Revised Common Lectionary (Semicontinuous)
প্রভু মিশরের সেনাদের পরাজিত করলেন
19 এরপর প্রভুর দূত, যে সামনে থেকে ইস্রায়েলীয়দের নেতৃত্ব দিচ্ছিল, সে ইস্রায়েলীয়দের পিছন দিকে চলে এলো। তাই এক লম্বা মেঘস্তম্ভ মুহুর্তের মধ্যেই লোকদের সামনে থেকে পিছনে চলে এল।
20 এইভাবে ঐ মেঘস্তম্ভ মিশরীয়দের মাঝখানে বিরাজ করতে থাকল। তখন মিশরীয়দের জন্য অন্ধকার থাকলেও ইস্রায়েলীয়দের জন্য আলো ছিল। তাই ঐ রাত্রে মিশরীয়রা ইস্রায়েলীয়দের কাছে আসতে পারল না।
21 মোশি সূফ সাগরের ওপর তার হাত মেলে ধরল। প্রভু পূর্ব দিক থেকে প্রবল ঝড়ের সৃষ্টি করলেন। এই ঝড় সারারাত ধরে চলতে লাগল। দু’ভাগ হয়ে গেল সমুদ্র। এবং বাতাস মাটিকে শুকনো করে দিয়ে সমুদ্রের মাঝখান বরাবর পথের সৃষ্টি করল। 22 ইস্রায়েলের লোকরা ঐ পথ দিয়ে হেঁটে সূফ সাগর পেরিয়ে গেল। তাদের দুদিকে ছিল জলের দেওয়াল। 23 পিছনে ফরৌণের সমস্ত অশ্বারোহী সেনা ও রথ ধাওয়া করল। 24 পরদিন সকালে মেঘস্তম্ভ ও অগ্নিশিখার ওপর থেকে প্রভু মিশরীয় সেনাদের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। তখন প্রভু ইস্রায়েলীয়দের পক্ষ নিয়ে মিশরীয় সৈন্যবাহিনীকে আতঙ্কে ফেলে দিলেন। 25 রথের চাকা আটকে গিয়ে রথ চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। মিশরীয়রা চিৎকার করে উঠল, “চলো এখান থেকে বেরিয়ে যাই। প্রভুই ইহুদীদের হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।”
26 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “সমুদ্রের ওপর তোমার হাত তুলে ধর। দেখবে তীব্র জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করছে মিশরীয়দের রথ ও অশ্বারোহী সেনাদের।”
27 মোশি তার হাত সমুদ্রের ওপর মেলে ধরলো। তাই দিনের আলো ফোটার ঠিক আগে সমুদ্র তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেল। মিশরীয়রা জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচার তাগিদে প্রাণপনে দৌড়তে লাগল। কিন্তু প্রভু তাদের সমুদ্রের জলে ঠেলে দিলেন। 28 জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করল রথ ও অশ্বারোহী সেনাদের। ফরৌণের যে সমস্ত সেনারা ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করে আসছিল তারা সব ধ্বংস হল। কেউ বেঁচে থাকল না।
29 ইস্রায়েলের লোকরা সমুদ্রের মাঝখানে তৈরি হওয়া পথ দিয়ে সূফ সাগর পেরিয়ে গেল। তাদের পথের দুপাশে ছিল জলের দেওয়াল। 30 সুতরাং সেইদিন এইভাবে প্রভু মিশরীয়দের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করলেন। পরে ইস্রায়েলীয়রা সূফ সাগরের তীরে মিশরীয়দের মৃত দেহের সারি দেখতে পেল। 31 মিশরীয়দের সেই পরিণতি দেখার পর থেকে ইস্রায়েলের লোকরা প্রভুর শক্তি সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হল। তারা প্রভুকে ভয় ও সম্মান করতে শুরু করল। তারা বিশ্বাস করতে শুরু করল প্রভুকে এবং তাঁর দাস মোশিকে।
114 ইস্রায়েল মিশর ত্যাগ করলো।
যাকোব সেই বিদেশ ত্যাগ করলো।
2 যিহূদা ঈশ্বরের বিশেষ মানুষ হলো।
ইস্রায়েল তাঁর রাজত্ব হলো।
3 এই দেখে লোহিতসাগর দৌড়ে পালিয়েছিলো।
যর্দন নদীও ঘুরে দৌড় দিয়েছিলো।
4 পর্বতগুলো বুনো ছাগলের মত নেচে উঠেছিলো।
পাহাড়গুলো মেষের মত নেচে উঠেছিলো।
5 লোহিতসাগর কেন তুমি ছুটে পালালে?
