M’Cheyne Bible Reading Plan
যাকোবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
50 ইস্রায়েল মারা গেলে যোষেফ অত্যন্ত দুঃখিত হলেন। তিনি কাঁদলেন এবং তাঁর পিতাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন। 2 যোষেফ তাঁর ভৃত্যদের পিতার দেহ প্রস্তুত করতে বললেন। (এই ভৃত্যরা চিকিৎসক ছিল।) চিকিৎসকেরা মিশরীয়রা যে বিশেষভাবে দেহ প্রস্তুত করে সেইভাবে যাকোবের দেহ কবর দেবার জন্য প্রস্তুত করল। 3 দেহ বিশেষভাবে প্রস্তুত করার সময় কবর দেবার আগে তারা 40 দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করল। তারপর 70 দিন ধরে মিশরীয়রা যাকোবের জন্য শোক পালন করল। 4 শোকের 70 দিন শেষ হলে যোষেফ ফরৌণের আধিকারিকদের বললেন, “ফরৌণকে দয়া করে এই কথা বলুন: 5 ‘আমার পিতা যখন মৃত্যুশয্যায় ছিলেন তখন আমি তাঁর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে তাঁকে কনান দেশে এক গুহায় সমাহিত করব। এই গুহা তিনি নিজের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। তাই দয়া করে আমার পিতাকে কবর দিতে দিন। তারপর আমি আবার আপনার কাছে আসব।’”
6 ফরৌণ বললেন, “তোমার প্রতিজ্ঞা পালন কর। যাও তোমার পিতাকে কবর দাও।”
7 তাই যোষেফ তাঁর পিতাকে সমাহিত করতে চললেন। ফরৌণের সমস্ত আধিকারিক, ফরৌণের নেতারা এবং মিশরের প্রবীণরা যোষেফের সাথে গেলেন। 8 যোষেফের পরিবারের সবাই, তাঁর ভাইরা ও তাঁর পিতার পরিবারের সবাই, তাঁর সঙ্গে গেলেন। গোশন প্রদেশে কেবল তাঁদের সন্তান-সন্ততি ও পশুরা থেকে গেল। 9 সেই এক বিরাট দল হল। এমনকি এক দল সৈনিকও রথে ও ঘোড়ায় চড়ে চলল। 10 তারা যর্দন নদীর পূর্বদিকে গোরেন আটদের[a] খামারে এলো। এই স্থানে তারা ইস্রায়েলের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে শোক সভা করল। সেই শোক সভা সাত দিন ধরে চলল। 11 কনান দেশের লোকরা গোরেন আটদের সেই অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া দেখে বললেন, “মিশরীয়দের এ দারুণ বিষাদময় শোকের অনুষ্ঠান!” সেইজন্য যর্দ্দন নদীর পারের সেই জায়গার নাম হল আবেল্-মিস্রয়ীম। 12 সুতরাং যাকোবের পুত্ররা তাঁদের পিতার কথানুসারে কাজ করলেন। 13 তাঁরা তাঁর দেহ কনান দেশে বহন করে এনে মক্পেলার গুহাতে কবর দিলেন। অব্রাহাম হেতীয় ইক্রোণের কাছ থেকে মম্রির কাছে যে ক্ষেত কিনেছিলেন এই কবর সেখানেই ছিল। অব্রাহাম কবর দেবার জন্যই এটা কিনেছিলেন। 14 যোষেফ তাঁর পিতাকে কবর দেবার পর তাঁর দলের সবাই মিশরে ফিরে গেলেন।
