Read the Gospels in 40 Days
প্রচারের জন্য যীশু প্রেরিতদের পাঠালেন
(মার্ক 3:13-19; 6:7-13; লূক 6:12-16; 9:1-6)
10 যীশু তাঁর বারো জন শিষ্যকে কাছে ডেকে তাঁদের অশুচি আত্মা তাড়িয়ে দেবার ও সব রোগ-ব্যাধি সারাবার ক্ষমতা দিলেন। 2 সেই বারো জন প্রেরিতের নাম:
প্রথম হলেন শিমোন (যাঁকে পিতর বলা হয়),
তারপর তাঁর ভাই আন্দ্রিয়,
সিবদিয়ের ছেলে যাকোব
ও তাঁর ভাই যোহন,
3 ফিলিপ
ও বর্থলময়,
থোমা
ও কর আদায়কারী মথি,
আলফেয়ের ছেলে যাকোব
ও থদ্দেয়,
4 দেশভক্ত[a]
শিমোন ও যীশুকে (যে শত্রুর হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল) সেই যিহূদা ঈষ্করিয়োতীয়।
5 এই বারো জনকে যীশু এই নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন, “তোমরা অইহুদীদের অঞ্চলে বা শমরীয়দের কোন নগরে যেও না, 6 বরং ইস্রায়েল জাতির হারানো মেষদের কাছে যেও। 7 তাদের কাছে গিয়ে প্রচার কর যে, ‘স্বর্গরাজ্য এসে পড়েছে।’ 8 তোমরা গিয়ে রোগীদের সারিয়ে তোল, মৃতদের বাঁচিয়ে তোল, কুষ্ঠ রোগীদের পরিষ্কার করো, ভূতদের বার করে দাও। তোমরা এসব কাজ বিনামূল্যে করো, কারণ তোমরা সেই ক্ষমতা বিনামূল্যেই পেয়েছ। 9 তোমাদের কোমরের কাপড়ে বেঁধে তোমরা সোনা, রূপো বা টাকা পয়সা সঙ্গে নিও না। 10 পথ চলতে কোন থলি বা বাড়তি জামাকাপড় কিংবা জুতো নিও না, এমন কি লাঠিও নয়, কারণ আমি বলছি শ্রমিক তার পারিশ্রমিক পাবার যোগ্য।
11 “তোমরা যখন কোন শহর বা গ্রামে যাবে, সেখানে এমন কোন উপযুক্ত লোক খুঁজে বার করো যার উপর আস্থা রাখতে পার এবং কোথাও চলে না যাওয়া পর্যন্ত তার বাড়িতেই থেকো। 12 যখন তোমরা সেই বাড়িতে গিয়ে উঠবে তখন সেখানকার লোকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলো, ‘তোমাদের শান্তি হোক্।’ 13 সেই বাড়ির লোকরা যদি তোমাদের স্বাগত জানায়, তবে তারা সেই শান্তি লাভের উপযুক্ত। কিন্তু তারা যদি তোমাদের স্বাগত না জানায়, তবে তোমাদের শান্তি তোমাদেরই কাছে ফিরে আসুক। 14 কেউ যদি তোমাদের গ্রহণ না করে বা তোমাদের কথা শুনতে না চায়, তবে সেই বাড়ি বা সেই শহর ছেড়ে চলে যেও। যাবার সময় সেখানকার পায়ের ধূলো ঝেড়ে ফেলো। 15 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, মহাবিচারের দিনে সদোম ও ঘমোরার[b] লোকদের থেকে সেই শহরের অবস্থা ভয়ঙ্কর হবে।
কষ্ট বিষয়ে যীশুর সতর্কবানী
(মার্ক 13:9-13; লূক 21:12-17)
