Chronological
ইস্রায়েলীয়রা অভিযোগ করল, তাই ঈশ্বর খাদ্য পাঠালেন
16 তারপর ইস্রায়েলের সমস্ত জনমণ্ডলী এলীম ছেড়ে গেল এবং সীনয় মরুভূমিতে এলো যেটা ছিল এলীম ও সীনয়ের মাঝখানে। মিশর দেশ ছেড়ে আসার দ্বিতীয় মাসের 15 দিনের মাথায় তারা সেখানে পৌঁছলো। 2 তারপর ইস্রায়েলের সমস্ত জনমণ্ডলী মরুভূমিতে মোশি ও হারোণের কাছে নালিশ করল। 3 এইসব লোকরা বলল, “প্রভু যদি আমাদের মিশর দেশে মেরে ফেলতেন তাহলেও ভাল ছিল। অন্ততঃ সেখানে তো খাবার পেতাম। আমাদের ইচ্ছামতো খাবার সেখানে মজুত ছিল। কিন্তু এখন তোমরা আমাদের এই মরুভূমিতে এনে ফেললে। এখানে তো আমরা খাবারের অভাবেই মারা যাব।”
4 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “আমি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে খাবার ফেলবার ব্যবস্থা করব। সেই খাদ্য তোমাদের খাবার যোগ্য হবে। লোকরা প্রতিদিন বাইরে বেরিয়ে এসে তাদের প্রয়োজনমতো সারাদিনের খাবার কুড়িয়ে নিয়ে আসবে। আমি যা বলছি তোমরা তা করছ কিনা শুধু তা দেখার জন্যই আমি এটা করব। 5 প্রত্যেকদিন তারা কেবলমাত্র একদিনের মতো পর্যাপ্ত খাবার সংগ্রহ করবে। কিন্তু শুক্রবার যখন তারা খাবার তৈরি করবে, তখন তারা দেখবে যে দুদিনের মত পর্যাপ্ত খাবার সঞ্চিত আছে।”[a]
6 মোশি এবং হারোণ ইস্রায়েলের লোকদের বলল, “রাতে তোমরা প্রভুর শক্তির প্রমাণ পাবে। তোমরা জানবে যে তিনিই তোমাদের মিশর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছেন। 7 তোমরা প্রভুর কাছে নালিশ জানিয়েছো এবং তিনি তা শুনেছেন। তাই আগামীকাল সকালে তোমরা প্রভুর মহিমা স্বচক্ষে দেখতে পাবে। তোমরা আমাদের কাছে কেবল নালিশই জানিয়ে যাচ্ছ। এখন কি আমরা খানিকটা বিশ্রাম পেতে পারি?”
8 এবং মোশি বলল, “তোমরা নালিশ জানিয়েছ এবং প্রভু তোমাদের অভিযোগ শুনেছেন। তাই আজ রাতে প্রভু তোমাদের মাংস দেবেন। এবং কাল সকালের মধ্যে তোমরা তোমাদের চাহিদা মতো রুটিও পেয়ে যাবে। তোমরা আমার কাছে এবং হারোণের কাছেও নালিশ জানিয়ে এসেছ। কিন্তু আমরা এখন দুজনে কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নিতে পারব বলে মনে হয়। মনে রেখো, তোমরা আমার বিরুদ্ধে কিংবা হারোণের বিরুদ্ধে নালিশ জানাও নি, তোমরা স্বয়ং প্রভুর বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছ।”
9 তারপর মোশি হারোণকে বলল, “ইস্রায়েলের সমস্ত লোকদের বলো, প্রভুর সামনে উপস্থিত হও, কারণ প্রভু তোমাদের নালিশ শুনেছেন।”
10 হারোণ ইস্রায়েলের সমস্ত লোকদের সে কথা বলল। তখন তারা সবাই একসঙ্গে এক জায়গায় এসে জড়ো হল। হারোণ যখন সবার সঙ্গে কথা বলছিল তখন সবাই পিছন ফিরে মরুভূমির দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকল মেঘের ভিতর দিয়ে প্রভুর মহিমা প্রকাশিত হচ্ছে।
