Old/New Testament
যিহূদার রাজা যোশিয়
34 যোশিয় মাত্র আট বছর বয়সে রাজা হয়ে 31 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। 2 যোশিয় প্রভু বর্ণিত সৎ পথে জীবনযাপন করেছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের মতোই তিনি বহু সৎকাজ করেন এবং এই পথ থেকে কখনও বিচ্যুত হননি। 3 তাঁর রাজত্বের আট বছরে, যোশিয়, যখন তিনি তখনও একজন বালক মাত্র ছিলেন, ঈশ্বরকে খুঁজতে শুরু করেন, যিনি তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদ দ্বারা পূজিত। বারো বছর রাজত্ব করার পর, তিনি যিহূদা ও জেরুশালেম থেকে উঁচু স্থানগুলির উৎপাটন, আশেরার খুঁটিগুলি, মূর্ত্তিসমূহ ও প্রতিকৃতি নির্মূল করার অভিযান শুরু করেন। 4 লোকরা তাঁর আদেশে বালদেবের বেদী ও ধুপধূনো দেবার উঁচু বেদীগুলি ভেঙে ফেলেন। মূর্ত্তি ও প্রতিকৃতিগুলো ভেঙে গুঁড়ো করার পর তিনি সেই ধূলো বালদেবের মৃত উপাসকদের কবরে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। 5 এবং যোশিয় বালের সেই সব যাজকদের হাড়গুলি এবং তাদের বেদীগুলি পুড়িয়ে ছাই করেন। 6 মনঃশি থেকে ইফ্রয়িম, শিমিয়োন থেকে নপ্তালি—সমগ্র যিহূদা ও জেরুশালেম থেকে 7 যোশিয় এভাবে মূর্ত্তিপূজোর অবসান ঘটিয়েছিলেন। এই সবকটি শহরে ও শহরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইস্রায়েলের সর্বত্র তিনি উচ্চস্থান ও আশেরার খুঁটি, দেবতাদের মূর্ত্তিসমূহ ভেঙে ধূলায় মিশিয়ে দিয়ে জেরুশালেমে ফিরে গেলেন।
8 যিহূদায় 18 বছর রাজত্ব করার পর এবং সেই ভূখণ্ডকে এবং মন্দিরকে শুদ্ধ করবার পর, যোশিয় অৎসলিয়র পুত্র শাফন, নগরপাল মাসেয় ও সচিব যোয়াহষের পুত্র যোয়াহকে প্রভুর মন্দিরটি সারানোর আদেশ দিলেন।
9 আদেশ পালন করতে এরা সকলে প্রথমে মহাযাজক হিল্কিয়র সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে লোকরা ঈশ্বরের মন্দিরের জন্য যে অর্থ দিয়েছেন তা তুলে দিলেন। লেবীয় দ্বাররক্ষীগণ এই অর্থ মনঃশি, ইফ্রয়িম, যিহূদা, বিন্যামীন, জেরুশালেম ও ইস্রায়েলে যারা থেকে গিয়েছিল, তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। তারপর তাঁরা জেরুশালেমে ফিরে গেলেন। 10 এরপর লেবীয়রা সেই অর্থ প্রভুর মন্দিরের কাজের তত্ত্বাবধায়কদের দিলেন। ক্রমানুসারে তত্ত্বাবধায়করা সেই অর্থ প্রভুর মন্দিরে যেসব শ্রমিক কাজ করবে তাদের দিলেন। 11 ছুতোরকে কড়িবর্গার জন্য কাঠ কিনতে এবং পাথর কেনবার জন্য পাথর কাটুরেদের অর্থ দিলেন। তাঁরা এটা করলেন কারণ যিহূদার আগের রাজারা মন্দিরের ইমারতগুলিকে ধ্বংস হয়ে যেতে দিয়েছিলেন। 12-13 নিযুক্ত শ্রমিকরা লেবীয় মরারি পরিবারের লেবীয় যহৎ ও ওবদিয়র তত্ত্বাবধানে এবং কহাৎ পরিবারের সখরিয় ও মশুল্লমের অধীনে মন প্রাণ দিয়ে কাজ করলো। যে সমস্ত লেবীয়রা দক্ষ গাইয়ে, বাজিয়ে ছিলেন তাঁরা শ্রমিকদের এবং যারা বিভিন্ন রকমের কাজ করেছিলেন, তাদের তত্ত্বাবধান করলেন। কিছু লেবীয় করনিক, অধিকারিক ও রক্ষী হিসেবে কাজ করলেন।
