Chronological
একটি স্ত্রীলোক এবং বিশাল নাগ
12 তারপর স্বর্গে এক মহৎ ও বিস্ময়কর সঙ্কেত দেখা গেল। একটি স্ত্রীলোককে দেখা গেল, সূর্য যার বসন, যার পায়ের নীচে ছিল চাঁদ, আর বারোটি নক্ষত্রের এক মুকুট তার মাথায়। 2 স্ত্রীলোকটি গর্ভবতী, প্রসব বেদনায় সে চিৎকার করছিল।
3 এরপর স্বর্গে আর এক নিদর্শন দেখা দিল। এক প্রকাণ্ড নাগ দেখা গেল, যার রঙ ছিল লাল, তার সাতটি মাথা, দশটি শিং আর সাতটি মাথায় সাতটি মুকুট। 4 সে তার লেজ দিয়ে আকাশের এক তৃতীয়াংশ নক্ষত্র টেনে নামিয়ে এনে পৃথিবীর ওপর ফেলল। যে স্ত্রীলোকটি সন্তান প্রসব করার অপেক্ষায় ছিল, সেই নাগটি তার সামনে দাঁড়াল, যেন স্ত্রীলোকটি সন্তান প্রসব করার সঙ্গে সঙ্গে সে তার সন্তানকে গ্রাস করতে পারে।
5 স্ত্রীলোকটি এক পুত্র সন্তান প্রসব করল, যিনি লৌহ দণ্ড দিয়ে সমস্ত জাতিকে শাসন করবেন। তার সন্তানকে ঈশ্বরের সিংহাসনের কাছে নিয়ে যাওয়া হল; 6 আর সেই স্ত্রীলোকটি প্রান্তরে পালিয়ে গেল, সেখানে ঈশ্বর তার জন্য একটি স্থান প্রস্তুত করে রেখেছিলেন, সেখানে সে বারশো ষাট দিন পর্যন্ত প্রতিপালিতা হবে।
7 এরপর স্বর্গে এক যুদ্ধ বেধে গেল। মীখায়েল ও তার অধীনে অন্যান্য স্বর্গদূতরা সেই নাগের সঙ্গে যুদ্ধ করল। সেই নাগও তার অপদূতদের সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ করতে লাগল; 8 কিন্তু সাপ যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল না, তাই তারা স্বর্গের স্থান হারালো। 9 সেই বিরাট নাগকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে ছুঁড়ে ফেলা হল। এই বিরাট নাগ হল সেই পুরানো নাগ যাকে দিয়াবল বা শয়তান বলা হয়, সে সমগ্র জগতকে ভ্রান্ত পথে নিয়ে যায়। সেই নাগ ও তার সঙ্গী অপদূতদের পৃথিবীতে ছুঁড়ে ফেলা হল।
10 তখন আমি স্বর্গে এক উচ্চস্বর শুনতে পেলাম, “এখন আমাদের ঈশ্বরের জয়, পরাক্রম, রাজত্ব, ধ্বনি ও তাঁর খ্রীষ্টের কর্তৃত্ত্ব এসে পড়েছে। এসবই সম্ভব হয়েছে কারণ আমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে যে দোষারোপকারী, তাকে নীচে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সে দিন রাত আমাদের ঈশ্বরের সামনে তাদের নামে দোষারোপ করত। 11 তারা মেষশাবকের রক্তে ও নিজের নিজের সাক্ষ্য দ্বারা সেই নাগকে পরাস্ত করেছে। তারা নিজের প্রাণ তুচ্ছ করে খ্রীষ্টের জন্য মৃত্যুবরণ করতে প্রস্তুত ছিল। 12 তাই স্বর্গ এবং সেখানে বসবাসকারী তোমরা সকলে আনন্দ কর! কিন্তু পৃথিবী ও সমুদ্রের কি দুর্দশাই না হবে, কারণ দিয়াবল তোমাদের কাছে নেমে এসেছে। সে রাগে ফুঁসছে, কারণ সে জানে যে তার আর বেশী সময় বাকী নেই।”
