Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Old/New Testament

Each day includes a passage from both the Old Testament and New Testament.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
2 রাজাবলি 17-18

ইস্রায়েলে হোশেয়ের শাসন কাল শুরু

17 রাজা আহসের যিহূদায় রাজত্বকালের 12তম বছরে এলার পুত্র হোশেয় শমরিয়াতে ইস্রায়েলের রাজা হলেন এবং 9 বছর রাজত্ব করেন। যদিও হোশেয় সে সব কাজ করেছিলেন, প্রভুর দ্বারা যে সব কাজ ভুল বলে গণ্য হত, তবু তিনি তাঁর পূর্ববর্তী ইস্রায়েলের রাজাদের মত খারাপ ছিলেন না।

অশূররাজ শল্‌মনেষর হোশেয়র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, যিনি একদা তাঁর ভৃত্য ছিলেন এবং যিনি তাঁকে বশ্যতার কর দিতেন।

কিন্তু পরে তিনি মিশররাজ সোর কাছে সাহায্য চেয়ে পাঠিয়ে অশূররাজকে কর পাঠানো বন্ধ করে দিলেন। অশূররাজ, হোশেয়র এই চক্রান্তের কথা জানতে পেরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলে আটক করেন।

ইস্রায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণ করতে করতে অশূররাজ শেষ পর্যন্ত শমরিয়ায় এসে পৌঁছান এবং শমরিয়ার বিরুদ্ধে তিনি টানা তিন বছর যুদ্ধ করেন। হোশেয়র ইস্রায়েল শাসনের নবম বছরে শমরিয়া দখল করেন। অশূররাজ বহু ইস্রায়েলীয়কে বন্দী করে তাদের অশূর দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন। এই সমস্ত বন্দীদের তিনি হলহ, হাবোর ও গোষণ নদীর তীরে ও মাদীয়দের বিভিন্ন শহরে বসবাসে বাধ্য করেছিলেন।

ইস্রায়েলীয়রা তাদের প্রভু ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ আচরণ করেছিল বলেই এ ঘটনা ঘটেছিল। অথচ প্রভুই তাদের মিশর থেকে উদ্ধার করেছিলেন, মিশরের ফরৌণের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন! কিন্তু তারপরেও, ইস্রায়েলীয়রা বিভিন্ন মূর্ত্তির পূজা শুরু করেছিল। ঈশ্বরকে মেনে চলার পরিবর্তে, লোকরা সেই সব লোকদের বিধি, যাদের প্রভু দেশ থেকে উৎখাত করেছিলেন এবং ইস্রায়েলীয় রাজাদের প্রবর্তিত বিধিসমূহ মানতে শুরু করল। ইস্রায়েলীয়রা প্রভু, তাদের ঈশ্বরের বিরুদ্ধে গোপনে গোপনে পাপ আচরণ করতে শুরু করল যাকে কোন মতেই সঠিক কাজ বলা যায় না।

ইস্রায়েলীয়রা ছোট ছোট শহর থেকে শুরু করে বড় বড় শহরে প্রত্যেক জায়গায় উচ্চস্থান তৈরী করল। 10 পাহাড়ে ও গাছের তলায় স্মরণস্তম্ভ ও দেবী আশেরার জন্য খুঁটি বসিয়েছিল। 11 এইসব জায়গায় তারা প্রভু কর্ত্তৃক বিতাড়িত অন্যান্য জাতির মত ধুপধূনো দিতে শুরু করেছিল, যার ফলে প্রভু ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। 12 তারা মূর্ত্তি পূজাও শুরু করেছিল। প্রভু বহুবার ইস্রায়েলীয়দের সতর্ক করে বলেছিলেন, “তোমরা এইসব পাপ আচরণ করো না।”

13 প্রভু প্রত্যেকটি ভাববাদী ও দ্রষ্টার মাধ্যমে ইস্রায়েল ও যিহূদাকে পাপ আচরণ থেকে দূরে থাকতে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, “আমি আমার দাসদের হাত দিয়ে তোমাদের পূর্বপুরুষদের যে নিয়ম ও আদেশ দিয়েছি তোমরা তা অনুসরণ করে চলো।”

