M’Cheyne Bible Reading Plan
অব্রামের সঙ্গে ঈশ্বরের চুক্তি
15 এইসব ঘটনাবলির পরে অব্রাম দর্শনের মধ্যে প্রভুর কথা শুনতে পেলেন। ঈশ্বর বললেন, “অব্রাম চিন্তা কোরো না। আমি তোমায় রক্ষা করব। আমি তোমায় এক মহাপুরস্কার দেব।”
2 কিন্তু অব্রাম বললেন, “প্রভু ঈশ্বর, আমায় খুশী করার মত আপনি কিছুই দিতে পারবেন না। কেন? কারণ আমার কোনও পুত্র নেই। তাই আমার মৃত্যুর পরে আমার দম্মেশকীয দাস ইলীয়েষর আমার সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে।” 3 অব্রাম বললেন, “আপনি আমায় পুত্র দেননি। তাই যে দাস আমার ঘরে জন্ম লাভ করেছে সে-ই পাবে আমার সমস্ত ধনসম্পত্তি।”
4 তখন প্রভু অব্রামের সঙ্গে কথা বললেন। ঈশ্বর বললেন, “ঐ দাস তোমার নিজের পুত্র হবে। এবং তোমার ঔরসজাত পুত্রই তোমার সমস্ত কিছুর উত্তরাধিকার পাবে।”
5 তখন ঈশ্বর অব্রামকে বাইরে ডেকে নিয়ে গেলেন। ঈশ্বর বললেন, “আকাশের দিকে তাকাও। দেখ, সেখানে কত তারা। এত তারা যে তুমি গুণতেই পারবে না। ভবিষ্যতে তোমার বংশধররাও ঐরকম অগুনতি হবে।”
6 অব্রাম ঈশ্বরকে বিশ্বাস করলেন এবং ঈশ্বর অব্রামের বিশ্বাসকে তার ধার্মিকতা হিসেবে বিবেচনা করলেন। 7 এবং ঈশ্বর অব্রামকে বললেন, “আমিই সেই প্রভু, যিনি তোমায় বাবিলের উর থেকে নিয়ে এসেছিলেন, যাতে এই দেশটা আমি তোমায় দিতে পারি। এই দেশ তুমি পাবে।”
8 কিন্তু অব্রাম বললেন, “প্রভু আমার গুরু, এই দেশ যে আমি পাব তার নিশ্চয়তা কি?”
9 ঈশ্বর অব্রামকে বললেন, “আমরা একটা চুক্তি করব। আমায় একটা তিন বছরের বাছুর, তিন বছরের ছাগল আর তিন বছরের মেষ এনে দাও। একটা বাচ্চা পায়রা আর একটা ঘুঘুপাখীও এনে দাও।”
10 অব্রাম এই সমস্ত ঈশ্বরের কাছে এনে দিলেন। অব্রাম প্রাণীগুলি হত্যা করে এবং প্রতিটির দুটি করে খণ্ড করে ঐ খণ্ডগুলি থাক-থাক করে সাজিয়ে রাখলেন। কিন্তু পাখীগুলিকে অব্রাম দুখণ্ড করেন নি। 11 পরে ঐসব প্রাণীর মাংসখণ্ডের জন্য বড় বড় পাখী ছোঁ মেরে এলো। কিন্তু অব্রাম সেগুলি তাড়িয়ে দিলেন।
12 বেলা বাড়তে থাকল, ঢলে পড়তে লাগল সূর্য। অব্রামের ভীষণ ঘুম পেল এবং শেষ পর্যন্ত তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। তখন নেমে এল এক ভীষণ অন্ধকার। 13 তখন প্রভু অব্রামকে বললেন, “তোমার কয়েকটা কথা জেনে রাখা উচিৎ। তোমার উত্তরপুরুষরা যে দেশে বাস করবে সেই দেশ তাদের নয়, সেখানে তারা বিদেশী বলে গণ্য হবে। এবং সেই দেশের অধিবাসীরা 400 বছর ধরে তোমার উত্তরপুরুষদের দাস করে রাখবে এবং তাদের উপর নানা উৎপীড়ন করবে। 14 কিন্তু তারপর যে জাতি তোমার উত্তরপুরুষদের দাস করে রেখেছিল তাদের আমি শাস্তি দেব। তোমার উত্তরপুরুষরা সেই জাতি ত্যাগ করবে এবং তাদের সঙ্গে নিয়ে যাবে বহু ভাল জিনিস।
