Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
সখরিয় 1-7

ঈশ্বর তাঁর লোকেদের প্রত্যাবর্তন চান

বেরিখিয়ের পুত্র সখরিয় প্রভুর কাছ থেকে এই বার্তা পেয়েছিলেন। এটা ঘটেছিল পারস্যের রাজা দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরের অষ্টম মাসে (সখরিয় ছিলেন বেরিখিয়ের পুত্র, যিনি ছিলেন ভাববাদী ইদ্দোর পুত্র) বার্তাটি ছিল:

প্রভু তোমাদের পূর্বপুরুষের উপর খুব ক্রোধান্বিত হয়েছিলেন। সুতরাং তোমরা অবশ্যই লোকেদের এই কথাগুলি বলবে। প্রভু বলেন, “তোমরা আমার কাছে ফিরে এস, তাহলে আমিও তোমাদের কাছে ফিরব।” সর্বশক্তিমান প্রভুই এই কথা বলেছেন।

প্রভু বলেছেন, “তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের মতো হয়ো না। অতীতে, ভাববাদীরা তাদের কাছে বলতেন, ‘সর্বশক্তিমান প্রভু চান তোমরা তোমাদের অসৎ‌ জীবনযাপনের ধারা বদলে দাও আর কোন মন্দ কাজ করো না!’ কিন্তু তোমাদের পূর্বপুরুষরা আমার কথা শোনেনি।” প্রভু এই কথাগুলি বলেছেন।

ঈশ্বর বলেছেন, “তোমাদের পূর্বপুরুষরা আজ আর নেই। সেই ভাববাদীরা চিরকালের জন্য বেঁচে থাকেনি। ঐ ভাববাদীরা আমার দাস ছিল। আমার বিধি ও শিক্ষামালা সম্বন্ধে তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে জানাবার জন্য আমি তাদের ব্যবহার করতাম। অবশেষে, তোমাদের পূর্বপুরুষরা শিক্ষা গ্রহণ করে বলেছিল, ‘প্রভু হলেন সর্বশক্তিমান, তিনি যা বলেছিলেন তাই-ই করেছেন। আমাদের মন্দ কাজের জন্য ও অসৎ‌ভাবে জীবনযাপনের জন্য তিনি আমাদের শাস্তি দিয়েছেন।’ এইভাবে তারা ঈশ্বরের কাছে ফিরে এসেছিল।”

চারটি ঘোড়া

রাজা দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরের একাদশতম মাসের 24তম দিনে সখরিয় প্রভুর কাছ থেকে আরেকটি বার্তা পেলেন। বার্তাটি এইরকম ছিল:

রাত্রে আমি একটি দর্শন পেলাম। সেই দর্শনে আমি একটি লোককে একটা লাল রঙের ঘোড়ার ওপর দেখলাম। সে উপত্যকায় কিছু সুগন্ধ পত্রবিশিষ্ট গুল্মের ঝোপের মধ্যে দাঁড়িয়েছিল। তার পেছনে ছিল লাল, খয়েরী এবং সাদা রং এর ঘোড়া। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মহাশয়, এই ঘোড়াগুলি কিসের জন্য?”

তখন যে দেবদূত আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন, তিনি বললেন, “আমি তোমায় দেখাচ্ছি এই ঘোড়াগুলো কিসের জন্য।”

10 তখন লোকটি সুগন্ধী ঝোপগুলোর মধ্যে দাঁড়িয়ে উত্তর দিল, “পৃথিবীর চারিদিকে এদিক ওদিক যাবার জন্য প্রভু এই ঘোড়াগুলোকে পাঠিয়েছেন।”

11 তখন সুগন্ধী ঝোপঝাড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা প্রভুর দূতকে তারা বলল, “আমরা পৃথিবীর এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়িয়েছি এবং লক্ষ্য করেছি যে সমগ্র পৃথিবী শান্ত ও স্থির।”