ভাইরা তবুও যোষেফকে ভয় করে চলল
15 যাকোব মারা গেলে যোষেফের ভাইরা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হল। তারা এই ভেবে ভীত হল যে বহু বছর আগে তারা যোষেফের প্রতি যা করেছিল, যোষেফ হয়তো তার প্রতিফল দেবেন। তারা বলল, “হয়তো যোষেফ এখনও আমরা যা করেছিলাম তার জন্য আমাদের ঘৃণা করেন।” 16 এইজন্য ভাইরা যোষেফকে এই বলে পাঠাল:
“পিতা মারা যাবার আগে আপনাকে এই বার্তা দিতে বলেছিলেন। 17 তিনি বললেন, ‘যোষেফকে আমার এই অনুরোধ, সে যেন দয়া করে তার ভাইদের অন্যায় কাজ ক্ষমা করে দেয়।’ সেই জন্য আমরা এখন আমাদের আপনার প্রতি করা সেই অন্যায় কাজের ক্ষমা চাই। আমরা সেই ঈশ্বরের দাস যিনি আপনার পিতারও ঈশ্বর।”
এই খবরে যোষেফ খুব দুঃখ পেলেন এবং কাঁদলেন। 18 তাঁর ভাইরা তাঁর সামনে গিয়ে প্রণাম করলেন এবং বললেন, “আমরা আপনার দাস হব।”
19 তখন যোষেফ তাদের বললেন, “ভয় করো না, আমি ঈশ্বর নই! শাস্তি দেবার অধিকার আমার নেই। 20 এটা সত্যি যে তোমরা আমার অনিষ্ট করার পরিকল্পনা করেছিলে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরই আমার জন্য ভাল কিছু পরিকল্পনা করছিলেন। আমার মাধ্যমে ঈশ্বরের অনেকের প্রাণ বাঁচানোর পরিকল্পনা ছিল। 21 আর ঘটলও তা-ই। তাই ভয় পেও না। আমি তোমাদের এবং তোমাদের সন্তানদের সহায় হব।” এইভাবে যোষেফ ভাইদের ভালো ভালো কথা বললে তারা ভালো বোধ করল।
22 যোষেফ তাঁর পিতার পরিবারের সঙ্গে মিশরে রইলেন। যোষেফ 110 বছর বয়সে মারা গেলেন। 23 যোষেফের জীবনকালেই যোষেফ এও দেখলেন যে তাঁর পুত্র মনঃশির মাখীর নামে একটি পুত্র হল। যোষেফের জীবনকালেই মাখীরের পুত্ররা জন্মাল এবং যোষেফ তাও দেখে যেতে পারলেন।
যোষেফের মৃত্যু
24 অন্তিম শয্যায় যোষেফ তাঁর ভাইদের বললেন, “আমার মৃত্যুর সময় নিকট, কিন্তু আমি জানি ঈশ্বর তোমাদের যত্ন নেবেন এবং এই দেশ থেকে বাইরে নিয়ে যাবেন সেই দেশে, যে দেশ তিনি অব্রাহাম ইস্হাক ও যাকোবকে দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।”
25 তারপর যোষেফ তাঁর লোকদের একটি শপথ নিতে বললেন যে ঈশ্বর তাদের যখন নতুন দেশে নিয়ে যাবেন, তখন তারা যেন তাঁর অস্থি বহন করে নিয়ে যায়।
