Chronological
ইহুদী নেতারা যীশুকে হত্যার চক্রান্ত করলেন
(মার্ক 14:1-2; লূক 22:1-2; যোহন 11:45-53)
26 এইসব কথা শেষ করে যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, 2 “তোমরা জানো, আর দুদিন পরই নিস্তারপর্ব শুরু হবে, তখন মানবপুত্রকে ক্রুশে দেবার জন্য শত্রুদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।”
3 সেই সময় মহাযাজক কায়াফার বাড়ির উঠানে প্রধান যাজকরা ও ইহুদী নেতারা এসে ষড়যন্ত্র করতে বসল, 4 যেন তারা যীশুকে গ্রেপ্তার করতে পারে ও তাঁকে ফাঁদে ফেলে হত্যা করতে পারে। 5 তারা বলল, “আমরা নিস্তারপর্বের সময় একাজ করব না, তাতে লোকদের মধ্যে হয়তো গণ্ডগোল বাধতে পারে।”
একটি স্ত্রীলোক বিশেষ এক কাজ করলেন
(মার্ক 14:3-9; যোহন 12:1-8)
6 যীশু যখন বৈথনিয়ায় কুষ্ঠরোগী শিমোনের বাড়িতে ছিলেন সেই সময় একজন স্ত্রীলোক যীশুর কাছে এল। 7 তার কাছে শ্বেতপাথরের[a] বোতলে খুব দামী সুগন্ধি ছিল। যীশু যখন সেখানে খেতে বসেছিলেন, তখন সে ঐ আতর যীশুর মাথায় ঢেলে দিল।
8 তাই দেখে তাঁর শিষ্যরা রেগে গেলেন, তাঁরা বললেন, “এভাবে অপচয় করা হচ্ছে কেন? 9 এটা তো অনেক টাকায় বিক্রি করা যেত, আর সেই টাকা গরীবদের দেওয়া যেত।”
10 তারা যা বলাবলি করছিল, যীশু তা জানতে পেরে তাদের বললেন, “তোমরা এই স্ত্রীলোককে কেন দুঃখ দিচ্ছ? ও তো আমার প্রতি ভাল কাজই করল। 11 কারণ গরীবরা তোমাদের সঙ্গে সব সময়ই থাকবে।[b] কিন্তু তোমরা আমায় সব সময় পাবে না। 12 আমার দেহের ওপর আতর ঢেলে দিয়ে সে তো আমাকে সমাধিতে রাখার উপযোগী কাজই করল। 13 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, সারা জগতে যেখানেই এই সুসমাচার প্রচার করা হবে, সেখানেই এর এই কাজের কথা বলা হবে।”
যিহূদা যীশুর শত্রু
(মার্ক 14:10-11; লূক 22:3-6)
14 তখন বারো জন শিষ্যর মধ্যে একজন, যার নাম যিহূদা ঈষ্করিয়োতীয়, সে প্রধান যাজকদের কাছে গিয়ে বলল, 15 “আমি যদি তাঁকে আপনাদের হাতে ধরিয়ে দিই, তবে আপনারা আমায় কি দেবেন বলুন?” তারা তাকে গুনে গুনে ত্রিশটা রূপোর টাকা দিল। 16 সেই মুহূর্ত্ত থেকেই যিহূদা তাঁকে ধরিয়ে দেবার সুযোগ খুঁজতে লাগল।
যীশু নিস্তারপর্বের ভোজ খেলেন
(মার্ক 14:12-21; লূক 22:7-14, 21-23; যোহন 13:21-30)
17 খামিরবিহীন রুটির পর্বের প্রথম দিনে যীশুর শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “আপনার জন্য আমরা কোথায় নিস্তারপর্বের ভোজের আয়োজন করব? আপনি কি চান?”
18 যীশু বললেন, “তোমরা ঐ গ্রামে আমার পরিচিত একজনের কাছে যাও, তাকে গিয়ে বল, ‘গুরু বলেছেন, আমার নির্ধারিত সময় কাছে এসে গেছে, আমি আমার শিষ্যদের সঙ্গে তোমার বাড়িতে নিস্তারপর্ব পালন করব।’” 19 তখন শিষ্যরা যীশুর কথামতো কাজ করলেন, তারা সেখানে নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন।
20 সন্ধ্যা হলে পর যীশু সেই বারো জন শিষ্যের সঙ্গে নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে বসলেন। 21 তাঁরা যখন খাচ্ছেন সেই সময় যীশু বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে শত্রুর হাতে তুলে দেবে।”
22 এতে শিষ্যরা খুবই দুঃখ পেয়ে এক একজন করে যীশুকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, “প্রভু, সে কি আমি?”