বিধিপুস্তক আবিষ্কার
14 সেই সময়, যখন লেবীয়রা প্রভুর মন্দির থেকে অর্থ বার করছিলেন, যাজক হিল্কিয়, মোশির মাধ্যমে প্রভু যে বিধিপুস্তকটি দিয়েছিলেন সেটিকে খুঁজে পেলেন। 15 উত্তেজিত হিল্কিয় তখন সচিব শাফনকে ডেকে বললেন, “আমি প্রভুর গৃহ থেকে বিধি পুস্তক খুঁজে পেয়েছি।” এবং তিনি শাফনকে সেটি দেখতে দিলেন। 16 শাফন তা রাজা যোশিয়র কাছে নিয়ে এসে বললেন, “আপনার কর্মচারীরা আপনার সমস্ত নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। 17 প্রভুর মন্দিরে যে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল তা দিয়ে ঠিকাদার আর মিস্ত্রিদের মজুরি দেওয়া হয়েছে।” 18 তারপর শাফন রাজা যোশিয়কে বললেন, “যাজক হিল্কিয় আমায় একটা বই দিয়েছিলেন।” একথা বলে রাজার সামনে বিধি পুস্তকটি পাঠ করতে শুরু করলেন। 19 বিধি পুস্তকের কথাগুলি শুনে রাজা যোশিয় মানসিকভাবে বিপর্য্যস্ত হলেন এবং তাঁর জামাকাপড় ছিঁড়তে শুরু করলেন। 20 এবং তখন যোশিয় হিল্কিয়কে, শাফনের পুত্র অহীকাম, মীখায়ের পুত্র অব্দোন, লেখক শাফন আর রাজার ভৃত্য অসায়কে নির্দেশ দিলেন, 21 “শিগ্গির গিয়ে প্রভুর কাছে খুঁজে পাওয়া বিধি পুস্তকে বর্ণিত বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করো। আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রভুর বিধি অনুসরণ করেন নি বলে প্রভু আমাদের ওপর খুবই ক্রুদ্ধ হয়েছেন। তাঁরা এই বইয়ে বর্ণিত সমস্ত বিধি ঠিকমতো পালন করেন নি।”
22 হিল্কিয় ও রাজার সমস্ত ভৃত্যরা সকলে তখন রাজার বস্ত্রাগারের তত্ত্বাবধায়ক হস্রহের পৌত্র, তোখতের পুত্র, শল্লুমের স্ত্রী ভাববাদিনী হুল্দার কাছে জেরুশালেমে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তখন হিল্কিয় আর রাজভৃত্যরা হুল্দাকে বইটি সম্পর্কে জানাল। 23 হুল্দা তাদের বললেন: “রাজা যোশিয়কে গিয়ে বলো: প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর জানিয়েছেন, 24 ‘আমি এই অঞ্চলে ও এখানে বসবাসকারী লোকদের জীবনে দুর্যোগ ঘনিয়ে তুলবো। যিহূদার রাজার সামনে যা পাঠ করা হয়েছে, বিধি পুস্তকে যেসব ভয়ানক ঘটনার কথা বর্ণিত হয়েছে আমি সেই সবই এখানে ঘটাবো। 25 কারণ লোকরা আমাকে পরিত্যাগ করেছে এবং অন্যান্য মূর্ত্তিসমূহের সামনে ধুপধূনো জ্বালিয়েছে; তাদের যাবতীয় কুকাজ আমায় ক্রুদ্ধ করে তুলেছে। তাই এই সমগ্র অঞ্চলের ওপর আমি আমার ক্রোধাগ্নি বর্ষণ করবো যা কিছুতে নির্বাপিত হবে না।’
26 “যাই হোক্, যিহূদার রাজা যোশিয়, যিনি তোমাদের প্রভুর কাছে খবর সংগ্রহের জন্য পাঠিয়েছেন, তাঁকে বলো যে প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর এ কথাও বলেন: 27 ‘যোশিয়, তুমি তোমার মন বদলেছ এবং আমার কাছে নিজেকে নম্র করেছ, তোমার পরনের পোশাক ছিঁড়েছ এবং আমার সামনে কেঁদেছ। তোমার হৃদয় কোমল, তাই আমি তোমার প্রার্থনা শুনেছি। 28 আমি তোমাকে তোমার পূর্বপুরুষদের মধ্যে নিয়ে যাবো। তুমি শান্তিতেই মরতে পারবে। এই ভূখণ্ডে ও এখানকার লোকদের জীবনে আমি যে দুর্যোগ ঘনিয়ে তুলবো তা তোমায় চোখে দেখে যেতে হবে না।’” হিল্কিয় ও রাজকর্মচারীরা এসে রাজাকে এই খবর জানালেন।