12 তখন প্রভুর দূত বললেন, “প্রভু, জেরুশালেম ও যিহূদার শহরগুলোকে স্বস্তি দিতে আপনি আর কত দেরী করবেন? আপনি 70 বছর ধরে এই শহরগুলোর প্রতি আপনার ক্রোধ দেখিয়েছেন।”

13 তখন প্রভু আমার সঙ্গে কথোপকথনরত দেবদূতটিকে অনেক সদয় ও স্বস্তিপূর্ণ কথা বললেন। 14 তখন প্রভুর দূত আমাকে লোকেদের এই কথা বলতে বললেন:

প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন:
“জেরুশালেম ও সিয়োনের জন্য আমার একটি গভীর অনুভূতি আছে।
15 এবং যে জাতিরা নিজেদের নিরাপদ বলে মনে করে, তাদের প্রতি আমি অতিশয় ক্রোধান্বিত।
আমি যখন তেমন রেগে ছিলাম না,
    তখন আমি ঐ জাতিদের ব্যবহার করেছিলাম আমার লোকদের শাস্তি দিতে।
কিন্তু ঐ জাতিগুলো ক্ষতি সাধন করেছে।”
16 তাই প্রভু বলেন,
“আমি জেরুশালেমে ফিরে আসব এবং তাকে স্বস্তি দেব।”
প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন,
“জেরুশালেমকে আবার গড়া হবে
    আর সেখানে আমার গৃহও নির্মাণ করা হবে।”

17 দেবদূতরা বলল লোকদের বল:
“প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন,
    ‘আমার শহর আবার ধনী হয়ে উঠবে।
আমি সিয়োনকে স্বস্তি দেব।
    আমি জেরুশালেমকে আবার আমার বিশেষ শহর হিসাবে মনোনীত করব।’”

চারটি শিং আর চারজন কারীগর

18 তখন আমি উপরের দিকে তাকিয়ে চারটে শিং দেখতে পেলাম। 19 তারপর আমি আমার সঙ্গে আলাপচারী সেই দূতকে জিজ্ঞেস করলাম, “এই শিংগুলির অর্থ কি?”

তিনি আমাকে বললেন, “এই শিংগুলি হল সেই শিং যারা ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকদের বিদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিল।”

20 প্রভু আমায় চারজন কারিগর দেখালেন। 21 আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “ঐ চারজন কারিগর কি করতে আসছে?”

তিনি বললেন, “এই শিংগুলি সেই জাতিগুলির প্রতিনিধিত্ব করছে, যারা যিহূদার লোকদের আক্রমণ করেছিল এবং জোর করে তুলে তাদের নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। তারা তাদের বিদেশে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু এই চারজন কারিগর ঐ চারটি শিংকে ভয় দেখাতে এবং তাদের ছুঁড়ে ফেলে দিতে এসেছে!”

জেরুশালেম মাপা হল

তারপর আমি চোখ তুলে চেয়ে দেখলাম মাপার ফিতে হাতে একজন মানুষ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”

তিনি আমায় বললেন, “আমি জেরুশালেম মেপে দেখতে চাই তা দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে কতখানি।”

তখন যে দেবদূতটি আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি চলে গেলেন এবং আরেকটি দেবদূত তাঁর সঙ্গে কথা বলবার জন্য এগিয়ে এলেন। তিনি তাকে বললেন, “দৌড়ে গিয়ে সেই যুবকদের বল যে জেরুশালেম মাপার পক্ষে অতিশয় বড়। তার কাছে গিয়ে এই কথাগুলো বল:

‘জেরুশালেম হবে প্রাচীরবিহীন একটি শহর
    কারণ জেরুশালেমে বসবাসকারী মানুষ ও পশুর সংখ্যা হবে অনেক।’
প্রভু বলেছেন,
‘আমি শহরের চারধারে একটি আগুনের প্রাচীর তৈরী করে তাকে রক্ষা করব।
    এবং সেই শহরের মহিমা আনয়ণ করবার জন্য আমি সেখানে বাস করব।’”

