Chronological
3 1-2 প্রভু ইস্রায়েল থেকে অন্যান্য জাতির সমস্ত লোকদের সরিয়ে দিলেন না। তিনি ইস্রায়েলীয়দের পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। এই সময়, কোন ইস্রায়েলবাসী কনান দেশ দখল করতে কোন যুদ্ধ করে নি। প্রভু এদেশে অন্যান্য বিদেশীদের থাকতে অনুমতি দিয়েছিলেন। (যারা কনান দখলের যুদ্ধগুলিতে ভাগ নেয়নি সেই ইস্রায়েলবাসীদের, তিনি কেমন করে যুদ্ধ করতে হয় সে শিক্ষা দেবার জন্যই এরকম ব্যবস্থা করেছিলেন।) এদেশে তিনি যেসব জাতিকে থাকতে দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিল: 3 পলেষ্টীয় সম্প্রদায়ের পাঁচ জন শাসক, সমস্ত কনান জাতি, সীদোনীয় লোকরা এবং হিব্বীয় লোকরা থাকত বাল্-হর্ম্মোণ পর্বত থেকে লেবো-হমাত পর্যন্ত ছড়ানো লিবানোনের পর্বতগুলিতে। 4 ইস্রায়েলবাসীদের পরীক্ষা করার জন্য প্রভু তাদের থাকতে দিয়েছিলেন। তারা তাঁর আদেশ পালন করে কি না তিনি তা দেখতে চেয়েছিলেন। মোশির মাধ্যমে প্রভু সেইসব আজ্ঞা তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলেন।
5 ইস্রায়েলের লোকরা কনানীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয়, যিবূষীয় এবং ইমোরীয়দের সঙ্গে পাশাপাশি বাস করত। 6 তারা এইসব সম্প্রদায়ের মেয়েদের বিয়ে করত। তাদের মেয়েরা তাদের ছেলেদের বিয়ে করতে শুরু করল। ইস্রায়েলীয়রা ঐ সমস্ত লোকদের দেবতাদের পূজা করতে শুরু করল।
প্রথম বিচারক, অৎনীয়েল
7 প্রভুর দৃষ্টিতে ইস্রায়েলের লোকরা মন্দ কাজ করেছিল। তারা প্রভু, তাদের ঈশ্বরকে ভুলে গিয়ে বাল এবং আশেরার মূর্ত্তির পূজা করেছিল। 8 প্রভু তাদের ওপর ক্রুদ্ধ হলেন। তিনি অরাম নহরয়িমের রাজা কূশন-রিশিয়াথয়িমকে ইস্রায়েলীয়দের হারিয়ে তাদের শাসন করবার জন্য পাঠিয়ে ছিলেন। ইস্রায়েলীয়রা আট বছর সেই রাজার অধীনে ছিল। 9 কিন্তু ইস্রায়েলীয়রা প্রভুর কাছে সাহায্যের জন্য কাঁদল। তখন প্রভু কালেবের কনিষ্ট ভ্রাতা কনসের পুত্র অৎনীয়েলকে তাদের রক্ষার জন্য পাঠালেন। অৎনীয়েল ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করলেন। 10 প্রভুর আত্মা অৎনীয়েলের ওপর এল। তিনি ইস্রায়েলীয়দের বিচারক হলেন। যুদ্ধে তাদের নেতৃত্ব দিলেন। প্রভুর সাহায্যে অৎনীয়েল অরামের রাজা কুশন-রিশিয়াথয়িমকে পরাজিত করলেন। 11 এরপর 40 বছর ধরে দেশে শান্তি বজায় ছিল। এই অবস্থা ছিল কনসের পুত্র অৎনীয়েলের মৃত্যু পর্যন্ত।
বিচারক এহূদ
12 আবার ইস্রায়েলের লোকরা সেসব কাজ করল যা প্রভুর বিবেচনায় মন্দ। সেইজন্য তিনি মোয়াবের রাজা ইগ্লোনকে ইস্রায়েলীয়দের পরাজিত করবার জন্য শক্তি দিলেন। 13 ইগ্লোন অম্মোন এবং অমালেক সম্প্রদায়ের লোকদের কাছ থেকে সাহায্য পেল। তাদের নিয়ে ইগ্লোন ইস্রায়েলীয়দের আক্রমণ করল। ইগ্লোন তাদের হারিয়ে খেজুর গাছের শহর বা জেরিকো থেকে তাড়িয়ে দিল। 14 মোয়াবের রাজা ইগ্লোন 18 বছর ধরে ইস্রায়েলীয়দের শাসন করেছিল।
