Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Old/New Testament

Each day includes a passage from both the Old Testament and New Testament.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
2 বংশাবলি 28-29

যিহূদার রাজা আহস

28 আহস 20 বছর বয়সে রাজা হয়ে মোট 16 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তিনি তাঁর ধর্মনিষ্ঠ পূর্বপুরুষ দায়ূদের মতো বা প্রভুর অভিপ্রায় অনুযায়ী জীবনযাপন করেন নি। আহস ইস্রায়েলের রাজাদের খারাপ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে জীবনযাপন করেছিলেন। তিনি বালদেবতাদের আরাধনার জন্যও মূর্ত্তিসমূহ বানিয়েছিলেন। এছাড়া ইস্রায়েলীয়দের তাড়াবার আগে প্রভু যে কনানীয় জাতিদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাদের ঘৃণ্য আচরনের মত আহস বিন্-হিন্নোমের উপত্যকায় ধুপধূনো দিয়েছিলেন ও তাঁর নিজের পুত্রদের আগুনে উৎসর্গ করেছিলেন। বলিদান করা ছাড়াও আহস উঁচু বেদীগুলোয় পাহাড়ে এবং প্রত্যেকটি সবুজ গাছের তলায় ধুপধূনো দিতেন।

5-6 যেহেতু আহস এই সমস্ত পাপ আচরণে লিপ্ত হয়েছিলেন সেহেতু প্রভু, তাঁর ঈশ্বর অরাম রাজের হাতে তাঁকে যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন। আহসের বহু সৈন্যকে বন্দী করে অরামরাজ তাদের দম্মেশকে নিয়ে যান। উপরন্তু, ইস্রায়েলের রাজা রমলিয়র পুত্র পেকহর হাতেও আহসের পরাজয় ঘটে। পেকহ ও তাঁর সেনাবাহিনী মিলে একদিনের মধ্যে যিহূদার 120,000 হাজার বীর সেনাকে হত্যা করেছিলেন। পেকহ এদের পরাজিত করতে পেরেছিলেন কারণ এরা তাদের পূর্বপুরুষের ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করেছিল। ইফ্রয়িম থেকে একজন শক্তিশালী যোদ্ধা সিখ্রি, আহসের পুত্র মাসেয়কে, প্রাসাদের অধ্যক্ষ অস্রীকামকে আর কর্তৃত্বে যিনি ছিলেন রাজার পরেই সেই ইল‌্কানাকে হত্যা করেন।

ইস্রায়েলীয় সেনাবাহিনী যিহূদায় বসবাসকারী তাদের 200,000 আত্মীয়স্বজনকে বন্দী করা ছাড়াও যিহূদা নারী ও শিশুসহ বহু মূল্যবান জিনিসপত্র অপহরণ করে শমরিয়াতে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু সে সময়ে, ওদেদ নামে এক প্রভুর ভাববাদী বিজয়ী ইস্রায়েলীয় সেনাবাহিনীকে বললেন, “তোমাদের পূর্বপুরুষের দ্বারা পূজিত প্রভুর কৃপায় তোমরা যিহূদাকে হারাতে পেরেছো কারণ তিনি তাদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু তোমরা খুব নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিতভাবে যিহূদার সৈন্যদের হত্যা করেছো, তাই এখন প্রভু তোমাদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছেন। 10 তোমরা যিহূদা এবং জেরুশালেমের বন্দীদের ক্রীতদাস হিসেবে রাখবার পরিকল্পনা করেছিলে। কিন্তু তোমরা নিজেরাই প্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছ। 11 এখন আমার কথা শোনো। তোমরা তোমাদের বন্দী ভাই-বোনদের মুক্তি দাও কারণ এই অপরাধের জন্য প্রভু তোমাদের প্রতি খুবই ক্রুদ্ধ হয়েছেন।”

