Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Old/New Testament

Each day includes a passage from both the Old Testament and New Testament.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
1 শমূয়েল 1-3

ইল‌্কানা পরিবারের শীলোতে উপাসনা

পাহাড়ী দেশ ইফ্রয়িমের রামা অঞ্চলে ইল‌্কানা নামে একজন লোক ছিল। ইল‌্কানা সূফ পরিবার থেকে এসেছিল; তার পিতার নাম ছিল যিরোহম, যিরোহমের পিতা হচ্ছে ইলীহূ, ইলীহূর পিতা তোহূ, তোহূর পিতা সূফ। সে ইফ্রয়িমের পরিবারগোষ্ঠী থেকে এসেছিল।

ইল‌্কানার দুই স্ত্রী ছিল। একজনের নাম হান্না, অন্য জনের নাম পনিন্না। পনিন্নার সন্তানাদি ছিল, কিন্তু হান্না ছিল নিঃসন্তান।

প্রতি বছরই ইল‌্কানা রামা শহর থেকে শীলোতে চলে যেত। শীলোয় গিয়ে সে সর্বশক্তিমান প্রভুর উপাসনা করত ও তাঁকে বলি নিবেদন করত। সেখানে হফ্নি এবং পীনহস যাজক হিসেবে প্রভুর সেবা করত। এরা দুই জন ছিল এলির পুত্র। প্রত্যেকবার ইল‌্কানা বলি দিয়ে এসে তার একটা ভাগ তার স্ত্রী পনিন্নাকে দিত এবং সে পনিন্নার সন্তানদেরও কিছুটা ভাগ দিত। ইল‌্কানা আর একটা সমান অংশ হান্নাকেও দিত। প্রভু হান্নার কোলে সন্তান না দিলেও ইল‌্কানা তাকে বলির ভাগ দিত, কারণ সে হান্নাকে সত্যিই ভালবাসত।

পনিন্না হান্নাকে বিরক্ত করল

পনিন্না সব সময় হান্নাকে বিরক্ত করত। এতে হান্নার খুব মন খারাপ হত। হান্নার সন্তান হয়নি বলে পনিন্না তাকে এই রকম করত। বছরের পর বছর এই ঘটনা ঘটত। যখনই ইল‌্কানা তার পরিবারের সঙ্গে শীলোয় প্রভুর গৃহে উপাসনা করতে যেত, পনিন্না হান্নাকে বিরক্ত করত। একদিন ইল‌্কানা সবাইকে যখন বলির ভাগ দিচ্ছিল, হান্না মনের দুঃখে কেঁদে ফেলল। সে কিছুই খেল না। ইল‌্কানা তাকে বলল, “হান্না, তুমি কাঁদছ কেন? কেন তুমি কিছু খাচ্ছ না? কিসের জন্য তোমায় এমন শুকনো দেখাচ্ছে? তোমার জন্য তো আমি আছি। আমি তোমার স্বামী। দশটি পুত্রের চেয়ে আমাকে তোমার বেশী ভাল বলে বিবেচনা করা উচিৎ‌।”

হান্নার প্রার্থনা

খাওয়া দাওয়া এবং পান সেরে হান্না চুপচাপ উঠে পড়ল। সে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে গেল। প্রভুর পবিত্র মন্দিরের দরজার পাশে একটা চেয়ারে যাজক এলি বসেছিল। 10 দুঃখিনী হান্না প্রভুর কাছে প্রার্থনার সময় খুবই কাঁদল। 11 ঈশ্বরের কাছে সে এক বিশেষ ধরণের মানত করল। সে বলল, “হে সর্বশক্তিমান প্রভু, দেখো আমি বড় দুঃখী। আমাকে ভুলে যেও না। আমাকে মনে রেখ। তুমি যদি আমাকে একটি পুত্র দাও, আমি সেই পুত্রকে তোমাকেই উৎসর্গ করব। সে হবে নাসরতীয়। সে দ্রাক্ষারস বা কোন রকম কড়া পানীয় পান করবে না। কেউ কখনও তার চুল কাটবে না।”[a]