23 তখন যীশু বললেন, “যে আমার সঙ্গে বাটিতে হাত ডোবালো, সেই আমাকে শত্রুর হাতে সঁপে দেবে। 24 মানবপুত্রের বিষয়ে শাস্ত্রে যেমন লেখা আছে, সেই ভাবেই তাঁকে যেতে হবে। কিন্তু ধিক্ সেই লোক, যে মানবপুত্রকে ধরিয়ে দেবে। সেই লোকের জন্ম না হওয়াই তার পক্ষে ভাল ছিল।”
25 যে যীশুকে শত্রুর হাতে ধরিয়ে দিতে যাচ্ছিল, সেই যিহূদা বলল, “গুরু সে নিশ্চয়ই আমি নই?”
যীশু তাকে বললেন, “তুমি নিজেই তো একথা বলছ।”
প্রভুর ভোজ
(মার্ক 14:22-26; লূক 22:15-20; 1 করিন্থীয় 11:23-25)
26 তাঁরা খাচ্ছিলেন, এমন সময় যীশু একটি রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন, আর সেই রুটি টুকরো টুকরো করে শিষ্যদের দিয়ে বললেন, “এই নাও, খাও, এ আমার দেহ।”
27 এরপর তিনি পানপাত্র নিয়ে ধন্যবাদ দিলেন আর পানপাত্রটি শিষ্যদের দিয়ে বললেন, “তোমরা সকলে এর থেকে পান কর। 28 কারণ এ আমার রক্ত, নতুন নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার রক্ত যা বহুলোকের পাপ মোচনের জন্য পাতিত হল। 29 আমি তোমাদের বলছি, এখন থেকে আমি এই দ্রাক্ষারস আর কখনও পান করব না, যে পর্যন্ত না আমার পিতার রাজ্যে তোমাদের সঙ্গে নতুন দ্রাক্ষারস পান করি।”
30 এরপর তাঁরা একটি গান করতে করতে জৈতুন পর্বতমালায় চলে গেলেন।
যীশু বললেন তাঁর শিষ্যরা তাঁকে ত্যাগ করবে
(মার্ক 14:27-31; লূক 22:31-34; যোহন 13:36-38)
31 যীশু তাদের বললেন, “আমার কারণে তোমরা আজ রাত্রেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে। আমি একথা বলছি কারণ শাস্ত্রে লেখা আছে,
‘আমি মেষপালককে আঘাত করবো।
তাঁর মৃত্যু হলে পালের মেষরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে।’(A)
32 কিন্তু আমি পুনরুত্থিত হবার পর, তোমাদের আগে আগে গালীলে যাব।”
33 এর উত্তরে পিতর বললেন, “আপনার কারণে সকলেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে পারে কিন্তু আমি কখনই বিশ্বাস হারাবো না।”
34 যীশু বললেন, “আমি সত্যি বলছি, আজ রাত্রেই তুমি বলবে যে তুমি আমাকে চেনো না। ভোরে মোরগ ডাকার আগেই তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে।”
35 কিন্তু পিতর তাঁকে বললেন, “আমি আপনাকে চিনি না, একথা আমি কখনও বলব না। আপনার সঙ্গে আমি মরতেও প্রস্তুত।” অন্য শিষ্যরাও সকলে একই কথা বললেন।
যীশুর নির্জনে প্রার্থনা
(মার্ক 14:32-42; লূক 22:39-46)
36 এরপর যীশু তাঁদের সঙ্গে গেতশিমানী নামে একটা জায়গায় গিয়ে তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি ওখানে গিয়ে যতক্ষণ প্রার্থনা করি, তোমরা এখানে বসে থাক।” 37 এরপর তিনি পিতর ও সিবদিয়ের দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চলতে থাকলেন। যেতে যেতে তাঁর মন উদ্বেগ ও ব্যথায় ভরে গেল, তিনি অভিভূত হয়ে পড়লেন। 38 তখন তিনি তাদের বললেন, “দুঃখে আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। তোমরা এখানে থাক আর আমার সঙ্গে জেগে থাকো।”