26 যোষেফ 110 বছর বয়সে মিশরে মারা যান। চিকিৎসকরা তাঁর দেহে ঔষধ দিয়ে মিশরে এক কফিনের মধ্যে রাখলেন।
যোহনের প্রচার
(মথি 3:1-12; মার্ক 1:1-8; যোহন 1:19-28)
3 তিবিরিয় কৈসরের রাজত্বের পনের বছরের মাথায়
যিহূদিয়ার রাজ্যপাল ছিলেন পন্তীয় পীলাত।
সেই সময় হেরোদ ছিলেন গালীলের শাসনকর্তা
এবং তাঁর ভাই ফিলিপ ছিলেন যিতুরিয়া ও ত্রাখোনীতিয়ার শাসনকর্তা,
লুষাণিয় ছিলেন অবিলীনীর শাসনকর্তা।
2 হানন ও কায়াফা ছিলেন ইহুদীদের মহাযাজক। সেই সময় প্রান্তরের মধ্যে সখরিয়র পুত্র যোহনের কাছে ঈশ্বরের আদেশ এল। 3 আর তিনি যর্দনের চারপাশে সমস্ত জায়গায় গিয়ে প্রচার করতে লাগলেন যেন লোকে পাপের ক্ষমা লাভের জন্য মন ফেরায় ও বাপ্তিস্ম নেয়। 4 ভাববাদী যিশাইয়র পুস্তকে যেমন লেখা আছে:
“প্রান্তরের মধ্যে একজনের কন্ঠস্বর ডেকে ডেকে বলছে,
‘প্রভুর জন্য পথ প্রস্তুত কর।
তাঁর জন্য চলার পথ সোজা কর।
5 সমস্ত উপত্যকা ভরাট কর,
প্রতিটি পর্বত ও উপপর্বত সমান করতে হবে।
আঁকা-বাঁকা পথ সোজা করতে হবে
এবং এবড়ো-খেবড়ো পথ সমান করতে হবে।
6 তাতে সকল লোকে ঈশ্বরের পরিত্রাণ দেখতে পাবে।’”(A)
7 তখন বাপ্তিস্ম নেবার জন্য অনেক লোক যোহনের কাছে আসতে লাগল। তিনি তাদের বললেন, “হে সাপের বংশধরেরা! ঈশ্বরের কাছ থেকে যে ক্রোধ নেমে আসছে তা থেকে বাঁচার জন্য কে তোমাদের সতর্ক করে দিল? 8 তোমরা যে মন ফিরিয়েছ তার ফল দেখাও। একথা বলতে শুরু করো না, যে ‘আরে অব্রাহাম তো আমাদের পিতৃপুরুষ’ কারণ আমি তোমাদের বলছি এই পাথরগুলো থেকে ঈশ্বর অব্রাহামের জন্য সন্তান উৎপন্ন করতে পারেন। 9 গাছের গোড়াতে কুড়ুল লাগানোই আছে, যে গাছ ভাল ফল দিচ্ছে না তা কেটে আগুনে ফেলে দেওয়া হবে।”
10 তখন লোকরা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “তাহলে আমাদের কি করতে হবে?”
11 এর উত্তরে তিনি তাদের বললেন, “যদি কারো দুটো জামা থাকে, তবে যার নেই তাকে যেন তার থেকে একটি জামা দেয়; আর যার খাবার আছে, সেও অন্যের সঙ্গে সেইরকম যেন ভাগ করে নেয়।”
12 কয়েকজন কর আদায়কারীও বাপ্তাইজ[a] হবার জন্য এল। তারা তাঁকে বলল, “গুরু, আমরা কি করব?”
13 তখন তিনি তাদের বললেন, “যতটা কর আদায় করার কথা তার চেয়ে বেশী আদায় কোরো না।”
14 কয়েকজন সৈনিকও তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “আমাদের কি হবে? আমরা কি করব?”
