Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
প্র.বা. 6-11

মেষশাবকটি পুঁথি খুললেন

মেষশাবক যখন সেই সাতটির মধ্যে প্রথম সীলমোহরটি ভেঙে খুললেন, তখন আমি সেই চারজন প্রাণীর মধ্যে একজনকে দেখলাম ও তার মেঘ গর্জনের মতো কন্ঠস্বর শুনলাম। সে বলল, “এস!” এরপর আমি দেখলাম, আমার সামনে একটি সাদা রঙের ঘোড়া। তার ওপর যিনি বসে আছেন তাঁর হাতে একটি ধনুক ছিল। তাঁকে একটা মুকুট পরিয়ে দেওয়া হলে তিনি যুদ্ধ জয় করতে বিজেতার মত বাইরে এলেন।

মেষশাবক যখন দ্বিতীয় সীলমোহরটি ভাঙলেন তখন আমি সেই প্রাণীদের মধ্যে দ্বিতীয় জনকে বলতে শুনলাম, “এস!” তখন আর একটি আগুনের মতো লাল রঙের ঘোড়া বার হয়ে এল। সেই ঘোড়াটির ওপর যে বসে আছে তাকে পৃথিবী থেকে শান্তি কেড়ে নেবার ক্ষমতা দেওয়া হল; আর দেওয়া হল সেই ক্ষমতা, যার বলে মানুষ পরস্পরকে বধ করবে। তাকে একটা বড় তরবারি দেওয়া হল।

মেষশাবক যখন তৃতীয় সীলমোহরটি ভাঙ্গলেন, আমি শুনলাম, সেই প্রাণীদের মধ্যে তৃতীয় জন বললেন, “এস!” পরে আমি দেখলাম, একটা কালো ঘোড়া আমার সামনে দাঁড়িয়ে, তার ওপর যে বসে আছে, তার হাতে একটা দাঁড়িপাল্লা। এরপর আমি সেই চারজন প্রাণীর মধ্য থেকে একটা স্বরের মত কোন একটা কিছু শুনতে পেলাম। সেই স্বর বলছে, “এক সের গম একজন মজুরের দৈনিক মজুরীর সমান; আর তিন সের যব, একজন মজুরের দৈনিক মজুরীর সমান। অলিভ তেল ও দ্রাক্ষারস নষ্ট করো না।”

মেষশাবক যখন চতুর্থ সীলমোহরটি ভাঙলেন, তখন আমি সেই প্রাণীদের মধ্যে চতুর্থ জনকে বলতে শুনলাম, “এস!” পরে আমি দেখলাম, একটা পাণ্ডুবর্ণ ঘোড়া আমার সামনে। তার ওপর যে বসে আছে তার নাম “মৃত্যু” আর পাতাল তার ঠিক পেছনেই আছে। তাকে পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ লোকের ওপরে কর্তৃত্ত্ব করবার ক্ষমতা দেওয়া হল, যেন সে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, মহামারী ও হিংস্র পশুদের দিয়ে সকলকে বধ করতে পারে।

মেষশাবক যখন পঞ্চম সীলমোহরটি ভাঙলেন, তখন আমি যজ্ঞবেদীর নীচে সেইসব আত্মাকে দেখলাম যাঁদের হত্যা করা হয়েছিল, কারণ তাঁরা ঈশ্বরের বার্তা বিশ্বস্তভাবে প্রচার করেছিলেন এবং তাঁদের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। 10 তাঁরা উচ্চকন্ঠে বললেন, “পবিত্র ও সত্য প্রভু, যাঁরা আমাদের হত্যা করেছে, পৃথিবীর সেই সমস্ত লোকদের বিচার করতে ও শাস্তি দিতে তুমি আর কতো দেরী করবে?” 11 তাঁদের প্রত্যেককে শুভ্র রাজ-পোশাক দেওয়া হল এবং আরও কিছুকাল অপেক্ষা করতে বলা হল, কারণ তাঁদের কিছু সহসেবক ভাই ও বোন তখনও ছিলেন যাঁরা তাঁদের মত নিহত হবেন। এই সমস্ত নিয়ম শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের অপেক্ষা করতে বলা হল।

