Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Read the Gospels in 40 Days

Read through the four Gospels--Matthew, Mark, Luke, and John--in 40 days.
Duration: 40 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
লূক 7-9

একজন দাসকে যীশু সুস্থ করলেন

(মথি 8:5-13; যোহন 4:43-54)

যীশু লোকদের যা বলতে চেয়েছিলেন তা বলা শেষ করে কফরনাহূম শহরে গেলেন। সেখানে একজন রোমীয় শতপতির এক ক্রীতদাস গুরুতর অসুখে মরনাপন্ন হয়েছিল। এই ক্রীতদাসটি শতপতির অতি প্রিয় ছিল। শতপতি যখন যীশুর কথা শুনতে পেলেন তখন ইহুদীদের কয়েকজন নেতাকে দিয়ে যীশুর কাছে বলে পাঠালেন, যেন যীশু এসে তাঁর দাসের জীবন রক্ষা করেন। তাঁরা যীশুর কাছে এসে তাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করে বললেন, “যাঁর জন্য আপনাকে এই কাজ করতে বলছি, তিনি একজন যোগ্য লোক। কারণ তিনি আমাদের লোকদের ভালবাসেন, আর তিনি আমাদের জন্য একটা সমাজ-গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছেন।”

তখন যীশু তাদের সঙ্গে গেলেন। তিনি যখন সেই বাড়ির কাছাকাছি এসেছেন তখন সেই শতপতি তাঁর বন্ধুদের দিয়ে বলে পাঠালেন, “প্রভু আপনি আর কষ্ট করবেন না, কারণ আপনি যে আমার বাড়িতে আসেন তার যোগ্য আমি নই। এই কারণেই আমি নিজেকে আপনার কাছে যাবার উপযুক্ত মনে করি না। আপনি কেবল মুখে বলুন তাতেই আমার ঐ দাস ভাল হয়ে যাবে। কারণ আমিও একজনের অধীনে কাজ করি, আর আমার অধীনেও সৈনিকরা কাজ করে। আমি যদি কাউকে বলি ‘যাও’ তখন সে যায়, আবার কাউকে যদি বলি ‘এস’ তবে সে আসে। আর আমি যখন একজনকে বলি, ‘এটা কর,’ তখন সে তা করে।”

এই কথা শুনে যীশু আশ্চর্য হলেন। যে সব লোক ভীড় করে তাঁর পিছনে পিছনে আসছিল, তাদের দিকে ফিরে তিনি বললেন, “আমি তোমাদের বলছি, এমন কি ইস্রায়েলীয়দের মধ্যেও এত বড় বিশ্বাস আমি কখনও দেখিনি।”

10 সেনাপতি যাদের পাঠিয়েছিলেন, তারা বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখল যে সেই চাকর ভাল হয়ে গেছে।

যীশু একজনের জীবন দান করলেন

11 এর অল্প দিন পরেই যীশু নায়িন্ নামে একটি নগরের দিকে যাচ্ছিলেন। তাঁর শিষ্যরা এবং আরও অনেক লোক তাঁর সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল। 12 তিনি যখন সেই নগরের ফটকের কাছাকাছি এসেছেন, তখন একজন মৃত লোককে বয়ে নিয়ে যাওযা হচ্ছিল। সেই মৃত লোকটি ছিল তার বিধবা মায়ের একমাত্র পুত্র। সেই নগরের অনেক লোক সেই বিধবার সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল। 13 সেই বিধবাকে দেখে তার জন্য প্রভুর খুবইদয়া হল। তিনি তাকে বললেন, “তুমি কেঁদো না।” 14 তারপর তিনি কাছে এসে শবের খাট ছুঁলেন, তখন যারা মৃতদেহ বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তারা দাঁড়িয়ে পড়ল। এমন সময় যীশু বললেন, “যুবক, আমি তোমায় বলছি তুমি ওঠো।” 15 তখন সেই লোকটি উঠে বসল, আর কথা বলতে শুরু করল। যীশু তখন তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।

16 এই দেখে সকলের মন ভয় ও ভক্তিতে পূর্ণ হল। তারা ঈশ্বরের প্রশংসা করে বলতে লাগল, “আমাদের মধ্যে একজন মহান ভাববাদীর আবির্ভাব হয়েছে।” তারা আরও বলতে লাগল, “ঈশ্বর তাঁর লোকদের সাহায্য করতে এসেছেন।”

17 যীশুর বিষয়ে এইসব কথা যিহূদিয়া ও তার আশপাশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল।

যোহনের জিজ্ঞাসা

(মথি 11:2-19)

18 বাপ্তিস্মদাতা যোহনের অনুগামীরা এইসব ঘটনার কথা যোহনকে জানাল। তখন যোহন তার দুজন অনুগামীকে ডেকে 19 প্রভুর কাছে জিজ্ঞেস করে পাঠালেন যে, “যাঁর আগমণের কথা আছে আপনিই কি সেই, না আমরা অন্য কারোর জন্য অপেক্ষা করব?”

20 সেই লোকেরা যীশুর কাছে এসে বলল, “বাপ্তিস্মদাতা যোহন আপনার কাছে আমাদের জিজ্ঞেস করতে পাঠিয়েছেন। ‘যাঁর আসবার কথা আপনিই কি সেই ব্যক্তি, না আমরা অন্য কারো অপেক্ষায় থাকব?’”

