M’Cheyne Bible Reading Plan
দশটি আজ্ঞা
20 তখন ঈশ্বর এইসব কথা বললেন:
2 “আমিই প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর। আমিই তোমাদের মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছি। তাই তোমরা এই নির্দেশগুলি মানবে:
3 “আমাকে ছাড়া তোমরা আর কোনও দেবতাকে উপাসনা করবে না।
4 “তোমরা অবশ্যই অন্য কোন মূর্তি গড়বে না যেগুলো আকাশের, ভূমির অথবা জলের নীচের কোন প্রাণীর মত দেখতে। 5 কোন মূর্ত্তির উপাসনা বা সেবা করবে না। কারণ, আমিই প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর। যারা অন্য দেবতার উপাসনা করবে তাদের আমি ঘৃণা করি। আমার বিরুদ্ধে যারা পাপ করবে তারা আমার শত্রুতে পরিণত হবে। এবং আমি তাদের শাস্তি দেব। আমি তাদের সন্তান-সন্ততি এবং পরবর্তী প্রজন্মকেও শাস্তি দেব। 6 কিন্তু যারা আমায় ভালবাসবে ও আমার নির্দেশ মান্য করবে তাদের প্রতি আমি সর্বদা দয়ালু থাকব। আমি তাদের হাজার প্রজন্ম পর্যন্ত দয়া প্রদর্শন করব।
7 “তোমরা তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের নাম ভুল ভাবে ব্যবহার করবে না। যদি কেউ তা করে তাহলে সে দোষী এবং প্রভু তাকে নির্দোষ সাব্যস্ত করবেন না।
8 “বিশ্রামের দিনটিকে বিশেষ দিন হিসাবে মনে রাখবে। 9 সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করো। 10 কিন্তু সপ্তম দিনটি হবে অবসরের। প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের প্রতি সম্মান প্রর্দশনের দিন। সুতরাং সেই দিনে কেউ কাজ করবে না-তুমি নয়, অথবা তোমার ছেলেরা এবং মেয়েরা, অথবা তোমার স্ত্রী, অথবা তোমার ক্রীতদাস-দাসীরা কেউ নয়। এমনকি তোমাদের গৃহপালিত পশু এবং তোমাদের শহরে বাস করা বিদেশীরাও বিশ্রামের দিনে কোন কাজ করবে না। 11 কারণ প্রভু সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করে এই আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র এবং এর মধ্যস্থিত সব কিছু বানিয়েছেন এবং সপ্তম দিনে তিনি বিশ্রাম নিয়েছেন। এইভাবে বিশ্রামের দিনটি প্রভুর আশীর্বাদ ধন্য—ছুটির দিন। প্রভু এই দিনটিকে বিশেষ দিন হিসাবে সৃষ্টি করেছেন।
12 “তুমি অবশ্যই তোমার পিতামাতাকে সম্মান করবে, তাহলে তোমরা তোমাদের দেশে দীর্ঘ জীবনযাপন করবে। যেটা প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর তোমাদের দিচ্ছেন।
13 “কাউকে হত্যা কোরো না।
14 “ব্যাভিচার কোরো না।
15 “চুরি কোরো না।
16 “অন্যদের সম্বন্ধে মিথ্যা বোলো না।
17 “তোমাদের প্রতিবেশীর ঘরবাড়ীর প্রতি লোভ কোরো না। তার স্ত্রীকে ভোগ করতে চেয়ো না। এবং তার দাস-দাসী, গবাদি পশু অথবা গাধাদের আত্মসাৎ করতে চেয়ো না। অন্যদের কোন কিছুর প্রতি লোভ কোরো না।”
লোকরা ঈশ্বরকে ভয় পেল
18 ঐ সময়ে, লোকজন বজ্র নির্ঘোষ শুনতে পেল এবং বিদ্যুৎ দেখতে পেল। তারা শিঙার শব্দ শুনতে পেল এবং দেখল ধোঁয়া ওপর দিকে উঠছে। এই দেখে লোকরা ভয়ে কুঁকড়ে গেল। পর্বত থেকে দূরে দাঁড়িয়ে তারা এই ঘটনা দেখতে লাগল। 19 তখন লোকরা মোশিকে বলল, “তুমি যদি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চাও তাহলে তা আমরা শুনব। কিন্তু ঈশ্বর যেন আমাদের সঙ্গে কথা না বলেন। তিনি কথা বললে আমরা ভয়ে মারা যাব।”
