Old/New Testament
হিষ্কিয় ভাববাদী যিশাইয়র সঙ্গে কথা বললেন
19 সমস্ত কথা শুনে রাজা হিষ্কিয়ও শোকার্ত হয়ে ভাল পোশাক ছিঁড়ে চটের পোশাক পরে প্রভুর মন্দিরে গেলেন।
2 হিষ্কিয় রাজপ্রাসাদের তত্ত্বাবধায়ক ইলীয়াকীম, রাজ-সচিব শিব্ন ও প্রধান যাজকদের আমোসের পুত্র ভাববাদী যিশাইয়র কাছে পাঠালেন। তারাও সকলে শোক প্রকাশের জন্য চটের পোশাক পরেছিল। 3 এরা সকলে গিয়ে যিশাইয়কে বলল, “হিষ্কিয় বলেছেন, ‘এই সঙ্কটের দিনে আমাদের করা ভুল-ভ্রান্তি ও পাপ আচরণের কথা স্মরণ করা উচিৎ। কিন্তু অবস্থা এখন এরকম যে নবজাতকের জন্ম দিতে হবে অথচ প্রসূতির কোন শক্তি নেই। 4 অশূররাজের সেনাপতি এসে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে পর্যন্ত প্রশ্ন তুলেছে, অনেক খারাপ কথা শুনিয়ে গিয়েছে। সম্ভবতঃ আপনার প্রভু ঈশ্বর সে সবই শুনতে পেয়েছেন, হয়তো এর জন্য প্রভু তাঁর শত্রুদের যথোচিত শাস্তিও দেবেন। অনুগ্রহ করে আপনি, যে সমস্ত লোক এখনও জীবিত আছে তাদের জন্য প্রার্থনা করুন।’”
5 মহারাজ হিষ্কিয়র উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীরা যিশাইয়র কাছে গেলে 6 তিনি তাদের বললেন, “তোমাদের গুরুকে গিয়ে খবর দাও: ‘প্রভু বলেছেন: অশূররাজের কর্মচারীরা আমাকে অপমান করার জন্য যে সব কথা বলে গিয়েছে, তা শুনে ভয় পাবার কোন কারণ নেই! 7 আমি ওর ওপর ভর করার জন্য এক অপদেবতাকে পাঠাচ্ছি। তারপর দেখো, গুজবে ভয় পেয়ে ও নিজেই নিজের দেশে ছুটে পালাবে। সেখানে আমি তরবারির আঘাতে ওর মৃত্যুর জন্য সমস্ত আয়োজন করে রাখছি।’”
হিষ্কিয়কে অশূর-রাজ আবার সতর্ক করলেন
8 অশূর-রাজের সেনাপতি খবর পেলেন, তাদের মহারাজ লাখীশ ছেড়ে গিয়ে লিব্নার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। 9 ইতিমধ্যে অশূর-রাজ গুজব শুনলেন, “কূশদেশের রাজা তির্হকঃ তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসছেন!”
তখন অশূর-রাজ হিষ্কিয়র কাছে আবার দূত মারফৎ খবর পাঠালেন। এই বার্তায় বলা হল: 10 “যিহূদা-রাজা হিষ্কিয় সমীপেষু,
‘আপনাদের ঈশ্বরের দ্বারা প্রতারিত হয়ে যদি আস্থা রাখেন অশূর-রাজ জেরুশালেমকে পদানত করতে পারবেন না তাহলে ভুল করবেন। 11 আপনি নিশ্চয়ই অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে অশূর-রাজের যুদ্ধযাত্রা ও তাদের পরিণতির কথা অবগত আছেন। এই সমস্ত দেশকে আমরা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছি। আপনারা কি ভাবছেন যে আপনারা উদ্ধার পাবেন? 12 এই সমস্ত জাতির দেবতা তাঁদের নিজেদের লোকদের বাঁচাতে পারেন নি। আমার পূর্বপুরুষরা, গোষণ, হারণ, রেৎসফ, তলঃশর এদোনের লোকরা এদের সবাইকেই ধ্বংস করেছিলেন। 13 কোথায় গেলেন হমাৎ, অর্পদ, সফর্বয়িম, হেনা, ইব্বার রাজারা? এঁরা সকলেই মরে ভূত হয়ে গিয়েছেন!’”
