Revised Common Lectionary (Semicontinuous)
জগৎ সৃষ্টির শুরু
1 শুরুতে, ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। প্রথমে পৃথিবী একেবারে শূন্য ছিল; পৃথিবীতে কিছুই ছিল না। 2 অন্ধকারে আবৃত ছিল জলরাশি আর ঈশ্বরের আত্মা সেই জলরাশির উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছিল।
প্রথম দিন—আলো
3 তারপর ঈশ্বর বললেন, “আলো ফুটুক!” তখনই আলো ফুটতে শুরু করল। 4 আলো দেখে ঈশ্বর বুঝলেন, আলো ভাল। তখন ঈশ্বর অন্ধকার থেকে আলোকে পৃথক করলেন। 5 ঈশ্বর আলোর নাম দিলেন, “দিন” এবং অন্ধকারের নাম দিলেন “রাত্রি।”
সন্ধ্যা হল এবং সেখানে সকাল হল। এই হল প্রথম দিন।
দ্বিতীয় দিন—আকাশ
6 তারপর ঈশ্বর বললেন, “জলকে দুভাগ করবার জন্য আকাশমণ্ডলের ব্যবস্থা হোক্।” 7 তাই ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের সৃষ্টি করে জলকে পৃথক করলেন। এক ভাগ জল আকাশমণ্ডলের উপরে আর অন্য ভাগ জল আকাশমণ্ডলের নীচে থাকল। 8 ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের নাম দিলেন “আকাশ।” সন্ধ্যা হল আর তারপর সকাল হল। এটা হল দ্বিতীয় দিন।
তৃতীয় দিন—শুকনো জমি ও গাছপালা
9 তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশের নীচের জল এক জায়গায় জমা হোক্ যাতে শুকনো ডাঙা দেখা যায়।” এবং তা-ই হল। 10 ঈশ্বর শুকনো জমির নাম দিলেন, “পৃথিবী” এবং এক জায়গায় জমা জলের নাম দিলেন, “মহাসাগর।” ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
11 তখন ঈশ্বর বললেন, “পৃথিবীতে ঘাস হোক্, শস্যদায়ী গাছ ও ফলের গাছপালা হোক্। ফলের গাছগুলিতে ফল আর ফলের ভেতরে বীজ হোক্। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করুক। এইসব গাছপালা পৃথিবীতে বেড়ে উঠুক।” আর তাই-ই হল। 12 পৃথিবীতে ঘাস আর শস্যদায়ী উদ্ভিদ উৎপন্ন হল। আবার ফলদায়ী গাছপালাও হল, ফলের ভেতরে বীজ হল। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
13 সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে হল তৃতীয় দিন।
চতুর্থ দিন—সূর্য্য, চাঁদ ও তারা
14 তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশে আলো ফুটুক। এই আলো দিন থেকে রাত্রিকে পৃথক করবে। এই আলোগুলি বিশেষ সভা[a] শুরু করার বিশেষ বিশেষ সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর দিন ও বছর বোঝাবার জন্য এই আলোগুলি ব্যবহৃত হবে। 15 পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জন্য এই আলোগুলি আকাশে থাকবে।” এবং তা-ই হল।
16 তখন ঈশ্বর দুটি মহাজ্যোতি বানালেন। ঈশ্বর বড়টি বানালেন দিনের বেলা রাজত্ব করার জন্য আর ছোটটি বানালেন রাত্রিবেলা রাজত্ব করার জন্য। ঈশ্বর তারকারাজিও সৃষ্টি করলেন। 17 পৃথিবীকে আলো দেওয়ার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে স্থাপন করলেন। 18 দিন ও রাত্রিকে কর্তৃত্ত্ব দেবার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে সাজালেন। এই আলোগুলি আলো আর অন্ধকারকে পৃথক করে দিল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
19 সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে চতুর্থ দিন হল।
পঞ্চম দিন—মাছ ও পাখী
20 তারপর ঈশ্বর বললেন, “বহু প্রকার জীবন্ত প্রাণীতে জল পূর্ণ হোক্ আর পৃথিবীর ওপরে আকাশে ওড়বার জন্য বহু পাখী হোক্।” 21 সুতরাং ঈশ্বর বড় বড় জলজন্তু এবং জলে বিচরণ করবে এমন সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করলেন। অনেক প্রকার সামুদ্রিক জীব রয়েছে এবং সে সবই ঈশ্বরের সৃষ্টি। যত রকম পাখী আকাশে ওড়ে সেইসবও ঈশ্বর বানালেন। এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটি ভাল হয়েছে।
