Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
যাত্রা 7-9

প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “আমি তোমাকে ফরৌণের কাছে একজন ঈশ্বর করে তুলেছি। আর হারোণ, তোমার ভাই হবে তোমার ভাববাদী। তোমার ভাই হারোণকে আমার সমস্ত আদেশগুলো বলো। তাহলে হারোণ রাজাকে আমার কথাগুলো জানাবে। ফরৌণ ইস্রায়েলীয়দের তার দেশ থেকে চলে যেতে অনুমতি দেবে। কিন্তু আমি ফরৌণকে জেদী করে তুলব। তাই সে তোমাদের কথা মানবে না। তখন আমি নিজেকে প্রমাণের উদ্দেশ্যে মিশরে নানারকম অলৌকিক অথবা অদ্ভুত কাজ করবে। তবুও সে তোমাদের কথা শুনবে না। তখন আমি মিশরকে কঠিন শাস্তি দেব এবং আমি মিশর থেকে আমার লোকদের বাইরে বের করে আনব। যখন আমি তাদের বিরোধিতা করব তখন মিশরের লোকরাও জানতে পারবে যে আমিই হলাম প্রভু। সেই মুহুর্তে আমি আমার লোকদের মিশরীয়দের দেশ থেকে বের করে আনব।”

প্রভু তাদের যা বলেছিলেন মোশি এবং হারোণ তা মেনে চলেছিল। যখন তারা ফরৌণের সঙ্গে কথা বলেছিল সেই সময় মোশির বয়স ছিল 80 এবং হারোণের বয়স ছিল 83 বছর।

মোশির পথ চলার লাঠি সাপে পরিণত হল

মোশি এবং হারোণকে প্রভু বললেন, “ফরৌণ তোমাদের শক্তির পরিচয়ের প্রমাণ হিসাবে কোনও অলৌকিক কাজ ঘটিয়ে দেখাতে বলবে। তখন হারোণকে বলবে তোমার পথ চলার লাঠিটি মাটিতে ছুঁড়ে ফেলতে। ফরৌণের চোখের সামনে মাটিতে পড়ে থাকা ঐ লাঠি নিমেষের মধ্যে সাপে পরিণত হবে।”

10 তাই মোশি এবং হারোণ প্রভুর কথামতো ফরৌণের কাছে গেল। হারোণ তার সামনে লাঠিটি মাটিতে ছুঁড়ে ফেলেছিল। ফরৌণ এবং তার সভাসদদের চোখের সামনেই লাঠি সাপের রূপ নিল।

11 রাজা এই ঘটনা দেখে তার জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি ও যাদুকরদের ডাকলেন। রাজার নিজস্ব যাদুকররা তাদের মায়াবলে হারোণের মতো তাদের লাঠিটিও সাপে পরিণত করে দেখাল। 12 সেইসব যাদুকররাও নিজের নিজের হাতের লাঠিকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে মুহুর্তে লাঠিগুলিকে সাপে রূপান্তরিত করে দেখাল। কিন্তু হারোণের লাঠি তাদের লাঠিগুলোকে গ্রাস করে নিল। 13 তবুও ফরৌণ উদ্ধত হয়ে থাকলেন। প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী রাজা মোশি এবং হারোণের কথায় কান দিলেন না।

জল রক্তে পরিণত হল

14 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “ফরৌণ লোকদের ছেড়ে না দেবার জেদ ধরে রইল। 15 সকালে ফরৌণ নদীর দিকে যায়। তুমিও তার সঙ্গে দেখা করার জন্য নীল নদের তীরে দাঁড়াবে। সাপে পরিণত হয় ঐ লাঠিকে সঙ্গে নেবে। 16 ফরৌণকে বলবে: ‘প্রভু, ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর আমাকে পাঠিয়েছেন। আমায় আপনাকে বলতে বলেছেন যে তাঁর লোকদের যেন তাঁর উপাসনার জন্য মরুপ্রান্তরে যেতে দেওয়া হয়। এখনও পর্যন্ত অবশ্য আপনি প্রভুর কথা শোনেন নি। 17 তাই প্রভু আপনার সম্মুখে নিজের স্বরূপ প্রমাণের উদ্দেশ্যে কিছু কাণ্ড ঘটাবেন। এবার দেখুন আমি আমার পথ চলার লাঠি দিয়ে নীল নদের জলে আঘাত করব এবং সঙ্গে সঙ্গে নদীর জল রক্তে পরিণত হবে। 18 নদীর সমস্ত মাছ মারা যাবে এবং নদীর জলে দুর্গন্ধ ছড়াবে। ফলে মিশরীয়রা আর এই নদীর জল পান করতে পারবে না।’”