13 পরে ঐ নাগ যখন দেখল যে পৃথিবীতে তাকে ছুঁড়ে ফেলা হল, তখন যে স্ত্রীলোকটি পুত্র প্রসব করেছিল, সেই স্ত্রীলোকটির পেছনে সে তাড়া করতে ছুটল। 14 কিন্তু সেই স্ত্রীলোকটিকে খুব বড় ঈগলের দুটি ডানা দেওয়া হল, যেন যে প্রান্তর তার জন্য নির্দিষ্ট সেই স্থানে সে উড়ে যেতে পারে; সেখানে সে ঐ নাগের দৃষ্টি থেকে দূরে সাড়ে তিন বছর পর্যন্ত নিরাপদে প্রতিপালিতা হবে। 15 তখন সেই নাগ স্ত্রীলোকটিকে লক্ষ্য করে তার মুখ থেকে নদীর জলের মতো জলপ্রবাহ বইয়ে দিল। সেই জল বন্যার মতো এমনভাবে ধেয়ে এল যেন তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। 16 কিন্তু পৃথিবী সেই স্ত্রীলোকটিকে সাহায্য করল; পৃথিবী তার মুখ খুলে নাগের মুখ থেকে নির্গত জল টেনে নিল। 17 তখন সেই নাগ স্ত্রীলোকের ওপর রেগে গিয়ে ঈশ্বরের আদেশ পালনকারী ও যীশুর সত্য শিক্ষাসকল ধারণকারী তাঁর বাকি সব সন্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেল;
18 আর সেই নাগ সমুদ্রের তীরে বালুকার ওপর গিয়ে দাঁড়াল।
দুটি পশু
13 এরপর আমি দেখলাম সমুদ্রের মধ্য থেকে একটা পশু উঠে আসছে, তার দশটা শিং ও সাতটা মাথা; আর তার সেই দশটা শিং-এর প্রত্যেকটাতে মুকুট পরানো আছে। তার প্রতিটি মাথার ওপর ঈশ্বরের নিন্দাসূচক বিভিন্ন নাম। 2 যে পশুটিকে আমি দেখলাম, তাকে দেখতে একটা চিতা বাঘের মতো। তার পা ভাল্লুকের মতো, তার মুখটা সিংহের মুখের মতো। সমুদ্র তীরের সেই নাগ তার নিজের ক্ষমতা, তার নিজের সিংহাসন ও মহাকর্তৃত্ত্ব এই পশুকে দিল।
3 আমি লক্ষ্য করলাম যে তার একটি মাথায় যেন এক মৃত্যুজনক ক্ষত রয়েছে; কিন্তু সেই মৃত্যুজনক ক্ষতটিকে সারিয়ে তোলা হল। এই দেখে সমস্ত জগতের লোক আশ্চর্য হয়ে গেল; আর তারা সেই পশুর অনুসরণ করল। 4 ঐ পশুকে এমন ক্ষমতা দেবার জন্য লোকেরা সেই নাগের আরাধনা করতে লাগল। তারা সেই পশুরও আরাধনা করে বলল, “এই পশুর মতো আর কে আছে, কেই বা এর সঙ্গে যুদ্ধ করতে সক্ষম?”
5 গর্ব করার ও ঈশ্বর নিন্দা করার জন্য সেই পশুটিকে অনুমতি দেওয়া হল। বিয়াল্লিশ মাস ধরে এই কাজ করার ক্ষমতা তাকে দেওয়া হল। 6 তাতে সে ঈশ্বরের অপমান করতে শুরু করল, ঈশ্বরের নামের, তাঁর বাসস্থানের আর স্বর্গবাসী সকলের নিন্দা করতে লাগল। 7 ঈশ্বরের পবিত্র লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে ও তাদের পরাস্ত করবার ক্ষমতা তাকে দেওয়া হল; আর জগতের সমস্ত বংশ, লোকসমাজ, ভাষা ও জাতির ওপর কর্তৃত্ত্ব করার ক্ষমতাও তাকে দেওয়া হল। 8 পৃথিবীর সমস্ত মানুষ, যাদের নাম জগত সৃষ্টির আগে থেকে সেই উৎসর্গীকৃত মেষশাবকের জীবন পুস্তকে লেখা হয় নি, তারা সকলে ঐ পশুর ভজনা করবে। ইনি সেই মেষশাবক যিনি হত হয়েছিলেন।
9 যার কান আছে সে শুনুক:
10 বন্দী হবার জন্য যে নিরুপিত
তাকে বন্দী হতে হবে,
যদি তরবারির আঘাতে হত হওয়া কারও জন্য
নির্ধারিত থাকে তবে তাকে তরবারির আঘাতে হত হতে হবে।
এর অর্থ ঈশ্বরের পবিত্র লোকদের ধৈর্য্য্য্য ও বিশ্বাস অবশ্যই থাকবে।
11 এরপর আমি পৃথিবীর মধ্য থেকে আর একটি পশুকে উঠে আসতে দেখলাম। মেষশাবকের মতো তার দুটি শিং ছিল, কিন্তু সে নাগের মত কথা বলত। 12 সে ঐ প্রথম পশুটির সমস্ত কর্তৃত্ত্ব প্রথম পশুর উপস্থিতিতে প্রয়োগ করল এবং সেই শক্তিবলে বিশ্বের সকল লোককে প্রথম পশুটির আরাধনা করতে বাধ্য করল, যার মাথার ক্ষত সেরে গিয়েছিল। 13 দ্বিতীয় পশুটি মহা অলৌকিক সব কাজ করতে লাগল, এমন কি সকলের চোখের সামনে আকাশ থেকে পৃথিবীতে আগুন নামাল।