29 রাজা যোশিয় তখন যিহূদা ও জেরুশালেমের সমস্ত প্রবীণ ব্যক্তিদের তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বললেন। 30 রাজা নিজে প্রভুর মন্দিরে গেলেন। যখন যিহূদা ও জেরুশালেমের সমস্ত লোক, যাজক ও লেবীয়রা, ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ সবাই যোশিয়র কাছে এলো, তিনি তাদের প্রভুর মন্দিরে খুঁজে পাওয়া চুক্তি পুস্তকে লিখিত সবকিছু পাঠ করে শোনালেন। 31 এরপর রাজা তাঁর নিজের জায়গায় উঠে দাঁড়িয়ে প্রভুর সামনে তাঁর অনুগামী হবার এবং সমস্ত অন্তঃকরণ ও সমস্ত প্রাণ দিয়ে তাঁর আজ্ঞা বিধি এবং নিয়মসকল পালন করবেন বলে শপথ করলেন। 32 এরপর তিনি জেরুশালেম ও বিন্যামীনের সকলকে দিয়েও একই প্রতিশ্রুতি করালেন। জেরুশালেমের লোকরা তাদের পূর্বপুরুষের ঈশ্বরের সামনে করা শপথ রক্ষা করতে সম্মত হলেন। 33 ইস্রায়েলের লোকদের কাছে বিভিন্ন দেশের মূর্ত্তি ছিল। যোশিয় সেইসব ভয়ানক জঘন্য মূর্ত্তি ভেঙে ফেলে ইস্রায়েলের লোকদের প্রভুর সেবা করতে বাধ্য করলেন। যতদিন পর্যন্ত যোশিয় বেঁচে ছিলেন লোকরা তাদের পূর্বপুরুষের প্রভু ঈশ্বরের সেবা করে চলেছিলেন।
যোশিয়র নিস্তারপর্ব উদ্যাপন
35 রাজা যোশিয় জেরুশালেমে প্রভুর জন্য নিস্তারপর্ব উদ্যাপন করেছিলেন। প্রথম মাসের 14 দিনে তারা নিস্তারপর্বের মেষটি বলিদান করে। 2 যোশিয় তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য যাজকদের বেছে নিয়েছিলেন এবং প্রভুর মন্দিরে কাজকর্ম করার সময় তিনি তাদের উৎসাহিত করেছিলেন। 3 যে সমস্ত লেবীয়রা ইস্রায়েলের লোকদের শিক্ষাদান করতেন এবং প্রভুর সেবার জন্য যাঁরা পৃথকভাবে সমর্পিত ছিলেন, যোশিয় তাঁদের বলেছিলেন, “পবিত্র সিন্দুকটি রাজা দায়ূদের সন্তান শলোমনের বানানো মন্দিরে রেখে দাও। ওটা কাঁধে বয়ে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর তোমাদের আর কোনো প্রয়োজন নেই। এবার মন দিয়ে তোমাদের প্রভু ঈশ্বর, ইস্রায়েলের ঈশ্বর ও ইস্রায়েলের লোকদের সেবা করো। 4 পরিবারগোষ্ঠী অনুযায়ী মন্দিরের সেবার জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখো। রাজা দায়ূদ ও তাঁর সন্তান তোমাদের জন্য যে কর্তব্য বিধান করেছেন মন প্রাণ দিয়ে তা পালন করো। 5 যাও, লোকদের বিভিন্ন পরিবারের জন্য নির্দ্দিষ্ট মন্দিরের পবিত্র স্থানে লেবীয়গোষ্ঠীর সঙ্গে দাঁড়াও। 6 নিস্তারপর্বের মেষগুলো বলি দাও, প্রভুর জন্য নিজেদের শুদ্ধ ও পবিত্র করে তোলো। তোমাদের ভাইদের জন্য মেষগুলো প্রস্তুত করে রাখো। এসো, প্রভু মোশির মাধ্যমে আমাদের যা যা করতে আদেশ দিয়েছেন আমরা সেই সব করি।”
