Revised Common Lectionary (Semicontinuous)
মরিয়ম ঈশ্বরের প্রশংসা করলেন
46 তখন মরিয়ম বললেন,
47 “আমার আত্মা প্রভুর প্রশংসা করছে,
আর আমার আত্মা আমার ত্রাণকর্তা ঈশ্বরকে পেয়ে আনন্দিত।
48 কারণ তাঁর এই তুচ্ছ দাসীর দিকে
তিনি মুখ তুলে চেয়েছেন।
হ্যাঁ, এখন থেকে সকলেই
আমাকে ধন্যা বলবে।
49 কারণ সেই একমাত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমার জীবনে কত না মহত্ কাজ করেছেন।
পবিত্র তাঁর নাম।
50 আর যাঁরা বংশানুক্রমে তাঁর উপাসনা করে
তিনি তাদের দয়া করেন।
51 তাঁর বাহুর যে পরাক্রম, তা তিনি দেখিয়েছেন।
যাদের মন অহঙ্কার ও দম্ভপূর্ণ চিন্তায় ভরা, তাদের তিনি ছিন্নভিন্ন করে দেন।
52 তিনিই শাসকদের সিংহাসনচ্যুত করেন,
যারা নতনম্র তাদের উন্নত করেন।
53 ক্ষুধার্তকে তিনি উত্তম দ্রব্য দিয়ে তৃপ্ত করেন;
আর বিত্তবানকে নিঃস্ব করে বিদায় করেন।
54 তিনি তাঁর দাস ইস্রায়েলকে সাহায্য করতে এসেছেন।
55 যেমন তিনি আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি তেমনই করবেন।
অব্রাহাম ও তাঁর বংশের লোকদের চিরকাল দয়া করার কথা তিনি মনে রেখেছেন।”
ইল্কানা পরিবারের শীলোতে উপাসনা
1 পাহাড়ী দেশ ইফ্রয়িমের রামা অঞ্চলে ইল্কানা নামে একজন লোক ছিল। ইল্কানা সূফ পরিবার থেকে এসেছিল; তার পিতার নাম ছিল যিরোহম, যিরোহমের পিতা হচ্ছে ইলীহূ, ইলীহূর পিতা তোহূ, তোহূর পিতা সূফ। সে ইফ্রয়িমের পরিবারগোষ্ঠী থেকে এসেছিল।
2 ইল্কানার দুই স্ত্রী ছিল। একজনের নাম হান্না, অন্য জনের নাম পনিন্না। পনিন্নার সন্তানাদি ছিল, কিন্তু হান্না ছিল নিঃসন্তান।
3 প্রতি বছরই ইল্কানা রামা শহর থেকে শীলোতে চলে যেত। শীলোয় গিয়ে সে সর্বশক্তিমান প্রভুর উপাসনা করত ও তাঁকে বলি নিবেদন করত। সেখানে হফ্নি এবং পীনহস যাজক হিসেবে প্রভুর সেবা করত। এরা দুই জন ছিল এলির পুত্র। 4 প্রত্যেকবার ইল্কানা বলি দিয়ে এসে তার একটা ভাগ তার স্ত্রী পনিন্নাকে দিত এবং সে পনিন্নার সন্তানদেরও কিছুটা ভাগ দিত। 5 ইল্কানা আর একটা সমান অংশ হান্নাকেও দিত। প্রভু হান্নার কোলে সন্তান না দিলেও ইল্কানা তাকে বলির ভাগ দিত, কারণ সে হান্নাকে সত্যিই ভালবাসত।
পনিন্না হান্নাকে বিরক্ত করল
6 পনিন্না সব সময় হান্নাকে বিরক্ত করত। এতে হান্নার খুব মন খারাপ হত। হান্নার সন্তান হয়নি বলে পনিন্না তাকে এই রকম করত। 7 বছরের পর বছর এই ঘটনা ঘটত। যখনই ইল্কানা তার পরিবারের সঙ্গে শীলোয় প্রভুর গৃহে উপাসনা করতে যেত, পনিন্না হান্নাকে বিরক্ত করত। একদিন ইল্কানা সবাইকে যখন বলির ভাগ দিচ্ছিল, হান্না মনের দুঃখে কেঁদে ফেলল। সে কিছুই খেল না। 8 ইল্কানা তাকে বলল, “হান্না, তুমি কাঁদছ কেন? কেন তুমি কিছু খাচ্ছ না? কিসের জন্য তোমায় এমন শুকনো দেখাচ্ছে? তোমার জন্য তো আমি আছি। আমি তোমার স্বামী। দশটি পুত্রের চেয়ে আমাকে তোমার বেশী ভাল বলে বিবেচনা করা উচিৎ।”