15 ইস্রায়েলীয়রা প্রভুর কাছে কেঁদে পড়ল। তিনি তখন তাদের বাঁচানোর জন্য এহূদ নামে একজন লোককে পাঠালেন। এহূদ ছিল বাঁহাতি। তার পিতার নাম ছিল গেরা, বিন্যামীন বংশীয় লোক। ইস্রায়েলবাসীরা মোয়াবের রাজা ইগ্লোনকে উপহার দেবার জন্য এহূদকে পাঠালেন। 16 এহূদ নিজের জন্য একটি তরবারি তৈরী করল। তরবারিটির দুদিকেই ধার ছিল আর সেটা ছিল প্রায় 18 ইঞ্চি লম্বা। এহূদ তরবারিটি ডানদিকের উরুতে বেঁধে তার পোশাকের নীচে লুকিয়ে রাখল।
17 তারপর সে মোয়াবের রাজা ইগ্লোনের কাছে এসে উপহার দিল। ইগ্লোন ছিল মোটাসোটা লোক। 18 উপহার দেবার পর এহূদ সঙ্গের লোকদের বাড়ী পাঠিয়ে দিল। এরা উপহার বয়ে নিয়ে তার সঙ্গে এসেছিল। 19 তারা রাজার প্রাসাদ ছেড়ে চলে গেল। এহূদ গিল্গল শহরে শিলা মূর্ত্তিগুলোর কাছ থেকে ফিরে এসে ইগ্লোনকে বলল, “রাজা তোমার জন্য একটা গোপন খবর আছে।”
রাজা বলল “চুপ।” তারপর সে ঘর থেকে ভৃত্যদের সরিয়ে দিল। 20 এহূদ রাজা ইগ্লোনের কাছে এসেছিল। ইগ্লোন তখন গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদের উঁচুতলার একটা ঘরে একেবারে একা।
তারপর এহূদ রাজাকে বলল, “তোমার জন্য ঈশ্বরের একটা বার্তা আছে।” শুনেই রাজা সিংহাসন থেকে উঠে এহূদের কাছ ঘেঁষে দাঁড়াল। 21 আর ঠিক এই সময় এহূদ বাঁ হাত দিয়ে ডান উরু থেকে তরবারি বার করে রাজার পেটে বিঁধিয়ে দিল। 22 রাজার পেটের ভেতর তরবারির বাঁট শুদ্ধ ঢুকে গেল। রাজার চর্বিতে সেটা পুরোপুরি ঢুকে গেল। এহূদ রাজার পেটেই তরবারিটা রেখে দিল। তরবারি বিদ্ধ হয়ে রাজা ইগ্লোন মলত্যাগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল এবং মল নির্গত হলো।
23 এহূদ ঘর থেকে বেরিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। 24 এহূদ চলে যাবার পর ভৃত্যরা ফিরে এলো। তারা দেখল ঘরের দরজা বন্ধ। তাই তারা নিজেরা বলাবলি করল, “রাজা নিশ্চয়ই ঘরের মধ্যে মলমূত্র ত্যাগ করছেন।” 25 তারা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল। কিন্তু রাজা উপরের ঘরের দরজা খুললেন না। এবং শেষ পর্যন্ত তারা ভয় পেয়ে গেল। চাবি নিয়ে তারা দরজা খুলে দেখল রাজা মেঝের উপর মরে পড়ে রয়েছেন।
26 ভৃত্যরা যখন রাজার জন্য অপেক্ষা করছিল, তখন এহূদ পালিয়ে যাবার যথেষ্ট সময় পেয়েছিল। সে মূর্ত্তিগুলোর পাশ দিয়ে যেতে যেতে সিয়ীরার দিকে পালিয়ে গেল। 27 সে সিয়ীরায় পৌঁছে ইফ্রয়িমের পাহাড়ী অঞ্চলে গিয়ে শিঙা বাজাল। ইস্রায়েলবাসীরা শিঙার শব্দ শুনে পাহাড় থেকে নেমে এল। এহূদ তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল। 28 এহূদ বলল, “আমাকে অনুসরণ কর। প্রভু আমাদের শত্রু মোয়াবের লোকদের পরাজিত করতে শক্তি দিয়েছেন।”
