Chronological
একজন লেবীয় পুরুষ ও তার দাসী
19 সেই সময়, ইস্রায়েলীয়দের কোন রাজা ছিল না।
পাহাড়ী দেশ ইফ্রয়িমের সীমান্তে একজন লেবীয় থাকত। সেই লোকটার একজন দাসী ছিল, তাকে একরকম তার স্ত্রীও বলা যায়। সে ছিল যিহূদার বৈৎলেহম শহরের। 2 কিন্তু সে (দাসীটি) তার প্রতি অবিশ্বস্ত ছিল। সে বৈৎলেহমে যিহূদায় তার পিতার বাড়ি চলে গেল। সে সেখানে চার মাস কাটালো। 3 তারপর তার স্বামী তার কাছে গেলো। সে তার সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই কথাবার্তা বলবে ঠিক করেছিল, এই আশায় যদি স্ত্রী তার কাছে ফিরে আসে। একজন ভৃত্য ও দুটো গাধা নিয়ে সে মেয়েটির পিতার বাড়ী গেল। তাকে দেখতে পেয়ে মেয়েটির পিতা বেরিয়ে এসে তাকে আদর করে ডাকল। পিতা তো বেশ খুশী হল। 4 মেয়ের পিতা লেবীয়টিকে তার বাড়িতে নিয়ে এল। তাকে সেখানে থাকবার জন্য বলল। লেবীয় সেখানে তিনদিন থেকে গেল। শ্বশুরবাড়িতে সে খাওয়া-দাওয়া, পান ভোজন করে আর ঘুমিয়ে দিন কাটাল।
5 চতুর্থ দিনে তারা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠল। লেবীয় লোকটি চলে যাবার জন্য প্রস্তুত হল। কিন্তু শ্বশুরমশাই জামাতাকে বলল, “আগে কিছু খেয়েদেয়ে নাও, তারপর যেও।” 6 তাই লেবীয় লোকটি ও শ্বশুরমশাই একসঙ্গে খেতে বসল। খাওয়া হয়ে যাবার পর শ্বশুর বলল, “আজকের রাতটা থেকে যাও। আরাম করো, আনন্দ করো। তারপর বিকেল হলে চলে যেও।” সুতরাং তারা দুজন একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করল। 7 লেবীয় তারপর যাবার উদ্যোগ করলে শ্বশুর তাকে আর একরাত্রি থাকতে অনুরোধ করল।
8 পঞ্চম দিনে ভোরবেলা লেবীয় ঘুম থেকে উঠে রওনা দেবার উদ্যোগ করল। কিন্তু শ্বশুর আবার জামাতাকে বলল, “আগে তো কিছু খাও। আজ বিকাল পর্যন্ত বিশ্রাম কর।” অতএব তারা দুজন একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করল।
9 তারপর লেবীয় লোকটি তার দাসী আর ভৃত্যের যাবার উদ্যোগ করলে শ্বশুর বলল, “এখন অন্ধকার হয়ে গেছে। দিন তো একরকম শেষ হয়ে গেছে। তাই বলছি কি, আজকের রাতটা থেকেই যাও। ভালভাবে রাতটা কাটাও। কাল সকাল সকাল উঠে চলে যেও।”
10 এবারে লেবীয় লোকটি আর রাত কাটাতে চাইল না। গাধা দুটো আর দাসীটিকে সঙ্গে নিয়ে সে দূরে যিবূষ শহরের দিকে চলে গেল। (যিবূষ জেরুশালেমের আর একটি নাম।) 11 দিন প্রায় শেষ হয়ে গেল। তারা যিবূষ শহরের কাছাকাছি পৌঁছাল। তখন ভৃত্যটি তার মনিব লেবীয় লোকটিকে বলল, “এই যিবূষ শহরে আজ রাত কাটানো যাক।”
12 কিন্তু তার মনিব লেবীয় লোকটি বলল, “না, আমরা অপরিচিত শহরের ভেতরে যাব না। ওরা তো ইস্রায়েলের লোক নয়। আমরা গিবিয়া শহরে চলে যাব।” 13 সে আরও বলল, “চলো গিবিয়া কি রামা—এই দুটো শহরের যে কোন একটায় আমরা গিয়ে সেখানে রাত কাটিয়ে দিতে পারি।”
14 তাই লেবীয় লোকটি তার সঙ্গীকে নিয়ে এগিয়ে চলল। গিবিয়ায় পৌঁছবার সঙ্গে সঙ্গে সূর্য অস্ত গেল। গিবিয়া হল বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর দখলে। 15 তারা গিবিয়ায় থামল। সেই শহরেই তারা রাত কাটাবে ঠিক করল। শহরের একটা খোলা জায়গায় তারা বসে পড়ল। কিন্তু কেউই তাদের বাড়িতে ডেকে এনে রাত কাটাবার জন্য বলল না।
16 সেদিন সন্ধ্যায় ক্ষেত থেকে একজন বৃদ্ধ লোক শহরে এল। তার বাড়ী ইফ্রয়িমের পাহাড়ী অঞ্চলে হলেও গিবিয়াতেই সে বসবাস করে। (গিবিয়ার লোকরা সকলেই বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর।) 17 বৃদ্ধ লোকটি শহরের কেন্দ্রস্থলে ঐ পথিক লেবীয়কে দেখতে পেল। সে জিজ্ঞাসা করল, “তোমরা কোথায় যাবে? তোমরা কোথা থেকে আসছ?”