12 পরে আমি যা দেখলাম, তিনি ষষ্ঠ সীলমোহরটি ভাঙলেন। তখন ভীষণ ভূমিকম্প হল। সূর্য কালো শোকবস্ত্রের মত হয়ে গেল আর চাঁদ রক্তের মতো লাল হয়ে গেল। 13 প্রবল বাতাসে নড়ে গাছ থেকে যেমন কাঁচা ডুমুর পড়ে যায়, তেমনি আকাশ থেকে নক্ষত্ররা পৃথিবীতে খসে পড়তে লাগল। 14 গোটানো পুঁথির মতো আকাশমণ্ডল অদৃশ্য হল। সমস্ত পাহাড় ও দ্বীপকে ঠেলে নিজের জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়া হল।

15 পৃথিবীর রাজাগণ, সমস্ত অধিপতি, সেনাবাহিনীর অধিনায়করা, ধনবানরা, শক্তিশালী লোকরা ও পৃথিবীর সব স্বাধীন লোক এবং সমস্ত দাস গুহার মধ্যেও পাহাড়গুলির পাথরের মধ্যে নিজেদের লুকিয়ে রাখলো। 16 তারা পর্বত এবং পাহাড়গুলোকে বলতে লাগল, “আমাদের ওপরে চেপে বসো এবং যিনি সিংহাসনে বসে আছেন তাঁর কাছ থেকে এবং মেষশাবকের ক্রোধের হাত থেকে আমাদের লুকিয়ে রাখো। 17 কারণ তাদের ক্রোধের মহাদিন এসে পড়ল। কার সাধ্য আছে তার সামনে দাঁড়াবার?”

ইস্রায়েলের 144,000 লোক

এরপর আমি দেখলাম, পৃথিবীর চার কোনে চারজন স্বর্গদূত দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরা পৃথিবীর চারটি বায়ুপ্রবাহকে আটকে রেখেছেন, যেন পৃথিবীর বা সমুদ্রের বা গাছের ওপর দিয়ে বাতাস না বয়। এরপর আমি আর এক স্বর্গদূতকে পূর্বদিক থেকে উঠে আসতে দেখলাম। তাঁর হাতে ছিল জীবন্ত ঈশ্বরের সীলমোহর। ঈশ্বর যে চারজন স্বর্গদূতকে পৃথিবী ও সমুদ্রে আঘাত করবার ক্ষমতা দিয়েছিলেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে তিনি চিৎকার করে বললেন, “দাঁড়াও, আমরা যতক্ষণ না আমাদের ঈশ্বরের দাসদের কপালে মোহর দ্বারা চিহ্ন না দিই, সে পর্যন্ত তোমরা পৃথিবী, সমুদ্র বা গাছের কোন ক্ষতি করো না।”

এরপর আমি শুনলাম কত লোকের কপালে চিহ্ন দেওয়া হল। মোট একলক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার লোক। তারা ছিল সমস্ত ইস্রায়েল গোষ্ঠীর ও জাতির।

যিহূদা গোষ্ঠীর12,000
রূবেণ গোষ্ঠীর12,000
গাদ গোষ্ঠীর12,000
আশের গোষ্ঠীর12,000
নপ্তালি গোষ্ঠীর12,000
মনঃশি গোষ্ঠীর12,000
শিমিয়োন গোষ্ঠীর12,000
লেবি গোষ্ঠীর12,000
ইষাখর গোষ্ঠীর12,000
সবূলূন গোষ্ঠীর12,000
যোষেফ গোষ্ঠীর12,000
বিন্যামীন গোষ্ঠীর12,000

বিশাল জনতা

এরপর আমি দেখলাম প্রত্যেক জাতির, প্রত্যেক বংশের এবং প্রত্যেক গোষ্ঠীর ও ভাষার অগণিত লোক সেই সিংহাসন ও মেষশাবকের সামনে এসে তারা দাঁড়িয়েছে। তাদের পরণে শুভ্র পোশাক এবং হাতে খেজুর পাতা। 10 তারা সকলে চিৎকার করে বলছে, “যিনি সিংহাসনে বসে আছেন, এই জয় সেই ঈশ্বরের ও মেষশাবকের দান।”

11 সমস্ত স্বর্গদূত সিংহাসনের প্রাচীনদের ও চারজন প্রাণীর চারদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁরা সিংহাসনের সামনে মাথা নীচু করে প্রণাম করলেন ও ঈশ্বরের উপাসনা করতে থাকলেন। 12 তাঁরা বললেন, “আমেন! প্রশংসা, মহিমা, প্রজ্ঞা, ধন্যবাদ, সম্মান, পরাক্রম ও ক্ষমতা যুগপর্যায়ের যুগে যুগে আমাদের ঈশ্বরেরই হোক্। আমেন!”