7 নিস্তারপর্বে বলি দেবার জন্য যোশিয় ইস্রায়েলের লোকদের নিজের গবাদি পশু থেকে 30,000 ছাগল ও মেষ ছাড়াও আরো 3000 ষাঁড় দিয়েছিলেন। 8 যোশিয়র অধীনস্থ উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও মুক্ত হস্তে নিস্তারপর্ব উদ্যাপনের জন্য লেবীয় ও যাজকবর্গ লোকদের বিভিন্ন পশু ও জিনিসপত্র দান করেছিলেন। প্রভুর মন্দিরের প্রধান আধিকারিক হিল্কিয়, সখরিয় এবং যিহীয়েল যাজকদের কাছে 2600টি মেষ ও ছাগল এবং 300টি ষাঁড় দান করেছিলেন। 9 কনানিয়, শময়িয়, নথনেল ও তাঁর ভাইরা, হশবিয়, যীয়ীয়েল, লেবীয় প্রধান, যোষাবদের মত লোকরা নিস্তারপর্বে বলিদানের জন্য লেবীয়দের 500টি মেষ ও ছাগল এবং 500 টি ষাঁড় দান করেছিলেন। এই লোকরা ছিল লেবীয়দের নেতৃবৃন্দ।
10 রাজা যেমন আদেশ করেছিলেন সেই অনুযায়ী সমস্ত রকম প্রস্তুতি শেষ হলে যাজকরা তাদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়ালেন এবং লেবীয়রা তাঁদের নিজের নিজের দলগুলির সঙ্গে দাঁড়ালেন। 11 নিস্তারপর্বের মেষগুলো বলি দেওয়া হল। তারপর লেবীয়রা চামড়া ছাড়িয়ে যাজকদের হাতে বলি দেওয়া পশুর রক্ত তুলে দিলেন। যাজকরা সেই রক্ত বেদীর ওপর ছিটিয়ে দিলেন এবং 12 তারপর বিভিন্ন পরিবারগোষ্ঠীর হাতে, মোশির বিধি পুস্তক অনুযায়ী, প্রভুর প্রতি হোমবলির জন্য বলির মাংস তুলে দিলেন। 13 নির্দেশ অনুযায়ী, লেবীয়রা আগুনের আঁচে নিস্তারপর্বের মেষশাবকের মাংস ঝলসে নিলেন। তারপর দ্রুত লোকদের মধ্যে মাংস বিতরণ করা হল। 14 এসব কাজ শেষ হবার পর, লেবীয়রা তাদের নিজেদের ও হারোণের উত্তরপুরুষ যাজকদের জন্য বরাদ্দ মাংসের ভাগ পেলেন। যেহেতু রাত্রি পর্যন্ত এই সমস্ত যাজক সকলেই হোমবলি এবং চর্বি নিবেদনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন, লেবীয়রা তাঁদের এবং যাজকদের জন্য মাংস তৈরী করলেন। 15 আসফের বংশের লেবীয় গায়করা এরপর রাজা দায়ূদের নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন। এঁদের মধ্যে আসফ, হেমন রাজার ভাববাদী যিদূথূন প্রমুখরা ছিলেন। দ্বাররক্ষীদের কাউকেই নিজেদের জায়গা ছেড়ে নড়তে হয়নি কারণ তাদের অন্যান্য লেবীয় ভাইরা সকলেই নিস্তারপর্বের জন্য যা যা করা প্রয়োজন, সুষ্ঠভাবে করেছিলেন।
16 অর্থাৎ রাজা যোশিয় যেভাবে বলেছিলেন প্রভুর উপাসনার জন্য সব কিছু ঠিক সেইভাবে প্রস্তুত করা হল। এরপর নিস্তারপর্ব উদ্যাপন করা হল এবং বেদীতে হোমবলি নিবেদন করা হল। 17 ইস্রায়েলের যে সমস্ত লোকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন তারা সকলে সাতদিন ধরে নিস্তারপর্ব ও খামিরবিহীন রুটির উৎসব পালন করলো। 18 সেই ভাববাদী শমূয়েলের সময়ের পর থেকে আর এভাবে ইস্রায়েলে নিস্তারপর্ব উদ্যাপন করা হয়নি। যোশিয় যেভাবে যাজকদের সঙ্গে, লেবীয়দের সঙ্গে এবং সমগ্র যিহূদা ও ইস্রায়েলে জেরুশালেমের লোকেদের সঙ্গে এই নিস্তারপর্ব উদ্যাপন করলেন, ইস্রায়েলের কোনো রাজাই আগে তা পালন করেন নি। 19 রাজা যোশিয়র রাজত্বের 18 বছরের মাথায় এই নিস্তারপর্ব উদ্যাপন করেছিলেন।