তিনি তাদের বললেন, “কারো কাছ থেকে জোর করে কোন অর্থ নিও না। কারো প্রতি মিথ্যা দোষারোপ করো না। তোমাদের যা বেতন তাতেই সন্তুষ্ট থেকো।”
15 লোকরা মনে মনে আশা করেছিল, “যোহনই হয়তো তাদের সেই প্রত্যাশিত খ্রীষ্ট।”
16 তাদের এই রকম চিন্তার জবাবে যোহন বললেন, “আমি তোমাদের জলে বাপ্তাইজ করি, কিন্তু আমার থেকে আরো শক্তিশালী একজন আসছেন, আমি তাঁর জুতোর ফিতে খোলবার যোগ্য নই। তিনিই তোমাদের পবিত্র আত্মায় ও আগুনে বাপ্তাইজ করবেন। 17 কুলোর বাতাস দিয়ে খামার পরিষ্কার করার জন্য কুলো তাঁর হাতেই আছে, তা দিয়ে তিনি সব শস্য জড়ো করে তাঁর গোলায় তুলবেন আর অনির্বাণ আগুনে তূষ পুড়িয়ে দেবেন।” 18 আরো বিভিন্ন উপদেশের মাধ্যমে লোকদের উৎসাহিত করে যোহন তাদের কাছে সুসমাচার প্রচার করতেন।
যোহনের কর্মের সমাপ্তি
19 শাসনকর্তা হেরোদ তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী হেরোদিযাকে বিয়ে করেছিলেন, এরজন্য এবং এছাড়াও তাঁর আরো অনেক অন্যায় কাজের জন্য যোহন হেরোদকে তিরস্কার করলেন। 20 তাতে হেরোদ যোহনকে বন্দী করে কারাগারে পাঠালেন আর এইভাবে তিনি তাঁর অন্য সব দুষ্কর্মের সঙ্গে এইটিও যোগ করলেন।
যীশু যোহনের কাছে বাপ্তিস্ম নিলেন
(মথি 3:13-17; মার্ক 1:9-11)
21 লোকেরা যখন বাপ্তিস্ম নিচ্ছিল সেই সময় একদিন যীশুও বাপ্তিস্ম নিলেন। বাপ্তিস্মের পর যীশু যখন প্রার্থনা করছিলেন, তখন স্বর্গ খুলে গেল, 22 আর স্বর্গ থেকে পবিত্র আত্মা কপোতের মতো তাঁর ওপর নেমে এলেন। তখন স্বর্গ থেকে এই রব শোনা গেল, “তুমি আমার প্রিয় পুত্র, তোমার ওপর আমি খুবই সন্তুষ্ট।”
যোষেফের বংশ পরিচয়
(মথি 1:1-17)
23 প্রায় ত্রিশ বছর বয়সে যীশু তাঁর কাজ শুরু করেন। লোকেরা মনে করত তিনি যোষেফেরই ছেলে।
যোষেফ হলেন এলির ছেলে।
24 এলি মত্ততের ছেলে।
মত্তত্ লেবির ছেলে।
লেবি মল্কির ছেলে।
মল্কি যান্নায়ের ছেলে।
যান্না যোষেফের ছেলে।
25 যোষেফ মত্তথিয়ের ছেলে।
মত্তথিয় আমোসের ছেলে।
আমোস নহূমের ছেলে।
নহূম ইষ্লির ছেলে।
ইষ্লি নগির ছেলে।
26 নগি মাটের ছেলে।
মাট মত্তথিয়ের ছেলে।
মত্তথিয় শিমিয়ির ছেলে।
শিমিয়ি যোষেখের ছেলে।
যোষেখ যূদার ছেলে।
27 যূদা য়োহানার ছেলে।
যোহানা রীষার ছেলে।
রীষা সরুব্বাবিলের ছেলে।
সরুব্বাবিল শল্টীয়েলের ছেলে।
শল্টীয়েল নেরির ছেলে।
28 নেরি মল্কির ছেলে।
মল্কি অদ্দীর ছেলে।
অদ্দী কোষমের ছেলে।
কোষম ইল্মাদমের ছেলে।
ইল্মাদম এরের ছেলে।
29 এর যিহোশূর ছেলে।
যিহোশূ ইলীয়েষরের ছেলে।
ইলীয়েষর যোরীমের ছেলে।
যোরীম মত্ততের ছেলে।
মত্তত লেবির ছেলে।