12 অনেকক্ষণ ধরে হান্না প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল। হান্না যখন প্রার্থনা করছিল তখন এলি তার মুখগহ্বরের দিকে দেখছিল। 13 হান্না মনে মনে প্রার্থনা করছিল। সে শব্দ করে কিছু বলছিল না, শুধু তার ঠোঁট দুটো নড়ছিল। এলি মনে করল যে হান্না মাতাল হয়ে গেছে। 14 তাই এলি হান্নাকে বলল, “তুমি খুব বেশী পান করেছ! এখন দ্রাক্ষারস সরিয়ে রাখার সময় হয়েছে।”

15 হান্না বলল, “না মহাশয়, আমি দ্রাক্ষারস বা সুরা কিছুই পান করি নি। আমার হৃদয় তীব্র বেদনায় কাতর। আমি প্রভুর কাছে আমার সব কষ্টের কথা জানাচ্ছিলাম। 16 ভাববেন না যে আমি খারাপ মেয়ে। আমি সারাক্ষণ শুধু প্রার্থনাই করছিলাম। কারণ আমার অনেক দুঃখ এবং আমি খুবই বিচলিত।”

17 এলি বলল, “নিশ্চিন্তে বাড়ি যাও। ইস্রায়েলের ঈশ্বর তোমার মনোবাঞ্ছা পূরণ করুন।”

18 হান্না বলল, “আশা করি আমার ওপর আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন।” এই বলে হান্না চলে গেল এবং পরে কিছু মুখে দিল। তারপর থেকে সে আর দুঃখী ছিল না।

19 পরদিন খুব সকালে ইল‌্কানার বাড়ির সকলে ঘুম থেকে উঠল। তারা সকলে প্রভুর উপাসনা করল। তারপর তারা রামায় ফিরে গেল।

শমূয়েলের জন্ম

ইল‌্কানা হান্নার সঙ্গে মিলিত হল। প্রভু হান্নাকে মনে রেখেছিলেন। 20 পরের বছর হান্না একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিল। হান্না পুত্রের নাম রাখল, শমূয়েল। সে বলল, “আমি প্রভুর কাছে এর জন্যে প্রার্থনা করেছিলাম, তাই এর নাম দিয়েছি শমূয়েল।”

21 সেই বছর ইল‌্কানা শীলোতে গেল। ঈশ্বরের কাছে প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য এবং বলি দিতেই সে সেখানে সপরিবারে গিয়েছিল। 22 কিন্তু হান্না যেতে চাইল না। সে ইল‌্কানাকে বলল, “যখন পুত্র বড় হবে, শক্ত খাবার-দাবার খেতে শিখবে তখন আমি শীলোতে যাব। শীলোয় গিয়ে প্রভুর কাছে পুত্রকে দান করব। পুত্র হবে নাসরতীয়। সে শীলোতেই থাকবে।”

23 ইল‌্কানা তার স্ত্রী হান্নাকে বলল, “যা ভাল বোঝ তাই কর। পুত্র বড় না হওয়া পর্যন্ত, তার শক্ত খাবার খাওয়ার শক্তি না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতেই থাকতে পারে। প্রভু তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করুন।”[b]

সুতরাং পুত্র শক্ত খাবার খাওয়ার উপযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত হান্না পুত্রের সেবা শুশ্রূষার জন্য বাড়িতে থেকে গেল।

শমূয়েলকে নিয়ে হান্না শীলোয় এলির কাছে গেল

24 বালকটি যখন বেশ বড়সড় হল, খাবার চিবোতে শিখল, তখন হান্না তাকে নিয়ে শীলোয় প্রভুর গৃহে গেল। সে তিন বছরের একটা ষাঁড়ও সঙ্গে নিল। এ ছাড়াও সে নিল 20 পাউণ্ড ছাঁকা ময়দা এবং এক বোতল দ্রাক্ষারস।

25 তারা প্রভুর সামনে গেল। ইল‌্কানা ষাঁড়টিকে বলি দিল যেমন সে সাধারণতঃ করত। তারপর হান্না এলিকে তার পুত্র দিল। 26 হান্না এলিকে বলল, “মার্জনা করবেন মহাশয়। আমিই সেই মহিলা যে একদিন আপনার কাছে দাঁড়িয়েছিলাম এবং প্রভুর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম। বিশ্বাস করুন, আমি সত্যি কথাই বলছি। 27 আমি এই ছেলের জন্যেই প্রার্থনা করেছিলাম এবং প্রভু আমার সেই প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন। প্রভু এই ছেলেকে আমায় দিয়েছেন। 28 আমি এখন সেই ছেলেকে প্রভুর কাছে উৎসর্গ করছি। সে সারা জীবন তাঁর সেবা করবে।”

