Old/New Testament
রহবিয়ামের নির্বুদ্ধিতা
10 1-3 ইস্রায়েলের সমস্ত লোক রহবিয়ামকে নতুন রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করবার জন্য শিখিমে জমায়েত হয়েছিল, তাই রহবিয়াম সেখানে গিয়েছিলেন। নবাটের পুত্র যারবিয়াম যখন একথা শুনলেন, তিনি মিশর থেকে যেখানে তিনি রাজা শলোমনের কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে ফিরে এলেন। ইস্রায়েলের উত্তরাঞ্চলের উপজাতিরা তাঁকেও তাদের সঙ্গে যোগ দিতে বলল।
এবং তিনি ও ইস্রায়েলের সবাই রহবিয়ামের কাছে গিয়ে বললেন, 4 “মহারাজ, আপনার পিতার জন্য আমাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। এখন আপনি দয়া করে সেই বোঝা কিছুটা হাল্কা করলে আমরা আপনার জন্য কাজ-কর্ম করতে পারি।”
5 রহবিয়াম তাদের বললেন, “তোমরা তিনদিন পরে আমার কাছে ফিরে এসো।” সুতরাং তারা তখনকার মতো চলে গেল।
6 তখন রাজা রহবিয়াম, তাঁর পিতার আমলে কাজ করেছেন এরকম সমস্ত প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। রহবিয়াম তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনারা পরামর্শ দিন এখন আমি কি করব?”
7 প্রবীণরা তাঁকে বললেন, “আপনি যদি এই সমস্ত প্রজাদের সঙ্গে সদ্ববহার করেন এবং তাদের কষ্ট লাঘব করার ব্যবস্থা করেন তাহলে তারা চিরজীবন আপনার অনুগত হয়ে কাজ করবে।”
8 কিন্তু রহবিয়াম প্রবীণদের কথায় কর্ণপাত করলেন না। তার বদলে তিনি যাদের সঙ্গে বড় হয়েছিলেন সেই যুবকদের একই কথা জিজ্ঞাসা করলেন, 9 “এই লোকদের আমি কি উত্তর দেব? ওরা আমাকে ওদের কাজের ভার কমাতে বলছে।”
10 তখন রহবিয়ামের বন্ধু ও সঙ্গীরা তাঁকে পরামর্শ দিলেন, “যেসব লোক তাদের কাজের ভার নিয়ে নালিশ করেছে, আপনি তাদের এই কথা বলুন। লোকরা আপনাকে বলছে, ‘আপনার পিতা আমাদের জীবন কঠিন করে তুলছে, এটা অত্যন্ত ভারী বোঝার মতো। কিন্তু আমরা চাই আপনি তা লঘু করুন।’ কিন্তু রহবিয়াম তাদের বলল, ‘ঐসব লোকদের ডাকুন আর বলুন, বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড় হয়। 11 তোমরা বলছো যে আমার পিতা নাকি তোমাদের খাটিয়ে মারছিলেন, তোমাদের ওপর বড্ড বোঝা পড়ছিল? বোঝা কাকে বলে এবার বুঝবে। আমি তোমাদের কি রকম কাজ করাই দেখো। আমার পিতা তোমাদের শুধু চাবকাতেন। আমি তোমাদের কাঁকড়া বিছে দিয়ে চাবকাবো।’”