30 লেবি শিমিয়োনের ছেলে।
শিমিয়োন যূদার ছেলে।
যূদা যোষেফের ছেলে।
যোষেফ যোনমের ছেলে।
যোনম ইলিয়াকীমের ছেলে।
31 ইলিয়াকীম মিলেয়ার ছেলে।
মিলেয়া মিন্নার ছেলে।
মিন্না মত্তথের ছেলে।
মত্তথ নাথনের ছেলে।
নাথন দায়ূদের ছেলে।
32 দায়ূদ যিশয়ের ছেলে।
যিশয় ওবেদের ছেলে।
ওবেদ বোয়সের ছেলে।
বোয়স সলমোনের ছেলে।
সলমোন নহশোনের ছেলে।
33 নহশোন অম্মীনাদবের ছেলে।
অম্মীনাদব অদমানের ছেলে।
অদমান অর্ণির ছেলে।
অর্ণি হিষ্রোণের ছেলে।
হিষ্রোণ পেরসের ছেলে।
পেরস যিহূদার ছেলে।
34 যিহূদা যাকোবের ছেলে।
যাকোব ইস্হাকের ছেলে।
ইস্হাক অব্রাহামের ছেলে।
অব্রাহাম তেরূহের ছেলে।
তেরূহ নাহোরের ছেলে।
35 নাহোর সরূগের ছেলে।
সরূগ রিয়ুর ছেলে।
রিয়ু পেলগের ছেলে।
পেলগ এবরের ছেলে।
এবর শেলহের ছেলে।
36 শেলহ কৈননের ছেলে।
কৈনন অর্ফক্ষদের ছেলে।
অর্ফক্ষদ শেমের ছেলে।
শেম নোহের ছেলে।
নোহ লেমকের ছেলে।
37 লেমক মথূশেলহের ছেলে।
মথূশেলহ হনোকের ছেলে।
হনোক যেরদের ছেলে।
যেরদ মহললেলের ছেলে।
মহললেল কৈননের ছেলে।
38 কৈনন ইনোশের ছেলে।
ইনোশ শেথের ছেলে।
শেথ আদমের ছেলে।
আদম ঈশ্বরের ছেলে।
ইলীফসকে ইয়োবের উত্তর
16 তখন ইয়োব উত্তর দিলেন,
2 “আমি এইসব কথা আগেই শুনেছি।
তোমরা তিন জন আমাকে কষ্টই দিলে, স্বস্তি নয়।
3 তোমাদের দীর্ঘ ভাষণ আর শেষ হয় না!
কিসে তোমাদের এত বিচলিত করেছে যে তোমরা কথা বলেই চলেছ?
4 যদি তোমরা আমার সমস্যায় পড়তে,
তোমরা যে কথাগুলি আমায় বললে, আমিও তোমাদের সেই কথাগুলি বলতে পারতাম।
আমিও তোমাদের প্রতি জ্ঞানগর্ভ কথা বলতে পারতাম
এবং তোমাদের প্রতি মাথা নাড়াতে পারতাম।
5 কিন্তু আমি তোমাদের উৎসাহ দিতাম এবং যে কথাগুলো বলছি, সেগুলো বলে তোমাদের আমি আশা দিতাম।
6 “কথা বললেও আমার যন্ত্রণা চলে যায় না,
নীরব থাকলেও আমার ব্যথা আমাকে ছেড়ে যায় না।
7 কিন্তু, হে ঈশ্বর, আপনি আমার শক্তি কেড়ে নিয়েছেন।
আপনি আমার সারা পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
8 আপনি আমায় শীর্ণ ও দুর্বল করে দিয়েছেন,
এর অর্থ, লোকে মনে করে যে আমি অপরাধী।
9 “ক্রোধে ঈশ্বর আমাকে আক্রমণ করেছেন
এবং আমার দেহকে ছিন্ন-ভিন্ন করেছেন।
ঈশ্বর আমার বিরুদ্ধে তাঁর দাঁত ঘর্ষন করেছেন।
আমার শত্রু ঘৃণাভরে আমার দিকে তাকায়।
10 আমার চার দিকে লোক জন জড়ো হয়েছে।
তারা আমাকে নিয়ে মজা করে এবং আমার গালে চড় মারে।
11 ঈশ্বর আমাকে মন্দ লোকদের হাতে তুলে দিয়েছেন।
তিনি দুষ্ট লোকের হাতে আমাকে তুলে দিয়েছেন।
12 আমার সব কিছুই সুন্দর ছিলো
কিন্তু ঈশ্বর আমায় ধ্বংস করেছেন!
