Old/New Testament
প্রজ্ঞা, এক ধার্মিক রমণী
8 শোন! প্রজ্ঞা কি তোমাকে ডাকছে?
হ্যাঁ, বোধ তোমাকে ডাকছে।
2 মহিলাটি (প্রজ্ঞা) পাহাড়ের চূড়ায়,
সড়কের ধারে, সকল পথের সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে।
3 সে নগরের প্রধান ফটকগুলির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
সেখান থেকেই সে উচ্চস্বরে ডাক দিচ্ছে।
4 প্রজ্ঞা বলছে, “হে মানবগণ, আমি তোমাদের ডাকছি।
চিৎকার করে সমস্ত লোককে ডাকছি।
5 যদি তোমরা অবোধ হও, বুদ্ধিমান হওয়ার চেষ্টা কর।
নির্বোধরা বোঝার চেষ্টা কর।
6 শোন! আমি যেসব জিনিসের শিক্ষা দিই তা গুরুত্বপূর্ণ।
আমি যা বলি তা সঠিক।
7 আমার কথাগুলি সত্য।
আমি ক্ষতিকারক মিথ্যাকে ঘৃণা করি।
8 আমি যা বলি তা সঠিক, আমি মিথ্যা কথা বলি না।
আমার কথাগুলোয় কোন মিথ্যা বা ভুল নেই।
9 আমার কথাগুলি, যাদের বোধশক্তি আছে
সেই সব লোকের কাছে পরিষ্কার।
জ্ঞানবানরা আমার উপদেশ বুঝতে সক্ষম।
10 আমার অনুশাসন গ্রহণ কর। তার মূল্য রূপার চেয়েও বেশী।
সেটি উৎকৃষ্টতম সোনার চেয়েও মূল্যবান।
11 জ্ঞান, দূর্মূল্য মুক্তার চেয়েও দামী।
মানুষের অভীষ্ট কোন বস্তুই তার সমকক্ষ নয়।
প্রজ্ঞা যা করে
12 “আমি প্রজ্ঞা।
আমি সুবিচারের সঙ্গে বাস করি।
আমি সুপরিকল্পনা এবং জ্ঞান খুঁজে পেয়েছি।
13 প্রভুকে শ্রদ্ধা জানানোর অর্থ হল পাপকে ঘৃণা করা।
সেইসব মানুষ যারা নিজেকে অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করে আমি তাদের ঘৃণা করি।
আমি পাপের পথ এবং মিথ্যাভাষীকে ঘৃণা করি।
14 আমি মানুষকে সুবুদ্ধি এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করি।
আমিই সুবিবেচনা এবং ক্ষমতার আধার!
15 রাজারা শাসনকার্যে আমাকে ব্যবহার করেন।
ন্যায্য আইন বানাতে শাসকরা আমাকে ব্যবহার করেন।
16 পৃথিবীর সমস্ত ভাল শাসক
তাঁদের অধীনস্থ সমস্ত লোককে শাসন করতে আমাকে ব্যবহার করেন।
17 যে সব লোক আমাকে ভালোবাসে আমিও তাদের ভালোবাসি।
যারা সযত্নে আমার অন্বেষণ করে তারা আমাকে খুঁজে পাবে।
18 আমার দেবার মত ধনসম্পদ ও সম্মান রয়েছে।
আমি সত্যিকারের সম্পদ এবং সাফল্য প্রদান করি।
19 আমি যে সব জিনিস দিই তা খাঁটি সোনার চেয়েও ভালো
এবং আমার উপহারসমূহ খাঁটি রূপোর চেয়েও ভালো।