20 তখন মোশি তাদের বলল, “ভয় পেও না। প্রভু তোমাদের পরীক্ষা করতে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি চান তোমরা তাঁকে সম্মান কর, যাতে তোমরা পাপ কাজ না কর।”
21 লোকরা পর্বত থেকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকল, আর তখন মোশি অন্ধকার মেঘের ভেতর ঈশ্বরের কাছে গেল। 22 তখন প্রভু মোশিকে, ইস্রায়েলের লোকদের এই কথাগুলি বলার জন্য বললেন: “তোমরা দেখেছো যে আমি স্বর্গ থেকে তোমাদের সঙ্গে কথা বলেছি। 23 সুতরাং তোমরা আমার সঙ্গে তুলনা করে সোনা অথবা রূপো দিয়ে অন্য কোন মূর্ত্তি গড়বে না।
24 “আমার জন্য একটি বিশেষ বেদী তৈরী করো। বেদী তৈরীর সময় মাটি ব্যবহার করবে। আমার প্রতি উৎসর্গ হিসেবে ঐ বেদীর ওপর হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য নিবেদন করবে। বলিতে তোমাদের গৃহপালিত মেষ অথবা গবাদি পশু ব্যবহার করবে। যেখানে যেখানে আমি তোমাদের আমাকে মনে রাখতে বলেছি সেই সব স্থানে তোমরা এই বলিগুলি দেবে। তখন আমি এসে তোমাদের আশীর্বাদ করব। 25 পাথরের বেদী তৈরী করলে কোন লোহার অস্ত্র দিয়ে, কাটা পাথর ফলক দিয়ে সেই বেদী তৈরী করবে না। যদি তা করো তাহলে সেই বেদী গ্রহণযোগ্য হবে না। 26 এবং আমার বেদীতে কোন সিঁড়ি তৈরী করবে না। যদি বেদীতে সিঁড়ি থাকে তাহলে ঐ সিঁড়ি দিয়ে মানুষ যখন উঠবে তখন নীচের লোকদের কাছে তাদের নগ্নতা প্রকাশ পাবে।”
রাজ্যপাল পীলাত যীশুকে প্রশ্ন করলেন
(মথি 27:1-2, 11-14; মার্ক 15:1-5; যোহন 18:28-38)
23 এরপর তারা সকলে উঠে প্রভু যীশুকে নিয়ে পীলাতের কাছে গেল। 2 আর তারা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলল, “আমরা দেখেছি, লোকটা আমাদের জাতিকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। এ কৈসরকে কর দিতে বারণ করে আর বলে, সে নিজেই খ্রীষ্ট, একজন রাজা।”
3 তখন পীলাত যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি ইহুদীদের রাজা?”
যীশু তাঁকে বললেন, “তুমি নিজেই সে কথা বললে।”
4 এরপর পীলাত প্রধান যাজক ও লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, “এই লোকের বিরুদ্ধে কোন দোষই আমি খুঁজে পাচ্ছি না।”
5 কিন্তু তারা জেদ ধরে বলতে লাগল, “এই লোকটি যিহূদার সমস্ত জায়গায় শিক্ষা দিয়ে লোকদের ক্ষেপিয়ে তুলছে। গালীল থেকে শুরু করে এখন সে এখানে এসেছে।”
পীলাত যীশুকে হেরোদের কাছে পাঠালেন
6 এই কথা শুনে পীলাত জানতে চাইলেন যীশু গালীলের লোক কিনা। 7 তিনি যখন জানতে পারলেন যে হেরোদের শাসনাধীনে যে অঞ্চল আছে যীশু সেখানকার লোক, তখন তিনি যীশুকে হেরোদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, কারণ হেরোদ তখন জেরুশালেমেই ছিলেন।
8 রাজা হেরোদ যীশুকে দেখে খুবই খুশী হলেন, কারণ তিনি অনেকদিন থেকেই তাঁকে দেখতে চাইছিলেন। তাঁর বিষয়ে হেরোদ অনেক কথাই শুনেছিলেন এবং আশা করেছিলেন যে যীশু কোন অলৌকিক কাজ করে তাঁকে দেখাবেন। 9 তিনি যীশুকে অনেক প্রশ্ন করলেন; কিন্তু যীশু তাকে কোন উত্তরই দিলেন না। 10 প্রধান যাজকরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা সেখানে দাঁড়িয়ে প্রবলভাবে যীশুর বিরুদ্ধে দোষারোপ করতে লাগল। 11 হেরোদ তার সৈন্যদের নিয়ে যীশুকে নানাভাবে অপমান ও উপহাস করলেন। পরে একটা সুন্দর আলখাল্লা পরিয়ে তাঁকে আবার পীলাতের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। 12 এর আগে পীলাত ও হেরোদ পরস্পর শত্রু ছিলেন; কিন্তু ঐ দিন তাঁরা পরস্পর আবার বন্ধু হয়ে গেলেন।