11 প্রভু মোশিকে বললেন, 12 “আমি ইস্রায়েলের লোকদের নালিশ শুনেছি। সুতরাং ওদের বলো, ‘আজ রাতে তোমরা মাংস খেতে পারো এবং সকালে তোমরা যতখুশি রুটি খেতে পারো। তখন তোমরা বুঝবে যে তোমরা তোমাদের প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরকে, বিশ্বাস করতে পার।’”
13 রাতে, তিতির পাখীরা এসেছিল এবং শিবিরের চারপাশে বসেছিল। লোকরা সেই পাখীগুলোকে ধরে তার মাংস খেল। সকালে শিবিরের চারপাশে শিশির পড়েছিল। 14 শিশির শুকিয়ে গেলে তুষার কণার সরু স্তরের মতো একটি বস্তু মাটিতে পড়ে থাকল। 15 তা দেখে ইস্রায়েলবাসীরা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করল, “এটা আবার কি জিনিস?”[b] তারা জানত না সেটা কি। তাই তারা একে অপরকে কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করছিল। তখন মোশি তাদের বলল, “এটা এক ধরণের খাদ্যবস্তু যা প্রভু তোমাদের খাবার জন্য দিয়েছেন। 16 প্রভু বলেছেন, ‘প্রত্যেকেই তার প্রয়োজন মতো এটা কুড়িয়ে নেবে। এবং প্রত্যেককে তার পরিবারের প্রত্যেকের জন্য অন্ততঃ দু’পোয়া করে নিতে হবে।”
17 একথা শুনে ইস্রায়েলবাসীরা প্রত্যেকে ঐ খাদ্যবস্তু কুড়িয়ে নিল, কেউ কেউ আবার অন্যদের থেকে বেশী কুড়ালো। 18 পরে ওজনে দেখা গেল যে যারা বেশী সংগ্রহ করেছিল তাদের কাছে অতিরিক্ত পরিমাণ ছিল না এবং যারা কম সংগ্রহ করতে পেরেছিল তাদেরও খাবারে কম পড়ে নি। প্রত্যেকের পরিবারই পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পেল।
19 মোশি তাদের বলল, “পরের দিনের জন্য ঐ খাবার মজুত করে রেখো না।” 20 কিন্তু কয়েকজন মোশির কথা না শুনে পরের দিনের জন্য ঐ খাবার রেখে দিল। কিন্তু মজুত করা খাবারগুলোয়় পোকা ধরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে গেল। তাই মোশি ঐসব লোকদের ওপর ক্রুদ্ধ হল।
21 প্রতিদিন সকালে প্রত্যেকে ঐ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে জমা করত। কিন্তু দুপুরের মধ্যে ঐ খাদ্যবস্তু গলে উধাও হয়ে যেত।
22 শুক্রবারে লোকগুলো দ্বিগুণ খাবার জমা করত। তারা মাথা পিছু দু’পোয়া করে খাবার জমা করত। তাই দেখে বিভিন্ন দলের নেতারা এসে মোশিকে তা জানাল।
23 মোশি তখন তাদের বলল, “প্রভুই ওদের বলেছিলেন এটা করতে। কারণ আগামীকাল হল প্রভুকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য বিশেষ বিশ্রামের দিন। তোমরা আজ সব খাবার রান্না করে আজকে খাবার পরে অবশিষ্ট খাবার কালকের জন্য মজুত করে রাখতে পারো।”
24 মোশির আদেশমত, লোকরা সেদিনকার অতিরিক্ত খাবার পরের দিনের জন্য সঞ্চয় করে রেখে দিল। কিন্তু ঐ খাবার এতটুকু নষ্ট হল না। তার মধ্যে একটাও পোকা ছিল না।