14 এইভাবে সে প্রথম পশুর সেবার্থে তাকে প্রদত্ত শক্তির বলে অলৌকিক কাজ করে পৃথিবীবাসীদের ঠকাল। সে পৃথিবীর লোকদের বলল, “যে পশু তরবারির আঘাতে আহত হয়েও বেঁচে উঠেছে, তার সম্মানার্থে একঢি মূর্তি গড়।” 15 একে এমন ক্ষমতা দেওয়া হল যাতে সে প্রথম পশুর প্রতিমার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করতে পারে, যেন সেই প্রতিমা কথা বলতে পারে ও যে সেই পশুর প্রতিমার আরাধনা না করে তাকে হত্যা করার আদেশ দেয়। 16 এই পশু কি ক্ষুদ্র, কি মহান, ধনী ও দরিদ্র, স্বাধীন ও ক্রীতদাস, সকলকে তাদের ডানহাতে অথবা কপালে এক বিশেষ চিহ্নের ছাপ দিতে বাধ্য করাল। 17 কেউই এই বিশেষ চিহ্নের ছাপ ছাড়া কেনা-বেচা করতে পারবে না। (এই চিহ্ন পশুর নামের ছাপ অথবা সংখ্যাসূচক ছাপ।)
18 যে বুদ্ধিমান সে ঐ পশুর সংখ্যা গণনা করুক। এরজন্য বিজ্ঞতার প্রয়োজন। ঐ সংখ্যাটি একটি মানুষের নামের সংখ্যা আর সেই সংখ্যা হচ্ছে 666।
মুক্তির গীত
14 এরপর আমি সিয়োন পর্বতের ওপর এক মেষশাবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে 144,000 জন লোক। তাদের প্রত্যেকের কপালে তাঁর নাম ও তাঁর পিতার নাম লিখিত।
2 পরে আমি স্বর্গ থেকে শুনতে পেলাম প্রবল জলকল্লোলের মতো, প্রচণ্ড মেঘ গর্জনের মতো এক কন্ঠস্বর; যে স্বর আমি শুনলাম তাতে মনে হল যেন একটা বীণাবাদক দল তাঁদের বীণা বাজাচ্ছেন। 3 তাঁরা সকলে সিংহাসনের সামনে ও সেই চারজন প্রাণী ও প্রাচীনদের সামনে এক নতুন গীত গাইছিলেন। পৃথিবী থেকে যাদের মূল্য দিয়ে কেনা হয়েছিল সেই 144,000 জন লোক ছাড়া আর অন্য কেউই সেই গান শিখতে পারল না।
4 এই 144,000 জন লোক হলেন তাঁরা যাঁরা স্ত্রীলোকদের সংসর্গে নিজেদের কলুষিত করেন নি, কারণ তাঁরা খাঁটি। মেষশাবক যেখানে যান তাঁরা সেখানেই তাঁকে অনুসরণ করেন। পৃথিবীর লোকদের মধ্য থেকে এই 144,000 জন লোককে মুক্ত করা হয়েছে। ঈশ্বর ও মেষশাবকের উদ্দেশ্যে তাঁরা মনুষ্যদের মধ্য থেকে অগ্রিমাংশরূপে গৃহীত হয়েছেন। 5 তাঁদের মুখে কোন মিথ্যা কথা পাওয়া যায় নি। তাঁরা নির্দোষ।
তিনজন স্বর্গদূত
6 পরে আমি আর একজন স্বর্গদূতকে আকাশপথে উড়ে যেতে দেখলাম। পৃথিবীবাসী লোকদের কাছে, পৃথিবীর সকল জাতি, উপজাতি, সকল ভাষাভাষী লোকের কাছে ঘোষণা করার জন্য এই স্বর্গদূতের কাছে ছিল অনন্তকালীন সুসমাচার। 7 স্বর্গদূত উদাত্ত কন্ঠে এই কথা বললেন, “ঈশ্বরকে ভয় করো ও তাঁর প্রশংসা করো, কারণ সময় হয়েছে যখন ঈশ্বর সমস্ত লোকদের বিচার করবেন। যিনি স্বর্গ, পৃথিবী, সমুদ্র ও সমস্ত জলের উৎস সৃষ্টি করেছেন, সেই ঈশ্বরেরই উপাসনা করো।”
8 এরপর প্রথম স্বর্গদূতদের পিছন পিছন দ্বিতীয় স্বর্গদূত উড়ে এসে বললেন, “পতন হল! মহানগরী বাবিলের পতন হল! সে সমস্ত জাতিকে ঈশ্বরের ক্রোধের ও তার ব্যভিচারের মদিরা পান করিয়েছে।”