যোশিয়র মৃত্যু
20 যোশিয় এই সবকিছু করার পরে মিশররাজ নখো ফরাৎ নদীর তীরবর্তী কর্কমীশ শহরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এলেন, এবং যোশিয় তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা করলেন। 21 নখো রাজা যোশিয়কে বার্তাবাহক মারফৎ জানালেন,
“মহারাজ, আমি আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসি নি। এটি আদৌ আপনার কোনো সমস্যা নয়। আমি আমার শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছি কারণ ঈশ্বর আমার পক্ষে এবং তিনি আমাকে দ্রুত কাজ শেষ করতে বলেছেন। তাই আমাকে থামাবেন না, তাহলে ঈশ্বর আপনাকে ধ্বংস করবেন।”
22 কিন্তু যোশিয় এই সতর্কবাণীতে কর্ণপাত করলেন না এবং ছদ্মবেশে মগিদ্দোতে নখোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন। 23 যখন তীরন্দাজরা রাজা যোশিয়কে বিদ্ধ করল, তিনি তাঁর ভৃত্যদের বললেন, “আমাকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে চলো, আমি গুরুতরভাবে জখম হয়েছি।”
24 ভৃত্যরা যোশিয়কে তাঁর রথ থেকে সরিয়ে তাঁরই আনা অন্য একটি রথে করে জেরুশালেমে নিয়ে এলো। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হল। যোশিয়কে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমাধিস্থ করা হল এবং তাঁর মৃত্যুতে যিহূদা ও জেরুশালেমের লোকরা গভীরভাবে শোকাচ্ছন্ন হলেন। 25 যিরমিয় যোশিয়র পারলৌকিক অনুষ্ঠানের জন্য কিছু গান লিখেছিলেন এবং গেয়েও ছিলেন, লোকরা এখনো সেই গান গেয়ে থাকে। রাজা যোশিয়র জন্য শোক প্রকাশ করে গান গাওয়া ইস্রায়েলীয় জনজীবনের একটি অঙ্গে পরিণত হল। এই গানগুলি পারলৌকিক অনুষ্ঠানের গান পুস্তকে লিপিবদ্ধ আছে।
26-27 রাজা যোশিয় তাঁর রাজত্বের প্রথম থেকে শেষাবধি আর যা কিছু করেছিলেন সে সবই ইস্রায়েল ও যিহূদার রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। এই গ্রন্থ থেকে প্রভুর প্রতি তাঁর ভক্তি ও নিষ্ঠা এবং তিনি কিভাবে প্রভুকে অনুসরণ করেছিলেন সে কথাও জানা যায়।
যিহূদার রাজা যিহোয়াহস
36 যিহূদার লোকরা যোশিয়র পুত্র যিহোয়াহসকে জেরুশালেমে নতুন রাজা হিসেবে নির্বাচিত করলেন। 2 যিহোয়াহস 23 বছর বয়সে যিহূদার রাজা হয়ে মাত্র তিন মাস জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। 3 তারপর মিশরের রাজা নখো এসে যিহোয়াহসকে বন্দী করেন। তিনি যিহূদার লোকেদের 3 3/4 টন রূপো ও 75 পাউণ্ড সোনা কর হিসেবে দিতে বাধ্য করেন। 4 নখো যিহোয়াহসের ভাই ইলীয়াকীমকে যিহূদা ও জেরুশালেমের নতুন রাজা হিসেবে নিযুক্ত করলেন, এবং তাঁর নতুন নামকরণ করলেন যিহোয়াকীম, তবে তিনি যিহোয়াহসকে তাঁর সঙ্গে মিশরে নিয়ে যান।
যিহূদার রাজা যিহোয়াকীম