হিষ্কিয় প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন
14 দূতদের কাছ থেকে এই চিঠি নিয়ে পড়ার পর হিষ্কিয় প্রভুর মন্দিরে গিয়ে প্রভুর সামনে চিঠিখানা মেলে ধরলেন। 15 তারপর তিনি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করে বললেন, “প্রভু করূব দূতদের মধ্যে আসীন ইস্রায়েলের ঈশ্বর আপনি এই পৃথিবীর সমস্ত ভূ-ভাগ, সমস্ত দেশেরই নিয়ামক। স্বর্গ ও পৃথিবী আপনারই হাতে গড়া। 16 প্রভু, অনুগ্রহ করে আমার কথা শুনুন, চোখ খুলে এই চিঠিখানা দেখুন। কিভাবে সন্হেরীব জীবন্ত ঈশ্বরকে অপমান করেছেন তা শুনুন। 17 প্রভু এটা সত্য অশূর-রাজ এসমস্ত দেশ ধ্বংস করেছেন। 18 তারা তাদের মূর্ত্তিসমূহকে আগুনে ছুঁড়ে ফেলেছেন এসবই সত্যি কথা। কিন্তু সেই সব মূর্ত্তি তো আসলে মানুষের বানানো কাঠ এবং পাথরের পুতুল মাত্র ছিল। যে কারণে অশূর-রাজ ওদের ধ্বংস করতে পেরেছিলেন। 19 কিন্তু এখন প্রভু, আমাদের ঈশ্বর অশূর-রাজের কবল থেকে উদ্ধার করুন। তাহলে পৃথিবীর সর্বত্র সবাই জানবে প্রভুই একমাত্র ঈশ্বর।”
20 আমোসের পুত্র যিশাইয়, হিষ্কিয়কে খবর পাঠালেন, “প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর জানিয়েছেন: তুমি সন্হেরীবের বিরুদ্ধে আমার কাছে যে প্রার্থনা করেছো, আমি তা শুনতে পেয়েছি।
21 “সন্হেরীব সম্পর্কে প্রভু বলেন:
‘সিয়োনের কুমারী কন্যা মনে করে তুমি খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নও।
তাই সে তোমায় টিটকিরি করে,
তোমার পেছনে তোমায় অপমান করছে।
22 তুমি কাকে অপমান করেছ এবং ঈশ্বরের নামে কাকে অভিশাপ দিয়েছ বলে মনে কর?
তুমি কার বিরুদ্ধে গলা তুলেছ এবং গর্বিত ভাবে তাকিয়েছ?
সেটা ইস্রায়েলের সেই পবিত্র একজনের বিরুদ্ধে।
23 তাই তুমি তোমার বার্তাবাহকদের এই কথা বলবার জন্য পাঠিয়ে প্রভুকে অপমান করেছ।
তুমি বলেছ, “আমার অজস্র রথবাহিনী নিয়ে আমি উচ্চতম পর্বত থেকে লিবানোনের গভীরতম প্রদেশ পর্যন্ত গিয়েছি।
সেখানকার উচ্চতম দেবদারু গাছ থেকে শুরু করে সব চেয়ে ভাল আর দুর্মূল্য গাছও কেটে টুকরো করেছি।
আমি লিবানোনের সবচেয়ে উঁচু প্রান্তর থেকে গভীর জঙ্গল পর্যন্ত গিয়েছি।
24 আমি কুয়ো খুঁড়ে নিত্যনতুন জায়গার জল পান করেছি।
মিশরের নদীর জল শুকিয়ে,
খট্খটে শুকনো জমিতে পায়ে হেঁটেছি।”
25 ‘তুমি তো তাই বললে। কিন্তু প্রভু যা বলেন তা তুমি তোমার দূরদেশে শোনোনি।
এসবই আমার (ঈশ্বর) পূর্ব পরিকল্পিত।
সেই অনাদি-অনন্তকাল থেকে
আমিই সব ঠিক করে ঘটিয়ে চলেছি!