এই কথা বলে, হান্না ছেলেটিকে সেখানে রাখল এবং প্রভুর উপাসনা করল।

হান্নার ধন্যবাদ জ্ঞাপন

হান্না বলল,

“প্রভুতেই আমার হৃদয় খুশী।
    আমি আমার ঈশ্বরে শক্তিশালী!
তাই আমি আমার শত্রু দেখে হাসি।
    আমি তোমার প্রদত্ত পরিত্রাণে খুবই আনন্দিত।
প্রভুর মত পবিত্র আর কোন ঈশ্বর নেই।
    তুমি ছাড়া আর কোন ঈশ্বর নেই।
    আমাদের ঈশ্বরের মত আর কোন শিলা নেই।
আর দম্ভ করো না।
    গর্বের শব্দ যেন উচ্চারিত না হয়
    কারণ প্রভু ঈশ্বর সবই জানেন।
ঈশ্বরই লোকদের চালনা ও বিচার করেন।
বলবান সৈন্যর ধনু ভেঙ্গে যায়
    এবং দুর্বল লোক শক্তিশালী হয়।
অতীতে যাদের প্রচুর খাদ্য ছিল
    এখন তাদের এক মুঠো খাদ্যের জন্য কঠিন সংগ্রাম করতে হবে।
কিন্তু অতীতে যারা ক্ষুধার্ত ছিল
    তাদের এখন প্রচুর খাদ্য আছে।
যে নারী ছিল বন্ধ্যা তার
    এখন সাতটি সন্তান।
কিন্তু যে নারীর বহু সন্তান ছিল এখন সে দুঃখী।
    কারণ তার সন্তানরা চলে গেছে।
প্রভুই মারেন ও বাঁচান,
    প্রভুই কবরে শায়িত করেন ও উর্দ্ধে তোলেন।
প্রভুই কাউকে গরীব করেন,
    আবার কাউকে ধনে ভরে দেন।
কাউকে নম্র করেন,
    আবার কাউকে সম্মান দেন।
প্রভু ধূলি থেকে দরিদ্রদের তোলেন
    এবং তিনি দুঃখ হরণ করে নেন।
তিনি তাদের গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেন
    এবং তাদের রাজকুমারদের সঙ্গে বসান ও তাদের সম্মানীয় আসন দেন।
প্রভু হচ্ছেন সেই জন যিনি সমগ্র বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন
    এবং সমগ্র বিশ্ব যাঁর অধিকারভুক্ত।
প্রভু তাঁর পবিত্র লোকদের
    হোঁচট খাওয়া থেকে রক্ষা করেন।
দুষ্ট লোকরা অন্ধকারে ধ্বংস হয়ে যাবে।
    তাদের ক্ষমতা তাদের বিজয়ী করতে পারে না।
10 প্রভু তাঁর শত্রুদের ধ্বংস করেন।
    তিনি তাদের বিরুদ্ধে স্বর্গে বজ্র নির্ঘোষ ঘটাবেন।
প্রভু দূরের দেশগুলিরও বিচার করবেন।
    তিনি তাঁর রাজাকে ক্ষমতা দেবেন
    এবং তাঁর অভিষিক্ত রাজাকে শক্তিশালী করবেন।”

11 ইল‌্কানা সপরিবারে তার নিজের দেশ রামায় ফিরে এলো। কিন্তু ছেলেটি শীলোয় থেকে গেল। সেখানে সে যাজক এলির তত্ত্বাবধানে প্রভুর সেবা করেছিল।