12 তিনদিন পরে আমার কাছে রহবিয়ামের আদেশ মতো, যারবিয়াম সহ সবাই তাঁর কাছে তাঁর সিদ্ধান্তের কথা জানতে এলো। 13 প্রবীণদের কথায় কান না দিয়ে সঙ্গীদের পরামর্শ মতো রহবিয়াম তাঁদের সঙ্গে খুব কর্কশভাবে কথা বললেন এবং 14 সঙ্গীদের উপদেশ অনুযায়ী বললেন, “আমার পিতা তোমাদের জোয়ালকে ভারী করেছিলেন, আমি তাকে আরো ভারী করব। আমার পিতা শুধু তোমাদের চাবকাতেন, কিন্তু আমি কাঁকড়া বিছে দিয়ে চাবকাবো।” 15 অর্থাৎ রহবিয়াম প্রজা সাধারণের আবেদনে কোনো কর্ণপাত করলেন না। অবশ্য যাতে যারবিয়াম সম্পর্কে বলা শীলোনীয় অহিয়ের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয় তাই এসব ঘটনা প্রভুর অভিপ্রায় অনুযায়ীঘটেছিল।
16 যখন ইস্রায়েলের লোকরা দেখল যে রাজা রহবিয়াম তাদের আবেদনে কোনই মনোযোগ দিলেন না, তখন তারা উত্তর দিল, “আমরা কি দায়ূদের বংশের অধিকারভুক্ত অথবা যিশয়ের উত্তরাধিকারে আমাদের কোন দাবী আছে? না! সুতরাং ইস্রায়েল, চল আমরা আমাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাই এবং দায়ূদের বংশ নিজেই দেখাশোনা করুক।” সুতরাং ইস্রায়েলের উত্তরাঞ্চলের উপজাতি সমস্ত লোক যে যার নিজের বাড়িতে ফিরে গেল। 17 সুতরাং, যারা যিহূদা অঞ্চলে বাস করত শুধুমাত্র সেই লোকদের ওপর রহবিয়াম রাজত্ব করেছিলেন।
18 হদোরাম ক্রীতদাসদের ওপর নজরদারির কাজ করতো। যখন রহবিয়াম তাকে উত্তরাঞ্চলের উপজাতি লোকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পাঠিয়েছিলেন, তারা সকলে পাথর ছুঁড়ে হদোরামকে হত্যা করেছিল। তখন রহবিয়াম তাড়াতাড়ি নিজের রথে চড়ে জেরুশালেমে পালিয়ে গেলেন। 19 এই ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের জনগোষ্ঠী দায়ূদের বংশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এসেছে।
11 রহবিয়াম জেরুশালেমে এসে যিহূদা ও বিন্যামীনের উপজাতিগুলির থেকে বেছে 180,000 সেনা জোগাড় করলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নিজের জন্য রাজ্য দখল করা। 2 কিন্তু প্রভু ভাববাদী শময়িয়র সঙ্গে কথা বললেন এবং বললেন, 3 “শময়িয় যাও, গিয়ে রহবিয়াম আর যিহূদা ও বিন্যামীনে বসবাসকারী ইস্রায়েলীয়দের গিয়ে বলো 4 আমি বলেছি, প্রভু বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে বাড়িতে ফিরে যাও কারণ আমার অভিপ্রায়েই এই ঘটনা ঘটেছে।’” প্রভুর বার্তা শুনে যারবিয়ামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে রহবিয়াম ও তাঁর সেনাবাহিনীর সবাই যে যার বাড়ি ফিরে গেল।
রহবিয়াম যিহূদাকে সুদৃঢ় করলেন