যে কারণে তুমি একের পর এক শক্তিশালী দেশ ধ্বংস করে,
তাদের পাথরের ভগ্নস্তূপে পরিণত করতে পেরেছ।
26 এই সমস্ত দেশের লোক শক্তিহীন।
এই লোকরা ভীত এবং বিভ্রান্ত
তারা জমিতে ঘাস ও গাছপালা
এবং বাড়ীর ছাদের উপর ঘাস ও গাছপালা বড় না হতেই মারা যায়।
27 আমি এটা জানি তুমি কখন বসে থাকো,
কখন আসো, কখন যাও
এবং কখন তুমি আমার বিরুদ্ধে।
28 তুমি কখন আমাকে অপমান করো,
কখন তোমার সঙ্গীত নাসা শূন্যে তুলে গর্ব কর, সে সবই আমি খেয়াল রাখি।
এবার তাই আমি তোমার এই সঙ্গীত নাসায় দড়ি বেঁধে
তোমায় কলুর বলদের মতো ঘোরাবো আর জাবর কাটাবো,
ঠিক যে ভাবে তোমায় টেনে তুলেছিলাম
সে ভাবেই এক ফুঁয়ে তোমায় নীচে ফেলবো।’”
হিষ্কিয়র প্রতি প্রভুর বার্তা
29 এটি হবে তোমার পক্ষে একটি চিহ্নস্বরূপ। এবছর তুমি মাঠে যে শস্য আপনিই জন্মায় তাই খাবে। পরের বছর তুমি বীজ থেকে যে শস্য হয় তাই খাবে। আর তার পরের বছর, তৃতীয় বছরে তুমি তোমার নিজের বোনা বীজের শস্য থেকে খেতে পারবে। এর থেকেই, আমি যে তোমার সহায় তা প্রমাণিত হবে। তুমি দ্রাক্ষা ক্ষেতে গাছ পুঁতে সেই দ্রাক্ষা নিজে খাবে। 30 যিহূদার যে সমস্ত লোক পালিয়ে গিয়েছে এবং বেঁচে আছে আবার সংখ্যায় বৃদ্ধি পাবে। 31 যে সমস্ত অল্প সংখ্যক লোক বাকী আছে তারা জেরুশালেম থেকে বেরিয়ে আসবে এবং কিছু সংখ্যক সিয়োন পর্বত ছেড়ে চলে যাবে।
32 “তাই প্রভু অশূর-রাজ সম্পর্কে জানিয়েছেন:
‘অশূর-রাজ এ শহরে নিজের দল নিয়ে আসবে না
বা এখানে একটা তীরও ছুঁড়তে পারবে না।
এ শহর আক্রমণ করে, দেয়াল ভেঙে
ধূলোর পাহাড়ও বানাতে পারবে না।
33 যে পথ দিয়ে অশূর-রাজ এসেছিল, সে পথেই আবার ফিরে যাবে।
এ শহরে তার ঢোকা আর হবে না!
34 আমি এই শহরকে রক্ষা করব আর বাঁচাব।
আমার নিজের জন্য আর আমার সেবক দায়ূদের জন্যই আমি এই কাজ করব।’”
অশূর-রাজের সেনাবাহিনী ধ্বংস হল
35 সেই রাতেই প্রভুর পাঠানো দূত গিয়ে অশূর-রাজের 185,000 সেনা ধ্বংস করলেন। সকালে উঠে সবাই শুধু মৃতদেহ দেখতে পেল।
36 সন্হেরীব তখন নীনবীতে ফিরে গিয়ে বাস করতে শুরু করলেন। 37 এক দিন তিনি যখন তাঁর ইষ্টদেবতা নিষ্রোকের মন্দিরে পূজা করছিলেন, সে সময় তাঁর দুই পুত্র অদ্রম্মেলক ও শরেৎসর তাঁকে তরবারির আঘাতে হত্যা করে অরারট দেশে পালিয়ে গেলে, তাঁর আর এক পুত্র এসর-হদ্দোন তাঁর জায়গায় নতুন রাজা হলেন।
অসুস্থ হিষ্কিয় মৃত্যু মুখে পতিত হলেন
20 এই সময় একবার অসুস্থ হয়ে হিষ্কিয়র প্রায় মর মর অবস্থা হলে আমোসের পুত্র ভাববাদী যিশাইয় তাঁর সঙ্গে দেখা করে বললেন, “প্রভু তোমায় সব হাতের কাজ আর ঘর গেরস্থালী গোছগাছ করে নিতে বলেছেন। কারণ তুমি আর বাঁচবে না, তোমার মৃত্যু হবে!”