21 সেই সময় যীশু অনেক লোককে বিভিন্ন রোগ ও ব্যাধি থেকে সুস্থ করছিলেন, অশুচি আত্মায় পাওয়া লোকদের ভাল করছিলেন, আর অনেক অন্ধ লোককে দৃষ্টি শক্তি দান করছিলেন। 22 তখন তিনি তাদের প্রশ্নের জবাবে বললেন, “তোমরা যা দেখলে ও শুনলে তা গিয়ে যোহনকে বল। অন্ধরা দেখতে পাচ্ছে, খোঁড়ারা হাঁটছে, কুষ্ঠ রোগীরা সুস্থ হচ্ছে, বধিররা শুনছে, মরা মানুষ বেঁচে উঠছে; আর দরিদ্ররা সুসমাচার শুনতে পাচ্ছে। 23 ধন্য সেই লোক, যে আমাকে গ্রহণ করার জন্য মনে কোন দ্বিধা বোধ করে না।”

24 যোহনের কাছ থেকে যারা এসেছিল তারা চলে গেলে পর যীশু সমবেত সেই লোকদের কাছে যোহনের বিষয়ে বললেন, “তোমরা প্রান্তরের মধ্যে কি দেখতে গিয়েছিলে? বাতাসে একটি বেত গাছ দুলছে তাই? 25 তা না হলে কি দেখতে গিয়েছিলে? একজন লোক বেশ জমকালো পোশাক পরা? না। যারা দামী জামা কাপড় পরে এবং বিলাসে জীবন কাটায় তারা তো প্রাসাদে থাকে। 26 তবে তোমরা কি দেখতে গিয়েছিলে? একজন ভাববাদীকে? হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, তোমরা যাকে দেখেছ তিনি একজন ভাববাদীর থেকেও মহান। 27 ইনি সেই লোক যার বিষয়ে লেখা হয়েছে:

‘দেখ, আমি তোমার আগে আগে আমার এক সহায়ককে পাঠাচ্ছি।
    সে তোমার আগে গিয়ে তোমার পথ প্রস্তুত করবে।’(A)

28 আমি তোমাদের বলছি, স্ত্রীলোকের গর্ভজাত সকল মানুষের মধ্যে যোহনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ নেই, তবু ঈশ্বরের রাজ্যে ক্ষুদ্রতম ব্যক্তিও যোহনের চেয়ে মহান।”

29 (যারা যীশুর প্রচার শুনেছিল, তাদের মধ্যে পাপীষ্ঠরা ও কর আদায়কারীরাও যোহনের বাপ্তিস্ম নিয়ে স্বীকার করল যে ঈশ্বর ন্যায়পরায়ণ। 30 কিন্তু ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা যোহনের কাছে বাপ্তিস্ম নিতে অস্বীকার করে তাদের জীবনে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করল।)

31 “তাহলে আমি কিসের সঙ্গে এই যুগের লোকদের তুলনা করব? এরা কেমন ধরণের লোক? 32 এরা ছোট ছেলেদের মতো, যারা হাটে বসে একে অপরকে বলে,

‘আমরা তোমাদের জন্য বাঁশি বাজালাম,
    কিন্তু তোমরা নাচলে না।
আমরা তোমাদের জন্য শোকগাথা গাইলাম,
    কিন্তু তোমরা কাঁদলে না।’

33 কারণ বাপ্তিস্মদাতা যোহন এসেছেন, তিনি রুটি খান না আর দ্রাক্ষারসও পান করেন না, আর তোমরা বল, ‘ওকে ভূতে পেয়েছে।’ 34 মানবপুত্র এসে পানাহার করেন; আর তোমরা বল, ‘দেখ! ও পেটুক, মদ্যপায়ী, আবার পাপী ও কর আদায়কারীদের বন্ধু।’ 35 প্রজা তার কাজের দ্বারাই প্রমাণ করে যে তা নির্দোষ।”

শিমোন ফরীশী

36 একদিন একজন ফরীশী তার বাড়িতে যীশুকে নিমন্ত্রণ করল। তাই তিনি তার বাড়িতে গিয়ে সেখানে খাবার আসন নিলেন।

37 সেই নগরে একজন দুশ্চরিত্রা স্ত্রীলোক ছিল। ফরীশীর বাড়িতে যীশু খেতে এসেছেন জানতে পেরে সে একটা শ্বেত পাথরের শিশিতে করে বহুমূল্য আতর নিয়ে এল। 38 সে যীশুর পিছনে তাঁর পায়ের কাছে নতজানু হয়ে কেঁদে কেঁদে চোখের জলে তাঁর পা ভিজাতে লাগল। তারপর সে তার মাথার চুল দিয়ে তাঁর পা মুছিয়ে দিল, আর তাঁর পায়ে চুমু দিয়ে সেই আতর তাঁর পায়ে ঢেলে দিল।

39 যে ফরীশী যীশুকে নিমন্ত্রণ করেছিল, এই দেখে সে মনে মনে বলল, “এই লোকটা যদি ভাববাদী হয় তবে নিশ্চয়ই বুঝতে পারত, যে তার পা ছুঁচ্ছে সে কে এবং কি ধরণের স্ত্রীলোক, এবং এও জানতে পারত যে স্ত্রীলোকটি পাপী।”

40 এর জবাবে যীশু তাকে বললেন, “শিমোন, তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।”

শিমোন বলল, “বেশ তো গুরু, বলুন।”

41 যীশু বললেন, “কোন এক মহাজনের কাছে দুজন লোক টাকা ধারত। একজন পাঁচশো রূপোর মুদ্রা আর একজন পঞ্চাশ রূপোর মুদ্রা। 42 কিন্তু তারা কেউই ঋণ শোধ করতে না পারাতে তিনি দয়া করে উভয়ের ঋণই মকুব করে দিলেন। এখন এদের মধ্যে কে তাঁকে বেশী ভালবাসবে?”