তাই ইস্রায়েলবাসীরা এহূদকে অনুসরণ করল। তারা সেইসব জায়গা দখল করল যেখান থেকে সহজেই যর্দন নদী পেরনো যায়। সেই সব জায়গা মোয়াবের দিকে গিয়েছে। তারা কাউকে যর্দন নদী পেরোতে দিল না। 29 তারা মোয়াবের 10,000 সাহসী ও শক্তিশালী লোককে হত্যা করল। তাদের কেউ পালাতে পারে নি। 30 সেদিন থেকে ইস্রায়েলীয়রা মোয়াবের লোকদের শাসন করতে লাগল। সে দেশে 80 বছর শান্তি ছিল।
বিচারক শম্গর
31 এহূদের পর আরও একজন লোক ইস্রায়েলবাসীদের বাঁচিয়েছিল। তার নাম অনাতের পুত্র শম্গর। শম্গর একটা গরু তাড়ানোর লাঠি দিয়ে 600 জল পলেষ্টীয়কে হত্যা করেছিল।
মহিলা বিচারক দবোরা
4 এহূদের মৃত্যুর পর, লোকরা আবার যে সব কাজ প্রভুর বিবেচনায় মন্দ তাই করলো। 2 তাই প্রভু কনানের রাজা যাবীনের কাছে ইস্রায়েলীয়দের পরাজিত হতে দিলেন। যাবীন হরোশৎ শহরে রাজত্ব করত। তার সৈন্যবাহিনীর প্রধান ছিল সীষরা। সীষরা হরোশৎ হাগোয়িম শহরে বাস করত। 3 সীষরার 900 লোহার রথ ছিল। সীষরা 20 বছর ইস্রায়েলবাসীদের ওপর অত্যন্ত নিষ্ঠুর ছিল এবং সে তাদের উৎপীড়ন করেছিল। এর ফলে তারা সাহায্যের জন্য প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল।
4 দবোরা নামের একজন ভাববাদিনী ছিলেন। তাঁর স্বামীর নাম ছিল লপ্পীদোত। সেই দবোরা ইস্রায়েলের বিচার করতেন। 5 একদিন দবোরা খেজুর গাছের নীচে বসে ছিলেন। এই খেজুর গাছের নাম দবোরার খেজুর গাছ। ইস্রায়েলের লোকরা তাঁর কাছে এল। সীষরাকে নিয়ে কি করা যায় সে বিষয়ে তারা তাঁর পরামর্শ চাইল। দবোবার খেজুর গাছটি ছিল ইফ্রয়িমের পাহাড়ি অঞ্চলে রামা আর বৈথেল শহরের মাঝখানে। 6 দবোরা বারক নামের একজন লোককে খবর পাঠালেন। তিনি তাকে দেখা করতে বললেন। বারক, অবীনোয়মের পুত্র থাকত নপ্তালির কেদশ শহরে। বারক দেখা করতে এলে দবোরা তাকে বললেন, “ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বর তোমাকে আজ্ঞা দিচ্ছেন; ‘নপ্তালি এবং সবূলুন পরিবারগোষ্ঠীর 10,000 লোক জোগাড় কর এবং তাদের তাবোর পর্বতে নিয়ে যাও। 7 রাজা যাবীনের সেনাপতি সীষরা যাতে তোমার কাছে আসে আমি তার ব্যবস্থা করব। আমি তাকে তার রথ আর সৈন্যদল নিয়ে কীশোন নদীর ধারে পাঠিয়ে দেব। তারপর তোমাদের কাছে সে হেরে যাবে। এ ব্যাপারে আমি হব তোমাদের সহায়।’”
8 বারক দবোরাকে বলল, “আপনি আমার সঙ্গে গেলে যাব, যা বলবেন করব। কিন্তু আপনি না গেলে আমিও যাবো না।”
9 দবোরা বললেন, “আমি নিশ্চয়ই যাব। কিন্তু তোমার মনোভাবের জন্য সীষরাকে পরাজিত করবার সম্মান তোমার হবে না। প্রভু একজন মহিলাকেই সীষরাকে পরাজিত করবার জন্য পাঠাবেন।”
দবোরা বারকের সঙ্গে কেদশ শহরে গেলেন। 10 কেদশে বারক সবূলূন এবং নপ্তালি পরিবারগোষ্ঠীকে ডেকে 10,000 লোককে জড়ো করে তাঁর পেছন পেছন যেতে বললেন। দবোরাও বারকের সঙ্গে গেলেন।
11 এখন, হেবর নামে কেনীয় সম্প্রদায়ের একটি লোক ছিল। সে অন্য কেনীয়দের ত্যাগ করেছিল। কেনীয়রা ছিল মোশির শ্বশুর হোবরের উত্তরপুরুষ। হেবর ওক গাছের পাশে সানন্নীম নামে একটি জায়গায় বাস করত। সানন্নীম কেদশ শহরের খুব কাছেই অবস্থিত।