25 শনিবার মোশি লোকদের বলল, “আজ হল প্রভুর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য বিশেষ বিশ্রামের দিন। তাই আজ আর কেউ তোমরা মাঠে যাবে না। গতকালের মজুত করা খাবার আজ খাবে। 26 সপ্তাহের বাকি ছয় দিন খাবার সংগ্রহ করলেও প্রতি সাত দিনের দিন হবে বিশ্রামের দিন। তাই বিশ্রামের দিনে মাঠে কোনও খাবার পাওয়া যাবে না।” 27 একথা বলা সত্ত্বেও শনিবার কয়েকজন খাবারের সন্ধানে বাইরে গেল। কিন্তু দেখল কোনও খাবার মাঠে পড়ে নেই। 28 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “আর কতদিন এই লোকরা আমার নির্দেশ ও শিক্ষাকে অমান্য করবে? 29 দেখ, প্রভু এই বিশ্রামের দিনটি তোমাদের অবসরের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন। তাই প্রভু শুক্রবার তোমাদের দুদিনের জন্য পর্যাপ্ত খাবার দিয়ে দেন। সুতরাং যে যেখানেই থাকো না কেন শনিবার বিশ্রামের দিনে তোমরা সকলে বিশ্রাম নেবে ও আরাম করবে।” 30 তাই লোকজন প্রভুর কথামতো বিশ্রামের দিনে আরাম করতে লাগল।
31 ইস্রায়েলের লোকেরা ঐ খাদ্যবস্তুর নাম দিল “মান্না।” মান্নাকে দেখতে সাদা রঙের ধনে বীজের মতো হলেও এর স্বাদ অনেকটা মধু দিয়ে তৈরী করা পিঠের মতো। 32 মোশি বলল, “প্রভু বলেছেন: পরবর্তী উত্তরপুরুষের জন্য তোমাদের দু’পোয়া করে মান্না সঞ্চয় করে রাখতে হবে। তাহলে পরে তারা দেখতে পাবে এই বিশেষ খাবার যা আমি তোমাদের মিশর দেশ থেকে উদ্ধার করে এনে মরুভূমিতে দিয়েছি।”
33 তাই মোশি হারোণকে বলল, “একটা পাত্র নাও এবং তাতে দু’পোয়া মান্না রাখো। প্রভুর সামনে আমাদের উত্তর পুরুষদের জন্য এই মান্না রাখো।” 34 (মোশির প্রতি প্রভুর নির্দেশ মতো হারোণ একটি পাত্রে মান্না ভরল এবং সাক্ষ্য সিন্দুকের ভেতর রাখল।) 35 ইস্রায়েলীয়রা 40 বছর ধরে মান্না খেয়েছিল। কনান দেশের সীমান্তে এসে না পৌঁছানো পর্যন্ত তারা মান্না খেয়েছিল। 36 (মান্না মাপা হত পোয়া হিসেবে। এক পোয়া হল 8 কাপের সমান।)
পাথর থেকে জল নির্গত হল
17 সমস্ত ইস্রায়েলীয়রা একসঙ্গে সীন মরুভূমি থেকে তাদের যাত্রা শুরু করল। প্রভু যেমনভাবে তাদের নেতৃত্ব দিলেন তারা সেইভাবে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যেতে শুরু করল। ঘুরতে ঘুরতে তারা রফীদীমে গিয়ে শিবির স্থাপন করল। সেখানে কোনও পানীয় জল ছিল না। 2 তাই ঐসব লোকরা আবার মোশির সঙ্গে তর্ক শুরু করল এবং বলল, “আমাদের পানীয় জল দাও।”
মোশি তাদের বলল, “তোমরা কেন আমার বিরোধিতা করছো? কেনই বা তোমরা প্রভুকে পরীক্ষা করছো?”
3 কিন্তু লোকরা তখন প্রচণ্ড তৃষ্ণার্ত ছিল। তাই তারা পুনরায় মোশির কাছে নালিশ জানাতে শুরু করল। তারা বলল, “কেন তুমি আমাদের মিশর থেকে বার করে আনলে? তুমি কি আমাদের, আমাদের সন্তানদের এবং গবাদি পশুদের পানীয় জলের অভাবে মারার জন্য মিশর থেকে বাইরে নিয়ে এসেছো?”