13 এরপর সেই প্রাচীনদের মধ্যে একজন আমায় জিজ্ঞেস করলেন, “শুভ্র পোশাক পর! এই লোকরা কে, আর এরা সব কোথা থেকে এসেছে?”

14 আমি তাঁকে বললাম, “মহাশয়, আপনি জানেন।”

তিনি আমায় বললেন, “এরা সেই লোক যারা মহানির্যাতন সহ্য করে এসেছে; আর মেষশাবকের রক্তে নিজের পোশাক ধুয়ে শুচীশুভ্র করেছে। 15 এই কারণেই এরা ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে; আর দিন রাত তাঁর মন্দিরে তাঁর উপাসনা করে চলেছে। যিনি সিংহাসনে বসে আছেন, তিনি এদের রক্ষা করবেন। 16 এরা আর কখনও ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত হবে না, এদের গায়ে রোদ বা তার প্রখর তাপও লাগবে না। 17 কারণ সিংহাসনের ঠিক সামনে যে মেষশাবক আছেন তিনি এদের মেষপালক হবেন, তাদের জীবন জলের প্রস্রবণের কাছে নিয়ে যাবেন আর ঈশ্বর এদের সমস্ত চোখের জল মুছিয়ে দেবেন।”

সপ্তম সীলমোহর

তারপর মেষশাবক সপ্তম সীলমোহরটি ভাঙলেন। তখন স্বর্গে প্রায় আধ ঘন্টার মতো সব নিস্তধ্ধ হয়ে গেল। তারপর আমি দেখলাম, ঈশ্বরের সামনে যে সাতজন স্বর্গদূত দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁদের হাতে সাতটি তূরী দেওয়া হল।

পরে আর এক স্বর্গদূত এসে যজ্ঞবেদীর কাছে দাঁড়ালেন, তাঁর হাতে সোনার ধুনুচি। তাঁকে প্রচুর ধূপ দেওয়া হল, যাতে তিনি তা স্বর্ণ সিংহাসনের সামনে ঈশ্বরের সমস্ত পবিত্র লোকের প্রার্থনার সঙ্গে নিবেদন করতে পারেন। ফলে ঈশ্বরের লোকদের প্রার্থনার সঙ্গে স্বর্গদূতের হাত থেকে সেই ধূপের ধোঁয়া ঈশ্বরের সামনে উঠল। পরে ঐ স্বর্গদূত ধুনুচি নিয়ে তাতে যজ্ঞবেদীর আগুন ভরে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করলেন। এর ফলে মেঘ গর্জন, উচ্চরব, বিদ্যুত্ চমক ও ভুমিকম্প হল।

সাত স্বর্গদূতের তূরীধ্বনি

তখন সেই সাতজন স্বর্গদূত তাদের সাতটি তূরী বাজাবার জন্য প্রস্তুত হলেন।

প্রথম স্বর্গদূত বাজালেন, তাতে পৃথিবীতে রক্ত মেশানো শিলা ও আগুন বর্ষন হল; ফলে পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশে আগুন ধরে গেল, আর এক তৃতীয়াংশে গাছপালা ও সমস্ত সবুজ ঘাস পুড়ে গেল।

দ্বিতীয় স্বর্গদূত তূরী বাজালেন আর দেখা গেল যেন বিরাট এক জ্বলন্ত পাহাড় সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলা হল। তাতে সমুদ্রের এক তৃতীয়াংশ জল রক্তাক্ত হয়ে গেল ও সামুদ্রিক জীবের এক তৃতীয়াংশ মারা পড়ল; আর সমুদ্রগামী সমস্ত জাহাজের এক তৃতীয়াংশ ধ্বংস হয়ে গেল।