19 প্রভু মোশিকে বললেন, “হারোণকে বলো এই লাঠি নিয়ে সে যেন মিশরের সমস্ত জলাশয়, নদী, খাল, বিল, হ্রদ প্রত্যেকটি জায়গার জলে স্পর্শ করে। লাঠির স্পর্শে সমস্ত জলাশয়ের জল রক্তে পরিণত হবে। এমনকি কাঠ ও পাথরের পাত্রে সংগ্রহ করে রাখা পানীয় জলও রক্তে পরিণত হবে।”

20 সুতরাং মোশি এবং হারোণ প্রভুর আদেশ কার্যকর করল। হারোণ ফরৌণ ও তার সভাসদগণের সামনেই তার হাতে লাঠি উঁচিয়ে ধরে নীল নদের জলে আঘাত করল। আর সঙ্গে সঙ্গে নদীর জল রক্তে পরিণত হল। 21 নদীর সমস্ত মাছ মারা গেল এবং নদীর জলে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করল। ফলে মিশরীয়রা আর সেই নদীর জল পান করতে পারল না। মিশরের সমস্ত জলাধারের জলই রক্তে পরিণত হল।

22 হারোণ ও মোশির মতো রাজার যাদুকররাও তাদের মায়াবলে একই ঘটনা ঘটিয়ে প্রমাণ করল তারাও কম জানে না। ফলে প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ফরৌণ আবার মোশি ও হারোণের কথা শুনতে অস্বীকার করলেন। 23 ফরৌণ মোশি ও হারোণের ঐ কথায় মনোযোগ না দিয়ে নিজের প্রাসাদে ঢুকে গেলেন।

24 মিশরীয়রা নদীর জল পান করতে না পেরে তারা পানীয় জলের সন্ধানে নদীর চারপাশে কুঁয়ো খুঁড়তে লাগল।

ব্যাঙরা

25 প্রভুর নীলনদের জলকে রক্তে পরিণত করার পর সাতদিন পার হল।

প্রভু তখন মোশির উদ্দেশ্যে বললেন, “ফরৌণকে গিয়ে বলো যে প্রভু বলেছেন, ‘আমার লোকেদের আমাকে উপাসনার জন্য ছেড়ে দাও! যদি তুমি ওদের ছেড়ে না দাও তাহলে আমি মিশর দেশ ব্যাঙে ভর্ত্তি করে দেব। নীলনদ ব্যাঙে ভর্ত্তি হয়ে উঠবে। নদী থেকে ব্যাঙরা উঠে এসে তোমার ঘরে শয্যাকক্ষে প্রবেশ করে বিছানায় উঠে বসবে। তোমার উনুনের চুল্লি, জলের পাত্র ব্যাঙে ভরে যাবে। তোমার সভাসদগণের ঘরও ব্যাঙে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। তোমাদের চারিদিকে ব্যাঙরা ঘুরে বেড়াবে। তোমার সভাসদগণ, তোমার লোকদের এবং তোমার গায়েও ব্যাঙ ছেঁকে ধরবে।’”

প্রভু এরপর মোশিকে বললেন, “তুমি হারোণকে বলো সে যেন তার হাতের পথ চলার লাঠি নদী, খাল-বিল ও হ্রদের ওপর বিস্তার করে মিশর দেশে ব্যাঙ এনে ভরিয়ে দেয়।”

হারোণ মিশরের জলের ওপর তার লাঠি সমেত হাত বিস্তার করতেই নদী, খাল-বিল ও হ্রদ থেকে রাশি রাশি ব্যাঙ উঠে মিশরের মাটি ঢেকে ফেলল।