43 শিমোন বলল, “আমি মনে করি যার বেশী ঋণ মকুব করা হল সে-ই।”

যীশু তাকে বললেন, “তুমি ঠিক বলেছ।” 44 এরপর যীশু সেই স্ত্রীলোকটির দিকে ফিরে শিমোনকে বললেন, “তুমি এই স্ত্রীলোকটিকে দেখছ? আমি তোমার বাড়িতে এলাম আর তুমি আমায় পা ধোবার জল পর্যন্ত দিলে না। কিন্তু ও চোখের জলে আমার পা ধুইয়ে দিল আর নিজের চুল দিয়ে তা মুছিয়ে দিল। 45 স্বাগত জানাবার প্রথা অনুসারে তুমি আমায় চুমু দিলে না; কিন্তু আমি আসার পর থেকেই সে আমার পায়ে চুমু দিয়ে চলেছে। 46 তুমি আমার মাথায় তেল দিয়ে অভিষেক করলে না; কিন্তু সে আমার পায়ে সুগন্ধি আতর ঢেলে তা অভিষিক্ত করল। 47 এতেই বোঝা যায় যে সে বেশী ভালবাসা দেখাচ্ছে, সেইজন্যই আমি বলছি, এর পাপ অনেক হলেও তা ক্ষমা করা হয়েছে; কিন্তু যাকে অল্প ক্ষমা করা হয়, সে অল্প ভালবাসে।”

48 এরপর যীশু সেই স্ত্রী লোকটিকে বললেন, “তোমার পাপের ক্ষমা হল।”

49 যারা তাঁর সঙ্গে খেতে বসেছিল, তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “ইনি কে যে পাপ ক্ষমা করেন?”

50 কিন্তু যীশু সেই স্ত্রী লোকটিকে বললেন, “তোমার বিশ্বাসই তোমায় মুক্ত করেছে, তোমার শান্তি হোক্।”

অনুগামীদের সঙ্গে যীশু

এরপর যীশু গ্রামে ও নগরে নগরে ঘুরে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে লাগলেন; তাঁর সঙ্গে ছিলেন সেই বারোজন প্রেরিত। এমন কয়েকজন স্ত্রীলোকও তাঁর সঙ্গে ছিলেন, যারা নানারকম রোগ ব্যাধি থেকে সুস্থ হয়েছিলেন ও অশুচি আত্মার কবল থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন মরিয়ম মগ্দলীনী, এর মধ্যে থেকে যীশু সাতটি মন্দ আত্মা দূর করে দিয়েছিলেন। রাজা হেরোদের বাড়ির অধ্যক্ষ কূষের স্ত্রী শোশন্না ও আরো অনেক স্ত্রীলোক ছিলেন। যীশু ও তাঁর শিষ্যদের সেবা যত্নের জন্য এঁরা নিজেদের টাকা খরচ করতেন।

যীশু বীজ বোনার দৃষ্টান্তমূলক গল্প বললেন

(মথি 13:1-17; মার্ক 4:1-12)

সেই সময় বিভিন্ন শহর থেকে দলে দলে লোক এসে যীশুর কাছে জড়ো হচ্ছিল, তখন যীশু তাদের উপদেশ দিতে গিয়ে এই দৃষ্টান্তটি বললেন:

“একজন চাষী বীজ বুনতে গেল। সে যখন বীজ বুনছিল তখন কিছু পথের পাশে পড়ল, আর লোকে তা মাড়িয়ে গেল, পাখিতে তা খেয়ে গেল। কিছু বীজ পাথুরে জমির ওপর পড়ল, সেই বীজগুলো থেকে অঙ্কুর বার হল বটে, কিন্তু মাটিতে রস না থাকায় তা শুকিয়ে গেল। কিছু বীজ ঝোপের মধ্যে পড়ল। কাঁটাগাছ বেড়ে উঠে চারাগুলিকে চেপে দিল। আবার কিছু বীজ ভাল জমিতে পড়ল, সেগুলি বেড়ে উঠলে যা বোনা হয়েছিল তার একশো গুণ বেশী ফসল হল।”

এই কথা বলার পর তিনি চিৎকার করে বললেন, “যার শোনবার মত কান আছে, সে শুনুক।”

তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে এই দৃষ্টান্তটির অর্থ কি তা জিজ্ঞেস করলেন।

10 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্ব তোমাদের জানতে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু বাকি সকলের কাছে দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বলা হয়েছে:

‘যেন তারা দেখেও না দেখে,
    শুনেও না বোঝে।’(B)

যীশুর বীজের দৃষ্টান্তের ব্যাখ্যা

(মথি 13:18-23; মার্ক 4:13-20)

11 “দৃষ্টান্তটির অর্থ এই, বীজ হল ঈশ্বরের শিক্ষা। 12 যে বীজ পথের ধারে পড়েছিল তা এমন লোকদের বোঝায়, যারা শোনে, তারপর দিয়াবল এসে তাদের অন্তর থেকে ঈশ্বরের শিক্ষা হরণ করে নিয়ে যায়, যেন তারা বিশ্বাস করে মুক্তি না পায়। 13 যে বীজ পাথুরে জমিতে পড়েছিল তা এমন লোকদের বোঝায়, যারা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দের সঙ্গে তা গ্রহণ করে; কিন্তু মাটি না থাকাতে তাদের কোন শিকড় গজায়না। কিছু দিনের জন্য তারা বিশ্বাস করে বটে; কিন্তু কঠিন পরীক্ষার সময় তারা পিছিয়ে যায়।