9 এরপর ঐ দুজন স্বর্গদূতের পেছনে আর এক স্বর্গদূত এসে চিৎকার করে বললেন, “যদি কেউ সেই পশু ও তার প্রতিমার আরাধনা করে আর কপালে অথবা হাতে তার ছাপধারণ করে 10 তবে সেও ঈশ্বরের সেই রোষ মদিরা পান করবে যা ঈশ্বরের ক্রোধের পাত্রে অমিশ্রিত অবস্থায় ঢালা হচ্ছে। পবিত্র স্বর্গদূতদের ও মেষশাবকের সামনে জ্বলন্ত গন্ধকে ও আগুনে পুড়ে তাকে কি নিদারুণ যন্ত্রণাই না পেতে হবে। 11 তাদের যন্ত্রণার ধোঁয়া যুগপর্যায়ে যুগে যুগে উপরে উঠতে থাকবে। যাঁরা সেই পশু ও তাঁর মূর্তির আরাধনা করে অথবা যে কেউ তার নামের ছাপ ধারণ করে, তারা দিনে কি রাতে কখনও বিশ্রাম পাবে না।” 12 এখানেই ঈশ্বরের পবিত্র লোকদের ধৈর্য্য্য্যের প্রয়োজন, যারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করবে ও যীশুর প্রতি বিশ্বাসে স্থির থাকবে।
13 এরপর আমি স্বর্গ থেকে একটা রব শুনলাম, “তুমি এই কথা লেখ; এখন থেকে মৃত লোকেরা ধন্য, যারা প্রভুর সঙ্গে যুক্ত থেকে মৃত্যুবরণ করেছে।”
আত্মা একথা বলছেন, “হ্যাঁ, এ সত্য। তারা তাদের কঠোর পরিশ্রম থেকে বিশ্রাম লাভ করবে, কারণ তাদের সব সত্কর্ম তাদের অনুসরণ করে।”
পৃথিবীর শস্য কর্তন
14 পরে আমি তাকিয়ে দেখলাম, আমার সামনে একখণ্ড সাদা মেঘ। সেই মেঘের ওপর মানবপুত্রের[a] মতো একজন বসে আছেন। তাঁর মাথায় সোনার মুকুট ও তাঁর হাতে একটা ধারালো কাস্তে। 15 এরপর মন্দির থেকে আর একজন স্বর্গদূত বাইরে এলেন। যিনি মেঘের ওপরে বসে আছেন তাঁকে তিনি বললেন, “আপনার কাস্তে চালান ও শস্য সংগ্রহ করুন, কারণ শস্য সংগ্রহের সময় হয়েছে। পৃথিবীর সব শস্য পেকেছে।” 16 তাই যিনি সেই মেঘের ওপর বসেছিলেন তিনি পৃথিবীর ওপর কাস্তে চালালেন আর পৃথিবীর ফসল তোলা হল।
17 এরপর স্বর্গের মন্দির থেকে আর একজন স্বর্গদূত বেরিয়ে এলেন। এই স্বর্গদূতের হাতে এক ধারালো কাস্তে ছিল, 18 আর যজ্ঞবেদী থেকে অন্য এক স্বর্গদূত উঠে এলেন, যাঁর আগুনের ওপরে কর্তৃত্ত্ব করার ক্ষমতা ছিল। তিনি ঐ ধারালো কাস্তে হাতে যে স্বর্গদূত ছিলেন তার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে এই কথা বললেন, “তোমার ধারালো কাস্তে লাগাও, পৃথিবীর সমস্ত আঙ্গুর ক্ষেতের আঙ্গুরের থোকাগুলি কাট, কারণ সমস্ত আঙ্গুর পেকে গেছে।” 19 তখন সেই স্বর্গদূত পৃথিবীর ওপর কাস্তে চালিয়ে পৃথিবীর সমস্ত আঙ্গুর সংগ্রহ করে ঈশ্বরের ক্রোধের মাড়াইকলে ঢেলে দিলেন। 20 নগরের বাইরে মাড়াইকলে আঙ্গুরগুলি মাড়াই করা হলে পরে সেই মাড়াইকল থেকে রক্ত নিঃসৃত হল। সেই রক্ত উচ্চতায় ঘোড়ার এক বলগা পর্যন্ত এবং দুরত্বে 200 মাইল প্রবাহিত হল।
শেষ আঘাতের স্বর্গদূতগণ
15 পরে আমি স্বর্গে আর একটি মহত্ ও বিস্ময়কর চিহ্ন দেখলাম। সপ্তম স্বর্গদূতকে সপ্ত আঘাত নিয়ে আসতে দেখলাম। এগুলিই শেষতম আঘাত। এই আঘাতগুলির দ্বারা ঈশ্বরের মহাক্রোধের অবসান হবে।
2 এরপর আমি অগ্নিমিশ্রিত কাঁচের সমুদ্রের মত কিছু একটা দেখলাম। যারা সেই পশু, তার মূর্তি ও তার নামের সংখ্যাকে জয় করেছে, তারা ঈশ্বরের দেওয়া বীনা হাতে ধরে সেই কাঁচের সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে ছিল। 3 তারা ঈশ্বরের দাস মোশির গীত ও মেষশাবকের গীত গাইছিল:
“হে প্রভু ঈশ্বর ও সর্বশক্তিমান,
মহত্ ও আশ্চর্য তোমার ক্রিয়া সকল,
হে জাতিবৃন্দের রাজন!
ন্যায় ও সত্য তোমার পথ সকল।
4 হে প্রভু, কে না তোমার নামের প্রশংসা করবে?