5 রহবিয়াম নিজে জেরুশালেমে বাস করতেন। তিনি শত্রুপক্ষের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার জন্য যিহূদায় অনেক সুদৃঢ় শহর বানিয়েছিলেন। 6-10 তিনি যিহূদা ও বিন্যামীনের বৈৎলেহম, ঐটম, তকোয়, বৈৎ-সুর, সেখো, অদুল্লম, গাৎ, মারেশা, সীফ, অদোরয়িম, লাখীশ, অসেকা, সরা, অয়ালোন ও হিব্রোণ প্রমুখ শহরগুলো শক্তিশালী করেন। 11 এই শহরগুলো শক্তিশালী করবার পর তিনি এই শহরগুলির জন্য সেনাপতিসমূহ নিয়োগ করলেন এবং তাদের খাবার, তেল, দ্রাক্ষারস ইত্যাদি সরবরাহ করেছিলেন এবং 12 এই সমস্ত শহরগুলোতে রহবিয়াম ঢাল এবং বর্শাসমূহ রেখেছিলেন যাতে তারা শহরগুলি প্রতিরক্ষা করতে পারে। সুতরাং শহরগুলি রহবিয়ামের অধিকারভুক্ত ছিল।
13 যাজকগণ এবং ইস্রায়েলের উত্তর এবং দক্ষিণাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর লোকেরা ও লেবীয়রা এলেন এবং রহবিয়ামকে সমর্থন করবার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন। 14 লেবীয়রা তাঁদের নিজস্ব চাষ আবাদের জমি ও ঘাস জমি ছেড়ে যিহূদা এবং জেরুশালেমে চলে এসেছিলেন, কারণ যারবিয়াম ও তাঁর পুত্ররা তাঁদের প্রভুর যাজক হিসেবে কাজ করতে দেননি।
15 বেদীতে তাঁর তৈরী বাছুর ও ছাগলের মূর্ত্তিগুলোর সামনে পূজো করার জন্য তিনি নিজের পছন্দমতো যাজকদের নিয়োগ করেছিলেন। 16 লেবীয়রা যখন ইস্রায়েল ত্যাগ করে চলে গেলেন তখন ইস্রায়েলের ধর্মভীরু পরিবারগোষ্ঠীর সদস্যরাও জেরুশালেমে তাঁদের পূর্বপুরুষের প্রভুর কাছে বলিদান করার জন্য চলে এলেন। 17 জেরুশালেমে এসে এই লোকরা যিহূদাকে শক্তিশালী করল এবং রহবিয়ামকে তিন বছরের জন্য সহায়তা দিল, কারণ তারা দায়ূদ ও শলোমনের মতো ঈশ্বরকে মান্য করে জীবনযাপন করেছিল।
রহবিয়ামের পরিবারবর্গ
18 রহবিয়াম দায়ূদের পুত্র যিরীমোতের কন্যা মহলৎকে বিয়ে করেছিলেন। মহলতের মাতা অবীহয়িল ছিলেন যিশয়ের পৌত্রী, ইলীয়াবের কন্যা। 19 রহবিয়াম আর মহলতের পুত্রদের নাম ছিল: যিয়ূশ, শমরিয় এবং সহম। 20 এরপর, রহবিয়াম অবশালোমের কন্যা মাখাকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুজনের পুত্রের নাম হল: অবিয়, অত্তয়, সীষ এবং শলোমীৎ। 21 রহবিয়ামের 18 জন স্ত্রী ও 60 জন উপপত্নী থাকলেও তিনি তাঁর স্ত্রী মাখাকেই সবচেয়ে বেশী ভালবাসতেন। সব মিলিয়ে রহবিয়ামের 28 জন পুত্র ও 60 জন কন্যা হয়েছিল।
22 তাঁর পুত্রদের মধ্যে রহবিয়াম অবিয়কে যুবরাজ, তার ভাইদের মধ্যে নেতা বলে ঘোষণা করেন কারণ তিনি তাকেই পরবর্তী রাজা করতে চেয়েছিলেন। 23 বিচক্ষণতার সঙ্গে রহবিয়াম তাঁর পুত্রদের যিহূদা ও বিন্যামীনের সমস্ত জায়গায়, দূর্গসম্বলিত সমস্ত শহরে পাঠিয়েছিলেন এবং তাদের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়েছিলেন। তিনি তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করেছিলেন।
মিশর রাজ শীশকের জেরুশালেম আক্রমণ
12 এমশঃ রহবিয়াম তাঁর রাজ্যের ভিত সুদৃঢ় করে একজন ক্ষমতাশালী রাজায় পরিণত হলেন। কিন্তু এরপর রহবিয়াম ও যিহূদার পরিবারগোষ্ঠী প্রভুর বিধি ও নির্দেশ অমান্য করতে শুরু করলেন।
