Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
আদি 27

ইস‌্হাকের সঙ্গে যাকোবের চালাকি

27 ইস‌্হাক ক্রমশঃ বৃদ্ধ হলেন, ক্ষীণ হল তাঁর দৃষ্টিশক্তি—আর কিছু ভাল দেখতে পান না। একদিন তিনি বড় পুত্রকে ডাকলেন, “এষৌ!”

এষৌ উত্তর দিল, “আমি এখানে।”

ইস‌্হাক বললেন, “আমি বৃদ্ধ হয়েছি। শীঘ্রই মারাও যেতে পারি। তাই তোমার তীরধনুক নিয়ে শিকারে যাও। আমার খাওয়ার জন্যে একটা কিছু শিকার করে আনো। আমি ভালবাসি এমন কোনও খাবার তৈরী কর। আমায় খাবার এনে দাও, আমি খাই। মৃত্যুর আগে তোমায় আশীর্বাদ করে যাই।” তখন এষৌ শিকার করতে বেরিয়ে গেল।

এসব কথা ইস‌্হাক যখন এষৌকে বলছিলেন তখন রিবিকা সব শুনছিলেন। রিবিকা তাঁর প্রিয় পুত্র যাকোবকে বললেন, “শোন, তোমার পিতা তোমার ভাই এষৌকে কি বলছিলেন সব শুনেছি। তোমার পিতা বললেন, ‘আমার খাওয়ার জন্যে একটা জানোয়ার শিকার করে আনো। আমায় রেঁধে দাও, আমি খাই। তাহলে আমি মৃত্যুর আগে তোমায় আশীর্বাদ করব।’ এখন শোন বাবা, আমি যা বলি তা করো। আমাদের ছাগলের খোঁয়াড়ে যাও, দুটো ছাগল ছানা নিয়ে এস। তোমার পিতা যেমন মাংস খেতে ভালবাসে তেমন করে আমি রেঁধে দেব। 10 তারপর সেই খাবার নিয়ে পিতার কাছে যাবে। মৃত্যুর আগে তিনি তোমায় আশীর্বাদ করবেন।”

11 কিন্তু যাকোব মা রিবিকাকে বলল, “আমার ভায়ের গা ভর্ত্তি লোম। কিন্তু আমার শরীরের ত্বক মসৃণ। 12 পিতা আমায় ছুঁলেই টের পাবেন যে আমি এষৌ নই। তাহলে পিতা আমায় আশীর্বাদ দেবেন না। বরং অভিশাপ দেবেন। কেন? কেননা আমি তাঁর সঙ্গে চালাকি করতে গিয়েছিলাম।”

13 সুতরাং রিবিকা তাকে বললেন, “যদি তিনি অভিশাপ দেন তবে তা আমার ওপর আসুক। আমি যেমন বলছি তেমনটি করো। যাও, আমার জন্য ছাগল নিয়ে এস।”

14 তখন যাকোব দুটো ছাগল নিয়ে এসে তার মাকে সেগুলি দিল। তার মা ঠিক যেভাবে ইস‌্হাক খেতে ভালবাসেন সেই বিশেষ ভাবে ছাগল দুটো রান্না করলেন। 15 তারপর রিবিকা বড় পুত্র এষৌর প্রিয় জামাকাপড় নিলেন। সেই জামাকাপড় পরিয়ে দিলেন ছোট পুত্র যাকোবকে। 16 আর যাকোবের হাতে ও গলায় লাগিয়ে দিলেন ছাগলের চামড়া। 17 তারপর রিবিকা সেই রান্না করা মাংস নিয়ে এসে যাকোবকে দিলেন।

18 যাকোব পিতার কাছে গিয়ে ডাকল, “পিতা।”

তার পিতা সাড়া দিলেন, “তুমি কে বাবা?”

19 যাকোব বলল, “আমি তোমার বড় পুত্র এষৌ। তুমি যেমন বলেছিলে আমি সব তেমনভাবে করে এনেছি। এখন উঠে বসো, তোমার জন্যে যা শিকার করেছি, খাও আগে। আমায় পরে আশীর্বাদ কোরো।”

20 কিন্তু ইস‌্হাক তাঁর পুত্রকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি করে এত তাড়াতাড়ি জানোয়ার শিকার করলে?”

যাকোব উত্তর দিল, “কারণ প্রভু, তোমার ঈশ্বর আমাকে জানোয়ারগুলি তাড়াতাড়ি খুঁজে পেতে সাহায্য করেছেন।”

21 তখন ইস‌্হাক যাকোবকে বললেন, “কাছে এস বাবা, আমি তোমায় ছুঁয়ে দেখি, তুমি সত্যিই আমার পুত্র এষৌ কিনা।”

22 সুতরাং যাকোব তার পিতা ইস‌্হাকের কাছে গেল। ইস‌্হাক তার গায়ে হাত বুলিয়ে বললেন, “তোমার গলার স্বর যাকোবের মত শোনাচ্ছে, কিন্তু তোমার হাত এষৌর মত লোমশ।” 23 ইস‌্হাক বুঝতে পারলেন না যে এ আসলে যাকোব। কারণ তার হাত এষৌর হাতের মতোই লোমশ। সুতরাং ইস‌্হাক যাকোবকে আশীর্বাদ করলেন।

24 ইস‌্হাক নিঃসন্দেহ হবার জন্যে আবার জিজ্ঞেস করল, “তুমি সত্যিই আমার পুত্র এষৌ তো?”