যীশুর মৃত্যু অবধারিত
(মথি 27:15-26; মার্ক 15:6-15; যোহন 18:39–19:16)
13 পীলাত প্রধান যাজকদের ও ইহুদী নেতাদের ডেকে বললেন, 14 “তোমরা আমার কাছে এই লোকটিকে নিয়ে এসে বলছ যে এ লোকদের বিপথে চালিত করছে। তোমাদের সামনেই আমি ভালভাবে একে জেরা করে দেখলাম; আর তোমরা এর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছ তার কোন প্রমাণই পেলাম না, সে নির্দোষ। 15 এমন কি রাজা হেরোদও পান নি, তাই তিনি একে আবার আমাদের কাছে ফেরত পাঠিয়েছেন। আর দেখ, মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য কোন কাজই এ করে নি। 16 তাই একে আমি আচ্ছা করে চাবুক মেরে ছেড়ে দেব।” 17 [a]
18 কিন্তু তারা সকলে এক সঙ্গে চিৎকার করে বলে উঠল, “এই লোকটাকে দূর কর! আমাদের জন্য বারাব্বাকে ছেড়ে দাও!” 19 শহরের মধ্যে গণ্ডগোল বাধানো ও হত্যার অপরাধে বারাব্বাকে কারাবন্দী করা হয়েছিল।
20 পীলাত যীশুকে ছেড়ে দিতে চাইলেন, তাই তিনি আবার লোকদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন। 21 কিন্তু তারা চিৎকার করেই চলল, “ওকে ক্রুশে দাও, ক্রুশে দাও।”
22 পীলাত তৃতীয় বার তাদের বললেন, “কেন? এই লোক কি অপরাধ করেছে? মৃত্যুদণ্ড দেবার মতো কোন দোষই তো এর আমি দেখছি না, তাই একে আমি চাবুক মেরে ছেড়ে দেব।”
23 কিন্তু তারা প্রচণ্ড চিৎকার করেই চলল, তাঁকে যেন ক্রুশে দেওয়া হয়, এই দাবিতে তারা অনড় থাকল। আর শেষ পর্যন্ত তাদের চিৎকারেরই জয় হল। 24 পীলাত তাদের অনুরোধ রক্ষা করবেন বলে ঠিক করলেন। 25 যাকে বিদ্রোহ ও খুনের অপরাধে কারাগারে রাখা হয়েছিল তাকেই তিনি মুক্তি দিলেন, আর যীশুকে তাদের হাতে তুলে দিলেন যেন তাকে নিয়ে তারা যা চায় তা করতে পারে।
যীশুকে ক্রুশে বিদ্ধ করা হল
(মথি 27:32-44; মার্ক 15:21-32; যোহন 19:17-27)
26 তারা যখন যীশুকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন কুরীশীর শহরের শিমোন নামে একজন লোককে সৈন্যরা ধরল, সে তখন মাঠ থেকে আসছিল। তারা সেই ক্রুশটা তার ঘাড়ে চাপিয়ে যীশুর পেছনে পেছনে সেটা বয়ে নিয়ে যেতে তাকে বাধ্য করল।
27 এক বিরাট জনতা তার পেছনে পেছনে যাচ্ছিল, তাদের মধ্যে কিছু স্ত্রীলোকও ছিল যাঁরা যীশুর জন্য কান্নাকাটি ও হা-হুতাশ করতে করতে যাচ্ছিল। 28 যীশু তাদের দিকে ফিরে বললেন, “হে জেরুশালেমের মেয়েরা, তোমরা আমার জন্য কেঁদো না, বরং নিজেদের জন্য ও তোমাদের সন্তানদের জন্য কাঁদ। 29 কারণ এমন দিন আসছে যখন লোকে বলবে, ‘বন্ধ্যা স্ত্রীলোকেরাই ধন্য! আর ধন্য সেই সব গর্ভ যা কখনও সন্তান প্রসব করে নি, ধন্য সেই সব স্তন যা কখনও শিশুদের পান করায় নি।’ 30 সেই সময় লোকে পর্বতকে বলবে, ‘আমাদের ওপরে পড়!’(A) তারা ছোট ছোট পাহাড়কে বলবে, ‘আমাদের চাপা দাও!’ 31 কারণ গাছ সবুজ থাকতেই যদি লোকে এরকম করে, তবে গাছ যখন শুকিয়ে যাবে তখন কি করবে?”