15 “তুমি নিজে বহুকাল জীবিত থাকবে। শান্তিতে তুমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে। তোমার সমাধি হবে তোমার পরিবারের মধ্যে। 16 চার প্রজন্ম পরে তোমার আত্মীয়স্বজনরা আবার এই দেশে আসবে। তখন তারা এখানকার অধিবাসী ইমোরীয়দের পরাস্ত করবে। তোমার আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে আমি ইমোরীয়দের শাস্তি দেব। এটা ভবিষ্যতে ঘটবে। কারণ ইমোরীয়রা এখনও আমার কাছে শাস্তি পাওয়ার মত খারাপ হয় নি।”
17 সূর্য অস্ত গেলে গাঢ় অন্ধকার ঘনাল। দুখণ্ড করা মৃত পশুগুলি তখনও মাটির উপরে পড়ে আছে। সেই সময় আগুন ও ধোঁয়ার স্তম্ভ মৃত পশুগুলির অর্ধেক খণ্ডগুলির মধ্য দিয়ে চলে গেল।[a]
18 সুতরাং ঐদিন প্রভু অব্রামকে একটা প্রতিশ্রুতি দিলেন এবং সেই অনুসারে অব্রামের সঙ্গে একটা চুক্তি করলেন। প্রভু বললেন, “এই দেশ আমি তোমার উত্তরপুরুষদের দেব। মিশর নদ এবং ফরাৎ নদের মধ্যবর্তী বিশাল ভূভাগ আমি তাদের দেব। 19 এটা হল কেনীয়, কনিষীয়, কদ্মোনীয়, 20 হিত্তীয়, পরিষীয়, রফায়ীয়, 21 ইমোরীয়, কনানীয়, গির্গাশীয় এবং যিবুষীয় বংশগুলির দেশ।”
হেরোদ যীশুর সম্পর্কে শুনলেন
(মার্ক 6:14-29; লূক 9:7-9)
14 সেই সময় গালীলের শাসনকর্তা হেরোদ, যীশুর বিষয় শুনতে পেলেন। 2 তিনি তাঁর চাকরদের বললেন, “এই লোক নিশ্চয়ই বাপ্তিস্মদাতা যোহন। সে নিশ্চয়ই মৃত লোকদের মধ্য থেকে বেঁচে উঠেছে। আর সেইজন্যই এইসব অলৌকিক কাজ করতে পারছে।”
বাপ্তিস্মদাতা যোহন নিহত হলেন
3 এই হেরোদই যোহনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারের মধ্যে শেকলে বেঁধে রেখেছিলেন। তাঁর ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার অনুরোধেই তিনি একাজ করেছিলেন। 4 কারণ যোহন হেরোদকে বার-বার বলতেন, “হেরোদিয়াকে তোমার ঐভাবে রাখা বৈধ নয়।” 5 হেরোদ এই জন্য যোহনকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি লোকদের ভয় করতেন, কারণ সাধারণ লোক যোহনকে ভাববাদী বলে মানত।
6 এরপর হেরোদের জন্মদিন এল, সেই উৎসবে হেরোদিয়ার মেয়ে, হেরোদ ও তাঁর অতিথিদের সামনে নেচে হেরোদকে খুব খুশী করল। 7 সেজন্য হেরোদ শপথ করে বললেন যে, সে যা চাইবে তিনি তাকে তাইদেবেন। 8 মেয়েটি তার মায়ের পরামর্শ অনুসারে বলল, “থালায়় করে বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মাথাটা আমায় এনে দিন।”
9 যদিও রাজা হেরোদ এতে খুব দুঃখিত হলেন, তবু তিনি শপথ করেছিলেন বলে এবং যাঁরা তাঁর সঙ্গে খেতে বসেছিলেন তাঁরা সেই শপথের কথা শুনেছিলেন বলে সম্মানের কথা ভেবে তিনি তা দিতে হুকুম করলেন। 10 তিনি লোক পাঠিয়ে কারাগারের মধ্যে যোহনের শিরশ্ছেদ করালেন। 11 এরপর যোহনের মাথাটি থালায় করে নিয়ে এসে সেই মেয়েকে দেওয়া হলে, সে তা নিয়ে তার মায়ের কাছে গেল। 12 তারপর যোহনের অনুগামীরা এসে তাঁর দেহটি নিয়ে গিয়ে কবর দিলেন। আর তাঁরা যীশুর কাছে গিয়ে সব কথা জানালেন।
যীশু পাঁচ হাজারের বেশী লোককে খাওয়ালেন
(মার্ক 6:30-44; লূক 9:10-17; যোহন 6:1-14)