হারোণের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে রাজার যাদুকররাও তাদের মায়াজাল বিস্তার করে একই কাণ্ড ঘটিয়ে দেখাল। ফলে মিশরের মাটিতে আরও অসংখ্য ব্যাঙ উঠে এলো।

ফরৌণ এবার বাধ্য হয়ে মোশি এবং হারোণকে ডেকে পাঠিয়ে তাদের বললেন, “প্রভুকে বলো তিনি যেন আমাকে এবং আমার লোকদের এই ব্যাঙের উপদ্রব থেকে রেহাই দেন। আমি প্রভুকে নৈবেদ্য উৎসর্গ করার জন্য লোকদের যাবার ছাড়পত্র দেব।”

মোশি ফরৌণকে বলল, “বলুন, আপনি কখন চান যে এই ব্যাঙরা ফিরে যাক্। আমি আপনার জন্য, আপনার সভাসদগণ ও প্রজাদের জন্য তাহলে প্রার্থনা করব। তারপরই ব্যাঙরা আপনাকে এবং আপনার ঘর ছেড়ে নদীতে ফিরে যাবে। ব্যাঙরা নদীতেই থাকে। বলুন আপনি কবে এই ব্যাঙদের উপদ্রব থেকে অব্যাহতি চান?”

10 উত্তরে ফরৌণ জানালেন, “আগামীকাল।”

মোশি বলল, “বেশ আপনার কথা মতো তাই হবে। তবে এবার নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পেরেছেন যে আমাদের প্রভু ঈশ্বরের মতো আর কোন ঈশ্বর এখানে নেই। 11 ব্যাঙরা আপনাকে, আপনার ঘর এবং আপনার সভাসদগণ ও প্রজাদের সবাইকে ছেড়ে ফিরে যাবে। কেবলমাত্র নদীতেই তারা এবার থেকে বাস করবে।”

12 এরপর মোশি এবং হারোণ ফরৌণের কাছ থেকে ফিরে এলো। ফরৌণের বিরুদ্ধে পাঠানো সমস্ত ব্যাঙদের সরিয়ে নেবার জন্য মোশি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল। 13 মোশির প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে প্রভু ঘরে, বাইরে, মাঠে ঘাটের সমস্ত ব্যাঙকে মেরে ফেললেন। 14 কিন্তু মৃত ব্যাঙের স্তূপ পচতে শুরু করল এবং সারা দেশ দুর্গন্ধে ভরে উঠল। 15 ব্যাঙদের উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়ার পরই ফরৌণ আবার একগুঁয়ে ও জেদী হয়ে উঠলেন। প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী মোশি ও হারোণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাজা পালন করলেন না।

উকুন

16 প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “হারোণকে বলো তার হাতের লাঠি দিয়ে মাটির ধূলোয় আঘাত করতে, এবং তারপর সেই ধূলো মিশরের সর্বত্র উকুনে পরিণত হবে।”

17 হারোণ প্রভুর কথামতো ধূলোতে তার লাঠি আঘাত করতেই মিশরের সর্বত্র ধূলো উকুনে পরিণত হল। এবং সেই উকুনগুলো মানুষ ও পশুদের গায়ের ওপর চড়ে বসল।

18 রাজার যাদুকররা এবারও একই জিনিস করে দেখানোর চেষ্টা করল কিন্তু তারা কিছুতেই ধূলোকে উকুনে পরিণত করতে পারল না। কিন্তু সেই উকুনগুলো মানুষ ও পশুদের শরীরে রয়ে গেল। 19 যাদুকররা এবারে ব্যর্থ হয়ে গিয়ে রাজা ফরৌণকে বলল যে ঈশ্বরের শক্তিই এটাকে সম্ভব করেছে। কিন্তু ফরৌণ তাদের কথাতে কান দিলেন না। প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারেই অবশ্য এই ঘটনা ঘটল।