5 যিহোয়াকীম মাত্র 25 বছর বয়সে যিহূদার রাজা হয়ে এগারো বছর জেরুশালেমের রাজত্ব করেছিলেন। তিনি প্রভুর ইচ্ছা অনুসারে জীবনযাপনের পরিবর্তে তাঁর ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন।
6 বাবিলরাজ নবূখদনিৎসর যিহূদা আক্রমণ করে যিহোয়াকীমকে পেতলের শিকল দিয়ে বেঁধে বন্দী করে বাবিলে নিয়ে গেলেন। 7 ফিরে যাবার সময় নবূখদ্নিৎসর প্রভুর মন্দির থেকে বেশ কিছু জিনিসপত্র নিয়ে গিয়ে বাবিলে তাঁর রাজপ্রাসাদে রেখে দিয়েছিলেন। 8 যিহোয়াকীম আর যা কিছু করেছিলেন তাঁর সমস্ত জঘন্য পাপ আচরণের কথা ইস্রায়েল ও যিহূদার রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। যিহোয়াকীমের পর তাঁর জায়গায় তাঁর পুত্র যিহোয়াখীন নতুন রাজা হলেন।
যিহূদার রাজা যিহোয়াখীন
9 যিহোয়াখীন 18 বছর বয়সে যিহূদার রাজা হয়ে মাত্র তিন মাস দশ দিন জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তিনিও প্রভুর বিরুদ্ধে পাপ আচরণ করেছিলেন। 10 বসন্তের সময়, রাজা নবূখদ্নিৎসর প্রভুর মন্দির থেকে অনেক দামী জিনিসপত্রের সঙ্গে যিহোয়াখীনকে বন্দী করে বাবিলে নিয়ে এসেছিলেন। এরপর নবূখদ্নিৎসর যিহোয়াখীনের জনৈক আত্মীয়, সিদিকিয়কে যিহূদা ও জেরুশালেমের নতুন রাজা নিযুক্ত করলেন।
যিহূদার রাজা সিদিকিয়
11 সিদিকিয় মাত্র 21 বছর বয়সে যিহূদার রাজা হয়ে এগারো বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। 12 সিদিকিয়ও প্রভুর ইচ্ছা অনুসারে জীবনযাপন না করে তাঁর বিরুদ্ধে পাপ আচরণ করেছিলেন। ভাববাদী যিরমিয় তাঁকে প্রভুর প্রেরিত সতর্কবাণী শোনালেও সিদিকিয় তাতে কর্ণপাত করেন নি বা নম্র ও ধার্মিকভাবে জীবনযাপন করেন নি।
জেরুশালেম ধ্বংস হল
13 ইতিপূর্বে নবূখদ্নিৎসর সিদিকিয়কে তাঁর অনুগত থাকতে বললেও সিদিকিয় নবূখদ্নিৎসরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন। তিনি ঈশ্বরের নামে শপথ করে বলেছিলেন যে তিনি নবূখদ্নিৎসরের অনুগত থাকবেন। কিন্তু শপথ করার পরেও তিনি তাঁর জীবনযাপনের রীতির কোনো পরিবর্তন করেন নি; এমনকি প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের নির্দেশ মেনেও চলতে রাজী হননি। 14 উপরন্তু, যাজকগণের এবং লোকদের নেতৃবৃন্দ সকলেই প্রভুর প্রতি অবিশ্বস্ত ছিল এবং অন্যান্য জাতির মতোই পাপ আচরণ করেছিল। তারা প্রভুর মন্দিরটিকেও অপবিত্র করেছিল যেটিকে তিনি জেরুশালেমে পবিত্র করেছিলেন। 15 তাদের পূর্বপুরুষদের প্রভু ঈশ্বর বারংবার ভাববাদীদের মাধ্যমে তাদের সতর্ক করেছিলেন কারণ তিনি এই মন্দির ও লোকেদের পরিণতির কথা ভেবে করুণা বোধ করেছিলেন। 16 কিন্তু তারা ঈশ্বরের বার্তাবাহকদের নিয়ে মজা করেছিল, তারা তাঁর বাক্য ঘৃণা করেছিল এবং তাঁর ভাববাদীদের অপমান করেছিল যতক্ষণ না তাঁর ক্রোধ এত বেশী হয়ে গিয়েছিল যে তার কোন প্রতিকার ছিল না। 