13 যীশু সব কথা শুনে একা একটা নৌকা করে সেখান থেকে রওনা হয়ে কোন এক নির্জন জায়গায় চলে গেলেন। কিন্তু লোকেরা তা জানতে পেরে বিভিন্ন নগর থেকে বেরিয়ে হাঁটা পথ ধরে তাঁর সঙ্গ ধরল। 14 তিনি নৌকা থেকে তীরে নেমে দেখলেন বহুলোক জড় হয়েছে, তাদের প্রতি তাঁর করুণা হল। তাদের মধ্যে যারা অসুস্থ ছিল, তাদের সকলকে তিনি সুস্থ করলেন।
15 সন্ধ্যা হলে শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “এ জনহীন প্রান্তর আর এখন বেলাও শেষ হয়ে এল, এই লোকদের চলে যেতে বলুন, তারা যেন গ্রামে গ্রামে গিয়ে নিজেদের জন্য খাবার কিনে নিতে পারে।”
16 কিন্তু যীশু তাদের বললেন, “তাদের যাবার দরকার নেই, তোমরাই তাদের কিছু খেতে দাও।”
17 তখন তার শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “এখানে আমাদের কাছে পাঁচখানা রুটি আর দুটো মাছ ছাড়া আর কিছুই নেই।”
18 তিনি তাঁদের বললেন, “ওগুলো আমার কাছে নিয়ে এস।” 19 এরপর তিনি সেই লোকদের ঘাসের ওপর বসে যেতে বললেন। পরে তিনি সেই পাঁচখানা রুটি ও দুটো মাছ নিয়ে স্বর্গের দিকে তাকিয়ে সেই খাবারের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন। তারপর সেই রুটি টুকরো টুকরো করে তাঁর শিষ্যদের হাতে পরিবেশন করার জন্য দিলেন। শিষ্যরা এক এক করে লোকদের তা দিলেন। 20 আর লোকেরা সকলে খেয়ে পরিতৃপ্ত হল। পরে শিষ্যরা পড়ে থাকা খাবারের টুকরো-টাকরা তুলে নিলে তাতে বারোটি টুকরি ভর্ত্তি হয়ে গেল; 21 যারা খেয়েছিল তাদের মধ্যে স্ত্রীলোক ও ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ছাড়া পাঁচ হাজার পুরুষ মানুষ ছিল।
যীশু জলের উপর দিয়ে হাঁটেন
(মার্ক 6:45-52; যোহন 6:16-21)
22 এরপরই যীশু তাঁর শিষ্যদের নৌকায় করে হ্রদের অপর পারে তাঁর সেখানে যাবার আগে তাদের পৌঁছাতে বললেন। এরপর তিনি লোকদের বিদায় জানালেন। 23 লোকদের বিদায় দিয়ে, প্রার্থনা করবার জন্য তিনি একা পাহাড়ে উঠে গেলেন। অন্ধকার হয়ে গেলেও তিনি সেখানে একাই রইলেন। 24 নৌকাটি তীর থেকে দূরে গিয়ে পড়েছিল, উল্টো হাওয়া বইতে থাকায় ঢেউয়ের ধাক্কায় ভীষণভাবে দুলছিল।
25 সকাল তিনটে থেকে ছ’টার মধ্যে যীশুর শিষ্যরা নৌকায় ছিলেন। এমন সময় যীশু জলের উপর দিয়ে হেঁটে তাঁদের কাছে এলেন। 26 যীশুকে হ্রদের জলের ওপর দিয়ে হেঁটে আসতে দেখে শিষ্যরা ভয়ে আঁতকে উঠলেন, তারা “ভূত, ভূত” বলে ভয়ে চিৎকার করে উঠলেন।
27 সঙ্গে সঙ্গে যীশু তাঁদের বললেন, “এতো আমি! সাহস কর! ভয় করো না।”
28 এর উত্তরে পিতর তাঁকে বললেন, “প্রভু, এ যদি সত্যিই আপনি হন, তবে জলের ওপর দিয়ে আমাকেও আপনার কাছে আসতে আদেশ করুন।”
29 যীশু বললেন, “এস।”
পিতর তখন নৌকা থেকে নেমে জলের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যীশুর দিকে এগোতে লাগলেন। 30 কিন্তু যখন দেখলেন প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস বইছে, তখন খুবই ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি আস্তে আস্তে ডুবতে লাগলেন আর চিৎকার করে বললেন, “প্রভু, আমাকে বাঁচান।”
31 যীশু তখনই হাত বাড়িয়ে পিতরকে ধরে ফেলে বললেন, “হে অল্প-বিশ্বাসী! তুমি কেন সন্দেহ করলে?”