যাকোব উত্তর দিল, “হ্যাঁ, পিতা, আমিই এষৌ।”

যাকোবকে আশীর্বাদ

25 তখন ইস‌্হাক বললেন, “আমাকে আমার পুত্রের শিকার করা পশুগুলির থেকে খাবার এনে দাও। আমি সেটা খেয়ে তোমায় আশীর্বাদ করবো।” তখন যাকোব খাবারটা দিল এবং ইস‌্হাক তা খেলেন। তারপর যাকোব কিছু দ্রাক্ষারস দিলে ইস‌্হাক তা পান করলেন।

26 তারপর ইস‌্হাক তাকে বললেন, “কাছে এস, আমায় চুমু দাও।” 27 সুতরাং যাকোব তার পিতার কাছে গিয়ে তাঁকে চুম্বন করল। তখন ইস‌্হাক যাকোবের জামা কাপড়ে এষৌর জামা কাপড়ের গন্ধ পেলেন এবং তাকে আশীর্বাদ করলেন। ইস‌্হাক বললেন,

“যে প্রান্তর প্রভুর আশীর্বাদ ধন্য, আমার সন্তান সেই প্রান্তরের গন্ধ বহে।
28 তোমাকে প্রভু প্রচুর বৃষ্টি দিন যাতে প্রচুর ফসল আর দ্রাক্ষারস হয়।
29 বহু জাতি তোমায় সেবা করবে
    এবং তোমার প্রতি নত থাকবে।
ভাই জ্ঞাতিদের ওপরে তোমার প্রভুত্ব বহাল হবে।
    তোমার মাতার পুত্রগণ তোমার অধীন হবে এবং তারা তোমার আদেশে চলবে।
তোমাকে যারা শাপ দেবে তারা হবে অভিশপ্ত,
যারা তোমাকে আশীর্বাদ করবে তারা আশীর্বাদ পাবে।”

এষৌর জন্য “আশীর্বাদ”

30 ইস‌্হাক যাকোবকে আশীর্বাদ করা শেষ করলেন। তারপর যেই যাকোব পিতার কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়ে চলে গেল অমনি এষৌ ফিরে এল শিকার থেকে। 31 পিতা ঠিক যেমন খেতে ভালবাসে ঠিক সেভাবে এষৌ মাংস রাঁধল। তারপর খাবারটা নিয়ে এল পিতার কাছে। পিতাকে সে বলল, “পিতা, আমি তোমার পুত্র। ওঠো, তোমার জন্য শিকার করে আমি মাংস রেঁধে নিয়ে এসেছি, খাও, তারপরে আমায় আশীর্বাদ করো।”

32 কিন্তু ইস‌্হাক জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কে?”

সে উত্তর দিল, “আমি তোমার পুত্র—তোমার বড় পুত্র এষৌ।”

33 তখন ইস‌্হাক মহা উদ্বিগ্ন হলেন। জিজ্ঞেস করলেন, “তাহলে তুমি আসার আগে কে মাংস রান্না করে এনে দিল আমায়? আমি সমস্ত মাংস খেয়ে তাকে আশীর্বাদ করলাম। এখন সেই আশীর্বাদ ফিরিয়ে নেওয়ার পক্ষেও ঢের দেরী হয়ে গেছে।”

34 এষৌ তার পিতার কথা শুনল। সে খুব ক্রুদ্ধ ও বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠল। সে চিৎকার করে কেঁদে উঠল। পিতাকে বলল, “তাহলে আমাকেও আশীর্বাদ করো, পিতা!”

35 ইস‌্হাক বললেন, “তোমার ভাই আমার সঙ্গে চালাকি করেছে! সে এসে তোমার আশীর্বাদ নিয়ে গেছে!”

36 এষৌ বলল, “তার নাম যাকোব। ওর জন্যে ঐ নামই ঠিক। আমার সঙ্গে ভাই দুবার চালাকি করল। প্রথমবার কৌশলে সে প্রথম সন্তান হিসেবে আমার যা অধিকার ছিল তার থেকে বঞ্চিত করেছে এবং এবার আমার প্রাপ্য আশীর্বাদ থেকে আমাকে বঞ্চিত করল।” তারপর এষৌ জিজ্ঞেস করল, “আমার জন্য কি তোমার আর কোন আশীর্বাদ অবশিষ্ট নেই?”

37 ইস‌্হাক উত্তর দিলেন, “না, তার জন্য বড় দেরী হয়ে গেছে। আমি তোমায় শাসন করার অধিকারও যাকোবকে দিয়ে ফেলেছি। আমার আশীর্বাদে সে পাবে তার সমস্ত ভাইদের সেবা। আর আমি তাকে প্রচুর শস্য আর দ্রাক্ষারসের জন্য আশীর্বাদ দিয়েছি। তোমায় আশীর্বাদ করার জন্য আর কিছু বাকি নেই।”

38 কিন্তু এষৌ আশীর্বাদের জন্যে পিতাকে পীড়াপীড়ি করে বলল, “পিতা তোমার কাছে কি শুধুমাত্র একটিই আশীর্বাদ আছে?” এষৌ কাঁদতে শুরু করল।

39 তখন ইস‌্হাক বললেন,

“তুমি কখনও উর্বর জমি পাবে না,
    তুমি কখনও পর্যাপ্ত বর্ষা পাবে না।
40 তোমাকে লড়তে হবে জীবনের জন্য
    এবং ভ্রাতার ভৃত্য হবে তুমি।
কিন্তু লড়ে তুমি হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন।
    মুক্তি পাবে তোমার ভ্রাতার শাসন থেকে।”

যাকোব দেশ ত্যাগ করল

41 তারপর এই আশীর্বাদের জন্য এষৌ যাকোবকে ঘৃণা করতে শুরু করল। মনে মনে এষৌ ভাবল, “আমার পিতা শীঘ্রই মারা যাবেন। তার জন্য শোক করার সময় শেষ হবার পরে আমি যাকোবকে হত্যা করব।”