39 পরে তিনি কিছু দূরে গিয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে প্রার্থনা করে বললেন, “আমার পিতা, যদি সম্ভব হয় তবে এই কষ্টের পানপাত্র আমার কাছ থেকে দূরে যাক; তবু আমার ইচ্ছামতো নয়, কিন্তু তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক্।” 40 এরপর তিনি শিষ্যদের কাছে ফিরে গিয়ে দেখলেন, তাঁরা ঘুমাচ্ছেন। তিনি পিতরকে বললেন, “একি! তোমরা আমার সঙ্গে এক ঘন্টাও জেগে থাকতে পারলে না? 41 জেগে থাক ও প্রার্থনা কর যেন প্রলোভনে না পড়। তোমাদের আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু দেহ দুর্বল।”
42 তিনি গিয়ে আর একবার প্রার্থনা করলেন, “হে আমার পিতা, এই দুঃখের পানপাত্র থেকে আমি পান না করলে যদি তা দূর হওয়া সম্ভব না হয় তবে তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক্।”
43 পরে তিনি ফিরে এসে দেখলেন, শিষ্যরা আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন, কারণ তাঁদের চোখ ভারী হয়ে গিয়েছিল। 44 তখন তিনি তাঁদের ছেড়ে চলে গেলেন ও তৃতীয় বার প্রার্থনা করলেন। তিনি আগের মতো সেই একই কথা বলে প্রার্থনা করলেন।
45 পরে তিনি শিষ্যদের কাছে এসে বললেন, “তোমরা এখনও ঘুমিয়ে রয়েছ ও বিশ্রাম করছ? শোন, সময় ঘনিয়ে এল, মানবপুত্রকে পাপীদের হতে তুলে দেওয়া হবে। 46 ওঠ, চল আমরা যাই! ঐ দেখ! যে লোক আমায় ধরিয়ে দেবে, সে এসে গেছে।”
যীশুকে গ্রেপ্তার করা হল
(মার্ক 14:43-50; লূক 22:47-53; যোহন 18:3-12)
47 তিনি তখনও কথা বলছেন, এমন সময় সেই বারোজন শিষ্যের মধ্যে একজন, যিহূদা সেখানে এসে হাজির হল, তার সঙ্গে বহুলোক ছোরা ও লাঠি নিয়ে এল। প্রধান যাজকরা ও সমাজপতিরা এদের পাঠিয়েছিলেন। 48 যে তাঁকে ধরিয়ে দিচ্ছিল, সে ঐ লোকদের একটা সাঙ্কেতিক চিহ্ন দিয়ে বলেছিল, “আমি যাকে চুমু দেব, সেই ঐ লোক, তাকে তোমরা ধরবে।” 49 এরপর যিহূদা যীশুর কাছে এগিয়ে এসে বলল, “গুরু, নমস্কার,” এই বলে সে তাঁকে চুমু দিল।
50 যীশু তাঁকে বললেন, “বন্ধু, তুমি যা করতে এসেছ কর।”
তখন তারা এগিয়ে এসে জাপটে ধরে যীশুকে গ্রেপ্তার করল। 51 সেই সময় যীশুর সঙ্গীদের মধ্যে একজন তাঁর তরোয়ালের দিকে হাত বাড়ালেন আর তা বার করে মহাযাজকদের দাসকে আঘাত করে তার একটা কান কেটে দিলেন।
52 তখন যীশু তাকে বললেন, “তোমার তরোয়ালটি খাপে রাখ। যারা তরোয়াল চালায় তারা তরোয়ালের আঘাতেই মরবে। 53 তোমরা কি ভাব যে, আমি আমার পিতা ঈশ্বরের কাছে চাইতে পারি না? চাইলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে আমার জন্য বারোটিরও বেশী স্বর্গদূতবাহিনী পাঠিয়ে দেবেন। 54 কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে শাস্ত্রের বাণী কিভাবে পূর্ণ হবে, শাস্ত্রে যখন বলছে এভাবেই সব কিছু অবশ্যই ঘটবে?”
