Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Old/New Testament

Each day includes a passage from both the Old Testament and New Testament.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
2 বংশাবলি 7-9

প্রভুকে মন্দির উৎসর্গ করা হল

শলোমনের প্রার্থনা শেষ হলে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা নেমে এসে হোমবলি নিবেদিত উৎসর্গগুলিকে পুড়িয়ে ফেলল এবং প্রভুর মহিমার উপস্থিতিতে সমস্ত মন্দির ভরে গেল। প্রভুর মহিমার উপস্থিতির কারণে যাজকরা প্রভুর মন্দিরে প্রবেশ করতে পারলেন না। সমস্ত ইস্রায়েলীয়রা যারা এই অগ্নিশিখা ও প্রভুর মহিমার উপস্থিতি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করল তারা তাদের মাথা আভূমি নত করল, তারা প্রভুর উপাসনা করল এবং গাইল,

“আমাদের প্রভু মহান;
    তাঁর করুণা সদা প্রবহমান।”

অতঃপর রাজা শলোমন এবং ইস্রায়েলের লোকরা প্রভুর সামনে শুধুমাত্র ঈশ্বরের উপাসনার জন্য 22,000 ষাঁড় এবং 120,000 মেষ বলি দিয়ে মন্দিরটিকে শুদ্ধ ও পবিত্র করলেন। যাজকরা, যাঁরা কাজের জন্য প্রস্তুত ছিলেন, তাঁরা লেবীয়দের বিপরীতে দাঁড়িয়েছিলেন। যাজকরা শিঙা বাজিয়ে উঠলেন এবং লেবীয়রা বাদ্যযন্ত্রের দ্বারা, যা রাজা দায়ূদ বানিয়েছিলেন প্রভুর প্রশংশা গান গাইবার জন্য কারণ তিনি চিরবিশ্বস্ত। যখন ইস্রায়েলের সমস্ত লোক সেখানে দাঁড়িয়েছিল।

এবং শলোমন প্রভুর মন্দিরের সামনের অঙ্গণের মধ্যভাগ নিবেদন করলেন এবং তিনি হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্যের চর্বি অংশটি উৎসর্গ করলেন। শলোমন এই উৎসর্গগুলি অঙ্গণের মাঝখানে নিবেদন করলেন কারণ তিনি পিতলের যে বেদীটি বানিয়েছিলেন সেটি হোমবলি, শস্য নৈবেদ্য চর্বি ধারণের পক্ষে খুবই ছোট ছিল।

শলোমন ও ইস্রায়েলের লোকরা টানা সাত দিন ধরে খাওয়া-দাওয়া ও উৎসব করলেন। শলোমনের সঙ্গে অনেকে ছিলেন। এঁরা সকলে হমাতের প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে মিশরের ঝর্ণা পর্যন্ত বিস্তৃত সুবিস্তীর্ণ অঞ্চলে বাস করতেন। সাতদিন উৎসব পালনের পরে অষ্টম দিনের দিন একটা বড় পবিত্র সভার আয়োজন করা হল। এরপর শুধুমাত্র প্রভুর উপাসনার জন্য বেদীটিকে পবিত্র করে তাঁরা আরো সাতদিন ধরে খাওয়াদাওয়া ও আনন্দ করলেন। 10 সপ্তম মাসের 23 দিনের দিন শলোমন সবাইকে তাদের বাড়িতে ফেরৎ‌ পাঠালেন। দায়ূদ ও তাঁর পুত্র শলোমন এবং ইস্রায়েলের লোকদের প্রতি প্রভুর কৃপাদৃষ্টির কথা ভেবে সবাই খুবই খুশী ছিল এবং তাদের হৃদয় ভরে ছিল এক অনির্বচনীয় আনন্দে।

প্রভু শলোমনের সামনে আবির্ভূত হলেন

11 শলোমন সফলভাবে প্রভুর মন্দির ও তাঁর নিজের রাজপ্রাসাদ নির্মাণের কাজ শেষ করলেন। 12 তারপর রাতে স্বয়ং প্রভু শলোমনকে দর্শন দিয়ে বললেন,