32 দুজন অপরাধীকে তাঁর সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওযা হচ্ছিল। 33 তারা “মাথার খুলি” নামে একটা জায়গায় এসে পৌঁছাল, সেখানে ঐ দুজন অপরাধীর সঙ্গে তারা যীশুকে ক্রুশে বিদ্ধ করল। তারা একজনকে তাঁর বাঁদিকে, আর অন্যজনকে তাঁর ডানদিকে ক্রুশে টাঙিয়ে দিল।
34 তখন যীশু বললেন, “পিতা, এদের ক্ষমা কর, কারণ এরা যে কি করছে তা জানে না।”
তারা পাশার ঘুঁটি চেলে গুলিবাঁট করে নিজেদের মধ্যে তাঁর পোশাকগুলি ভাগ করে নিল। 35 লোকেরা সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখছিল, ইহুদী নেতারা ব্যঙ্গ করে তাঁকে বলতে লাগল, “ওতো অন্যদের বাঁচাতো। ও যদি ঈশ্বরের মনোনীত সেই খ্রীষ্ট হয় তবে এখন নিজেকে বাঁচাক দেখি!”
36 সৈন্যরাও তাঁর কাছে এগিয়ে এসে তাঁকে উপহাস করতে লাগল। তারা পান করার সিরকা এগিয়ে দিয়ে যীশুকে বলল, 37 “তুই যদি ইহুদীদের রাজা, তবে নিজেকে বাঁচা দেখি!” 38 (তারা একটা ফলকে “এ ইহুদীদের রাজা” লিখে যীশুর ক্রুশের ওপর তা লটকে দিল।)
39 তাঁর দুপাশে যাঁরা ক্রুশের ওপর ঝুলছিল, তাদের মধ্যে একজন তাঁকে বিদ্রূপ করে বলল, “তুমি না খ্রীষ্ট? আমাদের ও নিজেকে বাঁচাও দেখি!”
40 কিন্তু অন্য জন তাকে ধমক দিয়ে বলল, “তুমি কি ঈশ্বরকে ভয় কর না? তুমি তো একই রকম শাস্তি পাচ্ছ। 41 আমরা যে শাস্তি পাচ্ছি তা ন্যায়, কারণ আমরা যা করেছি তার যোগ্য শাস্তিই পাচ্ছি; কিন্তু ইনি তো কোন অন্যায় করেন নি।” 42 এরপর সে বলল, “যীশু আপনি যখন আপনার রাজ্যে আসবেন তখন আমার কথা মনে রাখবেন।”
43 যীশু তাকে বললেন, “আমি তোমায় সত্যি বলছি, তুমি আজকেই আমার সঙ্গে পরমদেশে উপস্থিত হবে।”
যীশুর মৃত্যুবরণ
(মথি 27:45-56; মার্ক 15:33-41; যোহন 19:28-30)
44 তখন বেলা প্রায় বারোটা; আর সেই সময় থেকে তিনটা পর্যন্ত সমস্ত দেশ অন্ধকারে ছেয়ে গেল। 45 সেই সময় সূর্যের আলো দেখা গেল না; আর মন্দিরের মধ্যে ভারী পর্দাটা মাঝখানে থেকে চিরে দুভাগ হয়ে গেল। 46 যীশু চিৎকার করে বললেন, “পিতা আমি তোমার হাতে আমার আত্মাকে সঁপে দিচ্ছি।”(B) এই কথা বলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ফেললেন।
47 সেখানে উপস্থিত শতপতি এইসব ঘটনা দেখে ঈশ্বরের প্রশংসা করে বলে উঠলেন, “ইনি সত্যিই নির্দোষ ছিলেন!”