18 লেবীয় লোকটি বলল, “আমরা যিহূদার বৈৎলেহম শহর থেকে আসছি। আমরা ইফ্রয়িমের পাহাড়ী দেশের সীমানায় বাড়ি যাচ্ছি। আমি যিহূদার বৈৎলেহমে এবং প্রভুর গৃহে গিয়েছিলাম। এখন আমি বাড়ী ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু আজ রাত্রে কেউই আমাকে তার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে নি। 19 গাধাগুলোর জন্য খড় আর খাদ্য আমাদের সঙ্গে আছে। ভৃত্য, যুবতী স্ত্রী আর আমার জন্য রুটি আর দ্রাক্ষারসও রয়েছে। আমাদের কোন কিছুর অভাব নেই।”
20 বৃদ্ধ লোকটি বলল, “তোমরা আমার বাড়িতে স্বচ্ছন্দে থাকতে পারো। তোমাদের যা দরকার সব দেবো। শুধু একটাই কথা, রাত্রে ঐ খোলা মাঠে যেন তোমরা থেকো না।” 21 এরপর বৃদ্ধলোকটা লেবীয় ও তার সঙ্গীসাথীদের তার বাড়ি নিয়ে গেল। সে তাদের গাধাগুলোকে খাওয়াল। তারা পা ধুয়ে পানাহার সেরে নিল।
22 এদিকে, সঙ্গীদের নিয়ে লেবীয় লোকটি যখন আমোদ-ফূর্তি করছিল, তখন শহরের কিছু বদলোক বাড়িটা ঘিরে ফেলল। তারা দরজায় ধাক্কা মারতে লাগল। তারা বাড়ির মালিক ঐ বৃদ্ধ লোকটার নাম ধরে চিৎকার করতে লাগল। তারা বলল, “তোমার বাড়ি থেকে ঐ লোকটাকে বার করে দাও। আমরা ওর সঙ্গে যৌন কার্য করবো।”
23 বৃদ্ধলোকটি বেরিয়ে এসে বদলোকগুলোকে বলল, “শোন বন্ধুরা, অমন মন্দ কাজ কোরো না। লোকটি আমার অতিথি। এরকম জঘন্য পাপ কাজ করো না। 24 এদিকে দেখ, এ হচ্ছে আমার মেয়ে। একটি কুমারী। একে আমি তোমাদের জন্য বার করে আনব। তোমরা যেভাবে খুশী একে ব্যবহার করো, আমি তার উপপত্নীকেও তোমাদের জন্য বার করে আনব। তার সঙ্গে এবং আমার মেয়ের সঙ্গে যা খুশী করো আপত্তি করব না। কিন্তু আমার অতিথির বিরুদ্ধে তোমরা এমন জঘন্য পাপ কাজ করো না।”
25 কিন্তু বদ লোকগুলো সেসব কথায় কান দিল না। শেষ পর্যন্ত লেবীয় লোকটি তার দাসী বা উপপত্নীকে বাড়ি থেকে বার করে তাদের কাছে এনে দিল। তারা তাকে আঘাত করল এবং সারারাত ধরে ধর্ষণ করল। ভোর বেলায় তাকে ছেড়ে দিল। 26 রাত পোয়ালে মেয়েটি বাড়িতে ফিরে এল। যেখানে তার স্বামী ছিল। তার দোরগোড়ায় সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। দিনের বেলা পর্যন্ত সে সেখানে এইভাবে পড়ে রইল।
27 পরদিন খুব সকালে লেবীয় লোকটি ঘুম থেকে উঠল। বাড়ি যেতে হবে এবার। বেরবে বলে দরজা খুলল, আর সেখানে চৌকাঠের উপর একটা হাত এসে পড়ল। পড়ে রয়েছে তার দাসী। দরজার গোড়ায় সে পড়ে আছে। 28 লেবীয় লোকটি তাকে বলল, “ওঠো আমাদের যেতে হবে।” কিন্তু কোনো সাড়া মিলল না। সে মারা গিয়েছিল।