এলির দুষ্ট সন্তানগণ

12 এলির পুত্ররা ছিল খুব মন্দ, তারা প্রভুকে মানতো না। 13 এমনকি লোকদের সাথে যাজকদের কিরূপ আচার ব্যবহার করা উচিৎ‌ সেই নিয়ে তারা বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাতো না। যাজকদের এইসব কাজ করণীয় ছিল: লোক যখন কোন উৎসর্গ আনবে তখন যাজকদের সেই উৎসর্গের মাংস একটা গরম জলের পাত্রে রাখতে হবে। তারপর যাজকের ভৃত্য একটা বিশেষ ধরণের তিন মুখো কাঁটা চামচ আনবে। 14 যাজকের ভৃত্যকে সেই পাত্র থেকে কিছুটা মাংস তুলে নেবার জন্য কাঁটাটা ব্যবহার করতে হবে। সেই কাঁটায় যতটুকু মাংস উঠত যাজক শুধু সেই মাংসটুকুই পেত। যেসব ইস্রায়েলীয়রা শীলোতে বলি আনত তাদের সকলের প্রতি যাজকদের এই কাজটা করতে হত।

15 কিন্তু এলির পুত্ররা তা করত না। বেদীর ওপর চর্বির পোড়ানোর আগেই তাদের ভৃত্য ভক্তদের বলত, “যাজককে কিছু মাংস দাও, সেটা ঝলসানো হবে। সে সেদ্ধ মাংস নেবে না।”

16 যদি ভক্ত বলত, “আগে চর্বিটা পোড়াই, তারপর যা চাও দিচ্ছি।” তার উত্তরে ভৃত্য বলত, “না, এক্ষুনি মাংস দাও। না দিলে আমি তোমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেবো!”

17 এভাবে হফ্নি ও পীনহস প্রভুর জন্য দেওয়া বলিকে অসম্মান করত। সন্দেহ নেই প্রভুর বিরুদ্ধে এটা ছিল খুবই মারাত্মক পাপ।

18 কিন্তু শমূয়েল প্রভুর সেবা করত। সেই তরুণ সহকারী, যাজকের বিশেষ ধরণের জামা এফোদ পরত। 19 প্রতি বছর শমূয়েলের মা একটা ছোট পোশাক তৈরী করত এবং সেটা তার জন্য শীলোয় নিয়ে যেত। সে স্বামীর সাথে সেখানে প্রতি বছর বলি দিতে যেত।

20 ইল‌্কানা আর তার স্ত্রীকে এলি আশীর্বাদ করে বলত, “প্রভু তোমাকে হান্নার মাধ্যমে আরও সন্তান দিক। এরাই হান্নার মানত করা ছেলের জায়গা নেবে।”

ইল‌্কানা তার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ী ফিরে গেল। 21 প্রভু হান্নার উপর সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। হান্নার তিনটি ছেলে, দুটি মেয়ে হল। এদিকে শমূয়েল তো প্রভুর সেবা করতে করতেই পবিত্র স্থানে বড় হয়ে উঠছিল।

দুষ্ট সন্তানদের সামলাতে এলি ব্যর্থ হল

22 এলি বেশ বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো। শীলোতে সমস্ত ইস্রায়েলের সঙ্গে পুত্ররা কি করত সে সম্বন্ধে সে প্রায়ই শুনতে পেত। এলি এও শুনেছিল যে সমাগম তাঁবুর প্রবেশ দ্বারে যে সব স্ত্রী লোকরা সেবা করত তাদের সঙ্গে তার পুত্ররা শুয়ে রাত কাটাত।

23 এলি তার পুত্রদের বলল, “লোকরা তোমাদের সম্বন্ধে নানা কথা আমায় বলছে। কেন তোমরা এত বাজে কাজ করছ? 24 শোন বাছারা, এরকম অন্যায় কাজ কোরো না। প্রভুর লোকরা তোমাদের নিন্দে করছেন। 25 মানুষ যদি মানুষের কাছে পাপ করে ঈশ্বর তাকে ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু প্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করলে কে তাকে রক্ষা করবে?”

কিন্তু পুত্ররা কেউ তাকে গ্রাহ্য করল না। তাই প্রভু তাদের শেষ করবেন বলে স্থির করলেন।