12 সেই সময় যিহোহাননের পুত্র অসরিয়, মশিল্লেমোতের পুত্র বেরিখিয়, শল্লুমের পুত্র যিহিষ্কিয় এবং হদ্লয়ের পুত্র অমাসা প্রমুখ ইফ্রয়িমের সৈন্যবাহিনীর এইসব নেতারা যুদ্ধ থেকে একদল ইস্রায়েলীয় সৈনিকদের ঘরে ফিরতে দেখে তাদের সতর্ক করে দিলেন। 13 তাঁরা ইস্রায়েলীয় সেনাদের বললেন, “যিহূদা থেকে কাউকে আর বন্দী করে এখানে নিয়ে এসো না কারণ তাতে প্রভুর প্রতি আমাদের পাপের বোঝা উত্তরোত্তর বাড়বে। এতে প্রভু আমাদের ও ইস্রায়েলের প্রতি খুবই ক্রুদ্ধ হবেন।”

14 তখন সেনারা তাদের নেতাদের হাতে সমস্ত বন্দীদের ও যাবতীয় লুঠ করা সম্পদ তুলে দিল। 15 বেরিখিয়, যিহিষ্কিয় এবং অমাসা নেতৃগণ ইস্রায়েলীয়রা যে সমস্ত পোশাক-আশাক এনেছিল তা থেকে উলঙ্গ বন্দীদের পরবার জন্য পোশাক দিলেন ও তাদের পরিচর্যা করতে লাগলেন। বন্দীদের সবাইকে খাবার ও পানীয় দেওয়া হল এবং তাদের মধ্যে যারা আহত হয়েছিল তাদের ক্ষতস্থানে তেল লাগিয়ে দেওয়া হল। তারপর নেতারা সমস্ত বন্দীদের, যারা খুব দুর্বল ছিল তাদের গাধার পিঠে তুলে দিলেন এবং তাদের বাড়ির কাছে তালগাছের দেশ যিরীহোতে তাদের নিয়ে গেলেন এবং শমরিয়াতে ফিরে এলেন।

16-17 এই সময়ে, ইদোমীয় সেনাবাহিনী আবার ফিরে এলো এবং যিহূদাকে অন্য একটি যুদ্ধে পরাজিত করে এবং তাদের বন্দীদের ইদোমে নিয়ে যায়। তখন রাজা আহস অশূররাজের সাহায্য প্রার্থনা করলেন। 18 পলেষ্টীয়রাও এসে দক্ষিণ যিহূদা ও যিহূদার পার্বত্য অঞ্চলে বৈৎ‌শেমশে, অয়ালোন, গদেরোৎ‌, সোখো, তিম্না, গিম্সো প্রমুখ শহর ও এইসব শহরের পাশ্ববর্তী গ্রামগুলো দখল করে বসবাস করতে শুরু করলো। 19 রাজা আহস যিহূদার লোকদের পাপের পথে পরিচালনা করার জন্যই প্রভু যিহূদাকে সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন। আহস প্রভুতে মোটেই বিশ্বাসী ছিলেন না। 20 সাহায্যের পরিবর্তে অশূররাজ তিল্গত্‌ পিল্নেষর এসে আহসের সঙ্কট আরো বাড়িয়ে তুলেছিলেন। 21 প্রভুর মন্দির, রাজপ্রাসাদ ও রাজপুত্রদের থাকা জায়গা থেকে বহু মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে সেসব অশূররাজকে দিয়েও আহস তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারেন নি।

22 সঙ্কটাবস্থায় আহস আরো বেশী করে পাপ আচরণ ও প্রভুর প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে শুরু করেন। 23 তিনি দম্মেশকের লোকদের দেবতার কাছে বলিদান নিবেদন করলেন। তাদের হাতে পরাজিত হয়ে আহস ভাবলেন, “তাহলে আমি অরামের দেবতার আরাধনা করি ও তাঁর কাছে বলিদান করি, তাহলে নিশ্চয়ই এইসব দেবতাগণ ও তাঁদের উপাসকরা আমাকে সাহায্য করবে।” যাইহোক্, তাঁরা তাঁকে সাহায্য করতে পারেন নি এবং তাঁর পতন ঘটিয়েছিলেন। এবং তাঁর সঙ্গে, সমগ্র ইস্রায়েলের পতন হয়েছিল।