2 হিষ্কিয় তখন দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করে বললেন, 3 “প্রভু মনে রেখ আমি সমস্ত অন্তঃকরণ দিয়ে মনে প্রাণে তোমার সেবা করেছি। যা কিছু ভাল কাজ তুমি করতে বলেছ সবই আমি করেছি।” তারপর হিষ্কিয় খুব কান্নাকাটি করলেন।
4 যিশাইয় যাবার পথে যখন তিনি উঠোনের মাঝখান পর্যন্ত গিয়েছেন, সে সময় প্রভুর বাণী তাঁর কানে প্রবেশ করল। প্রভু বললেন, 5 “যাও, আমার লোকদের নেতা হিষ্কিয়কে গিয়ে বল, ‘তোমার পিতা দায়ূদের প্রভু তোমার প্রার্থনা শুনেছেন এবং তোমার চোখের জল দেখেছেন। তাই আমি তোমায় সারিয়ে তুলব। আজ থেকে তিন দিনের মাথায় তুমি আবার প্রভুর মন্দিরে যেতে পারবে। 6 আর আমি তোমার পরমায়ু আরো 15 বছর বাড়িয়ে দেব। তোমাকে আর এই শহরকে অশূর-রাজের কবল থেকে বাঁচিয়ে, আমি এই শহর রক্ষা করব। আমি আমার নিজের জন্য এবং আমার সেবক দায়ূদকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থেই এই কাজ করব।’”
7 যিশাইয় তখন বললেন, “ডুমুর ফল বেটে রাজার ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দাও।”
কথা মতো হিষ্কিয়র ক্ষতস্থানে ডুমুরের প্রলেপ লাগাতে হিষ্কিয় সুস্থ হয়ে উঠলেন।
8 হিষ্কিয় বললেন, “আমি কি করে বুঝব যে প্রভু আবার আমায় সারিয়ে তুলবেন, আর তিন দিনের মাথায় আমি তাঁর মন্দিরে যেতে পারব?”
9 যিশাইয় বললেন, “তুমি কি চাও? ছায়াটা কি দশ পা এগিয়ে যাবে, না দশ পা পিছিয়ে যাবে?[a] প্রভু যে কথা বলেছেন তা যে সফল করবেন তার এই চিহ্ন তোমার জন্য।”
10 হিষ্কিয় উত্তর দিলেন, “না না, ছায়ার পক্ষে এগিয়ে চলাটাই সহজ! আপনি বরঞ্চ আহসের সিঁড়িতে ছায়াটাকে দশ পা পিছু হটিয়ে দিন।”
11 যিশাইয় তখন প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন এবং প্রভু সেই ছায়াটাকে আহসের সিঁড়িপথে দশ পা পিছিয়ে দিলেন যেখানে সেটা একটু আগেই ছিল।
হিষ্কিয় ও বাবিলের লোকরা
12 সেসময়ে বাবিলের রাজা ছিলেন বলদনের পুত্র বরোদক্বলদন্। হিষ্কিয়র অসুস্থতার কথা শুনে তিনি লোক মারফৎ তাঁর জন্য চিঠি ও একটি উপহার পাঠিয়েছিলেন। 13 হিষ্কিয় বাবিলের এই ব্যক্তিদের স্বাগত জানিয়ে তাঁদের রাজপ্রাসাদের ও তাঁর রাজত্বের সোনা, রূপো, মশলাপাতি, দুর্মূল্য আতর, অস্ত্রশস্ত্র ও রাজকোষের যা কিছু সম্ভার, তা দেখিয়েছিলেন। সারা রাজ্যে এমন কিছু ছিল না যা হিষ্কিয় তাদের দেখান নি।
14 তখন ভাববাদী যিশাইয় হিষ্কিয়র কাছে এসে প্রশ্ন করলেন, “এরা কোত্থেকে এসেছে? কি বলছে?”