17 ঈশ্বর তখন বাবিলরাজকে দিয়ে যিহূদা ও জেরুশালেম আক্রমণ করালেন। বাবিলরাজ এসে সমস্ত তরুণদের, এমনকি মন্দিরে উপাসনারত লোকদেরও হত্যা করলেন। নিষ্ঠুরভাবে, কোনো দয়ামায়া না দেখিয়ে তিনি স্ত্রী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, সুস্থ-অসুস্থ, যিহূদা ও জেরুশালেমের সমস্ত ব্যক্তিকে নির্বিচারে হত্যা করলেন। প্রভুই তাঁকে যিহূদা ও জেরুশালেমের লোকদের শাস্তি দেবার অধিকার দিয়েছিলেন। 18 নবূখদ্রিৎসর প্রভুর মন্দির থেকে যাবতীয় জিনিসপত্র বাবিলে নিয়ে গেলেন। রাজকর্মচারীদের মূল্যবান জিনিসপত্রও তিনি নিয়ে যান। 19 তিনি ও তাঁর সেনাবাহিনী মিলে জেরুশালেমের প্রাকার গুঁড়িয়ে দিয়ে মন্দির, রাজপ্রাসাদ ও রাজকর্মচারীদের বাড়ী ঘরদোর সব কিছু পুড়িয়ে দিলেন। 20 যেসমস্ত ব্যক্তিরা বেঁচে ছিল নবূখদ্রিৎসর তাদের সবাইকে ক্রীতদাস হিসেবে বাবিলে নিয়ে গিয়েছিলেন। পারস্যরাজ বাবিল অধিকার করা পর্যন্ত এই সমস্ত ব্যক্তিরা বাবিলেই ছিল। 21 এইভাবে প্রভু ভাববাদী যিরমিয়র মুখ দিয়ে ইস্রায়েলের লোকদের উদ্দেশ্যে যা যা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন সে সবই মিলে গেল। প্রভু যিরমিয়র মারফৎ ভবিষ্যদ্বাণী করেন, “বিশ্রামদিনে বিশ্রাম না নিয়ে লোকেরা যে পাপ আচরণ করেছে তা শোধন করতে এই ভূখণ্ড এভাবে পতিত থাকবে।” এইভাবে, দেশটি 70 বছর ধরে বিশ্রাম পেয়েছিল। 22 পারস্যরাজ কোরসের রাজত্বের প্রথম বছরে, প্রভু কোরসকে দিয়ে তাঁর রাজ্যের সর্বত্র একটি বিশেষ ঘোষণা করালেন এবং সেটি লিখিত হল যাতে ভাববাদী যিরমিয়র মাধ্যমে দেওয়া প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণীটি সত্যি হয়। কোরস তাঁর রাজত্বের সর্বত্র বার্তাবাহক পাঠিয়ে ঘোষণা করালেন:
23 পারস্যের রাজা কোরস জানিয়েছেন যে:
“স্বর্গের প্রভু ঈশ্বর আমাকে পৃথিবীর অধীশ্বর করেছেন। তিনি আমাকে জেরুশালেমে তাঁর জন্য একটি মন্দির তৈরী করবার দায়িত্ব দিয়েছেন। এখন তোমরা প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের সেবকরা সকলেই স্বাধীন এবং তোমরা জেরুশালেমে যেতে পারো। প্রার্থনা করি প্রভু তোমাদের সকলের সহায় হোন।”
19 তখন পীলাত আদেশ দিলেন যে যীশুকে চাবুক মারার জন্য নিয়ে যাওয়া হোক্। 2 সেনারা কাঁটালতা দিয়ে একটা মুকুট তৈরী করে সেটা যীশুর মাথায় পরিয়ে দিল। তারা যীশুকে বেগুনে রঙের পোশাক পরাল, 3 এরপর তাঁর কাছে এগিয়ে এসে বলতে লাগল, “ইহুদীদের রাজা দীর্ঘজীবি হোক্!” এই বলে তারা তাঁর গালে চড় মারতে লাগল।
4 পীলাত আর একবার বাইরে বেরিয়ে এসে তাদের বললেন, “শোন, আমি যীশুকে তোমাদের সামনে নিয়ে আসছি। আমি চাই যে, তোমরা বুঝবে আমি এর কোনই দোষ খুঁজে পাচ্ছি না।” 5 এরপর যীশু বাইরে এলেন, তখন তাঁর মাথায় কাঁটার মুকুট ও পরণে বেগুনে পোশাক ছিল। পীলাত তাদের বললেন, “এই দেখ, সেই মানুষ!”
6 প্রধান যাজকরা ও মন্দিরের রক্ষীরা যীশুকে দেখে চিৎকার করে বলল, “ওকে ক্রুশে দাও, ক্রুশে দিয়ে ওকে মেরে ফেল!”