যর্দন নদী কেন তুমি ঘুরে দৌড় দিলে?
6 পর্বতমালা কেন তোমরা বুনো ছাগলের মত নাচলে?
পাহাড় সকল, কেন তোমরা মেষশাবকের মত নাচলে?
7 যাকোবের প্রভু, ঈশ্বরের সামনে, পৃথিবী কেঁপে গিয়েছিলো।
8 ঈশ্বর হলেন এমন একজন, যিনি পাথর থেকে জলকে প্রবাহিত করান।
ঈশ্বর শক্ত পাথর থেকে একটি জলধারা প্রবাহিত করেছিলেন।
মোশির সঙ্গীত
15 এরপর মোশি এবং ইস্রায়েলের লোকরা প্রভুর উদ্দেশ্যে এই গানটি গাইল:
“আমি প্রভুর উদ্দেশ্যে গান গাইব!
তিনি মহান কাজ করেছেন।
তিনি ঘোড়া এবং ঘোড়সওয়ারদের
সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন।
2 প্রভুই আমার শক্তি।
তিনি আমার পরিত্রাতা
এবং আমি তাঁর প্রশংসার গান গাইব।
প্রভু আমার ঈশ্বর,
আমি তাঁর প্রশংসা করব।
প্রভু হলেন আমার পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর।
এবং আমি তাঁকে সম্মান করব।
3 প্রভু হলেন মহান যোদ্ধা।
তাঁর নাম হল প্রভু।
4 ফরৌণের রথ এবং সেনাদের
তিনি সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন।
ফরৌণের সেরা সৈন্যরা
সূফ সাগরে ডুবে গেছে।
5 জলের গভীরে তারা তলিয়ে গেছে।
পাথরের মতো তারা জলে ডুবে গেছে।
6 “প্রভু আপনার ডান হাত অসম্ভব শক্তিশালী।
প্রভু আপনার ডান হাত শত্রুবাহিনীকে চুরমার করে দিয়েছে।
7 আপনি আপনার মহান রাজকীয় ঢঙে
আপনার বিরুদ্ধাচারীদের ধ্বংস করেছেন।
আগুনের শিখা যেমন করে ঘর পুড়িয়ে দেয়,
তেমনি আপনার ক্রোধ তাদের ধ্বংস করে দিয়েছে।
8 আপনার নিঃশ্বাসের একটি সজোর ফুৎকারে জল জমে উঠেছিল।
সেই জলোচ্ছ্বাস একটি নিরেট দেওয়ালে পরিণত হয়েছিল
এবং সমুদ্রের গভীরতাও ঘন হয়ে উঠেছিল।
9 “শত্রুরা বলেছিল,
‘আমি তাদের তাড়া করে ধরে ফেলব।
আমি তাদের সমস্ত ধন-সম্পত্তি লুঠ করব।
আমি তরবারি ব্যবহার করে সব লুঠ করে নেব।
সবকিছু আমার নিজের জন্য নিয়ে যাব।’
10 কিন্তু আপনি আপনার নিঃশ্বাস দিয়ে সমুদ্রকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন
এবং তাদের ঢেকে দিয়েছিলেন।
তারা সীসার মতো
সেই ক্রুদ্ধ সমুদ্রের নীচে চলে গেছে।
11 “প্রভুর মতো আর কোনও ঈশ্বর আছে?