হিষ্কিয় বললেন, “এরা বাবিল নামে বহু দূরের এক দেশ থেকে এসেছে।”
15 যিশাইয় জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার প্রাসাদে ওরা কি দেখল?”
হিষ্কিয় বললেন, “সবই দেখেছে। রাজকোষে এমন কোন জিনিস নেই, যা আমি ওদের দেখাই নি।”
16 তখন যিশাইয় হিষ্কিয়কে বললেন, “প্রভু যা বলছেন মন দিয়ে শোনো। তিনি বলছেন, 17 শীঘ্রই এমন দিন আসছে যখন তোমার রাজপ্রাসাদের সবকিছু, যা কিছু তোমার পূর্বপুরুষরা আজ পর্যন্ত সঞ্চয় করে গিয়েছেন, বাবিলে নিয়ে যাওয়া হবে! কিছুই আর পড়ে থাকবে না। 18 বাবিলের লোকরা তোমার পুত্রদেরও সেখানে নিয়ে যাবে এবং তাদের নপুংসক করে বাবিলের রাজপ্রাসাদে রাখা হবে।”
19 হিষ্কিয় তখন যিশাইয়কে বললেন, “খবরটা বেশ ভালই!” (কারণ তিনি ভাবলেন, “আমার জীবিতকালে শান্তি বজায় থাকলেই আমি খুশী!”)
20 হিষ্কিয় যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন, যেমন করে তিনি জলের ডোবা ও সুড়ঙ্গ গড়েছিলেন এবং শহরের ভেতরে জল এনেছিলেন, সে সবই যিহূদার রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। 21 হিষ্কিয়র মৃত্যু হলে তাঁকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমাধিস্থ করা হলে তাঁর পুত্র মনঃশি নতুন রাজা হলেন।
যিহূদায় মনঃশির কু-শাসন শুরু
21 মাত্র 12 বছর বয়সে রাজা হয়ে মনঃশি মোট 55 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল হিফ্সীবা।
2 প্রভু যে সব পাপ আচরণ করতে বারণ করেন মনঃশি সেসবই করেছিলেন। ইতিপূর্বে যে সব ভয়ঙ্কর পাপ আচারের জন্য প্রভু বিভিন্ন জাতিকে দেশচ্যূত করেছিলেন, মনঃশি সেই সমস্ত পাপ আচরণ করেন। 3 তাঁর পিতা হিষ্কিয় যে সমস্ত উচ্চস্থান ভেঙে দিয়েছিলেন, মনঃশি আবার নতুন করে সেই সব বেদী নির্মাণ করেছিলেন। বাল মূর্ত্তির পূজার জন্য বেদী বানানো ছাড়াও, ইস্রায়েলের রাজা আহাবের মতই মনঃশি আশেরার খুঁটি পুঁতেছিলেন। তিনি আকাশের তারাদেরও পূজা করতেন। 4 মূর্ত্তিসমূহের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে তিনি প্রভুর প্রিয় ও পবিত্র মন্দিরের মধ্যেও বেদী বানিয়েছিলেন। (এই সেই জায়গা যেখানে প্রভু বলেছিলেন, “আমি জেরুশালেমে আমার নাম স্থাপন করব।”) 5 মন্দিরের দুটো উঠোনে তিনি আকাশের নক্ষত্ররাজির জন্য বেদী বানান। 6 তাঁর নিজের পুত্রকে তিনি যজ্ঞবেদীর আগুনে আহুতি দেন। ভবিষ্যৎ জানার জন্য তিনি প্রেতাত্মা ও পিশাচদের কাছে যাতায়াত করতেন।