4 তারপর মোশি প্রভুর কাছে কেঁদে পড়ল এবং বলল, “আমি এদের নিয়ে কি করি? যদি এখুনি কিছু না করা যায় তাহলে এরা তো সত্যি সত্যি আমাকে পাথর দিয়ে মেরে ফেলবে।”
5 প্রভু মোশিকে বললেন, “কিছু প্রবীণ নেতাদের নিয়ে ইস্রায়েলের লোকের সামনে গিয়ে দাঁড়াও। সঙ্গে তোমার পথ চলার লাঠিকেও নেবে যে লাঠি দিয়ে তুমি নীল নদে আঘাত করেছিলে। 6 আমি তোমার সামনে হোরেব পর্বতের (সীনয় পর্বত) ওপর দাঁড়াব। পথ চলার লাঠি দিয়ে ঐ পাথরে আঘাত করো আর তখনই দেখবে পাথর থেকে জল বেরিয়ে আসছে। ঐ জল লোকরা পান করতে পারবে।”
মোশি তাই করল এবং ইস্রায়েলের প্রবীণ নেতারাও তা স্বচক্ষে দেখতে পেল। 7 মোশি ঐ স্থানের নাম দিল মঃসা ও মরীবা, কারণ ঐ স্থানেই ইস্রায়েলের লোকরা তার বিরোধিতা করেছিল এবং ঈশ্বরের পরীক্ষা নিয়েছিল। লোকজন চেয়েছিল প্রভু তাদের সঙ্গে আছেন কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে।
অমালেকীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ
8 সেই সময় অমালেক গোষ্ঠীর লোকরা এল এবং রফীদীমে ইস্রায়েলের লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ বাধিয়ে দিল। 9 তখন মোশি যিহোশূয়কে বলল, “কিছু লোককে বেছে নিয়ে আগামীকাল থেকে অমালেকদের সঙ্গে যুদ্ধ করো। আমি তোমাকে পথ চলার লাঠি যেটাতে ঈশ্বরের পরাক্রম বিদ্যমান, সেইটা নিয়ে পাহাড়ের ওপর থেকে লক্ষ্য করব।”
10 পরদিন যিহোশূয় মোশির আদেশ মেনে যুদ্ধ করতে গেল। একই সময়ে মোশি, হারোণ এবং হূর পাহাড়ের চূড়ায় উঠল। 11 যতক্ষণ পর্যন্ত মোশি তার হাত তুলে রইল, ইস্রায়েলীয়রা যুদ্ধ জিতছিল, যখন সে তার হাত নামিয়েছিল তখন তারা হেরে যাচ্ছিল।
12 কিছু সময় পরে হাত তুলে থাকতে থাকতে মোশি ক্লান্ত হয়ে উঠল। তখন হারোণ ও হূর একটা বিশাল পাথরে মোশিকে বসিয়ে তারা উভয়ে মোশির দুদিকে গিয়ে তার হাত তুলে ধরল। সূর্য না ডোবা পর্যন্ত তারা এইভাবেই মোশির হাত দুটোকে তুলে ধরে রইল। 13 আর যিহোশূয় অমালেকদের যুদ্ধে পরাজিত করল।
14 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “এই যুদ্ধ নিয়ে একটা বই লেখ যাতে লোকরা মনে রাখে এখানে কি ঘটেছিল এবং যিহোশূয়ের কাছে এটা জোরে পড়ে শোনাও যাতে সে জানতে পারে যে আমি অমালেকদের এই পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেব।”
15 এরপর মোশি একটি বেদী তৈরী করল। সেই বেদীর নাম হল “প্রভুই আমার পতাকা।” 16 মোশি বলল, “আমি প্রভুর সিংহাসনের দিকে হাত বাড়িয়ে ছিলাম বলেই প্রভু অমালেকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, যেমন তিনি সর্বদা করেন।”
মোশির শ্বশুরের পরামর্শ
