Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Revised Common Lectionary (Semicontinuous)

Daily Bible readings that follow the church liturgical year, with sequential stories told across multiple weeks.
Duration: 1245 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
গীতসংহিতা 118:1-2

118 প্রভুকে সম্মান কর, কারণ তিনিই ঈশ্বর।
    তাঁর প্রকৃত প্রেম চির প্রবহমান থাকে!
ইস্রায়েল এই কথা বল,
    “তাঁর প্রকৃত প্রেম চির প্রবহমান থাকে!”

গীতসংহিতা 118:19-29

19 ন্যায়ের সিংহদ্বারগুলি আমার জন্য খুলে যাও,
    আমি প্রভুর উপাসনা করতে ভেতরে আসবো।
20 ওইগুলো প্রভুর দ্বার।
    একমাত্র ধার্ম্মিক লোকরাই ওর মধ্যে দিয়ে যেতে পারে।
21 হে প্রভু, আমার প্রার্থনার উত্তর দেওয়ার জন্য
    এবং আমাকে রক্ষা করবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।

22 যে পাথরটিকে স্থপতিরা চায় নি, সেটাই হয়ে গেল মুখ্য প্রস্তর।
23 প্রভু এটি করেছেন
    এবং এটি দেখতে অদ্ভুত লাগছে!
24 আজকের দিন সেই দিন যা প্রভু সৃষ্টি করেছেন।
    আজ আমাদের আনন্দ করতে দিন, সুখী হতে দিন।

25 লোকেরা বললো, “প্রভুর প্রশংসা কর!
    প্রভু আমাদের রক্ষা করেছেন!
26     সেই লোকটিকে স্বাগত জানাও, যে প্রভুর নাম নিয়ে আসছে।”
যাজকরা উত্তর দিয়েছিলো, “আমরা তোমাকে প্রভুর গৃহে স্বাগত জানাই!
27 প্রভুই ঈশ্বর এবং তিনি আমাদের গ্রহণ করেন।
    বলির জন্য একটা মেষ বাঁধ এবং সেটাকে বেদীর কোণে নিয়ে চল।”

28 প্রভু, আপনিই আমার ঈশ্বর, আপনাকে ধন্যবাদ দিই।
    আমি আপনার প্রশংসা করি!
29 প্রভুর প্রশংসা কর! কারণ তিনি মঙ্গলময়।
    তাঁর প্রকৃত প্রেম চিরন্তন।

মথি 21:1-11

রাজার মতো যীশু জেরুশালেমে এলেন

(মার্ক 11:1-11; লূক 19:28-38; যোহন 12:12-19)

21 যীশু ও তাঁর শিষ্যরা জেরুশালেমের কাছাকাছি জৈতুন পর্বতমালার ধারে অবস্থিত বৈত্ফগী গ্রামের ধারে এসে পৌঁছালেন। তিনি তাঁর দুজন শিষ্যকে এই বলে পাঠালেন, “তোমরা ঐ সামনের গ্রামে যাও। সেখানে দেখবে একটা গাধা বাঁধা আছে আর একটা বাচ্চাও তার সাথে আছে। তাদের খুলে আমার কাছে নিয়ে এস। কেউ যদি তোমাদের কিছু জিজ্ঞেস করে, তবে তাকে বোলো, ‘প্রভু এদের চান। তিনি পরে তাদের ফেরত দেবেন।’”

এমনটি হল যেন এর দ্বারা ভাববাদীর ভাববাণী পূর্ণ হয়:

“সিয়োন নগরীকে বল,
    ‘দেখ তোমার রাজা তোমার কাছে আসছেন।
তিনি নম্র, তিনি গাধার ওপরে,
    একটি ভারবাহী গাধার বাচ্চার ওপরে চড়ে আসছেন।’”(A)

যীশু যেমন বলেছিলেন তাঁর শিষ্যেরা গিয়ে তেমনি করলেন। তারা সেই গাধা ও গাধার বাচ্চাটা এনে তাদের ওপর নিজেদের গায়ের কাপড় বিছিয়ে দিলে যীশু তাদের উপর বসলেন। লোকদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের জামা খুলে পথে বিছিয়ে দিল, আবার অনেকে গাছের ডাল কেটে নিয়ে পথের ওপরে বিছিয়ে দিল। যারা যীশুর সামনে ও পিছনে ভীড় করে যাচ্ছিল, তারা চিৎকার করে বলতে লাগল,

“দায়ূদের পুত্রের প্রশংসা হোক্।
    ‘যিনি প্রভুর নামে আসছেন, তিনি ধন্য!’(B)

স্বর্গে ঈশ্বরের প্রশংসা হোক্।”

10 যীশু যখন জেরুশালেমে প্রবেশ করলেন, তখন সমস্ত শহরে খুব শোরগোল পড়ে গেল। লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, “ইনি কে?”

11 জনতা বলে উঠল, “ইনি যীশু, গালীলের নাসরতীয় শহরের সেই ভাববাদী।”

যিশাইয় 50:4-9

ঈশ্বরের দাস সত্যিই ঈশ্বরের ওপর নির্ভরশীল

আমার প্রভু আমাকে শিক্ষা দেবার ক্ষমতা দিয়েছেন। তাই আমি এখন এই দুঃখী লোকদের শিক্ষা দিই। প্রতিদিন সকালে তিনি শিক্ষকের মতো আমাকে দর্শন দিয়ে শিক্ষা দেন। আমার প্রভু সদাপ্রভু আমাকে শিক্ষা গ্রহণে সাহায্য করেন। আমি তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করি না। তাঁকে অনুসরণ করা আমি বন্ধ করব না। আমি লোকদের আমাকে আঘাত করতে দেব। আমি তাদের আমার দাড়ি থেকে চুল তুলে নিতে দেব। যখন তারা আমার নামে বাজে কথা বলবে, আমার গায়ে থুতু ফেলবে তখনও আমি নিজের মুখ লুকোব না। প্রভু আমার সদাপ্রভু আমাকে সাহায্য করবেন। তাই তাদের বাজে কথা আমাকে আঘাত করবে না। আমি শক্তিশালী হব। আমি জানি আমি হতাশ হব না।

প্রভু আমার সঙ্গে আছেন। তিনিই দেখাবেন আমি নির্দোষ। তাই কেউ আমাকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারবে না। কেউ যদি আমাকে ভুল প্রমাণ করতে চায় তবে তাকে আমার সামনে এসে যুক্তি দেখাতে হবে। তাকিয়ে দেখো, আমার প্রভু সদাপ্রভু আমাকে সাহায্য করছেন। তাই আমাকে কেউ পাপী সাব্যস্ত করতে পারবে না। তাদের পুরানো মূল্যহীন কাপড়ের মতো অবস্থা হবে। পোকামাকড় তাদের খাবে।