55 সেই সময় যীশু লোকদের বললেন, “লোকে যেমন ডাকাত ধরতে যায়, সেই ভাবে তোমরা ছোরা ও লাঠি নিয়ে আমায় ধরতে এসেছ? আমি তো প্রতিদিন মন্দিরের মধ্যে বসে শিক্ষা দিয়েছি; 56 কিন্তু তোমরা আমায় গ্রেপ্তার কর নি। যাইহোক্, এসব কিছুই ঘটল যেন ভাববাদীদের লেখা সকল কথাই পূর্ণ হয়।” তখন তাঁর শিষ্যরা তাঁকে ফেলে পালিয়ে গেলেন।
ইহুদী নেতাদের সামনে যীশু
(মার্ক 14:53-65; লূক 22:54-55, 63-71; যোহন 18:13-14, 19-24)
57 তারা যীশুকে গ্রেপ্তার করে মহাযাজক কায়াফার বাড়িতে নিয়ে এল, সেখানে ব্যবস্থার শিক্ষক ও ইহুদী নেতারা জড়ো হয়েছিলেন। 58 পিতর দূর থেকে যীশুর পিছনে পিছনে মহাযাজকের বাড়ির উঠোন পর্যন্ত গেলেন। শেষ পর্যন্ত কি হয় তা দেখবার জন্য তিনি ভেতরে গিয়ে দাসদের সঙ্গে বসলেন।
59 যীশুকে যেন মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে তাই যীশুর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী যোগাড় করার জন্য প্রধান যাজকরা ও ইহুদী মহাসভার সব সভ্যরা সেখানে সমবেত হয়েছিলেন। 60 অনেকে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবার জন্য সেখানে হাজির হয়েছিল, তবু যে সাক্ষ্য যীশুকে হত্যা করার জন্য দরকার তা পাওয়া গেল না। 61 শেষে দুজন লোক এসে বলল, “এই লোক বলেছিল, ‘আমি ঈশ্বরের মন্দির ভেঙে ফেলতে ও তা আবার তিন দিনের ভেতরে গেঁথে তুলতে পারি।’”
62 তখন মহাযাজক উঠে দাঁড়িয়ে যীশুকে বললেন, “তুমি কি এর জবাবে কিছুই বলবে না? এরা তোমার বিরুদ্ধে কি সাক্ষ্য দিচ্ছে?” 63 কিন্তু যীশু নীরব থাকলেন।
তখন মহাযাজক তাঁকে বললেন, “আমি তোমাকে জীবন্ত ঈশ্বরের নামে দিব্যি দিচ্ছি, আমাদের বল, তুমি কি সেই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র?”
64 যীশু তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, তুমিই একথা বললে। তবে আমি তোমাকে এটাও বলছি, এখন থেকে তোমরা মানবপুত্রকে মহাপরাক্রান্ত ঈশ্বরের ডানপাশে বসে থাকতে ও আকাশে মেঘের মধ্যে দিয়ে আসতে দেখবে।”
65 তখন মহাযাজক তাঁর পোশাক ছিঁড়ে ফেলে বললেন, “এ ঈশ্বরের নিন্দা করল, আমাদের আর অন্য সাক্ষ্যের দরকার কি? দেখ, তোমরা এখন ঈশ্বর নিন্দা শুনলে! 66 তোমরা কি মনে কর?”
এর উত্তরে তারা বলল, “এ মৃত্যুর যোগ্য।”
67 তখন তারা যীশুর মুখে থুথু দিল ও তাঁকে ঘুসি মারল। 68 কেউ কেউ তাঁকে চড় মারল ও বলল, “ওরে খ্রীষ্ট, আমাদের জন্য কিছু ভাববানী বল, কে তোকে মারল?”