16 “সাবধান! দেখ, আমি নেকড়ের পালের মধ্যে মেষের মতো তোমাদের পাঠাচ্ছি। তাই তোমরা সাপের মতো চতুর ও পায়রার মতো অমায়িক হয়ো। 17 কিন্তু লোকদের থেকে সাবধান থেকো, কারণ তারা তোমাদের গ্রেপ্তার করে সমাজগৃহের মহাসভার হাতে তুলে দেবে। আর তারা সমাজ-গৃহে নিয়ে গিয়ে তোমাদের বেত মারবে। 18 আমার অনুসারী হওয়ার জন্য শাসকদের সামনে ও রাজাদের দরবারে তোমাদের হাজির করা হবে। তোমরা এইভাবে তাদের কাছে ও অইহুদীদের কাছে আমার বিষয়ে বলার সুযোগ পাবে। 19 তারা যখন তোমাদের ধরে নিয়ে যাবে, তখন কিভাবে বলবে এবং কি বলবে সে নিয়ে চিন্তা করো না, কারণ কি বলতে হবে ঠিক সময়ে তা তোমাদের মুখে যুগিয়ে দেওয়া হবে। 20 মনে রেখো, তোমরা যে বলবে, তা নয়, কিন্তু তোমাদের ভেতর দিয়ে তোমাদের স্বর্গের পিতা ঈশ্বরের আত্মাই কথা বলবেন।
21 “ভাই ভাইকে এবং বাবা ছেলেকে মৃত্যুদণ্ডের জন্য ধরিয়ে দেবে। ছেলেমেয়েরা বাবা-মার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে। 22 আমার নামের জন্য সকলে তোমাদের ঘৃণা করবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে স্থির থাকবে সেই রক্ষা পাবে। 23 যখন তারা এক শহরে তোমাদের ওপর নির্যাতন করবে, তখন তোমরা অন্য শহরে পালিয়ে যেও। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, মানবপুত্র ফিরে না আসা পর্যন্ত তোমরা ইস্রায়েলের সমস্ত শহরে তোমাদের কাজ শেষ করতে পারবে না।
24 “ছাত্র তার গুরু থেকে বড় নয়, আর ক্রীতদাসও তার মনিব থেকে বড় নয়। 25 ছাত্র যদি গুরুর মতো হয়ে উঠতে পারে, আর ক্রীতদাস যদি তার মনিবের মতো হয়ে উঠতে পারে তাহলেই যথেষ্ট। বাড়ির কর্তাকে তারা যদি বেল্সবূল বলে, তবে বাড়ির অন্যদের তারা আরও কত কি বলবে।
মানুষকে নয়, ঈশ্বরকে ভয় কর
(লূক 12:2-7)
26 “তাই তাদের ভয় করো না, কারণ গুপ্ত সব বিষয়ই প্রকাশ পাবে, গোপন সব বিষয়ই প্রকাশ করা হবে। 27 অন্ধকারের মধ্যে আমি যা বলছি, আমি চাই তা তোমরা দিনের আলোতে বল। আর আমি তোমাদের কানে যা বলছি, আমি চাই তা তোমরা ছাদের উপর থেকে চিৎকার করে বল।
28 “যারা কেবল তোমাদের দৈহিকভাবে হত্যা করতে পারে তাদের ভয় করো না, কারণ তারা তোমাদের আত্মাকে ধ্বংস করতে পারে না। কিন্তু যিনি দেহ ও আত্মা উভয়ই নরকে ধ্বংস করতে পারেন বরং তাঁকেই ভয় কর। 29 দুটো চড়াই পাখি কি মাত্র কয়েক পয়সায় বিক্রি হয় না? তবু তোমাদের পিতার অনুমতি ছাড়া তাদের একটাও মাটিতে পড়ে না। 30 হ্যাঁ, এমন কি তোমাদের মাথার সব চুলও গোনা আছে। 31 কাজেই তোমরা ভয় পেও না। অনেকগুলি চড়াই পাখির থেকেও তোমাদের মূল্য ঢের বেশী।
তোমাদের বিশ্বাস সম্পর্কে লোককে বলো
(লূক 12:8-9)
32 “যে কেউ মানুষের সামনে আমাকে স্বীকার করে, আমিও আমার স্বর্গের পিতা ঈশ্বরের সামনে তাকে স্বীকার করব। 33 কিন্তু যে কেউ মানুষের সামনে আমাকে অস্বীকার করবে, আমিও আমার স্বর্গের পিতা ঈশ্বরের সামনে তাকে অস্বীকার করব।
যীশুর অনুগামী হবার দরুন তোমরা বিপদে পড়বে
(লূক 12:51-53; 14:26-27)
34 “একথা ভেবো না যে আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি। আমি শান্তি দিতে আসি নি কিন্তু খড়গ দিতে এসেছি। 35 আমি এই ঘটনা ঘটাতে এসেছি:
‘আমি ছেলেকে বাবার বিরুদ্ধে,
মেয়েকে মায়ের বিরুদ্ধে,
বৌমাকে শাশুড়ীর বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি।
36 নিজের আত্মীয়রাই হবে একজন ব্যক্তির সবচেয়ে বড় শত্রু।’[c]
37 “যে কেউ আমার চেয়ে তার বাবা-মাকে বেশী ভালবাসে সে আমার আপনজন হবার যোগ্য নয়। আর যে কেউ তার ছেলে বা মেয়েকে আমার চেয়ে বেশী ভালবাসে, সে আমার আপনজন হবার যোগ্য নয়। 38 যে নিজের ক্রুশ তুলে নিয়ে আমার পথে না চলে, সেও আমার শিষ্য হবার যোগ্য নয়। 39 যে কেউ নিজের জীবন লাভ করতে চায়, সে তা হারাবে; কিন্তু যে আমার জন্য তার জীবন উৎসর্গ করে, সে তা লাভ করবে।
যারা তোমাদের গ্রহণ করে ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করেন
(মার্ক 9:41)
40 “যে তোমাদের সাদরে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে। আর যে আমাকে গ্রহণ করে, সে তো যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন সেই ঈশ্বরকেই গ্রহণ করে। 41 কেউ যদি কোন ভাববাদীকে একজন ভাববাদী বলেই সাদরে গ্রহণ করে, তবে ভাববাদীর যে পুরস্কার সেও তা লাভ করবে। আর কেউ যদি কোন ধার্মিক লোককে ধার্মিক বলে সাদরে গ্রহণ করে, তবে ধার্মিক ব্যক্তির প্রাপ্য যে পুরস্কার সেও তা পাবে। 42 এই সামান্য লোকদের মধ্যে কাউকে যদি আমার অনুগামী বলে কেউ এক ঘটি ঠাণ্ডা জল দেয়, আমি সত্যি বলছি, সেও তার পুরস্কার পাবে।”
বাপ্তিস্মদাতা যোহন এবং যীশু
(লূক 7:18-35)
11 যীশু তাঁর বারোজন শিষ্যকে এইভাবে নির্দেশ দেওয়া শেষ করলেন। এরপর তিনি গালীল শহরে শিক্ষা দেবার ও প্রচার করার জন্য সেখান থেকে চলে গেলেন।
2 যোহন (বাপ্তাইজ) কারাগার থেকে খ্রীষ্টের কাজের কথা শুনলেন। তখন তিনি তাঁর অনুগামীদের যীশুর কাছে পাঠালেন। 3 অনুগামীরা যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “যার আগমনের কথা ছিল, আপনি কি সেই লোক, না আমরা আর কারও জন্য অপেক্ষা করব?”
4 এর উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা যা শুনছ ও দেখছ, যোহনকে গিয়ে তা বল 5 অন্ধরা দৃষ্টিশক্তি পাচ্ছে, খোঁড়ারা হাঁটছে, কুষ্ঠরোগীরা আরোগ্য লাভ করছে, বধির জনেরা শুনতে পাচ্ছে, মরা মানুষ বেঁচে উঠছে, আর দরিদ্র লোকদের কাছে সুসমাচার প্রচার করা হচ্ছে। 6 ধন্য সেই লোক, আমাকে গ্রহণ করতে যার কোন বাধা নেই।”
7 যোহনের অনুগামীরা যখন চলে যাচ্ছেন, তখন লোকদের উদ্দেশ্য করে যীশু যোহনের বিষয়ে বলতে শুরু করলেন, “তোমরা মরুপ্রান্তরে কি দেখতে গিয়েছিলে? বাতাসে দোলায়মান বেত গাছ? 8 না, তা নয়। তাহলে কি দেখতে গিয়েছিলে? জমকালো পোশাক পরা কোন লোককে? শোন! যারা জমকালো পোশাক পরে তাদের রাজপ্রাসাদে দেখতে পাবে। 9 তাহলে তোমরা কি দেখবার জন্য গিয়েছিলে? একজন ভাববাদীকে? হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, যাকে তোমরা দেখেছ তিনি ভাববাদীর চেয়েও মহান! 10 তিনি সেই লোক যার বিষয়ে শাস্ত্রে লেখা আছে,