মাছি

20 প্রভু মোশিকে বললেন, “সকালে উঠে ফরৌণের কাছে যাবে। ফরৌণ নদীর তীরে যাবে। তখন তাকে বলবে প্রভু বলেছেন, ‘আমার উপাসনার জন্য আমার লোকদের ছেড়ে দাও। 21 যদি তুমি তাদের ছেড়ে না দাও তাহলে তোমার ঘরে মাছির ঝাঁক ঢুকবে। শুধু তোমার ঘরেই নয় তোমার সভাসদগণ ও তোমার প্রজাদের ঘরেও মাছির ঝাঁক ঢুকবে। মিশরের প্রত্যেকটি ঘর মাছির ঝাঁকে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। মিশরের মাঠে ঘাটে সর্বত্র শুধু ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি উড়ে বেড়াবে! 22 কিন্তু মিশরীয়দের মতো ইস্রায়েলের লোকদের আমি এই যন্ত্রণা ভোগ করাবো না। গোশন প্রদেশে, যেখানে আমার লোকরা বাস করে, সেখানে একটিও মাছি থাকবে না। কারণ সেখানে আমার লোকরা বাস করে। এর ফলে তুমি বুঝতে পারবে যে এই দেশে আমিই হলাম প্রভু। 23 সুতরাং আগামীকাল থেকেই তুমি আমার এই বিভেদ নীতির প্রমাণ পাবে।’”

24 সুতরাং প্রভু তাই করলেন যা তিনি বলেছিলেন। ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি মিশরে এসে গেল। ফরৌণের বাড়ী এবং তাঁর সভাসদগণের বাড়ী মাছিতে ভরে গেল। মাছিগুলোর জন্য সমগ্র মিশর ধ্বংস হল। 25 ফরৌণ মোশি এবং হারোণকে ডেকে বললেন, “তোমরা তোমাদের ঈশ্বরকে এই দেশের মধ্যেই নৈবেদ্য উৎসর্গ করো।”

26 কিন্তু মোশি বলল, “না, তা এখানে করা ঠিক হবে না। কারণ প্রভু, আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে পশু বলিদান মিশরীয়দের চোখে ভয়ঙ্কর ব্যাপার। আমরা যদি এখানে তা করি তাহলে মিশরীয়রা আমাদের দেখতে পেয়ে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করবে। 27 তাই তিন দিনের জন্য আমাদের প্রভু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উৎসর্গ করার জন্য আমাদের মরুপ্রান্তরে যেতে দিন। প্রভুই আমাদের এটা করতে বলেছেন।”

28 সব শুনে ফরৌণ বললেন, “বেশ আমি তোমাদের মরুপ্রান্তরে যাবার ছাড়পত্র দিচ্ছি তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উৎসর্গ করার জন্য। কিন্তু মনে রেখো তোমরা কিন্তু বেশী দূরে চলে যাবে না। এখন যাও এবং আমার জন্য প্রার্থনা করো।”

29 তখন মোশি ফরৌণকে বলল, “দেখুন, আমি যাব এবং প্রভুকে অনুরোধ করব যাতে আগামীকাল তিনি আপনার কাছ থেকে, আপনার লোকদের কাছ থেকে এবং আপনার সভাসদগণের কাছ থেকে মাছিগুলো সরিয়ে নেন। কিন্তু আপনি যেন আবার আগের মতো প্রভুকে নৈবেদ্য উৎসর্গ করার বিষয়টি নিয়ে পরে আপত্তি করবেন না।”

30 এই কথা বলে মোশি ফরৌণের কাছ থেকে ফিরে এল এবং প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল। 31 এবং মোশির প্রার্থনায়় সাড়া দিয়ে প্রভু ফরৌণকে, সভাসদগণ ও প্রজাদের মাছির উপদ্রব থেকে রক্ষা করলেন। মিশর থেকে মাছিদের বার করে দিলেন। আর একটি মাছিও সেখানে রইল না। 32 কিন্তু ফরৌণ আবার জেদী হয়ে গেলেন এবং লোকদের যেতে দিলেন না।

গবাদি পশুদের অসুখ

তারপর প্রভু মোশিকে বললেন, ফরৌণকে গিয়ে বল, “প্রভু, ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর বলেছেন, ‘আমার লোকদের আমার উপাসনা করার জন্য ছেড়ে দাও।’ তুমি যদি তাদের ধরে রাখো এবং যেতে বাধা দাও তাহলে প্রভু তোমার গবাদি পশুদের ওপর তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। তোমার সমস্ত ঘোড়া, গাধা, উট, গরু ও মেষের পাল প্রভুর কোপে এক ভয়ঙ্কর রোগের শিকার হবে। কিন্তু প্রভু মিশরের পশুদের মতো ইস্রায়েলের পশুদের দুর্দশাগ্রস্ত করবেন না। ইস্রায়েলের লোকদের কোনও পশু মারা যাবে না। আগামীকাল এই ঘটনা ঘটাবার জন্য প্রভু সময় স্থির করেছেন।”