32 যীশু ও পিতর নৌকায় উঠলে পর ঝোড়ো বাতাস থেমে গেল।
33 যাঁরা নৌকায় ছিলেন তাঁরা যীশুকে প্রণাম করে বললেন, “আপনি সত্যিই ঈশ্বরের পুত্র।”
যীশু বহু অসুস্থ মানুষকে আরোগ্যদান করলেন
(মার্ক 6:53-56)
34 তাঁরা হ্রদ পার হয়ে গিনেষরৎ অঞ্চলে এলেন। 35 সেই অঞ্চলের লোকরা তাঁকে চিনতে পেরে সেই অঞ্চলের সব জায়গায় লোকদের কাছে তাঁর আসার খবর রটিয়ে দিল। তখন লোকেরা তাদের মধ্যে যারা অসুস্থ ছিল তাদের সকলকে যীশুর কাছে নিয়ে এল। 36 তারা যীশুকে অনুরোধ করল, যেন সেই রোগীরা কেবল তাঁর পোশাকের ঝালর স্পর্শ করতে পারে। আর যাঁরা স্পর্শ করল, তারাই সুস্থ হয়ে গেল।
সন্বল্লট ও টোবিয়
4 আমরা দেওয়াল পুনর্নির্মাণ করছি, একথা জানতে পেরে সন্বল্লট খুবই ক্রুদ্ধ হল। সে তখন ইহুদীদের নিয়ে হাসা-হাসি করল। 2 সন্বল্লট তার বন্ধুদের ও শমরীয় সেনাদলের সামনেই কথা বলছিল, “এই দুর্বল ইহুদীগুলো কি করছে? ওরা কি ভাবছে যে আমরা ওদের ছেড়ে দেব? ওরা কি বেদীতে বলি চড়াবে? ওরা কি মনে করে যে এক দিনেই ওরা নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারবে? ওরা কি আবর্জনা আর ধূলোর গাদা থেকে এই পোড়া পাথরগুলিকে আবার জীবন্ত করে তুলতে পারবে?”
3 সেই সময়, অম্মোনীয়র টোবিয় সন্বল্লটের সঙ্গে ছিল। সে বলল, “যে দেওয়ালটা ওরা বানাচ্ছে ওটার ওপর একটা ছোট শেয়ালও যদি ওঠে ওটা ভেঙে পড়বে!”
4 নহিমিয় তখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন, “হে ঈশ্বর তুমি দয়া করে আমাদের ডাকে সাড়া দাও। এই সমস্ত ব্যক্তিরা আমাদের ঘৃণা করে। সন্বল্লট ও টোবিয় আমাদের অপমান করছে। তুমি তাদের এর যথাযোগ্য শাস্তি দাও। ওদের বন্দী করার ব্যবস্থা করো, যাতে ওরা লজ্জিত হয়। 5 তোমার চোখের সামনে ওরা যে অপরাধ করেছে তা তুমি ক্ষমা করো না। ওরা দেওয়াল নির্মাতাদের অপমান করেছে ও তাদের নিরুৎসাহ করেছে।”
6 যদিও আমরা জেরুশালেমের চারপাশের দেওয়াল বানালাম কিন্তু দেওয়ালের উচ্চতা যা হওয়া উচিৎ ছিল মোটে তার অর্ধেক হল। লোকরা উদ্যম আর ইচ্ছা নিয়ে কাজ করেছে।
7 সন্বল্লট, টোবিয়, আরবীয়, অম্মোনীয় ও অস্দোদীয়রা খুব রেগে গেল কারণ ওরা শুনেছিল যে জেরুশালেমের দেওয়ালের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে এবং গর্ত ভরাট করা হচ্ছে। 8 তারপর তারা জেরুশালেমের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার পরিকল্পনা করল। তারা সবাই পরিকল্পনা করল যে তারা আসবে ও জেরুশালেমের বিরুদ্ধে লড়াই করবে এবং তার বিরুদ্ধে গোলমাল করবে। 9 কিন্তু আমরা আমাদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে দিবারাত্র দেওয়ালের চারপাশে কড়া পাহারার ব্যবস্থা করলাম যাতে আমরা এইসব বহিঃশত্রুদের প্রয়োজনে বাধা দিতে পারি।