গাধার পিঠে তাকে শুইয়ে লেবীয় লোকটি বাড়ি চলে গেল। 29 বাড়ি ফিরে সে একটি ছুরি দিয়ে দাসীটির দেহকে কেটে 12টি টুকরো করল। তারপর ইস্রায়েলীয়রা যে সব জায়গায় বাস করত সে সব জায়গায় ঐ 12টি টুকরো পাঠিয়ে দিল। 30 যারা দেখল তারা প্রত্যেকেই বলল, “এরকম কাণ্ড ইস্রায়েলে আগে কখনও ঘটে নি। যেদিন আমরা মিশর থেকে চলে আসি সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত এরকম কাজ কখনও হয় নি এবং দেখাও যায় নি। এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। ঠিক করতে হবে আমাদের কি করা উচিৎ।”
ইস্রায়েলের সঙ্গে বিন্যামীনের যুদ্ধ
20 সুতরাং ইস্রায়েলের সমস্ত লোকরা একত্র হল। তাদের উদ্দেশ্য হল মিস্পা শহরে প্রভুর সামনে দাঁড়ানো। তারা দান থেকে বের-শেবা পর্যন্ত ইস্রায়েলের সব জায়গা থেকেই এসেছিল। এমনকি ইস্রায়েলীয়রা গিলিয়দ শহর থেকেও এসেছিল। 2 ইস্রায়েল পরিবারগোষ্ঠীর সমস্ত প্রধানরা উপস্থিত ছিল। ঈশ্বরের ভক্তদের প্রকাশ্য জনসভায় তারা উপস্থিত ছিল। সেখানে 400,000 সৈন্য তরবারি হাতে সামিল হয়েছিল। 3 বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর লোকরা জানতে পারল ইস্রায়েলীয়রা মিস্পায় সব জড়ো হয়েছে। ইস্রায়েলীয়রা বলল, “কি করে এমন জঘন্য ঘটনা ঘটল আমাদের সব বল।”
4 নিহত মেয়েটির স্বামী কি হয়েছিল সব বলল। সে বলল, “আমার দাসীকে নিয়ে আমি বিন্যামীনদের গিবিয়া শহরে এসেছিলাম। সেখানে আমরা রাত কাটিয়েছিলাম। 5 রাতের বেলা গিবিয়া শহরের প্রধানরা আমি যে বাড়িতে ছিলাম সেখানে এল। তারা বাড়িটাকে ঘিরে ফেলে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তারা আমার দাসীকে ধর্ষণ করেছিল। তাতে সে মারা গেল। 6 তারপর আমি আমার দাসীর দেহটাকে টুকরো টুকরো করলাম এবং ইস্রায়েল পরিবারগোষ্ঠীর প্রত্যেককে একটা করে টুকরো পাঠিয়ে দিলাম। যে সমস্ত প্রদেশ আমরা পেয়েছিলাম সেই সব জায়গাতেই আমার দাসীর 12টি দেহ খণ্ড পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। পাঠিয়েছিলাম এই জন্যই, যে দেখাতে চেয়েছিলাম বিন্যামীনদের লোকরা ইস্রায়েলে এরকম কদর্য কাজ করেছে। 7 এখন তোমরা ইস্রায়েলীয়রা বলো আমাদের কি করা উচিৎ। এ বিষয়ে তোমাদের মতামত কি বলো।”