কারণ তুমিই একমাত্র পবিত্র।
সমস্ত জাতি তোমার সামনে
এসে তোমার উপাসনা করবে,
কারণ তোমার ন্যায়সঙ্গত কাজ প্রকাশিত হয়েছে।”
5 এরপর আমি স্বর্গের মন্দির, ঈশ্বরের পবিত্র উপস্থিতির তাঁবু দেখলাম। মন্দিরটি খোলা ছিল। 6 সেই সাতজন স্বর্গদূত যাঁদের ওপর শেষ সাতটি হানবার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা সেই মন্দির থেকে বাইরে এলেন। তাঁরা শুচি শুভ্র মসীনার পোশাক পরিহিত, তাঁদের বুকে সোনার ফিতে বাঁধা। 7 পরে সেই চার প্রাণীর মধ্য থেকে একজন ঐ সাতজন স্বর্গদূতদের হাতে একে একে তুলে দিলেন সাতটি সোনার বাটি, সেগুলি যুগপর্যায়ে যুগে যুগে জীবন্ত ঈশ্বরের রোষে পরিপূর্ণ। 8 তাতে ঈশ্বরের মহিমা ও পরাক্রম হতে উৎপন্ন ধোঁয়ায়় মন্দিরটি পরিপূর্ণ হল। আর সেই সপ্ত স্বর্গদূতদের সপ্ত আঘাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ মন্দিরের মধ্যে প্রবেশ করতে পারল না।
ঈশ্বরের ক্রোধপূর্ণ পাত্রসকল
16 তখন আমি মন্দির থেকে এক উদাত্ত কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম, তা ঐ সাতজন স্বর্গদূতকে বলছে, “যাও, ঈশ্বরের রোষের সেই সাতটি বাটি পৃথিবীতে ঢেলে দাও।”
2 তখন প্রথম স্বর্গদূত গিয়ে পৃথিবীর ওপরে তাঁর বাটিটি ঢেলে দিলেন, তাতে যারা সেই পশুর ছাপ ধারণ করেছিল, যারা তাঁর মূর্তির উপাসনা করেছিল তাদের গায়ে এক কুৎসিত বেদনাদায়ক ঘা দেখা দিল।
3 এরপর দ্বিতীয় স্বর্গদূত তাঁর বাটিটি সমুদ্রের উপর ঢেলে দিলেন। তাতে সমুদ্রের জল মরা মানুষের রক্তের মতো হয়ে গেল, আর তাতে সমুদ্রের মধ্যে যত জীবন্ত প্রাণী ছিল সবই মারা পড়ল।
4 এরপর তৃতীয় স্বর্গদূত তাঁর বাটিটি পৃথিবীর নদনদী ও জলের উৎসে ঢেলে দিলেন, তাতে সব জল রক্ত হয়ে গেল। 5 তখন আমি জল সমূহের স্বর্গদূতকে বলতে শুনলাম:
“তুমি আছ ও ছিলে,
তুমিই পবিত্র,
তুমি ন্যায়পরায়ণ কারণ তুমি এইসব বিষয়ের বিচার করেছ।
6 ওরা পবিত্র লোকদের ও ভাববাদীদের রক্তপাত করেছে;
আর তার প্রতিফলস্বরূপ আজ তুমিও এইসব লোককে রক্তপান করতে দিয়েছ,
এটাই এদের প্রাপ্য।”
7 তখন আমি যজ্ঞবেদীকে বলতে শুনলাম,
“হ্যাঁ, প্রভু ঈশ্বর যিনি সর্বশক্তিমান,
তোমার বিচার সত্য ও ন্যায়সঙ্গত।”
8 পরে চতুর্থ স্বর্গদূত সূর্যের ওপরে তাঁর বাটিটি ঢেলে দিলেন। তাতে লোকদের আগুনে পোড়াবার ক্ষমতা সূর্যকে দেওয়া হল। 9 তখন সেই প্রচণ্ড তাপে মানুষদের পোড়ানো হল। ঈশ্বরকে তারা অভিশাপ দিতে লাগল। এই সমস্ত আঘাতের উপর ঈশ্বরের কর্তৃত্ত্ব ছিল; কিন্তু তারা তবু তাদের মন ফেরালো না আর ঈশ্বরের মহিমা কীর্তন করল না।
10 এরপর পঞ্চম স্বর্গদূত তাঁর বাটিটি সেই পশুর সিংহাসনের ওপর ঢেলে দিলেন। ফলে তার রাজ্যের সব জায়গায় ঘোর অন্ধকার হয়ে গেল, আর লোকেরা যন্ত্রণায় নিজেদের জিভ কামড়াতে লাগল। 11 বেদনা ও ক্ষতের জন্য তারা স্বর্গের ঈশ্বরকে অভিশাপ দিতে লাগল, কিন্তু তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করল না।
12 এরপর ষষ্ঠ দূত তাঁর বাটিটি নিয়ে মহানদী ইউফ্রেটিসের ওপর ঢেলে দিলেন। তাতে নদীর জল শুকিয়ে গেল ও প্রাচ্যের রাজাদের জন্য আসার পথ প্রস্তুত হল। 13 এরপর আমি দেখলাম সেই সাপের মুখ থেকে, পশুর মুখ থেকে ও ভণ্ড ভাববাদীর মুখ থেকে ব্যাঙের মতো দেখতে একটি একটি করে তিনটি অশুচি আত্মা বেরিয়ে এল। 14 সেই অশুচি আত্মারা ভূতের আত্মা, যারা নানা অলৌকিক কাজ করে। তারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বিরুদ্ধে মহাবিচারের দিনে যুদ্ধ করার জন্য সমস্ত জগৎ ঘুরে রাজাদের একত্রিত করল।