24 ঈশ্বরের মন্দির থেকে সমস্ত জিনিসপত্র জড়ো করে আহস সেই সমস্ত টুকরো টুকরো করে ভেঙে প্রভুর মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দিলেন। জেরুশালেমের রাস্তার মোড়ে মোড়ে বেদী বানিয়ে 25 যিহূদার সমস্ত শহরগুলিতে আহস অন্য দেবতাদের ধুপধূনা দেবার জন্য উঁচু স্থান বানিয়ে দিলেন। এইভাবে আহস তাঁর পূর্বপুরুষদের প্রভু ঈশ্বরকে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ করে তুললেন।

26 রাজত্বের প্রথম থেকে শেষাবধি আর যা কিছু আহস করেছিলেন সেসবই যিহূদা ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা আছে। 27 আহসের মৃত্যুর পর তাঁকে জেরুশালেমে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমাধিস্থ করা হয়। তবে তাঁকে ইস্রায়েলের রাজাদের সঙ্গে সমাধিস্থ করা হয়নি। তাঁর পরে তাঁর পুত্র হিষ্কিয় তাঁর জায়গায় নতুন রাজা হলেন।

যিহূদার রাজা হিষ্কিয়

29 হিষ্কিয় 25 বছর বয়সে রাজা হয়ে মোট 29 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মা অবিয়া ছিলেন সখরিয়র কন্যা। হিষ্কিয় প্রভুর অভিপ্রায় অনুসারে তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের মতো সৎ‌ ও ধর্মনিষ্ঠভাবে জীবনযাপন করেন।

তাঁর রাজত্বকালের প্রথম বছরের, প্রথম মাসের মধ্যেই হিষ্কিয় প্রভুর মন্দিরটি আবার খুলে দিয়েছিলেন এবং মন্দিরের দরজাগুলো মেরামত করে দিয়েছিলেন। 4-5 যাজক ও লেবীয়দের একত্রিত করে মন্দিরের পূর্ব প্রান্তের খোলা চত্বরে হিষ্কিয় তাঁদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হয়ে বললেন,

“লেবীয়রা শোনো, মন্দিরের সেবা করবার পবিত্র কাজের জন্য তোমরা নিজেদের প্রস্তত কর। প্রভু, তোমাদের পূর্বপুরুষের ঈশ্বরের মন্দিরটিকে শুদ্ধ ও পবিত্র করে তোলো। মন্দিরকে অশুদ্ধ ও অপবিত্র করেছে এমন প্রতিটি জিনিষ মন্দির থেকে সরিয়ে দাও। আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রভুর অবাধ্য হয়ে জীবন কাটিয়েছে। তারা মন্দিরকে অশ্রদ্ধা করে এবং প্রভুর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে প্রভুর পথ থেকে সরে গেছে। তারা মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে এবং বাতিদানের প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখা নিভিয়ে দিয়েছে। ইস্রায়েলের ঈশ্বরের পবিত্র স্থানের বেদীতে ধুপধূনো দেওয়া আর হোমবলিও তারা বন্ধ করে দিয়েছে। তাই প্রভু, যিহূদা ও জেরুশালেমের লোকদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে তাদের শাস্তি দিয়েছেন, যাতে অন্য জাতিরা তাদের ভয়, বিস্ময় এবং উপহাসের পাত্র হিসেবে দেখে এবং তোমরা নিজেরা দেখতে পাও যে এ সবই সত্যি। তোমরা জানো এর এক বর্ণও মিথ্যা নয়, কারণ তোমরা স্বচক্ষে এই ঘটনা দেখেছো। তোমরা দেখেছো যে এই কারণেই আমাদের পূর্বপুরুষদের যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছে এবং আমাদের স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের কারারুদ্ধ করা হয়েছে। 10 একারণে আমি হিষ্কিয় প্রভু ঈস্রায়েলের ঈশ্বরকে আবার নতুন করে প্রতিশ্রুতি দিতে চাই, যাতে তিনি আর আমাদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে না থাকেন। 11 আমার লোকরা শোন, তোমরা কর্ত্তব্যে অবহেলা করো না। প্রভু তাঁর সেবার জন্য তোমাদের মনোনীত করেছেন। তাঁর মন্দিরে সেবা ও ধুপধূনো দেবার অধিকার তিনি শুধু তোমাদেরই দিয়েছেন।”