8 তখন সকলে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে উঠে বলল, “আমরা কেউ বাড়ি যাব না। না, আমাদের মধ্যে একজনও বাড়ি ফিরে যাবে না। 9 এখন আমরা গিবিয়া শহরের প্রতি কি করব তা বলছি। আমরা ঘুঁটি চেলে জেনে নেব ঈশ্বর ঐ লোকদের জন্য আমাদের দিয়ে কি করাতে চান। 10 আমরা ইস্রায়েলের সমস্ত পরিবারগোষ্ঠী থেকে প্রতি 100 জনের মধ্যে 10 জন করে লোক বেছে নেব। এইভাবে প্রতি 1000 জনে 100 জন আর 10,000 জনে 1000 জন লোক বেছে নেব। এই বাছাই করা লোকরা সৈন্যদের যা যা দরকার সব পাবে। তারপরে তারা বিন্যামীন এলাকার গিবিয়া শহরে পৌঁছাবে। সেখানে যারা ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে জঘন্য কাজ করেছিল ওরা তাদের শাস্তি দেবে।”
11 ইস্রায়েলের সমস্ত লোক গিবিয়া শহরে জড়ো হল। কি কি করবে সে বিষয়ে তারা সকলেই আগে একমত হয়ে ঠিক করে নিয়েছিল। 12 ইস্রায়েল পরিবারগোষ্ঠীর সমস্ত লোকরা বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর কাছে দূতের মাধ্যমে খবর পাঠিয়েছিল। খবরটা হচ্ছে: “তোমাদের মধ্যে কিছু লোক যে কদর্য কাজ করেছে সে বিষয়ে তোমাদের বক্তব্য কি? 13 তোমরা ঐ গিবিয়ার মন্দ লোকদের আমাদের কাছে পাঠিয়ে দাও। আমরা তাদের ধ্বংস করব। ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে যত মন্দ আছে সব আমরা দূর করব।”
কিন্তু বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর লোকরা দূতদের কথায় কান দিল না। বার্তাবাহকেরা ছিল সম্পর্কে তাদেরই আত্মীয়। তারাও ছিল ইস্রায়েলীয়। 14 বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর লোকরা তাদের শহরগুলি ছেড়ে গিবিয়ায় চলে গেল। তারা ইস্রায়েলের অন্য পরিবারগোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ করবে বলে গিবিয়ায় গেল। 15 বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর লোকরা মোট 26,000 জন সৈন্য পেল। যুদ্ধের জন্য বেশ দক্ষ সৈন্য তারা। তাছাড়া গিবিয়া থেকে পেল আরো 700 জন দক্ষ সৈন্য। 16 এছাড়াও তারা আরো 700 জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈন্য পেয়েছিল। তারা ছিল সব বাঁ-হাতি সৈন্য। এমনকি তারা একটা চুল লক্ষ্য করে অব্যর্থভাবে পাথর ছুঁড়তে পারত এবং লক্ষ্যভ্রষ্ট হত না।
17 ইস্রায়েলের সমস্ত পরিবারগোষ্ঠী বিন্যামীনদের বাদ দিয়ে সংগ্রহ করল মোট 400,000 যোদ্ধা। তাদের সকলের হাতে তরবারি। সকলেই যুদ্ধ বিদ্যায় সুশিক্ষিত। 18 ইস্রায়েলীয়রা বৈথেল শহরে গিয়ে ঈশ্বরকে জিজ্ঞাসা করল, “কোন পরিবারগোষ্ঠী সবচেয়ে আগে বিন্যামীনদের আক্রমণ করবে?”