‘শোন! আমি তোমার আগে আগে আমার এক দূতকে পাঠাচ্ছি।
সে তোমার জন্য পথ প্রস্তুত করবে।’(A)
11 “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, স্ত্রীলোকের গর্ভে যত মানুষের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে বাপ্তিস্মদাতা যোহনের চেয়ে কেউই মহান নয়, তবু স্বর্গরাজ্যের কোন ক্ষুদ্রতম ব্যক্তিও যোহনের থেকে মহান। 12 বাপ্তিস্মদাতা যোহনের সময় থেকে আজ পর্যন্ত স্বর্গরাজ্য ভীষণভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। আর শক্তিধর লোকরা তা জোরের সাথে অধিকার করতে চেষ্টা করছে। 13 যোহনের আগমণের পূর্ব পর্যন্ত যা ঘটবে সকল ভাববাদী ও মোশির বিধি-ব্যবস্থার মধ্যে তা বলা হয়েছে। 14 তোমরা যদি একথা বিশ্বাস করতে রাজী থাক তবে শোন, এই যোহনই সেই ভাববাদী এলিয়,[d] যাঁর আসবার কথা ছিল। 15 যার শোনবার মতো কান আছে সে শুনুক।
16 “আমি কিসের সঙ্গে এই যুগের লোকদের তুলনা করব? এরা এমন একদল ছোট ছেলেমেয়েদের মতো যারা হাটে বসে অন্য ছেলেমেয়েদের ডেকে বলে,
17 ‘আমরা তোমাদের জন্য বাঁশি বাজালাম,
তোমরা নাচলে না।
আমরা শোকের গান গাইলাম,
কিন্তু তোমরা বিলাপ করলে না।’
18 যোহন অন্য লোকদের মতো না করলেন আহার, না করলেন পান, আর লোকরা বলে, ‘ওকে ভূতে পেয়েছে।’ 19 এরপর মানবপুত্র এসে অন্য লোকদের মতো পান ও আহার করলেন বলে লোকে বলছে, ‘ঐ দেখ! একজন পেটুক ও মদখোর, কর আদায়কারী ও পাপীদের বন্ধু।’ কিন্তু প্রজ্ঞা তার কাজের দ্বারাই সত্য বলে প্রমাণিত হবে।”
অবিশ্বাসী লোকদের উদ্দেশ্যে যীশুর সতর্কবাণী
(লূক 10:13-15)
20 যে সমস্ত শহরে যীশু বেশীর ভাগ অলৌকিক কাজ করেছিলেন, তাদের তিনি ভর্ত্সনা করলেন, কারণ তারা তাদের মন ফেরায় নি। তিনি তাদের বললেন, 21 “ধিক্ কোরাসীন! ধিক বৈৎসৈদা![e] তোমাদের কি ভয়ঙ্কর দুর্দশাই না হবে! আমি তোমাদের একথা বলছি কারণ, তোমাদের মধ্যে যে সব অলৌকিক কাজ আমি করেছি তা যদি সোর ও সীদোনে করা হত, তবে সেখানকার লোকেরা অনেক আগেই তাদের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে চটের বস্ত্র পরে ছাই মেখে মন-ফেরাতো।[f] 22 তাই আমি তোমাদের বলছি, বিচারের দিনে তোমাদের থেকে সোর ও সীদোনের[g] অবস্থা সহ্য করবার মতো হবে।
23 “আর যে কফরনাহূম তুমি নাকি স্বর্গীয় মহিমায় মণ্ডিত হবে? না! তোমাকে পাতালে নামিয়ে আনা হবে। যে সমস্ত অলৌকিক কাজ তোমার মধ্যে করা হয়েছে তা যদি সদোমে করা হত তবে সদোম আজও টিকে থাকত। 24 আমি তোমাদের বলছি, বিচারের দিনে তোমাদের চেয়ে বরং সদোম দেশের দশা অনেক সহনীয় হবে।”
যীশু লোকদের শাস্তি দেবার জন্য আহ্বান জানান
