Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
মথি 23

যীশু ধর্মীয় নেতাদের সমালোচনা করলেন

(মার্ক 12:38-40; লূক 11:37-52; 20:45-47)

23 এরপর যীশু লোকদের ও তাঁর শিষ্যদের বললেন, “মোশির বিধি-ব্যবস্থার ব্যাখ্যা দেবার অধিকার ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীদের আছে। তাই তারা যা যা বলে, তা তোমরা করো এবং মেনে চলো: কিন্তু তারা যা করে তোমরা তা করো না। আমি একথা বলছি, কারণ তারা যা বলে তারা তা করে না। তারা ভারী ভারী বোঝা যা বওয়া কঠিন, তা লোকদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়; কিন্তু সেগুলো সরাবার জন্য নিজেরা একটা আঙ্গুলও নাড়াতে চায় না।

“তারা যা কিছু করে সবই লোক দেখানোর জন্য। তারা শাস্ত্রের পদ লেখা তাবিজ বড় করে তৈরী করে, আর নিজেদের ধার্মিক দেখাবার জন্য পোশাকের প্রান্তে লম্বা লম্বা ঝালর লাগায়। তারা ভোজসভায় সম্মানের জায়গায় এবং সমাজ-গৃহে গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসতে ভালবাসে। তারা হাটে-বাজারে লোকদের কাছ থেকে সম্মানসূচক অভিবাদন ও ‘গুরু’ ডাক শুনতে খুবই ভালবাসে।

“কিন্তু তোমরা দেখো, লোকে যেন তোমাদের ‘শিক্ষক’ বলে না ডাকে, কারণ একজনই তোমাদের শিক্ষক, আর তোমরা সকলে পরস্পর ভাই বোন। এই পৃথিবীতে কাউকে ‘পিতা’ বলে ডেকো না, কারণ তোমাদের পিতা একজনই, তিনি স্বর্গে থাকেন। 10 কেউ যেন তোমাদের আচার্য্য বলে না ডাকে, কারণ তোমাদের আচার্য্য একজনই, তিনি খ্রীষ্ট। 11 তোমাদের মধ্যে যে সব থেকে শ্রেষ্ঠ, সে তোমাদের সেবক হবে। 12 যে কেউ নিজেকে বড় করে, তাকে নত করা হবে। আর যে কেউ নিজেকে নত করে, তাকে উন্নত করা হবে।

13 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীর দল, তোমরা ভণ্ড! তোমরা লোকদের জন্য স্বর্গরাজ্যের দরজা বন্ধ করে রাখছ, নিজেরাও তাতে প্রবেশ করো না, আর যারা প্রবেশ করতে চেষ্টা করছে তাদেরও প্রবেশ করতে দিচ্ছ না। 14 [a]

15 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীর দল, তোমরা ভণ্ড! একজন লোককে নিজেদের ধর্মমতে নিয়ে আসার জন্য তোমরা জলে স্থলে ঘুরে বেড়াও। আর সে যখন তোমাদের ধর্মে আসে, তখন তোমরা নিজেদের চেয়ে তাকে দ্বিগুণ নরকের উপযুক্ত করে তোল।

16 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীর দল, তোমরা ভণ্ড! তোমরা নিজেরা অন্ধ অথচ অন্যদের পথ দেখাও। তোমরা বলে থাক, ‘কেউ যদি মন্দিরের দিব্যি দেয়, তবে তাতে কিছু এসে যায় না। কিন্তু কেউ যদি মন্দিরের সোনার দিব্যি দেয়, তবে সে সেই শপথে বাঁধা পড়ল; তাকে অবশ্যই তা পূরণ করতে হবে।’ 17 মূর্খ অন্ধের দল! কোনটা শ্রেষ্ঠ, মন্দিরের সোনা অথবা মন্দির, যা সেই সোনাকে পবিত্র করে?