গীতসংহিতা 31:9-16

প্রভু, আমার অসংখ্য সমস্যা আছে।
    তাই আমার প্রতি সদয় হন।
আমি মানসিকভাবে এমন বিপর্যস্ত যে কেঁদে কেঁদে আমার চোখ ব্যথা করছে।
    আমার গলা ও পেট জ্বালা করছে।
10 আমার জীবন দুঃখে শেষ হতে চলেছে।
    দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে আমার বছরগুলি কাটছে।
আমার সংকটগুলি আমার সব শক্তিকে কেড়ে নিচ্ছে।
    আমার সব শক্তি, আমায় ত্যাগ করছে।[a]
11 শত্রুরা আমায় ঘৃণা করছে।
    আমার প্রতিবেশীরাও আমায় ঘৃণা করছে।
সমস্ত আত্মীয়রা আমার সঙ্গে রাস্তায় দেখা করে।
    তারা আমাকে ভয় পায় এবং এড়িয়ে চলে।
12 হারিয়ে যাওয়া যন্ত্রপাতির মত
    লোকরা আমাকে ভুলে গেছে।
13 লোকরা আমার সম্পর্কে যে সব ভয়ঙ্কর কথা বলে, তা আমি শুনি।
    ঐসব লোক আমার বিরুদ্ধে গেছে।
    ওরা আমায় মেরে ফেলার চক্রান্ত করেছে।

14 হে প্রভু, আমি আপনাতে আস্থা রাখি।
    আপনিই আমার ঈশ্বর।
15 আমার জীবন আপনার হাতে রয়েছে।
    আমার শত্রুদের হাত থেকে আমায় রক্ষা করুন।
কিছু লোক আমায় তাড়া করছে।
    ওদের হাত থেকে আমায় রক্ষা করুন।
16 দয়া করে আপনার দাসকে অভ্যর্থনা করুন এবং গ্রহণ করুন।
    আমার প্রতি সদয় হোন এবং আমাকে রক্ষা করুন!

ফিলিপীয় 2:5-11

খ্রীষ্টের মত নিঃস্বার্থ হও

খ্রীষ্ট যীশুর মধ্যে যে ভাব ছিল, তোমাদের মধ্যেও সেই মনোভাব থাকুক।

যদিও তিনি সমস্ত দিক দিয়ে ঈশ্বরের মতো ছিলেন,
    কিন্তু ঈশ্বরের সঙ্গে সমান থাকাটা তিনি আঁকড়ে ধরে থাকার মত এমন কিছু বলে মনে করেন নি।
তিনি ঈশ্বরের স্তর থেকে নামলেন, নিজের উচ্চস্থান ছেড়ে দিলেন,
    তিনি মানুষের মত হয়ে জন্ম নিলেন ও একজন দাসের মতো হলেন।
তিনি যখন মানব জীবনযাপন করলেন,
    তখন তিনি সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের বাধ্যতা স্বীকার করলেন।
    সেই বাধ্যতার দরুণ তাঁর মৃত্যু হল, আর ক্রুশের ওপর তাঁকে প্রাণ দিতে হল।
খ্রীষ্ট ঈশ্বরের বাধ্য হলেন তাই ঈশ্বর তাঁকে পুনরুত্থিত করে সব কিছুর ওপরে স্থান দিলেন,
    এবং সেই ঈশ্বর খ্রীষ্টের নামকে সবথেকে শ্রেষ্ঠ করলেন।
10 যেন যারা স্বর্গে আছে, যারা মর্ত্যের লোক আর যারা পাতালের
    তারা সকলেই সেই যীশু নামের কাছে নতজানু হয়,
11 আর প্রত্যেকে যেন মুখে স্বীকার করে, “যীশু খ্রীষ্টই প্রভু।”
    এতেই পিতা ঈশ্বর মহিমান্বিত হবেন।

মথি 26:14-27:66

যিহূদা যীশুর শত্রু

(মার্ক 14:10-11; লূক 22:3-6)

14 তখন বারো জন শিষ্যর মধ্যে একজন, যার নাম যিহূদা ঈষ্করিয়োতীয়, সে প্রধান যাজকদের কাছে গিয়ে বলল, 15 “আমি যদি তাঁকে আপনাদের হাতে ধরিয়ে দিই, তবে আপনারা আমায় কি দেবেন বলুন?” তারা তাকে গুনে গুনে ত্রিশটা রূপোর টাকা দিল। 16 সেই মুহূর্ত্ত থেকেই যিহূদা তাঁকে ধরিয়ে দেবার সুযোগ খুঁজতে লাগল।

যীশু নিস্তারপর্বের ভোজ খেলেন

(মার্ক 14:12-21; লূক 22:7-14, 21-23; যোহন 13:21-30)

17 খামিরবিহীন রুটির পর্বের প্রথম দিনে যীশুর শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “আপনার জন্য আমরা কোথায় নিস্তারপর্বের ভোজের আয়োজন করব? আপনি কি চান?”

18 যীশু বললেন, “তোমরা ঐ গ্রামে আমার পরিচিত একজনের কাছে যাও, তাকে গিয়ে বল, ‘গুরু বলেছেন, আমার নির্ধারিত সময় কাছে এসে গেছে, আমি আমার শিষ্যদের সঙ্গে তোমার বাড়িতে নিস্তারপর্ব পালন করব।’” 19 তখন শিষ্যরা যীশুর কথামতো কাজ করলেন, তারা সেখানে নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন।

20 সন্ধ্যা হলে পর যীশু সেই বারো জন শিষ্যের সঙ্গে নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে বসলেন। 21 তাঁরা যখন খাচ্ছেন সেই সময় যীশু বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে শত্রুর হাতে তুলে দেবে।”

22 এতে শিষ্যরা খুবই দুঃখ পেয়ে এক একজন করে যীশুকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, “প্রভু, সে কি আমি?”

23 তখন যীশু বললেন, “যে আমার সঙ্গে বাটিতে হাত ডোবালো, সেই আমাকে শত্রুর হাতে সঁপে দেবে। 24 মানবপুত্রের বিষয়ে শাস্ত্রে যেমন লেখা আছে, সেই ভাবেই তাঁকে যেতে হবে। কিন্তু ধিক্ সেই লোক, যে মানবপুত্রকে ধরিয়ে দেবে। সেই লোকের জন্ম না হওয়াই তার পক্ষে ভাল ছিল।”

25 যে যীশুকে শত্রুর হাতে ধরিয়ে দিতে যাচ্ছিল, সেই যিহূদা বলল, “গুরু সে নিশ্চয়ই আমি নই?”