প্রভুকে অসন্তুষ্ট করার মত আরো অনেক কাজই মনঃশি করেছিলেন। ফলতঃ প্রভু খুবই ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। 7 মনঃশি পাথর কুঁদে আশেরার একটা মূর্ত্তি বানিয়ে সেটাকে মন্দিরে বসিয়েছিলেন। প্রভু দায়ূদ ও তাঁর পুত্র শলোমনকে বলেছিলেন, “সমস্ত শহরের মধ্যে থেকে আমি জেরুশালেমকে বেছে নিয়েছি। এখানকার এই মন্দিরে আমার নাম চির দিনের জন্য থাকবে। 8 ইস্রায়েলীয়দের পূর্বপুরুষদের আমি যে ভূখণ্ড দিয়েছিলাম, ইস্রায়েলীয়রা যদি আমায় মান্য করে চলে, আমার দাস মোশির দেওয়া বিধি ও আদেশগুলো অনুসরণ করে, তাহলে সেই ভূখণ্ড থেকে আমি কখনও তাদের উৎখাত করব না।” 9 কিন্তু লোকরা ঈশ্বরের কথা গ্রাহ্য করল না। মনঃশি লোকদের বিপথে চালনা করলেন, যাতে তারা আরো বেশী পাপ কাজ করল সেই সব জাতিসমূহের চেয়েও, যাদের প্রভু ধ্বংস করেছিলেন এবং ইস্রায়েলীয়দের দিয়ে দিয়েছিলেন।
10 প্রভু তাঁর দাস ভাববাদীদের মাধ্যমে বলে পাঠিয়েছিলেন: 11 “যিহূদার রাজা মনঃশি, ইমোরীয়দের থেকেও বহুগুণে ঘৃণ্য অপরাধ করেছে এবং মূর্ত্তিপূজা করে যিহূদাকেও পাপের পথে ঠেলে দিয়েছে। তাই 12 ইস্রায়েলের প্রভু বলেছেন, ‘জেরুশালেম ও যিহূদায় আমি এমন সঙ্কট ঘনিয়ে তুলব যে, যে শুনবে সেই শিউরে উঠবে, আতঙ্কিত হবে। 13 আমি জেরুশালেমের ওপর শমরিয়াতে যে সূত্র এবং আহাবকুলে যে ওলন ব্যবহার করেছিলাম, তা বিস্তৃত করব। মানুষ যে ভাবে থালা মুছে, উপুড় করে রাখে ঠিক সে ভাবেই আমি জেরুশালেমের সব কিছু ওলট-পালট করে খল নলচে পাল্টে দেব। 14 তবে আমার কিছু ভক্ত থাকবে, যাদের আমি রেহাই দিলেও, শত্রুর হাত থেকে তারা বাঁচতে পারবে না। শত্রুরা তাদের বন্দী করে সঙ্গে নিয়ে যাবে। তারা সে রকম মূল্যবান জিনিসের মতো যাকে সৈন্যরা যুদ্ধে পেয়ে থাকে। 15 কারণ যে সব কাজ করাকে আমি অন্যায় বলেছিলাম ওরা তাই করেছে। মিশর থেকে ওদের পূর্বপুরুষরা আসার পর থেকে এইভাবে ক্রমে ক্রমে ওরা আমায় ক্ষেপিয়ে তুলেছে। 16 আর মনঃশি বহু নির্দোষ ব্যক্তিকেও হত্যা করেছে। মনঃশি জেরুশালেম রক্তে পরিপূর্ণ করেছে। তার এই সমস্ত পাপ, পক্ষান্তরে যিহূদারই পাপের ভার বৃদ্ধি করেছে। প্রভু যা করতে বারণ করেছেন, মনঃশি তা করতে যিহূদাকে বাধ্য করেছে।’”
17 মনঃশি যে সমস্ত কাজ করেছিলেন, এমন কি তাঁর সমস্ত পাপ আচরণের কথাও যিহূদার রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। 18 মনঃশির মৃত্যুর পর তাঁকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে তাঁর বাড়ীর “বাগান উষে” সমাধিস্থ করা হল এবং তাঁর পুত্র আমোন নতুন রাজা হলেন।
আমোনের সংক্ষিপ্ত শাসনকাল
19 আমোন 22 বছর বয়সে রাজা হয়ে মাত্র দু বছরের জন্য জেরুশালেম শাসন করেছিলেন। তাঁর মা ছিলেন যট্বাস্থ হারুষের কন্যা মশুল্লেমৎ।