12 সীষরাকে একজন খবর দিল, অবীনোয়মের পুত্র বারক তাবোর পর্বতে রয়েছে। 13 খবর শুনে সীষরা 900 লোহার রথ আর সমস্ত লোকদের নিয়ে হরোশত্ হাগোয়িম শহর থেকে কীশোন নদীর দিকে রওনা হল।
14 দবোরা তখন বারককে বললেন, “আজ সীষরাকে পরাজিত করবার জন্য প্রভু তোমার সহায় হবেন। প্রভু যে ইতিমধ্যেই তোমার জন্য রাস্তা ফাঁকা করে দিয়েছেন তা তুমি নিশ্চয়ই জানো।” তাই বারক 10,000 লোক নিয়ে তাবোর পর্বত থেকে নেমে এল। 15 লোকজন নিয়ে বারক এবার সীষরাকে আক্রমণ করল। যুদ্ধের সময় প্রভু সীষরা আর তার রথ, লোকজন সবকিছুর মধ্যে একটা তালগোল পাকিয়ে দিলেন। লোকজন সব কি যে করবে বুঝতে পারছিল না। এই সুযোগে বারক ও তার সৈন্যবাহিনী সীষরার বাহিনীকে হারিয়ে দিল। কিন্তু সীষরা রথ ফেলে দিয়ে পায়ে হেঁটে পালিয়ে গেল। 16 বারক যুদ্ধ চালিয়ে গেল। সে আর তার সৈন্যরা রথ আর বাহিনীকে হরোশৎ হাগোয়িম পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে গেল। তারা সব লোককে তরবারি দিয়ে কেটে ফেলল। একজনও বেঁচে রইল না।
17 কিন্তু সীষরা পালিয়ে গেল। সে একটা তাঁবুতে এলো। সেই তাঁবুতে যায়েল নামে একজন স্ত্রীলোক বাস করত। তার স্বামীর নাম ছির হেবর। হেবর ছিল কেনীয় সম্প্রদায়ের লোক। তার পরিবার হাৎসোরের রাজা যাবীনের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করত। সীষরা যায়েলের তাঁবুর দিকে ছুটে যাচ্ছিল। 18 সীষরাকে ছুটে আসতে দেখে যায়েল তার তাঁবু থেকে বেরিয়ে তার সঙ্গে দেখা করলো। যায়েল সীষরাকে বলল, “আমার তাঁবুতে আসুন। কোন ভয় নেই।” সীষরা যায়েলের তাঁবুতে ঢুকলো। যায়েল একটা কম্বল দিয়ে তাকে ঢেকে দিলো।
19 সীষরা বলল, “আমি তৃষ্ণার্ত। দয়া করে আমায় এক গ্লাস জল দিন।” একটা চামড়ার বোতলে যায়েল দুধ রাখত। সীষরাকে দুধ খাইয়ে যায়েল আবার তাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দিল।
20 সীষরা যায়েলকে বলল, “তাঁবুর দরজার পাশে আপনি দাঁড়িয়ে থাকবেন। যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে, ভেতরে কেউ আছে কি না, বলবেন ‘না কেউ নেই।’”
21 কিন্তু যায়েল তাঁবু খাটানোর একটা গোঁজ আর একটা হাতুড়ি পেয়ে গেল। তারপর চুপিচুপি সীষরার কাছে গেল। সীষরা খুবই ক্লান্ত ছিল, তাই সে ঘুমাচ্ছিল। যায়েল গোঁজটা সীষরার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে দিল। গোঁজটা তার মাথার মধ্যে ঢুকে বেরিয়ে এসে মাটিতে ঢুকে গেল। সীষরা মারা গেল।
22 আর ঠিক তখনই বারক সীষরার খোঁজে যায়েলের তাঁবুর কাছে এলো। যায়েল তাঁবুর বাইরে বেরিয়ে বারককে বলল, “ভেতরে আসুন। যাকে খুঁজছেন তাকে দেখাচ্ছি।” বারক যায়েলের সঙ্গে ভেতরে এল। দেখল সীষরা মরে মাটিতে পড়ে আছে। তার মাথার ভেতর গোঁজ ঢুকে আছে।