(লূক 10:21-22)
25 এই সময় যীশু বললেন, “স্বর্গ ও পৃথিবীর প্রভু, আমার পিতা, আমি তোমার প্রশংসা করি, কারণ জগতের জ্ঞানী ও পণ্ডিতদের কাছে এসব তত্ত্ব তুমি গোপন রেখে শিশুর মতো সরল লোকদের কাছে তা প্রকাশ করেছ। 26 হ্যাঁ, পিতা এইভাবেই তো তুমি এটা করতে চেয়েছিলে।
27 “আমার পিতা সব কিছুই আমার হাতে সঁপে দিয়েছেন। পিতা ছাড়া পুত্রকে কেউ জানে না; আর পুত্র ছাড়া পিতাকে কেউ জানে না। পুত্র যার কাছে পিতাকে প্রকাশ করতে ইচ্ছা করেন সে-ই তাঁকে জানে।
28 “তোমরা যারা শ্রান্ত-ক্লান্ত ও ভারাক্রান্ত মানুষ, তারা আমার কাছে এস, আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব। 29 আমার জোয়াল তোমাদের কাঁধে তুলে নাও, আর আমার কাছ থেকে শেখো, কারণ আমি বিনয়ী ও নম্র, তাতে তোমাদের প্রাণ বিশ্রাম পাবে। 30 কারণ আমার দেওয়া জোয়াল বয়ে নেওয়া সহজ ও আমার দেওয়া ভার হাল্কা।”
কিছু ইহুদী যীশুর সমালোচনা করলেন
(মার্ক 2:23-28; লূক 6:1-5)
12 সেই সময় একদিন যীশু এক বিশ্রামবারে শস্য ক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। শিষ্যদের খিদে পাওয়ায় তাঁরা গমের শীষ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে লাগলেন। 2 কিন্তু ফরীশীরা তা দেখে যীশুকে বললেন, “দেখ! বিশ্রামবারে যা করা নিয়ম বিরুদ্ধ, তোমার শিষ্যরা তাই করছে।”
3 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীদের যখন খিদে পেয়েছিল তখন তিনি কি করেছিলেন তা কি তোমরা পড় নি? 4 তিনি তো ঈশ্বরের মন্দিরে ঢুকে সেই পবিত্র রুটি খেয়েছিলেন। দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীদের অবশ্যই তা খাওয়া ন্যায়সঙ্গত ছিল না, কেবল যাজকরাই তা খেতে পারতেন। 5 এছাড়া তোমরা কি মোশির বিধি-ব্যবস্থা পড়নি যে বিশ্রামবারে মন্দিরের মধ্যে যে যাজকরা কাজ করেন তাঁরাও বিশ্রামবারের বিধি-ব্যবস্থা লঙ্ঘন করেন; আর তার জন্য তাদের কোন দোষ হয় না? 6 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, মন্দির থেকেও মহান কিছু এখানে আছে। 7 ‘বলিদান ও নৈবেদ্য থেকে আমি দয়াই চাই।’(B) শাস্ত্রের এই বাণীর অর্থ কি তা যদি তোমরা জানতে, তবে যারা দোষী নয় তাদের তোমরা দোষী করতে না।
8 “কারণ মানবপুত্র বিশ্রামবারেরও প্রভু।”
যীশু পঙ্গু রোগীকে সুস্থ করেন
(মার্ক 3:1-6; লূক 6:6-11)
9 এরপর যীশু সেখান থেকে তাদের সমাজ-গৃহে গেলেন। 10 সেখানে একজন লোক ছিল, যার একটা হাত শুকিয়ে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল। যীশুকে দোষী করবার উদ্দেশ্য নিয়ে লোকরা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “মোশির বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে বিশ্রামবারে কি রোগীকে সুস্থ করা উচিত?”