14 “কাঁটা ঝোপের মধ্যে যে বীজ পড়ল তা সেই সব লোককে বোঝায়, যারা শোনে; কিন্তু পরে জগত সংসারের চিন্তা ভাবনা, ধন-সম্পত্তি ও সুখভোগের মধ্যে তা চাপা পড়ে যায়, আর তারা কখনও ভাল ফল উৎপন্ন করে না। 15 যে বীজ ভাল জমিতে পড়ল তা হচ্ছে সেই সব লোকের প্রতীক যাদের অন্তর সত্যতা ও সরলতায় ভরা, তারা যখন ঈশ্বরের শিক্ষা শোনে তখন তা ধরে রাখে, আর স্থির থেকে জীবনে ফল উৎপন্ন করে।

তোমাদের বোধশক্তি ব্যবহার কর

(মার্ক 4:21-25)

16 “কেউ বাতি জ্বেলে তা কোন পাত্র দিয়ে ঢেকে রাখে না, অথবা খাটের নীচে রাখে না। তার পরিবর্তে সে তা বাতিদানের ওপরই রাখে, যেন ভেতরে যারা আসে তারা আলো দেখতে পায়। 17 এমন কিছু লুকানো নেই যা প্রকাশ পাবে না, এমন কিছু গোপন নেই যা জানা যাবে না কিংবা আলোয় ফুটে উঠবে না। 18 তাই কিভাবে শুনছ তাতে মন দাও, কারণ যার আছে তাকে আরো দেওয়া হবে। আর যার নেই তার যা আছে বলে সে মনে করে, তাও তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে।”

যীশুর অনুগামীরাই তাঁর পরিবার

(মথি 12:46-50; মার্ক 3:31-35)

19 এই সময় যীশুর মা ও ভাইরা তাঁকে দেখতে এসেছিলেন; কিন্তু ভীড়ের জন্য তাঁরা যীশুর কাছে পৌঁছাতে পারলেন না। 20 তখন একজন লোক তাঁকে বলল, “আপনার মা ও ভাইরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁরা আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।”

21 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, “তারাই আমার মা, আমার ভাই, যাঁরা ঈশ্বরের শিক্ষা শুনে সেই অনুসারে কাজ করে।”

যীশুর শিষ্যরা তাঁর ক্ষমতা প্রত্যক্ষ করলেন

(মথি 8:23-27; মার্ক 4:35-41)

22 সেই সময় একদিন যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে নিয়ে একটি নৌকায় উঠলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “চল, আমরা হ্রদের ওপারে যাই।” তাঁরা রওনা দিলেন। 23 নৌকা চলতে থাকলে যীশু নৌকার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লেন। হ্রদের মধ্যে হঠাৎ‌ ঝড় উঠল আর তাঁদের নৌকাটি জলে ভর্ত্তি হয়ে যেতে লাগল, এতে তাঁরা খুবই বিপদে পড়লেন। 24 তখন শিষ্যরা যীশুর কাছে এসে তাঁকে জাগিয়ে তুলে বললেন, “গুরু! গুরু! আমরা যে সত্যিই ডুবতে বসেছি।”

তখন যীশু উঠে ঝোড়ো বাতাস ও তুফানকে ধমক দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ঝড় ও তুফান থেমে গেল, আর সব কিছু শান্ত হল। 25 তখন যীশু তাঁর অনুগামীদের বললেন, “তোমাদের বিশ্বাস কোথায়?”

কিন্তু তাঁরা ভয়ে ও বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন, “ইনি কে যে ঝড় এবং সমুদ্রকে হুকুম করেন আর তারা তাঁর কথা শোনে!”

ভূতে পাওয়া এক ব্যক্তি

(মথি 8:28-34; মার্ক 5:1-20)

26 এরপর তাঁরা গালীল হ্রদের ওপারে গেরাসেনীদের অঞ্চলে গিয়ে পৌঁছালেন। 27 যীশু যখন তীরে নামছেন, সেই সময় সেই নগর থেকে একজন লোক তাঁর সামনে এল। এই লোকটির মধ্যে অনেকগুলো মন্দ আত্মা ছিল। বহুদিন ধরে সে জামা কাপড় পরত না ও বাড়িতে থাকত না কিন্তু কবরখানায় থাকত।

28-29 সে যীশুকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে উঠল ও তাঁর সামনে এসে উপুড় হয়ে পড়ে চিৎকার করে বলতে লাগল, “পরমেশ্বরের পুত্র যীশু, আমাকে নিয়ে আপনার কি কাজ, আমি আপনাকে মিনতি করছি, আমায় যন্ত্রণা দেবেন না।” সে এই কথা বলল, কারণ যীশু সেই ভূতকে তার মধ্য থেকে বার হয়ে যাবার জন্য হুকুম করলেন। সেই ভূত প্রায়ই লোকটাকে চেপে ধরত, তাকে বেড়ি ও শেকল দিয়ে বেঁধে রাখলেও তা ছিঁড়ে ফেলে ভূত তাকে প্রান্তরে তাড়িয়ে নিয়ে যেত।

30 তখন যীশু তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার নাম কি?”