12-14 একথা শুনে নিথলিখিত লেবীয়রা কাজে লেগে গেল:

অমাসয়ের পুত্র মাহৎ এবং কহাৎ পরিবারের অসরিয়ের পুত্র যোয়েল;

অব্দির পুত্র কীশ এবং মরারি পরিবারভুক্ত যিহলিলেলের পুত্র অসরিয়;

সিম্মের পুত্র যোয়াহ আর গের্শোন পরিবারের যোয়াহের পুত্র এদন;

ইলীষাফণের বংশের শিম্রি ও যিয়ূয়েল,

আসফের পরিবারের সখরিয় ও মত্তনিয়,

হেমনের উত্তরপুরুষদের মধ্যে যিহূয়েল ও শিমিয়ি,

যিদূথূনের উত্তরপুরুষদের মধ্যে শময়িয় ও উষীয়েল।

15 তারপর তারা অন্যান্য সমস্ত লেবীয়দের একত্রে জড়ো করে প্রভুর মন্দির আনুষ্ঠানিকভাবে শোধন করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করলেন। রাজার মুখ দিয়ে প্রভুর যে আদেশ এসেছিল তা তাঁরা শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করলেন। 16 যাজকরা প্রভুর মন্দিরের অভ্যন্তরভাগে গেলেন। তাঁরা মন্দিরের মধ্যে যে সমস্ত অশুচি জিনিসপত্র ছিল সে সমস্ত বার করে মন্দিরের উঠোনে আনলেন। তারপর লেবীয়রা সেসব কিদ্রোণ উপত্যকায় নিয়ে গেলেন এবং তার মধ্যে ফেলে দিলেন। 17 প্রথম মাসের প্রথম দিনে তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দিরের শোধনের কাজ শুরু করেছিলেন। ঐ মাসেরই অষ্টম দিনে তাঁরা মন্দিরের প্রবেশ পথে এসে উপস্থিত হলেন এবং তারপর আরো আটদিন ধরে মন্দিরের শুচিকরণের কাজ করে গেলেন। সেই মাসের 16 দিনের মাথায় সমস্ত কাজ শেষ হয়েছিল।

18 এরপর তারা রাজা হিষ্কিয়র কাছে গিয়ে তাঁকে বললেন, “আমরা প্রভুর মন্দিরটি আগাগোড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেছি। হোমবলি নিবেদনের জন্য বেদী ও অন্যান্য যা কিছু, যেমন, রুটি রাখার জন্য টেবিল এবং সেখানে ব্যবহৃত বাসনকোসন পরিষ্কার ও পবিত্র করেছি। 19 রাজা আহস ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচরণ করার পরে তিনি মন্দিরের জিনিসপত্র এবং আসবাবপত্রগুলিকে অবহেলা করেছিলেন। আমরা এসব জিনিষ শুদ্ধ করেছি এবং সেগুলো প্রভুর বেদীর সামনে সাজিয়ে রেখেছি।”