20 আমি ধর্মের পথে চলি।
আমি ন্যায় বিচারের পথ ধরে চলি।
21 যারা আমাকে ভালোবাসে আমি তাদের সম্পদ দিই।
হ্যাঁ, আমি তাদের ঘরবাড়ি ধনসম্পদে পরিপূর্ণ করে তুলি।
22 “বহুকাল আগে, শুরুতে প্রভু অন্য আর কিছু সৃষ্টি করবার আগে
আমাকে সৃষ্টি করেছিলেন।
23 আমিই আদি। আমাকে সবার আগে সৃষ্টি করা হয়েছিল।
পৃথিবীর আগে আমাকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করা হয়েছিল।
24 মহাসাগরের আগে আমাকে গঠন করা হয়েছিল।
সেখানে জল সৃষ্টির আগে আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল।
25 আমি পর্বতসমূহের আগে জন্মেছিলাম। আমি পাহাড়সমূহের আগে জন্মেছিলাম।
26 প্রভুর পৃথিবী সৃষ্টির আগে আমি জন্মেছিলাম, ভূমি তৈরীর আগে আমি জন্মেছিলাম।
ঈশ্বরের পৃথিবীতে প্রথম ধূলিকনা সৃষ্টি করার আগে আমি জন্মেছিলাম।
27 প্রভু যখন আকাশ তৈরী করেন
সেই সময় আমি ছিলাম।
প্রভু যখন ভূমির চারদিকে একটি বৃত্ত এঁকেছিলেন এবং সাগরের সীমারেখা স্থির করেছিলেন তখন আমি ছিলাম।
28 মেঘ সৃষ্টির আগে আমি রূপ পেয়েছিলাম।
ঈশ্বর যখন সাগরে জল ঢালছিলেন, আমি সেখানে ছিলাম।
29 প্রভু যখন সমুদ্রসমূহে জলের সীমা নির্ধারণ করেছিলেন
সে সময়ে আমি সেখানে ছিলাম।
সমুদ্রের তরঙ্গদল কখনই প্রভুর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করে না।
প্রভু যখন পৃথিবীর ভিত্তিস্থাপন করেন, তখন আমি ছিলাম।
30 আমি একজন দক্ষ কর্মীর মত প্রভুর পাশে ছিলাম।
আমার জন্যই প্রভু প্রতি দিন আনন্দবোধ করেছেন।
আমি তাঁর সঙ্গে সব সময় হাসি মুখে থেকেছি।
31 তাঁর জগৎ আমাকে খুশি করে।
আমি মানবজাতির সঙ্গ সুখ অনুভব করি।
32 “আমার পুত্রগণ, এখন আমার কথাগুলি শোন!
এবং তোমরাও আমার আশীর্বাদ পাবে!
33 আমার শিক্ষামালা শোন এবং জ্ঞানী হয়ে ওঠো।
ওগুলোকে অগ্রাহ্য কোরো না।
34 যে আমার কথা মেনে চলবে সে ধন্য হবে।
এমন একজন লোক প্রতি দিন আমার দরজার দিকে লক্ষ্য করে।
সে আমার দরজার পথে প্রতীক্ষা করে।
35 যে আমাকে খুঁজে পায় সে জীবন লাভ করে।
সে প্রভুর কাছ থেকে ভালো জিনিস পাবে!
36 কিন্তু যে ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে পাপ করে সে নিজেকে আঘাত করে।
যে সব লোক আমাকে ঘৃণা করে
তারা মৃত্যুকে ভালোবাসে!”