48 যে লোকরা সেখানে জড়ো হয়েছিল, তারা এইসব ঘটনা দেখে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে সেখান থেকে চলে গেল। 49 কিন্তু যাঁরা যীশুর খুবই পরিচিত ছিলেন, তাঁরা শেষ পর্যন্ত কি ঘটে দেখার জন্য দূরে দাঁড়িয়ে রইলেন। যে সব স্ত্রীলোক গালীল থেকে যীশুর সঙ্গে এসেছিলেন, তাঁরাও এদের মধ্যে ছিলেন।
আরিমাথিয়ার যোষেফ
(মথি 27:57-61; মার্ক 15:42-47; যোহন 19:38-42)
50-51 সেখানে যোষেফ নামে একজন লোক ছিলেন, তিনি ছিলেন ইহুদী মহাসভার সভ্য; ভাল ও দয়ালু ব্যক্তি। তিনি পরিষদের সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপের সঙ্গে একমত হননি। যিহূদার আরিমাথিয়ার শহর থেকে তিনি এসেছিলেন এবং ঈশ্বরের রাজ্যের আগমণের প্রতীক্ষায় ছিলেন। 52 যোষেফ পীলাতের কাছে গিয়ে যীশুর মৃতদেহটি চাইলেন। 53 পরে যীশুর দেহটি ক্রুশের ওপর থেকে নামিয়ে নিয়ে একটি মসলিন কাপড়ে তা জড়ালেন। এরপর পাহাড়ের গা কেটে গর্ত করা একটি সমাধিগুহার মধ্যে দেহটি শুইয়ে রাখলেন। এই সমাধি সম্পূর্ণ নতুন ছিল, এর আগে কাউকে কখনও এখনে কবর দেওয়া হয় নি। 54 সেই দিনটা ছিল বিশ্রামবারের আয়োজনের দিন, আর বিশ্রামবার প্রায় শুরু হয়ে গিয়েছিল।
55 যে স্ত্রীলোকেরা যীশুর সঙ্গে সঙ্গে গালীল থেকে এসেছিলেন, তাঁরা যোষেফের সঙ্গে গেলেন, আর সেই সমাধিটি ও তার মধ্যে কিভাবে যীশুর দেহ শায়িত রাখা হল তা দেখলেন। 56 এরপর তাঁরা বাড়ি ফিরে গিয়ে বিশেষ এক ধরণের সুগন্ধি তেল ও মশলা তৈরী করলেন।
বিশ্রামবারে তাঁরা বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে কাজকর্ম বন্ধ রাখলেন।
ঈশ্বর ইয়োবের সঙ্গে কথা বললেন
38 তখন প্রভু ঝোড়ো বাতাসের মধ্যে থেকে কথা বলে উঠলেন। প্রভু বললেন:
2 “কে এই অজ্ঞ লোক
যে বোকার মত কথা বলছে?
3 ইয়োব, নিজেকে প্রস্তুত করে নাও, সৈনিকের মত অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নাও।
এবং আমি যে প্রশ্ন করবো তার উত্তর দেবার জন্য তৈরী হও।
4 “ইয়োব, আমি যখন পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলাম তখন তুমি কোথায় ছিলে?
যদি তুমি প্রকৃতই জ্ঞানী হও তাহলে আমাকে উত্তর দাও।
5 যদি তুমি এতই জ্ঞানী হও তো বল এই পৃথিবীটা কত বড় হবে তা কে স্থির করেছিল?
পরিমাপক রেখা দিয়ে কে পৃথিবীটার পরিমাপ করেছে?
6 পৃথিবীর ভিত্তি স্তম্ভগুলি কিসের ওপর বসে রয়েছে?
তার জায়গায় কে প্রথম নির্মান-প্রস্তর রেখেছে?
7 যখন তা সৃষ্টি করা হয়েছিল তখন প্রভাতের তারাসমূহ এক সঙ্গে গান গেয়েছিল।
দেবদূতরা আনন্দে হর্ষধ্বনি করেছিল।
8 “ইয়োব, পৃথিবীর গভীর থেকে যখন সমুদ্র প্রবাহিত হতে শুরু করেছিল
তখন কে তা বন্ধ করার জন্য দ্বার রুদ্ধ করেছিল?