23 সেদিন ঈশ্বর ইস্রায়েলের লোকদের হয়ে কনানদের রাজা যাবীনকে পরাজিত করলেন। 24 ইস্রায়েলবাসীরা ক্রমে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠলো, যে পর্যন্ত না তারা কনানদের রাজা যাবীনকে পরাজিত করল। শেষে তারা যাবীনকে বিনষ্ট করল।
দবোরার গান
5 যেদিন ইস্রায়েলবাসীরা সীষরাকে পরাজিত করলো, সে দিন দবোরা আর অবীনোযমের পুত্র বারক এই গানটি গেয়েছিল:
2 “ইস্রায়েলের লোকরা যুদ্ধের প্রস্তুতি করল।
তারা স্বেচ্ছায় যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে চাইল।
প্রভুর নাম ধন্য হোক্।
3 “রাজারা সকলে শোন,
শাসকরা মন দিয়ে শোন।
আমি, আমিই প্রভুর উদ্দেশ্যে গান গাইব,
ইস্রায়েলের ঈশ্বর ও প্রভুর উদ্দেশ্যে গানটি গাইব।
4 “হে প্রভু, তুমি সেয়ীর থেকে এসেছিলে।
তোমার অভিযান ইদোম দেশ থেকে শুরু হয়েছিল।
তোমার পদপাতে কেঁপে উঠেছিল পৃথিবী।
আকাশ থেকে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিল।
মেঘরা ঝরিয়ে ছিল জল।
5 প্রভু, সীনয় পর্বতের ঈশ্বরের সামনে,
প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সামনে পর্বতমালা কেঁপে উঠেছিল।
6 “অনাতের পুত্র শম্গর
এবং যায়েলের সময়ে সমস্ত রাজপথ জনমানবহীন।
বণিকরা এবং পথিকরা অন্য পথ দিয়ে যাতায়াত করত।
7 “সেখানে কোন সৈন্য ছিল না।
দবোরা যতদিন তুমি ইস্রায়েলের মা হয়ে আসোনি
ততদিন ইস্রায়েলে কোন সৈন্য ছিল না।
8 “ঈশ্বর নতুন নেতাদের নির্বাচন করেছিলেন।
তারা নগরের প্রবেশদ্বারে যুদ্ধে রত ছিল।
ইস্রায়েলে 40,000 সৈন্য ছিল।
তাদের মধ্যে কেউ একটাও ঢাল অথবা বর্শা খুঁজে পায় নি।
9 “আমার হৃদয় ইস্রায়েলের সেই সেনাপতিদের সঙ্গে রয়েছে,
যারা স্বেচ্ছায় যুদ্ধে গিয়েছিল।
প্রভুর নাম ধন্য হোক্।
10 “তোমরা যারা সাদা গর্দভের পিঠে চড়ে
কম্বলের জিনে বসে আছো
এবং যারা রাস্তায় হাঁটো,
তারা এ সম্বন্ধে গান কর।
11 পশুরা যেখানে জল পান করে
সেই চৌবাচ্চায় শুনি রণদামামার মহাসঙ্গীত ধ্বনি।
লোকরা গায় প্রভুর বিজয়গীতি,
ইস্রায়েলে তাঁর সৈন্যের জয় গৌরব গীতি
যখন তাঁরই বাহিনী নগরদ্বারে করেছে যুদ্ধ আর তাদেরই কেবল শোন জয় জয়কার।
12 “জাগো হে মা দবোরা,
জেগে ওঠো, গাও গান!
বারক তুমিও জাগো।
হে অবীনোয়মের পুত্র তোমার শত্রুদিগকে বন্দী করো।
13 “তারপর তিনি ইস্রায়েলে যারা বেঁচে আছে তাদের শক্তিমান লোকদের বিজয়ী করলেন।
প্রভু আমায় যোদ্ধাদের ওপর শাসন করতে দিলেন।
14 “অমালেকদের পাহাড়ী দেশ হতে
ইফ্রয়িমের লোকরা এসেছিল।
হে বিন্যামীন, তারা তোমায়
ও তোমার লোকদের
এবং মাখীর পরিবার থেকে আসা অধ্যক্ষগণকে অনুসরণ করেছিল।
হে সবূলূন তোমার নেতারা
সেনাপতির দণ্ড নিয়ে এসেছিল।
15 ইষাখরের নেতারা দবোরার সঙ্গে ছিল।
ইষাখরের লোকরা বারকের প্রতি বিশ্বস্ত ছিল।
দেখ, ঐ লোকরা কুচকাওয়াজ করে উপত্যকায় নামছে।
“রূবেণ, তোমার সেনাদলে প্রচুর সাহসী সৈন্য আছে।
16 তবে কেন তোমাদের মেষপালের আশেপাশে বসে রয়েছ?