10 পরে তৃতীয় স্বর্গদূত তূরী বাজালেন। তখন আকাশ থেকে জ্বলন্ত মশালের মতো এক বিরাট নক্ষত্র পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ নদী ও জলের উৎসের ওপর খসে পড়ল। 11 সেই নক্ষত্রের নাম নাগদানা[a] কারণ তা পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ জল তিক্ত করে দিল। এভাবে জল তেতো হওয়ার কারণে অনেক লোক মারা পড়ল।

12 এরপর চতুর্থ স্বর্গদূত তূরী বাজালেন আর সূর্যের এক তৃতীয়াংশ, চন্দ্রের এক তৃতীয়াংশ এবং সমস্ত নক্ষত্রের এক তৃতীয়াংশ এমনভাবে ঘা খেল যে তাদের এক তৃতীয়াংশ অন্ধকার হয়ে গেল। সেইভাবে দিনেরও এক তৃতীয়াংশ আলোবিহীন হল, আর রাত্রির অবস্থাও একই রকম হল।

13 এইসব কিছু দেখতে দেখতে হঠাৎ‌ আমি শুনতে পেলাম আকাশের উঁচু দিয়ে একটা ঈগল পাখি উড়ে যেতে যেতে চিৎকার করে এই কথা বলছে, “সন্তাপ! সন্তাপ! পৃথিবীবাসীদের সন্তাপ! কারণ বাকী তিনজন স্বর্গদূত যখন তূরী বাজাবে তখন সেই সন্তাপ শুরু হবে।”

পঞ্চম তূরীর প্রথম সন্ত্রাস শুরু

পরে পঞ্চম স্বর্গদূত তূরী বাজালেন, আর আমি দেখলাম স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে একটা তারা খসে পড়ল আর তারাটাকে অতল কূপ খোলার চাবি দেওয়া হল। নক্ষত্রটি অগাধ লোকের কূপটি খুলল। তত্ক্ষনাত্ ঐ কূপ থেকে বিরাট অগ্নিকুণ্ডের মধ্য থেকে যেমন ধোঁয়া বার হয় তেমনি ধোঁয়া নির্গত হল। এই ধোঁয়ার জন্য সূর্য ও বায়ুমণ্ডল অন্ধকার হয়ে গেল।

পরে সেই ধোঁয়া থেকে পঙ্গপালের ঝাঁক বার হয়ে পৃথিবীতে এল আর পৃথিবীর কাঁকড়া বিছের মধ্যে যে ক্ষমতা থাকে তাদের তা দেওয়া হল। পঙ্গপালদের বলা হল যেন তারা ঘাস, চারাগাছ বা পৃথিবীর গাছপালার কোন ক্ষতি না করে, কেবল তাদেরই ক্ষতি করে যাদের কপালে ঈশ্বরের চিহ্ন নেই। ঐ লোকদের মেরে ফেলতে তাদের অনুমতি দেওয়া হল না, কেবল পাঁচ মাস পর্যন্ত তাদের যন্ত্রণা দেবার অনুমতি দেওয়া হল। তাদের যন্ত্রণা, কাঁকড়াবিছে কামড়ালে মানুষের যেমন যন্ত্রণা হয় তেমনি হবে। তখন মানুষ মরতে চাইলেও মরতে পারবে না। তারা মৃত্যুর আকাঙ্খা করবে; কিন্তু মৃত্যু তাদের কাছ থেকে পালিয়ে যাবে।

সেই পঙ্গপালদের দেখতে যেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ঘোড়ার মতো। তাদের মাথায় সোনার মুকুটের মতো মুকুট ছিল। তাদের মুখমণ্ডল যেন মানুষের মুখগুলির মতো। স্ত্রীলোকের চুলের মতো তাদের মাথার চুল, আর তাদের দাঁত সিংহের দাঁতের মতো। বুকে তাদের বর্ম পরা, তা লোহার বর্মের মতো; আর বহু ঘোড়ায় টানা যুদ্ধের রথ ছুটলে যেমন আওয়াজ হয় তেমনি তাদের ডানার শব্দ। 10 তাদের হুলযুক্ত লেজ ছিল কাঁকড়া বিছের মতো। পাঁচ মাস পর্যন্ত তারা মানুষের যে ক্ষতি করবে তার ক্ষমতা ঐ লেজের মধ্যে আছে। 11 ঐ পঙ্গপালের রাজা হচ্ছে অগাধ লোকের স্বর্গদূত। ইব্রীয় ভাষায় তার নাম “আবদ্দোন,”[b] গ্রীক ভাষায় “আপল্লুয়োন” যার অর্থ বিনাশকারী।