প্রভু বললেন, “যিহূদার পরিবারগোষ্ঠী প্রথমে যাবে।”
19 পরদিন সকালে ইস্রায়েলবাসীরা ঘুম থেকে উঠল। গিবিয়ার কাছে তারা তাঁবু গাড়ল। 20 তারপর ইস্রায়েলের সৈন্যবাহিনী বিন্যামীন সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য বেরিয়ে পড়লো। গিবিয়াতে ইস্রায়েল সেনাবাহিনী বিন্যামীন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল। 21 গিবিয়া থেকে বিন্যামীনবাহিনী বার হয়ে এলো। সেদিন তারা ইস্রায়েলবাহিনীর 22,000 সৈন্যকে হত্যা করল।
22-23 ইস্রায়েলবাসীরা প্রভুর কাছে গেল। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ক্রন্দন করল। প্রভুকে তারা জিজ্ঞাসা করল, “আমরা কি আবার বিন্যামীনদের সঙ্গে যুদ্ধ করব? ওরা তো আমাদের আত্মীয়স্বজন।”
প্রভু উত্তর দিলেন, “যাও, তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর।” ইস্রায়েলের লোকরা এ ওকে উৎসাহ দিতে লাগল। তারপর প্রথম দিনের মতো এবারও তারা যুদ্ধ করতে বেরিয়ে পড়ল।
24 এবার ইস্রায়েল বাহিনী বিন্যামীন বাহিনীর কাছাকাছি এসে পড়ল। এটা ছিল যুদ্ধের দ্বিতীয় দিন। 25 বিন্যামীন বাহিনী গিবিয়া থেকে বেরিয়ে এসে দ্বিতীয় দিনে ইস্রায়েল বাহিনীকে আক্রমণ করল। এবারে বিন্যামীন সৈন্যরা আরও 18,000 ইস্রায়েল সৈন্যকে হত্যা করল। এইসব ইস্রায়েলীয় সৈন্য ছিল প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত।
26 তখন সমস্ত ইস্রায়েলবাসীরা বৈথেল শহরে গেল। সেখানে তারা সবাই বসে পড়ে প্রভুর সামনে কাঁদতে লাগল। সারাদিন তারা কিছু খেল না। এইভাবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কেটে গেল। তারা প্রভুকে হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য উৎসর্গ করল। 27 ইস্রায়েলের লোকরা প্রভুকে একটা প্রশ্ন করল। (সেকালে ঈশ্বরের সাক্ষ্যসিন্দুক ছিল বৈথেলে। 28 পীনহস নামে একজন যাজক সেখানে ঈশ্বরের সেবা করত। পীনহস ইলিয়াসরের পুত্র। ইলিয়াসর হারোণের পুত্র।) ইস্রায়েলবাসীরা জিজ্ঞাসা করল, “বিন্যামীনের লোকরা আমাদের আত্মীয়। আমরা কি আবার তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব? নাকি যুদ্ধ থামিয়ে দেব?”
প্রভু বললেন, “যাও। আগামীকাল তাদের পরাজিত করতে আমি তোমাদের সাহায্য করব।”
29 তারপর ইস্রায়েলবাহিনী গিবিয়ার সবদিকে কিছু লোককে লুকিয়ে রাখলো। 30 ইস্রায়েল সৈন্যদল তৃতীয় দিন গিবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেল। আগের মতো এবারেও তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। 31 বিন্যামীন সৈন্যবাহিনী গিবিয়া থেকে বেরিয়ে এল ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করতে। ইস্রায়েলবাহিনী তাদের বাধা না দিয়ে সুযোগ দিতে থাকল যেন তারা ওদের পিছু পিছু তাড়া করে। এইভাবে তারা কৌশল করে বিন্যামীনদের শহর থেকে অনেক খানি দূরে বার করে আনল।
বিন্যামীন সৈন্যরা আগের মত এবারও কিছু ইস্রায়েল সৈন্য হত্যা করতে শুরু করল। তারা প্রায় 30 জন ইস্রায়েলীয়কে হত্যা করল। কয়েকজনকে হত্যা করল মাঠে আর কয়েকজনকে হত্যা করল রাস্তায়। একটা রাস্তা গেছে বৈথেলের দিকে। আর একটা গিবিয়ার দিকে। 32 বিন্যামীন সৈন্যরা বলে উঠল, “আগের মত এবারও আমরা জিতছি!”