পিতর যীশুকে স্বীকার করতে ভয় পেলেন
(মার্ক 14:66-72; লূক 22:56-62; যোহন 18:15-18, 25-27)
69 পিতর যখন বাইরে উঠোনে বসেছিলেন তখন একজন দাসী এসে বলল, “তুমিও গালীলে যীশুর সঙ্গে ছিলে।”
70 কিন্তু পিতর সবার সামনে একথা অস্বীকার করে বললেন, “তুমি কি বলছ, আমি তার কিছুই জানি না।”
71 তিনি যখন ফটকের সামনে গেলেন, তখন আর একজন দাসী তাকে দেখে সেখানে যারা ছিল তাদের বলল, “এ লোকটা নাসরতীয় যীশুর সঙ্গে ছিল।”
72 পিতর আবার অস্বীকার করলেন। তিনি দিব্যি করে বললেন, “আমি ঐ লোকটাকে মোটেই চিনি না।”
73 এর কিছু পরে, সেখানে যারা দাঁড়িয়েছিল তারা পিতরের কাছে এসে বলল, “তুমি ঠিক ওদেরই একজন কারণ তোমার কথার উচ্চারণের ধরণ দেখেই তা বুঝতে পারা যাচ্ছে।”
74 তখন পিতর দিব্যি করে শাপ দিয়ে বললেন, “আমি ঐ লোকটাকে আদৌ চিনি না।” আর তখনই মোরগ ডেকে উঠল। 75 তখন পিতরের মনে পড়ে গেল যীশু তাকে যা বলেছিলেন, “ভোরের মোরগ ডাকার আগেই তুমি তাকে তিনবার অস্বীকার করবে।” আর পিতর বাইরে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
ইহুদী নেতারা যীশুকে হত্যার চক্রান্ত করলেন
(মথি 26:1-5; লূক 22:1-2; যোহন 11:45-53)
14 দুদিন পরে নিস্তারপর্ব এবং খামিরবিহীন রুটির উৎসব পর্ব।[a] প্রধান যাজকরা এবং ব্যবস্থার শিক্ষকরা সেই সময়ে তাঁকে কেমন করে ছলে বলে গ্রেপ্তার করে মেরে ফেলতে পারে তারই চেষ্টা করছিলেন। 2 তাঁরা বললেন, “উৎসবের সময় আমরা এটা করব না, কারণ তাতে লোকেদের মধ্যে গণ্ডগোল বেধে যেতে পারে।”
একটি স্ত্রীলোক বিশেষ এক কাজ করল
(মথি 26:6-13; যোহন 12:1-8)
3 যখন তিনি বৈথনিয়াতে কুষ্ঠী শিমোনের বাড়িতে ছিলেন, তখন তিনি খেতে বসলে একটি স্ত্রীলোক শ্বেত পাথরের শিশিতে দামী সুগন্ধি জটামাংসীর তেল[b] নিয়ে এল। সে শিশিটি ভেঙ্গে তাঁর মাথায় সেই তেল ঢেলে দিল।
4 কিছু লোক এতে খুব রেগে গিয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল, “সুগন্ধি তেলের অপচয় করা হল কেন? 5 এই তেল তো তিনশো দীনারের বেশী দামে বিক্রি করা যেত এবং সেই টাকা গরীবদের দেওয়া যেত।” আর তারা স্ত্রীলোকটির কঠোর সমালোচনা করল।
6 কিন্তু যীশু বললেন, “ওকে যেতে দাও। তোমরা কেন ওকে দুঃখ দিচ্ছ? সে তো আমার জন্য ভাল কাজই করেছে। 7 কারণ গরীবরা তোমাদের কাছে সবসময় আসে, তোমরা যখন ইচ্ছা তাদের উপকার করতে পার; কিন্তু আমাকে তোমরা সবসময় পাবে না। 8 সে যা করতে পারত তাই করেছে। সে আগে থেকে সমাধির উদ্দেশ্যে আমার গায়ে সুগন্ধি তেল ঢেলে দিয়েছে। 9 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, জগতে যেখানেই আমার সুসমাচার প্রচার করা হবে, সেখানেই এই স্ত্রীলোকটির স্মরণার্থে তার কাজের কথা বলা হবে।”
যিহূদার যীশুর শত্রুদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি
(মথি 26:14-16; লূক 22:3-6)
10 তখন সেই বারোজনের মধ্যে একজন যিহূদা ঈষ্করিয়োতীয় প্রধান যাজকদের কাছে যীশুকে ধরিয়ে দেবার মতলবে গেল। 11 তারা এই কথা শুনে খুব খুশী হলো এবং তাকে টাকা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিল। তখন সে যীশুকে ধরিয়ে দেবার জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগল।
নিস্তারপর্বের ভোজ
(মথি 26:17-25; লূক 22:7-14, 21-23; যোহন 13:21-30)
12 খামিরবিহীন রুটির পর্বের প্রথম দিন, যে দিন ইহুদীরা মেষ উৎসর্গ করত, সেই দিন তাঁর শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “আমরা কোথায় গিয়ে আপনার জন্য ভোজ প্রস্তুত করব, আপনার ইচ্ছা কি?”