26 অন্যদিকে শমূয়েল বড় হতে লাগল। সে ঈশ্বর এবং লোকদের কাছে আনন্দদায়ক ছিল।

এলির পরিবার সম্পর্কে ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎবাণী

27 ঈশ্বর একজন লোককে এলির কাছে পাঠালেন। লোকটি এলিকে বলল, “প্রভু এই কথাগুলি বলেছেন, ‘তোমার পূর্বপুরুষরা ছিল ফরৌণ কুলের ক্রীতদাস কিন্তু তাদের কাছে আমি দেখা দিয়েছিলাম। 28 ইস্রায়েলের সমস্ত পরিবারগোষ্ঠীর ভেতর থেকে আমার যাজকসমূহ হবার জন্য আমি তোমার পরিবারকে নির্বাচিত করেছিলাম। আমার বেদীতে বলি উৎসর্গ দেবার জন্য তোমাদের মনোনীত করেছিলাম। তারাই ধূপ জ্বালাবে, তারাই পরবে এফোদ। আমি এই জন্যই তাদের নির্বাচন করেছিলাম। আমিই তোমাদের পরিবারগোষ্ঠীকে অধিকার দিয়েছি যেন তারাই ইস্রায়েলীয়দের দেওয়া বলির মাংস পায়। 29 তাহলে কেন তোমরা এইসব বলি এবং নৈবেদ্যকে সম্মান করবে না? তুমি আমার চেয়েও তোমার পুত্রদের বেশী সম্মান দিয়ে থাক। আমার লোক, ইস্রায়েলীয়রা আমাকে উৎসর্গীকৃত করবার জন্য যে মাংস নিয়ে আসে তার থেকে সব চেয়ে ভালো অংশগুলি খেয়ে তোমরা মোটা হয়ে যাচ্ছো।’

30 “ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তোমার পিতার পরিবারের লোকরা তাঁকে চিরকাল সেবা করবে। কিন্তু আজ প্রভু এই কথা বলছেন, ‘না, তা আর কখনও হবে না। আমি তাদেরই সম্মান করব যারা আমাকে সম্মান করবে। আর যারা আমায় সম্মান করতে অস্বীকার করবে, তাদের অমঙ্গল হবে। 31 সেই সময় আসছে যেদিন আমি তোমাদের সমস্ত উত্তরপুরুষদের বিনাশ করব। তোমাদের ঘরে কেউই বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত বাঁচবে না। 32 ইস্রায়েলে ভাল জিনিস ঘটবে, কিন্তু খারাপ জিনিসগুলি তোমরা তোমাদের বাড়ীতে ঘটতে দেখবে। তোমার ঘরে কেউ বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত বাঁচবে না। 33 একজন মানুষকে আমি বাঁচাব। সেই আমার বেদীতে যাজকের কাজ করবে। সে দীর্ঘজীবী হবে। যতদিন পর্যন্ত তার দৃষ্টিশক্তি থাকবে, শরীরে শক্তি থাকবে ততদিন সে বেঁচে থাকবে। তোমার উত্তরপুরুষরা তরবারির কোপে মরবে। 34 আমি তোমাকে এমন একটি চিহ্ন দেখাব যাতে বুঝতে পারবে যে এইসব কথা সত্য। একই দিনে তোমার দুই পুত্র হফ্নি আর পীনহস মারা যাবে। 35 নিজের জন্য আমি একজন বিশ্বস্ত যাজক মনোনীত করব। সে আমার কথা শুনবে এবং আমি যা চাই তাই করবে। আমি তার পরিবারকে শক্তিশালী করব। আমার মনোনীত রাজার সামনে এই যাজক সর্বদা আমার সেবা করবে। 36 তারপর তোমার পরিবারের যারা বেঁচে থাকবে তারা এই যাজকের কাছে এসে মাথা নীচু করে দাঁড়াবে। তারা কয়েক টুকরো রূপো অথবা এক টুকরো রুটির জন্য ভিক্ষে চাইবে। তারা বলবে, “আমাকে দয়া করে একটা যাজকের কাজ দাও যাতে দু মুঠো খেতে পারি।”’”

ঈশ্বর শমূয়েলকে ডাকলেন

এলির অধীনে থেকে বালক শমূয়েল প্রভুর সেবা করতে লাগল। সেই সময় প্রভু প্রায়ই লোকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতেন না। দর্শন ছিল বিরল।

এলির দৃষ্টিশক্তি এত কমে গিয়েছিল যে এক রকম অন্ধই বলা চলে। এক রাত্রিতে সে শুয়ে ছিল, শমূয়েল প্রভুর পবিত্র মন্দিরে শুয়ে ছিল। সেখানেই ঈশ্বরের পবিত্র সিন্দুক ছিল। প্রভুর প্রদীপ তখনও জ্বলছিল। প্রভু শমূয়েলকে ডাকলেন; শমূয়েল সাড়া দিল, “এই যে, আমি এখানে।” শমূয়েল মনে করেছিল, এলি তাকে ডাকছে। তাই সে ছুটে এলির কাছে গেল। এলিকে বলল, “এই যে আমি। আপনি আমাকে ডাকছিলেন?”