42 রিবিকা জানলেন যে এষৌ যাকোবকে হত্যা করার কথা ভাবছে। তিনি যাকোবকে ডেকে পাঠালেন। যাকোবকে তিনি বললেন, “শোন, তোমার ভাই এষৌ তোমায় হত্যা করার কথা ভাবছে। 43 তাই আমি যা বলি তা-ই করো। আমার ভাই লাবন বাস করে হারণে। তার কাছে গিয়ে তুমি লুকিয়ে থাকো। 44 তার কাছে তুমি কিছুদিন থাকো যতদিন না তোমার ভাইয়ের রাগ পড়ে। 45 কিছুদিন পরে তোমার ভাই, তুমি তার প্রতি কি করেছ না করেছ সব ভুলে যাবে। তখন আমি তোমায় ফিরিয়ে আনার জন্যে একটি ভৃত্য পাঠাব। আমি একই দিনে আমার দু পুত্রকে হারাতে চাই না।”

46 তারপর রিবিকা ইস‌্হাককে বললেন, “তোমার পুত্র এষৌ হিত্তীয়দের কন্যাকে বিয়ে করেছে। এ আমার মোটে ভাল লাগে নি। কেননা তারা আমাদের আপনজন নয়। যাকোবও যদি ঐ মেয়েদের কাউকে বিয়ে করে তাহলে আমি নির্ঘাত মারা যাব।”

মথি 26

ইহুদী নেতারা যীশুকে হত্যার চক্রান্ত করলেন

(মার্ক 14:1-2; লূক 22:1-2; যোহন 11:45-53)

26 এইসব কথা শেষ করে যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “তোমরা জানো, আর দুদিন পরই নিস্তারপর্ব শুরু হবে, তখন মানবপুত্রকে ক্রুশে দেবার জন্য শত্রুদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।”

সেই সময় মহাযাজক কায়াফার বাড়ির উঠানে প্রধান যাজকরা ও ইহুদী নেতারা এসে ষড়যন্ত্র করতে বসল, যেন তারা যীশুকে গ্রেপ্তার করতে পারে ও তাঁকে ফাঁদে ফেলে হত্যা করতে পারে। তারা বলল, “আমরা নিস্তারপর্বের সময় একাজ করব না, তাতে লোকদের মধ্যে হয়তো গণ্ডগোল বাধতে পারে।”

একটি স্ত্রীলোক বিশেষ এক কাজ করলেন

(মার্ক 14:3-9; যোহন 12:1-8)

যীশু যখন বৈথনিয়ায় কুষ্ঠরোগী শিমোনের বাড়িতে ছিলেন সেই সময় একজন স্ত্রীলোক যীশুর কাছে এল। তার কাছে শ্বেতপাথরের[a] বোতলে খুব দামী সুগন্ধি ছিল। যীশু যখন সেখানে খেতে বসেছিলেন, তখন সে ঐ আতর যীশুর মাথায় ঢেলে দিল।

তাই দেখে তাঁর শিষ্যরা রেগে গেলেন, তাঁরা বললেন, “এভাবে অপচয় করা হচ্ছে কেন? এটা তো অনেক টাকায় বিক্রি করা যেত, আর সেই টাকা গরীবদের দেওয়া যেত।”

10 তারা যা বলাবলি করছিল, যীশু তা জানতে পেরে তাদের বললেন, “তোমরা এই স্ত্রীলোককে কেন দুঃখ দিচ্ছ? ও তো আমার প্রতি ভাল কাজই করল। 11 কারণ গরীবরা তোমাদের সঙ্গে সব সময়ই থাকবে।[b] কিন্তু তোমরা আমায় সব সময় পাবে না। 12 আমার দেহের ওপর আতর ঢেলে দিয়ে সে তো আমাকে সমাধিতে রাখার উপযোগী কাজই করল। 13 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, সারা জগতে যেখানেই এই সুসমাচার প্রচার করা হবে, সেখানেই এর এই কাজের কথা বলা হবে।”

যিহূদা যীশুর শত্রু

(মার্ক 14:10-11; লূক 22:3-6)

14 তখন বারো জন শিষ্যর মধ্যে একজন, যার নাম যিহূদা ঈষ্করিয়োতীয়, সে প্রধান যাজকদের কাছে গিয়ে বলল, 15 “আমি যদি তাঁকে আপনাদের হাতে ধরিয়ে দিই, তবে আপনারা আমায় কি দেবেন বলুন?” তারা তাকে গুনে গুনে ত্রিশটা রূপোর টাকা দিল। 16 সেই মুহূর্ত্ত থেকেই যিহূদা তাঁকে ধরিয়ে দেবার সুযোগ খুঁজতে লাগল।

যীশু নিস্তারপর্বের ভোজ খেলেন

(মার্ক 14:12-21; লূক 22:7-14, 21-23; যোহন 13:21-30)

17 খামিরবিহীন রুটির পর্বের প্রথম দিনে যীশুর শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “আপনার জন্য আমরা কোথায় নিস্তারপর্বের ভোজের আয়োজন করব? আপনি কি চান?”

18 যীশু বললেন, “তোমরা ঐ গ্রামে আমার পরিচিত একজনের কাছে যাও, তাকে গিয়ে বল, ‘গুরু বলেছেন, আমার নির্ধারিত সময় কাছে এসে গেছে, আমি আমার শিষ্যদের সঙ্গে তোমার বাড়িতে নিস্তারপর্ব পালন করব।’” 19 তখন শিষ্যরা যীশুর কথামতো কাজ করলেন, তারা সেখানে নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন।

20 সন্ধ্যা হলে পর যীশু সেই বারো জন শিষ্যের সঙ্গে নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে বসলেন। 21 তাঁরা যখন খাচ্ছেন সেই সময় যীশু বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে শত্রুর হাতে তুলে দেবে।”

22 এতে শিষ্যরা খুবই দুঃখ পেয়ে এক একজন করে যীশুকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, “প্রভু, সে কি আমি?”