ঈশ্বর তাঁর লোকেদের বাড়ীতে আহবান করেছেন

প্রভু বলেছেন,
“তাড়াতাড়ি কর,
    উত্তরে অবস্থিত দেশটি ত্যাগ কর!
হ্যাঁ, এটা সত্যি যে আমি তোমার লোকেদের
    চতুর্দ্দিকে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম।
ওহে সিয়োনের লোকেরা, যারা বাবিলে বাস করছ,
    তোমাদের প্রাণ বাঁচাতে এ জায়গা ছেড়ে যাও এবং ঐ শহর ছেড়ে পালাও!”
সর্বশক্তিমান প্রভুই এই কথা বলেছেন।
    তিনি আমাকে সেই জাতিগুলির মধ্যে পাঠিয়েছেন যারা তোমাদের লুঠ করেছিল।
    তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তোমাদের কাছে সম্মান আনতে।
“কারণ তোমাদের আঘাত করা,
    ঈশ্বরের চোখের মণিকে আঘাত করবার তুল্য।
বাবিলের লোকরা আমার লোকদের কারারুদ্ধ করেছিল
    এবং তাদের ক্রীতদাস বানিয়েছিল।”
কিন্তু আমি তাদের আঘাত করলে তারা আমার লোকেদের দাস হয়ে যাবে।
    তখন তোমরা জানবে যে সর্বশক্তিমান প্রভুই আমায় পাঠিয়েছেন।

10 প্রভু বলেছেন,
“সিয়োন, আনন্দ করো এবং সুখী হও!
    কারণ আমি আসছি এবং আমি তোমার শহরে বাস করব।
11 সেই সময়ে বহু জাতি
    আমার কাছে আসবে।
তারা আমার লোক হবে
    এবং আমি তোমার শহরে বাস করব।”
আর তুমি জানবে যে সর্বশক্তিমান প্রভু
    আমায় তোমার কাছে পাঠিয়েছেন।

12 প্রভু জেরুশালেমকে তাঁর বিশেষ শহর হিসেবে আবার মনোনীত করবেন।
    যিহূদা হবে পবিত্র ভূমিতে তাঁর অংশ।
13 প্রত্যেকে নীরব হও!
    প্রভু তাঁর পবিত্র আবাস হতে আসছেন।

মহাযাজক

দেবদূতটি আমাকে মহাযাজক যিহোশূয়কে দেখালেন। যিহোশূয় প্রভুর দূতের সামনে দাঁড়ালেন আর শয়তান তাঁর ডানদিকে দাঁড়াল। শয়তান যিহোশূয়কে মন্দ কাজ করবার জন্য দোষারোপ করেছিল। তখন প্রভুর দূত বললেন, “প্রভু তোমাকে ভর্ৎসনা করছেন এবং তিনি তোমাকে তিরস্কার করতে থাকবেন! প্রভু জেরুশালেমকে তাঁর বিশেষ শহর হিসেবে মনোনীত করেছেন। আগুন থেকে টেনে বার করা একটি জ্বলন্ত কাঠির মত তিনি ঐ শহর রক্ষা করেছেন।”

যিহোশূয় সেই দেবদূতটির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যিহোশূয়ের পরণে ছিল নোংরা কাপড়-চোপড়। তখন দেবদূতটি তাঁর কাছে দাঁড়িয়ে থাকা অপর দেবদূতদের বললেন, “যিহোশূয়র ঐ মলিন বস্ত্র খুলে নাও।” তখন সেই দেবদূত যিহোশূয়কে বললেন, “এখন আমি তোমার পাপ দূর করে দিয়েছি এবং আমি তোমাকে নতুন আধিকারিক বস্ত্রে সাজাব।”

তখন আমি বললাম, “ওর মাথায় একটা পরিষ্কার শিরস্ত্রাণ পরিয়ে দাও।” সুতরাং, যখন প্রভুর দূত কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন, তারা পরিষ্কার জামাকাপড় ও শিরস্ত্রাণ দিয়ে তাকে সজ্জিত করলেন। তখন যিহোশূয়কে দূত বলল,