রূবেণ তোমার সাহসী সেনারা যুদ্ধ সম্পর্কে এত চিন্তা করেছিল।
তবু কেন তারা বাড়ীতে বসে মেষপালকের বাঁশীর বাজনা শোনে?
17 যর্দন নদীর ওপারে গিলিয়দবাসী তাঁবুতেই বসে ছিল।
এবং তোমার দান এর লোকরা,
কেন জাহাজের আশেপাশে বসেছিল?
আশের গোষ্ঠী সাগরের তীরে নিরাপদ বন্দরে
মনের মতন করে তাঁবু গেড়েছিল।
18 “কিন্তু সমস্ত সবূলূনবাসী, নপ্তালি অধিবাসী পাহাড়ের গায়ে জীবনের বাজী রেখে প্রত্যেকে মহাসংগ্রামে মেতেছিল।
19 কনানের রাজারা যুদ্ধে এলেন,
তানক শহরে মগিদ্দোর জলের ধারে যুদ্ধ চলল,
তবু কোন সম্পদ না নিয়ে তাঁরা ঘরে ফিরলেন।
20 আকাশের যত তারা, নিজ নিজ পথ হতে
মেতেছিল যুদ্ধে সেদিন সীষরার বিরুদ্ধে।
21 প্রাচীন কালের কীশন নদী
সীষরার সৈন্যবাহিনীকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
হে আমার আত্মা, শক্তির সঙ্গে বেরিয়ে এস।
22 অশ্ব ক্ষুরের আঘাতে মাটি কেঁপে ওঠে।
সীষরার পরাক্রমী অশ্বরা সব ছুটে যাও, ছুটে যাও।
23 “প্রভুর দূত বলল,
মেরোস শহরকে অভিশাপ দাও।
তার শহরবাসীদের অভিশাপ দাও।
কারণ তারা সৈন্যবাহিনী নিয়ে
প্রভুকে সাহায্য করতে আসে নি।”
24 কেনীয় হেবরের পত্নী—যায়েল তার নাম।
সর্বোত্তমা মহীয়সী নারী, প্রণাম তারে প্রণাম।
25 সীষরা চাইল জল;
জল নয়, যায়েল তাকে দুধের পাত্র এগিয়ে দিল।
রাজারই পক্ষে মানায় তেমন পাত্র।
তাতে ক্ষীর ননী সাজিয়ে দিল যায়েল।
26 যায়েল তার হাত বাড়ালো, তাঁবু খাটানোর গোঁজ হাতে পেলো।
ডান হাত বাড়ালে কর্মকারের হাতুড়ি উঠে এলো।
তারপর সে সীষরার মস্তকে আঘাত হানল।
সে হাতুড়ির আঘাতে তার কপালের দুই পাশের মধ্য দিয়ে একটা ছিদ্র করল।
27 যায়েলের পায়ে মাথা গুঁজে দিয়ে
পড়ে গেল সীষরা।
ভূতলশায়িত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল
এক চরম বিপর্যয়।
28 “সীষরার মা জানালা থেকে উঁকি দেয়।
সীষরার মা পর্দা সরিয়ে তাকায় আর কাঁদে,
‘সীষরার রথ ফিরতে দেরী করে কেন?
কেন আমি এখন অবধি তার মালগাড়ীর শব্দ শুনছি না?’
29 “তার প্রজ্ঞাবতী দাসী উত্তর দিল,
ব্যাকুলা মায়ের দেখ এই দুর্গতি।
30 দাসীটি বলল, ‘আমি নিশ্চিত তারা যুদ্ধে জিতেছে,
এবং এখন তারা তাদের লুটের প্রচুর দ্রব্যসামগ্রী
নিজেদের মধ্যে ভাগ করছে।
প্রত্যেক সৈন্য নেবে দু একটি করে রমণী
এবং বিজয়ী সীষরা হয়তো পরবার জন্য
দু-একটি রঙীন সুতোর কাজ করা পোশাক পাবে।’
31 “ওগো প্রভু, যেন এভাবেই মরে তোমার শত্রুরা।
যারা তোমায় ভালবাসে তারা যেন প্রভাত সূর্যসম শক্তি অর্জন করে।”
এইভাবেই 40 বছর সে দেশে শান্তি বিরাজ করছিল।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International