“শলোমন, তোমার প্রার্থনা আমার কানে পৌঁছেছে। এই স্থানটিকে আমি আমার কাছে বলিদানের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছি। 13 যদি আমি খরা পাঠাই অথবা পঙ্গপালের ঝাঁককে জমি গ্রাস করার আদেশ দিই অথবা যদি আমি লোকদের জীবনে ব্যাধি পাঠাই, 14 তখন যদি আমার লোকরা অসৎ‌ পথ ও আচরণ ত্যাগ করে ব্যাকুল ও অনুতপ্ত চিত্তে আমায় ডাকে, তবে আমি অবশ্যই তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে তাদের পাপকে ক্ষমা করব এবং দেশটিকে সারিয়ে তুলব। 15 এখন যে প্রার্থনা এই স্থানে নিবেদিত হবে আমি তার প্রতি সজাগ থাকবো। 16 আমি এই মন্দিরকে আমার নাম প্রচারের জন্যে বেছে নিয়েছি এবং আমার উপস্থিতি দিয়ে একে পবিত্র করেছি। আমার দৃষ্টি ও হৃদয় সদাসর্বদা এখানেই থাকবে। 17 শোনো শলোমন, তুমি যদি তোমার পিতা দায়ূদের মতো আমার বিধি ও নিয়ম মেনে জীবনযাপন করো, 18 তাহলে তোমার পিতা দায়ূদের সঙ্গে আমি যে চুক্তি করেছিলাম, যাতে আমি বলেছিলাম, তোমার উত্তরপুরুষদের একজন সর্বদা ইস্রায়েল শাসন করবে, সেই চুক্তি অনুযায়ী আমি তোমাকে শক্তিশালী রাজা করে তুলবো।

19 “কিন্তু তুমি যদি আমার বিধি নির্দেশ যা আমি তোমাকে দিয়েছিলাম, অমান্য কর এবং অন্যান্য মূর্ত্তিসমূহের পূজো কর ও তাদের সেবা করতে শুরু করো, 20 তাহলে আমি আমার যে ভূখণ্ড তাদের দিয়েছিলাম সেখান থেকে ইস্রায়েলের লোকদের বিতাড়িত করব; এবং আমার নামে বানানো এই পবিত্র মন্দির ত্যাগ করব এবং এর এমন দশা করবো যে সমস্ত জাতিসমূহের মধ্যে সেটা একটা উপহাসের পাত্র হয়ে দাঁড়াবে। 21 এখন এই গৃহটি মহিমান্বিত। কিন্তু যখন এসব ঘটবে, যারাই এর পাশ দিয়ে হেঁটে যাবে, আশ্চর্য হয়ে বলবে, ‘প্রভু কেন এই দেশ ও মন্দিরের প্রতি এই আচরণ করলেন?’ 22 তখন লোকরা উত্তর দেবে, ‘কারণ ইস্রায়েলের লোকরা প্রভুকে, তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বরকে, যিনি তাদের মিশর থেকে উদ্ধার করেছিলেন, তাঁকে পরিত্যাগ করেছে। তারা অন্য মূর্ত্তিসমূহের পূজো করে ও তাদের সেবা করে তাদের গ্রহণ করেছে। এই কারণে প্রভু তাদের ওপরে এই ভয়ঙ্কর এবং আতঙ্কজনক শাস্তি এনে দিয়েছেন।’”