সে বলল, “বাহিনী!” (কারণ অনেকগুলো ভূত একসঙ্গে তার মধ্যে ঢুকেছিল।) 31 তারা যীশুকে মিনতির সুরে বলল, যেন তিনি তাদের রসাতলে যাওযার হুকুম না করেন। 32 সেই সময় পাহাড়ের ঢালে একপাল শুয়োর চরছিল। সেই ভূতরা যীশুকে মিনতি করে বলল যেন তিনি তাদেরকে ঐ শুয়োরের পালে ঢোকার অনুমতি দেন। যীশু তখন তাদের সেই অনুমতি দিলেন। 33 তাতে ভূতরা সেই লোকটির ভেতর থেকে বেরিয়ে ঐ শুয়োরগুলোর মধ্যে ঢুকল, আর সেই শুয়োরের পাল হ্রদের ঢাল দিয়ে জোরে দৌড়ে গিয়ে জলে ডুবে মরল।

34 যারা শুয়োরের পাল চরাচ্ছিল, এই ঘটনা দেখে তারা দৌড়ে গিয়ে সেই নগরে ও সারা দেশে এই খবর দিল; 35 আর কি হয়েছে তা দেখবার জন্য লোকরা বাইরে এল। তারা যীশুর কাছে এসে দেখল, যার মধ্যে থেকে ভূতগুলো বার হয়েছে সে কাপড় পরে শান্তভাবে যীশুর পায়ের কাছে বসে আছে। এই দেখে তারা ভয় পেয়ে গেল। 36 যারা এই ঘটনা দেখেছিল তারা ঐ লোকদের কাছে বলল, কেমন করে ঐ ভূতে পাওয়া লোকটি সুস্থ হল। 37 তখন গেরাসেনী অঞ্চলের সমস্ত লোক যীশুকে তাদের কাছ থেকে চলে যেতে অনুরোধ করল, কারণ তারা ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল।

তখন যীশু ফিরে যাবার জন্য নৌকায় উঠলেন। 38 তখন যে লোকটির মধ্য থেকে ভূত বার হয়ে গিয়েছিল, সে যীশুর সঙ্গে যাবার জন্য মিনতি করতে লাগল। কিন্তু যীশু তাকে অনুমতি দিলেন না। 39 তিনি বললেন, “তুমি বাড়ি ফিরে যাও; আর ঈশ্বর তোমার জন্য যা করেছেন তা সকলকে বল।”

তখন সে সেখান থেকে চলে গেল, আর যীশু তার জন্য যা করেছেন তা সারা শহরে বলে বেড়াতে লাগল।

মৃত বালিকাকে জীবন দান ও স্ত্রীলোককে আরোগ্যদান

(মথি 9:18-26; মার্ক 5:21-43)

40 যীশু যখন ফিরে এলেন তখন এক বিরাট জনতা তাঁকে স্বাগত জানাল, কারণ তারা সকলে যীশুর ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিল। 41-42 ঠিক সেই সময় যায়ীর নামে একজন লোক সেখানে এলেন, ইনি সেখানকার সমাজগৃহের নেতা। তিনি যীশুর পায়ের কাছে উপুড় হয়ে পড়ে তাঁকে অনুরোধ করলেন, যেন যীশু তাঁর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে যান। কারণ তখন তাঁর একমাত্র সন্তান, বারো বছরের মেয়েটি মৃত্যুশয্যায় ছিল।

যীশু যখন যাচ্ছিলেন, লোকেরা তাঁর চারদিকে ভীড় করে ধাক্কা-ধাক্কি করতে লাগল। 43 সেই ভীড়ের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক ছিল যে বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগে ভুগছিল। চিকিৎসকদের পিছনে সে তার যথাসর্বস্ব ব্যয় করেছিল,[a] কিন্তু কেউ তাকে ভাল করতে পারে নি। 44 সে যীশুর পেছন দিকে এসে তাঁর পোশাকের ঝালর স্পর্শ করল, সঙ্গে সঙ্গে তার রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে গেল। 45 তখন যীশু বললেন, “কে আমাকে স্পর্শ করল?”

সবাই অস্বীকার করল, তখন পিতর বললেন, “গুরু, লোকেরা আপনার চারপাশে ধাক্কা-ধাক্কি করে আপনার ওপর পড়ছে।”

46 কিন্তু যীশু বললেন, “কেউ আমায় স্পর্শ করেছে! কারণ আমি জানি আমার মধ্যে থেকে শক্তি বার হয়েছে।” 47 সেই স্ত্রীলোকটি যখন দেখল যে সে কোনমতেই এড়িয়ে যেতে পারবে না, তখন কাঁপতে কাঁপতে যীশুর কাছে এসে তার সামনে উপুড় হয়ে পড়ল এবং সকলের সামনে বলল কেন সে যীশুকে স্পর্শ করেছে, আর কিভাবে সঙ্গে সঙ্গে ভাল হয়ে গেছে। 48 তখন যীশু সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “তোমার বিশ্বাসই তোমাকে সুস্থ করেছে, তোমার শান্তি হোক্।”

49 তিনি তখনও কথা বলছেন, এমন সময় সমাজ-গৃহের নেতার বাড়ি থেকে একজন এসে বলল, “আপনার মেয়ে মারা গেছে! গুরুকে আর কষ্ট দেবেন না।”

50 যীশু এই কথা শুনতে পেয়ে সমাজ-গৃহের নেতাকে বললেন, “ভয় পেও না! কেবল বিশ্বাস রাখো, সে নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে উঠবে।”

51 যীশু সেই বাড়িতে পৌঁছে পিতর, যাকোব, যোহন ও মেয়েটির মা-বাবা ছাড়া আর কাউকে সেই ঘরে ঢুকতে দিলেন না। 52 সেখানে অনেক লোক মেয়েটির জন্য শোক করছিল ও কাঁদছিল। যীশু তাদের বললেন, “কান্না বন্ধ কর, কারণ ও তো মরে নি, ও ঘুমোচ্ছে।”