যীশু তাকে বললেন, “তুমি নিজেই তো একথা বলছ।”

প্রভুর ভোজ

(মার্ক 14:22-26; লূক 22:15-20; 1 করিন্থীয় 11:23-25)

26 তাঁরা খাচ্ছিলেন, এমন সময় যীশু একটি রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন, আর সেই রুটি টুকরো টুকরো করে শিষ্যদের দিয়ে বললেন, “এই নাও, খাও, এ আমার দেহ।”

27 এরপর তিনি পানপাত্র নিয়ে ধন্যবাদ দিলেন আর পানপাত্রটি শিষ্যদের দিয়ে বললেন, “তোমরা সকলে এর থেকে পান কর। 28 কারণ এ আমার রক্ত, নতুন নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার রক্ত যা বহুলোকের পাপ মোচনের জন্য পাতিত হল। 29 আমি তোমাদের বলছি, এখন থেকে আমি এই দ্রাক্ষারস আর কখনও পান করব না, যে পর্যন্ত না আমার পিতার রাজ্যে তোমাদের সঙ্গে নতুন দ্রাক্ষারস পান করি।”

30 এরপর তাঁরা একটি গান করতে করতে জৈতুন পর্বতমালায় চলে গেলেন।

যীশু বললেন তাঁর শিষ্যরা তাঁকে ত্যাগ করবে

(মার্ক 14:27-31; লূক 22:31-34; যোহন 13:36-38)

31 যীশু তাদের বললেন, “আমার কারণে তোমরা আজ রাত্রেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে। আমি একথা বলছি কারণ শাস্ত্রে লেখা আছে,

‘আমি মেষপালককে আঘাত করবো।
    তাঁর মৃত্যু হলে পালের মেষরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে।’(A)

32 কিন্তু আমি পুনরুত্থিত হবার পর, তোমাদের আগে আগে গালীলে যাব।”

33 এর উত্তরে পিতর বললেন, “আপনার কারণে সকলেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে পারে কিন্তু আমি কখনই বিশ্বাস হারাবো না।”

34 যীশু বললেন, “আমি সত্যি বলছি, আজ রাত্রেই তুমি বলবে যে তুমি আমাকে চেনো না। ভোরে মোরগ ডাকার আগেই তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে।”

35 কিন্তু পিতর তাঁকে বললেন, “আমি আপনাকে চিনি না, একথা আমি কখনও বলব না। আপনার সঙ্গে আমি মরতেও প্রস্তুত।” অন্য শিষ্যরাও সকলে একই কথা বললেন।

যীশুর নির্জনে প্রার্থনা

(মার্ক 14:32-42; লূক 22:39-46)

36 এরপর যীশু তাঁদের সঙ্গে গেতশিমানী নামে একটা জায়গায় গিয়ে তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি ওখানে গিয়ে যতক্ষণ প্রার্থনা করি, তোমরা এখানে বসে থাক।” 37 এরপর তিনি পিতর ও সিবদিয়ের দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চলতে থাকলেন। যেতে যেতে তাঁর মন উদ্বেগ ও ব্যথায় ভরে গেল, তিনি অভিভূত হয়ে পড়লেন। 38 তখন তিনি তাদের বললেন, “দুঃখে আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। তোমরা এখানে থাক আর আমার সঙ্গে জেগে থাকো।”

39 পরে তিনি কিছু দূরে গিয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে প্রার্থনা করে বললেন, “আমার পিতা, যদি সম্ভব হয় তবে এই কষ্টের পানপাত্র আমার কাছ থেকে দূরে যাক; তবু আমার ইচ্ছামতো নয়, কিন্তু তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক্।” 40 এরপর তিনি শিষ্যদের কাছে ফিরে গিয়ে দেখলেন, তাঁরা ঘুমাচ্ছেন। তিনি পিতরকে বললেন, “একি! তোমরা আমার সঙ্গে এক ঘন্টাও জেগে থাকতে পারলে না? 41 জেগে থাক ও প্রার্থনা কর যেন প্রলোভনে না পড়। তোমাদের আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু দেহ দুর্বল।”

42 তিনি গিয়ে আর একবার প্রার্থনা করলেন, “হে আমার পিতা, এই দুঃখের পানপাত্র থেকে আমি পান না করলে যদি তা দূর হওয়া সম্ভব না হয় তবে তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক্।”

43 পরে তিনি ফিরে এসে দেখলেন, শিষ্যরা আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন, কারণ তাঁদের চোখ ভারী হয়ে গিয়েছিল। 44 তখন তিনি তাঁদের ছেড়ে চলে গেলেন ও তৃতীয় বার প্রার্থনা করলেন। তিনি আগের মতো সেই একই কথা বলে প্রার্থনা করলেন।

45 পরে তিনি শিষ্যদের কাছে এসে বললেন, “তোমরা এখনও ঘুমিয়ে রয়েছ ও বিশ্রাম করছ? শোন, সময় ঘনিয়ে এল, মানবপুত্রকে পাপীদের হতে তুলে দেওয়া হবে। 46 ওঠ, চল আমরা যাই! ঐ দেখ! যে লোক আমায় ধরিয়ে দেবে, সে এসে গেছে।”

যীশুকে গ্রেপ্তার করা হল

(মার্ক 14:43-50; লূক 22:47-53; যোহন 18:3-12)

47 তিনি তখনও কথা বলছেন, এমন সময় সেই বারোজন শিষ্যের মধ্যে একজন, যিহূদা সেখানে এসে হাজির হল, তার সঙ্গে বহুলোক ছোরা ও লাঠি নিয়ে এল। প্রধান যাজকরা ও সমাজপতিরা এদের পাঠিয়েছিলেন। 48 যে তাঁকে ধরিয়ে দিচ্ছিল, সে ঐ লোকদের একটা সাঙ্কেতিক চিহ্ন দিয়ে বলেছিল, “আমি যাকে চুমু দেব, সেই ঐ লোক, তাকে তোমরা ধরবে।” 49 এরপর যিহূদা যীশুর কাছে এগিয়ে এসে বলল, “গুরু, নমস্কার,” এই বলে সে তাঁকে চুমু দিল।

50 যীশু তাঁকে বললেন, “বন্ধু, তুমি যা করতে এসেছ কর।”