না! আপনার মতো আর কোনও ঈশ্বর নেই।
আপনি অত্যন্ত পবিত্র।
আপনি আশ্চর্যজনক শক্তিশালী।
আপনি মহান অলৌকিক ঘটনা ঘটান।
20 তারপর হারোণের বোন মরিয়ম, মহিলা ভাববাদিনী, হাতে একটি খঞ্জনী তুলে নিল। মরিয়ম ও তার মহিলা সঙ্গীরা নাচতে ও গাইতে শুরু করল। গানের যে কথাগুলো মরিয়ম উচ্চারণ করছিল তা হল:
21 “প্রভুর উদ্দেশ্যে গান কর!
তিনি মহান কাজ করেছেন।
তিনি ঘোড়া এবং ঘোড়াসওয়ারীদের
সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন।”
অপরের সমালোচনা করো না
14 বিশ্বাসে যে দুর্বল, এমন কোন ভাইকে তোমাদের মধ্যে গ্রহণ করতে অস্বীকার করো না। তার ভিন্ন ধারণা নিয়ে তার সঙ্গে তর্ক করো না। 2 এক একজন বিশ্বাস করে যে তার যা ইচ্ছা হয় এমন সব কিছুই সে খেতে পারে; কিন্তু যে বিশ্বাসে দুর্বল সে মনে করে যে সে কেবল শাকসব্জী খেতে পারে। 3 যে ব্যক্তি সব খাবারই খায় সে যেন যে কেবল সব্জীই খায়, তাকে হেয় জ্ঞান না করে। আর যে মানুষ কেবল সব্জী খায়, তারও উচিত সব খাবার খায় এমন লোককে ঘৃণা না করা, কারণ ঈশ্বর তাকেও গ্রহণ করেছেন। 4 তুমি অন্যের ভৃত্যের দোষ ধরবে না। সে ঠিক করছে না ভুল করছে তা তার মনিবই ঠিক করবেন; বরং প্রভুর দাস নির্দোষই হবে কারণ প্রভু তাকে ধার্মিক প্রতিপন্ন করতে পারেন।
5 কেউ হয়তো মনে করে এই দিনটি ঐ দিনটির থেকে ভাল, আবার কেউ মনে করে সব দিনই সমান ভাল। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ মনে তার বিশ্বাস সম্বন্ধে স্থির নিশ্চয় হোক। 6 যে কোন দিনকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে থাকে সে প্রভুর উদ্দেশ্যেই তা করে। তেমনি যে মানুষ সবরকম খাবারই খায়, সেও প্রভুর উদ্দেশ্যেই তা করে কারণ সে ওই খাবারের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানায়। এদিকে যে ব্যক্তি কিছু খাদ্য গ্রহণে বিরত থাকে সেও তো প্রভুর উদ্দেশ্যেই তা করে।
7 হ্যাঁ, আমরা সকলেই প্রভুর জন্য বেঁচে থাকি। আমরা কেউ নিজের জন্য বেঁচে থাকি না, কেউ নিজের জন্য মরেও যাই না। 8 আমাদের বেঁচে থাকা তো প্রভুরই উদ্দেশ্যে বেঁচে থাকা, আমরা যদি মরি তবে তো প্রভুর জন্যই মরি। তাই আমরা বাঁচি বা মরি, যে ভাবেই থাকি না কেন, আমরা প্রভুরই। 9 এইজন্যই খ্রীষ্ট মৃত্যু বরণ করলেন ও পুনরায় বেঁচে উঠলেন, যাতে তিনি মৃত ও জীবিত সকলেরই প্রভু হতে পারেন।
10 তাহলে তোমরা কেন খ্রীষ্টেতে তোমার এক ভাইয়ের দোষ ধর? তোমার ভাইয়ের থেকে তুমি ভাল, এমন কথাই বা ভাব কি করে? আমাদের সকলকেই ঈশ্বরের বিচারাসনের সামনে দাঁড়াতে হবে। আর ঈশ্বর আমাদের বিচার করবেন। 11 হ্যাঁ, শাস্ত্রে লেখা আছে:
“‘প্রত্যেক ব্যক্তি আমার সামনে নতজানু হবে।
প্রত্যেক ওষ্ঠাধর স্বীকার করবে যে আমি ঈশ্বর,
প্রভু বলেন, আমার জীবনের দিব্য, এসব হবেই।’”(A)
12 আমাদের সকলকেই ঈশ্বরের কাছে আমাদের জীবনের হিসাব দিতে হবে।
ক্ষমার বিষয়ে দৃষ্টান্ত
21 তখন পিতর যীশুর কাছে এসে তাঁকে বললেন, “প্রভু, আমার ভাই আমার বিরুদ্ধে কতবার অন্যায় করলে আমি তাকে ক্ষমা করব? সাত বার পর্যন্ত করব কি?”