হ্যাঁ, তিনিই আমার ঘাড় ধরে
আমায় খণ্ড-বিখণ্ড করেছেন।
ঈশ্বর আমাকে লক্ষ্যভেদের বস্তুতে পরিণত করেছেন।
13 ঈশ্বরের তীরন্দাজ সৈন্যরা আমার চারদিকে ঘুরছে।
তিনি আমার বৃক্কে তীর ছুঁড়ছেন।
তিনি আমাকে কোন দয়া দেখান না।
তিনি আমার পিত্তকে মাটিতে ফেলে দেন।
14 বার বার ঈশ্বর আমায় আক্রমণ করেন।
যুদ্ধের সৈন্যরা যেমন তেড়ে আসে তেমন করে তিনি আমার দিকে ছুটে আসেন।
15 “আমি নিদারুণ ভাবে দুঃখী,
তাই আমি এই দুঃখের বস্ত্র পরেছি।
আমি এই ধূলো ও ছাইয়ের ওপর বসে অনুভব করি
যে আমি পরাজিত।
16 কেঁদে কেঁদে আমার মুখ লাল হয়ে গেছে।
আমার চোখে ঘন অন্ধকার নেমে এসেছে।
17 আমি কারো প্রতিই নৃশংস ছিলাম না।
কিন্তু এই মন্দ ঘটনাগুলি আমার ক্ষেত্রে ঘটেছে। আমার প্রার্থনা যথাযথ ও পবিত্র।
18 “আমার প্রতি যে অন্যায় ঘটেছে, হে পৃথিবী, তুমি তা গোপন করো না।
ন্যায়ের জন্য আমার আর্তিকে স্তব্ধ হতে দিও না।
19 এখনও পর্যন্ত স্বর্গে কেউ আছে যে আমার পক্ষে কথা বলবে।
এখনও পর্যন্ত ওপরে কেউ আছে যে আমার পক্ষে সাক্ষী দেবে।
20 আমার চোখ যখন ঈশ্বরের জন্য অশ্রু বিসর্জন করে,
আমার বন্ধুরা আমার হয়ে কথা বলে।
21 একজন যে ভাবে বন্ধুর জন্য তর্ক করে,
সেইভাবেই সে আমার জন্য ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলে।
22 “আর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই আমি সেখানে যাবো যেখান থেকে ফেরা যায় না।
17 “আমার হৃদয় ভগ্ন হয়েছে,
আমি প্রাণ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত।
আমার জীবন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।
কবর আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
2 লোকে আমার চারপাশে দাঁড়িয়ে আমার প্রতি বিদ্রূপের হাসি হাসছে।
আমি দেখছি ওরা যেন আমায় টিটকিরি করছে ও অপমান করছে।
3 “ঈশ্বর, আমাকে মুক্ত করার মূল্য দিন।
আর কেউ আমায় সাহায্য করতে পারবে না।
4 আপনি আমার বন্ধুদের বোধশক্তি হরণ করেছেন
তাই তারা কিছুই বুঝতে পারছে না।
ওদের জয়ী হতে দেবেন না।
5 আপনি জানেন লোকে কি বলছে,
‘বন্ধুকে সাহায্য করার জন্য একজন লোক তার নিজের সন্তানদের উপেক্ষা করছে।’
কিন্তু আমার বন্ধু আমার বিরুদ্ধে গেছে।
6 আমার নামকে ঈশ্বর প্রত্যেকের কাছে একটা মন্দ শব্দে পরিণত করেছেন।
লোকে আমার মুখের ওপর থুতু দেয়।
7 আমার চোখ প্রায় অন্ধ হয়ে গেছে কারণ আমি প্রচণ্ড দুঃখ ও যন্ত্রণার মধ্যে আছি।