20 পরদিন ভোরবেলা, রাজা হিষ্কিয় শহরের সমস্ত উচ্চপদাধিকারী কর্মচারীদের নিয়ে মন্দিরে গেলেন। 21 রাজপরিবারের, পবিত্রস্থানের এবং যিহূদার লোকদের পাপমোচনের নৈবেদ্য হিসেবে তাঁরা সাতটা ষাঁড়, সাতটা মেষ, সাতটা মেষশাবক এবং সাতটা পুং ছাগল এনেছিলেন। রাজা হিষ্কিয় হারোণের উত্তরপুরুষ যাজকদের ঐ প্রাণীগুলিকে প্রভুর বেদীতে বলি দিতে আদেশ দিলেন। 22 তাই যাজকরা প্রথমে ষাঁড়গুলি বলি দিয়ে প্রভুর বেদীতে সেই রক্ত ছিটিয়ে দিলেন। 23-24 অনুরূপভাবে যাজক সাতটা মেষ, সাতটা মেষশাবক আর সাতটা ছাগল ছানাকে পরপর বলি দিয়ে বেদীতে তাদের রক্ত ছিটিয়ে তা পবিত্র করলেন যাতে প্রভু ইস্রায়েলের লোকদের তাদের পাপ থেকে মুক্তি দেন। রাজা সমস্ত ইস্রায়েলবাসীদের হয়ে এই পাপমোচনের নৈবেদ্য ও হোমবলি নিবেদনের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

25 এরপর মহারাজ হিষ্কিয় মহাসমারোহে রাজা দায়ূদের ভাববাদী গাদ ও নাথনের দেওয়া আদেশ অনুযায়ী খোল-কর্তাল, বীণা, তানপুরা বাজাতে বাজাতে লেবীয়দের আবার প্রভুর মন্দিরে পাঠালেন। এভাবে তাঁদেরকে মন্দিরে পাঠানোর নির্দেশ প্রভু তাঁর ভাববাদীদের মুখ দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। 26 লেবীয়রা সকলে দায়ূদের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে এবং যাজকরা শিঙা নিয়ে প্রস্তুত হলেন। 27 তারপর রাজা হিষ্কিয় বেদীতে হোমবলি উৎসর্গের নির্দেশ দিলেন। হোমবলিগুলির উৎসর্গ যখন শুরু হল, তারা প্রভুর উদ্দেশ্যে গান গাওয়া শুরু করলো। রাজা দায়ূদের বানানো ভেরী ও বাদ্যযন্ত্রগুলি বাজানো হল। 28 যখন বাদ্যযন্ত্রগুলি বাজতে লাগল এবং গায়করা গান করতে লাগলেন তখন সমস্ত লোক, যাঁরা ওখানে জড়ো হয়েছিলেন তাঁরা প্রভুর উপাসনা করলেন। হোমবলি উৎসর্গ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা উপাসনা করে গেলেন।

29 বলিদানের কাজ শেষ হলে হিষ্কিয় সহ অন্যান্য সকলেই আভূমি নত হয়ে উপাসনা করলেন। 30 যখন রাজা হিষ্কিয় ও পদস্থ ব্যক্তিরা তাঁদের প্রভুর প্রশংসা করে গান গাইতে নির্দেশ দিলেন তাঁরা দায়ূদ ও ভাববাদী আসফের লেখা গানগুলো গাইলেন। প্রভুর প্রশংসা করে ও তাঁর সামনে মাথা নত করে তাঁরা সকলেই আনন্দিত হয়ে উঠলেন। 31 হিষ্কিয় বললেন, “যিহূদাবাসীরা শোনো, তোমরা নিজেদেরকে প্রভুর চরণে নিবেদন করলে। এসো তোমরা প্রভুর উদ্দেশ্যে দেওয়ার জন্য আরো বলির জীব ও ধন্যবাদ নৈবেদ্য নিয়ে এসো।” তখন সকলে যার যেমন ইচ্ছে প্রভুর জন্য নৈবেদ্য ও হোমবলি নিয়ে এলো। 32 সেদিন, হোমবলি হিসেবে মোট 70টি ষাঁড়, 100টি মেষ এবং 200টি মেষশাবক প্রভুর কাছে নিবেদিত হল। 33 পবিত্র নৈবেদ্য হিসেবে নিবেদিত হল 600টি ষাঁড় ও 3000 মেষ। 34 হোমবলির নিমিত্তে সমস্ত জন্তুদের ছাল ছাড়ানো ও কাটবার জন্য যাজকরা সংখ্যায় খুব কমই ছিলেন। তাই তাঁদের আত্মীয়বর্গ, লেবীয়রা সাহায্য করতে এলেন যতক্ষণ না কাজটি শেষ হয় এবং যতক্ষণ না যাজকরা নিজেদের শুদ্ধ করেন, কারণ যাজকদের থেকে লেবীয়রা নিজেদের শুদ্ধ করতে বেশী বিশ্বস্ত ছিলেন। 35 বহু পরিমাণ হোমবলি ছাড়াও, শান্তি নৈবেদ্য এবং পেয় নৈবেদ্যর জন্য প্রচুর চর্বি ছিল যেগুলি হোমবলির সঙ্গে দেওয়ার জন্য ছিল। প্রভুর মন্দিরের নিত্যকর্ম আবার শুরু হল। 36 হিষ্কিয় ও তাঁর প্রজারা সকলে ঈশ্বর যে ভাবে অতি দ্রুত তাদেরকে তাঁর সেবার জন্য প্রস্তুত করেছেন তা ভেবে খুবই আনন্দিত হলেন।