22 ঈশ্বর এই সমস্ত প্রাণীদের আশীর্বাদ করলেন। ঈশ্বর সামুদ্রিক প্রাণীদের সংখ্যাবৃদ্ধি করে সমুদ্র ভরিয়ে তুলতে বললেন। ঈশ্বর পৃথিবীতে পাখীদের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে বললেন।
23 সন্ধ্যা হয়ে গেল এবং তারপর সকাল হল। এভাবে পঞ্চম দিন কেটে গেল।
ষষ্ঠ দিন—ডাঙার জন্তু জানোয়ার ও মানুষ
24 তারপর ঈশ্বর বললেন, “নানারকম প্রাণী পৃথিবীতে উৎপন্ন হোক্। নানারকম বড় আকারের জন্তু জানোয়ার আর বুকে হেঁটে চলার নানারকম ছোট প্রাণী হোক্ এবং প্রচুর সংখ্যায় তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি হোক্।” তখন যেমন তিনি বললেন সব কিছু সম্পন্ন হল।
25 সুতরাং ঈশ্বর সব রকম জন্তু জানোয়ার তেমনভাবে তৈরী করলেন। বন্য জন্তু, পোষ্য জন্তু আর বুকে হাঁটার সবরকমের ছোট ছোট প্রাণী ঈশ্বর বানালেন এবং ঈশ্বর দেখলেন প্রতিটি জিনিসই বেশ ভালো হয়েছে।
26 তখন ঈশ্বর বললেন, “এখন এস, আমরা মানুষ সৃষ্টি করি। আমাদের আদলে আমরা মানুষ সৃষ্টি করব। মানুষ হবে ঠিক আমাদের মত। তারা সমুদ্রের সমস্ত মাছের ওপরে আর আকাশের সমস্ত পাখীর ওপরে কর্তৃত্ত্ব করবে। তারা পৃথিবীর সমস্ত বড় জানোয়ার আর বুকে হাঁটা সমস্ত ছোট প্রাণীর উপরে কর্তৃত্ত্ব করবে।”
27 তাই ঈশ্বর নিজের মতোই মানুষ সৃষ্টি করলেন। মানুষ হল তাঁর ছাঁচে গড়া জীব। ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও স্ত্রীরূপে সৃষ্টি করলেন। 28 ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করে বললেন, “তোমাদের বহু সন্তান-সন্ততি হোক্। মানুষে মানুষে পৃথিবী পরিপূর্ণ করো এবং তোমরা পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণের ভার নাও, সমুদ্রে মাছেদের এবং বাতাসে পাখিদের শাসন করো। মাটির ওপর যা কিছু নড়েচড়ে, যাবতীয় প্রাণীকে তোমরা শাসন করো।”
29 ঈশ্বর বললেন, “আমি তোমাদের শস্যদায়ী সমস্ত গাছ ও সমস্ত ফলদায়ী গাছপালা দিচ্ছি। ঐসব গাছ বীজযুক্ত ফল উৎপাদন করে। এই সমস্ত শস্য ও ফল হবে তোমাদের খাদ্য। 30 এবং জানোয়ারদের সমস্ত সবুজ গাছপালা দিচ্ছি। তাদের খাদ্য হবে সবুজ গাছপালা। পৃথিবীর সমস্ত জন্তু জানোয়ার, আকাশের সমস্ত পাখি এবং মাটির উপরে বুকে হাঁটে যেসব কীট সবাই ঐ খাদ্য খাবে।” এবং এইসব কিছুই সম্পন্ন হল।
31 ঈশ্বর যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সেসব কিছু দেখলেন এবং ঈশ্বর দেখলেন সমস্ত সৃষ্টিই খুব ভাল হয়েছে।
সন্ধ্যা হল, তারপর সকাল হল। এভাবে ষষ্ঠ দিন হল।
সপ্তম দিন—বিশ্রাম
2 এইভাবে পৃথিবী, আকাশ এবং তাদের আভ্যন্তরীণ যাবতীয় জিনিস সম্পূর্ণ হল। 2 যে কাজ ঈশ্বর শুরু করেছিলেন তা শেষ করে সপ্তম দিনে তিনি বিশ্রাম নিলেন। 3 সপ্তম দিনটিকে আশীর্বাদ করে ঈশ্বর সেটিকে পবিত্র দিনে পরিণত করলেন। দিনটিকে ঈশ্বর এক বিশেষ দিনে পরিণত করলেন কারণ ঐ দিনটিতে পৃথিবী সৃষ্টির সমস্ত কাজ থেকে তিনি বিশ্রাম নিলেন।
মানব জাতির শুরু
4 এই হল আকাশ ও পৃথিবীর ইতিহাস। ঈশ্বর যখন পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টি করেছিলেন, তখন যা কিছু ঘটেছিল এটা তারই গল্প।
পরিচালকের প্রতি: গিত্তীৎ সহযোগে দায়ূদের একটি গীত।
8 হে প্রভু, আমাদের সদাপ্রভু, সারা পৃথিবীতে আপনার নামই সব থেকে মহিমান্বিত!