এলি বলল, “কই, আমি তো তোমাকে ডাকি নি, তুমি ঘুমোও।”

শমূয়েল চলে গেল। আবার প্রভু ডাকলেন, “শমূয়েল!” শমূয়েল ছুটে গেল এলির কাছে। এলিকে বলল, “এই যে আমি। আপনি আমাকে ডাকছিলেন?”

এলি বলল, “আমি তোমাকে ডাকি নি। তুমি ঘুমোও।”

শমূয়েল তখনও পর্যন্ত প্রভুকে জানত না, চিনত না। কারণ প্রভু তখনও তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন নি।

প্রভু তৃতীয়বার শমূয়েলকে ডাকলেন। আবার শমূয়েল উঠল, এলির কাছে আবার গেল। সে বলল, “এই যে আমি, আপনি আমাকে ডাকছিলেন?”

তখন এলি বুঝতে পারল ছেলেটিকে আসলে স্বয়ং প্রভুই ডেকেছেন। এলি শমূয়েলকে বলল, “এখন তুমি শোও। এবার যদি কেউ তোমাকে ডাকে, তুমি তার কাছে গিয়ে বলবে, ‘বলুন প্রভু, আপনার দাস শুনছে।’”

শমূয়েল শুতে গেল। 10 প্রভু সেখানে এসে দাঁড়ালেন। আবার তিনি আগের মতো ডাকলেন: “শমূয়েল, শমূয়েল!”

এবার শমূয়েল সাড়া দিল: “বলুন প্রভু, আপনার দাস শুনছে।”

11 প্রভু শমূয়েলকে বললেন, “শোনো, আমি শীঘ্রই ইস্রায়েলে একটা কিছু ঘটাব। যারা এই সম্বন্ধে শুনবে তারা অতিশয় বেদনাহত হবে। 12 এলি আর তার পরিবারের বিরুদ্ধে আমি যা যা করবার করব। আমি একেবারে গোড়া থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত সব কিছুই করব। 13 আমি এলিকে বলেছিলাম, ওর পরিবারকে চিরকালের জন্যে আমি শাস্তি দেবই। আমি শাস্তি দেব, কারণ এলি জানত তার পুত্ররা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ কাজ করছে। কিন্তু এলি তাদের সামলায় নি। 14 তাই আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যতই বলি আর শস্য নৈবেদ্য উৎসর্গ করা হোক্ না কেন, তাতে এলির পুত্রদের পাপ ঘুচবে না।”

15 ভোর পর্যন্ত শমূয়েল বিছানায় শুয়ে রইল। ভোর হলে সে প্রভুর মন্দিরের দরজা খুলল। দর্শনে কি দেখেছে এবং কি শুনেছে তা এলিকে জানাতে শমূয়েল সাহস করল না।

16 কিন্তু এলি শমূয়েলকে বলল, “শমূয়েল, আমার পুত্র!”

শমূয়েল বলল, “আমি এইখানে।”

17 এলি জিজ্ঞাসা করল, “প্রভু তোমায় কি বলেছেন? আমার কাছে কিছু লুকিও না। লুকোলে ঈশ্বর তোমাকে শাস্তি দেবেন।”

18 অগত্যা শমূয়েল এলিকে সব খুলে বলল, কিছুই গোপন করল না।

এলি বলল, “তিনি প্রভু, তিনি যা ভাল বুঝবেন তাই করুন।”

19 প্রভু শমূয়েলের সঙ্গে ছিলেন আর শমূয়েল বড় হয়ে উঠতে লাগল। শমূয়েলের একটি কথাকেও প্রভু মিথ্যা প্রমাণিত হতে দিলেন না। 20 দান থেকে বের্-শেবা পর্যন্ত সমস্ত ইস্রায়েলের লোকরা জেনে গেল যে শমূয়েল প্রভুর একজন প্রকৃত ভাববাদী। 21 শীলোতে শমূয়েলের সামনে প্রভু প্রায়ই দেখা দিতে লাগলেন। প্রভু নিজেকে শমূয়েলের কাছে প্রভুর বাক্য হিসেবে প্রকাশ করলেন।