যোহন 17

শিষ্যদের জন্য যীশুর প্রার্থনা

17 এইসব কথা বলার পর যীশু স্বর্গের দিকে তাকিয়ে এই কথা বললেন, “পিতা, এখন সময় হয়েছে; তোমার পুত্রকে মহিমান্বিত কর, যেন তোমার পুত্রও তোমাকে মহিমান্বিত করতে পারে। সমস্ত মানুষের উপর পুত্রকে তুমি অধিকার দিয়েছ যাতে তিনি তাদের সকলকে অনন্ত জীবন দিতে পারেন। এই হল অনন্ত জীবন; তারা তোমাকে জানে যে তুমি একমাত্র সত্য ঈশ্বর ও তুমি যাঁকে পাঠিয়েছ সেই যীশু খ্রীষ্টকে জানে। তুমি যে কাজ করার দায়িত্ব আমায় দিয়েছিলে, তা আমি শেষ করেছি ও পৃথিবীতে তোমাকে মহিমান্বিত করেছি। তাই এখন তোমার সান্নিধ্যে আমায় মহিমান্বিত কর। হে পিতা, জগত সৃষ্টির পূর্বে তোমার কাছে আমার যে মহিমা ছিল, তুমি সেই মহিমায় এখন আমায় মহিমান্বিত কর।

“এই জগতের মধ্যে থেকে তুমি যে সব লোকদের আমায় দিয়েছ, আমি তাদের কাছে তোমার পরিচয় দিয়েছি। তারা তোমারই ছিল এবং তুমি তাদেরকে আমায় দিয়েছ, আর তারা তোমার শিক্ষানুসারে চলেছে। এখন তারা বুঝেছে যে তুমি যা কিছু আমায় দিয়েছ তা তোমার কাছ থেকেই এসেছে। তুমি আমায় যে শিক্ষা দিয়েছ তা আমি তাদের দিয়েছি, আর তা তারা গ্রহণও করেছে। তারা সত্যিই বুঝেছে যে আমি তোমারই কাছ থেকে এসেছি, আর তারা বিশ্বাস করে যে তুমি আমায় পাঠিয়েছ। আমি তাদের জন্য এখন প্রার্থনা করছি। আমি সারা জগতের জন্য প্রার্থনা করছি না, কেবল সেই সকল লোকদের জন্য প্রার্থনা করছি যাদের তুমি দিয়েছ, কারণ তারা তোমার। 10 আমার যা কিছু তা তোমার, আর তোমার যা তা আমার। আর এদের মাধ্যমে আমি মহিমান্বিত হয়েছি।