আমার সারা দেহ প্রচণ্ড শীর্ণ হয়ে ছায়ার মতো হয়ে গেছে।
8 এর ফলে ভালো লোকরা যথার্থই বিহবল হয়ে পড়েছে।
যারা ঈশ্বরকে মানে না তাদের বিরুদ্ধে, নির্দোষ লোকদের উত্তেজিত করা হচ্ছে।
9 কিন্তু ভাল লোকরা ভাল জীবনযাপন করবে।
নিস্পাপ লোকরা আরও শক্তিশালী হবে।
10 “কিন্তু এগিয়ে এসো, তোমরা সবাই এসো এবং আমাকে বুঝিয়ে দাও যে সবই আমার দোষ।
তোমাদের কেউই জ্ঞানী নও।
11 আমার জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আমার পরিকল্পনা ধ্বংস হয়ে গেছে; আমার আশা চলে গেছে।
12 কিন্তু আমার বন্ধুরা সব গুলিয়ে ফেলেছে।
তারা ভাবে রাতটাই দিন। তারা ভাবে অন্ধকারই আলোকে দূর করে।
13 “কবরকেই আমি আমার নতুন ঘর বলে হয়তো আশা করতে পারি।
হয়তো অন্ধকার কবরে আমি আমার শয্যা পাতার আশা করব।
14 আমি কবরকে বলতে পারি, ‘তুমিই আমার পিতা,’
এবং কৃমিকীটদের বলতে পারি, ‘আমার মা’ ও ‘আমার বোন।’
15 কিন্তু তা যদি আমার একমাত্র আশা হয় তাহলে আমার আর কোন আশাই নেই।
তাই যদি আমার একমাত্র আশা হয় তাহলে লোকে আমার জন্য আর কোন আশাই দেখবে না।
16 আমার আশাও কি কবরে যাবে?
আমরা কি এক সঙ্গে ধূলায় মিশে যাবো?”
খ্রীষ্টের প্রেরিতগণ
4 লোকদের কাছে আমাদের পরিচয় এই হোক্ যে, আমরা খ্রীষ্টের সেবক এবং আমরা ঈশ্বরের নিগূঢ়তত্ত্বরূপ সম্পদের ভারপ্রাপ্ত মানুষ। 2 যারা এই সম্পদের ভারপ্রাপ্ত মানুষ তারা এই কাজে বিশ্বস্ত কিনা তা দেখতে হবে। 3 তোমরা বা কোন মানুষের বিচার সভা আমার বিচার করুক তাতে আমার কিছু যায় আসে না, এমন কি আমি আমার নিজেরও বিচার করি না। 4 আমার বিবেক পরিষ্কার, তবুও এতে আমি নির্দোষ প্রতিপন্ন হই না। প্রভুই আমার বিচার করেন। 5 তাই যথার্থ সময়ের আগে অর্থাৎ প্রভু আসার আগে, তোমরা কোন কিছুর বিচার করো না। আজ যা কিছু অন্ধকারে লুকানো আছে তিনি তা আলোতে প্রকাশ করবেন; আর তিনি মানুষের মনের গুপ্ত বিষয় জানিয়ে দেবেন।
6 ভাই ও বোনেরা, তোমরা যেন বুঝতে পার তাই আপল্লো ও আমার উদাহরণ দিয়ে এইসব কথা বললাম, “যেন তোমরা শেখ যে শাস্ত্রে যা লেখা আছে তার বাইরে যেতে নেই।” তাহলে তোমরা একজনের বিরুদ্ধে অন্য জনকে নিয়ে গর্ব করবে না। 7 তুমি যে অন্যদের থেকে ভাল তা কে বলেছে? আর তুমি যা ঈশ্বরের কাছ থেকে দান হিসাবে পাও নি, এমনই বা কি তোমার আছে? আর যখন তুমি সব কিছু দান হিসেবে পেয়েছ, তখন দান হিসেবে পাও নি, কেন এমন গর্ব করছ?