লূক 8:26-56

ভূতে পাওয়া এক ব্যক্তি

(মথি 8:28-34; মার্ক 5:1-20)

26 এরপর তাঁরা গালীল হ্রদের ওপারে গেরাসেনীদের অঞ্চলে গিয়ে পৌঁছালেন। 27 যীশু যখন তীরে নামছেন, সেই সময় সেই নগর থেকে একজন লোক তাঁর সামনে এল। এই লোকটির মধ্যে অনেকগুলো মন্দ আত্মা ছিল। বহুদিন ধরে সে জামা কাপড় পরত না ও বাড়িতে থাকত না কিন্তু কবরখানায় থাকত।

28-29 সে যীশুকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে উঠল ও তাঁর সামনে এসে উপুড় হয়ে পড়ে চিৎকার করে বলতে লাগল, “পরমেশ্বরের পুত্র যীশু, আমাকে নিয়ে আপনার কি কাজ, আমি আপনাকে মিনতি করছি, আমায় যন্ত্রণা দেবেন না।” সে এই কথা বলল, কারণ যীশু সেই ভূতকে তার মধ্য থেকে বার হয়ে যাবার জন্য হুকুম করলেন। সেই ভূত প্রায়ই লোকটাকে চেপে ধরত, তাকে বেড়ি ও শেকল দিয়ে বেঁধে রাখলেও তা ছিঁড়ে ফেলে ভূত তাকে প্রান্তরে তাড়িয়ে নিয়ে যেত।

30 তখন যীশু তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার নাম কি?”

সে বলল, “বাহিনী!” (কারণ অনেকগুলো ভূত একসঙ্গে তার মধ্যে ঢুকেছিল।) 31 তারা যীশুকে মিনতির সুরে বলল, যেন তিনি তাদের রসাতলে যাওযার হুকুম না করেন। 32 সেই সময় পাহাড়ের ঢালে একপাল শুয়োর চরছিল। সেই ভূতরা যীশুকে মিনতি করে বলল যেন তিনি তাদেরকে ঐ শুয়োরের পালে ঢোকার অনুমতি দেন। যীশু তখন তাদের সেই অনুমতি দিলেন। 33 তাতে ভূতরা সেই লোকটির ভেতর থেকে বেরিয়ে ঐ শুয়োরগুলোর মধ্যে ঢুকল, আর সেই শুয়োরের পাল হ্রদের ঢাল দিয়ে জোরে দৌড়ে গিয়ে জলে ডুবে মরল।

34 যারা শুয়োরের পাল চরাচ্ছিল, এই ঘটনা দেখে তারা দৌড়ে গিয়ে সেই নগরে ও সারা দেশে এই খবর দিল; 35 আর কি হয়েছে তা দেখবার জন্য লোকরা বাইরে এল। তারা যীশুর কাছে এসে দেখল, যার মধ্যে থেকে ভূতগুলো বার হয়েছে সে কাপড় পরে শান্তভাবে যীশুর পায়ের কাছে বসে আছে। এই দেখে তারা ভয় পেয়ে গেল। 36 যারা এই ঘটনা দেখেছিল তারা ঐ লোকদের কাছে বলল, কেমন করে ঐ ভূতে পাওয়া লোকটি সুস্থ হল। 37 তখন গেরাসেনী অঞ্চলের সমস্ত লোক যীশুকে তাদের কাছ থেকে চলে যেতে অনুরোধ করল, কারণ তারা ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল।

তখন যীশু ফিরে যাবার জন্য নৌকায় উঠলেন। 38 তখন যে লোকটির মধ্য থেকে ভূত বার হয়ে গিয়েছিল, সে যীশুর সঙ্গে যাবার জন্য মিনতি করতে লাগল। কিন্তু যীশু তাকে অনুমতি দিলেন না। 39 তিনি বললেন, “তুমি বাড়ি ফিরে যাও; আর ঈশ্বর তোমার জন্য যা করেছেন তা সকলকে বল।”