জ্ঞান এবং মূঢ়তা
9 জ্ঞান তার বাড়ি তৈরী করল। সে তার বাড়িতে সাতটি স্তম্ভ স্থাপন করল। 2 সে (জ্ঞান) মাংস রান্না করল এবং দ্রাক্ষারস তৈরী করল। সে খাওয়ার টেবিলটি সাজিয়ে রেখেছে। 3 তারপর সে তার ভৃত্যদের নগরে পাঠাল নগরবাসীদের পর্বতের চূড়ায় তার সঙ্গে ভোজসভায় যোগদান করার আমন্ত্রণ জানাতে। সে বলল, 4 “যাদের শেখার প্রয়োজন আছে তারা আসুক।” সে নির্বোধ লোকদেরও আমন্ত্রণ করল। সে বলল, 5 “এস, আমার জ্ঞানের খাবার খাও এবং আমি যে দ্রাক্ষারস তৈরী করেছি তা পান কর। 6 তোমাদের নির্বোধের পথ ত্যাগ কর, শুধুমাত্র তাহলেই তোমরা জীবন পাবে। বোধের পথকে অনুসরণ কর।”
7 তুমি যদি কোন দাম্ভিক ব্যক্তিকে তার ভুলত্রুটি সম্পর্কে সচেতন করতে যাও, তাহলে সে উল্টে তোমার সমালোচনা করবে। ঐ ব্যক্তি ঈশ্বরপ্রদত্ত জ্ঞানের অবমাননা করে। যদি কোন দুষ্ট লোককে তার অন্যায় বোঝাতে যাও, তাহলে সে তোমাকেই বিদ্রূপ করবে। 8 তাই যদি কোন ব্যক্তি নিজেকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করে, তাকে তার ভুল বোঝাতে যেও না। সে তোমাকে তার জন্য ঘৃণা করবে। কিন্তু তুমি যদি কোন জ্ঞানী ব্যক্তিকে সংশোধন করতে চেষ্টা কর সে তোমাকে ভালবাসবে ও তোমাকে শ্রদ্ধা জানাবে। 9 বুদ্ধিমান ব্যক্তিকে শিক্ষা দিলে সে আরও বুদ্ধিমান হবে। ধার্মিক ব্যক্তিকে উপদেশ দিলে তাতে তার উপকার হবে।
10 প্রভুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভক্তিই জ্ঞান অর্জন করার প্রথম ধাপ। প্রভু সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করাই বোধশক্তি অর্জনের প্রথম ধাপ। 11 তুমি যদি জ্ঞানী হও, তাহলে তুমি দীর্ঘজীবি হবে। 12 যদি তুমি জ্ঞানী হয়ে ওঠো তাহলে তাতে তুমি উপকৃত হবে। কিন্তু তুমি যদি দাম্ভিক হও এবং অপরকে উপহাস কর, তাহলে নিজেই তার জন্য যন্ত্রণা পাবে।
13 মূঢ়তা একটি প্রবল অমার্জিত স্ত্রীলোক। তার কোনও জ্ঞান নেই। 14 সে নিজের ঘরের দরজায় বসে থাকে। সে শহরের উচ্চতম স্থলে নিজের আসনের ওপর বসে থাকে। 15 এবং যখন লোকরা ঐ পথ দিয়ে যায় সে তাদের চিৎকার করে ডাকে। ঐসব লোকরা তার প্রতি উদাসীন থাকলেও সে বলে, 16 “যাদের শেখার প্রয়োজন আছে তারা আমার কাছে এস।” সে নির্বোধদেরও আহ্বান করে। 17 কিন্তু সে (নির্বুদ্ধিতা) বলে, “চুরি করা জল, নিজের বাড়ির জলের চেয়ে সুস্বাদু। চোরাই রুটি তোমার নিজের হাতে তৈরী করা রুটির চেয়ে উপাদেয়।” 18 বোকাগুলো বুঝতে পারেনি যে সেখানে ভূত থাকে। কারণ মেয়েমানুষটা তাদের মৃত্যুর জগতের গভীরতম স্থানে নিমন্ত্রণ করেছিল।
ঈশ্বরের সেবকদের নতুন চুক্তি
3 আমরা এসব বলে কি আবার নিজেদের বিষয়ে প্রশংসা করতে শুরু করেছি? অথবা কোন কোন লোক যেমন করে থাকে তেমনি তোমাদের কাছে আমাদেরও কি কোন পরিচয় পত্র নিয়ে যেতে হবে, বা তোমাদের সুপারিশের কি আমাদের কোন প্রয়োজন আছে? 2 তোমরাই আমাদের পরিচয় পত্র, যা আমাদের হৃদয়ে লেখা আছে, যা সমস্ত মানুষ জানতে ও পড়তে পারে। 3 তোমরা যে খ্রীষ্টের লেখা পত্র এবং আমরাই তা পৌঁছে দিয়েছি তা তো দেখতেই পাওয়া যাচ্ছে। তা কালি দিয়ে লেখা নয়, কিন্তু জীবন্ত ঈশ্বরের আত্মা দিয়ে লেখা; পাথরের ফলকে লেখা নয়, মানুষের হৃদয়ের ফলকের ওপরেই লেখা।