12 প্রথম সন্তাপ কাটল, দেখ, এরপর আরও দুটি সন্তাপ আসছে।

ষষ্ঠ তূরীধ্বনির বিষ্ফোরণ

13 পরে ষষ্ঠ স্বর্গদূত তূরী বাজালে আমি ঈশ্বরের সামনে সোনার যজ্ঞবেদীর যে চারটি শিং আছে তার মধ্য থেকে এক বাণী শুনতে পেলাম, 14 সেই কন্ঠস্বর ষষ্ঠ তূরীধারী স্বর্গদূতকে বললেন, “ইউফ্রেটিস মহানদীর কাছে যে চারজন স্বর্গদূত হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আছেন তাদের মুক্ত কর।” 15 তখন পৃথিবীর মানুষের এক তৃতীয়াংশ ধ্বংস করার জন্য যে চারজন স্বর্গদূতকে সেই বিশেষ মুহূর্ত, দিন, মাস ও বছরের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিল তাদের মুক্ত করা হল। 16 তাদের দলে ছিল বিশ কোটি অশ্বারোহী সৈন্য। আমি তাদের সেই সংখ্যা গুনলাম।

17 আমি এক দর্শনের মাধ্যমে সেই ঘোড়াগুলিকে ও তাদের ওপর যারা বসেছিল তাদের এইরকম দেখলাম: তাদের বর্ম ছিল আগুনের মতো লাল, ঘন নীল ও গন্ধকের মতো হলদে রঙের। ঘোড়াগুলির মাথা সিংহের মতো। 18 তাদের মুখ থেকে তিনটি আঘাতে আগুন, ধোঁয়া, গন্ধক নির্গত হচ্ছিল, তার দ্বারা পৃথিবীর মানুষের এক তৃতীয়াংশ লোক মারা পড়ল। 19 সেই ঘোড়াগুলির আঘাত করার শক্তি তাদের মুখে ও লেজে ছিল। তাদের লেজ সাপের মতো মাথাওয়ালা, তারা দ্বারা তারা ক্ষতি করতে পারত।

20 এইসব আঘাত পাওয়া সত্ত্বেও যারা মরল না বাকি সেই লোকেরা নিজেরা নিজের হাতে গড়া বস্তুর থেকে মন-ফেরালো না। তারা ভূতপ্রেত ও সোনা, রূপা, পিতল, পাথর এবং কাঠের তৈরী মূর্ত্তি পূজা করা থেকে বিরত হল না—সেইসব মূর্ত্তি, যারা না দেখতে পায়, না শুনতে বা কথা বলতে পারে। 21 তারা নরহত্যা, মোহিনীবিদ্যা, ব্যভিচার এবং চুরির জন্য অনুতপ্ত হল না।

স্বর্গদূত এবং একটি ছোট গুটানো পুঁথি

10 পরে আমি একজন শক্তিশালী স্বর্গদূতকে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখলাম। তিনি একখণ্ড মেঘকে পোশাকের মতো করে পরেছিলেন, আর তাঁর মাথার চারদিকে মেঘধনুক ছিল। তাঁর মুখ সূর্যের মতো, আর পা আগুনের থামের মতো। তাঁর হাতে ছিল একটি খোলা পুঁথি। তিনি তাঁর ডান পা-টি সমুদ্রের ওপরে আর বাঁ পাটি স্থলে রাখলেন। আর সিংহ গর্জনের মতো হুঙ্কার ছাড়লেন। স্বর্গদূতের গর্জনের পর সপ্ত বজ্রধ্বনি হুঙ্কার করে উঠল।

যখন সপ্ত বজ্রধ্বনি কথা বলল তখন আমি তা লিখতে চাইলাম। কিন্তু স্বর্গ থেকে এক স্বর বলল, “তুমি লিখো না। বজ্র যা বলছে তা গোপন রাখ।”