9 সেই সময়, নবজাতককে পোশাক পরাবার মত আমি একটি পোশাকের মত মেঘগুলোকে চারদিকে জড়িয়ে দিয়েছিলাম
এবং তাকে, একটি শিশুকে যেমন শক্ত করে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে দেওয়া হয় সেই ভাবে অন্ধকার দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলাম।
10 আমি সমুদ্রের সীমা নির্ধারণ করেছিলাম,
এবং তাকে বাঁধের অন্যদিকে রেখেছিলাম।
11 আমি সমুদ্রকে বলেছিলাম, ‘তুমি এই পর্যন্ত আসতে পার, এর বেশী নয়।
এই খানেই তোমার উদ্ধত ঢেউ যেন থেমে যায়।’
12 “ইয়োব, তোমার জীবনে তুমি কি কখনও সকাল বা দিনকে
শুরু হবার আদেশ দিয়েছ?
13 ইয়োব, তুমি কি সকালের আলোকে কখনও বলেছো:
পৃথিবীকে ধারণ কর এবং মন্দ লোকদের তাদের গোপন ড়েবা থেকে তাড়িত কর?
14 প্রভাতের আলো, পাহাড় এবং উপত্যকা
সহজেই দেখতে সহায়তা করে।
যখন দিনের আলো পৃথিবীতে এসে পড়ে,
তখন জামার ভাঁজের মত সেই স্থানের রূপ সহজেই বোঝা যায়।
সেই স্থান, শীলমোহর দিয়ে ছাপ মারা নরম কাদার মতই
(সমতল) আকৃতি ধারণ করে।
15 মন্দ লোকরা দিনের আলো পছন্দ করে না।
দিনের আলো যখন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তখন তা তাদের মন্দ কাজ করা থেকে বিরত করে।
16 “ইয়োব, যেখানে সমুদ্র শুরু হয়, সেই গভীরতম সমুদ্রে তুমি কি কখনও গিয়েছো?
তুমি কি কখনও সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে হেঁটেছো?
17 ইয়োব, তুমি কি কখনও মৃত্যুলোকের দ্বার
এবং গভীর অন্ধকার দেখেছ?
18 ইয়োব, এই পৃথিবীটা যে কত বড় তা কি তুমি সত্যি সত্যিই বোঝ?
যদি তুমি এসব বুঝে থাকো, আমায় বল।
19 “ইয়োব, কোথা থেকে আলো আসে?
কোথা থেকে অন্ধকার আসে?
20 ইয়োব, যেখান থেকে আলো ও অন্ধকার আসে, তুমি কি তাদের সেখানে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে?
তুমি কি জানো সেই জায়গায় কি করে যেতে হয়?
21 এইগুলো তুমি নিশ্চয় জানো, ইয়োব, কারণ তুমি বয়ঃবৃদ্ধ এবং জ্ঞানী।
যখন আমি এসব সৃষ্টি করেছিলাম তখন তুমি জীবিত ছিলে, তাই না?[a]
22 “ইয়োব, যে ভাণ্ডারে আমি তুষার এবং শিলাবৃষ্টি সঞ্চয় করে রাখি
তুমি কি কখনও সেখানে গিয়েছিলে?
23 সঙ্কট কালের জন্য এবং যুদ্ধবিগ্রহের জন্য
আমি শিলাবৃষ্টি ও তুষার সঞ্চয় করে রাখি।
24 তুমি কি কখনও সেই জায়গায় গিয়েছো যেখান থেকে সূর্য উদিত হয়,
যেখান থেকে সারা পৃথিবীতে পূবের বাতাস প্রবাহিত হয়?
25 প্রচণ্ড বৃষ্টির জন্য কে আকাশে খাদ খনন করেছে?
কে ঝড় এবং বিদ্যুতের জন্য পথ প্রস্তুত করেছে?
26 যেখানে কোন লোকই বসবাস করে না সেখানেও কে বৃষ্টি নিয়ে যায়?
27 সেই বৃষ্টি, শূন্য ভূমিতে প্রচুর জল দেয়
এবং ঘাস গজিয়ে ওঠে।
28 এই বৃষ্টির কি কোন জনক আছে?
শিশির বিন্দুর পিতা কে?
29 বরফের কি কোন জননী আছে?
তুষারকে কে জন্ম দেয়?
30 জল পাথরের মত শক্ত হয়ে জমে যায়।
এমনকি সমুদ্রও জমে যায়!
31 “ইয়োব, তুমি কি কৃত্তিকা নক্ষত্রমালাকে এক সঙ্গে বাঁধতে পারো?