10 সে সময় যিহূদার লোকেরা বলল, “কর্মীরা সকলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এবং ওখানে সরাবার মতো এত নোংরা আছে যে আমরা দেওয়াল নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারব না। 11 আর আমাদের শত্রুরা বলছে, ‘ইহুদীরা এ সম্বন্ধে অবগত হবার আগে অথবা আমাদের দেখতে পাবার আগে, আমরা তাদের মধ্যে গিয়ে তাদের হত্যা করব, এবং এইভাবেই তাদের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।’”
12 তারপর যে সব ইহুদী আমাদের শত্রুদের মধ্যে থাকত তারা এলো এবং আমাদের দশ বার বলল, “আমাদের শত্রুরা আমাদের চারদিকে রয়েছে। আমরা যে দিকেই ফিরি না কেন সে দিকেই শত্রুরা রয়েছে।”
13 আমি তখন কিছু ব্যক্তিকে প্রাচীরের নিম্নতম অংশে রাখার ব্যবস্থা করলাম। আমি পরিবারগুলিকে তলোয়ার, বল্লম ও তীর-ধনুক সহ দেওয়ালের গর্তের কাছে এক সঙ্গে দাঁড় করিয়ে দিলাম। 14 তারপর সমস্ত ব্যবস্থা ও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবার পর, আমি গুরুত্বপূর্ণ পরিবারগুলিকে, আধিকারিকদের এবং সমস্ত বাকি লোকদের উৎসাহ দিয়ে বললাম, “আমাদের শত্রুদের ভয় পেয়ো না। মনে রেখো আমাদের প্রভু মহান এবং ভয়ঙ্কর!”
15 আমাদের শত্রুপক্ষ খবর পেল যে আমরা তাদের চক্রান্তের কথা জেনে ফেলেছি। ঈশ্বর তাদের সমস্ত মতলব বানচাল করে দিয়েছেন। আবার আমাদের লোকরা তাদের নিজেদের জায়গায় ফিরে গিয়ে দেওয়ালের কাজ শুরু করল। 16 তখন থেকে আমাদের লোকদের অর্ধেক সংখ্যক দেওয়াল নির্মাণের কাজে নিযুক্ত রইল আর বাকি অর্ধেক বল্লম, বর্ম, তীর এবং বর্ম নিয়ে প্রহরায় নিযুক্ত হল। সেনাধ্যক্ষরা যিহূদার লোকদের পেছনে এসে দাঁড়ালেন যেহেতু তারা দেওয়াল নির্মাণ করছিল। 17 মিস্ত্রি ও তাদের যোগানদাররা এক হাতে তাদের যন্ত্রপাতি এবং অন্য হাতে অস্ত্রও ধরেছিল। 18 কাজ করার সময়ও প্রত্যেকটি নির্মাণকারী কোমরবন্ধে তরবারি ঝুলিয়ে রাখতো। লোকদের সতর্ক করে দেবার জন্য যার শিঙা বাজানোর কথা সে আমার পাশে পাশে থাকত। 19 আমি তখন আধিকারিকবর্গ, গুরুত্বপূর্ণ পরিবার ও বাকি লোকদের সঙ্গে কথা বললাম। আমি বললাম, “এই দেওয়াল জুড়ে এখনও অনেক কাজ করা বাকি আছে আর আমরা একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছি। 20 কিন্তু একে অপরের থেকে কাজের সময় যত দূরেই থাকো না কেন, শিঙার আওয়াজ শুনলেই সকলে দ্রুত এক জায়গায় জড়ো হবে। ঈশ্বর স্বয়ং আমাদের যুদ্ধে সাহায্য করবেন।”
21 অতএব আমরা সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত জেরুশালেমের দেওয়াল বানানোর জন্য কঠিন পরিশ্রম করছিলাম যখন কর্মীদের মধ্যে অর্ধেকরা হাতে বল্লম ধরেছিল।