23 তখন যীশু বললেন, “যে আমার সঙ্গে বাটিতে হাত ডোবালো, সেই আমাকে শত্রুর হাতে সঁপে দেবে। 24 মানবপুত্রের বিষয়ে শাস্ত্রে যেমন লেখা আছে, সেই ভাবেই তাঁকে যেতে হবে। কিন্তু ধিক্ সেই লোক, যে মানবপুত্রকে ধরিয়ে দেবে। সেই লোকের জন্ম না হওয়াই তার পক্ষে ভাল ছিল।”

25 যে যীশুকে শত্রুর হাতে ধরিয়ে দিতে যাচ্ছিল, সেই যিহূদা বলল, “গুরু সে নিশ্চয়ই আমি নই?”

যীশু তাকে বললেন, “তুমি নিজেই তো একথা বলছ।”

প্রভুর ভোজ

(মার্ক 14:22-26; লূক 22:15-20; 1 করিন্থীয় 11:23-25)

26 তাঁরা খাচ্ছিলেন, এমন সময় যীশু একটি রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন, আর সেই রুটি টুকরো টুকরো করে শিষ্যদের দিয়ে বললেন, “এই নাও, খাও, এ আমার দেহ।”

27 এরপর তিনি পানপাত্র নিয়ে ধন্যবাদ দিলেন আর পানপাত্রটি শিষ্যদের দিয়ে বললেন, “তোমরা সকলে এর থেকে পান কর। 28 কারণ এ আমার রক্ত, নতুন নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার রক্ত যা বহুলোকের পাপ মোচনের জন্য পাতিত হল। 29 আমি তোমাদের বলছি, এখন থেকে আমি এই দ্রাক্ষারস আর কখনও পান করব না, যে পর্যন্ত না আমার পিতার রাজ্যে তোমাদের সঙ্গে নতুন দ্রাক্ষারস পান করি।”

30 এরপর তাঁরা একটি গান করতে করতে জৈতুন পর্বতমালায় চলে গেলেন।

যীশু বললেন তাঁর শিষ্যরা তাঁকে ত্যাগ করবে

(মার্ক 14:27-31; লূক 22:31-34; যোহন 13:36-38)

31 যীশু তাদের বললেন, “আমার কারণে তোমরা আজ রাত্রেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে। আমি একথা বলছি কারণ শাস্ত্রে লেখা আছে,

‘আমি মেষপালককে আঘাত করবো।
    তাঁর মৃত্যু হলে পালের মেষরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে।’(A)

32 কিন্তু আমি পুনরুত্থিত হবার পর, তোমাদের আগে আগে গালীলে যাব।”

33 এর উত্তরে পিতর বললেন, “আপনার কারণে সকলেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে পারে কিন্তু আমি কখনই বিশ্বাস হারাবো না।”

34 যীশু বললেন, “আমি সত্যি বলছি, আজ রাত্রেই তুমি বলবে যে তুমি আমাকে চেনো না। ভোরে মোরগ ডাকার আগেই তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে।”

35 কিন্তু পিতর তাঁকে বললেন, “আমি আপনাকে চিনি না, একথা আমি কখনও বলব না। আপনার সঙ্গে আমি মরতেও প্রস্তুত।” অন্য শিষ্যরাও সকলে একই কথা বললেন।

যীশুর নির্জনে প্রার্থনা

(মার্ক 14:32-42; লূক 22:39-46)

36 এরপর যীশু তাঁদের সঙ্গে গেতশিমানী নামে একটা জায়গায় গিয়ে তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি ওখানে গিয়ে যতক্ষণ প্রার্থনা করি, তোমরা এখানে বসে থাক।” 37 এরপর তিনি পিতর ও সিবদিয়ের দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চলতে থাকলেন। যেতে যেতে তাঁর মন উদ্বেগ ও ব্যথায় ভরে গেল, তিনি অভিভূত হয়ে পড়লেন। 38 তখন তিনি তাদের বললেন, “দুঃখে আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। তোমরা এখানে থাক আর আমার সঙ্গে জেগে থাকো।”

39 পরে তিনি কিছু দূরে গিয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে প্রার্থনা করে বললেন, “আমার পিতা, যদি সম্ভব হয় তবে এই কষ্টের পানপাত্র আমার কাছ থেকে দূরে যাক; তবু আমার ইচ্ছামতো নয়, কিন্তু তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক্।” 40 এরপর তিনি শিষ্যদের কাছে ফিরে গিয়ে দেখলেন, তাঁরা ঘুমাচ্ছেন। তিনি পিতরকে বললেন, “একি! তোমরা আমার সঙ্গে এক ঘন্টাও জেগে থাকতে পারলে না? 41 জেগে থাক ও প্রার্থনা কর যেন প্রলোভনে না পড়। তোমাদের আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু দেহ দুর্বল।”

42 তিনি গিয়ে আর একবার প্রার্থনা করলেন, “হে আমার পিতা, এই দুঃখের পানপাত্র থেকে আমি পান না করলে যদি তা দূর হওয়া সম্ভব না হয় তবে তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক্।”

43 পরে তিনি ফিরে এসে দেখলেন, শিষ্যরা আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন, কারণ তাঁদের চোখ ভারী হয়ে গিয়েছিল। 44 তখন তিনি তাঁদের ছেড়ে চলে গেলেন ও তৃতীয় বার প্রার্থনা করলেন। তিনি আগের মতো সেই একই কথা বলে প্রার্থনা করলেন।