18 “তোমরা আবার একথাও বলে থাক, ‘কেউ যদি যজ্ঞবেদীর নামে শপথ করে, তাহলে সেই শপথ রক্ষা করার জন্য তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু কেউ যদি যজ্ঞবেদীর ওপর যে নৈবেদ্য থাকে তার নামে শপথ করে, তবে তার শপথ রক্ষা করার জন্য সে দায়বদ্ধ রইল।’ 19 তোমরা অন্ধের দল! কোনটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ, যজ্ঞবেদীতে নৈবেদ্য অথবা বেদী, যা তার ওপরের নৈবেদ্যকে পবিত্র করে? 20 তাই যখন কেউ যজ্ঞবেদীর নামে শপথ করে, তখন সে যজ্ঞবেদীর ওপর যা কিছু থাকে সে সব কিছুরই বিষয়ে শপথ করে। 21 আর কেউ যখন মন্দিরের নামে শপথ করে, তখন সে জায়গা ও তার মধ্যে যিনি থাকেন, তাঁর নামেও শপথ করে। 22 আর যদি কোন লোক স্বর্গের নামে শপথ করে, তখন সে ঈশ্বরের সিংহাসন ও যিনি সেই সিংহাসনে বসে আছেন তাঁর নামেও শপথ করে।

23 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীর দল, তোমরা ভণ্ড! তোমরা পুদিনা, মৌরী ও জিরার দশভাগের একভাগ ঈশ্বরকে দিয়ে থাক অথচ ন্যায়, দয়া ও বিশ্বস্ততা, ব্যবস্থার এই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা অবহেলা করে থাক। আগের ঐ বিষয়গুলি পালন করার সঙ্গে সঙ্গে পরের এই বিষয়গুলি পালন করাও তোমাদের উচিত। 24 তোমরা অন্ধ পথপ্রদর্শক, তোমরা মশা ছেঁকে ফেল, কিন্তু উট গিলে থাক।

25 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীর দল, তোমরা ভণ্ড! তোমরা থালা বাটির বাইরেটা পরিষ্কার করে থাক, কিন্তু ভেতরটা থাকে লোভ ও আত্মতোষণে ভরা। 26 অন্ধ ফরীশী! প্রথমে তোমাদের পেয়ালার ভেতরটা পরিষ্কার কর, তাহলে গোটা পেয়ালার ভেতরে ও বাইরে উভয় দিকই পরিষ্কার হবে।

27 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীর দল, তোমরা ভণ্ড! তোমরা চুনকাম করা কবরের মতো, যার বাইরেটা দেখতে খুব সুন্দর, কিন্তু ভেতরে মরা মানুষের হাড়গোড় ও সব রকমের পচা জিনিস রয়েছে। 28 তোমরা ঠিক সেইরকম, বাইরের লোকদের চোখে ধার্মিক, কিন্তু ভেতরে ভণ্ডামী ও দুষ্টতায় পূর্ণ।

29 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীর দল, তোমরা ভণ্ড! তোমরা ভাববাদীদের জন্য স্মৃতিসৌধ গাঁথ ও ঈশ্বর ভক্ত লোকদের কবর সাজাও, 30 আর বলে থাক, ‘আমরা যদি আমাদের পূর্বপুরুষদের সময়ে থাকতাম, তবে ভাববাদীদের হত্যা করার জন্য তাদের সাহায্য করতাম না।’ 31 এতে তোমরা নিজেদের বিষয়েই সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, ভাববাদীদের যারা হত্যা করেছিল তোমরা তাদেরই বংশধর। 32 তাহলে যাও তোমাদের পূর্বপুরুষরা যা শুরু করে গেছে তোমরা তার বাকি কাজ শেষ করো।

33 “সাপ, বিষধর সাপের বংশধর! কি করে তোমরা ঈশ্বরের হাত থেকে রক্ষা পাবে? তোমরা দোষী প্রমাণিত হবে ও নরকে যাবে। 34 তাই আমি তোমাদের বলছি, আমি তোমাদের কাছে ভাববাদী, জ্ঞানীলোক ও শিক্ষকদের পাঠাচ্ছি। তোমরা তাদের কারো কারোকে হত্যা করবে, আর কাউকে বা ক্রুশে দেবে, কাউকে বা তোমরা সমাজ-গৃহে চাবুক মারবে। এক শহর থেকে অন্য শহরে তোমরা তাদের তাড়া করে ফিরবে।