ইস্রায়েলের লোকরা পালাচ্ছিল, কিন্তু এটা তাদের একটা চালাকি। তারা আসলে ওদের শহর থেকে বার করে রাস্তায় আনতে চাইছিল। 33 সেইমত সকলেই দৌড়াচ্ছিল। তারা বাল্তামর নামে একটা জায়গায় থামল। ইস্রায়েলের কয়েকজন লোক গিবিয়ার পশ্চিম দিকে লুকিয়ে ছিল। এবার তারা বেরিয়ে এসে গিবিয়া আক্রমণ করল। 34 সুশিক্ষিত 10,000 ইস্রায়েলীয় সৈন্য গিবিয়া আক্রমণ করল। জোর লড়াই হল কিন্তু বিন্যামীন সৈন্যরা বুঝতে পারল না তাদের কি হতে চলেছে।
35 প্রভু ইস্রায়েল সৈন্যবাহিনীকে ব্যবহার করে বিন্যামীন সৈন্যদের পরাজিত করলেন। সেদিন ইস্রায়েলের সৈন্যরা 25,100 জন বিন্যামীন সৈন্য হত্যা করেছিল। এই সৈন্যরা সকলেই যুদ্ধবিদ্যায় শিক্ষিত ছিল। 36 এইবার বিন্যামীনরা বুঝতে পারল যে তারা হেরে গেছে।
ইস্রায়েলীয় সৈন্যরা এবার পিছু হটলো। পিছু হটার কারণ হচ্ছে তারা এবার হঠাৎ আক্রমণ করার কৌশল নিয়েছে। গিবিয়ার কাছাকাছি একটা জায়গায় তারা লুকিয়ে রইল। 37 তারপর, যারা লুকিয়ে ছিল তারা গিবিয়া শহরে ঝাঁপিয়ে পড়লো। সেখানে তারা সবদিকে ছড়িয়ে গেল আর শহরে প্রত্যেককে তাদের তরবারি দিয়ে হত্যা করল। 38 আত্মগোপনকারীদের সঙ্গে ইস্রায়েলীয়রা একটা মতলব এঁটেছিল। লুকিয়ে থাকা লোকরা একটি বিশেষ ধরণের সংকেত পাঠাবে। তারা তৈরী করবে ধোঁয়ার মেঘ।
39-41 বিন্যামীন সৈন্যরা কমবেশী 30জন ইস্রায়েল সেনা হত্যা করেছিল। এতেই তারা বলতে লাগল, “আমরা আগের বারের মতো এবারও জিতছি।” কিন্তু তখনই শহর থেকে ধোঁয়ার মেঘ উঠতে লাগলো। বিন্যামীনের লোকরা সেদিকে ঘাড় ফিরিয়ে দেখলো সমস্ত শহরে আগুন লেগেছে। এবার ইস্রায়েলীয়রা আর পেছন ফিরল না, তারা ঘুরে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতে লাগল। বিন্যামীনের লোকরা ভয় পেয়ে গেল। এবার তারা বুঝতে পারলো, কি তাদের অবস্থা।
42 বিন্যামীনের সৈন্যবাহিনী এবার পালাতে লাগলো। মরুভূমির দিকে তারা ছুটলো, কিন্তু তারা যুদ্ধ এড়াতে পারল না। ইস্রায়েলীয়রা শহর থেকে বেরিয়ে এসে তাদের হত্যা করল। 43 ইস্রায়েলীয়রা বিন্যামীনের লোকদের ঘেরাও করে তাদের তাড়িয়ে নিয়ে গেল। তারা তাদের বিশ্রাম নিতে দিল না। গিবিয়ার পূর্ব দিকে ইস্রায়েলীয়রা তাদের হারিয়ে দিল। 44 এই যুদ্ধে 18,000 সাহসী ও শক্তিশালী বিন্যামীন সৈন্য নিহত হল।
45 অবশিষ্ট সৈন্যরা মরুভূমির দিকে ছুটতে লাগলো এবং তারা পৌঁছোল রিম্মোণ শিলা নামক জায়গায়। কিন্তু তাদের মধ্যে 5000 জন বিন্যামীন সৈন্য ইস্রায়েলীয়দের হাতে রাস্তাতেই মারা গেল। তারা ওদের গিদোম পর্যন্ত তাড়া করেছিল। সেখানে ইস্রায়েল সৈন্যবাহিনী আরও 2000 বিন্যামীনের লোকদের হত্যা করল।
46 সেদিন 25,000 বিন্যামীন সৈন্য নিহত হল। তারা সকলেই তরবারি নিয়ে বীরের মতো লড়াই করেছিল। 47 অপরদিকে, 600 জন বিন্যামীনের লোক মরুভূমির দিকে গেল। রিম্মোণ শিলাতে গিয়ে তারা সেখানে চার মাস থেকে গেল। 48 ইস্রায়েলীয়রা বিন্যামীনদের দেশে ফিরে এল। প্রত্যেক শহরে গিয়ে তারা লোকদের হত্যা করল। জন্তু জানোয়ারদেরও তারা রেহাই দিল না। সামনে যা খুঁজে পেল সব তারা ভেঙ্গে চুরে দিল। যত শহর পেল তার সমস্তই তারা জ্বালিয়ে দিল।
বিন্যামীনদের পত্নী সংগ্রহের প্রস্তুতি
21 মিস্পায় ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞা করল: “বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর ঘরে আমরা কেউ আমাদের মেয়েদের বিবাহ দেব না।”
2 ইস্রায়েলীয়রা বৈথেল শহরে গেল। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ঈশ্বরের কাছে বসে রইল। আকুল হয়ে কেঁদে কেঁদে তারা বলল, “হে প্রভু, ইস্রায়েলবাসীদের তুমিই ঈশ্বর। 3 তাহলে এমন বিপদ হল কেন? কেন ইস্রায়েলীয়দের একটা পরিবারগোষ্ঠীকে পাওয়া যাচ্ছে না?”