তুমি কি কালপুরুষের বন্ধনকে মুক্ত করতে পারো?
32 তুমি কি ঠিক সময়ে নক্ষত্রমণ্ডলীকে বার করতে পারো?
তুমি কি বিরাট ভালুকটিকে তার শাবকসহ পরিচালিত করতে পারো?
33 যে বিধির দ্বারা আকাশ শাসিত হয়, তা কি তুমি জানো?
তুমি কি পৃথিবীর ওপর ক্রমানুসারে তাদের সাজাতে পারো?
34 “ইয়োব, তুমি কি বৃষ্টির দিকে চেয়ে,
তাদের নির্দেশ দিতে পারো, তোমাকে বৃষ্টিতে ঢেকে দিতে?
35 তুমি কি বিদ্যুৎকে আদেশ করতে পারো?
তারা কি তোমার কাছে এসে বলবে, ‘আপনি কোথায়?
আপনি কি চান প্রভু?’ তুমি যেখানে চাও, তারা কি সেখানে যাবে?
36 “ইয়োব, কে মানুষকে জ্ঞানী করে?
কে তাদের অন্তরে প্রজ্ঞা দান করে?
37 এমন জ্ঞানী কে আছে যে মেঘ গণনা করতে পারে?
কে তাদের বৃষ্টি ঝরানোর নির্দেশ দেয়?
38 ধূলো পরিণত হয় কাদায়
এবং এক সঙ্গে দলা পাকিয়ে থাকে।
39 “ইয়োব, তুমি কি সিংহের জন্য খাদ্য খুঁজে দাও?
তুমি কি ওদের ক্ষুধার্ত শিশুদের খেতে দাও?
40 এই সিংহরা তাদের গুহায় লুকিয়ে থাকে।
শিকার ধরবার জন্য তারা লম্বা ঘাসের মধ্যে লুকিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকে।
41 যখন দাঁড় কাকের ছানারা ঈশ্বরের কাছে সাহায্যের জন্য চিৎকার করে এবং নিরন্ন হয়ে ঘুরতে থাকে,
তখন কে দাঁড় কাকদের খেতে দেয়?
দানের বিষয়
8 ভাই ও বোনেরা, মাকিদনিয়ার খ্রীষ্ট মণ্ডলীগুলির মধ্যে ঈশ্বরের অনুগ্রহ যে কাজ করেছে তা আমরা তোমাদের জানাচ্ছি। 2 যদিও দুঃখ কষ্ট ভোগ করার মধ্য দিয়ে তাদের পরীক্ষা করা হয়েছে এবং যদিও তারা অতি দরিদ্র, তবু তাদের মনে এতই আনন্দ যে তারা অন্যকে খোলা হাতে দান করেছে। 3 আমি সাক্ষী দিচ্ছি যে তারা নিজের ইচ্ছায় যতদূর সাধ্য এমনকি সাধ্যের অতিরিক্ত দান করেছিল। 4 তারা আমাদের ঐকান্তিক অনুরোধ জানিয়ে বলেছিল, ঈশ্বরের লোকদের এই সেবার কাজে অংশগ্রহণ করার সুযোগ যেন তাদের দেওয়া হয়। 5 তারা এমনভাবে দান করেছিল যা আমরা আশাই করি নি। তারা ঈশ্বরের ইচ্ছামতো প্রথমে নিজেদের প্রভুর কাছে এবং পরে আমাদের দিয়ে দিল।
6 সেইজন্য আমরা তীতকে অনুরোধ করলাম যাতে তিনি এর আগে যে কাজ করতে শুরু করেছিলেন, সেই অনুগ্রহের কাজ শেষ করেন। 7 সবকিছু যেমন তোমাদের প্রচুর পরিমাণে আছে—বিশ্বাস, বলার ক্ষমতা, জ্ঞান, সব বিষয়ের প্রতি তোমাদের আগ্রহ এবং আমাদের প্রতি ভালবাসা, ঠিক এইভাবে দান করার গুণটিও যেন তোমাদের প্রচুর পরিমাণে থাকে।
8 আমি আদেশ করে বলছি না, কিন্তু অন্যের আগ্রহের উদাহরণ দিয়ে তোমাদের ভালবাসা যথার্থ কিনা পরীক্ষা করছি। 9 কারণ তোমরা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহের কথা জান। তিনি ধনী হয়েও তোমাদের জন্য দরিদ্র হলেন, যাতে তোমরা তাঁর দারিদ্র্যে ধনবান হয়ে উঠতে পার।