প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন,
“আমি যা বলি তা শোন
    এবং আমার উপদেশ মত জীবনযাপন কর।
তাহলে তুমি আমার মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক হবে
    এবং মন্দির প্রাঙ্গণের যত্ন নেবে।
এবং কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ দেবদূতদের মত
    তুমিও মন্দিরের ভেতর তোমার ইচ্ছানুযায়ী যেতে পারবে।
ওহে মহাযাজক যিহোশূয়
    এবং তোমার সামনে যে মহাযাজকরা বসে আছে, তোমরা সবাই দয়া করে শোন।
অদূর ভবিষ্যতে আমার বিশেষ দাসকে যখন আমি আনব তখন কি ঘটবে তা দেখাবার জন্য এই লোকরা তার উদাহরণস্বরূপ।
    তাকে ‘শাখা’ এই নামে ডাকা হয়।
দেখ, আমি যিহোশূয়র সামনে একটা বিশেষ ধরণের পাথর রাখছি।
    ঐ পাথরটার সাতটা দিক রয়েছে।
আমি একটি বিশেষ বার্তা তাতে খোদাই করব।
    এটাই দেখাবে যে আমি একদিনে এই দেশের প্রতিটি পাপ দূর করব।”

10 সর্বশক্তিমান প্রভু বলেন,
“সেই সময় লোকরা
    তাদের বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে একত্রে বসবে।
তারা একে অপরকে ডুমুর গাছ ও দ্রাক্ষালতার তলায় বসবার জন্য নিমন্ত্রণ জানাবে।”

বাতিদান ও দুটি অলিভ গাছ

যে দেবদূতটি আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন, তিনি আমাকে জাগাবার জন্য আমার কাছে এলেন। সেই মুহূর্তে আমি ছিলাম ঘুম থেকে সদ্য জেগে ওঠা একজন মানুষের মত। তখন দেবদূত আমায় জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি দেখতে পাচ্ছো?”

আমি বললাম, “আমি একটি নিরেট সোনার বাতিদান দেখতে পাছি। সেই বাতিদানে সাতটি বাতি রয়েছে এবং বাতিদানের ওপরে রয়েছে একটি পাত্র। সেই পাত্র থেকে সাতটা ফাঁপা নল বেরিয়ে এসেছে এবং প্রত্যেকটি বাতিতে গিয়েছে। নলগুলি পাত্র থেকে বাতিতে তেল বহন করে। পাত্রটির পাশে দুটি অলিভ গাছ, একটি ডান দিকে, অপরটি বাম দিকে। এই গাছেরা বাতির জন্য তেল উৎপন্ন করে।” তখন আমি আমার সঙ্গে যে দেবদূতটি কথা বলছিলেন তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “মহাশয়, এসবের অর্থ কি?”

দেবদূতটি বললেন, “এই জিনিসগুলো কি তা কি তুমি জানো না?”

আমি বললাম, “জানি না মহাশয়।”

তিনি বললেন, “এ হল সরুব্বাবিলের কাছে প্রভুর বার্তা: সর্বশক্তিমান প্রভু বলেন, ‘তোমার শক্তি ও পরাক্রম তোমায় রক্ষা করবে না। তোমার সাহায্য আসবে আমার আত্মা থেকে।’ ওহে উঁচু পর্বত, তুমি সরুব্বাবিলের কাছে কিছুই নও। তার সামনে তুমি একটি সমতলভূমির মত। সে মন্দিরটি গড়বে এবং যখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাথরটি সেখানে স্থাপন করা হবে, তখন লোকেরা চেঁচিয়ে উঠবে, ‘চমৎ‌‌কার! অপূর্ব!’”