45 পরে তিনি শিষ্যদের কাছে এসে বললেন, “তোমরা এখনও ঘুমিয়ে রয়েছ ও বিশ্রাম করছ? শোন, সময় ঘনিয়ে এল, মানবপুত্রকে পাপীদের হতে তুলে দেওয়া হবে। 46 ওঠ, চল আমরা যাই! ঐ দেখ! যে লোক আমায় ধরিয়ে দেবে, সে এসে গেছে।”

যীশুকে গ্রেপ্তার করা হল

(মার্ক 14:43-50; লূক 22:47-53; যোহন 18:3-12)

47 তিনি তখনও কথা বলছেন, এমন সময় সেই বারোজন শিষ্যের মধ্যে একজন, যিহূদা সেখানে এসে হাজির হল, তার সঙ্গে বহুলোক ছোরা ও লাঠি নিয়ে এল। প্রধান যাজকরা ও সমাজপতিরা এদের পাঠিয়েছিলেন। 48 যে তাঁকে ধরিয়ে দিচ্ছিল, সে ঐ লোকদের একটা সাঙ্কেতিক চিহ্ন দিয়ে বলেছিল, “আমি যাকে চুমু দেব, সেই ঐ লোক, তাকে তোমরা ধরবে।” 49 এরপর যিহূদা যীশুর কাছে এগিয়ে এসে বলল, “গুরু, নমস্কার,” এই বলে সে তাঁকে চুমু দিল।

50 যীশু তাঁকে বললেন, “বন্ধু, তুমি যা করতে এসেছ কর।”

তখন তারা এগিয়ে এসে জাপটে ধরে যীশুকে গ্রেপ্তার করল। 51 সেই সময় যীশুর সঙ্গীদের মধ্যে একজন তাঁর তরোয়ালের দিকে হাত বাড়ালেন আর তা বার করে মহাযাজকদের দাসকে আঘাত করে তার একটা কান কেটে দিলেন।

52 তখন যীশু তাকে বললেন, “তোমার তরোয়ালটি খাপে রাখ। যারা তরোয়াল চালায় তারা তরোয়ালের আঘাতেই মরবে। 53 তোমরা কি ভাব যে, আমি আমার পিতা ঈশ্বরের কাছে চাইতে পারি না? চাইলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে আমার জন্য বারোটিরও বেশী স্বর্গদূতবাহিনী পাঠিয়ে দেবেন। 54 কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে শাস্ত্রের বাণী কিভাবে পূর্ণ হবে, শাস্ত্রে যখন বলছে এভাবেই সব কিছু অবশ্যই ঘটবে?”

55 সেই সময় যীশু লোকদের বললেন, “লোকে যেমন ডাকাত ধরতে যায়, সেই ভাবে তোমরা ছোরা ও লাঠি নিয়ে আমায় ধরতে এসেছ? আমি তো প্রতিদিন মন্দিরের মধ্যে বসে শিক্ষা দিয়েছি; 56 কিন্তু তোমরা আমায় গ্রেপ্তার কর নি। যাইহোক্, এসব কিছুই ঘটল যেন ভাববাদীদের লেখা সকল কথাই পূর্ণ হয়।” তখন তাঁর শিষ্যরা তাঁকে ফেলে পালিয়ে গেলেন।

ইহুদী নেতাদের সামনে যীশু

(মার্ক 14:53-65; লূক 22:54-55, 63-71; যোহন 18:13-14, 19-24)

57 তারা যীশুকে গ্রেপ্তার করে মহাযাজক কায়াফার বাড়িতে নিয়ে এল, সেখানে ব্যবস্থার শিক্ষক ও ইহুদী নেতারা জড়ো হয়েছিলেন। 58 পিতর দূর থেকে যীশুর পিছনে পিছনে মহাযাজকের বাড়ির উঠোন পর্যন্ত গেলেন। শেষ পর্যন্ত কি হয় তা দেখবার জন্য তিনি ভেতরে গিয়ে দাসদের সঙ্গে বসলেন।

59 যীশুকে যেন মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে তাই যীশুর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী যোগাড় করার জন্য প্রধান যাজকরা ও ইহুদী মহাসভার সব সভ্যরা সেখানে সমবেত হয়েছিলেন। 60 অনেকে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবার জন্য সেখানে হাজির হয়েছিল, তবু যে সাক্ষ্য যীশুকে হত্যা করার জন্য দরকার তা পাওয়া গেল না। 61 শেষে দুজন লোক এসে বলল, “এই লোক বলেছিল, ‘আমি ঈশ্বরের মন্দির ভেঙে ফেলতে ও তা আবার তিন দিনের ভেতরে গেঁথে তুলতে পারি।’”

62 তখন মহাযাজক উঠে দাঁড়িয়ে যীশুকে বললেন, “তুমি কি এর জবাবে কিছুই বলবে না? এরা তোমার বিরুদ্ধে কি সাক্ষ্য দিচ্ছে?” 63 কিন্তু যীশু নীরব থাকলেন।

তখন মহাযাজক তাঁকে বললেন, “আমি তোমাকে জীবন্ত ঈশ্বরের নামে দিব্যি দিচ্ছি, আমাদের বল, তুমি কি সেই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র?”

64 যীশু তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, তুমিই একথা বললে। তবে আমি তোমাকে এটাও বলছি, এখন থেকে তোমরা মানবপুত্রকে মহাপরাক্রান্ত ঈশ্বরের ডানপাশে বসে থাকতে ও আকাশে মেঘের মধ্যে দিয়ে আসতে দেখবে।”

65 তখন মহাযাজক তাঁর পোশাক ছিঁড়ে ফেলে বললেন, “এ ঈশ্বরের নিন্দা করল, আমাদের আর অন্য সাক্ষ্যের দরকার কি? দেখ, তোমরা এখন ঈশ্বর নিন্দা শুনলে! 66 তোমরা কি মনে কর?”