35 “এইভাবে নির্দোষ হেবলের রক্তপাত থেকে শুরু করে বরখায়ার পুত্র সখরিয়, যাকে তোমরা মন্দিরের পবিত্র স্থান ও যজ্ঞবেদীর মাঝখানে হত্যা করেছিলে, সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত যত নির্দোষ ব্যক্তির রক্ত মাটিতে ঝরে পড়েছে, সেই সমস্তের দায় তোমাদের ওপরে পড়বে। 36 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এই যুগের লোকদের ওপর ঐ সবের শাস্তি এসে পড়বে।

জেরুশালেমের লোকদের উদ্দেশ্যে যীশুর সতর্কবাণী

(লূক 13:34-35)

37 “হায় জেরুশালেম, জেরুশালেম! তুমি, তুমিই ভাববাদীদের হত্যা করে থাক, আর তোমার কাছে ঈশ্বর যাদের পাঠান তাদের পাথর মেরে থাক। মুরগী যেমন তার বাচ্চাদের ডানার নীচে জড়ো করে, তেমনি আমি তোমার লোকদের কতবার আমার কাছে জড়ো করতে চেয়েছি, কিন্তু তোমরা রাজী হও নি। 38 এখন তোমাদের মন্দির পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকবে। 39 বাস্তবিক, আমি তোমাদের বলছি, যে পর্যন্ত না তোমরা বলবে, ‘ধন্য, তিনি যিনি প্রভুর নামে আসছেন, সে পর্যন্ত তোমরা আর আমাকে দেখতে পাবে না।’”(A)

লূক 20-21

ইহুদী নেতারা যীশুকে প্রশ্ন করলেন

(মথি 21:23-27; মার্ক 11:27-33)

20 একদিন যীশু যখন মন্দিরে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচার করছিলেন, সেই সময় প্রধান যাজকরা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ইহুদী নেতারা একজোট হয়ে তাঁর কাছে এল। তারা তাঁকে প্রশ্ন করল, “কোন ক্ষমতায় তুমি এসব করছ তা আমাদের বল। কে তোমাকে এই অধিকার দিয়েছে?”

যীশু তাদের বললেন, “আমিও তোমাদের একটা প্রশ্ন করব। বলো তো যোহন বাপ্তিস্ম দেবার অধিকার ঈশ্বরের কাছে থেকে পেয়েছিলেন না মানুষের কাছ থেকে?”

তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করল, “আমরা যদি বলি, ‘ঈশ্বরের কাছ থেকে,’ তাহলে ও বলবে ‘তাহলে তোমরা তাঁকে বিশ্বাস করো নি কেন?’ কিন্তু আমরা যদি বলি, ‘মানুষের কাছ থেকে,’ তাহলে লোকেরা আমাদের পাথর ছুঁড়ে মারবে, কারণ তারা যোহনকে একজন ভাববাদী বলেই বিশ্বাস করে।” তাই তারা বলল, “আমরা জানি না।”

তখন যীশু তাদের বললেন, “তাহলে আমিও তোমাদের বলব না, কোন্ অধিকারে আমি এসব করছি।”

ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে পাঠালেন

(মথি 21:33-46; মার্ক 12:1-12)

যীশু এই দৃষ্টান্তটি লোকদের বললেন, “একজন লোক একটা দ্রাক্ষা ক্ষেত করে তা চাষীদের কাছে ইজারা দিয়ে বেশ কিছু দিনের জন্য বিদেশে গেল। 10 ফলের সময় হলে সে তার একজন কর্মচারীকে সেই চাষীদের কাছে পাঠাল, যেন তারা ক্ষেতের ফসলের কিছু ভাগ দেয়; কিন্তু চাষীরা সেই কর্মচারীকে মারধর করে খালি হাতে তাড়িয়ে দিল। 11 এরপর সে তার আর একজন কর্মচারীকে পাঠাল; কিন্তু তারা তাকেও মারধর করল। সেই কর্মচারীর প্রতি তারা জঘন্য ব্যবহার করে তাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিল। 12 পরে সে তার তৃতীয় কর্মচারীকে পাঠাল, চাষীরা তাকেও ক্ষতবিক্ষত করে বার করে দিল।