শলোমনের তৈরী করা শহর

প্রভুর মন্দির ও নিজের রাজপ্রাসাদ বানাতে শলোমনের 20 বছর সময় লেগেছিল। এরপর হূরম তাঁকে যে শহরগুলো দিয়েছিলেন শলোমন সেগুলির সংস্কার করেন। ইস্রায়েলের বেশ কিছু লোককে তিনি ঐ সমস্ত শহরে বসবাসের অনুমতি দিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি সোবাতের হমাৎ দখল করেন। তিনি মরু অঞ্চলে তদ্মোর শহরটি এবং হমাতে গুদাম শহরগুলিও বানিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি শক্তিশালী দূর্গ হিসেবে ঊর্দ্ধ বৈৎ‌-হোরোণ ও নিথ বৈৎ‌-হোরোণের শহরগুলো দেওয়াল ও ফটক সহ হুড়কো লাগিয়ে তৈরী করেছিলেন। জিনিসপত্র মজুত রাখার জন্য বালৎ সহ আরো কয়েকটি শহর পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। রথ রাখার জন্য ও অশ্বারোহী সারথীদের বসবাসের জন্যও তাঁকে বেশ কিছু শহর বানাতে হয়েছিল। জেরুশালেমে লিবানোন সহ তাঁর সমগ্র রাজ্যে শলোমন যা কিছু বানাতে চেয়েছিলেন সবই বানিয়েছিলেন।

7-8 হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় এবং যিবূষীয়দের সমস্ত উত্তরপুরুষরা এরা ইস্রায়েলীয় ছিল না। যাদের ইস্রায়েলীয়রা যিহোশূযার জয়যাত্রার সময় ধ্বংস করেনি তারা শলোমন দ্বারা ক্রীতদাস হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হয়েছিল। তারা আজও তাই করে। এরা সকলেই ছিল ইস্রায়েলীয়দের ধ্বংস করা অন্যান্য শত্রু রাজ্যের বাসিন্দাদের উত্তরপুরুষ। কিন্তু শলোমন কোন ইস্রায়েলীয়কে ক্রীতদাস হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করেননি। ইস্রায়েলীয়রা সকলেই ছিল তাঁর যোদ্ধা এবং তাঁর আধিকারিক যারা তাঁর রথবাহিনী ও অশ্বারোহী সৈনিকদের চালনা করতেন। 10 কেউ কেউ ছিলেন শলোমনের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের আধিকারিক অথবা নেতা। 250 জন নেতা এই সমস্ত লোকদের তত্ত্বাবধান করতেন।

11 শলোমন দায়ূদ নগর থেকে ফরৌণের কন্যাকে নিয়ে এসেছিলেন এবং তাকে তার জন্য বানানো এক সুন্দর বাড়িতে রেখেছিলেন এবং বলেছিলেন, “আমার স্ত্রী, ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের প্রাসাদে থাকবে না কারণ, সমস্ত জায়গাগুলো যেখানে যেখানে সাক্ষ্যসিন্দুকটি রাখা ছিল সেগুলো অতি পবিত্র জায়গা।”

12 এরপর শলোমন মন্দিরের সামনের দালানে প্রভুর জন্য তাঁর বানানো বেদীতে প্রভুকে হোমবলি নিবেদন করলেন। 13 মোশির আদেশ মতোই শলোমন প্রত্যেক দিন বলিদান করা ছাড়াও বিশ্রামের দিন, অমাবস্যায় ও তিনটে বাৎসরিক ছুটির দিনে নিয়মিত বলি উৎসর্গ করতেন। এই তিনটে বাত্‌সরিক ছুটির দিন হল খামিরবিহীন রুটির উৎসবের দিন, সাত সপ্তাহের উৎসবের দিন ও কুটিরবাস পর্বের দিন। 14 তাঁর পিতা রাজা দায়ূদের নির্দেশ মতোই তিনি মন্দিরের কাজকর্মের জন্য যাজক ও লেবীয়দের দলভাগ করে দিয়েছিলেন। লেবীয়রা মন্দিরের নিত্য নৈমিত্তিক কাজকর্মে যাজকদের সহায়তা করতেন। এছাড়াও মন্দিরের প্রত্যেকটি ফটকের জন্য শলোমন দ্বাররক্ষীদের দলও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। 15 ইস্রায়েলীয়রা কখনও যাজক ও লেবীয় সংক্রান্ত শলোমনের দেওয়া কোনো নির্দেশ অমান্য বা তার কোনো পরিবর্তন করেননি। এমনকি দুর্মূল্য জিনিসপত্র রাখার ব্যাপারেও তাঁরা শলোমনের বিধান মেনে নিয়েছিলেন।