18 মোশির শ্বশুর যিথ্রো ছিল মিদিয়নীয়র যাজক। ঈশ্বর যে একাধিকভাবে মোশিকে এবং ইস্রায়েলের লোকদের সাহায্য করেছেন তা সে শুনেছিল। যিথ্রো শুনেছিল যে প্রভু ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে বার করে এনেছেন। 2 তাই যিথ্রো মোশির স্ত্রী সিপ্পোরাকে নিল এবং মোশির সঙ্গে দেখা করতে গেল। মোশি তখন ঈশ্বরের পর্বতের কাছে শিবির করে রয়েছে। মোশির স্ত্রী সিপপোরা তখন বাপের বাড়ীতে থাকত কারণ মোশিই তার স্ত্রীকে বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দিয়েছিল। 3 যিথ্রো তার সঙ্গে শুধু মোশির স্ত্রীকেই নয়, মোশির দুই পুত্রকেও নিয়ে গিয়েছিল। প্রথম পুত্রের নাম গের্শোন কারণ সে যখন জন্মায় তখন মোশি বলেছিল, “আমি পরদেশে প্রবাসী।” 4 দ্বিতীয় পুত্রের নাম ইলীয়েষর। নামকরণের কারণ হিসেবে দ্বিতীয় পুত্রের জন্মের সময় মোশি বলেছিল, “আমার পিতার ঈশ্বর, আমাকে সাহায্য করেছেন এবং ফরৌণের তরবারি থেকে রক্ষা করেছেন।” 5 যিথ্রো মোশির স্ত্রী ও দুই পুত্রকে নিয়ে মোশির শিবিরে পৌঁছালো। মোশি তখন ঈশ্বরের পর্বতের কাছে মরুভূমিতে শিবিরে ছিল।
6 যিথ্রো মোশির উদ্দেশ্যে একটি বার্তায় বলে পাঠাল, “আমি তোমার শ্বশুর যিথ্রো। আমি তোমার স্ত্রী ও দুই পুত্রকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি।”
7 তখন মোশি তাঁবু থেকে বেরিয়ে এসে শ্বশুরকে হাঁটু গেড়ে প্রণাম ও চুম্বন করল। দুজনে দুজনের শরীর ও স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নিয়ে মোশির তাঁবুতে প্রবেশ করল। 8 ইস্রায়েলের লোকদের জন্য প্রভু যা যা করেছেন মোশি তা বিস্তারিতভাবে যিথ্রোকে বলল। মোশি জানাল, প্রভু ফরৌণ ও মিশরের লোকদের কি অবস্থা করেছেন। যাত্রাপথে যে সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল সে সমস্ত সমস্যার কথাও সে বলল। প্রত্যেকটি সমস্যার ক্ষেত্রে প্রভু কিভাবে ইস্রায়েলের লোকদের রক্ষা করেছেন তাও সে শ্বশুরকে খুলে বলল।
9 মিশরীয়দের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করবার সময় প্রভু তাদের জন্য যে সমস্ত ভাল কাজগুলি করেছিলেন সে সম্বন্ধে শুনে যিথ্রো খুশী হল। 10 যিথ্রো বলল, “প্রভুর প্রশংসা করো! তিনিই তোমাদের মিশরীয়দের কবল থেকে মুক্ত করেছেন। ফরৌণের হাত থেকেও প্রভু তোমাদের রক্ষা করেছেন। 11 এখন আমি জানি সকল দেবতার থেকে প্রভুই মহান! তারা ভাবত তারাই একমাত্র ক্ষমতার অধিকারী কিন্তু দেখ ঈশ্বর কি করে দেখালেন!”
12 মোশির শ্বশুর যিথ্রো ঈশ্বরের প্রতি সম্মানার্থে নৈবেদ্য ও বলি দিল। তখন হারোণ ও ইস্রায়েলের অন্যান্য প্রবীণ নেতারা এসে ঈশ্বরের সামনে মোশি ও যিথ্রোর সঙ্গে একসঙ্গে আহার করল।
13 পরদিন মোশি লোকদের বিচার করতে বসল। বিচার সভায় এত লোক হয়েছিল যে সবাইকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হল।
14 মোশিকে লোকদের বিচার করতে দেখে যিথ্রো তাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কেন একা বিচারকের দায়িত্ব পালন করছো? এবং সবাই সারাদিন ধরে কেনই বা শুধু তোমার কাছেই আসছে?”