প্রভুর বার্তা আমাকে আরো বলল, “সরুব্বাবিল আমার মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করবে। সে মন্দিরের কাজ সম্পূর্ণ করবে। তখন তুমি বুঝতে পারবে যে সর্বশক্তিমান প্রভু আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছেন। 10 শুরুতে কাজ অল্প হলেও লোকে তাতে লজ্জিত হবে না আর তারা ওলোন দড়ি হাতে সরুব্বাবিলকে দেখে ওরা খুব খুশী হবে, যে সমাপ্ত হওয়া নির্মাণ কাজ পরীক্ষা করছে এবং মাপ-জোক করছে। পাথরের যে সাতটি ধার তুমি এখন দেখলে, তা প্রভুর চক্ষুস্বরূপ—যা সব দিকে নজর রেখেছিল। পৃথিবীর সব কিছুই তারা দেখতে পায়।”

11 তখন আমি (সখরিয়) তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “বাতিদানের ডান ও বাম দিকের জলপাই গাছগুলি কি বোঝায়?” 12 আমি তাঁকে আরও বললাম, “সোনার নল দুটির পাশে আমি জলপাই গাছের দুটি শাখা দেখলাম। যেগুলোর মধ্যে দিয়ে সোনালী রঙের তেল বইছে—সেগুলিরই বা অর্থ কি?”

13 তখন দূত আমাকে বললেন, “তুমি কি জানো না এসবের অর্থ কি?”

আমি বললাম, “মহাশয় জানি না।”

14 তিনি বললেন, “এর অর্থ হল এরা সেই দুই ব্যক্তিকে যারা সমস্ত পৃথিবীর প্রভুকে সেবা করার জন্য মনোনীত হয়েছে, তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে।”

উড়ন্ত হাতে লেখা পুঁথি

আমি আবার চোখ তুললাম এবং দেখলাম যে একটা হাতে লেখা পুঁথি বাতাসে উড়ছে। দেবদূতটি আমাকে বললেন, “তুমি কি দেখছ?”

আমি বললাম, “একটি গোটানো হাতে লেখা পুঁথি উড়ছে, যেটা 20 হাত লম্বা এবং 10 হাত চওড়া।”

তিনি আমায় বললেন, “এই গোটানো হাতে লেখা পুঁথিতে অভিশাপ লেখা রয়েছে। হাতে লেখা পুঁথির একপাশে চোরদের জন্য অভিশাপ লেখা এবং অন্য পাশে সেইসব লোকদের জন্য অভিশাপ লেখা যারা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি করে। প্রভু সর্বশক্তিমান বলেছেন: ‘আমি চোরদের বাড়ী এবং যারা আমার নাম ব্যবহার করে মিথ্যা শপথ করে তাদের বাড়ী এই পুঁথি পাঠাব। এই পুঁথি সেই বাড়ীগুলিতে থাকবে এবং তাদের ধ্বংস করবে। এমনকি পাথর ও কাঠের পাত্রগুলিও এটি ধ্বংস করবে।’”

স্ত্রীলোক এবং ঝুড়ি

যে দেবদূতটি আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি বাইরে গেলেন এবং বললেন, “দেখ, কি আসছে?”

আমি বললাম, “আমি জানি না, এটা কি?”

তিনি বললেন, “ওটা মাপার ঝুড়ি।” তিনি আরও বললেন, “এই দেশের লোকের পাপ মাপার জন্যই এই ঝুড়ি।”

ঝুড়ির সীসার তৈরী ঢাকনাটা খোলা হলে দেখা গেল তার মধ্যে এক স্ত্রীলোক। দেবদূতটি আমায় বললেন, “ঐ স্ত্রীলোকটি অধর্মকে প্রতিনিধিত্ব করে।” তখন দেবদূতটি স্ত্রীলোকটিকে ঠেলে ঝুড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে তার ঢাকনাটি বন্ধ করে দিলেন। তখন আমি ওপরের দিকে তাকিয়ে সারস পাখীর মত[a] ডানা সমেত দুই জন স্ত্রীলোককে দেখতে পেলাম। তারা নীচে উড়ে এল এবং তাদের পাখার বাতাসের সাহায্যে সেই ঝুড়িটাকে তুলে নিল। তারপর তারা ঝুড়িটাকে বহন করে বাতাসের মধ্যে দিয়ে উড়ে গেল। 10 তখন আমার সাথে আলাপচারী দেবদূতটিকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “ঝুড়িটিকে তারা কোথায় বয়ে নিয়ে যাচ্ছে?”