13 “তখন সেই দ্রাক্ষা ক্ষেতের মালিক বলল, ‘আমি এখন কি করব? আমি আমার প্রিয় পুত্রকে পাঠাব, হয়তো তারা তাকে মান্য করবে।’ 14 কিন্তু সেই চাষীরা সেই ছেলেকে দেখতে পেয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বলল, ‘এই হচ্ছে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী, এস একে আমরা খুন করি, তাহলে আমরাই হব এই সম্পত্তির মালিক।’ 15 এই বলে তারা তাকে দ্রাক্ষা ক্ষেতের বাইরে টেনে নিয়ে গিয়ে হত্যা করল।

“এখন সেই ক্ষেতের মালিক তাদের প্রতি কি করবে? 16 সে এসে ঐ চাষীদের মেরে ফেলবে ও ক্ষেত অন্য চাষীদের হাতে দেবে।”

এই কথা শুনে তারা সবাই বলল, “এরকম যেন না হয়!” 17 কিন্তু যীশু তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তাহলে এই যে কথা শাস্ত্রে লেখা আছে এর অর্থ কি,

‘রাজমিস্ত্রিরা যে পাথরটা বাতিল করে দিল,
    সেটাই হয়ে উঠল কোণের প্রধান পাথর?’[a]

18 যে কেউ সেই পাথরের ওপর পড়বে, সে ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে যাবে, আর যার ওপর সেই পাথর পড়বে সে ভেঙে গুঁড়ো হয়ে যাবে।”

19 প্রধান যাজকরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা সেই সময় থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য উপায় খুঁজতে লাগল; কিন্তু তারা জনসাধারণকে ভয় পাচ্ছিল। তারা যীশুকে গ্রেপ্তার করতে চাইছিল কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল যে যীশু তাদের বিরুদ্ধেই ঐ দৃষ্টান্তটি দিয়েছিলেন।

ইহুদী নেতারা যীশুকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করল

(মথি 22:15-22; মার্ক 12:13-17)

20 তাই তারা তাঁর ওপর নজর রাখতে কয়েকজন লোককে গুপ্তচররূপে তাঁর কাছে পাঠাল, যারা ভাল লোক সেজে তাঁর কাছে গেল যাতে করে যীশুর কথা ধরে তাঁকে রোমীয় রাজ্যপালের ক্ষমতা ও বিচারের অধীনে তুলে দিতে পারে। 21 তাই তারা তাঁকে একটি কথা জিজ্ঞেস করল, “গুরু, আমরা জানি যে, যা ন্যায় আপনি সেই কথাই বলেন ও সেই শিক্ষাই দেন; আর আমরা এও জানিযে আপনি কারোর প্রতি পক্ষপাত করেন না, কিন্তু ঈশ্বরের পথের বিষয়ে সত্য শিক্ষাই দেন। 22 আচ্ছা, কৈসরকে কর দেওয়া কি আমাদের উচিত?”

23 যীশু তাদের চালাকি ধরে ফেলেছিলেন, তাই বললেন, 24 “আমায় একটা রূপোর টাকা দেখাও। এতে কার মূর্ত্তি ও কার নাম আছে?”

তারা বলল, “কৈসরের!”

25 তখন তিনি তাদের বললেন, “তাহলে কৈসরের যা তা কৈসরকে দাও, আর ঈশ্বরের যা তা ঈশ্বরকে দাও।”

26 সমস্ত লোকের সামনে যীশু যা বললেন, তাতে তারা তাঁর কোন ভুল ধরতে পারল না। তাঁর দেওয়া উত্তরে তারা বিস্ময়ে হতবাক্ হয়ে গেল।

কিছু সদ্দূকীর যীশুকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা

(মথি 22:23-33; মার্ক 12:18-27)

27 তখন সদ্দূকী সম্প্রদায়ের কয়েকজন লোক যীশুর কাছে এল। এই সদ্দূকীরা বলত, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান বলে কিছু নেই। তারা এসে যীশুকে প্রশ্ন করল, 28 “গুরু, মোশি আমাদের জন্য লিখে রেখে গেছেন যে নিঃসন্তান অবস্থায় যদি কোন লোক তার স্ত্রীকে রেখে মারা যায়, তবে তার ভাই সেই স্ত্রীকে বিয়ে করে ভাইয়ের হয়ে তার বংশ রক্ষা করবে।[b] 29 এরকম একজন যারা সাত ভাই ছিল, তাদের প্রথম ভাই বিয়ে করার পর নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেল। 30 দ্বিতীয় ভাই তখন সেই বিধবাকে বিয়ে করল। 31 এরপর তৃতীয় ভাই, এইভাবে সাত ভাই-ই একজন স্ত্রীকে বিয়ে করল আর তারা সকলেই নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেল। 32 পরে সেই স্ত্রীও মারা গেল। 33 এখন পুনরুত্থানের সময়ে সে কার স্ত্রী হবে? কারণ সাত জনই তো তাকে বিয়ে করেছিল?”