2 এর ফলস্বরূপ প্রভুর ইচ্ছেয় মিশরের রাজা শীশক রহবিয়ামের রাজত্বের পঞ্চম বছরে জেরুশালেম আক্রমণ করলেন। 3 শীশকের সঙ্গে ছিল 12,000 রথসমূহ এবং 60,000 ঘোড়-সওয়ার সহ একটি বিশাল সেনাবাহিনী। শীশকের সেনাবাহিনীতে এত লূবীয, সুক্কীয়, কূশীয় লোক ছিল যে তাদের গোনা যেত না। 4 জেরুশালেমে এসে উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত শীশক যিহূদার সমস্ত দূর্গ নগরীগুলি দখল করতে লাগলেন।
5 সেই সময়ে, ভাববাদী শময়িয়, রহবিয়াম ও যিহূদার নেতৃবৃন্দ যাঁরা শীশকের আক্রমণের কারণে জেরুশালেমে এসে জড়ো হয়েছিলেন তাদের কাছে গেলেন এবং বললেন, “প্রভু বলেছেন: ‘রহবিয়াম, তুমি ও যিহূদার লোকেরা আমায় ত্যাগ করেছো, অতএব একইভাবে আমিও তোমাদের শীশকের বিরুদ্ধে আমার সাহায্য ছাড়াই যুদ্ধ করতে ছেড়ে দিয়েছি।’”
6 তখন রহবিয়াম ও যিহূদার নেতারা বিনম্র হলেন, অনুতাপ করলেন এবং বললেন, “প্রভু তো ঠিক কথাই বলেছেন, আমরা পাপাত্মা।”
7 প্রভু যখন দেখলেন যে রাজা ও তাঁর নেতারা বিনীত হয়েছেন এবং অনুশোচনা করেছেন তখন তিনি শময়িয়কে বললেন, “যেহেতু রাজা ও নেতারা বিনীত হয়েছেন ও অনুতপ্ত হয়েছেন, আমি ওদের ধ্বংস করবো না, কিন্তু জেরুশালেমকে শীশকের সেনাবাহিনীর হাত থেকে মুক্তি দিয়ে আমার ক্রোধের থেকে তাদের কয়েকজনকে অব্যাহতি দেব। 8 কিন্তু তবুও, তারা তার দাস হবে, যাতে তারা বুঝতে পারে যে আমাকে সেবা করা আর একজন পার্থিব রাজাকে সেবা করার মধ্যে তফাত্ আছে।”
9 মিশররাজ শীশক জেরুশালেম আক্রমণ করে প্রভুর মন্দিরের সমস্ত ধনসম্পদ লুঠ তো করলেনই, রাজপ্রাসাদের যাবতীয় সম্পদও তিনি অপহরণ করে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। রাজা শলোমনের বানানো সোনার ঢালগুলোও শীশক নিয়ে যান। 10 তার জায়গায় রহবিয়াম পিতলের ঢালগুলি রাখলেন এবং সেগুলো রাজপ্রাসাদের দ্বাররক্ষীদের দায়িত্বে রেখে দিলেন। 11 যখন তিনি প্রভুর মন্দিরে যেতেন তারা এগুলো বার করতো, পরে আবার দ্বাররক্ষীদের ঘরেই তুলে রাখতো।
12 যেহেতু রহবিয়াম বিনীত হয়েছিলেন এবং যা করেছিলেন তার জন্য অনুতপ্ত হয়েছিলেন, প্রভু তাঁর ক্রোধ সরিয়ে নিলেন এবং তাদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করলেন না কারণ যিহূদায় কিছু ধার্মিকতা তখনও বাকী ছিল।