তখন তারা এগিয়ে এসে জাপটে ধরে যীশুকে গ্রেপ্তার করল। 51 সেই সময় যীশুর সঙ্গীদের মধ্যে একজন তাঁর তরোয়ালের দিকে হাত বাড়ালেন আর তা বার করে মহাযাজকদের দাসকে আঘাত করে তার একটা কান কেটে দিলেন।

52 তখন যীশু তাকে বললেন, “তোমার তরোয়ালটি খাপে রাখ। যারা তরোয়াল চালায় তারা তরোয়ালের আঘাতেই মরবে। 53 তোমরা কি ভাব যে, আমি আমার পিতা ঈশ্বরের কাছে চাইতে পারি না? চাইলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে আমার জন্য বারোটিরও বেশী স্বর্গদূতবাহিনী পাঠিয়ে দেবেন। 54 কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে শাস্ত্রের বাণী কিভাবে পূর্ণ হবে, শাস্ত্রে যখন বলছে এভাবেই সব কিছু অবশ্যই ঘটবে?”

55 সেই সময় যীশু লোকদের বললেন, “লোকে যেমন ডাকাত ধরতে যায়, সেই ভাবে তোমরা ছোরা ও লাঠি নিয়ে আমায় ধরতে এসেছ? আমি তো প্রতিদিন মন্দিরের মধ্যে বসে শিক্ষা দিয়েছি; 56 কিন্তু তোমরা আমায় গ্রেপ্তার কর নি। যাইহোক্, এসব কিছুই ঘটল যেন ভাববাদীদের লেখা সকল কথাই পূর্ণ হয়।” তখন তাঁর শিষ্যরা তাঁকে ফেলে পালিয়ে গেলেন।

ইহুদী নেতাদের সামনে যীশু

(মার্ক 14:53-65; লূক 22:54-55, 63-71; যোহন 18:13-14, 19-24)

57 তারা যীশুকে গ্রেপ্তার করে মহাযাজক কায়াফার বাড়িতে নিয়ে এল, সেখানে ব্যবস্থার শিক্ষক ও ইহুদী নেতারা জড়ো হয়েছিলেন। 58 পিতর দূর থেকে যীশুর পিছনে পিছনে মহাযাজকের বাড়ির উঠোন পর্যন্ত গেলেন। শেষ পর্যন্ত কি হয় তা দেখবার জন্য তিনি ভেতরে গিয়ে দাসদের সঙ্গে বসলেন।

59 যীশুকে যেন মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে তাই যীশুর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী যোগাড় করার জন্য প্রধান যাজকরা ও ইহুদী মহাসভার সব সভ্যরা সেখানে সমবেত হয়েছিলেন। 60 অনেকে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবার জন্য সেখানে হাজির হয়েছিল, তবু যে সাক্ষ্য যীশুকে হত্যা করার জন্য দরকার তা পাওয়া গেল না। 61 শেষে দুজন লোক এসে বলল, “এই লোক বলেছিল, ‘আমি ঈশ্বরের মন্দির ভেঙে ফেলতে ও তা আবার তিন দিনের ভেতরে গেঁথে তুলতে পারি।’”

62 তখন মহাযাজক উঠে দাঁড়িয়ে যীশুকে বললেন, “তুমি কি এর জবাবে কিছুই বলবে না? এরা তোমার বিরুদ্ধে কি সাক্ষ্য দিচ্ছে?” 63 কিন্তু যীশু নীরব থাকলেন।

তখন মহাযাজক তাঁকে বললেন, “আমি তোমাকে জীবন্ত ঈশ্বরের নামে দিব্যি দিচ্ছি, আমাদের বল, তুমি কি সেই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র?”

64 যীশু তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, তুমিই একথা বললে। তবে আমি তোমাকে এটাও বলছি, এখন থেকে তোমরা মানবপুত্রকে মহাপরাক্রান্ত ঈশ্বরের ডানপাশে বসে থাকতে ও আকাশে মেঘের মধ্যে দিয়ে আসতে দেখবে।”

65 তখন মহাযাজক তাঁর পোশাক ছিঁড়ে ফেলে বললেন, “এ ঈশ্বরের নিন্দা করল, আমাদের আর অন্য সাক্ষ্যের দরকার কি? দেখ, তোমরা এখন ঈশ্বর নিন্দা শুনলে! 66 তোমরা কি মনে কর?”

এর উত্তরে তারা বলল, “এ মৃত্যুর যোগ্য।”

67 তখন তারা যীশুর মুখে থুথু দিল ও তাঁকে ঘুসি মারল। 68 কেউ কেউ তাঁকে চড় মারল ও বলল, “ওরে খ্রীষ্ট, আমাদের জন্য কিছু ভাববানী বল, কে তোকে মারল?”

পিতর যীশুকে স্বীকার করতে ভয় পেলেন

(মার্ক 14:66-72; লূক 22:56-62; যোহন 18:15-18, 25-27)

69 পিতর যখন বাইরে উঠোনে বসেছিলেন তখন একজন দাসী এসে বলল, “তুমিও গালীলে যীশুর সঙ্গে ছিলে।”

70 কিন্তু পিতর সবার সামনে একথা অস্বীকার করে বললেন, “তুমি কি বলছ, আমি তার কিছুই জানি না।”

71 তিনি যখন ফটকের সামনে গেলেন, তখন আর একজন দাসী তাকে দেখে সেখানে যারা ছিল তাদের বলল, “এ লোকটা নাসরতীয় যীশুর সঙ্গে ছিল।”

72 পিতর আবার অস্বীকার করলেন। তিনি দিব্যি করে বললেন, “আমি ঐ লোকটাকে মোটেই চিনি না।”

73 এর কিছু পরে, সেখানে যারা দাঁড়িয়েছিল তারা পিতরের কাছে এসে বলল, “তুমি ঠিক ওদেরই একজন কারণ তোমার কথার উচ্চারণের ধরণ দেখেই তা বুঝতে পারা যাচ্ছে।”

74 তখন পিতর দিব্যি করে শাপ দিয়ে বললেন, “আমি ঐ লোকটাকে আদৌ চিনি না।” আর তখনই মোরগ ডেকে উঠল। 75 তখন পিতরের মনে পড়ে গেল যীশু তাকে যা বলেছিলেন, “ভোরের মোরগ ডাকার আগেই তুমি তাকে তিনবার অস্বীকার করবে।” আর পিতর বাইরে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।

রাজ্যপাল পীলাতের কাছে যীশু

(মার্ক 15:1; লূক 23:1-2; যোহন 18:28-32)