13 তখন তিনি শিষ্যদের মধ্যে দুজনকে পাঠিয়ে দিয়ে বললেন, “তোমরা শহরে যাও, একটা লোক তোমাদের সামনে পড়বে, যে এক কলসী জল নিয়ে আসবে, তাকে অনুসরণ কর। 14 সে যে বাড়িতে ঢুকবে সেই বাড়ির মালিককে বলবে, ‘গুরু বলেছেন, সেই অতিথির ঘর কোথায় যেখানে আমি আমার শিষ্যদের সাথে নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে পারি।’ 15 তখন সে ওপরের একটি বড় সাজানো গোছান ঘর দেখিয়ে দেবে। সেখানেই আমাদের জন্য ভোজ প্রস্তুত করো।”
16 পরে শিষ্যরা সেখান থেকে শহরে চলে এলেন। তিনি যে রকম বলেছিলেন তাঁরা ঠিক সেই রকম দেখতে পেলেন; আর নিস্তারপর্বের ভোজের আয়োজন সেখানেই করলেন।
17 সন্ধ্যে হলে সেই বারো জন প্রেরিতদের সাথে তিনি সেখানে এলেন। 18 যখন তাঁরা একসঙ্গে খেতে বসেছেন, যীশু বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা যারা আমার সঙ্গে খেতে বসেছ, তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে শত্রুর হাতে তুলে দেবে।”
19 এতে তাঁরা অত্যন্ত দুঃখ পেলেন এবং প্রত্যেকে এক এক করে জিজ্ঞেস করলেন, “সে কি আমি?”
20 তিনি তাদের বললেন, “এই বারোজনের মধ্যে যে জন আমার সঙ্গে বাটিতে রুটি ডুবিয়ে খাচ্ছে সেই সে জন। 21 মানবপুত্রের ব্যাপারে শাস্ত্রে যেমন লেখা আছে, ঠিক সেইভাবে তিনি চলে যাবেন। কিন্তু ধিক্ সেই লোকটিকে যে মানবপুত্রকে শত্রুর হাতে ধরিয়ে দেবে। সেই লোকটির জন্ম না হওয়াই ভাল ছিল।”
প্রভুর ভোজ
(মথি 26:26-30; লূক 22:15-20; 1 করিন্থীয় 11:23-25)
22 তাঁরা যখন খাচ্ছিলেন, সেই সময় তিনি রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন। রুটি খানি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে তা শিষ্যদের দিয়ে বললেন, “এটা নাও: এটা আমার শরীর।”
23 তারপর তিনি পেয়ালা তুলে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে শিষ্যদের হাতে দিলেন। আর তাঁরা সকলে তা থেকে পান করলেন। 24 তিনি তাঁদের বললেন, “এটা আমার নতুন নিয়মের রক্ত যা অনেকের জন্যই পাতিত হবে। 25 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, আমি আর দ্রাক্ষারস পান করব না, যতদিন পর্যন্ত না আমি ঈশ্বরের রাজ্যে সেই দিনে নতুন দ্রাক্ষারস পান না করি।”
26 এরপর তাঁরা স্তবগান করে জৈতুন পর্বতের দিকে গেলেন।
যীশুর শিষ্যরা সকলে তাঁকে ত্যাগ করবে
(মথি 26:31-35; লূক 22:31-34; যোহন 13:36-38)
27 যীশু তাদের বললেন, “তোমরা সকলে বিশ্বাস হারাবে, কারণ শাস্ত্রে লেখা আছে,
‘আমি মেষপালককে আঘাত করব
এবং মেষেরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে।’(A)
28 আমি বেঁচে উঠলে, তোমাদের আগে গালীলে যাব।”
29 পিতর তাঁকে বললেন, “সকলে বিশ্বাস হারালেও আমি কিন্তু মোটেই বিশ্বাস হারাব না।”
30 তখন যীশু তাঁকে বললেন, “আমি সত্যি বলছি, আজ এই রাতেই দুবার মোরগ ডাকার আগে তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে।”
31 কিন্তু পিতর আরও জোর দিয়ে বললেন, “যদি আপনার সঙ্গে মরতেও হয়, তবুও আমি আপনাকে অস্বীকার করব না।” বাকি সকলে সেই একই শপথ করলেন।
যীশুর একান্তে প্রার্থনা
(মথি 26:36-46; লূক 22:39-46)