16 প্রভুর মন্দিরের ভিত্তিস্থাপনের দিন থেকে সেটি শেষ হওয়া পর্যন্ত, শলোমনের সব কাজ তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী করা হয়।

17 এরপর শলোমন লোহিত সাগরের তীরস্থ ইদোমের ইৎ‌সিয়োন গেবরে ও এলতে যান। 18 হূরম সেখানে তাঁর নিজস্ব দক্ষ নাবিকদের দ্বারা পরিচালিত জাহাজ পাঠান। শলোমনের দাসরা এদের সঙ্গে ওফীরে গিয়ে তাঁর জন্য 17 টন সোনা নিয়ে এসেছিল।

শিবার রাণী শলোমনের সঙ্গে দেখা করলেন

শিবার রাণী শলোমনের খ্যাতির কথা শুনে তাঁকে পরীক্ষা করতে স্বয়ং জেরুশালেমে এলেন। শিবার রাণীর সঙ্গে একটা বড় সড় দল উটের পিঠে মশলাপাতি, প্রচুর পরিমাণে সোনা ও মূল্যবান পাথর বয়ে নিয়ে এসেছিল। তিনি শলোমনের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে অনেক শক্ত শক্ত প্রশ্ন করলেন। শলোমন তাঁর সমস্ত প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন কারণ তাঁর ব্যাখ্যার অতীত বা বোধগম্য নয় এমন কিছুই ছিল না। শিবার রাণী তাঁর প্রজ্ঞার পরিচয় পেলেন এবং তাঁর বানানো প্রাসাদের চারদিকে তাকিয়ে, শলোমনের টেবিলে পরিবেশন করা খাবার দাবার, তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রাজকর্মচারী, ভৃত্যদের কাজের ধারা ও তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, শলোমনের দ্রাক্ষারস পরিবেশক, তাদের পরিধেয় বস্ত্র, ইত্যাদি ছাড়াও প্রভুর মন্দিরে শলোমনের দেওয়া হোমবলির পরিমাণ দেখে তিনি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলেন।

তারপর তিনি রাজা শলোমনকে বললেন, “আমি আমার দেশে বসে আপনার অতুল কীর্তি ও জ্ঞানের সম্পর্কে যা শুনেছিলাম দেখছি তার সবই সত্যি। এখানে এসে স্বচক্ষে না দেখা পর্যন্ত আমি সেসব কথা বিশ্বাস করি নি, কিন্তু এখন দেখছি আমি যেসব গল্প শুনেছিলাম, আপনার প্রকৃত জ্ঞান তার চেয়েও ঢের বেশী। আপনার স্ত্রীদের ও আপনার অধীনস্থ কর্মচারীদের কি সৌভাগ্য যে তাঁরা সর্বক্ষণ আপনার সেবা করতে করতে আপনার বুদ্ধিদীপ্ত কথাবার্তা শুনতে পান। আপনার প্রভু ঈশ্বরের যথার্থই প্রশংসা করুন। তিনি আপনার মতো একজন সেবককে তাঁর সিংহাসনে বসিয়ে নিশ্চয়ই খুবই সন্তুষ্ট। তিনি প্রকৃতই ইস্রায়েলকে সহানুভূতি ও প্রেমসহ দেখেন এবং তাকে চিরকালের মতো দাঁড় করিয়ে দিতে চান এবং সেজন্যই তিনি আপনাকে যথাযথ এবং ঠিক কাজ করবার জন্য ইস্রায়েলের রাজা করেছেন।”

এরপর শিবার রাণী শলোমনকে 4 1/2 টন সোনা সহ বহু মশলাপাতি ও দামী দামী পাথর উপহার দিলেন। তাঁর মতো এতো উৎকৃষ্ট মশলাপাতি রাজা শলোমনকে কেউ কখনো উপহার দেননি।