14 কিন্তু তবুও লোকরা কর্ণপাত করেনি। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের মতই গোঁযার্তুমি করে প্রভু, তাদের ঈশ্বরের অবজ্ঞা করেছে, তাঁর প্রতি আস্থা রাখেনি। 15 লোকরা তাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে প্রভুর যে চুক্তি হয়েছিল সেটা বা তাঁর নির্দেশিত আদেশগুলি অনুসরণ করে নি। প্রভুর সাবধানবাণী না মেনে এবং অযোগ্য মূর্ত্তি পূজা করে এবং প্রতিবেশী দেশসমূহের মত জীবনযাপন করে তারা নিজেদের অপদার্থ প্রতিপন্ন করেছিল। অথচ প্রভু তাদের বারবার সতর্ক করে দিয়েছিলেন।

16 প্রভু, তাদের ঈশ্বরের আদেশ অস্বীকার করে লোকরা সোনার বাছুর তৈরী করেছে। আশেরার খুঁটি পুঁতেছে; আকাশের চাঁদ, তারা, বাল মূর্ত্তিকে পূজা দিয়েছে; 17 এমন কি তাদের ছেলেমেয়েদের হোমবলি দিয়েছে। ভবিষ্যৎ জানার জন্য তারা মন্ত্র-তন্ত্র, ডাকিনী বিদ্যা আয়ত্ত করতে চেষ্টা করেছে। এমন কি পাপ আচরণের জন্য দেহ বিক্রয় পর্যন্ত করেছে। এসব কাজের জন্য প্রভু তাদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে 18 তাদের নিজের চোখের সামনে থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। যিহূদার পরিবারগোষ্ঠী ছাড়া আর কোন ইস্রায়েলীয় পরিবারই প্রভুর কোপ দৃষ্টি থেকে রক্ষা পায়নি।

যিহূদার লোকরাও দোষী ছিল

19 যিহূদার লোকরাও নির্দোষ ছিল না, তারাও প্রভু, তাদের ঈশ্বরের আদেশগুলো মানেনি এবং ইস্রায়েলের বাসিন্দাদের মতই পাপ আচরণে লিপ্ত হয়েছিল।

20 প্রভু ইস্রায়েলের সমগ্র লোকদের বাতিল করে দিলেন ও তাদের কাছে নানা সঙ্কট ও বিপদ এনে দিয়েছিলেন। অন্যান্য জাতিদের হাতে তাদের ধ্বংস করে শেষাবধি নিজের চোখের সামনে থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন। 21-22 প্রভু ইস্রায়েলীয়দের দায়ূদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করেন এবং ইস্রায়েলীয়রা নবাটের পুত্র যারবিয়ামকে তাদের রাজা করেন। আর যারবিয়াম ইস্রায়েলীয়দের প্রভু নির্দেশিত পথ থেকে দূরে সরিয়ে এনে ভয়ঙ্কর সমস্ত পাপের পথে নিয়ে যান ও তাদের পাপ আচরণে বাধ্য করেন। 23 প্রভু তাদের চোখের সামনে থেকে দূর না করে দেওয়া পর্যন্ত তারা এইসব পাপ আচরণ করা বন্ধ করেনি। তাই প্রভু এই সমস্ত বিপর্যয়ের কথা জানিয়ে আগেই তাঁর ভাববাদীদের মুখ দিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করিয়েছিলেন। ফলস্বরূপ ইস্রায়েলীয়রা গৃহচ্যুত হয়ে অশূর রাজ্যে যেতে বাধ্য হল এবং এখনও পর্যন্ত তারা সেখানেই বাস করে।

শমরিয়ার লোকদের আদিকথা

24 ইস্রায়েলীয়দের হাত থেকে শমরিয়া অধিকার করে নিয়ে অশূরের রাজা বাবিল, কূথা, অব্বা, হমাৎ ও সফর্বয়িম থেকে নতুন বাসিন্দা নিয়ে এসে তাদের শমরিয়া ও তার আশেপাশের শহরগুলোয় বসিয়ে দিলেন। 25 এই সমস্ত লোক শমরিয়ায় এসে প্রভুকে অবজ্ঞা করলে প্রভু তাদের আক্রমণ করার জন্য সিংহ পাঠিয়ে দিলেন। ফলস্বরূপ সিংহের আক্রমণে এদের কিছু লোক মারা পড়ল। 26 কিছু লোক তখন অশূররাজকে বলল, “আপনি যে সমস্ত লোকদের শমরিয়ার শহরগুলোতে বসিয়ে দিয়েছিলেন তারা ওখানকার দেবতার নীতি-নির্দেশগুলো জানত না। সে কারণেই সেখানকার দেবতা এই সমস্ত অজ্ঞ লোকদের হত্যা করার জন্য সিংহ পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।”