53 তাঁর কথা শুনে লোকেরা হাসাহাসি করতে লাগল, কারণ তারা জানত মেয়েটি মারা গেছে। 54 যীশু মেয়েটির হাত ধরে ডাক দিলেন, “খুকুমনি ওঠ!” 55 সেই মুহূর্তে তার আত্মা ফিরে এল, আর সে উঠে দাঁড়াল। যীশু তাদের আদেশ করলেন, “যেন তাকে কিছু খেতে দেওয়া হয়।” 56 মেয়েটির মা বাবা খুবই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। যীশু তাদের বারণ করলেন যেন তারা এই ঘটনার কথা কাউকে না বলে।

যীশু সেই বারোজন প্রেরিতকে পাঠালেন

(মথি 10:5-15; মার্ক 6:7-13)

যীশু সেই বারোজন প্রেরিতকে ডেকে তাঁদের সব রকমের ভূত তাড়াবার ক্ষমতা ও নানান রোগ ভাল করার ক্ষমতা দিলেন। এরপর তিনি তাঁদের ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় প্রচার করতে ও রোগীদের সুস্থ করার জন্য পাঠালেন। তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা যাত্রা পথের জন্য কিছুই নিও না, পথে যাবার জন্য লাঠি, ঝুলি, খাবার বা টাকা পয়সা কিছুই নিও না, এমন কি দুটো জামাও না। যে বাড়িতে তোমরা প্রবেশ করবে, সেই গ্রাম ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত সেই বাড়িতেই থেকো। যেখানে লোকেরা তোমাদের স্বাগত জানাবে না সেখানে শহর ছেড়ে অন্যত্র যাবার সময় তাদের বিরুদ্ধে প্রামাণিক সাক্ষ্যস্বরূপ তোমাদের পায়ের ধূলো ঝেড়ে ফেলো।”

তখন তাঁরা গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে যেতে যেতে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার ও রোগীদের সুস্থ করতে লাগলেন।

হেরোদ যীশু সম্পর্কে সন্দিহান

(মথি 14:1-12; মার্ক 6:14-29)

সেই সময় যে সব ঘটনা ঘটছিল রাজ্যপাল হেরোদ তা শুনে খুবই বিচলিত হয়ে পড়লেন। কারণ কেউ কেউ বলছিল, “যোহন আবার বেঁচে উঠেছেন।” আবার অনেকে বলছিল, “এলিয় পুনরায় আবির্ভূত হয়েছেন।” কেউ কেউ বলছিল, “প্রাচীনকালের ভাববাদীদের মধ্যে কোন একজন পুনরায় মৃতদের মধ্য থেকে উত্থাপিত হয়েছেন।” কিন্তু হেরোদ বললেন, “আমি যোহনের মাথা কেটে ফেলেছি; কিন্তু যার বিষয়ে আমি এসব কথা শুনছি, এ তবে কে?” আর তিনি যীশুকে দেখবার চেষ্টা করতে লাগলেন।

যীশু পাঁচ হাজারের বেশী লোককে খাওয়ালেন

(মথি 14:13-21; মার্ক 6:30-44; যোহন 6:1-14)

10 প্রেরিতরা ফিরে এসে তাঁরা কি কি করেছেন তা যীশুকে জানালেন। তখন যীশু তাঁদের নিয়ে নিভৃতে বৈৎসৈদা নগরে চলে গেলেন। 11 কিন্তু লোকেরা জানতে পেরে গেল যে তিনি কোথায় যাচ্ছেন, আর তারা যীশুর পিছু পিছু চলল। যীশুও তাদের সাদরে গ্রহণ করে তাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে বললেন, আর যে সব লোকের রোগ-ব্যাধি ভাল হবার প্রয়োজন ছিল, তাদের সুস্থ করলেন।

12 দিন প্রায় শেষ হয়ে আসছে, এমন সময় সেই বারোজন প্রেরিত যীশুর কাছে ফিরে এসে বললেন, “আমরা যেখানে আছি এটা একটা নির্জন স্থান, তাই এই লোকদের বিদায় দিন যেন এরা আশপাশের গ্রামে গিয়ে নিজেদের জন্য থাকবার স্থান ও খাবার জোগাড় করে নিতে পারে।”

13 কিন্তু যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরাই এদের খেতে দাও।”

কিন্তু তারা বললেন, “আমাদের কাছে তো পাঁচখানা রুটি আর দুটো মাছ ছাড়া আর কিছুই নেই। আমরা গিয়ে কি এইসব লোকদের জন্য খাবার কিনে আনব?” 14 (সেখানে পুরুষ মানুষই ছিল প্রায় পাঁচ হাজার।)

কিন্তু যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “ওদেরকে এক এক দলে পঞ্চাশ জন করে বসিয়ে দাও।”

15 তারা সেই রকমই করলেন; তাদের সকলকেই বসিয়ে দিলেন। 16 এরপর যীশু সেই পাঁচখানা রুটি ও দুটো মাছ নিয়ে সেগুলোর জন্য স্বর্গের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন। পরে তিনি সেগুলোকে টুকরো টুকরো করে তা পরিবেশন করার জন্য শিষ্যদের হাতে দিলেন। 17 সকলে বেশ তৃপ্তি করে খেল, বাকি যা পড়ে রইল তা একসঙ্গে জড় করলে বারোটি টুকরি ভরে গেল।

যীশুই খ্রীষ্ট

(মথি 16:13-19; মার্ক 8:27-29)

18 একদিন যীশু কোন এক জায়গায় নিভৃতে প্রার্থনা করছিলেন। তাঁর শিষ্যরা সেখানে এলে তিনি তাঁদের জিজ্ঞেস করলেন, “লোকেরা কি বলে, আমি কে?”