তখন সে সেখান থেকে চলে গেল, আর যীশু তার জন্য যা করেছেন তা সারা শহরে বলে বেড়াতে লাগল।

মৃত বালিকাকে জীবন দান ও স্ত্রীলোককে আরোগ্যদান

(মথি 9:18-26; মার্ক 5:21-43)

40 যীশু যখন ফিরে এলেন তখন এক বিরাট জনতা তাঁকে স্বাগত জানাল, কারণ তারা সকলে যীশুর ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিল। 41-42 ঠিক সেই সময় যায়ীর নামে একজন লোক সেখানে এলেন, ইনি সেখানকার সমাজগৃহের নেতা। তিনি যীশুর পায়ের কাছে উপুড় হয়ে পড়ে তাঁকে অনুরোধ করলেন, যেন যীশু তাঁর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে যান। কারণ তখন তাঁর একমাত্র সন্তান, বারো বছরের মেয়েটি মৃত্যুশয্যায় ছিল।

যীশু যখন যাচ্ছিলেন, লোকেরা তাঁর চারদিকে ভীড় করে ধাক্কা-ধাক্কি করতে লাগল। 43 সেই ভীড়ের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক ছিল যে বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগে ভুগছিল। চিকিৎসকদের পিছনে সে তার যথাসর্বস্ব ব্যয় করেছিল,[a] কিন্তু কেউ তাকে ভাল করতে পারে নি। 44 সে যীশুর পেছন দিকে এসে তাঁর পোশাকের ঝালর স্পর্শ করল, সঙ্গে সঙ্গে তার রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে গেল। 45 তখন যীশু বললেন, “কে আমাকে স্পর্শ করল?”

সবাই অস্বীকার করল, তখন পিতর বললেন, “গুরু, লোকেরা আপনার চারপাশে ধাক্কা-ধাক্কি করে আপনার ওপর পড়ছে।”

46 কিন্তু যীশু বললেন, “কেউ আমায় স্পর্শ করেছে! কারণ আমি জানি আমার মধ্যে থেকে শক্তি বার হয়েছে।” 47 সেই স্ত্রীলোকটি যখন দেখল যে সে কোনমতেই এড়িয়ে যেতে পারবে না, তখন কাঁপতে কাঁপতে যীশুর কাছে এসে তার সামনে উপুড় হয়ে পড়ল এবং সকলের সামনে বলল কেন সে যীশুকে স্পর্শ করেছে, আর কিভাবে সঙ্গে সঙ্গে ভাল হয়ে গেছে। 48 তখন যীশু সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “তোমার বিশ্বাসই তোমাকে সুস্থ করেছে, তোমার শান্তি হোক্।”

49 তিনি তখনও কথা বলছেন, এমন সময় সমাজ-গৃহের নেতার বাড়ি থেকে একজন এসে বলল, “আপনার মেয়ে মারা গেছে! গুরুকে আর কষ্ট দেবেন না।”

50 যীশু এই কথা শুনতে পেয়ে সমাজ-গৃহের নেতাকে বললেন, “ভয় পেও না! কেবল বিশ্বাস রাখো, সে নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে উঠবে।”

51 যীশু সেই বাড়িতে পৌঁছে পিতর, যাকোব, যোহন ও মেয়েটির মা-বাবা ছাড়া আর কাউকে সেই ঘরে ঢুকতে দিলেন না। 52 সেখানে অনেক লোক মেয়েটির জন্য শোক করছিল ও কাঁদছিল। যীশু তাদের বললেন, “কান্না বন্ধ কর, কারণ ও তো মরে নি, ও ঘুমোচ্ছে।”

53 তাঁর কথা শুনে লোকেরা হাসাহাসি করতে লাগল, কারণ তারা জানত মেয়েটি মারা গেছে। 54 যীশু মেয়েটির হাত ধরে ডাক দিলেন, “খুকুমনি ওঠ!” 55 সেই মুহূর্তে তার আত্মা ফিরে এল, আর সে উঠে দাঁড়াল। যীশু তাদের আদেশ করলেন, “যেন তাকে কিছু খেতে দেওয়া হয়।” 56 মেয়েটির মা বাবা খুবই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। যীশু তাদের বারণ করলেন যেন তারা এই ঘটনার কথা কাউকে না বলে।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International