পরে সেই স্বর্গদূত, যাঁকে আমি সমুদ্রের ওপরে এবং স্থলের ওপরে পা রেখে দাঁড়াতে দেখেছিলাম, স্বর্গের দিকে তাঁর ডান হাতটি ওঠালেন; আর যিনি যুগে যুগে জীবন্ত, যিনি আকাশ, পৃথিবী ও সমুদ্র ও এই সবের মধ্যে যা কিছু আছে তার সৃষ্টিকর্তা, তাঁর নামে এই শপথ করে বললেন, “আর দেরী হবে না। যখন সপ্তম স্বর্গদূতের তূরী বাজানোর সময় আসবে তখন ঈশ্বরের সেই নিগৃঢ় পরিকল্পনা পরিপূর্ণ হবে। এ সেই সুসমাচারের পরিকল্পনা যা ঈশ্বর তাঁর ভাববাদী ও দাসদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন।”

এরপর স্বর্গ থেকে সেই রব আমি আবার শুনতে পেলাম। সেই রব আমাকে বলল, “যাও, স্বর্গদূতের হাত থেকে খোলা পুঁথিটি নাও। এই সেই স্বর্গদূত যিনি সমুদ্র ও স্থলের ওপর পা রেখে দাঁড়িয়েছিলেন।”

তখন আমি সেই স্বর্গদূতের কাছে গিয়ে তাঁকে বললাম, ঐ ছোট্ট পুঁথিটি আমায় দিন। তিনি আমায় বললেন, “নাও, খেয়ে ফেল। এটা তোমার পেটে গিয়ে তিক্ত হবে। কিন্তু মুখে মধুর মতো মিষ্টি লাগবে।” 10 তখন আমি স্বর্গদূতের হাত থেকে সেটি নিয়ে খেয়ে ফেললাম। তা মুখে মধুর মতো মিষ্টি লাগল কিন্তু খাওয়ার পর আমার পাকস্থলী তিক্ততায় ভরে গেল। 11 তিনি আমাকে বললেন, “অনেক লোক, জাতি, ভাষা এবং রাজাদের সম্বন্ধে তোমাকে আবার ভাববাণী করতে হবে।”

দুই সাক্ষী

11 এরপর আমাকে বেড়ানোর লাঠির মতো একটি মাপকাঠি দেওয়া হল। একজন বললেন, “ওঠ, ঈশ্বরের মন্দির ও যজ্ঞবেদীর পরিমাপ কর আর তার মধ্যে যারা উপাসনা করছে তাদের সংখ্যা গণনা কর। কিন্তু মন্দিরের বাইরের প্রাঙ্গণের কোন মাপ নিও না, কারণ তা অইহুদীদের দেওয়া হয়েছে। বিয়াল্লিশ মাস ধরে তারা সেই পবিত্র নগরটি পায়ে দলবে। আমি আমার দুজন সাক্ষীকে ক্ষমতা দেব, তাঁরা বারশো ষাট দিন পর্যন্ত ভাববাণী বলবেন।”

সেই দুজন সাক্ষী হলেন দুটি জলপাই গাছ ও দুটি দীপাধার, যাঁরা পৃথিবীর প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। যদি কেউ তাঁদের ক্ষতি করতে চায়, তবে ঐ সাক্ষীদের মুখ থেকে আগুন বেরিয়ে এসে তাঁদের শত্রুদের গ্রাস করবে, যে কেউ তাঁদের ক্ষতি করতে চাইবে তাদেরও এইভাবে মরতে হবে। আকাশ রুদ্ধ করে দেবার ক্ষমতা তাঁদের আছে, যেন ভাববাণী বলার সময় বৃষ্টি না হয়; আর জল রক্তে পরিণত করবার ও পৃথিবীর বুকে সব রকমের মহামারী যতবার ইচ্ছা ততবার পাঠাবার ক্ষমতা তাঁদের আছে।