10 রাজা হূরম ও শলোমনের ভৃত্যরা ওফীর থেকে সোনা ছাড়াও, চন্দন কাঠ ও বহু দামী দামী পাথর এনেছিলেন। 11 রাজা শলোমন সেই কাঠ দিয়ে প্রভুর মন্দিরের ও রাজপ্রাসাদের সিঁড়িগুলি এবং বীণা ও বাদ্যযন্ত্রাদি বানিয়েছিলেন। যিহূদার কেউ এর আগে চন্দন কাঠ দিয়ে বানানো এতো সুন্দর জিনিস দেখে নি।

12 রাজা শলোমনও, শিবার রাণীকে তিনি যা যা চেয়েছিলেন সবই দিয়েছিলেন। তিনি শলোমনকে যা উপহার দিয়েছিলেন শলোমন তার থেকেও অনেক বেশী পরিমাণ উপহার শিবার রাণীকে দিয়েছিলেন। তারপর শিবার রাণী ও তাঁর ভৃত্যরা নিজের দেশে ফিরে গেলেন।

শলোমনের বিপুল ঐশ্বর্য

13 প্রতি বছর শলোমনের প্রায় 25 টন সোনা সংগ্রহ হতো। 14 বণিক ও ব্যবসায়ীরা ছাড়াও আরবের সমস্ত রাজারা এবং দেশের শাসনকর্তারা শলোমনের জন্য বহু পরিমাণে সোনা ও রূপো নিয়ে আসতেন। সোনা ও রূপো ছাড়াও তাঁরা ঘোড়া ও খচ্চরের পিঠে চাপিয়ে কাপড়চোপড়, অস্ত্রশস্ত্র, মশলাপাতি নিয়ে আসতেন।

15 রাজা শলোমন পেটানো সোনা দিয়ে 200টি বড় বড় ঢাল বানিয়েছিলেন। এক একটা ঢাল বানাতে প্রায় 7 1/2 টন করে সোনা ব্যবহার করা হয়েছিল। 16 এছাড়াও তিনি পেটানো সোনায় ছোট ছোট 300টি ঢাল বানিয়েছিলেন, যার এক একটা বানাতে প্রায় 3 3/4 টন করে সোনা ব্যবহার করা হয়েছিল। এই সমস্ত ঢালগুলো শলোমন তাঁর প্রাসাদে টাঙিয়ে রেখেছিলেন।

17 শলোমন হাতির দাঁত দিয়ে একটা বিশাল রাজসিংহাসনও বানিয়েছিলেন এবং সেটি সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন। 18 এই সিংহাসনে ছটা ধাপ দিয়ে উঠতে হতো আর এর পা-দানীটি ছিল খাঁটি সোনায় বানানো। সিংহাসনের দুধারের হাতলের পাশে ছিল একটা করে সিংহের প্রতিমূর্ত্তি। 19 সিংহাসনে ওঠার ধাপগুলোর প্রত্যেকটার দুধারে একটা করে ছ’টা ছ’টা মোট 12টা সিংহের প্রতিকৃতি ছিল। অন্য কোন রাজ্যে কখনো এধরনের কোন সিংহাসন বসানো হয়নি।

20 শলোমনের প্রত্যেকটা পানপাত্র ছিল সোনায় বানানো। প্রাসাদের সমস্ত জিনিস ছিল সোনায় তৈরী। শলোমনের রাজত্বের সময় সোনা ও রূপো এতো সুলভ হয়ে পড়েছিল যে সোনা ও রূপোকে কেউ মূল্যবান জিনিস বলে গণ্যই করতো না,

21 কারণ রাজার জাহাজ প্রতি তিন বছর অন্তর তর্শীশে পাড়ি দিত এবং হূরমের নাবিকরা জাহাজ ভরে সোনা ও রূপো, হাতির দাঁত, নানান প্রজাতির বাঁদর ও মযূর নিয়ে আসত।