22 আমি নির্মাতাদের এও বলেছিলাম, “প্রত্যেক নির্মাতা এবং তার সাহায্যকারী রাত্রে জেরুশালেমের ভেতরে থাকবে যাতে তারা রাত্রে পাহারাদার এবং দিনের বেলা কর্মী হতে পারে।” 23 অতএব আমি বা আমার ভাইরা, আমার লোকরা এবং প্রহরীরা কেউই স্নান করার জন্য বা কাপড় কাচার জন্য পোষাক খুলতে পারতাম না কারণ আমরা যখন জলের জন্য বেরোতাম তখনও আমাদের হাতে অস্ত্র থাকত।
ইকনিয়ে পৌল ও বার্ণবা
14 এরপর পৌল ও বার্ণবা ইকনিয়ে গেলেন। সেখানে তাঁরা তাঁদের কাজের পদ্ধতি অনুযায়ী সেই একইভাবে ইহুদীদের সমাজ-গৃহে প্রবেশ করলেন। সেখানকার লোকদের কাছে পৌল ও বার্ণবা এতো সুন্দরভাবে কথা বললেন, যে অনেক ইহুদী ও গ্রীক তাঁদের কথায় বিশ্বাস করল। 2 কিন্তু কিছু ইহুদীরা বিশ্বাস করল না এবং তারা ভাইদের বিরুদ্ধে অইহুদীদের ক্ষেপিয়ে তুলল।
3 পৌল ও বার্ণবা ইকনিয়ে অনেক দিন থেকে গেলেন, আর তাঁরা নির্ভীকভাবে প্রভুর কথা বলে যেতে লাগলেন। তাঁরা প্রভুর অনুগ্রহের কথা প্রচার করতেন; আর প্রভুও তাঁদের মাধ্যমে নানা অলৌকিক কাজ করে সেই প্রচারের পক্ষে সাক্ষ্য দিতেন। 4 সেই শহরের লোকরা দু’দলে ভাগ হয়ে গেল, একদল ইহুদীদের পক্ষে আর অন্য দল প্রেরিতদের পক্ষ নিল।
5 তখন অইহুদীরা ও ইহুদীরা তাদের সমাজপতিদের সঙ্গে এক হয়ে পৌল ও বার্ণবাকে অপমান করে পাথর মেরে হত্যা করার পরিকল্পনা করল। 6 শৌল ও বার্ণবা তা জানতে পেরে সেই শহর ছেড়ে গেলেন। তাঁরা লুকায়নিয়ার লুস্ত্রা ও দর্বী শহরে ও তার চারপাশের অঞ্চলে চলে গেলেন; 7 আর সেখানেও তাঁরা সুসমাচার প্রচারের কাজ চালিয়ে গেলেন।
লুস্ত্রা ও দর্বীতে পৌল
8 লুস্ত্রায় একজন লোক বসে থাকত, সে তার পা ব্যবহার করতে পারত না। সে জন্ম থেকেই খোঁড়া ছিল, কখনও হাঁটা চলা করে নি। 9 সেই লোকটি বসে বসে পৌলের কথা শুনছিল। পৌল তার দিকে চেয়ে দেখলেন। সুস্থ হবার জন্য লোকটির ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস আছে। 10 পৌল তখন তাকে ডেকে বললেন, “তোমার দু পায়ে ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াও!” আর সে লাফ দিয়ে উঠে হেঁটে বেড়াতে লাগল।
11 পৌল যা করলেন তা দেখে লোকেরা লুকায়নীয় ভাষায় বলে উঠল, “দেবতারা মানুষ রূপ ধারণ করে আমাদের মধ্যে অবতীর্ণ হয়েছেন!” 12 তারা বার্ণবাকে বলল, “দ্যুপিতর”[a] আর পৌলকে বলল, “মর্কুরিয়,”[b] কারণ পৌল ছিলেন প্রধান বক্তা। 13 শহরের ঠিক সামনেই দ্যুপিতের যে মন্দির ছিল, তার যাজক কয়েকটা ষাঁড় ও মালা নিয়ে শহরের ফটকে এল ও লোকদের সঙ্গে সেখানে তা বলিদান করে পৌল ও বার্ণবার কাছে উৎসর্গ করতে চাইল।