20 পিতা মনঃশির মতোই আমোনও প্রভুর মনঃপূত নয় এমন সমস্ত কাজকর্ম করেছিলেন। 21 তাঁর পিতা যে সমস্ত মূর্ত্তিগুলোকে পূজা করতেন, আমোনও তাদের পূজা করতেন। আমোন তাঁর পিতার মতোই জীবনযাপন করেছেন। 22 তিনি তাঁর প্রভু পূর্বপুরুষদের ঈশ্বরের অভিপ্রায় অনুযায়ী জীবনযাপন না করে তাঁকে পরিত্যাগ করেন।
23 আমোনের ভৃত্যরা তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে তাঁকে তাঁর নিজের বাড়িতেই হত্যা করে। 24 ক্রুদ্ধ সাধারণ মানুষ আমোনের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের হত্যা করে তাঁর পুত্র যোশিয়কে তাঁর জায়গায় নতুন রাজা করল।
25 আমোন আর যা কিছু করেছিলেন সে সমস্তই যিহূদার রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। 26 আমোনকেও তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে উষের বাগানে সমাধিস্থ করা হয়। এরপর তাঁর পুত্র যোশিয় রাজ্য পরিচালনা শুরু করেন।
শমরীয়ার এক স্ত্রীলোকের সঙ্গে যীশুর কথাবার্তা
4 ফরীশীরা জানতে পারল যে যীশু যোহনের চেয়ে বেশী শিষ্য করেছেন ও বাপ্তাইজ করছেন। 2 যদিও যীশু নিজে বাপ্তাইজ করছিলেন না, বরং তাঁর শিষ্যরাই তা করছিলেন। 3 তারপর তিনি যিহূদিয়া ছেড়ে চলে গেলেন এবং গালীলেই ফিরে গেলেন। 4 গালীলে যাবার সময় তাঁকে শমরিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হল।
5 যাকোব তাঁর ছেলে যোষেফকে যে ভূমি দিয়েছিলেন তারই কাছে শমরীয়ার শুখর নামে এক শহরে যীশু গেলেন। 6 এখানেই যাকোবের কুয়াটি ছিল, যীশু সেই কুয়ার ধারে এসে বসলেন কারণ তিনি হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তখন বেলা প্রায় দুপুর। 7 একজন শমরীয়া স্ত্রীলোক সেখানে জল তুলতে এল। যীশু তাকে বললেন, “আমায় একটু জল খেতে দাও তো।” 8 সেই সময় শিষ্যরা শহরে কিছু খাবার কিনতে গিয়েছিল।
9 সেই শমরীয় স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, “একি আপনি একজন ইহুদী হয়ে আমার কাছ থেকে খাবার জন্য জল চাইছেন? আমি একজন শমরীয় স্ত্রীলোক!” (ইহুদীরা শমরীয়দের সঙ্গে কোনরকম মেলামেশা করত না।)
10 এর উত্তরে যীশু তাকে বললেন, “তুমি যদি জানতে যে ঈশ্বরের দান কি আর কে তোমার কাছ থেকে খাবার জন্য জল চাইছেন তাহলে তুমিই আমার কাছে জল চাইতে আর আমি তোমাকে জীবন্ত জল দিতাম।”
11 স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, “মহাশয়, আপনি কোথা থেকে সেই জীবন্ত জল পাবেন? এই কুয়াটি যথেষ্ট গভীর। জল তোলার কোন পাত্রও আপনার কাছে নেই। 12 আপনি কি আমাদের পিতৃপুরুষ যাকোবের চেয়ে মহান? তিনি আমাদের এই কুয়াটি দিয়ে গেছেন। তিনি নিজেই এই কুয়ার জল খেতেন এবং তাঁর সন্তানরা ও তাঁর পশুপালও এর থেকেই জল পান করত।”