পরদিন, প্রভু যেমন বলেছিলেন তেমন করলেন। মিশরীয়দের সমস্ত গৃহপালিত পশু মারা গেল। কিন্তু ইস্রায়েলের লোকদের কোনও পশু মারা গেল না। ইস্রায়েলীয়দের কোনও পশু মারা গেছে কিনা তা দেখে আসতে ফরৌণ তাঁর কর্মচারীদের পাঠালেন এবং সে জানতে পারলো যে ইস্রায়েলীয়দের একটি পশুও মারা যায় নি। কিন্তু তবুও ফরৌণ তাঁর জেদ ধরে রইলেন এবং লোকদের যেতে দিলেন না।

ফোঁড়া

প্রভু মোশি এবং হারোণকে বললেন, “একটা উনুন থেকে এক মুঠো ছাই নাও। মোশি তুমি সেই ছাই ফরৌণের সামনে বাতাসে ছুঁড়ে দাও। এই ছাই ধূলিকণা হয়ে সারা মিশরে ছড়িয়ে পড়বে। এবং যখনই এই ধূলো মিশরের কোনও মানুষ বা পশুর গায়ে পড়বে তখনই তাদের গায়ে ফোঁড়া হবে।”

10 তাই মোশি ও হারোণ উনুন থেকে ছাই নিয়ে ফরৌণের সামনে দাঁড়াল। মোশি সেই ছাই আকাশে ছুঁড়ে দিল আর পশু ও মানুষের গায়ে ফোঁড়া বার হতে লাগল। 11 যাদুকররা মোশির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারল না। কারণ তাদেরও সারা গায়ে ফোঁড়া ছিল। মিশরের প্রতিটি জায়গায় এই রোগ দেখা দিল। 12 কিন্তু এতে প্রভু ফরৌণকে আরও উদ্ধত করে তুললেন। তাই ফরৌণ তাদের কথা শুনতে অস্বীকার করলেন। প্রভুর কথামতোই এসব ঘটেছিল।

শিলাবৃষ্টি

13 এরপর প্রভু, ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর মোশিকে বললেন, “সকালে উঠে ফরৌণের কাছে গিয়ে বলবে, প্রভু ঈশ্বর বলেছেন, ‘আমার লোকদের আমার উপাসনা করতে যেতে দাও। 14 যদি তুমি তা না কর, তবে তোমাকে, তোমার সমস্ত রাজকর্মচারীদের এবং লোকদের সমস্ত রকমের দুর্ভোগ ভুগতে হবে। তখন তুমি জানবে যে এই পৃথিবীতে আমার মতো ঈশ্বর আর নেই, 15 আমি আমার ক্ষমতা দিয়ে তোমাদের এমন রোগ দিতে পারি যা তোমাদের পৃথিবী থেকে মুছে দেবে। 16 কিন্তু আমি তোমাদের একটা কারণে এখানে রেখেছি। আমি তোমাদের আমার ক্ষমতা দেখানোর জন্য রেখেছি, যাতে সারা পৃথিবীর লোক আমার কথা শুনতে পারে। 17 তুমি এখনও আমার লোকদের সঙ্গে বিরোধিতা করছ এবং তাদের যেতে দিচ্ছ না। 18 তাই আগামীকাল এই সময় আমি এক ভয়ঙ্কর শিলাবৃষ্টি ঘটাবো। মিশরের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এই রকম ভয়ঙ্কর শিলাবৃষ্টি আর কখনও হয় নি। 19 এখন তুমি তোমার পশুদের একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাও। তোমার ক্ষেতে যা কিছু আছে সব একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাও। কেন? কারণ কোন লোক যদি ক্ষেতে পড়ে থাকে, তবে সে মারা যাবে; যদি কোন পশু মাঠে পড়ে থাকে সে মারা যাবে। তোমার বাড়ীর বাইরে যা কিছু পড়ে থাকবে সে সব কিছুর ওপরেই শিলাবৃষ্টি হবে।’”