এর উত্তরে তারা বলল, “এ মৃত্যুর যোগ্য।”

67 তখন তারা যীশুর মুখে থুথু দিল ও তাঁকে ঘুসি মারল। 68 কেউ কেউ তাঁকে চড় মারল ও বলল, “ওরে খ্রীষ্ট, আমাদের জন্য কিছু ভাববানী বল, কে তোকে মারল?”

পিতর যীশুকে স্বীকার করতে ভয় পেলেন

(মার্ক 14:66-72; লূক 22:56-62; যোহন 18:15-18, 25-27)

69 পিতর যখন বাইরে উঠোনে বসেছিলেন তখন একজন দাসী এসে বলল, “তুমিও গালীলে যীশুর সঙ্গে ছিলে।”

70 কিন্তু পিতর সবার সামনে একথা অস্বীকার করে বললেন, “তুমি কি বলছ, আমি তার কিছুই জানি না।”

71 তিনি যখন ফটকের সামনে গেলেন, তখন আর একজন দাসী তাকে দেখে সেখানে যারা ছিল তাদের বলল, “এ লোকটা নাসরতীয় যীশুর সঙ্গে ছিল।”

72 পিতর আবার অস্বীকার করলেন। তিনি দিব্যি করে বললেন, “আমি ঐ লোকটাকে মোটেই চিনি না।”

73 এর কিছু পরে, সেখানে যারা দাঁড়িয়েছিল তারা পিতরের কাছে এসে বলল, “তুমি ঠিক ওদেরই একজন কারণ তোমার কথার উচ্চারণের ধরণ দেখেই তা বুঝতে পারা যাচ্ছে।”

74 তখন পিতর দিব্যি করে শাপ দিয়ে বললেন, “আমি ঐ লোকটাকে আদৌ চিনি না।” আর তখনই মোরগ ডেকে উঠল। 75 তখন পিতরের মনে পড়ে গেল যীশু তাকে যা বলেছিলেন, “ভোরের মোরগ ডাকার আগেই তুমি তাকে তিনবার অস্বীকার করবে।” আর পিতর বাইরে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।

ইষ্টের 3

হামনের ইহুদীদের বিনাশ করার পরিকল্পনা

এসব ঘটনা ঘটার পরে রাজা অগাগীয় হম্মদাথার পুত্র হামন নামে এক ব্যক্তিকে সম্মান জানান। রাজা হামনকে উচ্চপদে উন্নীত করেন এবং তাঁর অন্য সমস্ত আধিকারিকদের থেকে উচ্চতর পদে তাকে নিযুক্ত করেন। রাজা নির্দেশ দিয়েছিলেন যে মুখ্যদ্বার দিয়ে ঢোকবার সময় প্রত্যেক ব্যক্তিকে মাথা ঝুঁকিয়ে হামনকে সম্মান জানাতে হবে। তাই রাজার সব নেতারা রাজদ্বারে হামনের কাছে প্রণত হয়ে তাঁকে সম্মান জানাতেন, কিন্তু শুধুমাত্র মর্দখয় তা করতে রাজী হলেন না। তখন অন্যান্য প্রধানরা তাঁকে প্রশ্ন করলেন, “আপনি কেন রাজার নির্দেশ মেনে হামনকে সম্মান দেখান না?”

সমস্ত প্রধানরা এবিষয়ে দিনের পর দিন মর্দখয়কে বলা সত্ত্বেও মর্দখয় হামনের সামনে কোন মতেই মাথা নীচু করতে রাজী হলেন না। তখন হামন কি করে তা দেখার জন্য এই সমস্ত নেতারা হামনকে একথা জানালেন। মর্দখয় এই আধিকারিকদের বলেছিলেন যে তিনি ইহুদী। হামন যখন দেখলেন সত্যি সত্যিই মর্দখয় তাকে সম্মান দেখাতে অনিচ্ছুক তখন তিনি খুবই ক্রুদ্ধ হলেন। মর্দখয় যে ইহুদী হামন সে কথাও জেনেছিলেন। হামনের ইচ্ছা ছিল শুধু মর্দখয় নয়, রাজা অহশ্বেরশের রাজ্যে বসবাসকারী মর্দখয়ের জাতির সবাইকে হত্যা করা হোক্।

অহশ্বেরশের রাজত্বের দ্বাদশ বছরের প্রথম মাসে, নীষণ মাসে হামন অক্ষ নিক্ষেপ করে একটি মাসের একটি বিশেষ দিন বেছে নিলেন। সেই দিনটি ছিল দ্বাদশতম মাস, অদর মাস। (সে সময় অক্ষকে “পূরও” বলা হোত।) তারপর রাজা অহশ্বেরশের কাছে এসে হামন বললেন, “হে রাজন, আপনার রাজ্যের সর্বত্র এক বিশেষ জাতির মানুষরা বাস করছে, যাদের সংস্কৃতি অন্যদের থেকে আলাদা। তারা অন্য কোন জাতির লোকদের সঙ্গে মেলামেশা করে না, এমন কি আপনার বিধিও মেনে চলে না। এই সমস্ত লোকদের আপনার রাজ্যে বসবাস করতে দেওয়া উচিৎ‌ বলে আমি মনে করি না।

“রাজার প্রতি আমার বিনীত নিবেদেন: আমার পরামর্শ হল, এইসব লোকদের শেষ করে দেওয়ার জন্য আপনি নির্দেশ দিন। আর আমি রাজ কোষাগারে 10,000 রৌপ্যমুদ্রা জমা দেবো।”[a]

10-11 রাজা তখন তাঁর আঙুল থেকে একটি আংটি খুলে হামনকে দিলেন। হামন ছিলেন ইহুদীদের শত্রু। তিনি ছিলেন অগাগিয় হম্মদাথার পুত্র। রাজা তাঁকে বললেন, “রৌপ্য মুদ্রাগুলি তুমি তোমার জন্য রাখ এবং ইহুদীদের তুমি যা খুশি করতে পারো।”