13 রাজা রহবিয়াম এমশঃ জেরুশালেমে নিজেকে ক্ষমতাশালী রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি 41 বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং ইস্রায়েলের সমস্ত অঞ্চলগুলির মধ্যে থেকে প্রভু যে স্থানটিতে নিজের নাম রাখার জন্য বেছে নিয়েছিলেন সেই জেরুশালেমে 17 বছর রাজত্ব করেছিলেন। রহবিয়ামের মা নয়মা ছিলেন একজন অম্মোনীয়া। 14 রহবিয়াম বিভিন্ন অসৎ কর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন কারণ তিনি অন্তঃকরণ থেকে প্রভুকে অনুসরণ করেন নি।
15 তাঁর রাজত্বের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রহবিয়াম যা কিছু করেছিলেন সেসবই ভাববাদী শময়িয় আর ইদ্দোর লেখা পারিবারিক ইতিহাস থেকে জানতে পারা যায়। রহবিয়াম ও যারবিয়ামের রাজত্বকালে, দুজনের মধ্যে সব সময়েই যুদ্ধ লেগে থাকতো। 16 মৃত্যুর পর দায়ূদ নগরীতে রহবিয়ামকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমাহিত করা হয়। তারপর তাঁর পুত্র অবিয় নতুন রাজা হলেন।
30 যীশু তখনও গ্রামের মধ্যে ঢোকেন নি। মার্থা যেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন তিনি সেখানেই ছিলেন। 31 যে ইহুদীরা মরিয়মের সঙ্গে বাড়িতে ছিল ও তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল, তারা যখন দেখল যে মরিয়ম তাড়াতাড়ি করে উঠে বাইরে যাচ্ছেন, তখন তারাও তাঁর পিছনে পিছনে চলল। তারা মনে করল যে তিনি হয়তো লাসারের কবরের কাছে যাচ্ছেন ও সেখানে গিয়ে কাঁদবেন। 32 যীশু যেখানে ছিলেন, মরিয়ম সেখানে এসে তাঁকে দেখে তাঁর পায়ের ওপর পড়ে বললেন, “প্রভু, আপনি যদি এখানে থাকতেন, আমার ভাই মরত না।”
33 যীশু যখন দেখলেন যে মরিয়ম কাঁদছেন আর তাঁর সঙ্গে যে সব ইহুদীরা এসেছিল তারাও কাঁদছে, তখন তিনি দুঃখিত হয়ে উঠলেন এবং অন্তরে গভীরভাবে বিচলিত হলেন। 34 তখন তিনি বললেন, “তোমরা তাকে কোথায় রেখেছ?”
তারা বললেন, “প্রভু, আসুন, এসে দেখুন।”
35 যীশু কেঁদে ফেললেন।
36 তখন সেই ইহুদীরা সকলে বলতে লাগল, “দেখ! উনি লাসারকে কত ভালোবাসতেন।”
37 কিন্তু তাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ বলল, “যীশু তো অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি দিয়েছেন তাহলে কেন তিনি লাসারকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচালেন না?”
যীশু লাসারকে জীবন দান করেন
38 এরপর যীশু আবার অন্তরে বিচলিত হয়ে উঠলেন। লাসারকে যেখানে রাখা হয়েছিল, যীশু সেই কবরের কাছে গেলেন। কবরটি ছিল একটা গুহা, যার প্রবেশ পথ একটা পাথর দিয়ে ঢাকা ছিল। 39 যীশু বললেন, “ঐ পাথরটা সরিয়ে ফেল।”
সেই মৃত ব্যক্তির বোন মার্থা বললেন, “প্রভু চারদিন আগে লাসারের মৃত্যু হয়েছে। এখন পাথর সরালে এর মধ্য থেকে দুর্গন্ধ বার হবে।”
40 যীশু তাঁকে বললেন, “আমি কি তোমায় বলিনি, যদি বিশ্বাস কর তবে ঈশ্বরের মহিমা দেখতে পাবে?”