4 পরদিন ভোরে ইস্রায়েলীয়রা একটা বেদী তৈরী করল। সেই বেদীতে তারা ঈশ্বরের কাছে হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য উৎসর্গ করল। 5 তারপর ইস্রায়েলীয় লোকরা বলল, “ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে এমন কোন পরিবার কি আছে যারা প্রভুর সামনে আমাদের এই প্রার্থনায় আসে নি?” এরকম জিজ্ঞাসার কারণ হচ্ছে তারা বেশ সাংঘাতিক ধরণের একটা প্রতিজ্ঞা করেছিল। তাদের প্রতিজ্ঞা ছিল অন্যান্য পরিবারগোষ্ঠীর সঙ্গে যদি কেউ মিস্পা শহরে যোগ না দেয় তবে তাকে হত্যা করা হবে।
6 ইস্রায়েলীয়রা তাদের আত্মীয় বিন্যামীনদের জন্য দুঃখ বোধ করল। তারা বলল, “আজ ইস্রায়েল থেকে একটি পরিবারগোষ্ঠী পৃথক করা হয়েছে। 7 আমরা প্রভুর কাছে একটি শপথ করেছি, কোন বিন্যামীন পুরুষের সঙ্গে আমরা আমাদের মেয়েদের বিবাহ দেব না। কি করে আমরা নিশ্চিত জানব যে বিন্যামীনদের বিয়ে হচ্ছে?”
8 ইস্রায়েলীয়রা জানতে চাইল, “ইস্রায়েলীয়দের কোন পরিবারগোষ্ঠী এখানে এই মিস্পায় আসে নি? আমরা এখানে প্রভুর সামনে সমবেত হয়েছি। নিশ্চয়ই একটা পরিবার এখানে আসে নি।” তারা দেখল, যাবেশ-গিলিয়দ থেকে কেউই সেখানে আসে নি। 9 ইস্রায়েলীয়রা গুনে দেখল কে কে এসেছে আর কে কে আসে নি। দেখল যাবেশ গিলিয়দ থেকে কেউই সেখানে আসে নি। 10 তারা যাবেশ গিলিয়দে 12,000 সৈন্য পাঠাল। সৈন্যদের তারা বলে দিল, “যাবেশ গিলিয়দে গিয়ে সেখানকার প্রতিটি লোককে তরবারি দিয়ে হত্যা করবে। মেয়েদের আর বাচ্চাদের তোমরা ছেড়ে দেবে না। 11 এ কাজ তোমাদের করতেই হবে। যাবেশ গিলিয়দের প্রত্যেককে তোমরা হত্যা করবে, তাছাড়া যে সব মেয়েদের কারো না কারো সাথে যৌন সম্পর্ক আছে তাদেরও হত্যা করবে। তবে যে সব মেয়ের কোন পুরুষের সঙ্গে এমন সম্পর্ক হয় নি তাদের হত্যা করবে না।” সৈন্যরা তাই করল। 12 ঐ 12,000 সৈন্য যাবেশ গিলিয়দে 400 জন এমন মেয়ের দেখা পেল যারা কোন পুরুষের সঙ্গে এরকম সম্পর্ক স্থাপন করে নি। সৈন্যরা তাদের শীলোর শিবিরে নিয়ে এলো। শীলো কনানদের দেশে অবস্থিত।
13 তারপর ইস্রায়েলীয়রা বিন্যামীন লোকদের কাছে খবর পাঠাল। তারা বিন্যামীনের লোকদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করতে চাইল। বিন্যামীনের লোকরা ছিল রিম্মোণ শিলায়। 14 বিন্যামীনরা তাই শুনে ইস্রায়েলে ফিলে এল। ইস্রায়েলীয়রা তাদের কাছে যাবেশ গিলিয়দের সেই সব মেয়ে দিল যাদের তারা মারে নি। কিন্তু বিন্যামীনদের সংখ্যার তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বেশ কম ছিল।