11 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, “ধর তোমাদের মধ্যে কারও একটা ভেড়া আছে, সেই ভেড়াটা যদি বিশ্রামবারে গর্তে পড়ে যায়, তবে তুমি কি তাকে ধরে তুলবে না? 12 আর ভেড়ার চেয়ে মানুষের মূল্য অনেক বেশী। তাই মোশির বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে বিশ্রামবারে ভাল কাজ করা ন্যায়সঙ্গত।”
13 তারপর যীশু সেই লোকটিকে বললেন, “তোমার হাতটা বাড়িয়ে দাও।” সে তার হাতটা বাড়িয়ে দিলে পর সেটা ভাল হয়ে অন্য হাতটার মতো হয়ে গেল। 14 তখন ফরীশীরা বাইরে গিয়ে যীশুকে মেরে ফেলার জন্য চক্রান্ত করতে লাগল।
যীশু ঈশ্বরের মনোনীত দাস
15 কিন্তু যীশু সে কথা জানতে পেরে সেখান থেকে চলে গেলেন। অনেক লোক তাঁর পিছনে পিছনে চলতে লাগল। তাদের মধ্যে যারা রোগী ছিল, তিনি তাদের সকলকে সুস্থ করলেন। 16 কিন্তু তাঁর এই কাজের কথা সকলকে বলে বেড়াতে তিনি তাদের দৃঢ়ভাবে নিষেধ করে দিলেন। 17 আর এইভাবে তাঁর বিষয়ে ভাববাদী যিশাইয়র মাধ্যমে বলা ঈশ্বরের বাণী পূর্ণ হল:
18 “এই আমার দাস,
একে আমি মনোনীত করেছি।
আমার অতি প্রিয় জন,
যার উপর আমি সন্তুষ্ট।
আমি তাঁর উপরে আমার আত্মার প্রভাব রাখব,
তাতে তিনি অইহুদীদের কাছে ন্যায়নীতির বাণী প্রচার করবেন।
19 তিনি কলহ বিবাদ করবেন না,
লোকেরা পথে ঘাটে তাঁর গলার স্বর শুনবে না।
20 মচকানো বেতগাছ তিনি ভাঙবেন না,
মিট্-মিট্ করে জ্বলতে থাকা পলতেকে তিনি নিভিয়ে দেবেন না
যতদিন না ন্যায়নীতিকে জয়ী করেন ততদিন।
21 সর্বজাতির লোক তাঁর ওপর প্রত্যাশা রাখবে।”(C)
ঈশ্বর প্রদত্ত যীশুর পরাক্রম
(মার্ক 3:20-30; লূক 11:14-23; 12:10)
22 সেই সময় লোকেরা ভূতে পাওয়া একজন লোককে যীশুর কাছে নিয়ে এল। লোকটা অন্ধ ও বোবা ছিল। যীশু তাকে সুস্থ করলেন: তাতে সে দেখতে পেল ও কথা বলতে পারল। 23 এই দেখে লোকেরা বিস্মিত হয়ে বলল, “ইনিই কি দায়ূদের সন্তান?”
24 ফরীশীরা একথা শুনে বললেন, “এ তো ভূতদের শাসনকর্তা বেল্সবূলের[h] শক্তিতে ভূতদের তাড়ায়।”
25 যীশু ফরীশীদের মনের কথা বুঝতে পেরে তাদের বললেন, “বিবাদে বিভক্ত যে কোন রাজ্যই ধ্বংস হয়ে যায়। যে শহর বা পরিবার নিজেদের মধ্যে বিবাদে বিভক্ত তা টিকে থাকতে পারে না। 26 শয়তান যদি ভূতকে তাড়ায় তবে সে নিজেই নিজের বিরুদ্ধে ভাগ হয়ে গেলে তার রাজ্য কি করে টিকে থাকবে? 27 আমি যদি বেল্সবূলের শক্তিতে ভূত তাড়াই, তবে তোমাদের লোকেরা কার শক্তিতে তাদের তাড়ায়? সুতরাং তোমাদের নিজেদের অনুগামীরাই প্রমাণ করবে যে তোমরা ভুল বলছ। 28 কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের আত্মার শক্তিতে ভূতদের তাড়াই, তবে ঈশ্বরের রাজ্য তো তোমাদের কাছে এসে গেছে। 29 আবার বলছি, কোন শক্তিমান লোককে আগে না বেঁধে কেউ কি তার বাড়িতে ঢুকে তার সবকিছু লুট করতে পারে? তাকে বাঁধবার পর তবেই তো তার বাড়ির সবকিছু লুট করতে পারবে। 30 যে আমার পক্ষ নয়, সে আমার বিপক্ষে, যে আমার সঙ্গে কুড়ায়় না, সে তা ছড়াচ্ছে।
31 “তাই আমি তোমাদের বলছি, মানুষের সব পাপ এবং ঈশ্বর-নিন্দার ক্ষমা হবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে কোন অসম্মানজনক কথাবার্তার ক্ষমা হবে না। 32 মানবপুত্রের বিরুদ্ধে কেউ যদি কোন কথা বলে, তাকে ক্ষমা করা হবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে কথা বললে তার ক্ষমা নেই, এযুগে বা আগামী যুগে কখনই না।
কাজ দেখেই লোককে জানা যায়
(লূক 6:43-45)