27 ভোর হলে প্রধান যাজকরা ও সমাজপতিরা সবাই মিলে যীশুকে হত্যা করার চক্রান্ত করল। তারা তাঁকে বেঁধে রোমীয় রাজ্যপাল পীলাতের কাছে হাজির করল।

যিহূদার আত্মহত্যা

(প্রেরিত 1:18-19)

যীশুকে শত্রুদের হাতে যে ধরিয়ে দিয়েছিল, সেই যিহূদা যখন দেখল যীশুকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তখন তার মনে খুব ক্ষোভ হল। সে তখন যাজকদের ও সমাজপতিদের কাছে গিয়ে সেই ত্রিশটা রূপোর টাকা ফিরিয়ে দিয়ে বলল, “একজন নিরপরাধ লোককে হত্যা করার জন্য আপনাদের হাতে তুলে দিয়ে তাঁর প্রতি আমি বিশ্বাসঘাতকতা করেছি, আমি মহাপাপ করেছি।”

ইহুদী নেতারা বলল, “তাতে আমাদের কি? তুমি বোঝগে যাও।”

তখন যিহূদা সেই টাকা মন্দিরের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিল, পরে বাইরে গিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে মরল।

প্রধান যাজকরা সেই রূপোর টাকাগুলি কুড়িয়ে নিয়ে বললেন, “মন্দিরের তহবিলে এই টাকা জমা করা আমাদের বিধি-ব্যবস্থা বিরুদ্ধ কাজ, কারণ এটা খুনের টাকা।” তাই তাঁরা পরামর্শ করে ঐ টাকায় কুমোরদের একটা জমি কিনলেন যাতে জেরুশালেমে যেসব বিদেশী মারা যাবে, তাদের সেখানে কবর দেওয়া যেতে পারে। সেই জন্য ঐ কবরখানাকে আজও লোকে “রক্তক্ষেত্র” বলে। এর ফলে ভাববাদী যিরমিয়র ভাববাণী পূর্ণ হল:

“তারা সেই ত্রিশটা রূপোর টাকা নিল, এটাই হল তাঁর মূল্য, ইস্রায়েলের জনগণই তাঁর মূল্য নির্ধারণ করেছিল। 10 আর প্রভুর নির্দেশ অনুসারেই সেই টাকা দিয়ে তারা কুমোরের জমি কিনেছিল।”[a]

রাজ্যপাল পীলাত ও যীশু

(মার্ক 15:2-5; লূক 23:3-5; যোহন 18:33-38)

11 এদিকে যীশুকে রাজ্যপালের সামনে হাজির করা হল; রাজ্যপাল যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি ইহুদীদের রাজা?”

যীশু বললেন, “হ্যাঁ, আপনি যেমন বললেন।”

12 কিন্তু প্রধান যাজকরা ও ইহুদী নেতারা সমানে যখন তাঁর বিরুদ্ধে দোষ দিচ্ছিল, তখন তিনি তার একটারও জবাব দিলেন না।

13 তখন পীলাত তাঁকে বললেন, “ওরা, তোমার বিরুদ্ধে কত দোষ দিচ্ছে, তুমি কি শুনতে পাচ্ছ না?”

14 কিন্তু যীশু তাঁকে কোন জবাব দিলেন না, এমন কি তাঁর বিরুদ্ধে একটা অভিযোগেরও উত্তর দিলেন না। এতে পীলাত আশ্চর্য হয়ে গেলেন।

যীশুকে মুক্তি দেবার বিফল চেষ্টা

(মার্ক 15:6-15; লূক 23:13-25; যোহন 18:39–19:16)

15 রাজ্যপালের রীতি অনুসারে প্রত্যেক নিস্তারপর্বের সময় জনসাধারণের ইচ্ছানুযায়ী যে কোন কয়েদীকে তিনি মুক্ত করে দিতেন। 16 সেই সময় বারাব্বা[b] নামে এক কুখ্যাত আসামী কারাগারে ছিল।

17 তাই লোকরা সেখানে একসঙ্গে জড়ো হলে পীলাত তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের জন্য আমি কাকে ছেড়ে দেব? তোমরা কি চাও, বারাব্বাকে বা যীশু, যাকে খ্রীষ্ট বলে তাকে?” 18 কারণ পীলাত জানতেন, তারা যীশুর ওপর ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে তাঁকে ধরিয়ে দিয়েছিল।

19 পীলাত যখন বিচার আসনে বসে আছেন, সেই সময় তাঁর স্ত্রী তাঁকে বলে পাঠালেন, “ঐ নির্দোষ লোকটির প্রতি তুমি কিছু করো না, কারণ রাত্রে স্বপ্নে আমি তাঁর বিষয়ে যা দেখেছি তাতে আজ বড়ই উদ্বেগে কাটছে।”

20 কিন্তু প্রধান যাজকরা ও ইহুদী নেতারা জনতাকে প্ররোচনা দিতে লাগল, যেন তারা বারাব্বাকে ছেড়ে দিতে ও যীশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা বলে।

21 তখন রাজ্যপাল তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “এই দুজনের মধ্যে তোমরা কাকে চাও যে আমি তোমাদের জন্য ছেড়ে দিই?”

তারা বলল, “বারাব্বাকে!”

22 পীলাত তখন তাদের বললেন, “তাহলে যীশু যাকে মশীহ বলে তাকে নিয়ে কি করব?”

তারা সবাই বলল, “ওকে ক্রুশে দেওয়া হোক্।”

23 পীলাত বললেন, “কেন? ও কি অন্যায় করেছে?”

কিন্তু তারা তখন আরো জোরে চিৎকার করতে লাগল, “ওকে ক্রুশে দাও, ক্রুশে দাও!”

24 পীলাত যখন দেখলেন যে তাঁর চেষ্টার কোন ফল হল না, বরং আরো গোলমাল হতে লাগল, তখন তিনি জল নিয়ে লোকদের সামনে হাত ধুয়ে বললেন, “এই লোকের রক্তপাতের জন্য আমি দায়ী নই। এটা তোমাদেরই দায়!”