পীলাত তাদের বললেন, “তোমরা নিজেরাই একে নিয়ে গিয়ে ক্রুশে দাও, কারণ আমি এর কোন দোষ দেখতে পাচ্ছি না।”
7 ইহুদীরা তাঁকে বলল, “আমাদের যে বিধি-ব্যবস্থা আছে, সেই ব্যবস্থানুসারে ওর প্রাণদণ্ড হওয়া উচিত, কারণ ও নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলে দাবী করে।”
8 এই কথা শুনে পীলাত ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন। 9 তিনি আবার প্রাসাদের মধ্যে গেলেন। পীলাত যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কোথা থেকে এসেছ?” কিন্তু যীশু এর কোন উত্তর দিলেন না। 10 তখন পীলাত যীশুকে বললেন, “তুমি কি আমার সঙ্গে কথা বলতে চাও না? তুমি কি জান না যে তোমাকে মুক্তি দেওয়ার বা ক্রুশে বিদ্ধ করে মারবার ক্ষমতা আমার আছে?”
11 এর উত্তরে যীশু তাঁকে বললেন, “ঈশ্বর না দিলে আমার ওপর আপনার কোন ক্ষমতা থাকত না। তাই যে লোক আমাকে আপনার হাতে তুলে দিয়েছে সে আরও বড় পাপে পাপী।”
12 একথা শুনে পীলাত তাঁকে ছেড়ে দেবার জন্য চেষ্টা করলেন, কিন্তু ইহুদীরা চিৎকার করল, “যদি তুমি ওকে ছেড়ে দাও, তাহলে তুমি কৈসরের বন্ধু নও। যে কেউ নিজেকে রাজা বলবে, বুঝতে হবে সে কৈসরের বিরোধিতা করছে।”
13 এই কথা শোনার পর পীলাত যীশুকে আবার বাইরে নিয়ে এলেন ও বিচারালয়ে বসলেন। এই বিচারাসন ছিল “পাথরে বাঁধানো” নামে জায়গাতে। (ইহুদীদের ভাষায় একে “গব্বথা” বলে।) 14 সেই দিনটা ছিল নিস্তারপর্ব আয়োজনের দিন।[a] তখন প্রায় বেলা বারোটা, পীলাত ইহুদীদের বললেন, “এই দেখ, তোমাদের রাজা।”
15 তখন তারা চিৎকার করতে লাগল, “ওকে দূর কর! দূর কর! ওকে ক্রুশে দিয়ে মার!”
পীলাত তাদের বললেন, “আমি কি তোমাদের রাজাকে ক্রুশে দেব?”
প্রধান যাজকরা জবাব দিলেন, “কৈসর ছাড়া আমাদের আর কোন রাজা নেই।”
16 তখন পীলাত যীশুকে ক্রুশে বিদ্ধ করে মারবার জন্য তাদের হাতে তুলে দিলেন।
যীশুর ক্রুশারোহণ
(মথি 27:32-44; মার্ক 15:21-32; লূক 23:26-39)
শেষ পর্যন্ত তারা যীশুকে হাতে পেল। 17 যীশু তাঁর নিজের ক্রুশ বইতে বইতে “মাথার খুলি” নামে এক জায়গায় গেলেন। (ইহুদীদের ভাষায় যাকে বলা হোত “গলগথা।”) 18 সেখানে তারা যীশুকে ক্রুশে বিদ্ধ করল। তাঁর সঙ্গে তাঁর দুপাশে আরও দুজনকে ক্রুশে দিল, যীশু ছিলেন তাদের মাঝখানে।
19 পীলাত যীশুর মাথার দিকে ক্রুশের ওপর একটি ফলক টাঙ্গিয়ে দিলেন। সেই ফলকে লেখা ছিল, “নাসরতীয় যীশু, ইহুদীদের রাজা।” 20 তখন অনেক ইহুদী সেই ফলকটি পড়ল, কারণ যীশুকে যেখানে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল তা নগরের কাছেই ছিল, আর সেই ফলকের লেখাটি ইহুদীদের ভাষা, গ্রীক ও রোমীয় ভাষায় ছিল।
21 ইহুদীদের প্রধান যাজকরা পীলাতকে বললেন, “‘ইহুদীদের রাজা’ লিখো না, তার পরিবর্তে লেখো, ‘এই লোক বলেছিল, আমি ইহুদীদের রাজা।’”
22 পীলাত বললেন, “আমি যা লিখেছি তা লিখেছি।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International