4 খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বরের ওপর আমাদের এই রকম দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছে। 5 কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আমরা নিজেরা নিজেদের যোগ্যতায় একাজ করতে পারি, তা করার শক্তি ঈশ্বরই দিয়ে থাকেন। 6 তিনিই আমাদের নতুন চুক্তির সেবক করেছেন। এই নতুন চুক্তি কোন লিখিত বিধি-ব্যবস্থা নয় কিন্তু আত্মিক ব্যবস্থা, কারণ লিখিত যে বিধি-ব্যবস্থা তা মৃত্যু নিয়ে আসে কিন্তু আত্মা জীবন দান করে।
নতুন চুক্তি মহামহিমা আনে
7 যদি পাথরের ফলকের[a] ওপর লেখা ব্যবস্থা, যার পরিণতি মৃত্যু, তা দেবার সময় এমন ঔজ্জ্বল্যের সাথে এসেছিল যে ইস্রায়েলের লোকেরা ঔজ্জ্বল্যের জন্য মোশির মুখের দিকে সোজা তাকাতে পারছিল না, যদিও সেই উজ্জ্বলতা ম্লান হয়ে যাচ্ছিল, 8 তবে আত্মার কাজ কি অনেক বেশী মহিমামণ্ডিত হবে না? 9 যে বিধি-ব্যবস্থায় মানুষ দোষী প্রতিপন্ন হচ্ছিল তা যদি মহিমামণ্ডিত হয়ে থাকে, তবে যে বিধি-ব্যবস্থা মানুষকে ঈশ্বরের কাছে ধার্মিক প্রতিপন্ন করে তার মহিমা আরও কত না বেশী হবে। 10 বাস্তবিক, তুলনায় নতুন বিধি-ব্যবস্থার মহিমার উজ্জ্বলতার কাছে পুরানো বিধি-ব্যবস্থার মহিমা ম্লান হয়ে যায়। 11 যে বিধি-ব্যবস্থা অল্প দিনের মধ্যে লোপ পেয়ে গেল তার মহিমা যদি এত উজ্জ্বল হয়ে থাকে, তবে যে বিধি-ব্যবস্থা চিরস্থায়ী তার মহিমা আরও কত না বেশী উজ্জ্বল হবে!
12 অতএব আমাদের এই ধরণের প্রত্যাশা থাকাতে আমরা খুব নির্ভীক হতে পারি। 13 আমরা মোশির মত নই। মোশি তো নিজের মুখ ঢেকে রাখতেন যাতে ইস্রায়েলীয়রা সেই উজ্জ্বলতা দেখতে না পায়, কারণ সেই মহিমা কমতে কমতে মিলিয়ে যাচ্ছিল। 14 তাদের মন কঠোর হয়ে গিয়েছিল, কারণ যখন শাস্ত্র পড়া হয় তখন মনে হয় আজও তাদের সেই আবরণ রয়েই গেছে। সেই আবরণ এখনও সরে নি, একমাত্র খ্রীষ্টের মাধ্যমেই সেই আবরণ সরিয়ে দেওয়া সম্ভব। 15 হ্যাঁ, আজও মোশির বিধি-ব্যবস্থার পুস্তক পড়ার সময় তাদের হৃদয়ের ওপরে আবরণ থাকে। 16 কিন্তু যখনই কেউ প্রভুর দিকে ফেরে তখন সেই আবরণ সরে যায়। 17 এই প্রভু হলেন আত্মা, আর প্রভুর আত্মা যেখানে সেখানেই স্বাধীনতা। 18 তাই, যখন আমরা অনাদৃত মুখে আয়নায় দেখা ছবির মত করে প্রভুর মহিমা দেখতে থাকি, তখন তা দেখতে দেখতে আমরা সকলেই তাঁর সেই (মহিমাময়) রূপে রূপান্তরিত হতে থাকি। সেই রূপান্তর আমাদের মহিমা থেকে উজ্জ্বলতর মহিমার মধ্যে নিয়ে যায়। এই মহিমা আমরা প্রভু, যিনি আজ্ঞা করেন তাঁর কাছ থেকে লাভ করি।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International