25 এই কথার জবাবে লোকেরা সমস্বরে বলল, “আমরা ও আমাদের সন্তানরা ওর রক্তের জন্য দায়ী থাকব।”

26 তখন পীলাত তাদের জন্য বারাব্বাকে ছেড়ে দিলেন; কিন্তু যীশুকে চাবুক মেরে ক্রুশে দেবার জন্য সঁপে দিলেন।

পীলাতের সৈন্যরা যীশুকে বিদ্রূপ করতে লাগল

(মার্ক 15:16-20; যোহন 19:2-3)

27 এরপর রাজ্যপালের সেনারা যীশুকে রাজভবনের সভাগৃহে নিয়ে গিয়ে সেখানে সমস্ত সেনাদলকে তাঁর চারধারে জড়ো করল। 28 তারা যীশুর পোশাক খুলে নিল, আর তাঁকে একটা লাল রঙের পোশাক পরাল। 29 পরে কাঁটা লতা দিয়ে একটা মুকুট তৈরী করে তা তাঁর মাথায় চেপে বসিয়ে দিল, আর তাঁর ডান হাতে একটা লাঠি দিল। পরে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে তাঁকে ঠাট্টা করে বলল, “ইহুদীদের রাজা, দীর্ঘজীবি হোন্!” 30 তারা তাঁর মুখে থুথু দিল ও তাঁর লাঠিটি নিয়ে তাঁর মাথায় মারতে লাগল। 31 এইভাবে তাঁকে বিদ্রূপ করবার পর তারা সেই পোশাকটি তাঁর গা থেকে খুলে নিয়ে তাঁর নিজের পোশাক আবার পরিয়ে দিল, তারপর তাঁকে ক্রুশে দেবার জন্য নিয়ে চলল।

যীশুকে ক্রুশে হত্যা করা হল

(মার্ক 15:21-32; লূক 23:26-39; যোহন 19:17-19)

32 সৈন্যরা যখন যীশুকে নিয়ে নগরের বাইরে যাচ্ছে, তখন পথে শিমোন নামে কুরীশীয় অঞ্চলের একজন লোককে দেখতে পেয়ে যীশুর ক্রুশ বইবার জন্য তাকে তারা জোর করে বাধ্য করল। 33 পরে তারা “গলগথা” নামে এক জায়গায় এসে পৌঁছল। (গলগথা শব্দটির অর্থ “মাথার খুলিস্থান।”) 34 সেখানে পৌঁছে তারা যীশুকে মাদক দ্রব্য মেশানো তিক্ত দ্রাক্ষারস পান করতে দিল; কিন্তু তিনি তা সামান্য আস্বাদ করে আর খেতে চাইলেন না। 35 তারা তাঁকে ক্রুশে দিয়ে তাঁর জামা কাপড় খুলে নিয়ে ঘুঁটি চেলে সেগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিল। 36 আর সেখানে বসে যীশুকে পাহারা দিতে লাগল। 37 তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের এই লিপি ফলকটি তাঁর মাথার উপরে ক্রুশে লাগিয়ে দিল, “এ যীশু, ইহুদীদের রাজা।”

38 তারা দুজন দস্যুকেও যীশুর সঙ্গে ক্রুশে দিল, একজনকে তাঁর ডানদিকে ও অন্যজনকে তাঁর বাঁ দিকে। 39 সেই সময় ঐ রাস্তা দিয়ে যে সব লোক যাতায়াত করছিল, তারা তাদের মাথা নেড়ে তাঁকে ঠাট্টা করে বলল, 40 “তুমি না মন্দির ভেঙ্গে আবার তা তিন দিনের মধ্যে তৈরী করতে পার! তাহলে এখন নিজেকে রক্ষা কর। তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও তবে ক্রুশ থেকে নেমে এস।”

41 সেইভাবেই প্রধান যাজকরা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ইহুদী নেতারা বিদ্রূপ করে তাঁকে বলতে লাগলেন, 42 “এ লোক তো অপরকে রক্ষা করত, কিন্তু এ নিজেকে বাঁচাতে পারে না! ও তো ইস্রায়েলের রাজা, তাহলে এখন ও ক্রুশ থেকে নেমে আসুক, তাহলে আমরা ওর ওপর বিশ্বাস করব। 43 ঐ লোকটি ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস করে। যদি তিনি চান, তবে ওকে এখনই রক্ষা করুন, কারণ ও তো বলেছে, ‘আমি ঈশ্বরের পুত্র।’” 44 তাঁর সঙ্গে যে দুজন দস্যুকে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল, তারাও সেইভাবেই তাঁকে বিদ্রূপ করতে লাগল।

যীশুর মৃত্যু

(মার্ক 15:33-41; লূক 23:44-49; যোহন 19:28-30)

45 সেই দিন দুপুর বারোটা থেকে বেলা তিনটে পর্যন্ত সমস্ত দেশ অন্ধকারে ঢেকে রইল। 46 প্রায় তিনটের সময় যীশু খুব জোরে বলে উঠলেন, “এলি, এলি লামা শবক্তানী?” যার অর্থ, “ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় ত্যাগ করেছ?”(B)

47 যারা সেখানে দাঁড়িয়েছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজন একথা শুনে বলতে লাগল, “ও এলিয়কে ডাকছে।”

48 তাদের মধ্যে একজন তখনই দৌড়ে গিয়ে একটা স্পঞ্জ কিছুটা সিরকায় ডুবিয়ে দিয়ে একটা নলের মাথায় সেটা লাগিয়ে তা যীশুর মুখে তুলে ধরে তাকে খেতে দিল। 49 কিন্তু অন্যরা বলতে লাগল, “ছেড়ে দাও, দেখি এলিয় ওকে রক্ষা করতে আসেন কি না?”

50 পরে যীশু আর একবার খুব জোরে চিৎকার করে প্রাণ ত্যাগ করলেন।

51 সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরের মধ্যেকার সেই ভারী পর্দাটা ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত চিরে দুভাগ হয়ে গেল, পৃথিবী কেঁপে উঠল, বড় বড় পাথরের চাঁই ফেটে গেল, 52 সমাধিগুহাগুলি খুলে গেল, আর মারা গিয়েছিলেন এমন অনেক ঈশ্বরের লোকের দেহ পুনরুত্থিত হল। 53 যীশুর পুনরুত্থানের পর এরা কবর ছেড়ে পবিত্র নগর জেরুশালেমে গিয়ে বহুলোককে দেখা দিয়েছিলেন।

54 ক্রুশের পাশে শতপতি ও তার সঙ্গে যাঁরা যীশুকে পাহারা দিচ্ছিল, তারা ভূমিকম্প ও অন্য সব ঘটনা দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে বলল, “সত্যই ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন।”

55 সেখানে বহু স্ত্রীলোক ছিলেন, যাঁরা দূরে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিলেন। এই মহিলারা গালীল থেকে যীশুর দেখাশোনার জন্য তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন। 56 তাঁদের মধ্যে ছিলেন মগ্দলীনী মরিয়ম, যাকোব ও যোষেফের মা মরিয়ম আর যাকোব ও যোহনের[c] মা।