22 যীশু তাঁকে বললেন, “আমি তোমাকে বলছি, কেবল সাত বার নয়, কিন্তু সাতকে সত্তর দিয়ে গুণ করলে যতবার হয় ততবার।”
23 “স্বর্গরাজ্য এভাবে তুলনা করা যায়, যেমন একজন রাজা যিনি তাঁর দাসদের কাছে হিসাব মিটিয়ে দিতে বললেন। 24 তিনি যখন হিসাব নিতে শুরু করলেন, তখন তাদের মধ্যে একজন লোককে আনা হল যে রাজার কাছে দশ হাজার রৌপ্যমুদ্রা ধারত। 25 কিন্তু তার সেই ঋণ শোধ করার ক্ষমতা ছিল না। তখন সেই মনিব রাজা হুকুম করলেন যেন সেই লোকটাকে তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে আর তার যা কিছু আছে সমস্ত বিক্রি করে পাওনা আদায় করা হয়।
26 “তাতে সেই দাস মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে মনিবের পা ধরে বলল, ‘আমার ওপর ধৈর্য্য ধরুন, আমি আপনার সমস্ত ঋণই শোধ করে দেব’ 27 সেই কথা শুনে সেই দাসের প্রতি মনিবের অনুকম্পা হল, তিনি তার সব ঋণ মকুব করে দিয়ে তাকে মুক্ত করে দিলেন।
28 “কিন্তু সেই দাস ছাড়া পেয়ে বাইরে গিয়ে তার একজন সহকর্মীর দেখা পেল, যে তার কাছে প্রায় একশো মুদ্রা ধারত। সেই দাস তখন তার গলা টিপে ধরে বলল, ‘তুই যে টাকা ধার করেছিস তা শোধ কর।’
29 “তখন তার সহকর্মী তার সামনে উপুড় হয়ে অনুনয় করে বলল, ‘আমার প্রতি ধৈর্য্য ধর। আমি তোমার সব ঋণ শোধ করে দেব।’
30 “কিন্তু সে তাতে রাজী হল না, বরং ঋণ শোধ না করা পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটকে রাখল। 31 তার অন্য সহকর্মীরা এই ঘটনা দেখে খুবই দুঃখ পেল, তাই তারা গিয়ে তাদের মনিবের কাছে যা যা ঘটেছে সব জানাল।
32 “তখন সেই মনিব তাকে ডেকে বললেন, ‘তুমি দুষ্ট দাস! তুমি আমায় অনুরোধ করলে আর আমি তোমার সব ঋণ মকুব করে দিলাম। 33 আমি যেমন তোমার প্রতি দয়া দেখিয়েছিলাম তেমনি তোমার সহকর্মীর প্রতিও কি তোমার দয়া করা উচিত ছিল না?’ 34 তখন তার মনিব ক্রুদ্ধ হয়ে সমস্ত ঋণ শোধ না করা পর্যন্ত তাকে শাস্তি দিতে কারাগারে দিয়ে দিলেন।
35 “তোমরা প্রত্যেকে যদি তোমাদের ভাইকে অন্তর দিয়ে ক্ষমা না কর, তবে আমার স্বর্গের পিতাও তোমাদের প্রতি ঠিক ঐভাবে ব্যবহার করবেন।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International