13 যীশু তাকে বললেন, “যে কেউ এই জল পান করবে তার আবার তেষ্টা পাবে। 14 কিন্তু আমি যে জল দিই তা যে পান করবে তার আর কখনও পিপাসা পাবে না। সেই জল তার অন্তরে এক প্রস্রবনে পরিণত হয়ে বইতে থাকবে, যা সেই ব্যক্তিকে অনন্ত জীবন দেবে।”
15 স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, “মশায়, আমাকে সেই জল দিন, যেন আমার আর কখনও পিপাসা না পায় আর জল তুলতে আমায় এখানে আসতে না হয়।”
16 তিনি তাকে বললেন, “যাও, তোমার স্বামীকে এখানে ডেকে নিয়ে এস।”
17 তখন সেই স্ত্রীলোকটি বলল, “আমার স্বামী নেই।”
যীশু তাকে বললেন, “তুমি ঠিকই বলেছ যে তোমার স্বামী নেই। 18 তোমার পাঁচ জন স্বামী হয়ে গেছে; আর এখন যে লোকের সঙ্গে তুমি আছ সে তোমার স্বামী নয়, তাই তুমি যা বললে তা সত্যি।”
19 সেই স্ত্রীলোকটি তখন তাঁকে বলল, “মহাশয়, আমি দেখতে পাচ্ছি যে আপনি একজন ভাববাদী। 20 আমাদের পিতৃপুরুষরা এই পর্বতের ওপর উপাসনা করতেন। কিন্তু আপনারা ইহুদীরা বলেন যে জেরুশালেমই সেই জায়গা যেখানে লোকেদের উপাসনা করতে হবে।”
21 যীশু তাকে বললেন, “হে নারী, আমার কথায় বিশ্বাস কর! সময় আসছে যখন তোমরা পিতা ঈশ্বরের উপাসনা এই পাহাড়ে করবে না, জেরুশালেমেও নয়। 22 তোমরা শমরীয়রা কি উপাসনা কর তোমরা তা জানো না। আমরা ইহুদীরা কি উপাসনা করি আমরা তা জানি, কারণ ইহুদীদের মধ্য থেকেই পরিত্রাণ আসছে। 23 সময় আসছে, বলতে কি, তা এসে গেছে, যখন প্রকৃত উপাসনাকারীরা আত্মায় ও সত্যে পিতা ঈশ্বরের উপাসনা করবে। পিতা ঈশ্বরও এইরকম উপাসনাকারীদেরই চান। 24 ঈশ্বর আত্মা, যাঁরা তাঁর উপাসনা করে তাদের আত্মায় ও সত্যে উপাসনা করতে হবে।”
25 তখন সেই স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, “আমি জানি, মশীহ আসছেন। মশীহকে তারা খ্রীষ্ট বলে। যখন তিনি আসবেন, তখন আমাদের সব কিছু জানাবেন।”
26 যীশু তাকে বললেন, “তোমার সঙ্গে যে কথা বলছে আমিই সেই মশীহ।”
27 সেই সময় তাঁর শিষ্যরা ফিরে এলেন। একজন স্ত্রীলোকের সঙ্গে যীশুকে কথা বলতে দেখে তাঁরা আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তবু কেউ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন না, “আপনি কি চাইছেন?” বা “আপনি কি জন্য ওর সঙ্গে কথা বলছেন?”
28 সেই স্ত্রীলোকটি তখন তার কলসী ফেলে রেখে গ্রামে গেল, আর লোকদের বলল, 29 “তোমরা এস, একজন লোককে দেখ, আমি যা কিছু করেছি, তিনি আমাকে সে সব বলে দিলেন। তিনিই কি সেই মশীহ নন?” 30 তখন লোকেরা শহর থেকে বার হয়ে যীশুর কাছে আসতে লাগল।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International