15 তখন মোশি তার শ্বশুরকে বলল, “লোকরা আমার কাছে ঈশ্বরের সিদ্ধান্ত জানতে আসে। 16 যখন মানুষদের মধ্যে কোন বিবাদ তৈরী হয় তখন তারা আমার কাছে আসে। আমিই ঠিক করে দিই কে সঠিক আর কে বেঠিক। এই উপায়ে আমি মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের বিধি ও শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিই।”
17 কিন্তু মোশির শ্বশুর তাকে বলল, “এটা ঐ কাজের সঠিক উপায় নয়। 18 এটা তোমার একার কাজ নয়। তুমি একা এই কাজ করতে পারবে না। এভাবে তুমিও উদ্যম হারাবে এবং লোকরাও ক্লান্ত হয়ে পড়বে! 19 এখন মন দিয়ে আমার কথা শোন। আমার কিছু উপদেশ গ্রহণ করো। এবং আমি প্রার্থনা করি ঈশ্বর যেন সর্বদা তোমার সঙ্গে থাকেন। তুমি সর্বদা লোকদের সমস্যা শুনে যাবে এবং সেগুলো নিয়ে তুমি সর্বদা ঈশ্বরের কাছে বলবে। 20 তুমি ঈশ্বরের বিধি ও শিক্ষামালাকে লোকদের মধ্যে জাগিয়ে তুলবে। তাদের বলবে তারা যেন ঈশ্বর প্রদত্ত বিধিকে না ভাঙ্গে। তাদের বলবে সঠিক পথে চলতে। তাদের কি করা উচিৎ তাও বলে দেবে। 21 কিন্তু তোমাকে কিছু মানুষকে বিচারক হিসাবে এবং নেতা হিসেবে নির্বাচন করতে হবে।
“কিছু ভাল মানুষ যাদের তুমি বিশ্বাস করতে পারো তাদের নির্বাচন করো—তারা ঈশ্বরকে সম্মান করবে। তাদেরই নির্বাচন করবে যারা অর্থের জন্য নিজেদের সিদ্ধান্ত বদল করবে না এবং এদের মানুষদের শাসক হিসাবে তৈরি করো। 1000 জন প্রতি, 100 জন প্রতি, 50 জন প্রতি এবং 10 জন প্রতি শাসক মনোনীত করো। 22 এবার ঐ লোকেদের শাসনের ভার এই শাসকদের হাতে ছেড়ে দাও। যদি কোনও গুরুত্বপূর্ণ মামলা থাকে তাহলে সেই শাসকরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তোমার কাছে আসবে। কিন্তু সাধারণ মামলার সিদ্ধান্তগুলি অবশ্য তারা নিজেরাই করে নেবে। এইভাবে তোমার বেশ কিছু কাজের ভার তারা বহন করবে এবং তার ফলে লোকদের নেতৃত্ব দিতে তোমারও সুবিধা হবে। 23 যদি তুমি এভাবে এগোতে পারো, আর ঈশ্বর যদি চান তাহলে তুমি তোমার দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে এবং একইভাবে লোকরাও তাদের সমস্যার সমাধান করে ঘরে ফিরে যেতে পারবে।”
24 যিথ্রো যা বলল মোশি তাই করল। 25 ইস্রায়েলের লোকদের থেকে কিছু ভাল লোককে সে মনোনীত করল। তারপর সে তাদের নেতা হিসেবে তুলে ধরল। মোশি প্রতি 1000 জনের জন্য, প্রতি 100 জনের জন্য, প্রতি 50 জনের জন্য, এবং প্রতি 10 জনের জন্য শাসক নিযুক্ত করল। 26 এরপর থেকে সেই প্রধানরাই সাধারণ লোকদের শাসন করতে শুরু করল। লোকদের মধ্যে বিবাদ দেখা দিলে তারা নিজের নিজের অঞ্চলের নির্দিষ্ট প্রধানের কাছে যেতে লাগল সমস্যা সমাধানের জন্য। কেবলমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কোন সমস্যা বা মামলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হত মোশিকে।
27 কিছুদিন পর মোশি তার শ্বশুর যিথ্রোকে বিদায় জানাল এবং যিথ্রো তার দেশে ফিরে গেল।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International