15 “শোন! চোর যেমন আসে আমি তেমনি আসব। ধন্য সেই ব্যক্তি যে জেগে থাকে, আর নিজের পোশাক নিজের কাছে রাখে, যাতে তাকে উলঙ্গ হয়ে না বেড়াতে হয় এবং লজ্জায় না পড়তে হয়।”
16 পরে ঐ অশুচি আত্মারা ইব্রীয় ভাষায় যাকে হরমাগিদোন বলে সেই স্থানে নিয়ে এসে রাজাদের একত্রিত করল।
17 এরপর সপ্তম স্বর্গদূত আকাশের ওপর তাঁর বাটিটি ঢেলে দিলেন। তখন স্বর্গের মন্দিরের সেই সিংহাসন থেকে শোনা গেল এক পরম উদাত্ত কন্ঠস্বর, “সমাপ্ত হল!” 18 তাতে বিদ্যুৎ-ঝলক, মেঘ-গর্জন, বজ্রপাত এবং ভয়ঙ্কর এক ভূমিকম্প হল। পৃথিবীতে মানুষের উৎপত্তিকাল থেকে এমন ভূমিকম্প আর কখনও হয় নি। 19 সেই মহানগরী তাতে ভেঙে টুকরো হয়ে গেল, আর ধূলিসাৎ হয়ে গেল বিধর্মীদের সব শহর। ঈশ্বর মহান বাবিলকে শাস্তি দিতে ভুলে যান নি। তিনি তাঁর প্রচণ্ড ক্রোধে পূর্ণ সেই পানপাত্র মহানগরীকে দিলেন। 20 এর ফলে সমস্ত দ্বীপ অদৃশ্য হয়ে গেল, আর পর্বতমালা সমভূমি হয়ে গেল। 21 আকাশ থেকে মানুষের ওপরে বিরাট বিরাট শিলা পড়তে লাগল, এক একটি শিলা ছিল এক এক মন ভারী; আর এই শিলা বৃষ্টির জন্য লোকরা ঈশ্বরের নিন্দা করতে লাগল, কারণ সেই আঘাত ছিল নিদারুণ ভয়ঙ্কর এক আঘাত।
পশুর ওপরে স্ত্রীলোক
17 এরপর ঐ সাতটি বাটি যাদের হাতে ছিল, সেই সাতজন স্বর্গদূতদের মধ্যে একজন এসে আমায় বললেন, “এস, বহু নদীর ওপরে যে মহাবেশ্যা বসে আছে, আমি তোমাকে তার কি শাস্তি হবে তা দেখাবো। 2 তার সঙ্গে পৃথিবীর রাজারা যৌন পাপ করেছে, আর পৃথিবীর লোকরা তার অসৎ যৌন ক্রিয়ার মদিরা পান করে মত্ত হয়েছে।”
3 তখন তিনি আত্মার পরিচালনায় আমাকে প্রান্তরের মধ্যে নিয়ে গেলেন। সেখানে আমি একটি নারীকে দেখলাম, সে লাল রঙের এক পশুর ওপর বসে আছে। সেই পশুটির সাতটা মাথা ও দশটা শিং, তার সারা গায়ে ঈশ্বর নিন্দা সূচক নাম লেখা ছিল। 4 সেই নারীর পরনে ছিল বেগুনী ও লাল রঙের বসন, সোনা ও বহুমূল্য মণি-মুক্তা খচিত অলঙ্কার তার অঙ্গে, তার হাতে সোনার একটি পানপাত্র ছিল, ঘৃন্য দ্রব্যে ও তার যৌন পাপ মালিন্যে তা পূর্ণ। 5 তার কপালে রহস্যপূর্ণ এক নাম লেখা আছে:
মহতী বাবিল,
পৃথিবীর বেশ্যাদের
এবং পৃথিবীর যাবতীয় ঘৃন্য জিনিসের জননী।
6 আমি দেখলাম, সেই নারী ঈশ্বরের পবিত্র লোকদের রক্তে মাতাল হয়ে আছে। এই পবিত্র লোকরাই যীশুর বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিল।
সেই নারীকে দেখে আমি রীতিমতো অবাক হয়ে গেলাম। 7 সেই স্বর্গদূত আমায় জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি অবাক হচ্ছ কেন? আমি ঐ নারী ও তার বাহন পশু সম্পর্কে নিগূঢ়তত্ত্ব জানাচ্ছি। ঐ পশুটির সাতটি মাথা এবং দশটি শিং আছে। 8 তুমি যে পশুকে দেখলে, এক সময় সে বেঁচে ছিল, কিন্তু এখন সে বেঁচে নেই। সে পাতাল থেকে উঠে আসবে ও তার ধ্বংস স্থানে যাবে। জগৎ পত্তনের সময় থেকে পৃথিবী নিবাসী যত লোকের নাম জীবন পুস্তকে লিখিত নেই, তারা ঐ পশুকে দেখে বিস্মিত হবে, কারণ পশুটি একদিন ছিল, এখন আর নেই, কিন্তু পরে আবার আসবে।
9 “এটা বোঝার জন্য বিজ্ঞ মনের প্রয়োজন। ঐ সপ্ত মস্তক হচ্ছে সপ্ত পর্বত, যার ওপর ঐ নারী বসে আছে। তারা আবার সপ্ত রাজার প্রতীক। 10 তাদের মধ্যে প্রথম পাঁচ জনের পতন হয়েছে। একজন আছে আর অন্য জন এখনও আসে নি। সে এলে কেবল অল্পকালই থাকবে। 11 যে পশু এক সময়ে জীবিত ছিল, আর এখন নেই, সেই হচ্ছে অষ্টম রাজা। এই অষ্টম রাজা সেই সাত রাজার একটি আর সে তার ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।