11 “আমি আর এই জগতে থাকছি না, কিন্তু তারা এই জগতে থাকছে, আমি তোমারই কাছে যাচ্ছি। পবিত্র পিতা, যে নাম তুমি আমায় দিয়েছ, তোমার সেই নামের শক্তিতে তুমি তাদের রক্ষা কর। আমরা যেমন এক, তেমনি তারা যেন সকলে এক হতে পারে। 12 আমি যখন তাদের সঙ্গে ছিলাম, আমি তাদের নিরাপদে রেখেছিলাম। তুমি আমায় যে নাম দিয়েছ সেই নামের শক্তিতে তখন আমি তাদের রক্ষা করেছিলাম। আমি তাদের সাবধানে রক্ষা করেছি। তাদের মধ্যে কেউ বিনষ্ট হয় নি, একমাত্র ব্যতিক্রম সেই লোকটি, ধ্বংস হওয়াই যার পরিণতি। শাস্ত্রের কথা সফল করার জন্যেই এই পরিণতি।

13 “এখন আমি তোমার কাছে আসছি, কিন্তু এই জগতে থাকতে থাকতে আমি এসব কথা বলছি, যেন তারা আমার যে আনন্দ তা পরিপূর্ণরূপে পায়। 14 আমি তাদের তোমার শিক্ষা জানিয়েছি, কিন্তু জগত সংসার তাদের ঘৃণা করে, কারণ তারা এই জগতের নয়, যেমন আমিও এই জগতের নই।

15 “তাদের এই জগত থেকে নিয়ে যাবার জন্য আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি না, কিন্তু তাদের মন্দ শক্তির হাত থেকে রক্ষা কর। 16 তারা এই জগতের নয়, যেমন আমিও এ জগতের নই। 17 সত্যের দ্বারা তোমার সেবার জন্য তুমি তাদের পবিত্র কর। তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ। 18 তুমি যেমন এ জগতে আমাকে পাঠিয়েছ, আমিও তাদের তেমনি জগতের মাঝে পাঠিয়েছি। 19 তাদের জন্য আমি তোমার সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করেছি, যেন তারাও সত্যের মাধ্যমে তোমার সেবায় নিজেদের নিযুক্ত করতে পারে।

20 “আমি কেবল এদের জন্যই প্রার্থনা করছি না, এদের শিক্ষার মধ্য দিয়ে যারা আমায় বিশ্বাস করবে তাদের জন্যও করছি। 21 পিতা, যেমন তুমি আমাতে রয়েছ, আর আমি তোমাতে রয়েছি, তেমনি তারাও যেন এক হয়। তারা যেন আমাদের মধ্যে থাকে যাতে জগত সংসার বিশ্বাস করে যে তুমি আমাকে পাঠিয়েছ। 22 আর তুমি আমায় যে মহিমা দিয়েছ তা আমি তাদের দিয়েছি, যাতে আমরা যেমন এক, তারাও তেমনি এক হতে পারে। 23 আমি তাদের মধ্যে, আর তুমি আমার মধ্যে থাকবে, এইভাবে তারা যেন সম্পূর্ণভাবে এক হয়। জগত যাতে জানে যে তুমি আমায় পাঠিয়েছ। আর তুমি যেমন আমায় ভালবেসেছ, তেমনি তুমি তাদেরও ভালবেসেছ।

24 “পিতা, আমি চাই, আমি যেখানে আছি, তুমি যাদের আমায় দিয়েছ, তারাও যেন আমার সঙ্গে সেখানে থাকে। আর তুমি আমায় যে মহিমা দিয়েছ তারা আমার সেই মহিমা যেন দেখতে পায়, কারণ জগত সৃষ্টির আগেই তুমি আমায় ভালবেসেছ। 25 ন্যায়বান পিতা, জগত তোমায় জানে না, কিন্তু আমি তোমায় জানি। আর আমার এই শিষ্যরা জানে যে তুমি আমায় পাঠিয়েছ। 26 তুমি কে আমি তাদের কাছে তা প্রকাশ করেছি, আর এরপরেও আমি তাদের কাছে তা করতেই থাকব। তাহলে তুমি আমায় যেমন ভালবেসেছ, তারা একইভাবে অন্যদের ভালবাসবে আর আমি তাদের মধ্যেই থাকব।”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International