34 তখন যীশু তাদের বললেন, “এই যুগের লোকরাই বিয়ে করে আর তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। 35 কিন্তু মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়ে আগামী যুগের যোগ্য বলে যাদের গন্য করা হবে, তারা বিয়ে করবে না বা তাদের বিয়ে দেওয়াও হবে না। 36 তারা আর মরতে পারে না, কারণ তারা স্বর্গদূতদের মতো, মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছে বলে তারা ঈশ্বরের সন্তান। 37 জ্বলন্ত ঝোপের[c] বিষয়ে যেখানে লেখা হয়েছে, সেখানে মোশিও দেখিয়েছেন যে মৃতেরা পুনরুত্থিত হয়। সেখানে মোশি প্রভু ঈশ্বরকে ‘অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস‌্হাকের ঈশ্বর, ও যাকোবের ঈশ্বর(A) বলে উল্লেখ করেছেন।’ 38 ঈশ্বর মৃত লোকদের ঈশ্বর নন, তিনি জীবিত লোকদেরই ঈশ্বর। যারা আগামী যুগের যোগ্য লোক তারা সকলেই ঈশ্বরের চোখে জীবিত থাকে।”

39 ব্যবস্থার শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকজন বলল, “গুরু, আপনি ঠিকই বলেছেন!” 40 এরপর তাঁকে আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস কারো হল না।

খ্রীষ্ট কি দায়ূদের পুত্র?

(মথি 22:41-46; মার্ক 12:35-37)

41 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, “তারা কি করে বলে যে খ্রীষ্ট রাজা দায়ূদের পুত্র? 42 কারণ গীতসংহিতায় দায়ূদ নিজেই বলেছেন,

‘প্রভু পরমেশ্বর আমার প্রভুকে বললেন,
43 যতদিন না আমি তোমার শত্রুদের তোমার পাদপীঠে পরিণত করি,
    তুমি আমার ডানদিকে বস।’(B)

44 দায়ূদ তো খ্রীষ্টকে এইভাবে ‘প্রভু’ বলে সম্বোধন করলেন, তাহলে খ্রীষ্ট কিভাবে তাঁর সন্তান হলেন?”

ব্যবস্থার শিক্ষকদের প্রতি সতর্কবাণী

(মথি 23:1-36; মার্ক 12:38-40; লূক 11:37-54)

45 সমস্ত লোক যখন এসব কথা শুনছিল, তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, 46 “ব্যবস্থার শিক্ষকদের থেকে সাবধান। তারা লম্বা লম্বা পোশাক পরে ঘুরে বেড়াতে ও হাটে বাজারে লোকদের কাছ থেকে সম্মান পেতে ভালবাসে; আর সমাজগৃহে বিশেষ সম্মানের স্থানে বসতে ও ভোজসভায় সম্মানের আসন দখল করতেও ভালবাসে। 47 তারা একদিকে লোক দেখানো লম্বা লম্বা প্রার্থনা করে, অপরদিকে বিধবাদের সর্বস্ব গ্রাস করে, এদের ভয়ঙ্কর শাস্তি হবে।”

প্রকৃত দান

(মার্ক 12:41-44)

21 যীশু তাকিয়ে দেখলেন, ধনী লোকেরা মন্দিরের দানের বাক্সে তাদের দান রাখছে। এরই মাঝে একজন অতি গরীব বিধবা তাতে খুব ছোট্ট ছোট্ট তামার মুদ্রা রাখল। তখন যীশু বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এই গরীব বিধবা অন্য আর সকলের থেকে অনেক বেশী দান করল। আমি একথা বলছি কারণ অন্য আর সব লোক তাদের সম্পত্তির বাড়তি অংশ ঐ বাক্সে ফেলে গেল, কিন্তু এই বিধবার অভাব থাকা সত্ত্বেও জীবন ধারণের জন্য তার যা সম্বল ছিল, তার সবটাই দিয়ে গেল।”