11 দেবদূতটি উত্তর দিলেন, “তারা শিনিয়র দেশে একটা বাড়ী তৈরী করবে এবং ঝুড়িটাকে তারা সেই বাড়ীর ভেতরে রাখবে।”

চার রথ

তারপর আমি আবার ওপরে তাকিয়ে দেখলাম চারটে রথ, তারা দুটি পিতলের পর্বতের মধ্য থেকে বার হয়ে আসছে। প্রথম রথটি টানছিল লাল রঙের ঘোড়া। দ্বিতীয় রথটিকে টানছিল কালো রঙের ঘোড়া। তৃতীয় রথটিকে টানছিল সাদা রঙের ঘোড়া আর লাল বিন্দু বিন্দু দাগওয়ালা ঘোড়াগুলি টানছিল চতুর্থ রথটিকে। যে দেবদূতটি আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন তাঁকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মহাশয় এর অর্থ কি?”

দেবদূতটি বললেন, “এরা চারটি বাতাস, তারা পৃথিবীর প্রভুর কাছ থেকে সদ্য এসেছে। কালো ঘোড়াগুলি যাবে উত্তর দিকে, লাল ঘোড়াগুলি যাবে পূর্বে, সাদা ঘোড়াগুলি যাবে পশ্চিমে এবং লাল বিন্দু বিন্দু দাগ দেওয়া ঘোড়াগুলি যাবে দক্ষিণে।”

লাল বিন্দু খচিত ঘোড়ারা তাদের অংশে পৃথিবীতে যাবার জন্য ব্যগ্র হয়ে উঠল, তাই দেবদূত তাদের বললেন, “যাও তোমরা সারা পৃথিবী ঘুরে এসো।” তাই তারা পৃথিবীর চারদিক ঘুরতে গেল।

তখন প্রভু আমাকে চিৎকার করে বললেন, “দেখ, যে ঘোড়াগুলি উত্তরে গিয়েছিল, তারা তাদের কাজ শেষ করে ফিরে এসেছে। তারা আমার আত্মাকে শান্ত করেছে তাই আমি আর ক্রুদ্ধ নই!”

যাজক যিহোশূয়কে মুকুট পরানো হল

তখন আমি প্রভুর কাছ থেকে আরেকটি বার্তা পেলাম। তিনি বললেন, 10 “হিল‌্দয়, টোবিয় ও যিদায় বাবিলের বন্দী দশা থেকে ফিরে এসেছে। সেই লোকদের কাছ থেকে তুমি রূপো ও সোনা সংগ্রহ কর এবং সফনিয়ের পুত্র যোশিয়ের বাড়ী যাও। 11 সেই রূপো ও সোনা ব্যবহার করে একটি মুকুট তৈরী কর এবং যিহোষাদকের পুত্র, মহাযাজক যিহোশূয়কে মুকুট মণ্ডিত কর। তারপর যিহোশূয়কে এই বিষয়গুলি বল:

12 প্রভু সর্বশক্তিমান এই কথাগুলি বলেন:

‘শাখা নামে এক মানুষ আছেন,
    তিনি শক্তিমান হয়ে উঠবেন,
    তিনি প্রভুর মন্দির গাঁথবেন।
13 তিনি প্রভুর মন্দির গাঁথবেন ও সম্মান গ্রহণ করবেন।
    তিনি সিংহাসনে বসে শাসন করবেন।
আর একজন যাজক তার সিংহাসনের পাশে দাঁড়াবে।
    এই দুই জন একসাথে শান্তিতে কাজ করবে।’

14 হিল‌্দয়, টোবিয়, যিদায় এবং সফনিয়ের পুত্র যোশিয়ের জন্য একটি স্মারক হিসেবে ঐ মুকুটটি তারা মন্দিরেই রাখবে।”