33 “ভাল ফল পেতে হলে ভাল গাছ থাকা দরকার, কিন্তু খারাপ গাছ থাকলে তোমরা খারাপ ফলই পাবে, কারণ ফল দেখেই গাছ চেনা যায়। 34 তোমরা কালসাপ! তোমাদের মতো দুষ্ট লোকেরা কি করে ভাল কথা বলতে পারে? মানুষের অন্তরে যা আছে, মুখ দিয়ে তো সে কথাই বার হয়। 35 ভাল লোক তার অন্তরে ভাল কথাই সঞ্চিত রাখে, আর ভাল কথাই বলে; কিন্তু যার অন্তরে মন্দ বিষয় থাকে, সে তার মুখ দিয়ে মন্দ কথাই বলে। 36 আমি তোমাদের বলছি, লোকে যত বেহিসেবী কথা বলে, বিচারের দিনে তার প্রতিটি কথার হিসাব তাদের দিতে হবে। 37 তোমাদের কথার সুত্র ধরেই তোমাদের নির্দোষ বলা হবে, অথবা তোমাদের কথার ওপর ভিত্তি করেই তোমাদের দোষী সাব্যস্ত করা হবে।”
ইহুদীরা যীশুর কাছে প্রমাণ চাইলেন
(মার্ক 8:11-12; লূক 11:29-32)
38 এরপর কয়েকজন ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষক যীশুর কাছে এসে বললেন, “হে গুরু, আমরা আপনার কাছ থেকে কোন চিহ্ন বা অলৌকিক কাজ দেখতে চাই।”
39 যীশু তাদের বললেন, “এ যুগের দুষ্ট ও পাপী লোকেরা চিহ্নের খোঁজ করে; কিন্তু ভাববাদী যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্নই তাদের দেখান হবে না। 40 যোনা যেমন সেই বিরাট মাছের পেটে তিন দিন তিন রাত ছিলেন, তেমনই মানবপুত্র তিন দিন তিন রাত পৃথিবীর অন্তঃস্থলে কাটাবেন। 41 বিচারের দিনে নীনবীয় লোকেরা এই কালের লোকদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়িয়ে তাদের দোষী করবে, কারণ নীনবীয় লোকেরা যোনার প্রচারের ফলে তাদের মন ফেরাল। আর দেখ, যোনার চেয়ে এখানে আরও একজন মহান আছেন।
42 “বিচারের দিনে দক্ষিণ দেশের রাণী উঠে এই যুগের লোকদের দোষী সাব্যস্ত করবে, কারণ রাজা শলোমনের জ্ঞানের কথা শোনবার জন্য তিনি পৃথিবীর প্রান্ত থেকে এসেছিলেন, আর দেখ শলোমনের চেয়ে মহান একজন এখানে আছেন।
এই যুগের লোকেরা মন্দে পরিপূর্ণ
(লূক 11:24-26)
43 “যখন কোন দুষ্ট আত্মা কোন মানুষের মধ্য থেকে বার হয়ে যায়, তখন সে জলবিহীন শুকনো অঞ্চলে বিশ্রাম পাবার জন্য ঘোরাঘুরি করতে থাকে কিন্তু তা পায় না। 44 তারপর সে বলে, ‘আমি যে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি, সেখানে ফিরে যাব।’ আর ফিরে এসে দেখে সেই ঘর খালি পড়ে আছে; পরিষ্কার ও সাজানো আছে। 45 পরে সে গিয়ে তার থেকে আরো খারাপ অন্য সাতটা দুষ্ট আত্মাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে। তারপর তারা সকলে সেখানে গিয়ে বাস করতে থাকে, তাতে সেই লোকটার প্রথম অবস্থা থেকে শেষ অবস্থা আরো খারাপ হয়ে ওঠে। এই যুগের মন্দ লোকদের অবস্থাও সেরকম হবে।”
যীশুর অনুগামীরাই তাঁর পরিবার
(মার্ক 3:31-35; লূক 8:19-21)
46 যীশু যখন সমবেত লোকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন তাঁর মা ও ভাইরা এসে তাঁর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছায় বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। 47 সেই সময় একজন লোক তাঁকে বলল, “দেখুন, আপনার মা ও ভাইরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁরা আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান।”
48 যীশু তখন তাকে বললেন, “কে আমার মা? কারাই বা আমার ভাই?” 49 এরপর তিনি তাঁর অনুগামীদের দেখিয়ে বললেন, “দেখ! এরাই আমার মা, আমার ভাই। 50 হ্যাঁ, যে কেউ আমার স্বর্গের পিতার ইচ্ছা পালন করে, সেই আমার মা, ভাই ও বোন।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International