41 এরপর তারা সেই পাথরখানা সরিয়ে দিল, আর যীশু উর্দ্ধ দিকে তাকিয়ে বললেন, “পিতা, আমি তোমায় ধন্যবাদ দিই, কারণ তুমি আমার কথা শুনেছ। 42 আমি জানি তুমি সব সময়ই আমার কথা শুনে থাক। কিন্তু আমার চারপাশে যাঁরা দাঁড়িয়ে আছে তাদের জন্য আমি একথা বলছি, যেন তারা বিশ্বাস করে যে তুমি আমায় পাঠিয়েছ।” 43 এই কথা বলার পর যীশু জোর গলায় ডাকলেন, “লাসার বেরিয়ে এস!” 44 মৃত লাসার সেই কবর থেকে বাইরে এল। তার হাত-পা টুকরো কাপড় দিয়ে তখনও বাঁধা ছিল আর তার মুখের ওপর একখানা কাপড় জড়ানো ছিল।
যীশু তখন তাদের বললেন, “বাঁধন খুলে দাও এবং ওকে যেতে দাও।”
ইহুদী নেতারা যীশুকে হত্যার চক্রান্ত করতে লাগল
(মথি 26:1-5; মার্ক 14:1-2; লূক 22:1-2)
45 তখন মরিয়মের কাছে যারা এসেছিল, সেই সব ইহুদীদের মধ্যে অনেকে যীশু যা করলেন তা দেখে যীশুর ওপর বিশ্বাস করল। 46 কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজন ফরীশীদের কাছে গিয়ে যীশু যা করেছিলেন তা তাদের জানালো। 47 এরপর প্রধান যাজক ও ফরীশীরা পরিষদের এক মহাসভা ডেকে সেখানে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল, “আমরা এখন কি করব? এই লোকটা তো অনেক অলৌকিক চিহ্নকার্য করছে। 48 আমরা যদি ওকে এইভাবেই চলতে দিই তাহলে তো সকলেই এর ওপর বিশ্বাস করবে। তখন রোমীয়রা এসে আমাদের এই মন্দির ও আমাদের জাতিকে ধ্বংস করবে।”
49 কিন্তু তাদের মধ্যে একজন, যাঁর নাম কায়াফা, যিনি সেই বছরের জন্য মহাযাজকের পদ পেয়েছিলেন, তাদের বললেন, “তোমরা কিছুই জানো না। 50 আর তোমরা এও বোঝ না যে গোটা জাতি ধ্বংস হওয়ার পরিবর্তে সেই মানুষের মৃত্যু হওয়া তোমাদের পক্ষে মঙ্গলজনক হবে।”
51 একথা কায়াফা যে নিজের থেকে বললেন তা নয়, কিন্তু সেই বছরের জন্য মহাযাজক হওয়াতে তিনি এই ভাববাণী করলেন, যে সমগ্র জাতির জন্য যীশু মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছেন। 52 যীশু যে কেবল ইহুদী জাতির জন্য মৃত্যুবরণ করবেন তা নয়, সারা জগতে যে সমস্ত ঈশ্বরের সন্তানরা চারদিকে ছড়িয়ে আছে, তাদের সকলকে একত্রিত করার জন্য যীশু মৃত্যুবরণ করবেন।
53 তাই সেই দিন থেকে তারা যীশুকে হত্যা করার জন্য চক্রান্ত করতে লাগল। 54 যীশু তখন প্রকাশ্যে ইহুদীদের মধ্যে চলাফেরা বন্ধ করে দিলেন। তিনি সেখান থেকে মরুপ্রান্তরের কাছে ইফ্রয়িম নামে এক শহরে চলে গেলেন এবং সেখানে তিনি তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে থাকলেন।
55 ইহুদীদের নিস্তারপর্ব এগিয়ে আসছিল, আর অনেক লোক নিজেদের শুচি করবার জন্য নিস্তারপর্বের আগেই দেশ থেকে জেরুশালেমে গেল। 56 তারা সেখানে যীশুর খোঁজ করতে লাগল। তারা মন্দির চত্বরে দাঁড়িয়ে পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “তোমরা কি মনে কর? তিনি কি এই পর্বে আসবেন?” 57 প্রধান যাজকরা ও ফরীশীরা এই আদেশ দিল যে, যীশু কোথায় আছেন তা যদি কেউ জানে তবে তাদের যেন জানানো হয় যাতে তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International