32 তখন তাঁরা গেৎশিমানী নামে একস্থানে এলেন। আর যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “যতক্ষণ আমি প্রার্থনা করি, তোমরা এখানে বসে থাক।” 33 পরে তিনি পিতর, যাকোব এবং যোহনকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন, সে সময় ব্যথায় তাঁর আত্মা ব্যাকুল হয়ে উঠল। 34 তিনি তাঁদের বললেন, “আমার প্রাণ মৃত্যু পর্যন্ত উদ্বেগে আচ্ছন্ন। তোমরা এখানে থাক আর জেগে থাক।”
35 পরে কিছুটা এগিয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে তিনি প্রার্থনা করলেন যে যদি সম্ভব হয় তবে এই দুঃখের সময়টা তাঁর কাছ থেকে সরে যাক। 36 তিনি বললেন, “আব্বা, পিতা তোমার পক্ষে তো সবই সম্ভব। এই পানপাত্র[c] আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নাও। কিন্তু তবুও আমি যা চাই তা নয়, তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক্।”
37 পরে তিনি এসে দেখলেন তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন, আর তিনি পিতরকে বললেন, “শিমোন তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছ? তুমি একঘন্টাও জেগে থাকতে পারলে না? 38 তোমরা জেগে থাক এবং প্রার্থনা কর, যাতে প্রলুব্ধ না হও। আত্মা ইচ্ছুক কিন্তু শরীর দুর্বল।”
39 তিনি আবার গেলেন এবং একই কথা বলে প্রার্থনা করলেন। 40 তারপর ফিরে এসে দেখলেন তাঁরা ঘুমাচ্ছেন, কারণ ঘুমে তাদের চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। তাঁরা যীশুর দিকে তাকিয়ে তাঁকে কি বলবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
41 পরে তিনি তৃতীয়বার এসে তাঁদের বললেন, “তোমরা কি এখনও ঘুমোচ্ছ, বিশ্রাম করছ? যথেষ্ট হয়েছে। সময় হয়ে গেছে। দেখ, মানবপুত্রকে বিশ্বাসঘাতকতা করে পাপীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। 42 ওঠ! আমরা যাই! ঐ দেখ, যে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে সে আসছে।”
যীশুকে গ্রেপ্তার
(মথি 26:47-56; লূক 22:47-53; যোহন 18:3-12)
43 আর তিনি যখন কথা বলছিলেন, সেই সময় যিহূদা অর্থাৎ সেই বারোজন প্রেরিতের মধ্যে একজন এল। আর তার সাথে অনেক লোক তরোয়াল লাঠি নিয়ে এল। প্রধান যাজক, ব্যবস্থার শিক্ষক এবং বয়স্ক ইহুদী নেতারা এই লোকদের পাঠিয়েছিলেন।
44 সেই বিশ্বাসঘাতক যিহূদা তাদের এই সঙ্কেত দিয়েছিল; “যাকে আমি চুমু দেব, সেই ঐ লোকটি। তোমরা তাকে ধরে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাবে।” 45 সে উপস্থিত হয়েই যীশুর কাছে গিয়ে বলল, “গুরু!” বলেই তাঁকে চুমু দিল। 46 তখন তারা তাঁকে ধরে গ্রেপ্তার করল। 47 যারা তাঁর কাছে দাঁড়িয়েছিল তাদের মধ্যে একজন নিজের তরোয়াল বার করে মহাযাজকের চাকরকে আঘাত করে তার কান কেটে দিল।
48 তখন যীশু তাদের বললেন, “তোমরা লাঠি, তরোয়াল নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছ। মনে হচ্ছে আমি একজন দস্যু। 49 আমি প্রতিদিন মন্দিরে তোমাদের মধ্যে থেকেছি ও শিক্ষা দিয়েছি, তখন তো আমায় ধরলে না। কিন্তু শাস্ত্রের বাণী সফল হবেই।” 50 তখন তাঁর সব শিষ্যেরা তাঁকে ফেলে পালিয়ে গেলেন।
51 আর একজন যুবক উলঙ্গ শরীরে একটি চাদর জড়িয়ে তাঁকে অনুসরণ করল। তারা তাকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করল। 52 কিন্তু সে চাদরটি ফেলে উলঙ্গ অবস্থায় পালিয়ে গেল।
ইহুদী নেতাদের সামনে যীশু
(মথি 26:57-68; লূক 22:54-55, 63-71; যোহন 18:13-14, 19-24)