19 তাঁরা বললেন, “কেউ কেউ বলে আপনি বাপ্তিস্মদাতা যোহন, কেউ বা বলে এলিয়, আবার কেউ কেউ বলে প্রাচীনকালের ভাববাদীদের মধ্যে একজন বেঁচে উঠেছেন।”

20 তিনি তাঁদের বললেন, “কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে?”

পিতর বললেন, “ঈশ্বরের সেই খ্রীষ্ট।”

21 তখন তিনি তাঁদের সতর্ক করে দিলেন যেন একথা তাঁরা কারো কাছে প্রকাশ না করেন।

যীশু বললেন যে তাঁকে মৃত্যুবরণ করতেই হবে

(মথি 16:21-28; মার্ক 8:31–9:1)

22 তিনি আরো বললেন, “মানবপুত্রের অনেক দুঃখ ও যাতনা ভোগ করার প্রয়োজন আছে; ইহুদী নেতারা, প্রধান যাজকেরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করবে, তারা তাঁকে হত্যা করবে; আর তিন দিনের মাথায় তিনি মৃত্যুলোক থেকে পুনরুত্থিত হবেন।”

23 পরে তিনি তাঁদের সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, “যদি কেউ আমার সঙ্গে আসতে চায়, তবে সে নিজেকে অস্বীকার করুক; আর প্রতিদিন নিজের ক্রুশ তুলে নিক এবং আমায় অনুসরণ করুক। 24 যে কেউ নিজের জীবন রক্ষা করতে চায় সে তা হারাবে, কিন্তু যে কেউ আমার জন্য নিজের জীবন হারায় সে তা রক্ষা করবে। 25 সমগ্র জগৎ‌ লাভ করে কেউ যদি নিজেকে ধ্বংস করে তবে তার কি লাভ হল? 26 যদি কেউ আমার জন্য ও আমার শিক্ষার জন্য লজ্জা বোধ করে, তবে যখন মানবপুত্র নিজ মহিমায় এবং পিতা ও পবিত্র স্বর্গদূতদের মহিমায় আসবেন তখন তিনিও তার জন্য লজ্জিত হবেন। 27 কিন্তু আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এখানে এমন কয়েকজন আছে যাঁরা ঈশ্বরের রাজ্য না দেখা পর্যন্ত মৃত্যুর মুখ দেখবে না।”

মোশি, এলিয় ও যীশু

(মথি 17:1-8; মার্ক 9:2-8)

28 এইসব কথা বলার প্রায় আট দিন পর, তিনি পিতর, যাকোব ও যোহনকে নিয়ে প্রার্থনা করার জন্য একটা পর্বতে গেলেন। 29 যীশু যখন প্রার্থনা করছিলেন, তখন তাঁর মুখের চেহারা অন্যরকম হয়ে গেল, তাঁর পোশাক আলোক শুভ্র হয়ে উঠল। 30 দুই ব্যক্তি, মোশি ও এলিয় মহিমান্বিত হয়ে সেখানে এসে যীশুর সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন। 31 তাঁরা ঈশ্বরের পরিকল্পনা অনুযায়ী জেরুশালেমে কিভাবে যীশুর মৃত্যু হবে তাই নিয়ে কথা বলছিলেন। 32 কিন্তু পিতর ও তাঁর অন্য সঙ্গীরা সেই সময় ঢুলতে ঢুলতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তাঁরা জেগে উঠে যীশুকে মহিমান্বিত রূপে দেখতে পেলেন, আর ঐ দুই ব্যক্তিকে যীশুর সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। 33 সেই ব্যক্তিরা যখন যীশুর কাছ থেকে চলে যাচ্ছিলেন, তখন পিতর যীশুকে বললেন, “গুরু, ভালোই হয়েছে যে আমরা এখানে আছি। আমরা এখানে তিনটে কুটীর তৈরী করি, একটা আপনার জন্য, একটা মোশির জন্য আর একটা এলিয়র জন্য।” তিনি জানতেন না যে তিনি কি বলছিলেন।

34 কিন্তু তিনি যখন এইসব কথা বলছিলেন, সেই সময় এক খণ্ড মেঘ এসে তাঁদের ঢেকে ফেলল, মেঘের মধ্যে প্রবেশ করে তাঁরা ভীত হলেন। 35 সেই মেঘের মধ্য থেকে এক রব শোনা গেল। সেই রব বলল, “এই আমার পুত্র, আমার মনোনীত পাত্র, তাঁর কথা শোন।”

36 সেই রব মিলিয়ে যাবার পরই দেখা গেল কেবল যীশু একা সেখানে রয়েছেন আর শিষ্যরা যা দেখলেন সে বিষয়ে কাউকে কিছু না বলে চুপ করে রইলেন।

অশুচি আত্মায় পাওয়া একটি বালককে যীশু সুস্থ করলেন

(মথি 17:14-18; মার্ক 9:14-27)

37 পরদিন তাঁরা পর্বত থেকে নেমে এলে বহু লোক যীশুর সঙ্গে দেখা করতে এল, 38 আর সেই সময় ঐ ভীড়ের মধ্য থেকে একটি লোক চিৎকার করে বলল, “গুরু, আমি আপনাকে মিনতি করছি আপনি আমার এই একমাত্র সন্তানের দিকে একটু দেখুন। 39 হঠাৎ‌, একটা অশুচি আত্মা তাকে ধরে, আর সে চিৎকার করতে থাকে। সেই আত্মা যখন তাকে মুচড়ে ধরে তখন তার মুখ থেকে ফেনা কাটতে থাকে। এটা সহজে তাকে ছেড়ে যেতে চায় না, তাকে একবারে ঝাঁঝরা করে দেয়। 40 আমি আপনার শিষ্যদের কাছে মিনতি করেছিলাম যেন তাঁরা ঐ অশুচি আত্মাকে তাড়িয়ে দেন, কিন্তু তাঁরা পারলেন না।”