27 তখন অশূররাজ নির্দেশ দিলেন, “শমরিয়া থেকে যে সমস্ত যাজকদের ধরে আনা হয়েছিল, তাদের একজনকে আবার শমরিয়াতে পাঠিয়ে দাও যাতে সে ওখানকার লোকদের ঐ দেশের মূর্ত্তির নীতি-নির্দেশগুলো শিখিয়ে পড়িয়ে তুলতে পারে।”

28 তখন যে সমস্ত যাজকদের অশূররা শমরিয়া থেকে ধরে এনেছিল তাদের একজনকে বৈথেলে থাকতে পাঠানো হল, যাতে তিনি শমরিয়ার নতুন লোকদের প্রভুকে সম্মান জানানোর পথগুলি শেখাতে পারেন।

29 কিন্তু তা সত্ত্বেও, শমরিয়ার লোকরা বিভিন্ন শহরে অনেক উচ্চস্থান তৈরী করেছিল। সেখানে বিভিন্ন প্রকারের জাতি বাস করত এবং প্রত্যেক জাতির নিজস্ব দেবতা ছিল। এইসব লোকরা তাদের নিজস্ব দেবতাকে যেখানে তারা বাস করত সেই সব উচ্চস্থানে রেখেছিল। 30 বাবিলের লোকরা এইভাবে তাদের মূর্ত্তি সুক্কোৎ-বনোত্‌কে স্থাপন করল; কূথের লোকরা নের্গলের মূর্ত্তি বানালো; হমাতের লোকরা অশীমার মূর্ত্তি বানালো; 31 অব্বীয়েরা স্থাপন করলো নিভস ও তর্ত্তকের মূর্ত্তি আর সফর্বীয়েরা তাদের দেবতা অদ্রম্মেলক ও অনম্মেলকের উদ্দেশ্যে নিজেদের ছেলেমেয়েদের আগুনে বলি দিতে লাগল।

32 এসবের পাশাপাশি এই সমস্ত লোক প্রভুরও উপাসনা করতো! সাধারণ লোকদের মধ্যে থেকে তারা বেদীতে পূজা করার জন্য যাজকদের বেছে নিয়েছিল, যারা লোকদের হয়ে মন্দিরে ও বেদীতে উপাসনা করতো ও বলি দিত। 33 তারা নিজেদের দেশের রীতিনীতি অনুযায়ী নিজেদের দেবদেবীর সঙ্গে প্রভুরও উপাসনা করতো।

34 এমনকি এখনও অতীতের মতোই এই সমস্ত লোক প্রভুর প্রতি যথোচিত শ্রদ্ধা ও সম্মান না দেখিয়ে বাস করে। তারা মোটেই ইস্রায়েলীয়দের নিয়ম এবং আদেশগুলি পালন করে নি। যাকোবের সন্তানদের প্রভু যে বিধি ও আজ্ঞা দিয়েছিলেন তা তারা পালন করে নি। 35 প্রভু ইস্রায়েলের লোকদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলেন, “তোমরা অন্য মূর্ত্তিসমূহ পূজা করবে না, তাদের সম্মান দেখাবে না বা তাদের জন্য বলিদান করবে না। 36 তোমরা শুধুমাত্র প্রভুকে, যে প্রভু ঈশ্বর তোমাদের মিশর থেকে উদ্ধার করেছিলেন, তাঁকেই অনুসরণ করবে। প্রভু তোমাদের উদ্ধার করার জন্য তাঁর ক্ষমতা প্রদর্শন করেছিলেন, তোমরা একমাত্র তাঁরই উপাসনা করবে এবং তাঁর উদ্দেশ্যে বলিদান করবে। 37 তোমরা অবশ্যই তাঁর নিয়ম, বিধি, শিক্ষা অনুসারে চলবে এবং সব সময় তিনি যে ভাবে বলেছেন সেই ভাবে জীবনযাপন করবে। অন্য দেবতাদের সম্মান করো না। 38 তোমরা কখনো আমার সঙ্গে তোমাদের চুক্তির কথা ভুলে যেও না। অন্য কোন দেবদেবীর আনুগত্য স্বীকার করো না। 39 তোমরা তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের প্রতি সম্মান দেখাও, তাহলে তিনি তোমাদের সমস্ত শত্রুর হাত থেকে, সমস্ত বিপদে-আপদে রক্ষা করবেন।”