14 কিন্তু প্রেরিত বার্ণবা ও পৌল যখন একথা বুঝলেন, তখন তাঁরা নিজেদের পোশাক ছিঁড়ে দৌড়ে বাইরে গিয়ে লোকদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললেন, 15 “আহা, তোমরা এ করছ কি? আমরাও তোমাদের মতো সাধারণ মানুষ! আমরা তোমাদের সুসমাচার শোনাতে এসেছি। এইসব অসারতার মধ্য থেকে জীবন্ত ঈশ্বরের দিকে ফিরতে হবে। ঈশ্বরই আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র ও সেই সকলের মধ্যে যা কিছু আছে সে সমস্তই সৃষ্টি করেছেন।
16 “তিনিই অতীতে সমস্ত জাতিকে নিজেদের খুশী মতো পথে চলতে দিয়েছেন। 17 তথাপি ঈশ্বর যে আছেন এর প্রমাণের জন্য তিনি অনেক কিছু করেছিলেন। তিনি সকলের মঙ্গল করেছেন। আকাশ থেকে বৃষ্টি ও বিভিন্ন ঋতুতে শস্য দিচ্ছেন। তিনি তোমাদের খাদ্য যোগাচ্ছেন ও তোমাদের অন্তর আনন্দে পূর্ণ করছেন।”
18 এইসব কথা পৌল ও বার্ণবা অনেক করে বোঝালেও তাঁদের উদ্দেশ্যে বলিদান করা থেকে কোনভাবেই এই লোকদের রুখতে পারলেন না।
19 এই ঘটনার পর ইকনিয় ও আন্তিয়খিয়া থেকে কয়েকজন ইহুদী এসে লোকদের পৌলের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করল। তারা পৌলের ওপর পাথর ছুঁড়ল, তাঁকে টেনে এনে শহরের বাইরে নিয়ে গেল। তারা মনে করল পৌল বুঝি মারাই গেছেন। 20 কিন্তু যীশুর অনুগামীরা এসে তাঁর চারপাশে দাঁড়ালে তিনি উঠে তাদের সঙ্গে শহরে গেলেন। পরদিন তিনি বার্ণবার সঙ্গে দর্বীতে চলে গেলেন।
সুরিয়ার আন্তিয়খিয়ায় প্রত্যাবর্তন
21 সেই শহরে তাঁরা সুসমাচার প্রচার করলেন, আর বহুলোক যীশুর অনুগামী হল। এরপর তাঁরা লুস্ত্রা হয়ে ইকনিয় ও পরে আন্তিয়খিয়ায় ফিরে এলেন। 22 তাঁরা ঐসব শহরে শিষ্যদের শক্তি জোগালেন। সমস্ত নির্যাতনের মধ্যেও বিশ্বাসে অটল থাকতে তাঁদের সাহস দিয়ে বললেন, “অনেক দুঃখভোগের মধ্য দিয়ে আমাদের ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে হবে।” 23 তাঁরা প্রত্যেকটি বিশ্বাসী মণ্ডলীর জন্য প্রাচীনদের নিয়োগ করলেন। এই প্রাচীনরা, যারা প্রভুর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন, প্রার্থনা ও উপবাসের সঙ্গে তাঁদের প্রত্যেককে তাঁরা প্রভুর হাতে সঁপে দিলেন।
24 এরপর তাঁরা পিষিদিয়ার মধ্য দিয়ে পাম্ফুলিয়ায় গেলেন। 25 তারপর পর্গায় আবার সুসমাচার প্রচার করলেন ও সেখান থেকে অত্তালিয়ায় চলে গেলেন। 26 সেখান থেকে তাঁরা জাহাজে করে আন্তিয়খিয়ায় গেলেন। যে কাজ তাঁরা এখন শেষ করলেন, সেই কাজের জন্যই এই শহর থেকে বিশ্বাসীরা পৌল ও বার্ণবাকে প্রভুর কাছে সমর্পণ করেছিলেন।
27 পৌল বার্ণবা ফিরে এসে মণ্ডলীর বিশ্বাসীদের একত্র করলেন; আর ঈশ্বর তাঁদের সঙ্গে থেকে যে সব কাজ করেছিলেন ও অইহুদীদের জন্য বিশ্বাসের যে দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন, সে সব কথা তাঁদের জানালেন। 28 পরে তাঁরা অনুগামীদের সঙ্গে সেখানে দীর্ঘ সময় থাকলেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International