53 তখন তারা যীশুকে মহাযাজকের কাছে নিয়ে এল। প্রধান যাজকরা, বয়স্ক ইহুদী নেতারা এবং ব্যবস্থার শিক্ষকরা সকলে এক জায়গায় জড়ো হলেন। 54 আর পিতর দূরে দূরে থেকে যীশুর পেছনে যেতে যেতে মহাযাজকের উঠোন পর্যন্ত গেলেন এবং রক্ষীদের সঙ্গে বসে আগুন পোহাতে লাগলেন।
55 তখন প্রধান যাজকরা এবং মহাসভার সকলেই এমন একজন সাক্ষী খুঁজছিলেন যার কথার জোরে যীশুকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা যায়; কিন্তু তেমন সাক্ষ্য তাঁরা পেলেন না। 56 কারণ অনেকে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিল বটে কিন্তু তাদের সাক্ষ্য মিলল না।
57 তখন কিছু লোক তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে বলল, 58 “আমরা তাঁকে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের হাতে তৈরী এই মন্দিরটি ভেঙে ফেলব এবং তিন দিনের মধ্যে মানুষের হাত দিয়ে তৈরী নয় এমনই একটি মন্দির আমি গড়ে তুলব।’” 59 কিন্তু এতেও তাদের সাক্ষ্যের প্রমাণ মিলল না।
60 তখন মহাযাজক সকলের সামনে দাঁড়িয়ে যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি কিছুই উত্তর দেবে না? এই সমস্ত লোকরা তোমার বিরুদ্ধে কি সাক্ষ্য দিচ্ছে?” 61 কিন্তু তিনি চুপচাপ থাকলেন, কোন উত্তর দিলেন না।
আবার মহাযাজক তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি সেই পরম খ্রীষ্ট পরম ধন্য, ঈশ্বরের পুত্র?”
62 যীশু বললেন, “হ্যাঁ, আমিই ঈশ্বরের পুত্র। তোমরা একদিন মানবপুত্রকে ঈশ্বরের ডানপাশে বসে থাকতে আকাশের মেঘে আবৃত হয়ে আসতে দেখবে।”[d]
63 তখন মহাযাজক তাঁর পোশাক ছিঁড়ে বললেন, “আমাদের সাক্ষীর আর কি প্রয়োজন? 64 তোমরা তো ঈশ্বর নিন্দা শুনলে। তোমাদের কি মনে হয়?” তারা সকলে তাঁকে দোষী স্থির করে বলল, “এঁর মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।” 65 তখন কেউ কেউ তাঁর মুখে থুথু ছিটিয়ে দিল, তাঁর মুখ ঢেকে ঘুষি মারল এবং বলতে লাগল, “ভাববাণী করে বল তো, কে তোমাকে ঘুষি মারল?” পরে রক্ষীরা তাঁকে মারতে মারতে নিয়ে গেল।
যীশুকে স্বীকার করতে পিতর ভয় পেলেন
(মথি 26:69-75; লূক 22:56-62; যোহন 18:15-18, 25-27)
66 পিতর যখন নীচে উঠোনে ছিলেন, তখন মহাযাজকের একজন চাকরানী এল। 67 সে পিতরকে আগুন পোহাতে দেখে তাঁর দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমিও তো নাসরতীয় যীশুর সঙ্গে ছিলে?”
68 কিন্তু পিতর অস্বীকার করে বললেন, “আমি জানি না, আর বুঝতেও পারছি না তুমি কি বল।?” এই বলে তিনি বারান্দার দিকে যেতেই একটা মোরগ ডেকে উঠল।[e]
69 কিন্তু চাকরানীটা তাঁকে দেখে, যারা তার কাছে দাঁড়িয়েছিল তাদের বলতে লাগল, “এই লোকটি ওদেরই একজন!” 70 তিনি আবার অস্বীকার করলেন।
কিছুক্ষণ বাদে যারা সেখানে দাঁড়িয়েছিল তারা পিতরকে বলল, “সত্যি তুমি তাদের একজন, কারণ তুমি গালীলের লোক।”
71 তিনি অভিশাপ দিয়ে শপথ করে বলতে লাগলেন, “তোমরা যে লোকটির কথা বলছ, তাকে আমি চিনি না।”
72 আর সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় বার মোরগটি ডেকে উঠল, তাতে যীশু যে কথা বলেছিলেন, “মোরগটি দুবার ডাকার আগে তুমি তিনবার আমাকে অস্বীকার করবে” সে কথা পিতরের মনে পড়ল আর তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International