40 কিন্তু ইস্রায়েলীয়রা সে কথা শুনল না। তারা আগের মতোই পাপ আচরণ করে যেতে লাগলো। 41 তাই এখন, অন্যান্য জাতির লোকরা প্রভুর প্রশংসা করে, কিন্তু তারা তাদের নিজেদের মূর্ত্তিও পূজা করে। আর পিতামহ-প্রপিতামহদের অনুসরণ করে তাদের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি, পূর্বপুরুষরা এখনও পর্যন্ত সে ভাবেই পূজা করে আসছে।

যিহূদায় হিষ্কিয়র শাসনকাল শুরু

18 এলার পুত্র হোশেয়ের ইস্রায়েলে রাজত্বের তৃতীয় বছরে আহসের পুত্র হিষ্কিয় যিহূদার রাজা হন। পঁচিশ বছর বয়সে রাজা হয়ে হিষ্কিয় মোট 29 বছর জেরুশালেম শাসন করেছিলেন। তাঁর মা অবী ছিলেন সখরিয়ের কন্যা।

তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের মতোই হিষ্কিয় প্রভুর নির্দেশিত পথে জীবন কাটিয়েছিলেন।

হিষ্কিয় উচ্চস্থানগুলি এবং স্মরণ স্তম্ভগুলো ভেঙে ফেললেন এবং আশেরার খুঁটিগুলিও কেটে ফেলেছিলেন। সে সময় ইস্রায়েলের লোকরা “নহুষ্টন” নামে মোশির বানানো পিতলের একটা সাপের মূর্ত্তির সামনে ধুপধূনো দিত। হিষ্কিয় লোকদের এই পুতুল পূজা বন্ধ করার জন্য পিতলের সাপটাকে টুকরো টুকরো করে ভেঙে দিয়েছিলেন।

প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের ওপর হিষ্কিয়র সম্পূর্ণ আস্থা ছিল। হিষ্কিয়র আগে বা পরে যিহূদার কোন রাজাই তাঁর মত ছিলেন না। হিষ্কিয় সম্পূর্ণরূপে প্রভুর অনুগত ছিলেন এবং তিনি সব সময়ই প্রভুকে অনুসরণ করে চলেছিলেন। তিনি মোশিকে দেওয়া প্রভুর আদেশগুলো মেনে চলেছিলেন। তাই প্রভুও সর্বক্ষেত্রে হিষ্কিয়র সহায় হয়েছিলেন। হিষ্কিয় যা কিছু করছিলেন, তাতেই সফল হন।

হিষ্কিয় অশূররাজের আধিপত্য অস্বীকার করে তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন বন্ধ করেন। তিনি ঘসা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ছোট বড় সমস্ত পলেষ্টীয় শহরগুলোকে যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন।

অশূররা শমরিয়া দখল করল

অশূররাজ শলমনেষর, হিষ্কিয়র যিহূদায় রাজত্বের চতুর্থ বছরে এবং এলার পুত্র হোশিয়র ইস্রায়েলে রাজত্বের সপ্তম বছরে, শমরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন। অশূররাজের সেনাবাহিনী চতুর্দিক থেকে শমরিয়া ঘিরে ফেলে 10 এবং তৃতীয় বছরে অশূররাজ শলমনেষর শমরিয়া দখল করেন। হিষ্কিয়র যিহূদায় শাসনের ষষ্ঠ বছরে এবং হোশিযর ইস্রায়েলে শাসনের নবম বছরে শমরিয়া অশূররাজের পদানত হয়। 11 অশূররাজ ইস্রায়েলীয়দের বন্দী করে তাঁর সঙ্গে অশূর রাজ্যে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তাদের হলহ, হাবোর, গোষণ নদীর তীরে মাদীয়দের বিভিন্ন শহরে বসবাস করতে বাধ্য করেন। 12 ইস্রায়েলীয়রা তাদের প্রভু ঈশ্বরের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করায় এবং প্রভুর সঙ্গে তাদের চুক্তি ভঙ্গ করার জন্যই এ ঘটনা ঘটেছিল। প্রভুর দাস মোশি যে আদেশগুলি দিয়েছিলেন বা ইস্রায়েলীয়দের যে নীতি-শিক্ষা দিয়েছিলেন, তা তারা পালন না করার জন্যই এই দুর্যোগ ঘনিয়ে আসে।