12 তখন প্রথম মাসের 13 দিনে রাজার সমস্ত সচিবদের ডেকে পাঠানো হল এবং তারা প্রত্যেক আঞ্চলিক ভাষায় হামনের নির্দেশ লিখে নিলো। তারা সেই নির্দেশ লিখে নিয়ে সমস্ত অঞ্চলের প্রাদেশিক কর্তাকে পাঠিয়ে দিল। এই নির্দেশ স্বয়ং রাজা অহশ্বেরশের হুকুমে লেখা হল এবং জারি করা হল এবং তাঁর অঙ্গুরীয দিয়ে শীলমোহর করা হল।

13 এই সমস্ত চিঠি নিয়ে বার্তাবাহকরা রাজ্যের সমস্ত অঞ্চলে গেলেন। চিঠিটি একটি নির্দিষ্ট দিনে বয়স নির্বিশেষে সমস্ত ইহুদীকে শেষ করবার আদেশ বহন করছিল। দ্বাদশতম মাস, অদর মাসের ত্রয়োদশতম দিনকে এই হত্যালীলার জন্য বাছা হয়েছিল। এছাড়াও, ইহুদীদের সমস্ত বিষয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করবার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল।

14 এই নির্দেশ সম্বলিত চিঠির প্রতিলিপি সমস্ত প্রদেশগুলিতে এবং সব লোকদের কাছে পাঠানো হল। বলা হল এই আদেশকে বিধি হিসেবে মানতে হবে এবং প্রকাশ্য স্থানে রাখতে হবে যাতে ওই সমস্ত লোকরা সেই দিনের জন্য প্রস্তত হতে পারে। 15 রাজার নির্দেশে বার্তাবাহকরা যেখানে এই আদেশ জারি হয়েছিল, সেই রাজধানী শূশন থেকে তৎ‌ক্ষণাৎ‌‌ রওনা হল। তারপর রাজা ও হামন একসঙ্গে দ্রাক্ষারস পান করতে বসলেন। শূশনের সকলে এ নির্দেশে বিচলিত হল। ভুল বোঝাবুঝি হল। লোকে উদ্বিগ্ন হল।

প্রেরিত 26

রাজা আগ্রিপ্পর সামনে পৌল

26 আগ্রিপ্প পৌলকে বললেন, “এখন আত্ম সমর্থন করতে তোমার যা বলার আছে তা তোমাকে বলতে অনুমতি দেওয়া হল।” তখন পৌল হাত প্রসারিত করে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে থাকলেন। তিনি বললেন, “হে রাজা আগ্রিপ্প, ইহুদীরা আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ এনেছে, সে বিষয়ে আজ আপনার সামনে আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। বিশেষ করে ইহুদীদের রীতি-নীতি ও নানা প্রশ্নের বিষয়ে আপনি অভিজ্ঞ, এইজন্য আপনার কাছে কথা বলার সুযোগ পেয়ে আমি বড়ই আনন্দিত। তাই আপনাকে অনুরোধ করছি আপনি ধৈর্য্য ধরে আমার কথা শুনুন।

“তারা জানে যে শুরু থেকেই আমি এই জেরুশালেমে আমার স্বজাতির মধ্যেই জীবন কাটিয়েছি এবং আরো জানে আমি কিভাবে জীবন-যাপন করেছি। এই ইহুদীরা দীর্ঘদিন ধরে আমায় চেনে; আর তারা যদি ইচ্ছা করে তবে এই সাক্ষ্য দিতে পারে যে আমি একজন ফরীশীর মতোই জীবন-যাপন করেছি। ফরীশীরাই ইহুদী ধর্মের বিধি-ব্যবস্থা অন্যান্য দলের চাইতে সূক্ষ্মভাবে পালন করে। আমাদের পিতৃপুরুষদের কাছে ঈশ্বর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সে সব পূর্ণ হবার প্রত্যাশায় আছি বলেই আজ আমার বিচার হচ্ছে। আমাদের বারো বংশ দিনরাত একাগ্রভাবে উপাসনা করতে করতে সেই প্রতিশ্রুতির ফল পাবার প্রত্যাশা করছে। আর হে রাজা আগ্রিপ্প, ঈশ্বর আমাদের পূর্বপুরুষদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাতে প্রত্যাশা করার জন্যই ইহুদীরা আমার ওপর দোষারোপ করছে। ঈশ্বর মৃতদের পুনরুত্থিত করেন একথা কেন আপনাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে?

“আমিও তো মনে করতাম যে নাসরতীয় যীশুর নামের বিরুদ্ধে যা কিছু করা সম্ভব তা করাই আমার অবশ্য কর্তব্য; 10 আর জেরুশালেমে আমি তাই করতাম। আমি প্রধান যাজকদের কাছ থেকে কর্তৃত্ত্বের অধিকার নিয়ে বহু বিশ্বাসীকে কারাগারে পুরেছি আর তাদের মৃত্যুদণ্ডের সময় আমি আমার পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছি। 11 সমস্ত সমাজ-গৃহে আমি প্রায়ই তাদের শাস্তি দিয়ে জোর করে যীশুর নিন্দা করাবার চেষ্টা করতাম। তাদের বিরুদ্ধে আমার ক্ষোভ এতই প্রচণ্ড হয়ে উঠেছিল যে বিদেশের শহরগুলিতে গিযেও আমি তাদেরনির্যাতন করতাম।

পৌল যীশুর দর্শন বিষয়ে বললেন

12 “এই কারণেই একবার আমি প্রধান যাজকদের কাছ থেকে ক্ষমতা ও হুকুমনামা নিয়ে দম্মেশকে যাচ্ছিলাম। 13 পথে একদিন দুপুরবেলায়, হে মহারাজ আমি দেখলাম সূর্যের চেয়েও এক উজ্জ্বল আলো আকাশ থেকে আমার ও আমার সহযাত্রীদের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। 14 আমরা মাটিতে পড়ে গেলাম, আর এক রব শুনতে পেলাম যা ইব্রীয় ভাষায় আমায় বলছে, ‘শৌল, শৌল, আমায় নির্যাতন করছ কেন? আমার বিরোধিতা করে তুমি নিজেরই ক্ষতি করছ।’

15 “তখন আমি বললাম, ‘প্রভু, আপনি কে?’