হান্নার প্রার্থনা
9 খাওয়া দাওয়া এবং পান সেরে হান্না চুপচাপ উঠে পড়ল। সে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে গেল। প্রভুর পবিত্র মন্দিরের দরজার পাশে একটা চেয়ারে যাজক এলি বসেছিল। 10 দুঃখিনী হান্না প্রভুর কাছে প্রার্থনার সময় খুবই কাঁদল। 11 ঈশ্বরের কাছে সে এক বিশেষ ধরণের মানত করল। সে বলল, “হে সর্বশক্তিমান প্রভু, দেখো আমি বড় দুঃখী। আমাকে ভুলে যেও না। আমাকে মনে রেখ। তুমি যদি আমাকে একটি পুত্র দাও, আমি সেই পুত্রকে তোমাকেই উৎসর্গ করব। সে হবে নাসরতীয়। সে দ্রাক্ষারস বা কোন রকম কড়া পানীয় পান করবে না। কেউ কখনও তার চুল কাটবে না।”[a]
12 অনেকক্ষণ ধরে হান্না প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল। হান্না যখন প্রার্থনা করছিল তখন এলি তার মুখগহ্বরের দিকে দেখছিল। 13 হান্না মনে মনে প্রার্থনা করছিল। সে শব্দ করে কিছু বলছিল না, শুধু তার ঠোঁট দুটো নড়ছিল। এলি মনে করল যে হান্না মাতাল হয়ে গেছে। 14 তাই এলি হান্নাকে বলল, “তুমি খুব বেশী পান করেছ! এখন দ্রাক্ষারস সরিয়ে রাখার সময় হয়েছে।”
15 হান্না বলল, “না মহাশয়, আমি দ্রাক্ষারস বা সুরা কিছুই পান করি নি। আমার হৃদয় তীব্র বেদনায় কাতর। আমি প্রভুর কাছে আমার সব কষ্টের কথা জানাচ্ছিলাম। 16 ভাববেন না যে আমি খারাপ মেয়ে। আমি সারাক্ষণ শুধু প্রার্থনাই করছিলাম। কারণ আমার অনেক দুঃখ এবং আমি খুবই বিচলিত।”
17 এলি বলল, “নিশ্চিন্তে বাড়ি যাও। ইস্রায়েলের ঈশ্বর তোমার মনোবাঞ্ছা পূরণ করুন।”
18 হান্না বলল, “আশা করি আমার ওপর আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন।” এই বলে হান্না চলে গেল এবং পরে কিছু মুখে দিল। তারপর থেকে সে আর দুঃখী ছিল না।
পুরানো চুক্তি অনুসারে উপাসনা
9 ঐ প্রথম চুক্তিতে উপাসনা করার নানা বিধিনিয়ম ছিল আর মানুষের তৈরী এক উপাসনার স্থান ছিল। 2 উপাসনার স্থানটি ছিল এক তাঁবুর ভেতরে। যার প্রথম অংশকে বলা হতো পবিত্র স্থান, যেখানে ছিল বাতিদান, টেবিল ও ঈশ্বরকে উৎসর্গীকৃত বিশেষ রুটি। 3 দ্বিতীয় পর্দার পেছনে আর একটি অংশ ছিল যাকে মহাপবিত্রস্থান বলা হত। 4 এই অংশে ছিল ধূপ জ্বালাবার জন্য সোনার বেদী ও চুক্তির সেই সিন্দুক, যার চারপাশ ছিল সোনার পাতে মোড়া। এর মধ্যে ছিল সোনার এক ঘটিতে মান্না ও হারোণের ছড়ি, যে ছড়ি মুকুলিত হয়েছিল, আর পাথরের সেই দুই ফলক যার ওপর নিয়ম চুক্তির শর্ত লেখা ছিল। 5 সেই সিন্দুকের ওপর ছিল সোনার দুই করূব স্বর্গদূত[a] যা ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশ করত। তাঁর দয়ার আসনটির ওপর ছায়া ফেলে থাকত। বর্তমানে আমরা এর খুঁটিনাটি বর্ণনা দিতে পারি না।