22 সম্পদে ও বুদ্ধিতে পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত রাজাদের তুলনায় শলোমন অনেক বড় ছিলেন। 23 পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজারা শলোমনের কাছে তাঁর ঈশ্বর প্রদত্ত জ্ঞান ও সূক্ষ্ম বিচার বুদ্ধির পরিচয় পেতে আসতেন। 24 প্রত্যেক বছর এই সমস্ত রাজারা শলোমনের জন্য সোনা ও রূপোয় বানানো জিনিসপত্র, জামাকাপড়, মশলাপাতি, ঘোড়া, খচ্চর ইত্যাদি নিয়ে আসতেন।

25 ঘোড়া ও রথ রাখার জন্য শলোমন 4000 আস্তাবল বানিয়েছিলেন। তাঁর সারথির মোট সংখ্যা 12,000 ছিল। এদের থাকার জন্য বানানো বিশেষ কয়েকটি শহর ও তাঁর কাছে জেরুশালেমে তাদের রাখা হতো। 26 শলোমন, ফরাৎ নদী থেকে শুরু করে পলেষ্টীয়দের দেশ বরাবর মিশরের সীমানা পর্যন্ত সমস্ত রাজাদের শাসক হলেন। 27 রাজা শলোমন তাঁর সময়ে এত প্রচুর পরিমাণ রূপো সংগ্রহ করেছিলেন যে তিনি জেরুশালেমে রূপোকে পাথরের মত সস্তা করে তুলেছিলেন। ইস্রায়েলের উপকূলবর্তী অরণ্যে অন্য যে কোন গাছের মতো দামী ধরণের এরস গাছপালা ছিল খুব মামুলি। 28 লোকেরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে শলোমনের কাছে ঘোড়া নিয়ে আসতেন।

শলোমনের মৃত্যু

29 শলোমন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যে সমস্ত কাজ করেছিলেন ভাববাদী নাথনের ইতিহাস থেকে, শীলোনীয় অহীয়র ভবিষ্যদ্বাণী থেকে এবং ভাববাদী ইদ্দোর নবাটের পুত্র যারবিয়াম সম্পর্কিত দর্শন থেকে সে সমস্তই জানা যায়। 30 শলোমন 40 বছর ধরে জেরুশালেম থেকে সমগ্র ইস্রায়েল শাসন করেছিলেন। 31 তারপর তাঁর মৃত্যু হলে তাঁকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে দায়ূদ নগরে চিরনিদ্রায় সমাহিত করা হল। এরপর শলোমনের পুত্র রহবিয়াম শলোমনের জায়গায় নতুন রাজা হলেন।

যোহন 11:1-29

লাসারের মৃত্যু

11 লাসার নামে একটি লোক অসুস্থ ছিলেন; তিনি বৈথনিয়া গ্রামে থাকতেন। সেই গ্রামেই মরিয়ম ও তাঁর বোন মার্থাও থাকতেন। এই মরিয়মই বহুমূল্য সুগন্ধি আতর যীশুর উপরে ঢেলে নিজের চুল দিয়ে তাঁর পা মুছিয়ে দিয়েছিলেন। লাসার ছিলেন এই মরিয়মেরই ভাই। তাই লাসারের বোনেরা একটি লোক পাঠিয়ে যীশুকে বলে পাঠালেন, “প্রভু, আপনার প্রিয় বন্ধু লাসার অসুস্থ।”

যীশু একথা শুনে বললেন, “এই রোগে তার মৃত্যু হবে না; কিন্তু তা ঈশ্বরের মহিমার জন্যই হবে, যেন ঈশ্বরের পুত্র মহিমান্বিত হন।” যীশু মার্থা, তার বোন ও লাসারকে ভালবাসতেন। তাই তিনি যখন শুনলেন যে লাসার অসুস্থ, তখন যেখানে ছিলেন সেই জায়গায় আরো দুদিন রয়ে গেলেন। এরপর তিনি শিষ্যদের বললেন, “চল, আমরা আবার যিহূদিয়াতে যাই।”

তাঁর শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “গুরু, সম্প্রতি সেখানকার লোকেরা আপনাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলতে চাইছিল। তবে কেন আপনি আবার সেখানে যেতে চাইছেন?”