আপনার নাম স্বর্গলোক জুড়ে আপনার প্রশংসা এনে দেয়।
2 শিশু ও দুগ্ধপোষ্যদের মুখ থেকে আপনার প্রশংসা গীত বেরিয়ে আসে।
আপনার শত্রুদের নীরব করে দেওয়ার জন্য আপনি ওদের মুখে এইসব শক্তিশালী গান দিয়েছেন।
3 আপনি নিজের হাত দিয়ে যে স্বর্গ সৃষ্টি করেছেন তার দিকে চেয়ে দেখি।
আপনার সৃষ্টি করা চাঁদ এবং তারা দেখি এবং আমি বিস্মিত হই।
4 “লোকরা আপনার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
কেন আপনি তাদের কথা স্মরণ করেন?
কেন লোকরা আপনার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ?
আপনি তাদের দিকে তাকিয়েই বা দেখেন কেন?”
5 কিন্তু মানুষ আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ!
আপনি মানুষকে প্রায় দেবতার মত করেই বানিয়েছেন।
এবং গৌরব ও সম্মান দিয়ে আপনি মানুষকে মহিমান্বিত করেছেন।
6 আপনি যা যা সৃষ্টি করেছেন তার দায়িত্ব আপনি মানুষের হাতেই দিয়েছেন।
সব কিছুই আপনি মানুষের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।
7 মেষ, গবাদিপশু সহ অন্যান্য বন্য জন্তুদের ওপরে মানুষ কর্ত্তৃত্ব করেছে।
8 আকাশের পাখী
ও জলের মাছের ওপর কর্ত্তৃত্ব করেছে।
9 হে প্রভু, আমাদের সদাপ্রভু, সমগ্র বিশ্বে আপনার নামই সব থেকে মহিমান্বিত।
11 আমার ভাই ও বোনেরা, সব শেষে বলি, বিদায়। সিদ্ধি লাভের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা কর, আমি যা বলেছি সেই অনুসারে কাজ কর, একমনা হও, মিলে মিশে শান্তিতে থাক, তাতে প্রেমের ও শান্তির ঈশ্বর তোমাদের সঙ্গে থাকবেন।
12 পবিত্র চুম্বন দিয়ে পরস্পরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিও। ঈশ্বরের পবিত্র লোকেরা তোমাদের প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
13 প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ, ঈশ্বরের প্রেম এবং পবিত্র আত্মার সহভাগীতা তোমাদের সকলের সহবর্তী হোক্।
শিষ্যদের সঙ্গে যীশু কথা বললেন
(মার্ক 16:14-18; লূক 24:36-49; যোহন 20:19-23; প্রেরিত 1:6-8)
16 এবার সেই এগারো জন শিষ্য গালীলে ফিরে গিয়ে যীশু তাঁদের যেমন বলেছিলেন সেই মতো সেই পর্বতে গেলেন। 17 তাঁরা যীশুকে দেখে ভুমিষ্ঠ হয়ে তাঁকে প্রণাম করলেন। তবে তাঁদের কয়েকজনের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিল, 18 তখন যীশু কাছে এসে তাদের বললেন, “স্বর্গে ও পৃথিবীতে পূর্ণ ক্ষমতা ও কর্ত্তৃত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। 19 তাই তোমরা যাও, তোমরা গিয়ে সকল জাতির মানুষকে আমার শিষ্য কর। পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে বাপ্তিস্ম দাও। 20 আমি তোমাদের যেসব আদেশ দিয়েছি, সেসব তাদের পালন করতে শেখাও আর দেখ যুগান্ত পর্যন্ত প্রতিদিন আমি সর্বদাই তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International