8 তোমরা মনে করছ, তোমাদের যা কিছু প্রয়োজন তোমরা এখনই সে সব পেয়ে গিয়েছ। তোমরা মনে কর তোমরা এখন ধনী হয়ে গিয়েছ; আর আমাদের ছাড়াই তোমরা রাজা হয়ে গিয়েছ। অবশ্য সত্যি সত্যিই তোমরা রাজা হয়ে গেলে ভালোই হত! তাহলে আমরাও তোমাদের সঙ্গে রাজা হতে পারতাম। 9 হত্যা করা হবে বলে যাদের মিছিলের শেষে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়, আমার মনে হয় ঈশ্বর আমাদের অর্থাৎ প্রেরিতদের ঠিক তেমনি সকলের শেষে রেখেছেন। আমরা সারা জগতের কাছে অর্থাৎ স্বর্গদূতদের ও মানুষের কাছে যেন দেখার সামগ্রী হয়েছি। 10 আমরা খ্রীষ্টের জন্য মূর্খ হয়েছি, আর তোমরা খ্রীষ্টেতে বুদ্ধিমান হয়েছ। আমরা দুর্বল, কিন্তু তোমরা বলবান। তোমরা সম্মান লাভ করেছ, কিন্তু আমরা অসম্মানিত। 11 এই মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কষ্ট পাচ্ছি। আমাদের পরণে জীর্ণ বস্ত্র, আমাদের চপেটাঘাত করা হচ্ছে, আমাদের বাসস্থান বলতে কোন কিছু নেই। 12 জীবিকার জন্য আমরা নিজের হাতে কঠিন পরিশ্রম করছি। লোকে আমাদের নিন্দা করলে আমরা তাদের আশীর্বাদ করি, যখন নির্যাতন করে তখন আমরা তা সহ্য করি। 13 কেউ অপবাদ দিলে তার সঙ্গে ভাল কথা বলি। আজ পর্যন্ত আমরা যেন জগতের আবর্জনা ও দুনিয়ার জঞ্জাল হয়ে রয়েছি।
14 তোমাদের লজ্জা দেবার জন্য আমি এসব কথা লিখছি না বরং আমার প্রিয় সন্তান হিসাবে সাবধান করার জন্যই লিখছি। 15 কারণ তোমাদের খ্রীষ্টে দশ হাজার গুরু থাকতে পারে, কিন্তু তোমাদের পিতা অনেক নেই। আমি খ্রীষ্ট যীশুতে সুসমাচার প্রচারের মাধ্যমে তোমাদের আত্মিক পিতা হয়েছি। 16 তাই আমি তোমাদের মিনতি করছি, তোমরা আমার অনুগামী হও। 17 এই জন্যই আমি প্রভুতে আমার প্রিয় ও বিশ্বস্ত সন্তান হিসাবে তীমথিয়কে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছি। খ্রীষ্ট যীশুতে আমি যে সব পথে চলি তা সে তোমাদের মনে করিয়ে দেবে। প্রত্যেক জায়গায় প্রত্যেক মণ্ডলীতে আমি সেই পথের বিষয় শিক্ষা দিয়েছি।
18 তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এই মনে করে খুব গর্ব করে বেড়াচ্ছে যে আমি তোমাদের কাছে আসছি না। 19 যাই হোক্ যদি প্রভুর ইচ্ছা হয় তবে খুব শীঘ্রই আমি তোমাদের কাছে আসব এবং এই দাম্ভিক লোকদের কথা শুনতে নয়, তাদের ক্ষমতা কি তা জানব। 20 কারণ ঈশ্বরের রাজ্য কেবল কথার ব্যাপার নয়, তা পরাক্রমেরও। 21 তোমরা কি চাও? তোমরা কি চাও যে শাস্তি দিতে আমি তোমাদের কাছে বেত নিয়ে আসি, অথবা ভালবাসা ও শান্ত মনোভাবে আসি?
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International