তাঁদের সাক্ষ্যদান শেষ হলে, যে পশু পাতালের অতলস্পর্শী কূপ থেকে উঠে আসবে সে তাঁদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে, আর যুদ্ধে তাঁদের হারিয়ে দিয়ে হত্যা করবে। তাঁদের মৃত দেহগুলি সেই মহানগরের রাস্তার ওপরে পড়ে থাকবে, এ সেই নগর যাকে আত্মিক অর্থে সদোম ও মিশর বলে; আর এই নগরেই তাঁদের প্রভু ক্রুশে বিদ্ধ হয়েছিলেন। লোকরা তাঁদের কবর দিতে অনুমতি দেবে না। সমস্ত উপজাতি, সম্প্রদায়, ভাষাভাষী ও জাতির লোকরা জড়ো হয়ে সাড়ে তিন দিন ধরে তাঁদের শব দেখতে থাকবে। 10 পৃথিবীর লোকরা আনন্দিত হবে, কারণ ঐ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা আমোদ-প্রমোদ করবে, পরস্পরকে উপহার পাঠাবে, কারণ এই দুজন ভাববাদী পৃথিবীর লোকদের অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন।

11 এরপর সেই সাড়ে তিন দিন শেষ হলে ঈশ্বরের কাছ থেকে জীবনের আত্মা তাঁদের মধ্যে প্রবেশ করল, আর তাঁরা উঠে দাঁড়ালেন। যারা তাদের দেখল তাদের মধ্যে প্রচণ্ড ভয়ের সঞ্চার হল। 12 সেই দুজন ভাববাদী স্বর্গ থেকে এক রব শুনলেন, “এখানে উঠে এস!” তখন তাঁরা মেঘের মধ্য দিয়ে স্বর্গে উঠে গেলেন; আর তাঁদের শত্রুরা তাদের যেতে দেখল।

13 সেই মুহূর্তে প্রচণ্ড ভূমিকম্প হল, তার ফলে শহরের দশভাগের একভাগ ধ্বংস হয়ে গেল এবং সাত হাজার লোক মারা পড়ল। যাঁরা বাকি রইল তারা সকলে প্রচণ্ড ভয় পেল ও স্বর্গের ঈশ্বরের মহিমা কীর্তন করল।

14 দ্বিতীয় সন্তাপ কাটল। দেখ, তৃতীয় সন্তাপ শীঘ্রই আসছে।

সপ্তম তূরী ধ্বনি

15 এরপর সপ্তম স্বর্গদূত তূরী বাজালেন, তখন স্বর্গে কারা যেন উদাত্ত কন্ঠে বলে উঠল:

“জগতের ওপর শাসন করবার ভার এখন আমাদের প্রভুর ও তাঁর খ্রীষ্টের হল,
    আর তিনি যুগপর্যায়ে যুগে যুগে রাজত্ব করবেন।”

16 পরে সেই চব্বিশ জন প্রাচীন, যাঁরা ঈশ্বরের সামনে নিজেদের সিংহাসনে বসে থাকেন, তাঁরা উপুড় হয়ে ঈশ্বরের উপাসনা করলেন। 17 তাঁরা বললেন:

“প্রভু ঈশ্বর, সর্বশক্তিমান, যিনি আছেন ও ছিলেন,
    আমরা তোমাকে ধন্যবাদ জানাই;
কারণ তুমি নিজ পরাক্রম ব্যবহার করেছ
    এবং রাজত্ব করতে শুরু করেছ।
18 জগতের জাতিবৃন্দ তোমার ওপর ক্রুদ্ধ ছিল;
    কিন্তু এখন তোমার ক্রোধের পালা।
    মৃত লোকদের বিচারের সময় হয়েছে;
আর তোমার ভাববাদী, যারা তোমার দাস, যারা তোমার লোক,
    ক্ষুদ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ সব লোক যারা তোমাকে শ্রদ্ধা করে,
তাদের পুরস্কার দেওয়ার সময় হয়েছে।
    যারা পৃথিবীকে ধ্বংস করছে তাদের ধ্বংস করবার সময় হয়েছে।”

19 পরে স্বর্গে ঈশ্বরের মন্দিরের দরজা উন্মুক্ত হলে মন্দিরের মধ্যে তাঁর চুক্তির সিন্দুকটি দেখা গেল, বিদ্যুত চমকালো, গুরু গুরু শব্দ, বজ্রপাত, ভূমিকম্প ও প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টি হল।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International