6 যখন এইসব জিনিস পূর্বে বর্ণিত ব্যবস্থা অনুসারে প্রস্তুত হল, তখন যাজকরা প্রতিদিন উপাসনা করার জন্য প্রথম কক্ষে প্রবেশ করতেন। 7 কিন্তু মহাযাজক দ্বিতীয় কক্ষে কেবল একা বছরে একবার প্রবেশ করতেন; তিনি আবার রক্ত না নিয়ে প্রবেশ করতেন না। সেই রক্ত তিনি নিজের জন্য ও লোকদের দোষ-ত্রুটি ও অনিচ্ছাকৃত পাপের মার্জনার জন্য উৎসর্গ করতেন।
8 পবিত্র আত্মা এর দ্বারা আমাদের জানাচ্ছেন যে, যতদিন পর্যন্ত প্রথম তাঁবু ছিল, ততদিন মহাপবিত্র স্থানে প্রবেশের পথ খুলে দেওয়া হয় নি। 9 এটা আজকের জন্য একটা দৃষ্টান্তস্বরূপ। সেই দৃষ্টান্ত মতে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত ঐসব বলি ও উপহার উপাসনাকারীকে সম্পূর্ণভাবে শুদ্ধ করতে পারত না এবং উপাসনাকারীর হৃদয়কে সিদ্ধিলাভ করাতো না। 10 ঐ উপহারগুলি কেবল খাদ্য, পানীয় ও নানা প্রকার বাহ্যিক শুচি স্নানের গণ্ডীতে বাঁধা ছিল। সে সব বিধি-ব্যবস্থাগুলি ছিল কেবল মানুষের দেহ সম্বন্ধীয়। সেগুলি ব্যক্তির হৃদয় সম্বন্ধীয় বিষয় ছিল না। নতুন আদেশ না আসা পর্যন্ত ঈশ্বর তাঁর লোকদের এইসব নিয়ম অনুসরণ করতে দিয়েছিলেন।
নতুন চুক্তি অনুসারে উপাসনা
11 কিন্তু এখন মহাযাজকরূপে খ্রীষ্ট এসেছেন। আমরা এখন যে সব উত্তম বিষয় পেয়েছি, তিনি সে সবের মহাযাজক। পূর্বে যাজকরা তাঁবুর মতো কোন স্থানে সেবা করতেন, কিন্তু খ্রীষ্ট তেমনি করেন না। সেই তাঁবু থেকেও এক উত্তমস্থানে খ্রীষ্ট মহাযাজকরূপে সেবা করতেন। সেই স্থান সিদ্ধ, সেই স্থান মানুষের হাতে গড়া নয়, তা এই জগতের নয়। 12 খ্রীষ্ট একবার চিরতরে সেই মহাপবিত্রস্থানে প্রবেশ করেছেন। তিনি মহাপবিত্রস্থানে প্রবেশের জন্য ছাগ বা বাছুরের রক্ত ব্যবহার করেন নি, কিন্তু তিনি একবার চিরতরে নিজের রক্ত নিয়ে মহাপবিত্রস্থানে প্রবেশ করেছিলেন। খ্রীষ্ট সেখানে প্রবেশ করে আমাদের জন্য অনন্ত মুক্তি অর্জন করেছেন।
13 ছাগ বা বৃষের রক্ত ও বাছুরের ভস্ম সেই সব অশুচি মানুষের উপর ছিটিয়ে তাদের দেহকে পবিত্র করা হত যারা উপাসনা স্থলে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট শুচি ছিল না। 14 তবে এটা কি ঠিক নয় যে খ্রীষ্টের রক্ত আরও কত অধিক কার্যকরী হতে পারে? অনন্তজীবি আত্মার মাধ্যমে খ্রীষ্ট ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিজেকে বলিদান করলেন পরিপূর্ণ উৎসর্গরূপে। তাই খ্রীষ্টের রক্ত আমাদের সমস্ত হৃদয়কে পাপ থেকে শুদ্ধ ও পবিত্র করবে, যাতে আমরা জীবন্ত ঈশ্বরের উপাসনা করতে পারি।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International