12 “আর তুমি যে দশটি শিং দেখলে তা হল দশটি রাজা, তারা এখনও রাজ্য পায় নি, কিন্তু সেই পশুর সঙ্গে এক ঘন্টার জন্য রাজাদের মতো কর্তৃত্ত্ব করার ক্ষমতা পাবে। 13 এই দশ রাজার উদ্দেশ্য এক, তারা নিজেদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ত্ব সেই পশুকে দেবে। 14 তারা মেষশাবকের সঙ্গে যুদ্ধ করবে কিন্তু মেষশাবক তাদের পরাজিত করবে কারণ তিনি প্রভুদের প্রভু ও রাজাদের রাজা। তিনি তাঁর মনোনীত এবং বিশ্বস্ত লোকদের সাহায্যে তাদের পরাজিত করবেন। এই লোকদের তিনি আহ্বান করেছিলেন।”
15 আর স্বর্গদূত আমায় বললেন, “দেখ, ঐ গণিকা যে জলের ওপর বসে আছে, সেই জল হচ্ছে জাতিগণ, প্রজাগণ, জনগণ ও ভিন্ন ভাষাভাষীর লোকসমুহ। 16 তুমি যে দশটা শিং ও পশুকে দেখলে, তারা ঐ গণিকাকে ঘৃণা করবে। তারা তার সব কিছু কেড়ে নিয়ে তাকে উলঙ্গ করে তার দেহটাকে খাবে, তারপর তাকে আগুনে পুড়িয়ে দেবে। 17 এসব ঘটবে কারণ ঈশ্বর তাঁর ইচ্ছা পূরণ করতে তাদের হৃদয়ে এই প্রবৃত্তি দেবেন। সেজন্য তারা সকলে একচিত্ত হয়ে যে পর্যন্ত ঈশ্বরের বাক্য সফল না হয় সেই পর্যন্ত নিজের নিজের ক্ষমতা সেই পশুকে দেবে, যাতে সে রাজত্ব করতে পারে। 18 তুমি যে নারীকে দেখলে সে ঐ মহানগরীর প্রতীক, যে পৃথিবীর রাজাদের ওপরে কর্তৃত্ত্ব করে।”
বাবিল ধ্বংস হল
18 এইসব ঘটনার পর আমি আর একজন স্বর্গদূতকে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখলাম। তিনি মহাপরাক্রান্ত স্বর্গদূত, তাঁর জ্যোতি সমস্ত পৃথিবীকে আলোকিত করে তুলল। 2 তিনি প্রবল শব্দে চেঁচিয়ে উঠলেন:
“পতন হল!
মহানগরী বাবিলের পতন হল!
সে ভূতের আবাসে পরিণত হয়েছে।
সেই নগরী হয়েছে সব রকমের অশুচি আত্মার আবাস।
সে যতো অশুচি পাখীদের বাসা এবং যতো নোংরা
ও ঘৃন্য পশুদের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
3 পৃথিবীর সমস্ত মানুষ তার অসৎ যৌন পাপের মদিরা
ও ঈশ্বরের রোষ মদিরা পান করেছে।
পৃথিবীর রাজারা তার সঙ্গে ব্যভিচার করেছে;
আর পৃথিবীর ব্যবসায়ীরা তার অসংযত বিলাসিতার সুবাদে ধনবান হয়ে উঠেছে।”
4 এরপর আমি স্বর্গ থেকে আর একটি কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম, সে বলছে:
“হে আমার প্রজারা, ওখান থেকে বেরিয়ে এস,
তোমরা যেন ওর পাপের ভাগী না হও;
আর ওর প্রাপ্য আঘাত যেন তোমাদের ওপর না আসে।
5 কারণ ওর পাপ স্তূপীকৃত হয়ে গগণচুম্বী হয়েছে;
আর ঈশ্বর ওর সব অপরাধ স্মরণ করেছেন।
6 সে অপরের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করেছে, তোমরাও তার প্রতি সেরূপ ব্যবহার কর।
সে যেমন কাজ করেছে, তোমরা তার দ্বিগুণ প্রতিফল তাকে দাও।
অপরের জন্য পানপাত্রে সে যে পরিমাণ মেশাতো
তোমরা তার জন্য সেই পাত্রে দ্বিগুণ মেশাও।
7 সে (বাবিল) যত অহঙ্কার ও বিলাসিতায় জীবন কাটাতো
তোমরা তাকে তত যন্ত্রণা ও মনোকষ্ট দাও।
কারণ সে নিজের বিষয়ে বলত, ‘আমি রাণী, রাণীর মতোই সিংহাসনে বসে আছি।
আমি বিধবা নই,
আর আমি কখনই দুঃখ পাব না।’
8 অতএব এক দিনের মধ্যেই তার ওপর এই আঘাত আসবে;
মৃত্যু, শোক ও দুর্ভিক্ষ আর আগুনে
পুড়িয়ে তাকে ধ্বংস করা হবে।
কারণ প্রভু ঈশ্বর যিনি তার বিচার করেছেন তিনি সর্বশক্তিমান।
9 “জগতের যে সব রাজারা তার সঙ্গে যৌন পাপে লিপ্ত হয়েছে ও বিলাসে কাটিয়েছে, তারা তাকে জ্বলতে দেখে ও তার থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখে বিলাপ ও হাহাকার করবে।” 10 তার যন্ত্রণার ভয়াবহতা দেখে ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে বলবে:
‘হায়! হায়! হে মহান নগরী!