10 এবিষয়ে আমি আমার পরামর্শ তোমাদের দিচ্ছি কারণ তোমাদের পক্ষে এটা মঙ্গলজনক। যেহেতু গত বছর তোমরাই প্রথম কাজ করতে আরম্ভ করেছিলে, শুধু তাই নয় সেই কাজ করার ইচ্ছাও তোমরাই প্রথমে প্রকাশ করেছিলে। 11 তোমরা আগ্রহের সাথে যে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলে, এখন তা সেই একই আগ্রহের সঙ্গে তোমাদের সাধ্যমত শেষ কর। 12 কারণ দেবার মতো ইচ্ছা থাকলে তবেই তোমাদের দান গ্রাহ্য হবে। তোমাদের যা আছে সেই ভিত্তিতে দিলেই তোমাদের দান গ্রাহ্য হবে, তোমাদের যা নেই সেই অনুযায়ী নয়। 13 কারণ আমাদের উদ্দেশ্য এই নয় যে, অন্য সকলে আরাম করবে আর তোমরা কষ্টে পড়বে, বরং সব কিছুতে যেন সমতা থাকে। 14 বর্তমানে তোমাদের যথেষ্ট রয়েছে, তার থেকে দিয়ে তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারবে, আবার প্রয়োজনে তাদের যা বেশী হবে তা দিয়ে তোমাদের অভাব মিটবে। এইভাবে যেন সর্বত্র সমতা বজায় থাকে। 15 শাস্ত্রে যেমন লেখা আছে,
“যে বেশী কুড়োলো, তার বাড়তি থাকল না;
যে অল্প কুড়োলো, তার অভাব হল না।”(A)
তীত ও তার সঙ্গীরা
16 তোমাদের জন্য আমার যে আগ্রহ আছে, ঠিক সেই রকম আগ্রহ ঈশ্বর তীতের অন্তরে দিয়েছেন বলে আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিই। 17 তীত যে আমাদের অনুরোধ রেখেছেন তাই নয়, তিনি এতই আগ্রহী ছিলেন যে নিজের ইচ্ছায় তোমাদের কাছে যাচ্ছেন। 18 আমরা তীতের সঙ্গে সেই ভাইকে পাঠাচ্ছি, যিনি সুসমাচার প্রচারের জন্য সমস্ত মণ্ডলীতে প্রশংসিত। 19 কেবল তাই নয়, আমাদের সহযাত্রী হিসেবে প্রভুর মহিমার জন্য এই দান নিয়ে যাবার দরুন ও আমাদের সাহায্য করার ইচ্ছাকে প্রমাণ করতে বাস্তবিক মণ্ডলীগুলি তাকে মনোনীত করেছিল।
20 আমরা এই দায়িত্ব সম্পর্কে সতর্ক যাতে এই বিপুল অর্থ বিতরণ সম্পর্কে কেউ যেন আমাদের সমালোচনা না করে। 21 কারণ কেবল প্রভুর সামনে নয়, কিন্তু মানুষের দৃষ্টিতে যা ভাল, তাও আমরা লক্ষ্য রাখি।
22 আর ওদের সাথে আমাদের ভাইকে পাঠালাম, যাঁকে আমরা অনেকবার অনেক বিষয়ে পরীক্ষা করে এইসব কাজে উদ্যোগী দেখেছি এবং তোমাদের প্রতি তাঁর এই দৃঢ় বিশ্বাসের জন্য এবার আরও বেশী আগ্রহী দেখছি।
23 তীতের কথা যদি বলতে হয়, তবে তিনি আমার সহকর্মী ও তোমাদের সাহায্যের কাজে আমার সহকারী। আমাদের ভাইদের বিষয় যদি বলতে হয়, তবে বলি তাঁরা মণ্ডলীগুলির প্রতিনিধিত্ব করেন এবং খ্রীষ্টের পক্ষে গৌরব আনেন। 24 অতএব তোমাদের ভালবাসার প্রমাণ এবং তোমাদের ওপর আমাদের গর্বের কারণ, এই দুই বিষয়ের প্রমাণ তাঁদের দেখাও, যাতে সমস্ত মণ্ডলী তা দেখতে পায়।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International