এর উত্তরে যীশু বললেন, “দিনে বারো ঘন্টা আলো থাকে। কেউ যদি দিনের আলোতে চলে তবে সে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় না, কারণ সে জগতের আলো দেখতে পায়। 10 কিন্তু কেউ যদি রাতের আঁধারে চলে তবে সে হোঁচট খায়, কারণ তার সামনে কোন আলো নেই।”

11 তিনি একথা বলার পর তাদের আবার বললেন, “আমাদের বন্ধু লাসার ঘুমিয়ে পড়েছে; কিন্তু আমি তাকে জাগাতে যাচ্ছি।”

12 তখন তাঁর শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “প্রভু, সে যদি ঘুমিয়ে থাকে তবে সে ভাল হয়ে যাবে।” 13 যীশু লাসারের মৃত্যুর বিষয়ে বলছিলেন, কিন্তু তাঁরা মনে করলেন তিনি তাঁর স্বাভাবিক ঘুমের কথা বলছেন।

14 তাই যীশু তখন তাদের স্পষ্ট করে বললেন, “লাসার মারা গেছে। 15 আর তোমাদের কথা ভেবে আমি আনন্দিত যে আমি সেখানে ছিলাম না, কারণ এখন তোমরা আমাকে বিশ্বাস করবে। চল, এখন আমরা তার কাছে যাই।”

16 তখন থোমা (যাঁকে দিদুমঃ বলে) অন্য শিষ্যদের উদ্দেশ্য করে বললেন, “চল, আমরাও যাবো, আমরাও যীশুর সঙ্গে মরব।”

বৈথনিয়াতে যীশু

17 যীশু বৈথনিয়াতে এসে জানতে পারলেন যে গত চারদিন ধরে লাসার কবরে আছেন। 18 বৈথনিয়া থেকে জেরুশালেমের দূরত্ব ছিল প্রায় দুই মাইল। 19 তাই ইহুদীদের অনেকেই মার্থা ও মরিয়মকে তাঁদের ভাইয়ের মৃত্যুর পর সান্ত্বনা দিতে এসেছিল।

20 মার্থা যখন শুনলেন যে যীশু এসেছেন, তখন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন, কিন্তু মরিয়ম ঘরেই থাকলেন। 21 মার্থা যীশুকে বললেন, “প্রভু, আপনি যদি এখানে থাকতেন তাহলে আমার ভাই মরত না। 22 কিন্তু এখনও আমি জানি যে, আপনি ঈশ্বরের কাছে যা কিছু চাইবেন, ঈশ্বর আপনাকে তাই দেবেন।”

23 যীশু তাঁকে বললেন, “তোমার ভাই আবার উঠবে।”

24 মার্থা তাঁকে বললেন, “আমি জানি শেষ দিনে পুনরুত্থানের সময় সে আবার উঠবে।”

25 যীশু মার্থাকে বললেন, “আমিই পুনরুত্থান, আমিই জীবন। যে কেউ আমাকে বিশ্বাস করে, সে মরবার পর জীবন ফিরে পাবে। 26 যে কেউ জীবিত আছে ও আমায় বিশ্বাস করে, সে কখনও মরবে না। তুমি কি একথা বিশ্বাস কর?”

27 মার্থা তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, প্রভু! আমি বিশ্বাস করি যে জগতে যাঁর আসার কথা আছে আপনিই সেই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র।”

যীশু কাঁদলেন

28 এই কথা বলার পর মার্থা সেখান থেকে চলে গেলেন ও তার বোন মরিয়মকে একান্তে ডেকে বললেন, “গুরু এসেছেন, আর তিনি তোমায় ডাকছেন।” 29 মরিয়ম একথা শুনে তাড়াতাড়ি করে যীশুর কাছে গেলেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International