ও শক্তিশালী বাবিল নগরী!
এক ঘন্টার মধ্যেই তোমার ওপর শাস্তি নেমে এল!’
11 “আর পৃথিবীর ব্যবসায়ীরা তার (বাবিলের) জন্য কাঁদছে ও হাহাকার করছে, কারণ তাদের বাণিজ্য দ্রব্য আর কেউ কেনে না। 12 তাদের বাণিজ্যদ্রব্যগুলি ছিল: সোনা, রূপো, মণি, মুক্তা, মসীনার কাপড়, বেগুনী রঙের কাপড়, রেশমের কাপড়, লাল রঙের কাপড়, সব রকমের চন্দন কাঠ, হাতির দাঁতের তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র, মূল্যবান কাঠ, পিতলের, কাঁসার, লোহার ও মার্বেল পাথরের সব রকমের পাত্র, 13 আর দারুচিনি, মশলা, ধূপ, সুগন্ধি নির্যাস, মস্তকি, গুগ্গুল, মদ ও জলপাইয়ের তেল, ময়দা, আটা, গরু, মেষ, ঘোড়ার গাড়ী আর মানুষের দেহ এবং প্রাণও। সেই ব্যবসায়ীরা কেঁদে কেঁদে বলবে:
14 ‘হে বাবিল, যে সব ভাল ভাল জিনিসের ওপর তোমার মন পড়ে ছিল তার সবই তোমার কাছ থেকে চলে গেছে।
তোমার সব রকমের বিলাসিতা ও শোভা প্রাচুর্য্য সবই ধ্বংস হয়ে গেছে।
তুমি তা আর কখনই দেখতে পাবে না।’
15 “ঐ সব জিনিসের ব্যবসায়ীরা তার ধনে ধনী হয়েছিল, তারা তার যন্ত্রণা দেখে ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদবে, আর হাহাকার করে বলবে:
16 ‘হায়! হায়! হায় মহানগরী!
সে মসীনার কাপড়, বেগুনী রঙের কাপড়
ও লাল রঙের কাপড় পরত।
সে সোনা, মণি, মুক্তা খচিত গয়না পরত।
17 এক ঘন্টার মধ্যে তার সেই মহাসম্পদ ধ্বংস হল!’
“আর প্রত্যেক জাহাজের প্রধান কর্মচারীরা, জলপথের যাত্রীরা, নাবিকরা ও সমুদ্রেই জীবিকা যাদের, তারা সকলে বাবিল থেকে সরে দাঁড়ালো। 18 জ্বলন্ত বাবিলের ধোঁয়া দেখে তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘আর কোন নগর এই মহানগরীর মত ছিল না!’ 19 তারা সকলে নিজেদের মাথায় ধুলো ছিটিয়ে হাহাকার করে বলতে লাগল:
‘হায়! হায়! ঐ মহানগরীর কি দুর্দশাই না হল!
যার সম্পদে সমুদ্রগামী জাহাজের কর্তারা ধনবান হত,
এক ঘন্টার মধ্যে সে ধ্বংস হয়ে গেল।
20 এই জন্য হে স্বর্গ, উল্লসিত হও!
হে ঈশ্বরের পবিত্র লোকরা! হে প্রেরিতরা আর ভাববাদীরা, উল্লসিত হও!
কারণ সে তোমাদের প্রতি যে অন্যায় করেছে, ঈশ্বর তার শাস্তি তাকে দিয়েছেন।’”
21 পরে এক পরাক্রান্ত স্বর্গদূত খুব বড় যাঁতার মতো পাথর তুলে নিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে বললেন:
“মহানগরী বাবিলকে এই পাথরটির মতো ছুঁড়ে ফেলা হবে;
আর চিরকালের মতো সে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
22 তোমার মধ্যে বীণাবাদক, বাঁশীবাদক, তূরীবাদক ও গায়কদের গান-বাজনা আর কখনও শোনা যাবে না।
তোমার মধ্যে আর কখনও কোন শিল্পকারকে পাওয়া যাবে না,
গম ভাঙার যাঁতার শব্দ আর কখনও শোনা যাবে না।
23 তোমার মধ্যে আর কখনও প্রদীপ জ্বলবে না,
বর-কণের কথাবার্তা আর কখনও শোনা যাবে না।
তোমার ব্যবসায়ীরা পৃথিবীর মধ্যে বিখ্যাত হয়েছিল।
তোমার তন্ত্র-মন্ত্রের জাদুতে সমস্ত জাতি ভ্রান্ত হয়েছিল।
24 বাবিল সমস্ত ভাববাদী, ঈশ্বরের পবিত্র লোক,
আর পৃথিবীতে যত লোককে হত্যা করা হয়েছে, তার রক্তপাতের দোষে দোষী।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International