অশূর-রাজ যিহূদা দখল করার জন্য প্রস্তুত হলেন

13 হিষ্কিয়র রাজত্বের 14তম বছরে, অশূর-রাজ সন্‌হেরীব যিহূদার দূর্গ বেষ্টিত সমস্ত শহরগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা করেন এবং তাদের পরাজিত করেন। 14 তখন যিহূদার রাজা হিষ্কিয় লাখীশে অশূররাজের কাছে একটা খবর পাঠালেন। হিষ্কিয় বললেন, “আমি অন্যায় করেছি। আপনি আমার রাজত্ব ছেড়ে চলে গেলে, আপনি যা চাইবেন আমি তাই দিতে প্রস্তুত আছি।”

তখন অশূররাজ হিষ্কিয়ের কাছে 11 টন রূপো ও 1 টন সোনা চেয়ে পাঠালেন! 15 হিষ্কিয় প্রভুর মন্দিরে ও রাজকোষে যত রূপো ছিল সবই অশূররাজকে দিয়ে দেন। 16 হিষ্কিয় প্রভুর মন্দিরের দরজা ও দরজার থামে যেসব সোনা বসিয়েছিলেন, সে সবও কেটে অশূররাজকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

অশূররাজ জেরুশালেমে লোক পাঠালেন

17 অশূররাজ লাখীশ থেকে জেরুশালেমে হিষ্কিয়র কাছে তাঁর সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনজন সেনাপতি, রব্শাকি, তর্ত্তয় ও রব্সারিসের অধীনে একটি বড় সেনাবাহিনী পাঠান। তারা ধোপাদের ঘাটের কাছের রাস্তার ওপরের খাঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। 18 তিনি হিল্কিয়ের পুত্র রাজপ্রাসাদের তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াকীম, সচিব শিব‌্ন ও একজন তথ্যসংগ্রাহক আসফের পুত্র যোয়াহ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বাইরে এল।

19 তিনজন সেনাপতিদের একজন, রব্শাকি বললেন, “হিষ্কিয়কে গিয়ে জানাও যে অশূররাজ বলেছেন:

‘তোমার আত্মবিশ্বাসের পেছনে কি কারণ আছে? 20 তুমি বলো, “যুদ্ধ করবার মতো যথেষ্ট শক্তি তোমার আছে।” কিন্তু সে তো কথার কথা মাত্র! কার ভরসায় তুমি আমার অধীনতা অস্বীকার করেছ? 21 তুমি কি মিশরের ওপর, একটি বেনু বাঁশের তৈরী চলবার ছড়ির ওপর নির্ভর করছ? মনে রেখো এই ছড়ির ওপর বেশী ভর দিলে, ছড়ি তো ভাঙবেই এমন কি তার চোঁচও তোমার হাতে ফুটে তোমায় জখম করতে পারে! মিশরের রাজার উপরে তুমি নির্ভর করতে পার না। 22 একথা শুনে তুমি হয়তো বলবে, “আমাদের প্রভু, ঈশ্বরের ওপরে আস্থা আছে।” কিন্তু আমি এও জানি, তোমার লোকরা প্রভুকে যে উঁচু বেদীগুলোয় উপাসনা করত, তুমি সেই সমস্ত ভেঙে দিয়ে যিহূদার লোকদের বলেছ, “তোমরা শুধুমাত্র জেরুশালেমের বেদীর সামনে উপাসনা করবে।”

23 ‘এখন অশূররাজের সঙ্গে এই চুক্তিটি করে ফেলো এবং আমি তোমাকে 2000 ভাল ঘোড়া দেব যদি তুমি ততগুলো অশ্বারোহী জোগাতে পার। 24 কারণ তোমরা মিশরের রথ আর অশ্বারোহীদের ওপর ভরসা করে আমাদের সেনাবাহিনীর একজন জমাদারকেও হারাতে পারবে না!