যীশুর সমাধি

(মার্ক 15:42-47; লূক 23:50-56; যোহন 19:38-42)

57 সন্ধ্যা নেমে আসছে এমন সময় আরিমাথিয়ার যোষেফ নামে এক ধনী ব্যক্তি জেরুশালেমে এলেন; তিনিও যীশুর একজন অনুগামী ছিলেন। 58 পীলাতের কাছে গিয়ে যোষেফ যীশুর দেহটা চাইলেন। তখন পীলাত তাঁকে তা দিতে হুকুম করলেন। 59 যোষেফ দেহটি নিয়ে পরিষ্কার একটা কাপড়ে জড়ালেন। 60 তারপর সেই দেহটা নিয়ে তিনি নিজের জন্য পাহাড়ের গায়ে যে নতুন সমাধিগুহা কেটে রেখেছিলেন, তাতে রাখলেন। পরে সেই সমাধির মুখ বন্ধ করতে বড় একটা পাথর গড়িয়ে নিয়ে গিয়ে তা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেলেন। 61 মরিয়ম মগ্দলীনী ও সেই অন্য মরিয়ম কবরের সামনে বসে রইলেন।

যীশুর সমাধিগুহা পাহারা দেওয়া হল

62 পরের দিন, যখন শুক্রবার শেষ হল, অর্থাৎ প্রস্তুতি পর্বের পরের দিন, প্রধান যাজকরা ও ফরীশীরা গিয়ে পীলাতের সঙ্গে দেখা করল। 63 তারা বলল, “হুজুর, আমাদের মনে পড়ছে সেই প্রতারক তাঁর জীবনকালে বলেছিল, ‘আমি তিনদিন পরে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হব।’ 64 তাই আপনি হুকুম দিন যেন তিন দিন কবরটা পাহারা দেওয়া হয়, তা না হলে ওর শিষ্যরা হয়তো এসে দেহটা চুরি করে নিয়ে গিয়ে বলবে, তিনি মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন; তাহলে প্রথমটার চেয়ে শেষ ছলনাটা আরো খারাপ হবে।”

65 পীলাত তাদের বললেন, “তোমাদের কাছে পাহারা দেবার লোক আছে, তোমরা গিয়ে যত ভালভাবে পারো পাহারা দেবার ব্যবস্থা কর।” 66 তখন তারা সকলে গিয়ে কবরের মুখের সেই পাথররাশির উপর সীলমোহর করল ও সেখানে একদল প্রহরী মোতায়েন করে সমাধিটি সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করল।

মথি 27:11-54

রাজ্যপাল পীলাত ও যীশু

(মার্ক 15:2-5; লূক 23:3-5; যোহন 18:33-38)

11 এদিকে যীশুকে রাজ্যপালের সামনে হাজির করা হল; রাজ্যপাল যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি ইহুদীদের রাজা?”

যীশু বললেন, “হ্যাঁ, আপনি যেমন বললেন।”

12 কিন্তু প্রধান যাজকরা ও ইহুদী নেতারা সমানে যখন তাঁর বিরুদ্ধে দোষ দিচ্ছিল, তখন তিনি তার একটারও জবাব দিলেন না।

13 তখন পীলাত তাঁকে বললেন, “ওরা, তোমার বিরুদ্ধে কত দোষ দিচ্ছে, তুমি কি শুনতে পাচ্ছ না?”

14 কিন্তু যীশু তাঁকে কোন জবাব দিলেন না, এমন কি তাঁর বিরুদ্ধে একটা অভিযোগেরও উত্তর দিলেন না। এতে পীলাত আশ্চর্য হয়ে গেলেন।

যীশুকে মুক্তি দেবার বিফল চেষ্টা

(মার্ক 15:6-15; লূক 23:13-25; যোহন 18:39–19:16)

15 রাজ্যপালের রীতি অনুসারে প্রত্যেক নিস্তারপর্বের সময় জনসাধারণের ইচ্ছানুযায়ী যে কোন কয়েদীকে তিনি মুক্ত করে দিতেন। 16 সেই সময় বারাব্বা[a] নামে এক কুখ্যাত আসামী কারাগারে ছিল।

17 তাই লোকরা সেখানে একসঙ্গে জড়ো হলে পীলাত তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের জন্য আমি কাকে ছেড়ে দেব? তোমরা কি চাও, বারাব্বাকে বা যীশু, যাকে খ্রীষ্ট বলে তাকে?” 18 কারণ পীলাত জানতেন, তারা যীশুর ওপর ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে তাঁকে ধরিয়ে দিয়েছিল।

19 পীলাত যখন বিচার আসনে বসে আছেন, সেই সময় তাঁর স্ত্রী তাঁকে বলে পাঠালেন, “ঐ নির্দোষ লোকটির প্রতি তুমি কিছু করো না, কারণ রাত্রে স্বপ্নে আমি তাঁর বিষয়ে যা দেখেছি তাতে আজ বড়ই উদ্বেগে কাটছে।”

20 কিন্তু প্রধান যাজকরা ও ইহুদী নেতারা জনতাকে প্ররোচনা দিতে লাগল, যেন তারা বারাব্বাকে ছেড়ে দিতে ও যীশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা বলে।

21 তখন রাজ্যপাল তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “এই দুজনের মধ্যে তোমরা কাকে চাও যে আমি তোমাদের জন্য ছেড়ে দিই?”

তারা বলল, “বারাব্বাকে!”

22 পীলাত তখন তাদের বললেন, “তাহলে যীশু যাকে মশীহ বলে তাকে নিয়ে কি করব?”

তারা সবাই বলল, “ওকে ক্রুশে দেওয়া হোক্।”

23 পীলাত বললেন, “কেন? ও কি অন্যায় করেছে?”

কিন্তু তারা তখন আরো জোরে চিৎকার করতে লাগল, “ওকে ক্রুশে দাও, ক্রুশে দাও!”

24 পীলাত যখন দেখলেন যে তাঁর চেষ্টার কোন ফল হল না, বরং আরো গোলমাল হতে লাগল, তখন তিনি জল নিয়ে লোকদের সামনে হাত ধুয়ে বললেন, “এই লোকের রক্তপাতের জন্য আমি দায়ী নই। এটা তোমাদেরই দায়!”