মন্দির ধ্বংস

(মথি 24:1-14; মার্ক 13:1-13)

শিষ্যদের মধ্যে কেউ কেউ সেই মন্দিরের বিষয়ে এই মন্তব্য করলেন যে, “সুন্দর সুন্দর পাথর দিয়ে ও ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দানের জিনিস দিয়ে এই মন্দিরকে কেমন সাজানো হয়েছে!”

যীশু তাঁদের বললেন, “এই যে সব জিনিস তোমরা দেখছ, সময় আসবে যখন এর একটা পাথর আর একটার ওপর থাকবে না, সব ভেঙে ফেলা হবে।”

শিষ্যরা তখন যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “গুরু এসব কখন ঘটবে? এবং কি চিহ্ন দেখে বোঝা যাবে এসব ঘটবার সময় এসে গেছে?”

যীশু বললেন, “সাবধান! কেউ যেন তোমাদের না ভোলায়, কারণ অনেকেই আমার নাম ধারণ করে আসবে আর বলবে, ‘আমিই তিনি’ আর তারা বলবে, ‘সময় ঘনিয়ে এসেছে।’ তাদের অনুসারী হয়ো না! তোমরা যখন যুদ্ধ ও বিদ্রোহের কথা শুনতে পাবে, তাতে ভয় পেও না, কারণ প্রথমে নিশ্চয়ই এসব হবে; কিন্তু তখনও শেষ সময় আসতে বাকী থাকবে!”

10 এরপর তিনি তাদের বললেন, “এক জাতি আর এক জাতির বিরুদ্ধে, এক রাজ্য আর এক রাজ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। 11 মহা ভূমিকম্প হবে, বিভিন্ন জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দেবে; আর আকাশের বুকে ভয়াবহ ঘটনা ও মহৎ‌ চিহ্ন দেখতে পাবে।

12 “কিন্তু এসব ঘটনা ঘটার আগে, তারা তোমাদের গ্রেপ্তার করবে, তোমাদের প্রতি নির্যাতন করবে। তারা বিচারের জন্য তোমাদের সমাজ-গৃহে সঁপে দেবে ও তোমাদের কারাগারে ভরবে। আমারই কারণে তারা তোমাদের রাজাদের ও রাজ্যপালদের সামনে টেনে নিয়ে যাবে। 13 তাতে আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেবার জন্য তোমরা সুযোগ পাবে। 14 তোমরা মনের দিক থেকে তৈরী থেকো; আত্মপক্ষ সমর্থন করতে তখন কি বলবে, কি জবাবদিহি করবে তার জন্য চিন্তা করো না। 15 কারণ সেই সময় আমি তোমাদের বুদ্ধি দেব, তোমাদের মুখে এমন কথা যোগাব যে তোমাদের বিপক্ষরা তা অস্বীকার করতে পারবে না আবার তার প্রতিবাদও করতে পারবে না। 16 কিন্তু তোমাদের আপন বাবা-মা ভাই ও আত্মীয় বন্ধুরাই তোমাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে তোমাদের ধরিয়ে দেবে; এমন কি তোমাদের কাউকে কাউকে মেরেও ফেলবে। 17 আমারই কারণে তোমরা সকলের কাছে ঘৃণার পাত্র হবে। 18 কিন্তু তোমাদের মাথায় একটা চুলও নষ্ট হবে না। 19 তোমরা যদি বিশ্বাসে স্থির থাক, তবেই তোমাদের প্রাণ রক্ষা পাবে।

জেরুশালেমের ধ্বংসের দিন

(মথি 24:15-21; মার্ক 13:14-19)