41 যীশু বললেন, “হে অবিশ্বাসী ও পথভ্রষ্ট লোকেরা, আমি আর কতকাল তোমাদের নিয়ে ধৈর্য্য ধরব, কতকালই বা তোমাদের সঙ্গে থাকব?” যীশু লোকটিকে বললেন, “তোমার ছেলেকে এখানে আন।”

42 ছেলেটা যখন আসছিল, তখন সেই ভূত তাকে আছাড় মারল আর তাতে সে প্রবলভাবে হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি করতে লাগল। যীশু সেই অশুচি আত্মাকে ধমক দিলেন। তারপর ছেলেটিকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তার বাবার কাছে ফেরৎ দিলেন। 43 ঈশ্বর যে কত মহান তা দেখে লোকেরা অবাক হয়ে গেল।

যীশু তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে বললেন

(মথি 17:22-23; মার্ক 9:30-32)

যীশু যা করলেন তা দেখে লোকেরা আশ্চর্য হচ্ছিল, তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, 44 “আমি তোমাদের যা বলছি তা মন দিয়ে শোন, শীঘ্রই মানবপুত্রকে মানুষের হাতে সঁপে দেওয়া হবে।” 45 কিন্তু এ কথার অর্থ কি শিষ্যরা তা বুঝতে পারলেন না। এটা তাঁদের কাছে গুপ্ত রয়ে গেল, তাই তাঁরা এর কিছুই উপলদ্ধি করতে পারলেন না।

শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি

(মথি 18:1-5; মার্ক 9:33-37)

46 সেই সময়ই তাঁদের মধ্যে এই বিতর্কের সূত্রপাত হল যে কে তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। 47 কিন্তু যীশু তাঁদের মনোভাব বুঝতে পেরে একটি শিশুকে এনে নিজের পাশে দাঁড় করালেন। 48 তিনি তাঁদের বললেন, “যে কেউ আমার নামে এই শিশুকে সাদরে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে; আর যে আমাকে সাদরে গ্রহণ করে, সে আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন তাঁকেই গ্রহণ করে। তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে ছোট, সেই শ্রেষ্ঠ।”

যে কেউ তোমার বিপক্ষে নয় সে তোমার পক্ষে

(মার্ক 9:38-40)

49 যোহন বললেন, “প্রভু আমরা আপনার নামে একজনকে ভূত তাড়াতে দেখেছি। সে আমাদের সঙ্গী নয় বলে আমরা তাকে বারণ করেছি।”

50 কিন্তু যীশু তাঁকে বললেন, “তাকে বারণ করো না, কারণ যে তোমাদের বিপক্ষ নয়, সে তোমাদের সপক্ষ।”

শমরীয় শহর

51 যীশুর স্বর্গে যাবার সময় হয়ে এলে তিনি স্থির চিত্তে জেরুশালেমের দিকে এগিয়ে চললেন। 52 তিনি তাঁর পৌঁছাবার আগেই সেখানে কিছু বার্তবাহক পাঠালেন। তাঁরা গিয়ে শমরীয়দের এক গ্রামে উঠলেন, যেন যীশুর জন্য সব কিছু ব্যবস্থা করতে পারেন। 53 কিন্তু যীশু জেরুশালেমে যাবেন বলে স্থির করায় শমরীয়রা তাঁকে গ্রহণ করল না। 54 যীশুর অনুগামী যাকোব ও যোহন এই দেখে বললেন, “প্রভু, আপনি কি চান যে এদের ধ্বংস করার জন্য আমরা আকাশ থেকে আগুন নামিয়ে আনি?”[b]

55 কিন্তু যীশু ফিরে দাঁড়িয়ে তাদের ধমক দিলেন।[c] 56 তখন তাঁরা অন্য গ্রামে গেলেন।

যীশুকে অনুসরণ

(মথি 8:19-22)

57 তাঁরা যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন, সেই সময় একজন লোক যীশুকে বলল, “আপনি যেখানেই যান না কেন আমিও আপনার সঙ্গে যাব।”

58 যীশু তাকে বললেন, “শেয়ালের গর্ত আছে, আকাশের পাখিদেরও বাসা আছে, কিন্তু মানবপুত্রের কোথাও মাথা রাখার ঠাঁই নেই।”

59 আর একজনকে তিনি বললেন, “আমায় অনুসরণ কর।”

কিন্তু সেই লোকটি বলল, “আগে গিয়ে আমার বাবাকে কবর দিয়ে আসতে দিন।”

60 কিন্তু যীশু তাকে বললেন, “মৃতরাই তাদের মৃতদের কবর দেবে। তুমি গিয়ে বরং ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় ঘোষণা কর।”

61 আর একজন লোক বলল, “প্রভু, আমি আপনার অনুসারী হব: কিন্তু প্রথমে আমার বাড়ির সকলকে বিদায় জানিয়ে আসতে দিন।”

62 কিন্তু যীশু তাকে বললেন, “লাঙ্গলে হাত রেখে যে পেছন ফিরে তাকায়, সে ঈশ্বরের রাজ্যের যোগ্য নয়।”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International