15 দূরদেশে বসবাসকারী লোকরাও এসে মন্দিরে নির্মাণ করবে। তখন তোমরা নিশ্চিতভাবে জানবে যে প্রভুই আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। প্রভুর কথা অনুসারে কাজ করলে এই বিষয়গুলি ঘটবে।

প্রভু করুণা ও কৃপা চান

পারস্যের রাজা দারিয়াবসের রাজত্বের চতুর্থ বছরের নবম মাসের চতুর্থ দিনে সখরিয় প্রভুর কাছ থেকে এই বার্তা পেলেন। বৈথেলের লোকরা শরেৎসর, রেগম্মেলক ও তার লোকেদের প্রভুর কাছে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পাঠিয়েছিলেন। তারা সর্বশক্তিমান প্রভুর মন্দিরের যাজকগণের কাছে এবং ভাববাদীদের কাছে এলেন। ঐ লোকরা তাদের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল: “অনেক বছর ধরে আমরা মন্দির ধ্বংস হয়ে যাবার দরুণ শোক করেছি। প্রত্যেক বছরের পঞ্চম মাসে আমরা উপবাসের জন্য বিশেষ সময় দিয়েছি। আমরা কি এই অনুশীলন চালিয়ে যাব?”

আমি সর্বশক্তিমান প্রভুর কাছ থেকে এই বার্তা পেলাম: “এই দেশের যাজককে এবং অন্য লোকেদের বল: সত্তর বছর ধরে তোমরা পঞ্চম ও সপ্তম মাসে উপবাস করেছ। সেই উপবাস কি সত্যিই আমার জন্য? না! তা নয়। আর তোমরা যখন ভোজন পান করলে সেটাও কি আমার উদ্দেশ্যে করলে? তা নয়, বরং তোমাদেরই ভালোর জন্য। এই একই জিনিষ প্রদান করতে প্রভু তাঁর ভাববাদীদের ব্যবহার করেছিলেন। জেরুশালেম যখন উন্নত ও জনমানবে পূর্ণ ছিল তখনও তিনি এই কথাগুলি বলেছিলেন। যখন ঈশ্বর এই কথাগুলি বলেছিলেন তখন জেরুশালেমের আশেপাশের শহর নেগেভ এবং পশ্চিমের পাহাড়ের পাদদেশে লোকজন ছিল।”

সখরিয়ের কাছে প্রভুর বার্তা এই:
প্রভু সর্বশক্তিমান বলেছেন:
“যা কিছু ঠিক এবং ন্যায়সঙ্গত তোমরা অবশ্যই তা করবে।
    তোমরা একে অপরের প্রতি অবশ্যই দয়ালু ও কৃপাপূর্ণ হবে।
10 বিধবা, দরিদ্র, বিদেশী
    ও অনাথদের ওপর উৎ‌পীড়ন কোরো না।
অপরের অমঙ্গল করবার চিন্তা কোরো না।”

11 কিন্তু সেইসব লোকেরা শুনতে অস্বীকার করত।
    তিনি যা চাইতেন তা করতে তারা অস্বীকার করত।
তারা কান বন্ধ করত বলে
    ঈশ্বরের কথা শুনতে পেতো না।
12 তারা ছিল একগুঁয়ে।
    প্রভু সর্বশক্তিমান তাঁর আত্মা দ্বারা
ভাববাদীদের মাধ্যমে লোকদের কাছে বার্তা পাঠাতেন।
    কিন্তু তারা শুনতো না।
    তাই সর্বশক্তিমান প্রভু ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন।
13 সর্বশক্তিমান প্রভু বললেন,
“আমি তাদের ডাকলে
    তারা উত্তর দিল না।
তাই এখন যদি তারা আমায় ডাকে,
    আমি তাদের উত্তর দেব না।
14 আমি তাদের বিরুদ্ধে জাতিগুলোকে ঝড়ের মত নিয়ে আসব।
    ঐসব জাতিদের তারা জানতও না।
তারা দেশটি অতিক্রম করে গেলে
    সেটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে।”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International