25 ‘আমরা প্রভুর বিনা সম্মতিতে জেরুশালেম ধ্বংস করতে আসি নি। প্রভুই স্বয়ং বলেছেন, “যাও, এই দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এই দেশকে ধ্বংস করো!”’”

26 একথা শুনে, হিল্কিয়ের পুত্র ইলিয়াকিম, শিব‌্ন ও যোয়াহ সেই সেনাপতিকে বলল, “অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে আরামিক ভাষায় কথা বলুন। কারণ যদি আপনি ইহুদীদের ভাষায় কথা বলেন, তাহলে দেওয়ালের ওপরের লোকরা আমাদের কথাবার্তা শুনতে পাবে!”

27 কিন্তু এই সেনাপতি রব্শাকি তখন বললেন, “আমাদের রাজা আমায় কেবলমাত্র তোমার বা তোমার রাজার সঙ্গে কথা বলতে পাঠান নি। আমি দেওয়ালের ওপরে বসে থাকা লোকদের সঙ্গেও কথা বলছি। কারণ তাদেরও তোমাদের মতো নিজেদের বিষ্ঠা খেতে হবে, আর নিজেদের মূত্র পান করতে হবে!”

28 তারপর এই সেনাপতি উঁচু গলায় ইহুদীদের ভাষায় বললেন:

“মহামান্য অশূররাজের বলে পাঠানো এই কথাগুলো মন দিয়ে শোন! 29 অশূররাজ বলেছেন, ‘হিষ্কিয়র চালাকিতে আকৃষ্ট হয়ো ন! ও কোন ভাবেই আমার হাত থেকে তোমাদের বাঁচাতে পারবে না!’ 30 হিষ্কিয়র কথা মেনো না এবং প্রভুর ওপরেও ভরসা করো না। হিষ্কিয় বলে, ‘প্রভু আমাদের রক্ষা করবেন! অশূররাজ এই শহর দখল করতে পারবে না!’

31 “কিন্তু হিষ্কিয়র কথা শুনো না! ‘অশূররাজ বলে পাঠিয়েছেন; আমার সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করো। আমার আনুগত্য স্বীকার করলে তোমরা তোমাদের নিজেদের ক্ষেতের ফসল, বাড়ির কুঁয়োর জল খেতে পারবে। 32 তোমরা যদি আমি আসার পর আমার সঙ্গে সঙ্গে চলে আসো তাহলে তোমাদের এমন এক দেশে নিয়ে যাব, যেখানে সবুজ ক্ষেত শস্যে ভরে থাকে, অপর্যাপ্ত দ্রাক্ষারস আর গাছ-গাছালি ফলে ভরে থাকে। তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে, খাবার ও বস্ত্রসহ থাকতে পারবে। কিন্তু হিষ্কিয়র কথায় তোমরা কান দিও না।’

“ও তোমাদের দলে টানতে চেষ্টা করছে, বলছে, ‘প্রভু আমাদের রক্ষা করবেন।’ 33 কিন্তু ভেবে দেখো কোন দেশের দেবতাই কি তাঁর উপাসকদের অশূররাজের কবল থেকে বাঁচাতে পেরেছেন? না! 34 কোথায় গেল হমাত আর অর্পদের দেবতারা? কিংবা সফর্বযিম, হেনা আর ইব্বার দলবল? তাঁরা কি আমার হাত থেকে শমরিয়াকে বাঁচাতে পারলেন? না! 35 অন্য কোন দেবতা কি আমার হাত থেকে তাঁদের দেশ রক্ষা করতে পেরেছেন? না! প্রভু কেমন করে আমার হাত থেকে জেরুশালেম রক্ষা করবেন?”

36 কিন্তু একথা শুনেও লোকরা নিশ্চুপ হয়ে থাকল। তারা একটা কথাও উচ্চারণ করল না কারণ মহারাজ হিষ্কিয় তাদের বলে দিয়েছিলেন, “ওর সঙ্গে তোমরা কোন কথা বলো না।”

37 রাজপ্রাসাদের তত্ত্বাবধায়ক (হিল্কিয়ের পুত্র ইলিয়াকীম), রাজ-সচিব (শেব্ন) এবং তথ্যসংগ্রাহক (আসফের পুত্র যোয়াহ) হিষ্কিয়র কাছে এল। শোকপ্রকাশের জন্য তারা ছেঁড়া জামাকাপড় পরেছিল। অশূররাজের সেনাপতি তাদের কি বলেছেন, তারা সেই সব রাজা হিষ্কিয়কে জানাল।

