়ে সুবর্ণ রাজদণ্ডের শেষাংশ স্পর্শ করলেন।

তখন রাজা ইষ্টেরকে রশ্ন করলেন, “কি কারণে তোমায় এতো বিমর্ষ দেখাচ্ছে রাণী ইষ্টের? তুমি কি আমায় কিছু জিজ্ঞেস করতে চাও? আমার কাছে যদি তুমি কিছু চাও, এমনকি তুমি যদি রাজ্যের অর্ধেকও চাও তাও আমি তোমায় দেবো।”

ইষ্টের জবাব দিলেন, “আমি আপনার জন্য ও হামনের জন্য একটি ভোজের আয়োজন করেছি। দয়া করে হামনের সঙ্গে আজ সেই ভোজসভায় আসুন।”

রাজা বললেন, “হামনকে শীঘ্রই নিয়ে এসো যাতে ইষ্টের যা বলছে আমরা তাই করতে পারি।”

অতএব রাজা ও হামন ইষ্টেরের আয়োজিত ভোজসভায় গেলেন। যখন তাঁরা দ্রাক্ষারস পান করছিলেন তখন রাজা আবার ইষ্টেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার অনুরোধটা কি? তুমি যদি আমার রাজ্যের অর্ধেকও চাও তা তোমায় দেওয়া হবে।”

ইষ্টের উত্তর দিলেন, “আমার অনুরোধ হল, রাজা যদি আমার ওপর খুশী হয়ে থাকেন এবং তিনি যদি আমার ইচ্ছামত জিনিষ আমাকে দিতে পারেন তাহলে আমার ইচ্ছা হল: আমি চাই রাজা এবং হামন দয়া করে আগামীকাল আমার বাড়ীতে আসুন। আমি একটি ভোজসভার আয়োজন করব এবং ঐ সভায় আমার ইচ্ছা প্রকাশ করব।”

মর্দখয়ের প্রতি হামনের ক্রোধ

হামন সেদিন রাজার বাড়ী থেকে খুবই খুশি মনে ও আনন্দিত চিত্তে আসছিলেন, কিন্তু রাজতোরণের সামনে মর্দখয়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি খুব রেগে গেলেন। তিনি যখন পাশ দিয়ে গেলেন তখন মর্দখয় মাথা নীচু করলেন না বা হামনকে সম্মান দেখালেন না। তিনি হামনকে কখনও ভয় পেতেন না আর এ ব্যপারে হামন খুব ক্রুদ্ধ ছিলেন। 10 যাই হোক্ কোন মতে রাগ চেপে হামন বাড়ি চলে গেলেন। বাড়ি ফিরে হামন তাঁর বন্ধুদের ও স্ত্রী সেরশকে ডেকে পাঠালেন। 11 তারপর তিনি কত বড়লোক তা নিয়ে, তাঁর পুত্রদের সংখ্যা নিয়ে ও রাজা তাঁকে কিভাবে খাতির করেন তা নিয়ে বড়াই করতে শুরু করলেন। রাজা যে তাঁকে রাজ্যের সর্বোচ্চ পদটি দিয়েছেন একথাও তিনি জানাতে ভুললেন না। 12 “শুধু এই নয়,” হামন বললেন, “রাণী আগামীকাল রাজার জন্য যে ভোজসভার ব্যবস্থা করেছেন তাতে একমাত্র আমাকেই রাজার সঙ্গে যেতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। 13 কিন্তু এসব সত্ত্বেও আমি খুশি হতে পারছি না। যতক্ষণ ওই ইহুদী মর্দখয়টাকে রাজদ্বারের কাছে বসে থাকতে দেখবো ততক্ষণ আমার পক্ষে খুশী হওয়া সম্ভব নয়।”

14 তখন হামনের স্ত্রী সেরশ ও হামনের বন্ধুরা পরামর্শ দিলেন, “কাউকে দিয়ে একটা বড় 75 ফুট মতো থাম্বা বানিয়ে, রাজাকে বলো সকাল বেলা ওটায় মর্দখয়কে ফাঁসি দিতে। আর তারপর খুশি মনে রাজাকে নিয়ে ভোজসভায় যেও!”

এই প্রস্তাবটা হামনের বেশ মনে ধরায়, তিনি মর্দখয়কে ফাঁসি দেবার জন্য স্তম্ভ বানাতে হুকুম দিলেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International