20 ফরৌণের সেই কর্মচারীরা যারা প্রভুর বার্তাকে গুরুত্ব দিয়েছিল তারা তাদের পশু ও ক্রীতদাসদের ক্ষেত থেকে নিয়ে এলো এবং ঘরে রেখে দিল। 21 কিন্তু যে সব কর্মচারীরা প্রভুর বার্তা অগ্রাহ্য করেছিল তারা তাদের ক্রীতদাসদের ও পশুদের মাঠে রেখে দিল।

22 প্রভু মোশিকে বললেন, “তোমার হাত আকাশের দিকে তুলে ধরো, তাহলে মিশরের ওপর শিলাবৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। মিশরের সমস্ত ক্ষেতের মানুষ, পশু ও গাছপালার ওপর এই শিলাবৃষ্টি হবে।”

23 তাই মোশি তার হাতের ছড়ি আকাশের দিকে তুলল, তারপর প্রভু ভূমির ওপর বজ্রনির্ঘোষ, শিলাবৃষ্টি ও অশনি ঘটালেন। সারা মিশরে শিলাবৃষ্টি হল। 24 শিলাবৃষ্টি হচ্ছিল এবং চারিদিকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। এই ধরণের ভয়ঙ্কর শিলাবৃষ্টি মিশরের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আগে কখনও হয়নি। 25 এই শিলাবৃষ্টি মিশরের ক্ষেতের সমস্ত কিছু, লোকজন ও পশুসহ গাছপালা ধ্বংস করে দিল। এই শিলাবৃষ্টিতে মাটির সমস্ত গাছ ভেঙ্গে পড়েছিল। 26 একমাত্র ইস্রায়েলের লোকদের বাসস্থান গোশন প্রদেশে শিলাবৃষ্টি হল না।

27 ফরৌণ মোশি ও হারোণকে ডেকে বললেন, “এইবার বুঝেছি যে আমি পাপ করেছি। প্রভুই ঠিক ছিলেন। আমি ও আমার লোকরা ভুল করেছি। 28 প্রভুর দেওয়া শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত আর সহ্য হচ্ছে না। ঈশ্বরকে গিয়ে এই ঝড় থামাতে বল। তাহলে আমি তোমাদের যেতে দেব, তোমাদের আর এখানে থাকতে হবে না।”

29 মোশি ফরৌণকে বললেন, “আমি যখন শহর ত্যাগ করে যাবো তখন আমি প্রভুকে প্রার্থনার ভঙ্গীতে আমার হাতগুলো ওপরে তুলব। এবং তারপর বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি থামবে। তখন তুমি জানবে যে এই পৃথিবী প্রভুর অধিকারে। 30 কিন্তু আমি জানি যে তুমি এবং তোমার কর্মচারীরা এখনও প্রভুকে শ্রদ্ধা করো না।”

31 য়ব ও শন গাছে ফুল এসে গিয়েছিল। তাই এই সমস্ত শস্য নষ্ট হয়ে গেল। 32 কিন্তু যেহেতু গম ও জনার বড় হল না তাই সেগুলো নষ্ট হল না।

33 মোশি ফরৌণের কাছে থেকে শহরের বাইরে গেল, প্রভুকে প্রার্থনা করার ভঙ্গীতে তার হাতগুলো ওপরে তুলল এবং তৎক্ষণাৎ বজ্র, শিলাবৃষ্টি এমনকি বৃষ্টিও থেমে গেল।

34 যখন ফরৌণ দেখলেন বৃষ্টি, বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি থেমে গিয়েছে তখন তিনি আবার ভুল করলেন। তিনি ও তার কর্মচারীরা জেদী হয়ে গেল। 35 ফরৌণ উদ্ধত হলেন এবং ইস্রায়েলের লোকদের যেতে দিতে অস্বীকার করলেন। এসবই হয়েছিল ঠিক প্রভু যেমন মোশিকে বলেছিলেন সেইরকম ভাবেই।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International