20 “তোমরা যখন দেখবে যে সৈন্যসামন্তরা জেরুশালেমকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে, তখন বুঝবে যে তার ধ্বংসের সময় ঘনিয়ে এসেছে। 21 তখন যারা যিহূদিয়ায় থাকবে তারা যেন পালিয়ে যায়। যারা জেরুশালেমে থাকবে তারা যেন অবশ্যই নগর ছেড়ে পালায়; আর যারা গ্রামে থাকবে তারা যেন নগরে না আসে। 22 কারণ এই দিনগুলো হচ্ছে শাস্তির দিন, যা শাস্ত্রের বাণী অনুসারে পূর্ণ হবে। 23 ঐ দিনগুলোতে যাদের প্রসবকাল ঘনিয়ে এসেছে ও যাদের কোলে দুধের বাচ্চা আছে, সেই সব স্ত্রীলোকদের ভয়ঙ্কর দুর্দশা হবে। আমি একথা বলছি কারণ দেশে মহাসংকট আসছে ও এই লোকদের ওপর ঈশ্বরের ক্রোধ নেমে আসছে। 24 তরবারির আঘাতে তারা মারা পড়বে, আর তাদের বন্দী করে সকল জাতির কাছে নিয়ে যাওযা হবে। যতদিন না অইহুদীদের নিরুপিত সময় পূর্ণ হচ্ছে, জেরুশালেম অইহুদীদের দ্বারা অবজ্ঞা ভরে পদদলিত হবে।

ভয় করো না

(মথি 24:29-31; মার্ক 13:24-27)

25 “তখন চাঁদ, সূর্য্য ও তারাগুলিতে অনেক বিস্ময়কর জিনিস দেখা যাবে। পৃথিবীতে সমস্ত জাতি হতাশায় ভুগবে। তারা সমুদ্র গর্জন শুনে ও প্রচণ্ড ঢেউ দেখে ভয়ে বিহ্বল হয়ে পড়বে। 26 পৃথিবীতে যে ভয়ঙ্কর অবস্থা আসছে তার কথা ভেবে ভয়েতে লোকে অজ্ঞান হয়ে যাবে, কারণ আকাশের সব শক্তিগুলি ওলোট-পালট হয়ে যাবে। 27 এর পরই তারা মহাপরাক্রমে ও মহিমামণ্ডিত হয়ে মানবপুত্রকে মেঘের মধ্যে আসতে দেখবে। 28 এসব ঘটনা ঘটতে দেখলে মাথা তুলে উঠে দাঁড়িও, কারণ জেনো যে তখন তোমাদের মুক্তি আসছে!”

আমার বাক্য চিরজীবি

(মথি 24:32-35; মার্ক 13:28-31)

29 এরপর যীশু তাদের একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, “ডুমুর গাছ ও অন্যান্য গাছের দিকে দেখ। 30 যে মুহূর্তে তাদের নতুন পাতা গজায়, তা দেখে তোমরা বুঝতে পার যে গ্রীষ্মকাল এসে পড়ল বলে। 31 ঠিক সেই রকম এইসব ঘটতে দেখলে তোমরা বুঝবে যে ঈশ্বরের রাজ্য এসে পড়েছে।

32 “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যতক্ষণ না এসব ঘটছে, এই বংশ লোপ পাবে না। 33 আকাশ ও পৃথিবী লোপ পাবে, কিন্তু আমার বাক্য কখনও লোপ পাবে না।

সর্বদাই প্রস্তুত থেকো

34 “তোমরা সতর্ক থেকো। উচ্ছৃঙ্খল আমোদ-প্রমোদে, মত্ততায়, জাগতিক ভাবনা চিন্তায় তোমাদের মন যেন আচ্ছন্ন না হয়ে পড়ে, আর সেই দিন হঠাৎ‌ ফাঁদের মতো তোমাদের ওপর এসে না পড়ে। 35 বাস্তবিক, পৃথিবীর সব লোকের জন্যই সেই দিন আসবে। 36 তাই সব সময় সজাগ থেকো, আর প্রার্থনা করো যেন যাই ঘটুক না কেন তা কাটিয়ে উঠবার ও মানবপুত্রের সামনে দাঁড়াবার শক্তি তোমাদের থাকে।”

37 তিনি মন্দিরের মধ্যে প্রতিদিন শিক্ষা দিতেন কিন্তু সন্ধ্যা হলে রাতে থাকার জন্য জৈতুন পর্বতে চলে যেতেন। 38 প্রতিদিন খুব ভোরে উঠে লোকেরা তাঁর কথা শোনার জন্য মন্দিরে যেত।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International