“প্রভু বললেন, ‘আমি যীশু, যাকে তুমি নির্যাতন করছ। 16 তুমি নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াও! আমার সেবক হবার জন্যই আমি তোমাকে মনোনীত করেছি। তুমি অন্যের কাছে আমার সাক্ষী হবে। তুমি যে যে বিষয় আজ দেখলে ও ভবিষ্যতে যা যা আমি তোমায় দেখাব, সে সব সকল লোকের কাছে সাক্ষী দাও। এইজন্যই তোমার কাছে আজ আমি নিজে দেখা দিয়েছি। 17 তোমার আপন লোক ইহুদীদের হাত থেকে তোমায় আমি রক্ষা করব। আর আমি তোমাকে অইহুদীদের কাছে পাঠাচ্ছি। 18 তুমি তাদের চোখ খুলে দেবে যেন তারা সত্য দেখে ও অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরে আসে; আর শয়তানের কর্ত্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে ঈশ্বরের প্রতি ফিরলে তাদের সব পাপ ক্ষমা হবে। আমার উপর বিশ্বাস করে যারা পবিত্র হয়েছে, তারা তাদের সহভাগী হবে।’”

পৌল তাঁর কাজের সম্বন্ধে বললেন

19 পৌল বলতে থাকলেন, “হে মহারাজ আগ্রিপ্প, আমি সেই স্বর্গীয় দর্শনের অবাধ্য হই নি। 20 আমি লোকদের বলতে শুরু করলাম যেন তারা মন-ফেরায় ও ঈশ্বরের দিকে ফেরে। আমি তাদের বললাম তারা যেন ভাল কাজ করে প্রমাণ দেয় যে সত্যি করে মন ফিরিয়েছে। প্রথমে আমি এসব কথা দম্মেশকের লোকদের কাছে প্রচার করলাম। পরে আমি এগুলি জেরুশালেমে ও যিহূদিয়ার সর্বত্র এবং অইহুদীদের কাছেও বললাম।

21 “এই জন্যই যখন আমি মন্দিরে ছিলাম, ইহুদীরা সেখান থেকে আমাকে ধরে এনে হত্যা করতে চেয়েছিল। 22 কিন্তু আজ পর্যন্ত আমি ঈশ্বরের সাহায্য পেয়েছি। তাই এখানে ছোট ও বড় সকলের সামনে দাঁড়িয়ে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি। মোশি ও ভাববাদীরা যা ঘটবে বলে গেছেন, সেটা ছাড়া আমি আর অন্য কোন কথা বলছি না। 23 তাঁরা বলে গেছেন, খ্রীষ্টকে মৃত্যুভোগ করতে হবে ও মৃতদের মধ্য থেকে তিনিই হবেন প্রথম পুনরুত্থিত, ইহুদী কি অইহুদী সবার কাছে বিশিষ্ট জ্যোতির বার্তা নিয়ে আসবেন।”

পৌল আগ্রিপ্পকে বোঝালেন

24 পৌল যখন এভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করছেন তখন ফীষ্ট চিৎকার করে বলে উঠলেন, “পৌল তুমি পাগল! অত্যধিক অধ্যয়নের ফলে তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে!”

25 পৌল বললেন, “হে মহামান্য ফীষ্ট, আমি পাগল নই বরং আমি যা বলছি তা সত্য ও বোধগম্য। 26 রাজা আগ্রিপ্প এবিষয়ে সবই জানেন। তাঁর সামনে আমি সাহসের সঙ্গে একথা বলছি। আমি সুনিশ্চিত যে, এসব বিষয় তিনি শুনেছেন, কারণ এসব এমন প্রকাশ্য স্থানে ঘটেছে যাতে তা সকলে দেখতে পায়। 27 আগ্রিপ্প, আপনি কি ভাববাদীরা যা লিখে গেছেন তা বিশ্বাস করেন? আমি জানি আপনি তা করেন।”

28 তখন আগ্রিপ্প পৌলকে বললেন, “তুমি কি মনে করছ, আমাকে এত অল্প সময়ের মধ্যে খ্রীষ্টীয়ান করতে পারবে?”

29 পৌল বললেন, “ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি অল্প সময়ের মধ্যে হোক্ কি অধিক সময়ের মধ্যে হোক্, সেটা বড় কথা নয়, কেবল আপনি নন, আজ যত লোক আমার কথা শুনছেন তারা সকলেই যেন আমারই মত হন; কেবল বন্দীত্বের শেকল ছাড়া!”

30 তখন রাজা, রাজ্যপাল ও বর্ণীকী আর তাঁদের সঙ্গে যাঁরা বসেছিলেন সকলে উঠে পড়লেন। 31 আর অন্য জায়গায় গিয়ে পরস্পর আলোচনা করে বললেন, “প্রাণদণ্ড বা কারাগারে দেবার মতো কোন অপরাধই এই লোকটা করে নি।” 32 আগ্রিপ্প ফীষ্টকে বললেন, “এ যদি কৈসরের কাছে আপীল না করত, তবে একে আমরা মুক্তি দিতে পারতাম।”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International