15 ইস্রায়েলীয়রা বিন্যামীনদের জন্য দুঃখ করল। তাদের দুঃখের কারণ ঈশ্বর বিন্যামীনদের অন্যান্য ইস্রায়েল পরিবারগোষ্ঠী থেকে আলাদা করে দিয়েছেন। 16 ইস্রায়েলীয়দের প্রবীণরা বলল, “বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর মেয়েদের সব হত্যা করা হয়েছে। সুতরাং যে সব বিন্যামীন সন্তান বেঁচে আছে তাদের জন্য কিভাবে পত্নীর ব্যবস্থা করা যায়? 17 যেসব বিন্যামীন সন্তান এখনও বেঁচে রয়েছে তাদের বংশ রক্ষা করার জন্য সন্তান-সন্ততির অবশ্য প্রয়োজন। এটা করতেই হবে, নাহলে ইস্রায়েলীয়দের একটা পরিবারগোষ্ঠী তো একেবারে লোপ পেয়ে যাবে। 18 কিন্তু আমাদের মেয়েদের সঙ্গে তো বিন্যামীন সন্তানদের বিয়ে হতে পারে না। আমরা এই নিয়ে প্রতিশ্রুতি নিয়েছি। আমরা প্রতিশ্রুতি নিয়েছি যে, ‘বিন্যামীনদের ঘরে যে মেয়ে দেবে সে শাপগ্রস্ত হবে।’ 19 তাই আমরা একটা পরিকল্পনা করেছি। শীলো শহরে প্রভুর জন্য এই সময় একটা উৎসব হয়। প্রতি বছরই সেখানে উৎসব পালিত হয়।” (শীলো হচ্ছে বৈথেলের উত্তরে, আর বৈথেল থেকে শিখিমের দিকে যে রাস্তা চলে গেছে তার পূর্বদিকে। তাছাড়া লবোনা শহরের দক্ষিণেও শীলো শহরটা পড়বে।)
20 প্রবীণরা তাদের পরিকল্পনাটি বিন্যামীন সন্তানদের বলল। তারা বলল, “যাও, দ্রাক্ষাক্ষেতে গিয়ে লুকিয়ে পড়। 21 উৎসবের সময় শীলোর যুবতীরা কখন নাচতে আসবে সেদিকে খেয়াল করবে। তারপর যখনই তারা আসবে তখন দ্রাক্ষা ক্ষেতের লুকানো জায়গা থেকে তোমরা বেরিয়ে আসবে। প্রত্যেকেই একটি করে যুবতী ধরে নেবে। তারপর ওদের নিয়ে বিন্যামীনদের দেশে গিয়ে বিয়ে করবে। 22 এবং যদি মেয়েদের পিতা কিংবা ভাইরা আমাদের কাছে নালিশ জানায়, তখন আমরা বলব, ‘বিন্যামীনদের ওপর তোমরা সদয় হও। তারা ঐ মেয়েদের বিয়ে করুক। তারা তোমাদের মেয়েদের নিয়েছে, তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে নি। তারা মেয়েদের গ্রহণ করেছে। সুতরাং ঈশ্বরের কাছে তোমরা যে প্রতিশ্রুতি করেছিলে তা ভঙ্গ করো নি। তোমরা প্রতিশ্রুতি করেছিলে যে ঐ মেয়েদের সঙ্গে ছেলেদের বিয়ে দেবে না। বিন্যামীনদের তোমরা মেয়ে দাও নি। বরং তারাই তোমাদের কাছ থেকে মেয়েদের নিয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ কর নি।’”
23 এইভাবেই বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীরা কাজ করল। যুবতীরা যখন নাচছিল, প্রত্যেক পুরুষ তাদের একজন করে নিয়ে নিল। তাদের তুলে নিয়ে তারা বিয়ে করল। নিজেদের দেশে তারা ফিরে গেল। বিন্যামীনরা আবার সেই দেশে শহরগুলি গড়ল এবং সেই শহরগুলিতে বসবাস করতে লাগল। 24 তারপর ইস্রায়েলীয়রা ঘরে ফিরে গেল। তারা প্রত্যেকে নিজের নিজের দেশে ও পরিবারগোষ্ঠীর কাছে ফিরে গেল।
25 সেই সময় ইস্রায়েলীয়দের কোন রাজা ছিল না। তাই যে যা ঠিক মনে করত তাই করত।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International