25 এই কথার জবাবে লোকেরা সমস্বরে বলল, “আমরা ও আমাদের সন্তানরা ওর রক্তের জন্য দায়ী থাকব।”

26 তখন পীলাত তাদের জন্য বারাব্বাকে ছেড়ে দিলেন; কিন্তু যীশুকে চাবুক মেরে ক্রুশে দেবার জন্য সঁপে দিলেন।

পীলাতের সৈন্যরা যীশুকে বিদ্রূপ করতে লাগল

(মার্ক 15:16-20; যোহন 19:2-3)

27 এরপর রাজ্যপালের সেনারা যীশুকে রাজভবনের সভাগৃহে নিয়ে গিয়ে সেখানে সমস্ত সেনাদলকে তাঁর চারধারে জড়ো করল। 28 তারা যীশুর পোশাক খুলে নিল, আর তাঁকে একটা লাল রঙের পোশাক পরাল। 29 পরে কাঁটা লতা দিয়ে একটা মুকুট তৈরী করে তা তাঁর মাথায় চেপে বসিয়ে দিল, আর তাঁর ডান হাতে একটা লাঠি দিল। পরে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে তাঁকে ঠাট্টা করে বলল, “ইহুদীদের রাজা, দীর্ঘজীবি হোন্!” 30 তারা তাঁর মুখে থুথু দিল ও তাঁর লাঠিটি নিয়ে তাঁর মাথায় মারতে লাগল। 31 এইভাবে তাঁকে বিদ্রূপ করবার পর তারা সেই পোশাকটি তাঁর গা থেকে খুলে নিয়ে তাঁর নিজের পোশাক আবার পরিয়ে দিল, তারপর তাঁকে ক্রুশে দেবার জন্য নিয়ে চলল।

যীশুকে ক্রুশে হত্যা করা হল

(মার্ক 15:21-32; লূক 23:26-39; যোহন 19:17-19)

32 সৈন্যরা যখন যীশুকে নিয়ে নগরের বাইরে যাচ্ছে, তখন পথে শিমোন নামে কুরীশীয় অঞ্চলের একজন লোককে দেখতে পেয়ে যীশুর ক্রুশ বইবার জন্য তাকে তারা জোর করে বাধ্য করল। 33 পরে তারা “গলগথা” নামে এক জায়গায় এসে পৌঁছল। (গলগথা শব্দটির অর্থ “মাথার খুলিস্থান।”) 34 সেখানে পৌঁছে তারা যীশুকে মাদক দ্রব্য মেশানো তিক্ত দ্রাক্ষারস পান করতে দিল; কিন্তু তিনি তা সামান্য আস্বাদ করে আর খেতে চাইলেন না। 35 তারা তাঁকে ক্রুশে দিয়ে তাঁর জামা কাপড় খুলে নিয়ে ঘুঁটি চেলে সেগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিল। 36 আর সেখানে বসে যীশুকে পাহারা দিতে লাগল। 37 তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের এই লিপি ফলকটি তাঁর মাথার উপরে ক্রুশে লাগিয়ে দিল, “এ যীশু, ইহুদীদের রাজা।”

38 তারা দুজন দস্যুকেও যীশুর সঙ্গে ক্রুশে দিল, একজনকে তাঁর ডানদিকে ও অন্যজনকে তাঁর বাঁ দিকে। 39 সেই সময় ঐ রাস্তা দিয়ে যে সব লোক যাতায়াত করছিল, তারা তাদের মাথা নেড়ে তাঁকে ঠাট্টা করে বলল, 40 “তুমি না মন্দির ভেঙ্গে আবার তা তিন দিনের মধ্যে তৈরী করতে পার! তাহলে এখন নিজেকে রক্ষা কর। তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও তবে ক্রুশ থেকে নেমে এস।”

41 সেইভাবেই প্রধান যাজকরা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ইহুদী নেতারা বিদ্রূপ করে তাঁকে বলতে লাগলেন, 42 “এ লোক তো অপরকে রক্ষা করত, কিন্তু এ নিজেকে বাঁচাতে পারে না! ও তো ইস্রায়েলের রাজা, তাহলে এখন ও ক্রুশ থেকে নেমে আসুক, তাহলে আমরা ওর ওপর বিশ্বাস করব। 43 ঐ লোকটি ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস করে। যদি তিনি চান, তবে ওকে এখনই রক্ষা করুন, কারণ ও তো বলেছে, ‘আমি ঈশ্বরের পুত্র।’” 44 তাঁর সঙ্গে যে দুজন দস্যুকে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল, তারাও সেইভাবেই তাঁকে বিদ্রূপ করতে লাগল।

যীশুর মৃত্যু

(মার্ক 15:33-41; লূক 23:44-49; যোহন 19:28-30)

45 সেই দিন দুপুর বারোটা থেকে বেলা তিনটে পর্যন্ত সমস্ত দেশ অন্ধকারে ঢেকে রইল। 46 প্রায় তিনটের সময় যীশু খুব জোরে বলে উঠলেন, “এলি, এলি লামা শবক্তানী?” যার অর্থ, “ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় ত্যাগ করেছ?”(A)

47 যারা সেখানে দাঁড়িয়েছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজন একথা শুনে বলতে লাগল, “ও এলিয়কে ডাকছে।”

48 তাদের মধ্যে একজন তখনই দৌড়ে গিয়ে একটা স্পঞ্জ কিছুটা সিরকায় ডুবিয়ে দিয়ে একটা নলের মাথায় সেটা লাগিয়ে তা যীশুর মুখে তুলে ধরে তাকে খেতে দিল। 49 কিন্তু অন্যরা বলতে লাগল, “ছেড়ে দাও, দেখি এলিয় ওকে রক্ষা করতে আসেন কি না?”

50 পরে যীশু আর একবার খুব জোরে চিৎকার করে প্রাণ ত্যাগ করলেন।

51 সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরের মধ্যেকার সেই ভারী পর্দাটা ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত চিরে দুভাগ হয়ে গেল, পৃথিবী কেঁপে উঠল, বড় বড় পাথরের চাঁই ফেটে গেল, 52 সমাধিগুহাগুলি খুলে গেল, আর মারা গিয়েছিলেন এমন অনেক ঈশ্বরের লোকের দেহ পুনরুত্থিত হল। 53 যীশুর পুনরুত্থানের পর এরা কবর ছেড়ে পবিত্র নগর জেরুশালেমে গিয়ে বহুলোককে দেখা দিয়েছিলেন।

54 ক্রুশের পাশে শতপতি ও তার সঙ্গে যাঁরা যীশুকে পাহারা দিচ্ছিল, তারা ভূমিকম্প ও অন্য সব ঘটনা দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে বলল, “সত্যই ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন।”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International