যোহন 3:19-36

19 আর এটাই বিচারের ভিত্তি। জগতে আলো এসেছে, কিন্তু মানুষ আলোর চেয়ে অন্ধকারকে বেশী ভালবেসেছে, কারণ তারা মন্দ কাজ করেছে। 20 যে কেউ মন্দ কাজ করে সে আলোকে ঘৃণা করে, আর সে আলোর কাছে আসে না, পাছে তার কাজের স্বরূপ প্রকাশ হয়ে পড়ে। 21 কিন্তু যে কেউ সত্যের অনুসারী হয় সে আলোর কাছে আসে, যাতে সেই আলোতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে তার সমস্ত কাজ ঈশ্বরের মাধ্যমে হয়েছে।

যীশু এবং বাপ্তিস্মদাতা যোহন

22 এরপর যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে যিহূদিয়া প্রদেশে এলেন। তিনি সেখানে তাঁদের সঙ্গে থাকতে লাগলেন ও বাপ্তাইজ করতে লাগলেন। 23 যোহনও শালীমের নিকট ঐনোন নামক স্থানে বাপ্তাইজ করছিলেন, কারণ সেখানে প্রচুর জল ছিল; আর লোকেরা তাঁর কাছে এসে বাপ্তিস্ম নিচ্ছিল। 24 যোহন তখনও কারাগারে বন্দী হন নি।

25 সেই সময় ইহুদী রীতি অনুসারে শুচি হওয়ার বিষয়ে যোহনের শিষ্যদের সঙ্গে একজন ইহুদীর তর্ক বাধে। 26 পরে তারা যোহনের কাছে এসে বলল, “গুরু, তাঁকে মনে পড়ে যিনি যর্দন নদীর ওপারে আপনার সঙ্গে ছিলেন এবং যাঁর বিষয়ে আপনি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন? তিনি লোকেদের বাপ্তাইজ করছেন আর সবাই তাঁর কাছে যাচ্ছে।”

27 এর উত্তরে যোহন বললেন, “স্বর্গ থেকে দেওয়া না হলে কেউই কোন কিছু লাভ করতে পারে না। 28 তোমরা নিজেরাই শুনেছ যে আমি বলেছিলাম, ‘আমি খ্রীষ্ট নই; কিন্তু আমাকে তাঁর আগেই পাঠানো হয়েছে।’ 29 কনে বরেরই জন্য, কিন্তু বরের বন্ধু পাশে দাঁড়িয়ে থাকে বরের কথা শোনার জন্য। আর সে যখন বরের গলা শুনতে পায় তখন খুবই আনন্দিত হয়। তাই আজ আমার সেই আনন্দ পূর্ণ হল। 30 তিনি উত্তরোত্তর বড় হবেন, আর আমি অবশ্যই নগন্য হয়ে যাব।

একজন যিনি স্বর্গ থেকে আসেন

31 “একজন যিনি উর্দ্ধ থেকে আসেন তিনি সবার উর্দ্ধে। যে এই জগতের মধ্য থেকে আসে সে জগতের, তাই সে যা কিছু বলে তা জগতের বিষয়েই বলে। যিনি স্বর্গ থেকে আসেন তিনি সবার উপরে। 32 তিনি যা দেখেছেন আর শুনেছেন তারই সাক্ষ্য দেন; কিন্তু কেউই তাঁর সাক্ষ্য মেনে নিতে রাজী নয়। 33 যে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণ করে সে তার দ্বারা প্রমাণ করে যে ঈশ্বরই সত্য, 34 কারণ ঈশ্বর যাঁকে পাঠিয়েছেন তিনি ঈশ্বরের কথাই বলেন। ঈশ্বর তাঁকে পবিত্র আত্মায় পূর্ণ করেছেন। 35 পিতা তাঁর পুত্রকে ভালবাসেন, আর তিনি তাঁর হাতেই সব কিছু সঁপে দিয়েছেন। 36 যে কেউ পুত্রের ওপর বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবনের অধিকারী হয়; কিন্তু যে পুত্রকে অমান্য করে সে সেই জীবন কখনও লাভ করে না, বরং তার ওপরে ঈশ্বরের ক্রোধ থাকে।”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International